#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_১৪
______________________________
” আহারে বেচারী! এত সুন্দর কিউট একটা মেয়ে নাকি বোবা! আহা, মানতেই ইচ্ছে করে না মেয়েটা কথা বলতে পারে না! ”
কারো আফসোসের স্বরে বলা কথা টা আরুহীর কান পর্যন্ত যেতেই,
আরুহী ভ্রু কুঁচকে তাকালো তিহান রেহমান এর দিকে। আরুহী থেকে বছর দুই বড় হবে হয়তো, দেখতে মাশা আল্লাহ , সবচেয়ে আশ্চর্য হলো ছেলেটার চোখের মনি নিলাভ বর্নের আর চুল গুলো ব্রাউন সেড। যেটা সচরাচর দেখা মেলে না।
আরুহী একবার সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষন করলো তাকে। যা দেখে তিহান বেশ খানিকটা হকচকিয়ে উঠলো, সোজা হয়ে বসলো আরুহীর সামনে,
আরুহী চোখ দুটো ছোট ছোট করে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
” কি সমস্যা? ”
” আরররে আব্বাস থুক্কু আরেব্বাস তুমি তো দেখি কথা বলতে পারো, বাহ্ বাহ্ কন্ঠ টাও ঝাক্কাস, একেবারে কোকিল কন্ঠী ”
আরুহী বিরক্তি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তিহানের দিকে, ছেলেটা বেশি কথা বলে আর যতসব ফালতু কথা, যা আরুহীর মোটেও পছন্দ না।
” কি সমস্যা আপনার? একেতো আমাকে চেনেন না তার ওপর তুমি তুমি সম্বোধন করছেন, আর গায়ে পড়ে কথা বলতে আসছেন! সমস্যা কি আপনার? ”
তিহান চট করে চেয়ার টাকে আরুহীর কাছে এনে সোজা হয়ে বসলো,
” উহুম আমার তো কোন সমস্যা নেই, আমি তো যাস্ট পরিচিত হতে এলাম, আমি পাত্র সাফিদ রেহমান এর ছোট ভাই তিহান রেহমান, আপাতত বাবার ব্যবসা দেখছি তবে ভবিষ্যত নিয়ে অন্য প্ল্যান! ”
আরুহী ভ্রু কুঁচকালো,
” আপনার কাছে কি আমি এসব জিজ্ঞেস করেছি? এত কথা বলেন কিভাবে? অদ্ভুত! ”
বলেই আরুহী গটগট পায়ে চলে এলো স্টেজের দিকে, আরেকটু ওখানে থাকলে ছেলেটা না কথা বলতে বলতে ওর মাথাটা না গরম করে দেয়, এমনি তেই রেগে আছে তার ওপর ওই ভাঙা রেডিওর বকবক, কখন জানি ঘুষি দিয়া নাক ই ফাটাই ফেলে তার নেই ঠিক ঠিকানা। আসছে ভাব জমাতে তাও আরুহী চৌধুরীর সাথে!
আরুহীর বরাবর ই রাগের মাত্রা টা বেশি, হুট করে ই রেগে যায় তবে চরম বিপদে তার মাথা বরাবর ই শান্ত থাকে তা ঠিক আশ্চর্যের বিষয়।
আরুহী চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রেহান হাসছে, মেয়েটাকে তার বেশ লাগছে, মেয়েটাকে জ্বালাতে কেন জানি তার মজা লাগছে, এতো মেয়ে তার পিছনে পরে আছে অথচ এসবে তার কোন ইন্টারেস্ট ই নেই , আর এই মেয়েটাকে কেমন জানি সবচেয়ে আলাদা লাগলো। রেহান তাকে চেনে না কখনো দেখেও নি ইনফেক্ট নাম টাও জানে না। এই এক মূহুর্তে মেয়েটার মায়ায় পরে গেছে, আনমনে ই রেহানের মুখ থেকে বের হয়ে আসলো,
” মায়াবতী ”
রেহান হাসলো…
দুর থেকে হঠাৎ ই আরুশের নজরে এলো আরুহী আর রেহান এর উপস্থিতি। দুর থেকে তাদের বেশ কাছাকাছি ই মনে হচ্ছিলো, রাগ হচ্ছে তার, ভীষণ ভাবে রাগ হচ্ছে কিন্তু কিছু করার নেই।
তার তো অধিকার ই নেই আরুহীর উপর নিজের অধিকার ফলানোর, সেই অধিকার আরুহী তাকে দেয় নি, আপাতত নিজের রাগ নিজের মধ্যে ই সংযত করতে হলো।
___________________________
বিয়ের কার্যক্রম শেষ সেই কখন, কনে বিদায় ও হয়ে গেছে। আরুহীর কোন অনুভূতি হচ্ছে না, আরুহী তো দীর্ঘ সময় পরিবারের সাথে ছিলো না তাই আজ আর আবেগ টা কাজ করছে না।
আরুহী হাসলো, আবেগটা আজকাল তার কাছে ই আসে না, তার মতে আবেগ দুর থেকে ই সুন্দর। আবেগ কাছে আসলে কষ্ট বাড়ে, আবেগ দিয়ে দুনিয়া চলে না।
আরুহী উঠে দাড়ালো, আপাতত এখানে তার কোন কাজ নেই, এক পলক আকাশের দিকে তাকালো,
সূর্যাস্ত হয়ে গেছে, চারপাশে অন্ধকার নেমে এসেছে, উঠে দাড়ালো সে,
পকেট থেকে ফোন বের করে সুলতান কে কল করলো,
” আসসালামু আলাইকুম ম্যাম ”
” ওয়ালাইকুম সালাম সুলতান, আমার গাড়ি রেডি করো আমি এক্ষুনি বের হবো ”
” ঠিক আছে ম্যাম, আমি খান মেনশনের সামনেই গাড়ি নিয়ে ওয়েট করছি ”
” হুম ”
আরুহী পুনরায় আকাশের দিকে তাকালো,
” হেইই মায়াবতী ”
আরুহী চোখ নামিয়ে পাশে তাকালো, দেখে রেহান ঠিক তার মতো করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
” আকাশে কি দেখো মায়াবতী? আমি তো দেখার মতো কিছু ই পাচ্ছি না ”
আরুহী ভ্রু কুঁচকে তাকালো তার দিকে,
” ফাস্ট অফ অল আমি মায়াবতী নই আমার একটা নির্দিষ্ট নাম আছে, আরুহী, আরুহী চৌধুরী, সেকেন্ড, সবাই সব কিছু দেখতে পায় না, আর নিজের চরকায় তেল দেন মিস্টার রেহমান, আর যেন আমার আশেপাশে আপনাকে না দেখি, নইলে খুব খারাপ হয়ে যাবে ”
বলেই আরুহী হাঁটতে হাঁটতে বাসার ভেতরে গেলো
, সিড়ি বেয়ে নিজের রুমে গিয়ে ব্যাগ টা কাধে নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই চোখে পড়লো লেটেস্ট মডেলের রিভলবার। সাথে দুটো কাগজ। আরুহী চোখ ছোট ছোট করে,
রিভলবার টা হাতে নিলো,
বেশ সুন্দর দেখতে রিভলবার টা, খুব সুন্দর করে গোল্ডেন ডিজাইন করা। সাথে দুটো কাগজ, কাগজ দুটো হাতে নিলো। একটা রিভলবার এর লাইসেন্স এর কাগজ আরেকটা হাতে লেখা কিছু। লেখা গুলো চিনতে অসুবিধা হয়নি আরুহীর।
আরুহী ভ্রু কুঁচকে কাগজ টা খুলে পড়তে লাগলো,
“” মায়ের উপর অভিমান করেছো ভালো কথা নিজের সাথে অনিয়ম করছো কেন রুহী ?
এমন করে চলতে থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়বে, সময় মতো খাওয়া দাওয়া করো না, গোসল করার ক্ষেত্রে যত অলসতা তোমার! আজকাল বেশ অলস হয়ে যাচ্ছো তুমি রুহী।
এমন চলতে থাকলে একদম কান ধরে বাসায় নিয়ে আসব! তুমি কি ভেবেছো দুরে ছিলে বলে তোমার কোন খোঁজ রাখি নি? তোমার প্রতিটা সেকেন্ডের হিসেব আমার কাছে আছে। যেই কাজে এসেছো মন দিয়ে সেই কাজ করো আর এই রিভলবার টা তোমার জন্য, লাইসেন্স করা আছে। কাজে লাগবে। সাবধানে যাবে আর নিজে ড্রাইভ করবে না, খুব বাজে ড্রাইভ করো তুমি, এতো তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই, আর দরকার পড়লে সংকোচ করবে না সাথে সাথে ফোন করবে আমাকে, আমি তোমার মা তুমি আমার মা নও। তুমি আমার পেট থেকে হয়েছো আমি নই! তাই এসব ক্ষেত্রে তোমার থেকে আমার অভিজ্ঞতা বেশি।
সাবধানে থাকবে…”
আরুহী হাসলো। তার মা খুব বেশি অন্য রকম, একদম ইউনিক। না চাইতেই বুঝে যায় সব কিছু তাই তো আরুহী তার মাকে এতো ভালোবাসে।
তার মা সবার মতো আরুহী বা আরু ডাকে না, আয়াত তাকে রুহী ডাকে। নাম টা তার পছন্দ তবে শুধু মাত্র তার মায়ের মুখেই।
আরুহী কাগজ টা ভাজ করে পকেটে ঢুকিয়ে রিভলবার টা কোমরে গুজে বেরিয়ে গেলো।
আরুহী নিচে নেমে বেরিয়ে এলো বাড়ির বাহিরে, মেইন গেইট দিয়ে বের হবার সময় একবার পিছনে তাকালো, দেখে তার মা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে, আরুহী মাস্কের আড়ালেই হাসলো।
গেইটের বাহিরে সুলতান দাঁড়িয়ে আছে।
” আসসালামু আলাইকুম ম্যাম ”
” ওয়ালাইকুম সালাম , সুলতান ”
” ম্যাম ড্রাইভ কি আপনি করবেন? ”
” না আজ তুমি ড্রাইভ করবে, এবং সাবধানে ”
“ঠিক আছে ম্যাম ”
আরুহী পিছনে উঠে বসলো। সুলতান গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিলো।
_____________
চট্টগ্রাম পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত দু’টা বেজে গেছে। সুলতান আগে থেকে ই রিসোর্ট বুক করে রেখেছিলো তাই বেশি একটা সমস্যা হয় নি।
আরুহী কে আরুহীর রুম দেখিয়ে দিয়ে সুলতান নিজের রুমে যেতে নিবে হঠাৎ আরুহী পিছনে থেকে ডেকে উঠলো,
” সুলতান? ”
সুলতান পিছনে তাকিয়ে বলল,
” কিছু বলবেন ম্যাম? ”
” কাল সকালে বন্দরে যাবো, রেডি থেকো ”
” কয়টায় ম্যাম? ”
” সাতটায় ”
” আচ্ছা ”
” আর শোনো আমার পরিচয় যেন কেউ না জানে, সাবধান ”
” ঠিক আছে ম্যাম ”
আরুহী রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে ব্যাগ পত্র রেখে পকেটে হাত দিয়ে মোবাইল বের করে কারো নাম্বারে টেক্স করে বলল,
” আমি এসে পৌঁছেছি, চিন্তা করার কোন কারণ নেই ”
এটুকু লিখে সেন্ট করার মিনিট দুয়ের মাঝেই রিপ্লাই চলে এলো,
” আমি কারো জন্য চিন্তা করি না ”
আরুহী হাসলো, সে জানতো তার মা জেগে থাকবে তাই সে টেক্স করেছিলো।
মোবাইল টা বিছানায় ফেলে রিভলবার ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে কাপড় নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকলো,
গোসল সেরে বিছানায় শুয়া মাত্র ই সারা রাজ্যের ঘুম এসে ধরা দিলো তার দু চোখের পাতায়।
________________
সকাল ছ’ টা পয়তাল্লিশ। আরুহীর ঘুম ভেঙে গেলো, আরুহীর একটা অভ্যেস তার সচরাচর এলার্ম এর প্রয়োজন হয় না, এলার্ম বাজার আগেই প্রায় তার ঘুম ভেঙে যায়।
উঠে বসলো সে,
মোবাইল বের করে সুলতান কে কল করলো, রিং বাজার সাথে সাথে ই সুলতান পিক করে বলল,
” গুড মর্নিং ম্যাম, আমার প্রায় শেষ এক্ষুনি বের হচ্ছি ”
আরুহী হাসলো, এজন্য ই সুলতান কে তার ভালো লাগে, ভীষণ সময় সচেতন সে।
” ধীরে ধীরে করো সুলতান, তোমার শেষ হলে নিচে গিয়ে দাড়াও আমি ১০ মিনিটে আসছি ”
আরুহী ফোন রেখে ফ্রেস হয়ে কালো লং শার্ট আর
কালো প্যান্ট পরে, চুল গুলো ঝুঁটি করে মুখে কালো মাস্ক পড়লো। রিভলবার টা কোমরে গুজে কালো রঙের সু পড়ে বেরিয়ে গেলো।
___________
আপাতত আরুহী আর সুলতান দাঁড়িয়ে আছে বন্দর থেকে কিছু টা দুরে সমুদ্রের কাছে।
” এখান দিয়েই আসে তো ফেনসি*ডিল ? তুমি সিউর তো? ”
সুলতান জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,
” আমি যতটুকু তথ্য পেয়েছি এখান দিয়েই কাজ টা করা হয় ”
” ফেনসি*ডিল দিয়ে ঠিক কিভাবে মা*দক বানিয়ে ইউজ করে বলো তো? ”
” ম্যাম ফেনসি আসলে একটা খুব ভালো ঔষধ ছিলো, এটা মূলত সর্দি, কাশির জন্য ইউজ করা হতো, খুব ভালো কাজ করতো ইনফেক্ট তিনদিন সেবন করলে রোগ পুরোপুরি ভাবে ভালো হয়ে যেত। কিন্তু আমরা তো বাঙালি, সবকিছুর নেগাটিভ সাইড টাই ইউজ করতে পছন্দ করি। ফেনসির মধ্যে একটা বা দুটা ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে মা*দক বানিয়ে ফেলি, আর সেটা সেবন করি ”
” ঘুমের ঔষধ? ঘুমের ঔষধ খেলে তো ঘুমিয়ে ই যাবো সেটা মা*দক হলো কিভাবে? ”
” আসলে ম্যাম, ফেনসি এমন একটা ঔষধ যেটা কেউ যদি একবারে এক বোতল খেয়ে ফেলে তাহলে তার ঘুম চলে আসবে মূলত ঘুমের ঔষধ হিসেবে কাজ করে এটা, সারাদিন ঘুমালেও টের পাবে না কেউ আর সেখানে যদি ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দেই তাহলে আর ঘুম হবে না রিয়াকশনে মা*দক হয়ে যাবে ”
আরুহী দীর্ঘ শ্বাস ফেলে হাসলো,
” বাহ্ এসব ব্যাপারে বেশ ধারণা আছে তো তোমার! ”
সুলতান মাথা চুলকে হাসলো,
” আসলে ম্যাম যেই কাজ করি এসব বিষয় ঘাটাঘাটি করতে হয় ”
আরুহী হাসলো তবে কিছু বলল না।
সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে ভাবলো ঠিক কোন ভাবে আগাবে সে…
চলবে…
[ প্লিজ রেসপন্স করবেন, কেমন হয়েছে জানাবেন! ]