#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_১৫
______________________________
” আমরা ঠিক কোন দিক দিয়ে আগাবো ম্যাম? কিছু ভেবেছেন? ”
লাচ্ছির স্ট্র টা মুখ থেকে নামিয়ে কিছু একটা ভাবলো আরুহী। আপাতত সুলতান আর আরুহী সমুদ্রের কাছে ই একটা ক্যাফে তে বসে আছে।
” বুঝলে সুলতান, আমার কি মনে হয় জানো? ”
সুলতান আরুহীর দিকে নজর ঘুরালো, প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকালো তার দিকে,
” এখানে যারা কাজ করে তারা মূলত শুধু পেটের দায়ে কাজ করে, মেইন কার্লপ্রিট রা সামনে থাকে না তাই আমাদের এমন কিছু করতে হবে যেন তারা সামনে আসে আর আমাদের ও ওদের চিনতে সুবিধা হয়! ”
সুলতান ভ্রু কুঁচকালো,
” কিন্তু ম্যাম করবেন টা কি? আপনার কি কোন পরিকল্পনা আছে? ”
আরুহী গ্লাসের লাচ্ছি পুরো টা শেষ করে গ্লাস টা এক সাইডে রাখলো, সুলতানের দিকে তাকিয়ে বলল,
” আমার কথা টা শোনো এবং তোমার মতামত দাও ঠিক কিভাবে শুরু করবো! ”
কিছু টা থেমে,
” ফার্স্ট অফ অল আমাদের জানতে হবে ঔষধ গুলো ঠিক কোথা দিয়ে আসে? এগুলো কারা চেক করে? কাদের সাথে এদের সংযোগ আছে? তারপর হচ্ছে এখানে আসার পর। এখানে আসার পর এগুলো কারা রিসিভ করে? এরা কি সব জেনে শুনেই রিসিভ করে না কি না জেনে! তারপর এদের থেকে কৌশলে জানতে হবে, তারপরে ও যদি কাজে না লাগে তাহলে অপশন B তে যেতে হবে ”
সুলতান ভ্রু কুঁচকে বলল,
” অপশন B ? সেটা আবার কি? ”
আরুহী হাসলো,
” অপশন A কাজে না লাগলে ব্যকআপ হিসেবে অপশন B তে যাবো ”
” মানেহ্ ”
” অপশন B হলো আমরা বিদেশি বায়ার সাজবো! ”
” বায়ার মানে? কিসের বায়ার সাজবো আর কোন বিষয়ে? ”
আরুহী উঠে দাড়াতে দাঁড়াতে বলল,
” সেটা না হয় পরে দেখা যাবে, আগে লোকাল থানায় যেতে হবে ”
সুলতান ভ্রু কুঁচকে বলল,
” লোকাল থানায়? কেন ম্যাম? ”
আরুহী চোখ ছোটো ছোটো করে সুলতানের দিকে তাকিয়ে বলল,
” কি ব্যপার সুলতান? আজ কি ঘুম হয় নি? মাথা কাজ করছে না? ”
সুলতান চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে বলল,
” আপনি কিভাবে বুঝলেন ম্যাম আমার ঘুম হয় নি? ”
আরুহী মুচকি হাসলো,
” আমি তোমাকে আজ থেকে নয় দীর্ঘ অনেক বছর যাবত চিনি সুলতান। তুমি সচরাচর খুব কম প্রশ্ন করো, আমি কথা বলার আগেই সব বুঝে যাও কিন্তু যখন ই তোমার ঘুম কম হয় তখন ই তুমি একটার পর একটা প্রশ্ন করো, বলতে পারো এটা তোমার অভ্যাস ”
বলেই আরুহী সামনের দিকে হাটতে লাগলো, সুলতান দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে ভাবতে লাগলো, আসলেই তো আজ সে একটার পর একটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে অথচ আরুহী মোটে ও রাগ হচ্ছে না উল্টো সুন্দর করে সব গুলোর উত্তর দিচ্ছে।
সুলতান হাসলো, আরুহী কে সে তার বোনের মতোই ভাবে এবং ভালোবাসে। আরুহী ও তাকে ভীষণ সম্মান করে এবং ভালোবাসে।
_________________
” হুম বলো নানুমা, কেমন আছো সুন্দরী ? ”
আরুহী সমুদ্রের পাড়ে হাঁটতে হাঁটতে ই ফোনে কথা বলছে, বেশ অনেক দিন পর ফোন করেছে আয়াতের ফুফু মানে মার্জান খান।
” নিজে তো একটা বার ফোন করে না, খোঁজ খবর কিছু নেয় না, আবার আসছে আদর দেখাইতে, সরর তো ”
আরুহী হাসলো, আসলেই এখন সময় ই হয় না কাউকে ফোন করার যদি ও এটা শুধু ই অযুহাত। ইচ্ছে থাকলে সবই সম্ভব।
” আহহা সুন্দরী রাগ করছো কেন? আর আমাকে কি তোমার রিপোর্টার মনে হয় যে টাইমে টাইমে খবর নিবো? খবর নেওয়ার জন্য তো তোমার বুইড়া জামাই আছেই ”
” এই মেয়ে আমার জামাইকে একদম বুড়ো বলবি না! ”
” ওমমা তোমার জামাই কি তাগড়া যুবক নাকি গো নানুমা? তালু দিয়ে চুল নাই! টাকলা ব্যাটার বউ, এমন ভাবে বলছে যেন উনার জামাই এখনো আরো ১০-১২ টা বিয়ে করতে পারবে! বুড়ী.. ”
” অসভ্য মেয়ে কোথাকার! এক্কেবারে মায়ের মতো নির্লজ্জ হয়েছে, আমি তোর নানু হই বান্ধবী না! ”
” তোমাকে বান্ধবী বানাতে আমার বয়েই গেছে না! ঢং কতো বুড়ীর, তা আমার জামাই টা কোথায়,? ”
” এই মেয়ে তুই না বললি, ওনি বুড়া ব্যাটা তাহলে আমার জামাই কে জামাই ডাকতে লজ্জা লাগে না,? ”
” ওফফ মাই জান, তুমি তে জানো আমার লজ্জা সরম বরাবর ই খুব ই কম, এসব কথা বলো না তো লজ্জার লজ্জা লাগে তো! ”
বলেই আরুহী হেসে উঠলো,
নানুমা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
,” আর যাই হোক তোর সাথে কথা বলে পারব না, তোর সব দিকেই নজর রে আরু, আমার ভোলাভালা সাইকোলজিস্ট বুড়ো জামাই টাকেও ছাড়লি না, বেদ্দপ মেয়ে ”
” ওটা বেদ্দপ না বেয়াদব হবে গো বুড়ী ”
” ওটা বেয়াদব হলেও তুই বেদ্দপ ই, ফাযিল ”
আরুহী বেশ শব্দ করে ই হাসলো,
” তা বুড়ী কিছু খেয়েছো? ”
” হুম, তুই? ”
” হ্যা খেয়েছি ”
” শুনলাম তোর ছোট বাবা নাকি দেশে আসছে ”
আরুহী ভ্রু কুঁচকে বলল,
” তাই নাকি , জানতাম না তো, রৌদসী আপুর বিয়ে গেলো এতো করে বললাম আসলো না, এখন আসুক বাংলাদেশে, এয়ারপোর্ট থেকে বের হতেই দেবো না, আমার বাবা টা কত ভালো আর চাচা! এতো বুড়ো হয়েছে অথচ এখনো বদের হাড্ডি, তিন তিনটা ছেলে মেয়ে আছে অথচ নিজেকে এখনো ওয়ার্ল্ড ওয়াইড হ্যান্ডসাম মনে করে! ”
মার্জান খান বেশ শব্দ করে ই হাসলো,
” ঠিক আছে তোর ছেলে তুই বুঝ, এখন রাখি রে, তোর নানা মনে হয় চলে এসেছে ”
” হে হে যাও যাও, স্বামীর সোহাগ খাও গিয়ে, আমার তো পুড়া কপাল, স্বামী ও নাই, সোহাগ ও নাই ”
আরুহীর আফসোসের স্বরে বলা কথার পরিপ্রক্ষিতে মার্জান খান ধমকে উঠলেন,
” এই অসভ্য মেয়ে, নির্লজ্জ কোথাকার, তোকে ফোন দেওয়াই আমার ভুল হয়েছে, রাখ ফোন! ”
বলেই ফোনের অপর পাশ থেকে লাইন টা কেটে গেলো, আরুহী এক পলক ফোনের দিকে তাকিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যে হাসলো,
দুর থেকে মানুষ কে যতটা মজার আর হাসি খুশি মনে হয় ভেতরে মানুষ টা ততটাও সুখি না ও হতে পারে।
আরুহী হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে দুটো বাজছে, সেই কখন সুলতান কে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য রেস্তোরাঁ তে পাঠিয়েছে এখনো আসছে না, আরুহীর খেতে ইচ্ছে করছিলো না, সুলতান বেশ কয়েক বার বলেছে তার সাথে যাওয়ার জন্য কিন্তু আরুহী যায় নি, তার খিদে নেই বলে কাটিয়ে দিয়েছে, তাই সুলতান ও বেশি বলে নি।
_________________________
” ম্যাম একটা কথা শুনেছি ”
আরুহী ভ্রু কুচকে সুলতানের দিকে তাকালো,
আপাতত সুলতান গাড়ি চালাচ্ছে উদ্দেশ্য লোকাল থানা।
” কি? ”
” ম্যাম শুনলাম, থানায় নাকি নতুন অফিসার এসেছে, ওই যে সর্বোচ্চ পদে আছেন যিনি, এক বছরের জন্য এসেছে! সবাই নাকি ওনার ভয়ে তটস্থ ”
” তো আমি কি করবো? ”
সুলতান খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো, আমতাআমতা করে বলল,
” না মানে এমনি ই বললাম আর কি! ”
আরুহী কিছু বলল না, দীর্ঘ শ্বাস ফেলে জানলা দিয়ে বাইরে তাকালো।
গাড়ি এসে থামলো লোকাল থানায়। আরুহী গাড়ি থেকে বের হয়ে গটগট পায়ে এগিয়ে গেলো থানার ভেতরে সুলতান ছুটলো তার পিছনে পিছনে।
আরুহী ভেতরে ঢুকতেই সবার নজর ওর উপর পড়লো,
পুলিশ দের মধ্যে একজন এগিয়ে এসে বলল ,
” কি চাই? ”
আরুহী পকেটে হাত দিয়ে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে বলল,
” গত পাঁচ বছরের সব গুলো ক্রাইম রেকর্ড চেক করতে চাই ”
আরুহীর এহেন কথায় পুলিশ অফিসার টা বেশ চমকে উঠে চোখ বড়ো বড়ো করে আরুহীর দিকে তাকালো,
” কি চান? ”
আরুহী ঘুরে পুলিশ অফিসার এর দিকে তাকিয়ে বলল,
” কানের ডাক্তার দেখান, আপনি বোধ হয় শুনতে পান নি আমি কি বলেছি! ”
” হেয়ালি করছেন আপনি? আর কে আপনি? ”
আরুহী ভ্রু কুঁচকে লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল,
” স্পেশাল ফোর্স অফিসার, তদন্তে এসেছি! আর কিছু? ”
পুলিশ অফিসার টা দ্রুত চেয়ার টেনে দিয়ে বলল,
” বসুন বসুন ম্যাম, আসলে আপনাকে চিনতে পারি নি, আপনি বসুন আমি আমাদের স্যার কে ডেকে দিচ্ছি ”
” আমি কি আপনার স্যারের সাথে দেখা করতে এসেছি? রেকর্ড বুকটা আনেন ”
” সরি ম্যাম স্যারের অনুমতি ছাড়া কিছুই দিতে পারব না, আপনি বসুন আমি স্যার কে ডাকছি ”
বলেই লোকটা চলে গেলো।
_________________
” বাহ্ তুমি তো দেখছি আমাকে ফলো করতে করতে থানায় পর্যন্ত চলে এসেছো!… ”
চলবে…..
[ কেমন হয়েছে জানাবেন, আর গঠন গত মন্তব্য করবেন,
হ্যাপি রিডিং]