#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_১৬
______________________________
“বাহ্ তুমি তো দেখছি আমাকে ফলো করতে করতে থানায় পর্যন্ত চলে এসেছো!… ”
স্বল্প পরিচিত কারো কন্ঠ শুনতে পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালো আরুহী। ভ্রু জোড়া কুঁচকে এলো তার, মনের মধ্যে একটা প্রশ্নের ই উদয় হলো,
এই পাগল এখানে কি করে?
” তিহান রেহমান? ”
তিহান মাথা নিচু করে হাসলো,
আরুহীর সামনে বসতে বসতে বলল,
” অবাক হয়েছো মায়াবতী? আমি আরোও বেশি অবাক হয়েছি তোমাকে দেখে, কাল কি ভাব টাই না ধরলা, যেন আমাকে পাত্তাই দেওনা, আর এখন সেই খুঁজে খুঁজে আমার থানা ই বের করলে, আহা! কি ভালোবাসা! পরান টা জুড়িয়ে গেলো গোও!”
বিরক্তিতে আরুহীর কপালে ভাজ পড়লো, ছেলেটা এতো কথা বলে, কিন্তু আফসোস একটাও যদি কাজের কথা হতো!
” স্টপ! স্টপ ইট মিস্টার তিহান রেহমান। এতো বাজে বকেন কিভাবে আপনি? একটা মানুষ এতো কথা কিভাবে বলতে পারে? হাউউউ? ”
” মিস আরুহী তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো! তুমি কিন্তু কাজ টা ঠিক করছো না। আমি মোটেও বেশি কথা বলি না, সবাই আমাকে শান্ত শিষ্ট বলেই চেনে, অযথা অপবাদ দিবে না বলে দিলাম! ”
” হাহ্ অপমান, যাক গে সেসব কথা, আপনি আগে বলেন আপনি এখানে কি করেন? এখানে কি কাজ আপনার? ”
তিহান খানিকটা নড়েচড়ে বসলো,
” ও কি কথা গো মায়াবতী! আমি আমার ডিওটি তে আসব না? ”
আরুহী ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
” আপনি না বলছিলেন আপনি আপনার বাবার ব্যবসা দেখা শোনা করেন? এখন আবার পুলিশের কাজ আসলো কোথা থেকে! ”
তিহান হেসে উত্তর দিলো,
” আরে আমি ভাবছিলাম তুমি মনে হয় পুলিশের কথা শুনে আমাকে রিজেক্ট করবে, তাই শুধু বাবার ব্যবসার কথা টা বললাম, তবে মিথ্যা কিন্তু বলি নি, আমি বাবার ব্যবসা ও দেখা শোনা করি।
মনে মনে বেশ বিরক্ত হলো আরুহী, ঘুরে ঘুরে এই খানেই আসতে হলো এই লোকটার!
আরুহী দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
” এখানে আপনার সাথে বকবক করতে আসি নি আমি, একটা কাজে এসেছি, তাড়াতাড়ি কাজ টা করতে হবে আমায় ”
তিহান এবার বেশ সিরিয়াস হয়ে বসে বলল,
” ঠিক কি কাজে এসেছো? কি সাহায্য করতে পারি তোমাকে? ”
” ক্রাইম রেকর্ড বুকটা চেক করব, গত ৫ বছরের রেকর্ড বুকটা আমাকে দেন! ”
তিহান চমকালো,
” রেকর্ড বুক? ওটা দিয়ে তুমি কি করবে? ”
আরুহী দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” ওটা গিলে পানি চিবিয়ে খাবো! ”
” এই তুমি কে বলো তো? কি প্রফেশনে আছো তুমি? তোমাকে তো সাধারণ ওয়ার্কার বলে মনে হচ্ছে না! ”
আরুহী কিছু বলবে তার আগেই সুলতান পাশ থেকে বলে উঠলো,
” ম্যাম কে আপনি চিনবেন না, উনি বিদেশ থেকে এসেছেন, ওনি ওখানকার ফোর্স অফিসার! বাংলাদেশে তদন্তের জন্য এসেছে! ‘
এতোক্ষণ সুলতান দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে আরুহী আর তিহান এর কথা শুনছিলো কিন্তু তিহান অযথা প্রশ্ন সুলতানের ই বিরক্ত লাগছে আর আরুহীর তো রাগ ই উঠছিলো। আরুহীর রাগী মুখ দেখে সুলতান বেশ কয়েক বার ঢুক গিলে কোন ভাবে পরিবেশ টা নিজের কন্ট্রোলে আনার চেষ্টা করছে কারণ লোকটা এত পরিমান আজাইরা কথা বলছে কোন সময় টা আরুহী উঠে ঘুষি দিয়ে নাক মুখ ফাটিয়ে দেয়।
সুলতান তো এমনি এমনি আরুহী কে ভয় পায় না, বেচারা এমন পরিস্থিতির স্বীকার আরোও অনেক বার হয়েছে। বক্সিং চম্পিয়ন তার মেম একবার তো এক লোক কে ঘুষি দিয়ে নাকের হাড্ডি ফাটিয়ে ফেলছিলো তার জন্য কত দৌড় দৌড়তে হয়েছিলো তা শুধু সুলতান ই জানে। তাই আর একই ঘটনা পুনরাবৃত্তি ঘটার আগেই সে হেন্ডেল করতে চাইছে।
তিহান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সুলতানের দিকে তাকালো,
” আমি কি তোমাকে প্রশ্ন করেছি? যাই হোক তোমরা বসো আমি বুক টা নিয়ে আসছি ”
বলেই তিহান হেটে নিজের রুমে গেলো,
প্রায় মিনিট দশেক পর দুজন কনস্টেবল হাতে মোটা মোটা তিনটে খাতা এনে টেবিলে রাখলো,
” ম্যাম এগুলোই ক্রাইম রেকর্ড বুক, গত পাঁচ বছরের রেকর্ড এখানে আছে, চেক করে নিতে পারেন ”
আরুহী উঠে খাতা গুলো উলোট পালোট করে দেখতে দেখতে বলল,
” ঠিক আছে তুমি এবার যেতে পারো, আমি দেখে নিচ্ছি “‘
কনস্টেবল দুজন যান্ত্রিক নিয়মে চলে গেলো,
” এভাবে দেখলে তুমি যেটা খুজছো সেটাই পাবে না ”
আরুহী দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছিলো বইটা, হঠাৎ পিছন থেকে তিহানের কন্ঠ শুনতে পেয়ে পিছনে তাকালো সে,
ভ্রু জোড়া কুঁচকে বলল,
” পাবো না কেন? ”
” বললাম, এতো মোটা মোটা দুটো বই তুমি কখন খুঁজবে সব, তার চেয়ে বরং আমাকে বলো আমি বের করে দিচ্ছি ”
আরুহী ভাবলো কিছু ক্ষন, লোকটা যে পরিমান জ্বালায় তার চেয়ে বরং কাজ করুক এটলিস্ট শান্তি পাওয়া যাবে!
আরুহী মাথা দুলিয়ে সরে গিয়ে বলল,
” ঠিক আছে খুঁজে দেন, সমুদ্রের ধারে ড্রাগ পাঁচার কিংবা এই বিষয়ে যত তদন্ত করা হয়েছে সব গুলোর রেকর্ড আমার চাই ”
তিহান এক পলক আরুহীর দিকে তাকিয়ে, দ্বিতীয় নাম্বার বই উলোট পালোট করে, মাঝ খান দিয়ে একটা পৃষ্ঠা বের করে আরুহীর দিকে তাকালো,
” নাও, এখান থেকে সব ওই সমুদ্রের পাঁচারের ব্যাপারেই আছে ”
আরুহী ভ্রু কুঁচকে ঘড়ির দিকে তাকালো, লোকটার রেকর্ড টা বের করতে দুই মিনিট ও লাগলো না, বোঝাই যাচ্ছে, এসব নিয়ে বেশ ঘাটাঘাটি করে।
আরুহী প্রায় ৪ ঘন্টা একটানা কাজ করে মাঝে মাঝে কিছু নোট করে নিলো,
দেখা শেষে চেয়ারে গা হেলিয়ে দিয়ে ঘড়ির দিকে তাকালো,
ঘড়িতে প্রায় সন্ধ্যা ছ’টা। ৩ টার দিকে তিহান বাইরে থেকে খাবার অর্ডার করেছিলো সেটাই খেয়েছে তাই আপাতত খিদে নেই।
আরুহী পাশে তাকিয়ে দেখে সুলতান ঘুমে ঢুলছে। কোন তদন্তে নিজের উপর তো প্রেসার যায় ই সাথে সুলতানের উপর তো আরোও বেশি যায় অথচ ছেলেটা কখনো মুখ ফুটে কিছু বলে না, যা বলে তাই করে, কখনো কোন আবদার ও নেই তার। অদ্ভুত কিন্তু ভীষণ ভালো।
আরুহী উঠে সুলতানের পাশে দাঁড়িয়ে আস্তে করে ডাকলো,
” সুলতান? সুলতান! ”
“……………..”
সুলতান পুরো ঘুম মনে হচ্ছে,
” সুলতান উঠো, যেতে হবে আমাদের ”
কথাটা বলতেই সুলতান হুড়মুড় করে উঠে দাড়িয়ে গেলো, আরুহীর বেশ হাসি পেলো সুলতানের কাজে তবে হাসলো না, ছেলেটা লজ্জা পেয়ে যাবে।
” চলো সুলতান আমার কাজ শেষ, এখন রিসোর্টে ফিরব তারপর রাতের কাজ টা রাতেই করবো ”
আরুহীর কথা শুনে সুলতান মাথা নাড়িয়ে বলল,
” জি ম্যাম ”
আরুহীর শরীর টা ম্যাচ ম্যাচ করছে, অস্বস্তি হচ্ছে কেন যেন! মাথাটাও ঝিম ধরে আছে, হয়তো রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে। এই ভেবে পা বাড়ালো দরজার দিকে,
হঠাৎ দরজা দিয়ে প্রবেশ করলো তিহান, বেশ পেরেসান দেখা যাচ্ছে, একটা গুরুত্বপূর্ণ কল আসায় তিহান চলে গিয়ে ছিলো কোথাও মাত্র ই এসেছে। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে কপালে, সিল্কি চুল গুলো কিছু টা কপালে ঘামের সাথে সেটে আছে আর শার্টের ইংক টা খুলে গেছে মুখটা লাল হয়ে আছে দেখতে পুরোই কিউট বাচ্চা।
আরুহী কে দেখে তিহান আহত দৃষ্টিতে তাকালো আরুহীর দিকে, মিনমিন করে বলল,
” চলে যাচ্ছো? ”
আরুহীর বেশ হাসি পেলো তিহানের কথা শুনে, দেখতেও বাচ্চা লাগছে, কথা বার্তাই ও বাচ্চা মনে হচ্ছে, কেউ দেখলে কখনোই বুঝতে পারবে না এই বাচ্চা ছেলে নাকি পুলিশ অফিসার!
আরুহী হাসি টাকে হজম করে বলল,
” হুম কাজ শেষ ”
তিহান আফসোসের স্বরে বলল,
” ইসস কেন যে তখন রেকর্ড গুলো বের করে দিয়েছিলাম, না হলে আর কিছু ক্ষন থাকতে হতো তোমাকে ! ”
” আচ্ছা একটা ধন্যবাদ আপনি প্রাপ্য আমাকে সাহায্য করার জন্য, আজ তাহলে আসি ”
বলেই আরুহী গটগট পায়ে বেরিয়ে গেলো,
গাড়িতে উঠে রিসোর্টে এসে নিজের রুমের মধ্যে ঢুকে দরজা লাগিয়ে ই মুখের মাস্ক টা খুলে চুল গুলো খোঁপা করে এসির পাওয়ার বাড়ালো আরুহী। চরম ভাবে অস্বস্তি হচ্ছে তার। ঠোঁট মুখ বারবার শুকিয়ে আসছে, গোসল করার শক্তি টুকু ও যেন লোপ পাচ্ছে তার।
চোখ দুটোও অন্ধকার হয়ে আসছে হয়তো সুগার ফল করেছে কিংবা ব্লাড প্রেশার লো হয়ে গেছে এটাই ধারনা তার।
আরুহী ধীরে ধীরে উঠে নিজের ব্যগ থেকে একটা চকলেট বের করে খেতে লাগলো, এতো প্রেসার আর দৌড়াদৌড়ি তে প্রায় ই তার সুগার ফল করে।
আরুহী শার্টের বোতাম উপর থেকে দুটো খোলা রেখেই শুয়ে পড়লো, ভালো লাগছে না তার। কেন জানি তার মনে হচ্ছে, হয়তো তার হাতে সময় বেশি নেই! তাচ্ছিল্যে হাসলো আরুহী, বিধাতা মনে হয় সবার ভাগ্যে সুখ রাখে না, সেই অভাগা দের মধ্যে আরুহী একজন!
ভাগ্যে কি আছে জানা নেই তবে যতদিন দুনিয়ায় আছে, ততদিনে নিজের মায়ের জন্য কিছু তো একটা করতেই হবে, নয়তো তার বুঝতে বাকি নেই চারপাশে তার মায়ের শত্রুর অভাব নেই। কাছের মানুষ জন ই শত্রুতা করে, আয়াত বুদ্ধি মতী তবে আরুহী এতোদিন দুরে থেকে বুঝেছে আয়াত নিজেও বেশ নরম মনের, দিন শেষে এটাই যদি কাল হয়ে দাড়ায় তবে কি করবে সে?
চলবে….
[ কাল থেকে রেগুলার দেওয়ার চেষ্টা করবো, আর আজকের পর্ব টা কেমন হয়েছে জানাবেন ]