#মায়াবিনী_২
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_২১
____________________
“ম্যাম এখন কি করবো? লোকেশন অনুযায়ী তো চলে এলাম এখন? ”
আরুহী খানিকটা ভ্রু কুঁচকে আশেপাশে তাকালো, জায়গাটা সমুদ্রের কাছে হলেও বেশ নির্জন। ওরা নতুন কোন ফাঁদ পাতে নি তো আবার?
মনে হচ্ছে কিছু একটার তীক্ষ্ণ শব্দ কানে আসছে আরুহীর , শব্দ টা এতো টায় তীক্ষ্ণ যে একবার মনে হচ্ছে আওয়াজ হচ্ছে তো আরেকবার মনে হচ্ছে আওয়াজ হচ্ছে না।
এতো এতো ক্রাইম নিয়ে কাজ করেছে সে যে আওয়াজ টা কিসের সেটা বুঝতে মিনিমাম টাইম টুকুও লাগলো না আরুহী র।
আরুহী সুলতান কে কিছু একটা ইশারা করতেই দুই জনই দরজা খুলে দু দিক থেকে লাফ দিলো।
আরুহী আর সুলতান উল্টো দিকে দৌড়ে কিছু দুর যেতেই ট্রাক টার বিস্ফোরন শব্দ কানে ভেসে আসলো।
” বাব্বাহ্ ম্যাম আপনার উপস্থিত বুদ্ধি আর তীক্ষ্ণতা বড্ড বেশি। আরেকটু সময় অপেক্ষা করলেই দুজন ই ট্রাকের সাথে উড়ে যেতাম ”
আরুহী হাসলো। আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসি টা আরোও প্রসারিত করলো, ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো সমুদ্রের দিকে।
প্যান্ট গুটিয়ে সমুদ্রের তীরে পানিতে পা ভিজিয়ে বসে পড়লো,
হঠাৎ পকেটে থেকে ফোনে টুং করে মেসেজ আসার শব্দে আরুহী পকেটে হাত দিয়ে ফোন বের করে কিছু একটা দেখে আবার ফোন টা পকেটেই রেখে দিলো।
আকাশের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল,
” থ্যাংক ইউ মা এন্ড লাভ ইউ , লাভ ইউ সোও মাচ ”
সুলতান ভ্রু কুঁচকে আরুহীর দিকে তাকিয়ে আমতাআমতা করে বলল,
” ম্যাম আপনি যাবেন না? ”
আরুহী ঘাড় ঘুরিয়ে সুলতানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কোথায়? ”
“ম্যাম ডিল স্পটে ”
আরুহী সামনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
” এতো চাপ নিচ্ছো কেন সব ঠিক আছে, তুমি বরং সমুদ্রের পানিতে পা ভিজিয়ে বসে পড়ো ”
সুলতানের মাথায় তো কিছু ই ঢুকছে না, এতো ডিফিকাল্ট একটা সিচুয়েশনে আরুহী এতো ঠান্ডা কি করে সেটাই তো ভেবে পাচ্ছে না সে।
” কিন্তু ম্যাম… ”
” উহুম কোন কিন্তু না, চুপচাপ বসে পড়ো ”
সুলতান আর কথা না বাড়িয়ে কিছু টা দুরত্ব বজাই রেখে বসলো। মেয়ে টা কেমন জেনো অদ্ভুত আর রহস্যময়, এই মেয়েকে বুঝতে হলে তার আরোও মিনিমাম দশ বার জন্ম নিতে হবে। তবে যদি এই মেয়ের ভাব মূর্তি বুঝতে পারে! তবুও সিউর না।
বেশ কিছু ক্ষন নিরবতা পালন করার পর আরুহী ঘাড় ঘুরিয়ে সুলতানের দিকে তাকালো, পুনরায় আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
” বুঝলে সুলতান, পৃথিবীর মানুষ গুলো না নিজেকে বড্ড বেশি চালাক মনে করে, এটা কি ঠিক বলো তো? ”
সুলতান আরুহীর কথার আগা মাথা কিছু না বুঝে চুপ করে রইলো,
আরুহী সুলতানের দিকে তাকিয়ে হাসলো,
” উহুম এটা তো মোটেও ঠিক না, জানো তো একটা কথা আছে বাপের ও বাপ থাকে ”
” ম্যাম আমি আপনার কথার কোন মানেই বুঝতে পারছি না একটু ক্লিয়ার করে বলবেন? ”
” উহুম আমার ক্লিয়ার করতে হবে না একটু পর তুমি নিজেই ক্লিয়ার হয়ে যাবে, এখন বরং তুমি অফিসার তিহান রেহমান কে কল করো, আর খবর টা জানো ”
আরুহীর কথা শেষ হতে না হতেই সুলতান পকেটে হাত দিয়ে নিজের ফোন বের করে তিহানের নাম্বারে কল করলো,
দু বার রিং হতেই তিহান ফোন পিক করে বলল,
” হ্যালো সুলতান কি খবর তোমাদের? কোথায় আছো? কিছু হয় নি তো? ”
সুলতান আমতাআমতা করে বলল,
” আবব আমাদের কিছু হয় নি, বাট ঐ দিকের খবর কি? ”
” খবর আর কি হবে! সবগুলা ব*দ*মাশ কে ধরলাম, এখন আপাতত জেলে আছে কাল সকালে নিউজে চলে যাবে ”
সুলতান ভ্রু কুঁচকে বলল,
” ব*দ*মাশ? ”
” আরে ওই মা*দ*ক পা*চা*রকারী চক্র আর কি!”
সুলতান বিস্ফোরণ দৃষ্টিতে আরুহীর দিকে তাকিয়ে বলল,
” ওরা ধরা পড়েছে? ”
” ওমা তুমি জানো না? আচ্ছা ঠিক আছে না জানলে আরুহী কে জিজ্ঞেস করো ও তো সব জানে, আমি বরং এখন রাখি বিভিন্ন ডকুমেন্টস রেডি করতে হবে, কত দায়িত্ব আমার, রাখি হে? আরেকটু পর আসছি আমি ”
” ঠিক আছে ”
বলেই সুলতান ফোন কেটে আরুহীর দিকে তাকালো,
” ম্যাম আমি তো কিছু ই বুঝতে পারছি না ”
আরুহী হেসে উঠলো,
” ওরা নিজেদের কে খুব বেশি চালাক মনে করেছে আর আমাদের বোকা ভেবেছে যা তাদের সবচেয়ে বড় উইক পয়েন্ট। কাল রাতে আমি যখন সব কিছু গুছাচ্ছিলাম তখন আমার ফোনে একটা মেসেজ আসে, মেসেজ টা এমন ছিলো যে, আমরা যে ভাবে এগুচ্ছি সেটা ভুল আর বলল ওরা নাকি বুঝে ফেলেছে আমরা কোন পথে এগুবো তাই প্ল্যান চেঞ্জ করতে বলল আর নিজেই বলে দিলো কিভাবে কি করতে হবে, কে মেসেজ দিয়েছিলো জানো? ”
সুলতান মাথা নাড়ালো মানে সে জানে না,
আরুহী সামনে তাকিয়ে বলল,
” আমার মা, মাহাবীন খান আয়াত ”
” আয়াত ম্যাম? ”
” হুম. বলল আমরা যেভাবে করছি সেভাবেই আরেকটা রিস্ক নিতে, আর ওরা বন্দরেই ডিল টা কমপ্লিট করবে আমাদের সরিয়ে তাই আমরা দুজন সরে আসবো আর পুলিশ বাহিনী ওখানেই থাকবে আর ওদের ধরবে আর হলোও তাই ”
সুলতান চোখে মুখে বিস্ময় নিয়ে বলল,
” এত কিছু হয়ে গেলো আর আমি কিছু ই জানি না, যাক ভালো ই হলো ”
” হুমম ”
” ম্যাম তাহলে আমরা ফিরছি কবে ঢাকায়? ”
” কাল ”
” ঠিক আছে ম্যাম ”
কিছু ক্ষন নিরবতা পালন করার পর হঠাৎ নিরবতার পর্দা ছিন্ন করে কিছু গাড়ির আওয়াজ আসছে যা আরুহীর কানে যা-ওয়া মাত্র ই সে উঠে দাড়ালো,
” চলো গাড়ি চলে এসেছে ”
আরুহী সামনে এগিয়ে যাচ্ছে আর সুলতান পিছনে পিছনে,
সামনে কিছু দুর যেতেই দেখলো দুইটা সরকারি গাড়ি হয়তো থানা থেকে ই এসেছে। একটা থেকে তিহান নেমে এলো,
” হেই মায়াবতী কি অবস্থা তোমাদের? ”
আরুহী কিছু বলার আগেই সুলতান বলে উঠলো,
” বোম ব্লা*স্ট ”
তিহান ভ্রু কুঁচকে বলল,
” বোম? বোম ব্লাস্ট হয়েছে? কখন? কিভাবে? ”
” আরে আমরা যেই ট্রাকে ছিলাম ওইটাই, নামতে আর ১ মিনিট লেট হলেই ট্রাকের সাথে আমরাও ব্লাস্ট হয়ে যেতাম, খোদার অশেষ রহমতে আমি আর ম্যাম ঠিক আছি ”
তিহান আরুহীর দিকে তাকিয়ে বলল,
” কোথাও চট পাওনি তো? ”
আরুহী নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে বলল,
” নাহ্ ”
” ঠিক আছে চলো আর দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না, অনেক ধকল গেছে এখন বাসায় গিয়ে একটু রেস্ট নাও ”
” হুমম ”
আরুহূ চুপচাপ ড্রাইবারের সাথের সিটে বসে পড়লো,
তিহান আর সুলতান বসলো পিছনে।
কোন ভাবে ক্লান্ত শরীর নিয়ে রুমে এসে ধপ করে সোফায় বসে শরীর হেলিয়ে দিলো পিছনে চোখ বন্ধ করলো আরুহী, শরীর টা যেন দিন কে দিন খারাপ আর দূর্বল হচ্ছে।
হঠাৎ নিজের সামনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ মেলে তাকালো আরুহী, সামনে শরবতের গ্লাস দেখে ঠোঁট মেলে হাসলো, এই সময় কেন যেনো এই জিনিস টা বড্ড প্রয়োজন ছিলো, গ্লাস টা হাতে নিয়ে ই এক শ্বাসে পুরোটা শেষ করে গ্লাস দিতে দিতে বলল,
” ধন্যবাদ বোনু, এটার দরকার ছি.. ”
আরুহী থেমে গেলো, এই সময় এই লোকটাকে এখানে সে মোটেও আশা করে নি,
” আপনি? আপনি এখানে কেন ডক্টর সাহেব? ”
আরুশ আরুহীর হাত থেকে গ্লাস টা নিয়ে টেবিলে রাখলো, আরুহীর পাশে বসে আরুহীর কথা গুরুত্ব না দিয়ে কপাল চেক করতে করতে বলল,
” শরীর কি বেশি খারাপ লাগছে? মাথা ব্যথা করছে? ”
আরুহী পিছনে মাথা হেলিয়ে ধীরে ধীরে বলল,
” leave me alone ”
আরুশ খানিকটা চমকে গিয়ে বলল,
” আরুহী তুই উইক, জেদ করিস না, চল তোকে সুইয়ে দিই ”
” আমাকে জোরে কথা বলতে বাধ্য করবেন না ডক্টর, রুশা ঘুমাচ্ছে, আমাকে আমার মতো একা ছেড়ে দেন, আপনি এখন যেতে পারেন ”
” বাট… ”
” কোন কিন্তু নয় আপনি বেরিয়ে যান, গেট আউট ফ্রম হেয়ার ”
আরুশ উঠে চলে যেতে গিয়ে দরজায় থমকে দাঁড়ালো, এক পলক পিছনে তাকিয়ে আরুহীকে দেখলো, সে এখনো পিছনে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।
” আজকে তোর বিহেভ এ আর যায় হোক একটা ডিসিশন আমার কনফার্ম। আমি যেমন ভালো তার চেয়েও খারাপ, এতদিন অনেক মানাবার চেষ্টা করেছি অনেক ভালো সেজেছি, এখন থেকে আরুশ খান কতটা ডেঞ্জারাস হতে পারে সেটাই দেখাবো,
wait and watch… ”
চলবে…
[ আজকের পর্ব টা কেমন হ’য়েছে জানাবেন কিন্তু.. ]