#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_২৪
____________________
” এই যে ফুপি, এই হলো তোমার ছেলের হবু বউ আর তোমার হবু বউ মা ”
সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে কথা টা কানে গেলো আরুহীর। বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকালো সে দিকে।
অতীব আটা ময়দা মাখানো পাতলা রেড কালারের শাড়ির সাথে সিল্ভলেস ব্লাউজ কালো রঙের কম্বিনেশন টা আরুহীর ঠিক বুঝে আসছে না। তার উপর চুলের রং টা না হয় নাই বলা হলো।
সকাল সকাল এমন নাটকের মানে খুঁজে পেলো না আরুহী। যদিও এখন সকাল বলা চলে না, বেলা এখন এগারো টা বাজছে।
সারারাত ভর কাজ করে ভোরে রাতে ঘুমানোর ফল হলো এতো বেলা করে ঘুম থেকে উঠা।
আয়াত খবরের কাগজ থেকে চোখ উঠিয়ে এক পলক সামনে দাঁড়ানো মেয়েটার দিকে তাকালো।
মেয়েটার দিকে তাকিয়ে একটু ঠোঁট এলিয়ে হেসে পুনরায় খবরের কাগজে মুখ গুজলো।
ড্রয়িং রুমে খান আর চৌধুরী বাড়ির সকলেই উপস্থিত। আরুহী সিড়ি বেয়ে অর্ধেক নেমে এদিক ওদিক তাকিয়ে রুশা কে ডাকলো।
আরুহীর কন্ঠ শুনতে পেয়ে ড্রয়িং রুমের সকলের দৃষ্টি চলে গেলো আরুহীর পানে । আরুহী এক পলক সেদিকে তাকালো, পা বাড়ালো না আর ড্রয়িং রুমের দিকে। রুশার দিকে তাকিয়ে ঘাড়ে আলতো চাপ দিতে দিতে বলল,
” রুশো শোন.. ”
রুশা আরুহীর সামনে দাঁড়িয়ে কিছু একটা ভাবতে ভাবতে বলল,
” হুম দি ভাই, কিছু বলবে? ”
” হুম, মাথা আর ঘাড় টা বেশ ধরেছে, একটু কড়া করে লিকার চা বানিয়ে দে তো, আমি রুমে গেলাম ”
আরুশ আশ্চর্য কণ্ঠে বলল,
” রুমে গেলাম মানেহ? আজ বাদে কাল বিয়ের অনুষ্ঠান আর তুই রুমে যাবি মানে টা কি আরুহী? ”
আরুহীর নিরস কণ্ঠ, নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে সিড়ির রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো,
” এখন কি আপনার মতে আমার কি লুঙ্গি ডান্স দেওয়া লাগবে না কি? না কি আপনার ওই মেরিনেট করা হবু বউকে পূজা করতে হবে? কোনটা মিস্টার আরুশ খান? ”
আরুশ অবাক মিশ্রিত কন্ঠে জানতে চাইলো,
” মেরিনেট করা হবু বউ মানে কি ? ”
আরুহী ঠোঁট কামড়ে হাসি টা কন্ট্রোল করে বিরস মুখে বলল,
” আসলে আমি সবসময় দেখে আসছি, মাছ কিংবা মাংস রান্নার কিছু ক্ষন পূর্বে মাছ বা মাংস কে মরিচ, লবন, হলুদ আরোও হাজারো রকমের মশলা দিয়ে ভালো ভাবে মাখিয়ে রাখা হয়, আপনার হবু বউ কে দেখে তার চেয়ে কম কিছু মনে হচ্ছে না, যেই পরিমাণ আটা ময়দা মাখালো তাতে তো তার চেহারা টাই বোঝা যায় না,
what ever,
আপনি আবার মনে করবেন না আমি আপনার বউ কে সেধে সেধে অপমান করছি! আমি কিন্তু মোটেও অপমান করছি না, আমি যাস্ট কথার কথা বললাম, ডোন্ট মাইন্ড ”
আরুহীর কথা শেষ হতে না হতেই রুশা মুখে হাত দিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠলো, আরুহী ঘাড় ঘুরিয়ে চোখ পাকাতেই কোন মতনে হাসি থামিয়ে ঠোঁটে এক টা আঙুল রেখে চুপচাপ সোজা হয়ে দাঁড়ালো। বাকি সকলের দিকে তাকিয়ে দেখি সবাই ই ঠোঁট টিপে হাসছে।
আরুহীর কথার পরিপ্রেক্ষিতে পুস্মিতা নামের মেয়েটা চোখ ছোট ছোট করে আরুহীর দিকে কিছু ক্ষন তাকিয়ে থেকে আরুশ খান এর দিকে কিছু টা এগিয়ে গিয়ে হাত জরিয়ে ধরে বলল,
” আরুশ দেখো, এই মেয়েটা আমাকে এভাবে অপমান করলো আর তুমি কিছু ই বলবে না! তোমার হবু বউ কে অপমান করলো তুমি চুপ করে থাকবে? ”
আরুশ এক পলক পুস্মিতার দিকে তাকিয়ে তার হাত থেকে নিজের হাত মুক্ত করতে করতে আরুহীর দিকে তাকিয়ে বলল,
” আরুহী তুই বাড়ির নতুন অতিথি কে এভাবে অপমান করতে পারিস না। ভুলে যাস না আজ বাদে কাল ও এই পরিবারের ই সদস্য হবে ”
আরুহী গলা ঝেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো,
” আমি কি পারি আর কি পারি না সেটা এট লিস্ট আপনার কাছ থেকে জানতে আসবো না ডক্টর আরুশ খান। আজ বাদে কাল বিয়ে করছেন, এবার সংসার টা মন দিয়ে করলে হয়! ”
আরুহী পুনরায় রুশার দিকে তাকিয়ে বলল,
” এখনো এখানে সং সেজে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? তোকে না কখন বললাম চা আনতে মাথা ব্যাথা করছে! ”
রুশা মাথা নাড়িয়ে রান্না ঘরের দিকে যেতে যেতে বলল,
” তুমি রুমে যাও আমি নিয়ে আসছি ”
আমি সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে পিছনে ফিরে আরুশের দিকে তাকিয়ে বললাম,
” আপনার বিয়েতে কি কি ইভেন্ট হবে আর কি কি দরকার তার একটা চার্ট করে আমাকে দিয়ে দেবেন, আমি পরে সিডিউল ঠিক করে নিবো। বাসর ঘর পর্যন্ত নেওয়ার দায়িত্ব যখন নিয়েছি সেই দায়িত্ব আমি পালন করবো, আর আরুহী চৌধুরী কখনো নিজের কথার হেরফের করে না ”
বলেই আরুহী সিড়ি দিয়ে উঠে নিজের রুমে চলে গেলো।
আরুশ এক দৃষ্টিতে আরুহীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
” মেয়ে যখন দায়িত্ব নিয়েছে তখন সে তার দায়িত্ব অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে, চিন্তা করিস না তোর বিয়ে দিয়েই তবে ক্ষান্ত হবে সে ”
পিছনে থেকে আবরারের কন্ঠ শুনতে পেয়ে পিছনে ফিরে তাকালো আরুশ। এবার তার ও মনে হচ্ছে আরুহী যেই মেয়ে সত্যি সত্যি ই বাসর ঘরে না ঢুকিয়ে শান্ত হবে না সে।
আরুশ মুচকি হেসে বলল,
” হুমম সেটা তো আমিও চাই। বুড়ো হয়ে যাচ্ছি তো, তোমাদের দাদা ডাক ও তো শোনার সময় হয়ে গেলো আর কত অপেক্ষা করবে? মেয়েটাকে ও তো বিয়ে দেওয়ার নাম করছো না ”
আরুশের কথা শুনে আবরার বিরস মুখে বলল,
” সে সাহস কি আমার আছে নাকি? যেমন মা তার তেমন মেয়ে, রাগ যেন নাকের ডগায় নিয়ে ঘুরে, ও যতদিন না বিয়ের কথা বলছে কারোও সেই সাধ্যি আছে নাকি? ”
আয়াত আড় চোখে তাকালো আবরারের দিকে যা দেখে আবরার বেক্কেল মার্কা একটা হাসি দিলো।
আরুশ পুস্মিতাকে সোফায় বসতে ইশারা করে নিজেও সোফায় বসতে বসতে বলল,
” হে হে সেই আশায় বসে থাকো ”
আরুশের কথায় আয়াস গা ছাড়া ভাব নিয়ে আড়মোড়া ভেঙে বলল,
” তার বিয়ে নিয়ে তোর মাথা ব্যাথা কেন? নিজের চরকায় তেল দে আরুশ ”
মিরা রান্না ঘর থেকে কিছু বিস্কিট আর ফল এনে ঠাস করে টি টেবিলে রাখলো, বোঝায় যাচ্ছে ছেলের বউ হিসেবে পুস্মিতাকে তার মোটেও পছন্দ না তবে কি আর করার। কিছু বলতে ও পারছে না, ছেলে বড় হয়েছে, নিজের ভালো এখন না হয় নিজেই বুঝুক।
আরুশ মায়ের দিকে মুচকি হেসে তাকালো, সেও যে ব্যাপার টা বুঝতে পারে নি তা কিন্তু না।
বেশ কিছু ক্ষন কথা বার্তা শেষে,
আরুশ পুস্মিতাকে বাহির পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এসে ড্রয়িং রুমে বসলো। ড্রয়িং রুমে আপাতত সে আর তার চাচা মানে মাহির খান ছাড়া আর কেউ নেই।
আরুশ মাহিরের গা ঘেঁষা দিয়ে বসলো, ফিসফিস করে বলল,
” কি মনে হয় চাচ্চু প্ল্যান কি ফ্লপ হবে? ”
মাহির সোফাই গা হেলিয়ে চোখ বন্ধ করে ফিসফিস করে বলল,
” বাই চান্স এর লাইসেন্স নাই বাছাধন! ”
আরুশ চুপ করে গেলো, বাই এনি চান্স যদি প্ল্যান টা ফ্লপ করে তাহলে তো শেষ…
______________
নিজের রুমেই ল্যাপটপে কাজ করছে আরুহী। হঠাৎ দরজা লাগানোর শব্দে নড়েচড়ে উঠলো সে,
পিছনে ঘুরে না তাকিয়ে ই বলল,
” কিরে রোশো এখন ই না চা দিয়ে বকবক করে গেলি আবার কি দরকার এখানে? ”
পিছনে থেকে কারো কন্ঠ ই শোনা গেলো না, কড়া পারফিউম এর গন্ধ জানান দিচ্ছে এখানে রুশা নেই আছে অন্য কেউ।
আরুহী ভ্রু কুঁচকে পিছনে তাকালো, ল্যাপটপ বিছানায় রেখে উঠে দাড়াতে দাঁড়াতে বলল,
” কি ব্যাপার ডক্টর আরুশ খান, হঠাৎ আমার রুমে? ”
আরুশ কোন কথা বলছে না, ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে আরুহীর দিকে, আরুহী যেহেতু বিছানার সাথে লেগে দাঁড়িয়ে আছে সেহেতু পিছনে যাওয়ার স্কোপ নেই।
আরুহী অগত্যা ই নিজের জায়গায় স্থির দাঁড়িয়ে রইলো। আরুশ এগিয়ে এসে আরুহীর মুখোমুখি দাঁড়ালো,
” কিছু বলবেন? ”
” কেন এমন করছিস আরু? ”
আরুহী ভ্রু কুঁচকে বলল,
” কেমন করছি? ”
” সব কিছু এতো স্বাভাবিক কিভাবে নিচ্ছিস তুই? এতো টা স্বাভাবিক কেন যেন আমার অস্বাভাবিক লাগছে আরু! ”
” অস্বাভাবিক লাগার কোন কারণ ই তো দেখছি না আরুশ খান, অল ইজ ওয়েল! ”
আরুশ আরুহীর দুই কাঁধে ধরে ঝাকিয়ে বলল,
” না স্বাভাবিক না, তুই কিছু লুকাচ্ছিস আরুহী, কি লুকাচ্ছিস বল! তুই না বলতি আমার অনুমান কখনো মিথ্যে হয় না! ”
আরুহী আরুশের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলল,
” এটা সম্পুর্ন আপনার বদ্ধ ধারণা আরুশ খান, সব কিছু ঠিক আছে, আর কয়েক দিন পর আপনার বিয়ে, এখন অন্য একটা মেয়ের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেওয়াটা নিশ্চয়ই ভালো লক্ষন না! চলে যান আপনি? ”
” তুই এমন কেন করছিস আরু, তোর কি একটুও কষ্ট হচ্ছে না? ”
আরুহী মুচকি হাসলো,
” নাহ ”
” মিথ্যা কথা আরু, তোর কষ্ট হচ্ছে কিন্তু ওই যে অভিমান আর ভুল বুঝা ওটাই তোকে সেটা বুঝতে দিচ্ছে না, আমি জানি তুই আমাকে আমার থেকে ও বেশি ভালোবাসিস কিন্তু তুই তো তা মানতেই নাড়াজ।
শোন আরু,
ভালেবাসা হচ্ছে একটা বই আর ভুল বুঝাবুঝি আর অভিমান হলো তার একটা পৃষ্ঠা!
কাউকে যদি সত্যি ই মন থেকে ভালোবাসিস, একটা পৃষ্ঠার জন্য পুরো বইটাকে কখনোও ফেলে দিস না ”
বলেই আরুশ দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো।
আরুহী ধপ করে বিছানায় বসলো, কি করবে সে? কি করা উচিত তার? কিছু ই যেন বুঝতে পারছে না সে! মাকে যে এখন খুব বেশি দরকার তার। মায়ের কাছে নাকি সব প্রশ্নের উত্তর থাকে তাহলে তার প্রশ্নের উত্তর টাও নিশ্চয়ই থাকবে।
চলবে..
[ কেমন হয়েছে জানাবেন প্লিজ.. ]