মায়াবিনী_(২) #Ayrah_Rahman #পর্ব_৩১

0
727

#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_৩১

_____________

হল রুমের বাইরে থেকে ভেতরকার মানুষের চিৎকার বলুক আর যায় বলুক শুনতে বেশ গ্রাম্য মাছ বাজারের থেকে কম কিছু লাগছে না। আরুহী বরাবর ই কোলাহল এভয়েড করে তবুও ঘুরে ফিরে এই মরার কোলাহলেই আসতে হয়।

প্রায় মিনিট দশেক হবে আরুহী হল রুমের ঠিক দরজার সম্মুখে কিছু টা দুরে দাঁড়িয়ে আছে আর ভেতরকার চিৎকার চেঁচামেচিতে বারবার নাক মুখ খিঁচে বিরক্তি প্রকাশ করছে। সুলতান বেশ অনেক টা সময় ধরে আরুহীকে লক্ষ্য করছে অথচ মেয়ের ভেতরে যাওয়ার কোন লক্ষ্যন ই যেন দেখতে পাচ্ছে না, আশানুরূপ ফল দেখতে না পেয়ে কিছু বলার জন্য ঠোঁট ভিজালো, আস্তে করে বলে উঠলো,

” ভেতরে যাবে না? ”

” হুম যাবো ”

আরুহীর ঝটপট উত্তরে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল সুলতান। মেয়ের মতিগতি বোঝা দায়। সুলতান এই প্রথম কোন মেয়েকে এত সিরিয়াস মোমেন্ট গুলো তে এতো শান্ত থাকতে দেখে, আর অবাক হয় সে বারবার , যেখানে তার মতো একজন তাগড়া যুবক, এতো শান্ত মেজাজের মানুষের মাথা গরম হয়ে যায় আর আরুহীর মতে এমন উগ্র মেজাজের মানুষ ঠান্ডা থাকে! আসলেই অদ্ভুত!

আরুহী কিছু একটা ভেবে সামনে যেতে যেতে বলল,

” চলো ভেতরে যাওয়া যাক, চেঁচামেচি কিছু টা হলেও কমেছে, এতোক্ষণ তে মাছের বাজার বানিয়ে রেখেছিলো ”

সুলতান পরিপ্রেক্ষিতে কিছুই বলল না। আরুহীর পিছনে পিছনে সেও হল রুমের ভেতরে প্রবেশ করলো। আরুহী সতর্ক দৃষ্টি তে এক পলক দেখে নিলো চারপাশে। সন্দেহ করার মতো তেমন কিছুই যেন নজরে আসছে না তার, এতেই যেন সন্দেহের পরিমান টা বেড়ে গেলো আরুহীর। আরোও দু বার নজর ঘুরিয়ে ভীড় ঠেলে এগিয়ে গেলো মঞ্চের দিকে।

এতোক্ষণে দুই রাউন্ড শেষ হয়ে তৃতীয় রাউন্ড শুরু হয়েছে। কম্পিটিশন টা শুরু ই হয়েছে বোধ হয় চার টায়।

আরুহী স্টেজের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো, কুঁচকুঁচে কালো মতন একজন শক্ত পোক্ত চেহারার লোক, বয়সটা ঠিক আরুহী ঠাউর করতে পারলো না, তবে চেহারায় অহংকার বিদ্যমান, একের পর এক অংশ গ্রহনকারী দের হারিয়ে যেন অহংকার তড়তড় করে বাড়ছে।

শেষ অংশগ্রহন কারীকে হারিয়ে যেন অহংকার টা আরোও দুশো গুন বেড়ে গেলো, স্টেজ থেকে চিৎকার করে বলতে লাগলো,

” আর কেহো আছো যে আমারে হারাইবে? এই আমজাদ কে হারাইবো? এই আমজাদ হারানোর মতন কেহো নাই জানি, তবুও কইতাছি কেউ থাকলে হমনে আহো ”

চারপাশে পিন পতন নিরবতা বিরাজ করছে,

” তোমাকে হারালে আমার লাভ কি হবে কমজাত! ওহ সরি আমজাদ ”

হঠাৎ কোন এক মেয়ের কর্কষ কন্ঠ শুনতে পেয়ে হল রুমের দরজার দিকে তাকালো সকলে। সবার দৃষ্টির কেন্দ্র বিন্দু হলো আরুহী। আরুহী সামনে এগিয়ে গেলো,

পুনরায় কন্ঠে গাম্ভীর্যতা বজায় রেখে উচ্চ স্বরে বলল,

” কি হলো বলছো না কেন? তোমাকে হারালে আমার লাভ কি? ”

আরুহীর কথা কর্নগোচর হতেই স্ব শব্দে হেসে উঠলো আমজাদ। বেশ বিদ্রুপের স্বরে বলল,

” কে হারাইবো আমারে? তুই? তোর মতো পুঁচকে ছেড়ি তাও শরীলো নাই এক বিন্দু গোস্ত, ফুঁ দিলেই তো উইড়া যাইবি! তুই আবার আইসোস আমার লগে প্রতিযোগিতা করতে ”

আরুহী মুচকি হাসলো, এগিয়ে গেলো স্টেজের দিকে, লাফ দিয়ে স্টেজে উঠে বক্সিং গ্লাভস পড়তে পড়তে এক পলক উৎসুক জনতার দিকে তাকিয়ে পুনরায় আমজাদের দিকে তাকিয়ে বলল,

” আগে বলো তোমাকে হারিয়ে আমার লাভ কি? ”

আমজাদ মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

” তুই যা কবি তাই ”

আরুহী ভ্রু কুঁচকে বলল,

” সত্যি? ”

” হইয়ো যাহ সত্যি, আর আমজাদ কহনো তার কথার হেলাপ হরে না ”

আরুহী সবার দিকে নজর ঘুরিয়ে বলল,

” আপনারা কিন্তু সাক্ষী! ”

সকলে উচ্চ স্বরে বলে উঠলো,

” জ্বিইই”

আরুহী মুচকি হেসে কন্ট্রোলার কে বলল,

” আপনি শুরু করেন ”

কন্ট্রোলার স্টার্ট বলতেই শুরু হলো কম্পিটিশন, সকলের দৃষ্টিতে অপেক্ষা আর শেষ টা দেখার আকাঙ্খা থাকলেও সুলতান বেশ আরামেই বসে বসে কম্পিটিশন উপভোগ করছে। কারণ তার হয়তো ফলাফল জানাই আছে।

প্রথমে আরুহী আর আমজাদ বেশ অনেক ক্ষন ঘুরে ঘুরে হিট করছে, তবে হিট গুলো আমজাদ ই করছে আরুহী তা হাত দিয়ে প্রতিহত করছে, প্রায় চার পাঁচ টা মার দেওয়ার পর আরুহী হুট করেই আমজাদের ঘাড় বরাবর একটা ঘুষি দিতেই আমজাদ নিচে পড়ে যায়, ঘুষি টা এতোটায় জোরে ছিলো যে বেচারা আমজাদ আর সোজা হয়ে বসতেই পারছে না।

আরুহী নিচে ঝুঁকে গেলো, স্টেজের ফ্লোরে বার দুয়েক টোকা দিয়ে আমজাদের কানের কাছে ঝুঁকে বলল,

” ছোট বেলায় পড়েছিলাম অহংকার পতনের মূল , আজ স্ব চক্ষে দেখলাম। মেয়ে বলে অবহেলা করা টায় তোমার দুর্বলতা, তোমার ভালোর জন্য জানিয়ে দিলাম, আমি আরুহী চৌধুরী বক্সিং চ্যাম্পিয়ান, তোমার মতো কতো কমজাত কে সোজা করলাম আর তুমি তো… আমার কিন্তু এখানে আসার মূল কারণ তোমার সাথে বক্সিং ছিলো না তবে ভালো লাগলো ”

বলেই আরুহী সোজা হয়ে দাড়ালো, ঘাড় বাঁকিয়ে কন্ট্রোলারের দিকে তাকিয়ে বলল,

” হসপিটালে এডমিট করুন, মনে তো হয় না এক সপ্তাহের আগে ঘাড় সোজা হবে তবুও দ্রুত হসপিটাল নিয়ে যান আর এই হল রুমের তত্ত্বাবধানে যারা ছিলো তাদের রেখে বাকিদের বের করে দেন ”

আরুহীর কথা শুনে কন্ট্রোলার বেশ আমতাআমতা করতেই আরুহী চোখ পাকিয়ে আমজাদ কে দেখিয়ে বলল,

” এই অবস্থায় যেতে চান? ”

” নাআআআ নাহ, আমি এক্ষুনি সবাই কে বের করছি”

প্রায় দশ মিনিটের মাথায় হল রুমে গুটি কয়েক মানুষ ছাড়া সব ফাঁকা। তার মানে এরাই এই হলরুমের পরিদর্শক।

আরুহী ঘাড় বাঁকিয়ে সবার দিকে দৃষ্টি ঘুরালো, এতোক্ষণে আমজাদ কেও নিয়ে চলে গেছে, সুলতান কে ইশারা করতেই সুলতান হল রুমের দরজা লাগিয়ে দিলো,

ওই লোক গুলো মধ্যে থেকে খাটো মতন একটা লোক এগিয়ে এলো স্টেজের দিকে,

” এই কেরে তুই? এখানে কি করিস? মরার পাখনা গজাইছে নাকি? ”

আরুহী হাসলো, কোমড় থেকে রিভলবার টা বোর করে কপালো স্লাইড করতে করতে হেটে স্টেজের ঠিক মাঝ বরাবর গেলো,

কন্ঠ উঁচু করে বলল,

” এই রিভলবারে মাত্র ছ’টা গুলি আছে, এখান থেকে যদি নিজের শরীরে নিতে না চাও তবে যে যেখানে আছো দাঁড়িয়ে থাকো, আগানোর কিংবা এট্যাক এর বিন্দু মাত্র চেষ্টা করো না ”

হাতে রিভলবার দেখে কারোর আর আগানোর সাহস হলো না। আরুহী ঠিক মাঝখানে গিয়ে ঝুঁকে নিচে টোকা দিয়েই মুচকি হাসলো, এক হাতে তখনো বক্সিং গ্লাভস পড়া। আরুহী সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে নিচে একটা পাঞ্চ করতেই কুড়মুড় শব্দে ভেঙে গেলো স্টেজের মাঝখান টা। আরুহী দেখলো কাঠ টা বেশ শক্ত করে ই রাখা আছে। টেনে টেনে সরাতেই নজরে এলো একটা দরজার, দরজাটা স্টিলের তবে তালা মারা নয়।

আরুহী ঘাড় বাঁকিয়ে সবার দিকে তাকালো, সবার দৃষ্টিতে ভয় দৃশ্যমান তবে এই ভয় থেকে জানের ভয় সবারই আছে তাই হয়তো কেউই আগাচ্ছে না।

আরুহী টান দিয়ে দরজা খুলতেই ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো একটা সিঁড়ি, বেশ লম্বা আর অনেক টা অন্ধকার। আরুহী ভাবছে তার কি আগেই ভেতরে যাওয়া উচিত ? নাকি আগে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষন করে নেওয়াটাই উচিত? কাজ করার আগে ভালো ভাবে ভাবতে হয়, আরুহী ঠিক সেটায় করছে, ভেতর থেকে কেমন যেন শব্দ আসছে, ভেতরে কি কেউ আছে? যদি থাকে কে ওখানে? আরুহী ঘাড় ঘুরিয়ে ওই লোক গুলোর দিকে তাকালো..

চলবে …

[ আজকের পর্ব টা কেমন লাগলো গঠন গত মন্তব্য করবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here