মায়াবিনী_(২) #Ayrah_Rahman #পর্ব_৩৪

0
673

#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_৩৪

_____________

” নাহ, মাছি মেরে হাত নষ্ট করার মতো মেয়ে আরুহী চৌধুরী নয়, তা তুই ভালো করে ই জানিস সাজিদ খন্দকার , যাহ আজ তোকে ছেড়েই দিলাম ”

বলেই আরুহী তাকে ছেড়ে দিয়ে আবার সাজিদ খন্দকার এর সামনে গিয়ে বসলো। সাজিদ খন্দকার যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। গলায় হাত দিয়ে গর্জে উঠে বলল,

” তোমার এতো বড়ো কলিজা আরুহী চৌধুরী! তুমি সাজিদ খন্দকার কে আঘাত করার দুঃসাহস দেখিয়েছো! আজ তোমার মৃত্যু নিশ্চিত ”

রাগে ফুপাতে ফুপাতে কথা গুলো বলেই কোমড় থেকে রি*ভলবার বের করে আরুহীর দিকে তাক করলো সাজিদ খন্দকার। আরুহী তখন ও চেয়ারে বসে নিজের নখ কা*ম*ড়াচ্ছে আর একটু পর পর সাজিদ খন্দকার এর দিকে তাকাচ্ছে। যেন এখানে কোন সার্কাস হচ্ছে আর আরুহী সেটা মনোযোগ দিয়ে দেখছে।

সাজিদ খন্দকার এর হাতে রি*ভলবার দেখে আরুহী মুচকি হাসলো, আরুহীর চোখে ঘাবড়ে যাওয়া বা ভয় কোন টার ই যেন স্থান নেই।

এতো নিশ্চিন্তে বসে নখ কা*ম*ড়ানো দেখে সাজিদ খানিকটা থতমত খেয়ে গেলো,

আরুহীর দিকে তাক করে যেই গুলি ছুড়তে যাবে হঠাৎ প্রচন্ড ব্যাথায় সাজিদ এর দেহ কেঁপে উঠলো, সাথে সাথে হাত থেকে রি*ভলবার টা মাটিতে খসে পড়ে গেলো মাটিতে, এক হাত দিয়ে অপর হাত চেপে ধরে হাঁটু ভেঙে বসে পড়লো নিচে, হাত থেকে ফিনকি দিয়ে র*ক্ত বের হচ্ছে, হাতে গু*লি করা হয়েছে।

হাত চেপে ধরে ই দরজার দিকে তাকালো সাজিদ। সুলতান এক হাতে রি*ভলবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, সুলতান কে দেখে মুচকি হেসে রি*ভলবার এর মাথায় ফুঁক দিয়ে এগিয়ে গেলো সামনের দিকে।

সুলতান সাজিদ খন্দকার এর সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে বলল,

” ট্রেনিং প্রাপ্ত তো তাই নিশানা মিস হয় না আমার, একদম বরাবর হাতে , তোর ভাগ্য অনেক ভালো নয়তো এতক্ষণে গলা কা*টা মুরগীর মতো ছটফট করতে করতে উপরে চলে যেতি যদি বাই এনি চান্স গু*লি টা হাতে না করে মাথার খুলিতে করতাম, বাট গুড লাক, লাক ফেবার করেছে তোকে , বাট আই ডোন্ট নোও কতক্ষন ফেবার টা করে ”

ব্যাথায় কাতরাতে কাতরাতে সাজিদ খন্দকার এক পলক সুলতানের দিকে তাকালো, চোখ লাল হয়ে যেন আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে, চোখ দিয়ে ই ভস্ম করে দিচ্ছে সুলতান কে। যা দেখে সুলতান হাসলো।

বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে আরুহীর দিকে তাকালো সুলতান। আরুহী মুচকি হাসলো।

কিছু ক্ষনের মাঝেই কালো পোশাক ধারী শক্ত পোক্ত চেহারার কিছু মানুষ সেই স্বল্প আলোর রুম টায় প্রবেশ করলো। সাথে রয়েছে অনেক গুলো স্ট্রেচার।

একে একে প্রতিটি মেয়েকে স্ট্রেচারে করে এম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং হসপিটালে এডমিট করার ব্যবস্থা করা হবে।

আরুহী দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে মেয়েগুলো র চলে যাওয়া দেখে ফের সুলতান এর দিকে তাকালো৷ চোখে মুখে ক্লান্তি তে ছেয়ে আছে। আরুহী ঘাড় বাঁকিয়ে এক পলক সাজিদ খন্দকার এর দিকে তাকালো, অবহেলিত বস্তুর ন্যায় পড়ে আছে সে, আরুহী ঠোঁট এলিয়ে হাসলো, এমন টা তো হওয়ার ই কথা ছিলো। খোদা তো ছাড় দেয় কিন্তু ছেড়ে দেয় না।

আরুহী সাজিদ খন্দকার এর সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো, সাজিদ খন্দকার দুর্বল নেত্রে আরুহীর দিকে তাকালো, ব্যাথায় নীল হয়ে যাওয়া মুখ খানি দেখে বিন্দু মাত্র মায়া হলো না আরুহীর। গা টা ঘৃণায় রি রি করে উঠলো। মুখে এক চিলতে হাসি ঝুলিয়ে আরুহী বলল,

” বলেছিলাম না অতি বার বেড়ো না ঝড়ে পড়ে যাবে, শুনলে না তো আমার কথা। আসলে আরুহী তোর মতো দু পয়সার বুদ্ধি ঘটে নিয়ে চলে না। তোর মতো কতো লাফাঙ্গাদের টাইড দিয়ে সোজা করেছি! যদিও তাদের কাছে তুই চুনোপুঁটি। তোকে আমি একদম মারতাম না, জানে মারার কোন ইচ্ছে ই আমার ছিলো না কিন্তু ওই যে ফুলের মতো নিষ্পাপ একটা বাচ্চাদের তোরা কষ্ট দিয়েছিস, যতবার তোকে ছেড়ে দেবো বলে ভাবছি ঠিক ততোবারই ওই বাচ্চা ফুলটার রক্তাক্ত শরীর টা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে , ইচ্ছে করছে তোকে কেটে টু*করো টু*করো করে আমার পোষা কুকুরদের খাওয়াই, তুই তো জানিস সাজিদ খন্দকার আরুহী চৌধুরী কখনো তার কোন ইচ্ছে অপূর্ণ রাখে না, তাই এটাও রাখবে না, হ্যাভ এ্যা নাইস নাইট ডুড ”

বলেই আরুহী উঠে দাঁড়ালো। এতোক্ষণ সুলতান আরুহীর পাশে দাঁড়িয়ে তার কথা গুলো শুনছিলো। আরুহী দাঁড়াতে ই সুলতান শুকনো ঢুক গিলে মনে মনে ভাবলো আল্লাহ ভালো জানেন আজ রাতে আবার কোন নি*র্মম দৃশ্যের সম্মুখীন হতে হয় তাকে! আরুহী যে কতটা নি*র্মম হতে পারে তা সুলতানের অনেক আগেই ধারণা হয়ে গেছে, খুব শান্ত মেজাজের মানুষ গুলো খুব ই ভয়ানক, তারা শান্ত মাথায় ধীরে সুস্থে খু*ন করে। আরুহী সবাইকে মারে না বাট যাকে মারে সেই নি*র্মম দৃশ্য দেখলে একজন শক্ত মনের মানুষ ও অজ্ঞান হতে দু বার ভাববে না। আরুহী খুব সুক্ষ্ম ভাবে কেটে টুকরো টুকরো করে।
আরুহী যেহেতু বলেছে কথার এক পার্সেন্ট ও এদিক সেদিক হবে এটা সিউর।

আরুহী পকেট থেকে ফোন বের করে মোবাইলের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সুলতানের উদ্দেশ্যে বলল,

” রাত বারোটার মাঝে ওকে আমার কাস্টারি তে দেখতে চাই, এট এনি কস্ট আর মেয়েগুলোর যেন যথাযথ চিকিৎসা হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখবে, কাজে কোন হেরফের আমার পছন্দ না ”

বলেই আরুহী বের হয়ে গেলো।

সুলতান এদিকে আরুহীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল, ভালোই রেগে আছে বোঝা যাচ্ছে, আরুহীর চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই যে সে রেগে আছে নাকি অন্য কিছু । এতোটা শক্ত হতে আর কোন মেয়ে মানুষ কে সুলতান মনে হয় না দেখেছে।

সুলতান পকেটে থেকে ফোন বের করে কাউকে কল করতেই দুই মিনিট এর মধ্যে ই একজন কালো রঙের পোশাক ধারী দু জন লোক দরজা দিয়ে প্রবেশ করলো, সুলতান কিছু একটা ইশারা করতে ই লোকটা এক পলক সাজিদ খন্দকার এর দিকে তাকিয়ে সেদিকে এগিয়ে গেলো। স্ট্রেচারে শুইয়ে বেরিয়ে এলো রুম থেকে।

সব শেষে সুলতান ও বেরিয়ে এলো ওই রুমে থেকে।

হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত প্রায় আট’টা বাজতে চলল, আরুহী ও তো এতোক্ষণে চলে গেছে, তাই সুলতান আর কিছু না ভেবে রাস্তায় এসে একটা টেক্সি ডেকে উঠে পড়লো।

একটা লম্বা ঘুমের দরকার তার। আবার খিদে ও পেয়েছে কিন্তু বাড়িতে তো আর বউ নেই যে রেঁধে বেড়ে রেখেছে সে গিয়ে শুধু মাত্র খাবে! গিয়ে নিজের রান্না নিজেরই করতে হবে, সব কাজ একা হাতেই করতে হবে কিছু তো আর করা যাবে না কিন্তু এবার এর ব্যবস্থা তো একটা করতেই হবে, বয়স তো আর কম হলো না! দেখতে দেখতে ত্রিশের কৌটায় পা রাখলো। এবার একটা বিয়ে না করলেই নয়।
_________

ঘড়ির কাঁটায় তখন সাড়ে আট’টা। আরুহী ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করতেই দেখলো সবাই একসাথে বসে আছে। আয়াত আর আবারার পাশাপাশি বসে কি বিষয় নিয়ে কথা বলছে। পাশেই রুশা বসে বসে মোবাইলে গুতোগুতি করছে। আরাফ আর মাহির নিজেদের মধ্যে কিছু একটা বলছে আর মিরাজ রাইসা মোবাইলে কিছু একটা দেখছে আর সোফার এক কোনায় আরুশ বসে আছে পাশে একজন হুজুর। আরুহী ভ্রু কুঁচকে তাকালো হুজুরের দিকে। এখানে এতো রাতে হুজুর কি করছে সেটায় ভাবছে সে।

সবাই যার যার মতো কাজ করছে আরুহী র উপস্থিতি এখনো তাদের অবগত নয়।

” সবাই এখানে থম মেরে বসে আছো কেন? কারো জন্য অপেক্ষা করছো নাকি? ”

আরুহীর কথা শুনে সকলে আরুহীর দিকে তাকালো।

আবরার আরুহীর দিকে তাকিয়ে বলল,

” হুম তোমার জন্য ই অপেক্ষা করছি! ”

আরুহী ভ্রু কুঁচকালো,

” আমার জন্য? কিন্তু কেন? ”

” দেখো আরুহী তুমি যেহেতু রেজিস্ট্রার কাগজে সই করে ই দিয়েছো ধর্মে নিয়ম বলেও তো একটা কথা আছে, তুমি তো হাফ কমপ্লিট করেই চলে গেলে তাই বাকি হাফ কমপ্লিট করা প্রয়োজন বলেই আমি মনে করি ”

আরুহী আবরারের কথার ভাবার্থ উদঘাটন করতে সক্ষম। সে ধীর পায়ে সোফায় গিয়ে বসে হুজুরের উদ্দেশ্যে বলল,

” হুজুর যা করার তাড়াতাড়ি করুন আমি ভীষণ ক্লান্ত, যে কোন সময় মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যেতে পারি ”
হুজুর এক পলক আরুহীর দিকে তাকিয়ে খাতা বের করলো পুনরায় বিয়ের রিচুয়াল অনুযায়ী তিন কবুলের মাধ্যমে বিয়ে সম্পুর্ন করলো, মোনাজাত শেষ করে আরুহী উঠে দাঁড়ালো। এখনো পূর্বের মত আরুশ নিশ্চুপ, তা নিয়ে আরুহী মাথা ঘামালো না।

গটগট পায়ে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেলো,,,

চলবে…

[ আজকের পর্ব টা কেমন লাগলো? ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here