হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|১৭| #শার্লিন_হাসান

1
708

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|১৭|
#শার্লিন_হাসান

ডক্টর শুভ্রকে ব্যান্ডেজ করে মেডিসিন লিখে দেয়। সবাই শুভ্রর রুমে ভীড় জমিয়েছে। শুভ্রকে এটা ওটা জিজ্ঞেস করা হচ্ছে কোন উত্তরই দিচ্ছে না সে। আরফিন চৌধুরী রেগে আছেন। তার বাড়ীতে কে আসলো পারমিশন ছাড়া। দারোয়ান কোথায় ছিলো ইত্যাদি,ইত্যাদি। তাঁদের কলেজের সাথেই যেহেতু বাড়ী তাই তেমন সিকিউরিটি রাখেনি মানুষ আসা যাওয়া করে এমনিতেও। তবে বিল্ডিংয়ের চারপাশটায় সিসি ক্যামেরা লাগানো। এখন একমাত্র ভরসা সিসিটিভি ফুটেজ।

শুভ্রকে নিয়ে সবাই একটু বেশী উদ্বিগ্ন হয়ে আছে। সিসিটিভি ফুটেজ পরেও চেক করা যাবে। আর্থ শুভ্রকে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে। তবে খবরটা পাটওয়ারী বাড়ীতে চলে যায়। সেরিন না শোনলেও নিশাতের থেকে পায় খবর তখন প্রায় রাত বারোটার উর্ধ্বে। মাহি নাকী নিশাতকে বলেছে। সেরিনের নিজেকে ভিন্ন গ্রহের প্রাণী মনে হলো। তবে নিশাতের সাথে কথা বললো। সেরিনের মতে একাবারে ঠিক হয়েছে। মাথায় বা’রি মেরেছে ভালোই করেছে যদি এবার মাথা ঠিক হয়। রুলস কিছুটা কমে আসে। সেরিন নিজেই তো সেই কবে বারি টা মারতো শুধু পারমিশন নেই। বহুত জ্বালিয়েছে শুভ্র তাঁদের। এখন কয়েকদিন বেড রেস্টে থাকবে। সবচেয়ে বড় কথা সেরিনের টিসি মনে হয়না এই জনমে পাবে। এটা ভেবে খারাপ লাগছে।

পরের দিন সকালে শুভ্র কলেজে উপস্থিত হয়। এটা নিয়ে অনেকের মনে আঘাত লেগেছে। ভেবেছে শুভ্র আসবে না একটু চিল করবে। তার আর হলো না। সেরিন তো সেই খুশি আজকে তার টিসি নেওয়া কেউ আটকাতে পারবে না। খুশি মনে পিটি শেষ করে শুভ্রর রুমে উপস্থিত হয় সেরিন। তখন শুভ্র কিছু পেপার্স নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে। সেরিনকে দেখে ভেতরে আসার পারমিশন দেয়। সেরিন ও একা গাল হেঁসে ভেতরে যায়। শুভ্র তাকে দেখে বলে,

‘এতো তাড়া কিসের ঢাকা যাওয়ার?’

‘আসলে স্যার এই কলেজটা আমার একদম পছন্দ না। সেজন্যই এতো তাড়া।’

‘ঘুমাও তাহলে টিসি পাবা না।’

‘কিন্তু কেনো স্যার?’

‘আমার কলেজের নামে বদনাম করেছো মানে এই কলেজেই তোমায় থাকতে হবে।’

‘ওটা তো জাস্ট কথার কথা। এমনিতে কলেজ ক্যাম্পাস সাথে মডুলাস মার্কা রুলস একদম ঠিক আছে। আসলেই ঠিক আছে আপনার দেওয়া রুলস গুলো। আমার ধৈর্য থাকলে অবশ্যই মানতাম আর থেকে যেতাম।’

‘প্রশংসা করলে নাকী অপমান?’

‘আরে না প্রশংসা। এবার আমার টিসি?’

শুভ্র একটা পেপার্স এগিয়ে দেয় সেরিনকে। সেরিন সেটা দেখে ধন্যবাদ দিয়ে বেড়িয়ে আসে। দরজার সামনে আসতে পেছন থেকে শুভ্রর গাওয়া গুনগুন করে গান কানে ভাসছে। সেরিন শোনার চেষ্টা করছে। শুভ্র গুনগুন করে গাওয়া বাদ দিয়ে একটু জোরেই গায়,
‘তুমি আর তো কারোর নও শুধু আমার।
যত দূরে সরে যাবে রবে আমার।
তবে আজ কেন একা আমি?’

সেরিন পেছনে তাকাতে শুভ্র মলিন হেঁসে বলে,
‘তোমার মতো ওতো ভালো গাইতে পারি না।’

‘আসলেই!’

সেরিন প্রস্থান করতে শুভ্র হাসে। ভেবেছিলো সেরিন বলবে, ‘না সুন্দর হয়েছে।’ তা না অহংকার করে চলে গেলো। সেরিন যেতে শুভ্র আজকে আসা চিঠিটা হাতে নেয়। তাতে লেখা, ‘হয়ত মাঝেমধ্যে চিঠি আসবে। আমার ব্যস্ততা বেড়ে গেছে বাবুর আব্বু।তবে হ্যাঁ একদিন হুট করে সামনে এসে সারপ্রাইজ দিবো আপনায়। সেদিন ফিরিয়ে দিলে খবর আছে। তবে একটা অভিমান বার্তা আছে আপনার জন্য। অচিরেই সেটা পেয়ে যাবেন। দোয়া করবেন বাবুর আম্মু আর বাবু যাতে সুস্থ থাকে।’

চিঠি পড়ে শুভ্রর মুখ দিয়ে একটা কথাই বের হলো সেটা হলো, ‘বাবু সুস্থ থাকা মানে? আসলেই কী অপরিচিতা প্রেগন্যান্ট? তাহলে তো বাবুর আব্বু আমি না। ধুর অন্যের বাচ্চা আমার গাড়ে চাপাতে আসে। যাক বাঁচলাম চিঠিগুলো কী তাহলে ভুল জায়গায় আসে?’

না তাহলে আমার নাম আর আর্থর নাম ওই অপরিচিতা জানবে কীভাবে?’

টিসি নিয়ে মনের আনন্দে ক্লাসে মনোযোগ দেয় সেরিন। আজকেই শেষ ক্লাস। ভাবতে কী যে আনন্দ লাগছে তার। তবে আনন্দটা বেশীক্ষণ স্থায়ী হলো না। কোথা থেকে ভরা পানির বোতল এসে ঠাস করে সেরিনের কপালে লাগে। সেরিন পানির বোতল হাতে নিয়ে পাশে তাকাতে দেখে আকাশ ছেলেটা তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। ক্লাসে থাকা টিচার সেরিনের দিকে তাকায়। পাশে বসা মেয়েটাও সেরিনের কপাল দেখে। মূহুর্তে ফুলে লাল হয়ে গেছে। সেরিন কপালে হাত রাখে। ভীষণ মাথা যন্ত্রণা করছে তার।

আকাশকে দাঁড় করায় স্যার। ধমক দিয়ে বলে,
‘ওকে বোতল ছুঁড়লে কেন?’

‘স্যার বোতলটা ওরই। একটু আগে নিয়েছিলাম পানির জন্য। এখন ওকে দিতে গিয়েছিলাম।ভেবেছিলাম ও হাতে নিতে পারবে।’

আকাশের সাজানো মিথ্যে কথা শোনে সেরিনের বেশ রাগ হয়। তবে এখন জামেলা বাড়াতে মন চাচ্ছে না। মাথা ব্যাথা করছে তার। সেরিনকে প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে পাঠানো হয়। স্যার কল দিয়ে বলে দিয়েছে। তবে এটা বলেনি কীভাবে কী হয়েছে।

আকাশ বসতে,বসতে জুম্মানকে বলে,
‘ভেবেছিলাম চোখটাই ন’ষ্ট করে দিবো। ভাগ্য ভালো কপালে পড়েছে। যাই হোক ব্যাথা ভালোই পেয়েছে।’

‘সাব্বাশ! আজকে একটা ট্রিট পাবো বড় ভাইয়ার থেকে।’

********

সেরিনের কপালে বরফ দেওয়া হয়। ডক্টর আনানো হয়। শুভ্র তো বকেই যাচ্ছে সেরিনকে কীভাবে কী হলো সেটাও বলছে না মেয়েটা। নিশাত সেরিনকে আগলে রাখছে। শুভ্র বার কয়েক জিজ্ঞেস করার পর কিছুই বলেনি তারা। নিষেধাজ্ঞা থাকায়! শুভ্র তো নাছোড়বান্দা। সেরিন কিছু বলেনি দেখে আর তাকে ধমক দিয়ে জো করেনি। যদি আবার সত্যি সেন্স লেস হয়ে যায়। তবে নিশাতকে তো ছাড়া যায় না। ধমক একটা দিয়ে শুভ্র শুধায়,
‘ও কিসের সাথে আঘাত পেয়েছে? সত্যি করে বলো?’

‘ও..ওই হাটার সময় স্যার দেওয়ালের সাথে।’

নিশাতের কথায় শুভ্র ধমকে বলে,
‘হ্যাঁ চোখ তো কপালে লাগিয়ে হাঁটো। বেশী ছটফট করলে এমনই হবে। আমার কলেজ থেকপ চলে যাবে সুস্থ মতোই যাও। পরে তো তোমার বাবা আমায় ধরবে তার মেয়েকে আমি মেরে পাঠিয়েছি।’

মিশাত, সেরিন দু’জনে চুপ। কিছুক্ষণ পর শুভ্র সেরিনকে গাড়ী ঠিক করে দিয়ে বাড়ীতে পাঠিয়ে দেয়। মাহিকে বলে দেয় দেয়ালের সাথে আঘাত পেয়েছে সেরিন।

********

চৌধুরী বাড়ীতে আরেক ঝড় উঠেছে। সেটা হলো গতকাল সন্ধ্যার সিসিটিভি ফুটেজ কেউ ডিলিট করে দেয়। ব্যপারটা কেমন জেনো! সবার মাথায় তালগোল পাকানোর মতো হয়ে গেছে। তবে আর্থ বেশ ভালো বুঝেছে এই চার দেওয়ালের মাঝে এমন কিছু আছে যেটা তাঁদের সবার অবগত নয়। কিছু তো আছে যেটা তারা কেউই জানে না তবে একজন ব্যক্তি জানে। যে প্রথমবারের মতো ধরা পড়তে গিয়েও পড়েনি। আরফিন চৌধুরী এই নিয়ে চিল্লাচিল্লি করেছে সন্ধ্যা থেকে। আয়মান চৌধুরী সুলতানা খানমকে বকাঝকা করছে। কেনো সবকিছুতে নজর রাখে না। অবশেষে শুভ্রর মা জান্নাতুল ফেরদৌস সিদ্ধান্ত নেন, ‘বাড়ীর সার্ভেন্ট, কাজের বুয়া সব চেন্জ করার।’

এতে সবাই একমত দেয়। জান্নাতুল ফেরদৌস শুভ্রর পাশে বসা। তিনি শুভ্রর কফির মগ এগিয়ে দিতে,দিতে বলেন,
‘গতকাল সন্ধ্যায় যা হলো! এখন আবার সিসিটিভি ফুটেজ উধাও। এসব কী এমনি এমনি হয়ে যায়? কারোর তো হাত আছে এসবের পেছনে।’

তখন আর্থ বলে,
‘যেখানে ফুটেজ,ল্যাপটপ, মেশিন রাখা ওই রুমটায় কে প্রবেশ করেছে লাস্টে সেটা কেউ দেখেছো?’

আর্থর কথায় সুলতানা খানম বলেন,
‘আমরা সবাই ব্যস্ত। এসবে নজর রাখবে কে? যেমন তুমি তোমার চাচ্চু, ভাইয়া তারা বাইরে দৌড়াদৌড়ি করে। আমি ভাবী অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। শুভ্র তো কলেজ নিয়ে। আর ভেতরে সার্ভেন্ট আর কাজের লোকই থাকে। তারাও তাঁদের মতো ব্যস্ত।’

তাঁদের এতোসব চিন্তা ভাবনায় শুভ্রর অনিহা। এসবে তার মনোযোগ আসছে না। সবার সাথে কিছু সময় কাটিয়ে শুভ্র নিজের রুমে চলে যায়। আজকে কাজ করার ইচ্ছে নেই তাই ল্যাপটপের সামনে বসেনি। মাথা ব্যথা করছে প্রচুর সেজন্য মেডিসিন নিয়ে শুয়ে পড়ে। গতকাল সে মাথায় আঘাত পেলো আজকে সেরিন! তাঁদের মধ্যে কিছু একটা মিল আছে। ভেবে শুভ্র হাসে। যদিও সেরিন চলে যাবে আর আসবে না তার ক্যাম্পাসে।

সেরিনকে নিয়ে এক্সট্রা চিন্তা ঢুকে গেছে কিরণ পাটওয়ারীর মনে। তার মনে হয় কেউ কোন কারণে সেরিনের পেছনে পড়েছে। আগামী কালকে সেরিন ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দিবে। কিরণ পাটওয়ারী নিজে তাকে নিয়ে যাবে। সেজন্য তুষি সেরিনের একটু বেশী যত্ন করছে। যদিও সেরিন অলওয়েজ স্ট্রং। আজকের রাতটা সে তার রুমটা ঘুরেঘুরে দেখছে। তার সাজানো রুমটা আবার কবে না কবে আসা হয়।

দেওয়ালে তার নাম বসানো সাথে স্পেশাল কিছু লেখা বসানো। তাতে হাত ভোলায় সেরিন। নামটা এমন ভাবে বসানো না ভাবলে কেউ বুঝতে পারবে না কী লেখা। সেরিন নি৷ জের কাজে নিজেই হাসে।

********

বাবুর আব্বুর দেওয়া চিঠিটা পড়ে মুচকি হাসে অপরিচিতা। মনে,মনে বলে,
‘হুট করে একদিন দেখা হবে আমাদের। হয়ত গল্পের পূর্ণতায় নাহয় গল্পের শূন্যতায় কল্পনার শহরে। তবে তুমি ভুলে যেও না আমাকে আমি ভীষণ ভালোবাসি তোমাকে।’ (কপি করা নিষেধ)
লেখা:শার্লিন হাসান

#চলবে

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here