#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_০৫
____________________________________
“দিভাই তুই বিয়ে করবি না?”
গাড়ি চালাতে চালাতে হঠাৎ রুশার এহেন কথায় জোরে সরে ব্রেক করে ওর দিকে তাকালো আরুহী । রুশার হাতে চিপসের প্যাকেট যা থেকে ও একটা চিপস মুখে দিয়ে আরুহীর দিকে তাকিয়ে আছে। আরুহী ভ্রু কুঁচকালো ,
” তুই হঠাৎ আমার বিয়ের পিছনে পড়লি কেন রুশো, চিপস খাচ্ছিস সেটাই খানা! তোকে এত কিছু ভাবতে হবে না ”
বলেই আবার গাড়ি স্টার্ট করলো, এবার রুশা চিপসের প্যাকেট রেখে আরুহীর দিকে ঘুরে বসলো,
” তুই জানিস দিভাই! তোর জন্য এখনো রৌদসী আপু বিয়ে করেনি, আপুর একটাই কথা তুই বিয়েতে না থাকলে সে বিয়ে করবে না ”
আরুহী থমকে গেলো, তার জানা মতে রৌদসীর সাথে সাফাদ ভাইয়ার সম্পর্ক প্রায় ছয় বছরের অধিক, আর সাফাদ ভাইয়া নিজের অফিস আছে ব্যবসা আছে সেটাই ই দেখা শোনা করে, স্ট্যাবলিস্ট ছেলে । তাহলে এখনো একটা অযৌক্তিক কারনে বিয়ে বন্ধ রাখার কোন যুক্তি খুঁজে পেলো না আরুহী, সে দেশে ছিলো না ঠিক কিন্তু প্রত্যেকের খবর সে রেখেছে,
” কেন? আমি কি এমন মানুষ যে আমার জন্য রোদ আপু বিয়ে বন্ধ করে রাখবে”
রুশা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
” সে কথা তুই যদি বুঝতিস তাহলে তো ভালোই হতো, তুই তো একটা হার্ট লেস পাষান মেয়ে মানুষ ”
আরুহী কিছু বলল না,
রুশা খানিকটা নড়েচড়ে উঠে আবার বলল,
” দিভাই তুই জানিস? রৌদসী আপু প্রতিদিন তোর ছবি হাতে নিয়ে কান্না করে, মন খারাপ করে, আর সাফাদ ভাই আর কত ওয়েট করবে বল? ভাইয়ার ও তো বয়স হচ্ছে, বিয়ে সাদি তো করতেই হবে, পরে যদি অন্য কিছু হয় তাহলে তুই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবি তো দিভাই? ”
” কি বলতে চাইছিস ক্লিয়ার করে বল”
রুশা জিহ্ব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে সোজা হয়ে বসলো,
” দিভাই তুই প্লিজ রাজি হয়ে যা!”
” কেন? ”
” তুই শুধু কথা দে রৌদসী আপু র বিয়েতে এটেন্ড করবি! যাস্ট এই টুকুই ”
আরুহী রুশার কথাটা শুনেও যেন শুনলো না, হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
” তোর ক্লাসের সময় হয়ে গেছে রুশা! ”
গাড়ি নিয়ে ব্যাক করলো ভার্সিটিতে,
ভার্সিটির সামনে এসে রুশার দিকে তাকিয়ে বলল,
” যা ক্লাসে যা, আর মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করবি, আজাইরা চিন্তা মাথায় আনবি না ”
রুশা ঠোঁট মুখ ফুলিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেলো, চলে আসার জন্য পা বাড়াতেই পিছনে থেকে আরুহী ডেকে উঠলো,
” রুশো শোন? ”
রুশা মুখ ফুলিয়ে ই গাড়ির জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে বলল,
” হুমম বল”
” রোদ আপু কে বল বিয়ে টা করে নিতে আমি এটেন্ড করবো ”
বলেই আরুহী গাড়ি ঘুরিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে চলে আসলো,
রুশা কিছু ক্ষন ভেবলার মতো তাকিয়ে থেকে হঠাৎ তার মাথায় এলো আরুহী তাকে কি বলে গেলো? সে রৌদসীর বিয়েতে যাবে? ওয়াহহহ্!
খুশিতে রুশা লাফ দিয়ে উঠলো, এট লাস্ট তার রৌদসী আপুর বিয়ে তো খেতে পারবে!
দুর থেকে আরুহী রুশার দিকেই তাকিয়ে আছে, রুশার এক্সপ্রেশন দেখার জন্য ই মূলত সে দাঁড়িয়ে ছিলো,
আরুহী সামনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ড্রাইভে মনোযোগ দেয়।
আরুহী অফিস হয়ে ফোর্স নিয়ে সোজা সিটি হসপিটালে চলে গেলো, প্রথমে সিটি হসপিটাল তারপর বাকি হসপিটাল গুলো।
___________________________
” স্যার আসবো? ”
নিজের ক্যাবিনেই বসে রুগী দেখছিলো ডক্টর আরুশ, হঠাৎ কারো কন্ঠ শুনতে পেয়ে দরজার দিকে তাকালো সে,
একজন নার্স দাঁড়িয়ে আছে, আরুশ ভ্রু কুচকে নার্সের দিকে তাকালো,
রুগী দেখার সময় ডিস্টার্ব মোটেও পছন্দ করে না আরুশ, বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
” আসো!”
নার্স টা আরুশের সামনে এসে বললন,
” স্যার স্পেশাল ফোর্স থেকে অফিসার এসেছে! ”
আরুশ কিছু টা চিন্তা করে বলে,
” এসেছে তো বসাও, আমি রুগী দেখে তারপর আসছি”
নার্স আমতাআমতা করে বলল,
” স্যার উনারা ল্যাবে যেতে চাইছে, কিসের যেন মেডিসিন টেস্ট করবে জানি! ”
” ঠিক আছে তুমি ওদের ল্যাবে নিয়ে যাও আমি রুগী দেখে আসছি”
নার্স মাথা দুলিয়ে চলে গেলো।
আরুহী ল্যাবে গিয়ে সকল পদার্থ টেস্ট করে দেখছে, তাদের মধ্যে আবার কাউকে মেডিসিন বিভাগে পাঠিয়েছে, আরুহীর লক্ষ্য খুব তাড়াতাড়ি সকল মিশন শেষ করে দেশ ত্যাগ করা কারণ মাতৃভূমি তো একবার মায়া লেগে গেলে সে আর দেশ ছেড়ে দেশে থাকা প্রিয়জন দের ছেড়ে যেতে পারবে না।
একটা একটা করে রাসায়নিক পদার্থ হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে সে আর যে গুলো সন্দেহ ভাজন বলে মনে হচ্ছে সেগুলো সেম্পল হিসেবে সুলতানের হাতে দিচ্ছে।
” আসবো? ”
আরুহী কাজের মধ্যে এতো মনোযোগ ছিলো সে আরুশের কথা ই শুনতে পেলো না,
আরুশ আর অনুমতি না নিয়েই ভেতরে ঢুকে, কিন্তু অফিসার হিসেবে একজন মেয়ে তার উপর সেই অদ্ভুত মেয়েটাকে দেখে বেশ অবাক হয় সে।
” আপনি? ”
পরিচিত কন্ঠ শুনতে পেয়ে আরুহী পিছনে তাকালো,
সামনে আরুশ কে দেখে বলল,
” আপনার এখানে কোন কাজ নেই ডক্টর আরুশ খান! আপনি আসতে পারেন ”
আরুশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো, একটা মেয়ে কি সুন্দর ঠান্ডা মাথায় তাকে অপমান করে দিলো!
আরুশ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” আপনি বোধ হয় ভুলে যাচ্ছেন আমি একজন ডক্টর! ল্যাবে আমার কাজ থাকতে ই পারে।”
” জি অবশ্যই সে বিষয়ে আমি অবগত আছি! আমাদের কাজ শেষ হলে আমরা চলে যাবো আপনার কাজ ঘন্টা খানেক পর করেন, এখন যান এখান থেকে ”
আরুশ রাগে ফোসফোস করতে করতে বের হয়ে গেলো, আরুশের যাবার দিকে তাকিয়ে আরুহী বাঁকা হাসলো।
___________________________
” ফুপিমণি! ফুপিমণি কোথায় তুমি? ”
খান মেনশনে এসে ড্রয়িং রুমে দাঁড়িয়ে এক নাগাড়ে রাইসা কে ডেকে যাচ্ছে রুশা।
রাইসা উপর থেকে চশমা ঠিক করতে করতে নিচে নামতে নামতে বলল,
” এই সকাল সকাল তোর আবার কি হলো রুশা? এভাবে চিল্লাচ্ছিস কেন? আর এতো লাফানোর কি আছে? ”
রুশা নিজের ফুপি কে দেখে দৌড়ে গিয়ে ফুপির গলা জরিয়ে ধরলো,
” আরররে ফুপি আমি এখন যেই কথা টা বলব, সেই কথা টা শুনে তুমি ও লাফাবা ”
রাইসা ভ্রু কুচকে রুশার দিকে তাকালো,
” এই পিচ্ছি, সকাল সকাল এমন ষাঁড়ের মতো চিৎকার করছিস কেন? ”
মিরাজ সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে কথা গুলো বলল,
রাইসা চোখ ছোট ছোট করে বলল,
” তোমার মতো নবাবের বংশধরের জন্য ই এখন এতো সকাল, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখছো কয়টা বাজে? এখন প্রায় ১০ টা, ”
মিরাজ রুশার মাথায় টোকা দিয়ে বলল,
” হুম নবাব ই তো, সাথে জমিদারের বংশধর, ”
বলেই হাসতে হাসতে গিয়ে সোফায় বসলো,
রুশা মাথা ডলতে ডলতে রাইসার দিকে তাকিয়ে বলল,
” দেখছো ফুপি মনি তোমার আদরের ভাতিজা কি করে আমার সাথে? ”
রাইসা মিরাজের দিকে রাগী দৃষ্টি তে তাকিয়ে বলল,
” মিরাজ তুই রুশার সাথে এমন করছিস কেন? ফাজিল যাহ্ তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে আয় ”
মিরাজ দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,
” আররে ছোট মা, তুমিও না কার না কার কথা ধরে বসে থাকো, নাস্তা রেডি করো আমি ফ্রেস হয়ে আসছি ”
বলেই মিরাজ সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো, রুশা এক পলক মিরাজের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
” ফুপিমনি শোননা! ”
” হুম বল শুনছি ”
” তুমি রৌদসী আপুর বিয়ের ডেট ফিক্সড করো ”
রুশার কথায় রাইসা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
” লাভ নাই অযথা হ্যারাসমেন্ট, আরু না আসলে রোদ বিয়ে করবে না ”
রুশা হেসে বলল,
” দিভাই আসবে ”
রুশার কথা শুনে রাইসা চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো রুশার দিকে, রাইসা ভাবছে সে কি কানে ভুল শুনলো? নাকি রুশা এই কথা টায় বলল?
চলবে…
[ অনেকেই জিজ্ঞেস করেছেন আরুহীর বয়স টা কত? আরুহীর বয়স পঁচিশ পেরিয়ে ছাব্বিশ বছর আর আরুশের বয়স আটাশ পেরিয়ে ঊনত্রিশ
কেমন হয়েছে জানাবেন! ]