মায়াবিনী_(২) #Ayrah_Rahman #পর্ব_০৯

0
895

#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_০৯
______________________________

” খান গ্রুপের এমডি মাহাবীন খান আয়াত কে চেনেন ম্যাম? খুব ভালো গান করেন উনি! ”

আরুহী থমকালো, সুলতান হঠাৎ ফোন করে তার মায়ের কথা বলছে কেন? সুলতান তো জানার কথা না যে মাহাবীন খান আয়াত তার ই জন্মদাত্রী মা।

” হ্যা চিনি কিন্তু কি হয়েছে সুলতান? ”

” ম্যাম আসলে কিছু ইনভেস্টিগেশন করতে গিয়ে খবর পেয়েছি কেউ উনাকে মারার জন্য ষড়যন্ত্র করছে কিন্তু যে করছে সে আড়ালে থেকে থেকে কলকাঠি নাড়ছে ”

আরুহী চমকে উঠলো, সে জানে তার মায়ের আগেও অনেক শত্রু ছিলো এখন ও আছে কিন্তু আরুহী তার মাকে নিয়ে কখনোই কোন চিন্তা করত না কারণ আয়াত নিজেই নিজের প্রটেক্ট করতে পারে, কিন্তু কেউ যে সোজা মারার প্ল্যান করবে সেটা আরুহীর ধারনার বাইরে।

” তুমি খোঁজ নিয়ে দেখো তো কোন ক্লু পাও কি না? আর পেলে সরাসরি আমাকে জানাবে ”

” আসলে ম্যাম, আজ নাকি উনার বাড়ি তে কি অনুষ্ঠান আছে আর কেউ একজন সেটাকেই কেন্দ্র করে তার ছক সাজাচ্ছে ”

আরুহী ভ্রু কুঁচকালো, সন্দিহান কন্ঠে বলল,

” এত কথা তুমি কি করে জানলে সুলতান? ”

সুলতান খানিকক্ষণ নিরব থেকে বলল,

” ম্যাম আপনি সাজিদ খন্দকার এর ডেস্কে তারই এমপ্লই দিয়ে একটা গোপন ক্যামেরা সেট করিয়েছি, সাজিদ খন্দকার তা জানে না। তার ডেস্কে কি কথা হয় সব রেকর্ড হয়ে যায়, সেখানেই সাজিদ খন্দকার কাকে যেন বলছিলো মাহাবীন খান আয়াত কে মারার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু সে না তার চেয়ে ও বড় মাপের কেউ করছে , আমি জানার সাথে সাথে ই আপনাকে বললাম, অনেক বড় বিজনেস ওমেন উনি সাথে খুব ভালো মানুষ ও, উনাকে কেউ মারার চেষ্টা করতে পারে! ”

” আর কিছু জানো? ”

” ম্যাম আমি যতটুকু বুঝতে পারছি তা হচ্ছে আজ ওই অনুষ্ঠানেই কেউ ছদ্মবেশ ধরে ঢুকতে পারে, ম্যাম আমি সিউর না তবে আমি আমার এক্সপেরিয়েন্স থেকে বলছি, অনেক বছর ধরে তো এসব নিয়ে ঘাটাঘাটি করি, তাই এসব দিকে সন্দেহের প্রবনতা টা বেশি ”

” ইট’স ওকে, তুমি দেখো আর রেকর্ড টা আমার ফোনে পাঠিয়ে দাও ”

” জি ম্যাম ”

আরুহী কল কেটে ঘড়ি তে সময় দেখে নিলো বিকেল ৫ টা, আরুহী তড়িঘড়ি করে সেইম ড্রেসআপ এ বেরিয়ে গেলো, কোন এক গুরুত্বপূর্ণ কার্য সিদ্ধি করার জন্য।

_______________________

সাত বারের মতো ফোনের রিংটোন বাজতে বাজতে কেটে গেলো যা দেখে আরুহী দীর্ঘ শ্বাস ফেললো, পুনরায় আবার স্ব শব্দে বেজে উঠতেই আরুহী নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে থেকে ফোন টা পিক করে কানে দিলো,

” আরুর বাচ্চা আরু, ফোন কই আর তুই কই? ফোন ধরতেই পারবি না তো ইউজ করিস কেন? ”

” ফাস্ট অফ অল আমি আয়ুর বাচ্চা আরু, সেকেন্ড আমি ব্যস্ত ছিলাম ”

আরুহীর ঝরঝরে পরিষ্কার কন্ঠ। ওপর পাশ থেকে আওয়াজ শোনা গেলো না, শোনা গেলো কেবল মাত্র দীর্ঘ শ্বাস।

” তুই কি আসবি না? ”

রৌদসীর কন্ঠে অনুরোধ, আরুহী বিরক্তি নিয়ে বলল,

” আমি কি একবার ও বলেছি আসব না? তুমি গায়ে হলুদের আসরে বসো আমি আসছি ”

রৌদসী হাসলো, তার বোন টা এমনই, যা বলবে তাই করবে, যদি সে একবার ও বলে সে যাবে তাহলে সে যাবেই।

” ঠিক আছে চলে আয় তাড়াতাড়ি, বেশি ওয়েট করাস না ”

” শোনো রোদ আপু ”

” হুম বল”

আরুহী আমতাআমতা করে বলল,

” আমি কিন্তু শাড়ি পরতে পারি না, আমি শাড়ি পড়বো না ”

” তোকে নিজে পরতে হবে না তুই নিয়ে আস আমি পরিয়ে দেবো ”

আরুহী ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও বলল,

” ঠিক আছে ”

বলেই ফোন কেটে হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সবে সন্ধ্যা সাত টা বাজতে চলল,

আরুহী একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে কাবার্ড থেকে কাচা হলুদ রঙের একটা শাড়ি বের করলো, শাড়ির উপর খুব সুন্দর পাথরের পুথি দিয়ে ডিজাইন করা যা বেশ গর্জিয়াস না হলেও স্ট্যান্ডার্ড। আরু ব্যগে শাড়ি পড়ার সকল কিছু নিয়ে একটা হলদে রঙের লং শার্ট আর প্যান্ট পরে, মাস্ক লাগিয়ে বের হয়ে গেলো।

________________

আজ প্রায় ন’বছর পর আরুহী এসে দাড়িয়েছে খান মেনশনের সামনে, এই খান বাড়ি তেই তো তার অঢেল স্মৃতি জড়িয়ে আছে, কত হাসি, আড্ডা, কষ্ট পাওয়া কান্না করা সবই আছে। কত সূক্ষ্ম বিষয়ে সে কেঁদে কেটে বাড়ি মাথায় করত আর এখন! এখন কত হাজারো ব্যথা বুকে বহন করে হাসি মুখে কাটিয়ে দিচ্ছে সে খবর কি কেউ জানে? সকল অভিমান এক পাশে রেখেই তো আজ সে খান বাড়ি তে পা দিচ্ছে, কিন্তু সবার উপর থেকে অভিমান কমলেও দুটো মানুষের উপর থেকে অভিমান তার কমবে না।

আরুহী গেইট ঢেলে ভেতরে ঢুকতেই খেয়াল করলো আজ খান মেনশন ফেইরি লাইট দিয়ে আর ফুল দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো, চার পাশে মানুষের ভীড়। কেউ কেউ আরুহী কে অবাক চোখে ও দেখছে, আরুহী মাস্কের আড়ালেই হাসলো। মানুষ দের এই দৃষ্টি যে তার বড্ড চেনা তার এই অদ্ভুত লুকের জন্য। সে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো বাড়ির ভেতর। অনেক চেনা মুখ, ভীষণ প্রিয় মুখ এখানে আছে কিন্তু কেউ হয়তো তাকে চিনতে পারছে না!

সিড়ি দিয়ে দোতলায় উঠতে গিয়ে আরুহী থমকে গেলো, চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো,

এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সবুজ রঙের শাড়ি পড়া মহিলার দিকে,

সিড়ি বেয়ে নেমে আসছে আয়াত, এত বড় বড় দু-দুটো মেয়ে আছে তার অথচ কেউ দেখলে বোঝার উপায় নেই, তার পুরোনো এ্যাটিটিউড এর বিন্দু পরিমাণ ও কমে নি, হাতে ব্র্যান্ডের ঘড়ি , মোবাইল টিপতে টিপতে নিচে নেমে আসছে, আর তার চুল গুলো খোঁপা করে ফুল লাগানো, ফুল গুলো নিশ্চয়ই তার বাবা লাগিয়ে দিয়েছে! আয়াত খোঁপা করলে আবরার সেই খোঁপায় ফুল লাগিয়ে দেয় এটা তাদের পুরোনো অভ্যাস। যা আরুহী ছোট বেলা থেকে ই দেখে আসছে। আরুহী হাসলো, কত ভালোবাসা তার বাবা মায়ের মাঝে!

আয়াত নিচে নেমে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো, আরুহী এক পলক তার মায়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে উপরে চলে গেলো।

দো তলায় সবচেয়ে শেষ রুম টা আরুশ খানের, তার অপজিটের রুম টা মিরাজ ভাইয়ের। তার থেকে সামনে দুটো রুম পরেই রৌদসী আপুর রুম। এই বাড়ির আনাচে-কানাচে সকল কিছু ই আরুহীর মুখস্ত তবে এতো বছরে একটুকুও চেঞ্জ হয়নি দেখে বেশ চমকো সে।

আরুহী রৌদসী আপু রুমের সামনে এসে সোজা ঢুকে পড়লো রুমের ভেতরে।

আরুহীকে দেখে রৌদসী বসা থেকে উঠে দাড়ালো, রুমের মধ্যে বেশ একটা মানুষ ছিলো না, সব রৌদসী আপুর কলিগ কয়েকজন , সে তাদের অনুরোধ করে বের করে দিলো রুম থেকে , সোজা দরজা টা লাগিয়ে দিলো,

আরুহী বিছানার উপর বসে ব্যাগ থেকে শাড়ি টারি সব বের করলাম,

এই প্রথম মাস্ক খুলল রোদসী আপুর সামনে, আপু এগিয়ে এসে আরুহীর মুখ টা আজলে তুলে বলল,

” মাশা আল্লাহ, আমার বোন টা খুব সুন্দর দেখতে হয়েছে একদম আয়ুমার মতো, তুই ছোট থেকে ই খুব সুন্দর ছিলি, কারো নজর না লাগুক, যা ফ্রেস হয়ে আয় ”

আরুহী আর কোন কথা না বাড়িয়ে ফ্রেস হতে চলে গেলো, ফ্রেস হয়ে আসতেই দেখে রৌদসী শাড়ি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,

রৌদসী আরুহীকে শাড়ি পরিয়ে তাকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে চুল গুলো সেট করতে করতে বলল,

” দেখলি আরু তোর ভাগ্য টা কত ভালো, যার বিয়েতে এসেছিল সেই তোকে সাজিয়ে দিচ্ছে, এত ভালো ভাগ্য ক’ জন পায় বল ”

আরুহী মুচকি হাসলো,

” দেখতে হবে না কার বোন টা ”

সব সেট করা শেষ করে, রৌদসী তার ড্রয়ার থেকে কিছু অরনামেন্স বের করে আরুহী কে পড়াতে পড়াতে বলল,

” আরু আজ আমি বেশ অবাক হচ্ছিরে

আরুহী ভ্রু কুঁচকে বলল,

” কেন? ”

” না মানে তুই তো সাজতে একদম ই চাস না তাহলে আজ আমি যেভাবে বলছি সেভাবে ই কিভাবে সাজছিস? আমি তো অবাক ”

আরুহী ঘাড় ঘুরিয়ে রৌদসীর দিকে তাকিয়ে বলল,

” তোমার মনে আছে কি না জানি না তবে আমার মনে আছে অনেক বছর আগে আমি তোমাকে কথা দিয়েছিলাম তোমার বিয়েতে আমি তোমার মন মতো সাজবো, তাই তুমি সাজাচ্ছো আমি চুপ করে দেখছি কারণ আরুহী চৌধুরী কখনো তার কথার খেলাপ করে না ”

বলেই উঠে দাড়ালাম, নিজেকে খুঁটিয়ে খুটিয়ে আয়নায় দেখতে লাগলাম, নাহ্ খারাপ লাগছে না।

রৌদসী আপু আমার সামনে এসে আমার দিকে তাকিয়ে নিজের চোখের কোনা থেকে কাজল এনে আমার কানের পিছনে লাগিয়ে বলল,

” আমি কুসংস্কার বিশ্বাস করি না তবে তোর ক্ষেত্রে রিস্ক নিতে ও চাই না, অনেক সুন্দর লাগছে একদম পরীর বাচ্চা, যদিও তুই পরীর বাচ্চা ই!”

আরুহী আড় চোখে রৌদসীর দিকে তাকিয়ে বলল,

” হইছে পাম মারা শেষ হইছে, এতো পাম তুমি দিতে পারো যদি আমি নিতে পারতাম আই থিংক এতো দিনে আকাশে উড়ে যেতাম ”

হঠাৎ দরজায় কেউ নক করতেই আরুহী আর রৌদসী একে অপরের দিকে তাকালো,

রৌদসী এগিয়ে গিয়ে দরজাটা খুলতেই আরুহীর নজর গেলো দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টার দিকে,

চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো আবারো…

চলবে…

[ গঠন গত মন্তব্য আশা করছি জনগন!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here