মায়াবিনী_(২) #Ayrah_Rahman #পর্ব_১৩

0
858

#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_১৩
______________________________

কপালে কারো ঠোঁটের স্পর্শ পেতেই চমকে উঠলো আরুহী!

তবে সেটা সামলে চুপ করে রইলো ক্ষন, আরুহীর অজানা নয় মানুষ কে?

নিভু নিভু আলোতে মানুষ টার অবয়ব স্পষ্ট। আরুহী নড়লো ও না আর না কথা বলল।

আরুশ নিচু হয়ে বেশ লম্বা একটা চুমু খেয়ে সরে এলো, নিচু হয়ে হাটু ভাজ করে বসলো ঠিক আরুহীর মুখের সামনে।

আরুহীর হাত জড়িয়ে ধরলো বসে রইলো বেশ অনেক ক্ষন। বিরবির করে কিছু বলল হয়তো যা আরুহীর কান পর্যন্ত এলো না, তাতে বেশ বিরক্ত সে। উঠে যাবার আগে শুধু একটা কথা ই শোনা গেলো,

পাখি, পৃথিবীতে যেখানে সুখ আছে, সেখানে নিষেধ আছে।

“”একটা সুখ মানে একটা নিষেধ অমান্য করার ফল, আমি কি সেই নিষেধ টা অমান্য করতে পারি না! “”

বলেই ধীর পায়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।

আরুহী চোখ খুলে তাকালো, মানুষ টা রুম ছাড়লেও তার গায়ের গন্ধ টা এখনো বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। আরুহী তাচ্ছিল্যে হাসলো। তার জীবন টা এত বেরঙিন না হলেও পারতো!

মাঝ রাতে আরুহীর বেশ অস্বস্তি হচ্ছিলো, মনে হচ্ছিলো গায়ে ভীষণ জ্বর। গলাটা বেশ শুকিয়ে আসছে, ঠোঁট দুটো ও বেশ শুষ্ক কিন্তু উঠার জন্য শরীরে কোন শক্তিও যেন সে পাচ্ছে না। শুধু আজ নয় বেশ অনেকদিন ধরে ই সে ব্যপার টা খেয়াল করছে। মাঝে মাঝে ই জ্বর হয় তার, গিঁটে গিঁটে ব্যথা ও হয়। আবার দু এক বার মেডিসিন নিলে ঠিক হয়ে যায়। বেশি একটা গুরুত্ব দেয় না সে। কাজের চাপে নিজের প্রতি একদমই খেয়াল করা হয় না তার, নিজের প্রতি বড্ড অবহেলা করা হয় আজকাল।

খুব কষ্ট করে চোখ খুলল সে, উঠে বসে হাত বাড়িয়ে পানির গ্লাস টা নিয়ে এক নিঃশ্বাসে ঢকঢক করে পুরো গ্লাস খালি করে ফেলল। এবার মনে হয় একটু বেটার লাগছে, ভাবলো, একবার কি ডাক্তারের শরণাপন্ন হবে? পরবর্তী তে সেটাও মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিলো। এই সামান্য কারণে ডাক্তারের কাছে যাওয়াটা তার কাছে নিতান্তই হাস্যকর ঠেকছে।

বেশি একটা মাথা ঘামালো না এ ব্যাপারে, শুয়ে পরলো আবার ও।

সকালে এলার্মের শব্দে ঘুম ভাঙলো আরুহীর, মাথা টা ভার ভার লাগছে, মাথায় হাত দিয়েই রুম থেকে বের হলো সে, এখনো বেশি একটা মানুষ উঠে নি ঘুম থেকে। সকাল সবে ছ’টা।

ভাবলো একবার পুরো বাড়ি টা একবার চক্কর দিলে কেমন হয়? পরবর্তী তে মত ঘুড়িয়ে ফেলে, হাঁটতে হাঁটতে আটকে যায় একটা রুমের সামনে, দরজাটা বেশ খানিকটা ভিড়ানো, আরুহী খানিকটা উঁকি দিলো দেখার জন্য, হঠাৎ ই ভেতর থেকে কোন পরিচিত কন্ঠ ভেসে আসলো আরুহীর কানে,

” কোন অবিবাহিত ছেলের রুমে উঁকি ঝুকি মারা নিশ্চয়ই কোন ভালো মেয়ের গুনের মধ্যে পড়ে না! তার উপর আমি একজন স্ব-নাম ধন্য কার্ডিওলজিস্ট, একজন ডাক্তারের রুমে উঁকি ঝুকি দেওয়া কি ঠিক? মিস আরুহী চৌধুরী? ”

ফট করে আরুহী সোজা হয়ে দাঁড়ালো, তার দেখা অনুযায়ী তো ভেতরে কাউকে ই দেখতে পেলোনা, তাহলে?

ধাক্কা দিলো দরজায়, দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করতেই তার চোখে দৃশ্য মান হলো কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকা আরুশের দিকে।

” একটা অবিবাহিত ছেলের রুমে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ কি ঠিক মিস আরুহী? ”

আরুশ চোখ বন্ধ করে ই কথা গুলো বলল, আরুহী ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,

” আরুহী চৌধুরী কখনো ঠিক বেঠিক এর ধার ধারে না ডক্টর আরুশ, অনেক বেলা হয়েছে ঘুম থেকে উঠুন, একজন ডাক্তার হিসেবে নিশ্চয়ই রুগীকে বেলা বারোটা পর্যন্ত ঘুমুতে বলবেন না, ডাক্তার ই যখন ১২ টা পর্যন্ত ঘুমায় সেখানে তার রুগীরা কি করবে? অন্য কে ভালো মন্দ আর ঠিক বেঠিক এর হিসাব না বুঝিয়ে নিজে বুঝেন কাজে আসবে! ”

বলেই আরুহী গটগট করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

আরুহী যেতেই আরুশ ফট করে উঠে বসলো, কপাল কুঁচকে ভাবতে লাগলো, সে কখন বেলা ১২ টা পর্যন্ত ঘুমায়? আরুহী তো হুদাই কত গুলো কথা শুনাই গেলো, আজ না হয় একটু দেরি ই হয়েছে, আরুশের চোখ দেয়াল ঘড়ির দিকে যেতেই সে ভ্রু কুচকালো, সবে তো ছয়টা তাহলে দেরি কিভাবে? আজ না হয় আরুহী আগেই উঠেছে তাই বলে এক বস্তুা জ্ঞান দিয়ে গেলো? বিরক্তি তে কপাল কুঁচকালো সে!

_____________________

ঘড়ির কাটা তখন আট’টার কাটায় গিয়ে টিক টিক করে জানান দিচ্ছে, সবাই তখন খাবার টেবিলে একমাত্র আরুহী ছাড়া।

আরুহী সোফার এক কর্নারে বসে মোবাইল দেখছে, অনেক সাধাসাধির পরও সবাই ব্যর্থ হয়েছে ওকে খাওয়াতে। এক বার যখন না করেছে তার মানে কেয়ামত হয়ে গেলে ও এই মূহুর্তে সে খাবে না।

হঠাৎ নিজের সামনে খাবারের অস্তিত্ব টের পেয়ে চোখ তুলে তাকালো আরুহী। খাবার হাতে আরুশ দাড়িয়ে আছে। আরুহী ভ্রু কুঁচকালো।

” এমন হা করে তাকিয়ে আছিস কেন? হা কর! ”

আরুহী ঘাড় ঘুরিয়ে টেবিলে তাকালো, সবার এক্সপ্রেশন দেখে বেচারীর পেট ফেলে হাসি আসছে, কিন্তু এ মূহুর্তে হাসি দেওয়া মানে অসম্ভব কিছু ঘটে যাওয়া, তাই হাসি টা গিলে আশে পাশে তাকালো। সবাই তার দিকেই তাকিয়ে আছে, শুধু তাকিয়ে আছে বললে ভুল হবে চোখ দুটো রসগোল্লা বানিয়ে তাকিয়ে আছে, শুধু মাত্র তার মা ছাড়া, এসব কাজে আয়াতের ইন্টারেস্ট বরাবরই ছিল না। রুশা মাত্র ই ঘুম থেকে উঠে টলতে টলতে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসছিলো, খাবার টেবিলের সবাইকে খাবার রেখে কোথাও তাকিয়ে থাকতে দেখে সেও তাকালো, বেচারীর পারে না চোখ গুলো খুলে বের হয়ে আসে।

আরুহী পুনরায় আরুশের দিকে তাকালো, মুচকি হেসে বলল,

” নো নিড মিস্টার খান! আরুহী নিজের কাজ নিজেই করতে পারে, সে নিজের কাজ করা শিখেছে এখন আর কারো হেল্প এর প্রয়োজন পরে না ”

আরুশের মন টা খারাপ হয়ে গেলো, পরবর্তী তে আরুহীর অভিমান বুঝতে পেরে আরুহীর পাশে ধপ করে বসে বলল,

” হুম সেটা তো জানি, তুই বেশ বড় হয়ে গেছিস, অনেক অভিমান করতে ও শিখেছিস, মুখের ওপর ঠাস ঠুস কথা বলতে ও শিখেছিস কিন্তু আমার কাছে তুই সবসময় ই সেই ছোট্ট আরু ই থাকবি ”

আরুহী কপাল কুঁচকে বোঝার চেষ্টা করছে আসলে আরুশের মতলব টা কি?

আরুশ খানিকটা চেপে বসলো আরুহীর দিকে, তা দেখে আরুহী ও খানিকটা সরে বসলো, আরুশ আরেকটু চাপতেই আরুহী রাগী দৃষ্টি তে আরুশের দিকে তাকিয়ে বলল,

” কি সমস্যা আ…”

আরুহী কথা শেষ করার আগেই আরুশ আরুহীর মুখে খাবার ঢুকিয়ে দিলো, আরুহী খাবার মুখে নিয়ে বিস্ফোরিত চোখে আরুশের দিকে তাকালো,

আরুশ ইনোসেন্ট ফেইস করে বলল,

” এভাবে তাকাচ্ছিস কেন? তোর কি মনে হয় আমি তোকে ভয় পাই? আমি কিন্তু মোটেও তোকে ভয় পাই না, আর খাবার সময় কথা বলা ঠিক না তাই কথা না বলে চুপচাপ চিবা ”

আরুহী রাগী দৃষ্টি তে আরুশের দিকে তাকিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে সবার দিকে তাকালো , সবাই মুখ টিপে হাসছে!

আরুহী উঠতে নিবে অমনি আরুশ আরুহীর হাত চেপে বসিয়ে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিস করে বলল,

” এখান থেকে এক পা সামনে আগাবি তো পা ভেঙে কাঁধে ঝুলিয়ে দেব, আই থিংক এট লিস্ট তুই আমাকে ভালো করে ই চিনিস, আরুশ খান এক কথার মানুষ, আমি যেমন ভালো তার চেয়েও বেশি খারাপ! ”

আরুহী নাক ফুলিয়ে বসে রইলো, কেন জানি এই মানুষ টার কথা অমান্য করতে পারে না! তবে আকাশ সম অভিমান আর রাগ এখনো জমা আছে এই মানুষ টার প্রতি !

আরুহী চুপ করে বসে রইলো….

চলবে…

[ রেসপন্স করবেন প্লিজ!
আর পাঠক গণ যারা আমার লিখা গল্প পড়েন তারা প্লিজ পেইজে ফলো দিয়ে রাখবেন 🥺]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here