মায়াবিনী_(২) #Ayrah_Rahman #পর্ব_১৭

0
848

#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_১৭
______________________________

ভোরে সূর্যের আলো সবচেয়ে বেশি স্নিগ্ধতা ছড়ায়। যখন ধীরে ধীরে সূর্য টা উদিত হয় আর সূর্যের আলো চারিদিকে সমান ভাবে ছড়িয়ে পড়ে হালকা শীতল বাতাস টা শরীরে দোলা খেয়ে যায় তখন পিছনের সকল ক্লান্তি যেন এক নিমিষেই উধাও হয়ে যায়।

আরুহীর ঘুম ভেঙে গেছে সেই সূর্য উঠার ও আগে তাই সে ভোরের সৌন্দর্য টা উপভোগ করার জন্য ই রিসোর্টের ছাদের এক কোনায় চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। শীতল বাতাস টা যেন শরীরে এসে ধাক্কা লাগছে বারংবার, বেশ কয়েকবার বড়ো বড়ো শ্বাস নিয়ে চোখ খুলল, মুচকি হেসে আশপাশটায় তাকালো, একটু ঝুঁকে নিচে তাকিয়ে দেখে রাস্তায় তেমন একটা মানুষের চলাচল নেই,

ইসসস কতো সুন্দর একটা প্রকৃতি তারা মিস করে ফেলে, যারা,এই ভোরে ঘুমিয়ে থাকে! তবে ভোরের ঘুম টাও যে ফেলে দেবার মতে তাও কিন্তু না, ভোরের সূর্য যেমন সুন্দর তেমনি ভোরের ঘুম টাও মজার, তবে মজার ব্যপার হলো, একটা উপভোগ করতে হলে আরেকটা সেক্রিফাইস করতে হবে, দুটো সৌন্দর্য একবারে উপভোগ করা অসম্ভব।

কিছু ক্ষন ওভাবেই থেকে রুমে চলে আসলো, ফ্রেস হয়ে ফোন হাতে নিতেই স্ক্রিনে ভেসে উঠলো আননোন নাম্বার থেকে মিসড কলের নোটিফিকেশন। আরুহী ভ্রু কুঁচকে কল করতে গিয়েও থেমে গেলো, ভাবলো, যার দরকার সেই তো আবার দিবে আমার দিয়ে কাজ কি?

কথা গুলো চিন্তা করতে করতেই পুনরায় ফোন টা স্ব শব্দে বেজে উঠলো,

” হ্যালো, কে বলছেন? ”

” আহহহহ ”

এমন অদ্ভুত শব্দে আরুহী প্রথমে খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো, পরবর্তী তে মুখ শক্ত করে গম্ভীর কন্ঠে বলল,

” কে বলছেন? ”

” আহহা মায়াবতী, সাত সকালে এমন কর্কষ কন্ঠে কথা না বললেই নয়? আমার মতো ইনোসেন্ট, ভোলাভালা একটা ছেলে এমন কন্ঠে ভয় পাবে তো! ধরো যদি তোমার এই কন্ঠ শুনে আমি হার্ট অ্যাটাক করে ফেলি! তাহলে তোমার কি হবে গো? ”

আরুহী বিরক্ত হলো ভীষণ। এই সাত সকালেই মেজাজের তেরো টা বাজিয়ে দিলো এই পাগল। নিজের যন্ত্রণায় ই বাঁচি না আবার নতুন পাগলের আমদানি!

আরুহী বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,

” এই আপনার মাথায় কি ঘিলু নেই? এমন পাগলাটে কথা বার্তা আর এতো বেশি কথা বলেন কিভাবে? এই এতো সকালে আমাকে ফোন দিয়ে জ্বালানোর মানে টা কি? কাজ কাম নেই আপনার? আর আরেকটা কথা, আমাকে ওই মায়াবতী টায়াবতী ডাকবেন না, আমার সুন্দর শালীন একটা নাম আছে, আমার মা বাবা একটা সুন্দর নাম রেখেছে আমার ” আরুহী চৌধুরী “, সোও কলড মি আরুহী, আরেকববার যদি আপনার মুখে এসব আউল ফাউল নাম শুনি তো আপনাকে…. ”

আরুহী থামলো, রাগ টা বেশি ই উঠে গেছে, ইদানীং এমন হয়, হুট করেই মাত্রা অতিরিক্ত রাগ উঠে যায় পরবর্তী তে মাথায় ভীষণ পেইন হয় তাই আরুহী নিজেকে ই বোঝায় সে রাগবে না! রাগ কন্ট্রোল করবে, কিন্তু সেটা আর হয়ে উঠে কয়!

” যদি বলি তো কি করবে মায়াবতী? ”

বেশ শান্ত কন্ঠে কথা টা বলে উঠলো তিহান। আরুহী নিজের রাগ টা কন্ট্রোল করতে করতে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

” তখন একশন টা আরুহীর হবে না, হবে ফোর্স অফিসার আরুহী চৌধুরীর, এমন হাল করবো না, মুখ দিয়ে কথায় বের হবে না, যত্তসব ”

বলেই আরুহী ফোন টা কেটে দিলো,

তিহান ফোন টা হাতে নিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো,

ফোন টা বুকের উপর রেখে শুয়ে চোখ বন্ধ করে বিরবির করে বলতে লাগলো,

” তোমার এই রাগ টাই তো আমার ভাল্লাগে মায়াবতী, ভীষণ ভালো লাগে, তোমার রাগী কন্ঠ, তোমার রেগে তাকানো, রাগে ফোস ফোস করে আমার দিকে যখন তাকাও তোমার ওই চোখে আমি কি যেন একটা দেখতে পাই, যা আমাকে বড্ড আকর্ষন করে, আমি ফিরাতে পারি না মন কে সাথে চোখ কেও, ছন্নছাড়া লাগে সব কিছু, সব কিছু ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে হয়! কেন এমন মনে হয় মায়াবতী? এর নাম আমি কি দেবো বলো তো? ভালোবাসা? নাকি এর অন্য কিছু?

উহুম, এর নাম আমি জানি না! জানতেও চাই না, শুধু জানি এই রণচণ্ডী কে আমার চাই, তার চোখের দাবানলে ভস্ম হতে চাই, পুরে পুরে কয়লা হতে চাই তবুও আমার এই রণচণ্ডী কেই চাই ”

__________________________

” মাহাবীন খান আয়াত বলছেন? ”

আয়াত নিজের ডেস্কে বসে ফাইল চেক করছিলো, হঠাৎ নিজের ফোনে কল আসায় ফোন হাতে নিলো সে, স্ক্রিনে আননোন নাম্বার, পিক করার সাথে সাথে ই অপরিচিত কোন পুরুষালী কন্ঠ শুনতে পেয়ে ভ্রু কুঁচকালো,

” হুম আমি আয়াত, আপনি কে? ”

লোকটা ফোনের ওপাশ থেকে ই হাসলো, যার শব্দ আয়াত শুনলো বেশ ভালো করে,

” আমি কে সেটা জানা আপনার জন্য খুব একটা জরুরী বলে আমার মনে হচ্ছে না, তবে আপনাকে সাবধান করতে ফোন করলাম! ”

আয়াতের কন্ঠ গম্ভীর, রসিকতা তার মোটেও পছন্দ না, তবে লোকটা কে বাজিয়ে দেখার জন্য মুচকি হেসে বলল,

” ফাস্ট অফ অল আপনি নিজের পরিচয় গোপন করছেন যা আমার মোটেও সুবিধা জনক লাগছে না, পরিচয় গোপন করে কারা জানেন? কাপুরুষ, কাপুরুষেরা পরিচয় গোপন করে, আই থিংক আপনি ব্যতিক্রম নন। সে যায় হোক, আমি কোন কাপুরুষের কাছ থেকে কোন প্রকার নিউজ কিংবা নীতি বাক্য শুনতে রাজি নই ”

অপর পাশের লোকটা ফোসফোস করতে করতে বলল,

” মাহাবীন খান আপনি কিন্তু আমায় অপমান করছেন! ”

লোকটার কথা শুনে আয়াত বেশ শব্দ করে ই হেসে বলল,

” অওও তাই নাকি? ঠিক আছে বললাম না কিছু, কিন্তু আপনার মতো কাপুরুষ .. অহহ সরি আপনার মতো একজন মহৎ হৃদয়ের মানুষ আমাকে কেন ফোন দিয়েছে জানতে পারি? ”

” আপনি এখনো আমাকে অপমান করেই যাচ্ছেন মিসেস আয়াত, যা হোক যেই জন্য আপনাকে ফোন দেওয়া! ”

” হুম সেটাই তো জানতে চাচ্ছি ”

” আপনার মেয়ে আরুহী চৌধুরী তাই তো? ”

” কোন সন্দেহ আছে? ডিএনএ টেস্ট করিয়ে রিপোর্ট দিবো? ”

” আপনি এমন ঘাড় ত্যাড়া মানুষ কেন? লোকে ঠিক ই বলে মাহাবীন খান আয়াত ঘাড় ত্যাড়া মহিলা আজ নিজে প্রমান পেলাম ”

” তা আমার ভালো ই জানা আছে, তারপর বলেন.. ”

” আপনার মেয়ে আই মিন আরুহী চৌধুরী, যেই তদন্তে এসেছে সেটা থেকে এক্ষুনি ফিরে আসতে বলেন নয়তো সেটা আপনাদের জন্য সুখকর হবে না ”

আয়াত হাসলো, এতক্ষণে বাছা ধন লাইনে এসেছে, আরুহী গলা পরিষ্কার করে বলল,

” প্রথমত আরুহী আমার সাথে কোন বোঝা পড়া করে নি, সে কি করে, কোথায় যায় সেটাও আমাকে বলে যায় না আর দ্বিতীয়ত অন্যের ব্যক্তিগত ব্যপারে নাক গলানোর অভ্যেস আয়াতের নেই, সোও যার কাজ তাকেই বলে দেখেন কিছু করতে পারেন কি না, আই থিংক লাভ কিছু ই হবে না, কারণ মেয়ে টা তো আমার ই, তবে মনের শান্তনার জন্য হলেও একটা ট্রাই করে দেখতে পারেন, শুধু শুধু আমার সময় টা নষ্ট করবেন না ”

বলেই আয়াত ফোন টা কেটে দিলো,

আয়াত ফোনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো, এমন নয় যে আয়াত জানে না লোক টা কে? সে তো প্রথমে গলার শব্দ আর হাসির আওয়াজ শুনেই আন্দাজ করতে পেরেছে লোক টার সম্পর্কে, তাই তো একটু মজা নেওয়ার জন্য ই হালকার উপর ঝাপসা অপমান করে দিলো..

___________

ঘড়ির কাটা ১০ টার ঘরে গিয়ে টিক টিক করে জানান দিচ্ছে এখন সবে ১০ টা বাজলো, আরুহী ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে রেডি হচ্ছিলো,

হঠাৎ দরজায় নক করার শব্দে দরজার দিকে তাকালো সে, দু হাতে চুল গুলো খোঁপা করে এগিয়ে গেলো দরজার দিকে,

দরজা খুলে সামনে তাকাতেই সুলতানের চেহারা দৃশ্য মান হলো,

” আসসালামু আলাইকুম ম্যাম ”

” ওয়ালাইকুম সালাম, কি ব্যপার সুলতান? কোন জরুরি কিছু? ”

সুলতান মিনমিনে কন্ঠে বলল,

” আসলে ম্যাম, হয়তো আপনার কাছে এতো জরুরি না ও মনে হতে পারে তবে আমার মনে হলো বলা টা দরকার ”

আরুহী ভ্রু কুঁচকে বলল,

” হুম বলো কি বলবে? ”

” ম্যাম আসলে আমি একটু আগেই জানতে পারলাম, আমরা যেই তদন্তে কাজ করছি, সমুদ্রের ওই মাদক ব্যবসায় একনিষ্ঠ ভাবে কাজ করছে সাজিদ খন্দকার। রমরমা ব্যবসা তার। ”

আরুহী হাসলো, সে তো এটা আগেই বুঝতে পেরেছিলো। আজ নিশ্চিত হলো।

মুচকি হেসে বলল,

” এটা আমি আগেই আন্দাজ করতে পেরছিলাম”

সুলতান মাথা চুলকে বলল,

” ম্যাম আরেকটা কথা ”

আরুহী ভ্রু কুঁচকে বলল,

” হুম বলো ”

” ম্যাম সাজিদ খন্দকার বা তার লোকদের কেউ আয়াত ম্যাম এর কাছে ফোন করেছিলো ”

আরুহীর ভ্রু জোড়া আরোও কুঁচকে গেলো,

” কেন? ”

” ম্যাম আপনার মা কে ওরা বলেছিলো আপনাকে যেন এই তদন্তে বাধা দেয় ”

” মা কি বলল? ”

” ম্যাম কৌশলে সেটা ওদের বুঝিয়ে দিয়েছে যে এই ব্যপারে ম্যাম আপনাকে কিছু ই বলবে না, সাহস থাকলে আপনাকে ফোন করে মানা করতে বলে ওদের ”

আরুহী হাসলো, তার মা এমন ই, লুকিয়ে সবসময় প্রোটেক্ট করবে কিন্তু সামনে আসবে না..

চলবে….

[ আজকের পর্ব টা কেমন হয়েছে জানাবেন প্লিজ

হ্যাপি রিডিং ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here