#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_২৩
____________________
রাত প্রায় অনেক হলো, চৌধুরী ভিলার ড্রয়িং রুমের দেয়াল ঘড়িটা টং টং শব্দে জানান দিচ্ছে এখন সবে রাত আট’টা বাজলো।
ড্রয়িং রুম জুড়ে পিন পতন নিরবতা বিরাজ করছে অথচ রুম জুড়ে রয়েছে প্রায় চৌদ্দ – পনেরো জন মানুষের উপস্থিতি, কারো মুখে কোন কথা নেই। সবার সামনে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে আরুশ খান।
আবরার ভ্রু কুঁচকে আরুশ কে পর্যবেক্ষন করছে, আয়াস ও অপেক্ষা করছে আরুশের মুখ থেকে কিছু একটা শোনার অপেক্ষায়, শুধু আয়াস নয় ড্রয়িং রুমে উপস্থিত সকলের দৃষ্টি যেন একই কথা জানান দিচ্ছে। শুধু মাত্র আরুহী ছাড়া, তার যেন এসবে কোন ইন্টারেস্ট ই নেই। সোফার এক কোনে বসে পায়ের উপর পা রেখে এক মনে মোবাইল ঘাটছে। এখানে শুধু মাত্র তার ছোট বাবার কথায় বসেছে নয়তো কোন ইচ্ছে ই তার ছিলো না।
আরুশ সকলের এক পলক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঠোঁট ভেজালো,
মিরাজ ভিষণ বিরক্ত, গত ১০ মিনিট যাবত কিছু বলবে বলে উৎসুক হয়ে বসে আছে অথচ যে বলবে তার ই কোন উৎসাহ খুঁজে পাচ্ছে না। হাতে কাঁচের গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বলল,
” তুই কি এখানে সং সাজিয়ে বসিয়ে রাখার জন্য ডেকেছিস আরুশ? ”
আরুশ ঘাড় বেঁকিয়ে মিরাজের দিকে তাকালো,
” আমি কি তা একবার ও বলেছি? ”
” তাহলে মুখে সুপার গ্লু দিয়ে রেখেছিস কেন? কি বলবি বল, আমার কাজ আছে ”
আরুশ আড় চোখে এক পলক আরুহীর দিকে তাকালো,
” আমি বিয়ে করবো! এন্ড এক সপ্তাহের ভিতরে, বিয়ের এরেঞ্জমেন্ট করো ”
আরুশের কথা শুনে মিরাজের হাত থেকে পানির গ্লাস টা ঠাস করে নিচে পরে সাথে সাথে ই ভেঙে গেলো, কিন্তু সেদিকে তার কোন খেয়াল ই নেই, সে তো আরুশের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে, শুধু মিরাজ না ড্রয়িং রুমে উপস্থিত সকলের দৃষ্টি থমকে গেছে এক মুহূর্তে ই। সবার মনে যেন একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে,
এটা কি করে সম্ভব!
আরুহী এতোক্ষনে ভ্রু কুঁচকালো, হাতটা থেমে গেলো সাথে সাথে ই, তবে দৃষ্টি তখন ও মোবাইলেই সীমা বদ্ধ।
আয়াস বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে আরুশের কাছে গিয়ে কপালে চেক করে দেখতে দেখতে বলল,
” বাপ জান, তোমার জ্বর টর হয় নি তো? শরীর ভালো তো,? মাথা ঘুরাচ্ছে? মাথা কাজ করছে না? অসুস্থ লাগছে? চল রুমে চল ”
আরুশ ভ্রু কুচকে তাকালো আয়াসের দিকে,
” আমাকে কি কোন এঙ্গেল এ অসুস্থ মনে হচ্ছে তোমার চাচ্চু? আমি ঠিক আছি আমার জ্বর ও হয় নি, মাথাও ঘুরাচ্ছে না আর আমি সুস্থ মস্তিষ্কেই বলছি। ”
” তুমি কি সিউর আরুশ? ”
বেশ অনেক টা গম্ভীর কন্ঠে কথা টা বলে উঠলো আরাফ..
আরুশ তার বাবার দিকে তাকালো, দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
” হুম আমি সিউর ”
” তা পাত্রী কোথায়? কাকে বিয়ে করছো তুমি? ”
” আমার ফ্রেন্ড প্লাস সে এখন আমার কলিগ। ”
আরুশের নির্লিপ্ত কণ্ঠ।
আরুশের কথায় ভ্রু কুঁচকায় রৌদসী। মনে হচ্ছে সে যেন স্বপ্ন দেখছে। না হলে এই অসম্ভব কি করে সম্ভব হলো!
” কলিগ? কলিগ কে আরুশ ভাইয়া? ”
আরুশ রৌদসীর দিকে তাকিয়ে বলল,
” পুষ্মিতা সরকার ”
রৌদসীর চোখ আপনাআপনি বড়ো হয়ে গেলো, অবাক হওয়া কন্ঠে বলল,
” ঐ ঘষেটি বেগম? যে সারাক্ষণ তোর সাথে আঠার মতো লেগে থাকে! ভাইয়া তুমি তো ঐ মেয়ের ছায়াও সহ্য করতে পারো না! ”
” তো? এখন ওকে ভালো লাগে তাই বিয়ে করবো! কাল আসবে ও এ বাড়ি তে ”
হুট করেই আরুহী দাঁড়িয়ে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বলল,
” তোমরা কথা বলো আমি বরং রুমে যায়, আমার মাথা ব্যথা করছে ”
বলেই আরুহী সিড়ির দিকে অগ্রসর হতেই আরুশ বলে উঠলো,
” আরে আরু দাঁড়া, আমার বিয়ের খবর টা পুরোপুরি শুনে তো যা ”
আরুহী পিছনে ঘুরে তাকালো, গমগমে গলায় বলল,
” বিয়ে টা আপনার! আপনি লাফান না! আমাদের বলছেন কেন? ”
আরুশ মিটিমিটি হেসে বলল,
” লাফাবো না! আমার প্রথম বার বিয়ে হচ্ছে! ”
” তো লাফান, আমি কি মানা করেছি! ”
” আরে বুঝিস না, ডক্টর আরুশ খানের বিয়ে বলে কথা, কত কাজ! আর আমার বিয়ের সকল দায়িত্ব তোর! আই নোও তোর থেকে রেসপন্সিবল মানুষ আমি আর পাবো না, তাই আমার বিয়ের সকল দায়িত্ব তোর! আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না ”
আরুহী চোখ ছোট ছোট করে আরুশের দিকে তাকালো,
” আমি কাল সকালে আমার এপার্টম্যান্টে চলে যাবো সোও এসব দায়িত্ব আমি নিতে পারব না, সরি.. ”
” নোও আরুহী চৌধুরী, তোমার দায়িত্ব মানে তোমার দায়িত্ব এটা তুমি এখানে থেকে করো কিংবা উগান্ডা গিয়ে করো সেটা একান্ত ই তোমার ইচ্ছে, এটা তে তো আমি হস্তক্ষেপ করতে পারি না তাই না! ”
আরুহী কিছু বলতে নেবে তার মধ্যে দিয়েই মাহির বলে উঠলো,
” ছেলেটা যখন এতো করে বলছে তাহলে দায়িত্ব টা তুই ই নিয়ে নে না আরু, এই আর এমন কি! শুধু দেখা শোনাই তো করবি ”
আরুহী ভ্রু কুঁচকে তাকালো মাহিরের দিকে,
” ওও তাই নাকি মামামশাই? তাহলে তুমিই নিয়ে নাও না দায়িত্ব টা! আমাকে বলছো কেন? ”
মাহির থতমত খেয়ে গেলো, আমতাআমতা করে বলল,
” আরে আমার অফিস আছে না! তোর তো এখন আর নেই, বিশাল ছুটি পেয়ছিস তাই দায়িত্ব টা বরং তুই ই নে না মা! ”
আরুহী কিছু একটা ভেবে মুচকি হেসে বলল,
” ঠিক আছে, সবাই যখন এতো করে বলছো তাহলে ডক্টর আরুশ খান কে বাসর ঘরে ঢুকানোর আগ পর্যন্ত সকল দায়িত্ব আমার! ”
বলেই একটা ভিলেন মার্কা হাসি দিয়ে সিড়ি বেয়ে দোতলায় নিজের রুমে চলে গেলো।
যা দেখে আয়াত হাসলো, সে হয়তো মেয়ের মনে কি চলছে তা কিছু টা হলেও আঁচ করতে পেরেছে।
আরাফ দাড়াতে দাঁড়াতে বলল,
” শোনো আরুশ, তুমি এখন ছোট নও যে তোমার উপর আমাদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেবো! তুমি যথেষ্ট এডাল্ট এবং নিজের ডিসিশন তুমি নিজেই নিতে পারো, সাথে তুমি একজন ডক্টর! যথেষ্ট ম্যাচিওর তুমি। তাই আমার একটাই কথা যা করবে ভেবে চিন্তে করবে, পরে যেনো আফসোস করতে না হয়, আর তোমার ডিসিশন কে আমরা মেনে নেবো। কাল তোমার কলিগ কে বাসায় নিয়ে এসো ”
বলেই আরাফ চলে গেলো উপরে, আরাফের পিছনে পিছনে মিরা উঠে যেতে যেতে আরুশের সামনে এসে দাড়িয়ে ছেলেকে একবার পরখ করে দেখলো, ছেলেটার মনে কি চলছে সে কিছু ই বুঝতে পারছে না তবে কিছু তো একটা চলছে ই।
এখানে মাহির ছিলো নিরব দর্শক, ভাতিজার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো, উঠে যেতে যেতে এক পলক তাকালো আরুশের দিকে, আরুশ ও তাকালো, দু’জনর চোখে চোখ পড়তেই হাসলো দুজন।
মাহির চলে যেতেই পিছনে পিছনে রাইসা ও চলে গেলো। আবরার আর আয়াত ও নিজের রুমে চলে গেলো। ড্রয়িং রুমে এখন শুধু মিরাজ, রৌদসী আর আরুশ।
মিরাজ চুপচাপ বসে ভাবছে হঠাৎ পাশে কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে পাশে তাকালো,
রাইসা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ধীরে ধীরে বলল,
” আরুশ ভাইয়ার কি হয়েছে বলো তো? এমন পাগলের প্রলাপ বকছে কেন? তার উপর আরু কেও খোঁচাচ্ছে, ও যেই মেয়ে এই বিয়ে না দিয়ে এ শান্ত হবে না, ভাইয়া তো চেনে ওকে তাহলে কেন এমন করছে ”
মিরাজ এক পলক আরুশের দিকে তাকালো, আপাতত সে এখন সোফার এক কোনে বসে মোবাইল ঘাটছে।
” সেটাই তো বুঝতে পারছি না, কি চলছে এই ছেলের মনে! ও কি আসলেই বিয়ে টা করবে? নাকি অন্য কোন ছক সাজাচ্ছে? ”
রৌদসী ঠোঁট উল্টালো,
” আমাদের এখন লক্ষীগোপাল হওয়া ছাড়া আর কিছু ই করার নেই, দেখো সামনে কি হয়! আমার মন বলছে সামনে বিশাল ধামাকা আসতে চলেছে! ”
মিরাজ নিজেও ভাবনায় পড়ে গিয়েছে, আসলে এই ছেলের মাথায় চলছে টা কি!
চলবে…
[ আজকের পর্ব টা কেমন হয়েছে জানাবেন প্লিজ ]