মায়াবিনী_(২) #Ayrah_Rahman #পর্ব_৩৭

0
749

#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_৩৭

____________

” May I come in, sir?”

” Yes, come ”

আরুহী ধীর পায়ে ভেতরে প্রবেশ করলো, একজন ইউনিফর্ম পরিহিত পুরুষ ঠিক তার সামনে বসে আছে, মাথায় আধা পাকা চুল থাকলেও চোখে মুখে দারুণ তারুন্য। বয়স টা ঠিক চল্লিশ পয়তাল্লিশ এর মাঝামাঝি।

আরুহী কে দেখে ঠোঁট এলিয়ে হাসলো,

” Aruhi Chowdhury! Special Force Officer! Am I right? ”

আরুহী চোখে মুখে গম্ভীরতা বজায় রেখে ধীর স্বরে বলল,

“Yes sir ”

” please sit down ”

আরুহী লোকটার সামনে রাখা চেয়ারে বসলো, টেবিলের উপর চোখ বুলাতে ই নেইম প্লেট চোখে পড়লো আরুহীর। ঠোঁট জোড়া নাড়িয়ে একবার পড়ে ফেলল নামটা, সোহাইব হাওলাদার।

” আরুহী চৌধুরী, তোমাকে ডেকে পাঠানোর আমার দু দুটো কারণ আছে ”

আরুহী চকিত নজরে তাকালো লোক টার দিকে, আরুহীর প্রশ্নাত্তক দৃষ্টি লক্ষ্য করে হাসলো লোকটা।

গলাটা পরিষ্কার করে এক পলক আরুহীর দিকে তাকালো, মেয়েটা বয়সের তুলনায় অতিরিক্ত গম্ভীর আর অভিজ্ঞ। এই বয়সে এতো সাফল্য সত্যি ই আশ্চর্য জনক।

” তোমার বিষয়ে সকল তথ্য আমার কাছে আছে আরুহী। এই অল্প বয়সে ই তুমি প্রায় শতাধিক কেস হ্যান্ডেল করেছো, বিভিন্ন রিস্কি মিশন ও কমপ্লিট করেছো, অনেক গুলো অপারেশনের লিড করেছো, এগুলো সত্যি ই প্রশংসা যোগ্য ”

বিরক্ত লাগলো আরুহীর। তার কাজ সে কমপ্লিট করেছে এতে এতো প্রশংসা করার কি আছে!

” স্পেশাল ফোর্স থেকে তোমাকে ট্রান্সফার করতে রাজি ছিলো না কিন্তু তারপর কোন একটা রিজনে তারা বাধ্য হয়েছে, রিজন যদিও আমি জানি না, জানলেও বলতে বাধ্য নই, তবে বিডিতে ট্রান্সফারের পর এখানকার রুলস অনুযায়ে তোমাকে ল্যাফটেনেন্ট থেকে ই স্টার্ট করতে হবে এবং ফিল্ডে থাকতে হবে ”

আরুহী মনোযোগ দিয়ে কথা গুলো শুনলো,

” ওকে স্যার ”

” বাট আরুহী আমি তোমাকে আরেকটা গুরু দায়িত্ব দিতে চাই ”

আরুহী প্রশ্নাত্তক দৃষ্টিতে পুনরায় লোকটার দিকে তাকালো,

” তোমাকে সিক্রেট ফোর্সের টিম লিডার হিসেবে দেখতে চাই, পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই একটা করে সিক্রেট ফোর্স রয়েছে তেমনি বিডিতেও আছে, তোমার অভিজ্ঞতা আর দক্ষতা, রেসপন্সিবিলিটি, বুদ্ধি মত্তা সত্যি ই প্রসংশার দাবিদার, তাই আমার বিশ্বাস তুমি আমাকে নিরাশ করবে না ”

” বাট স্যার…”

” নো এক্সকিউজ আরুহী, ইট’স মাই অর্ডার, বাট ইট’স সিক্রেট ”

আরুহী দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,

” Ok, sir. I will try my best ”

লোকটা আবারো হাসলো,

” Best wishes for you Aruhi ”

আরুহী উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল,

” Thank you, sir.”

লোকটা হাতে একটা প্যাকেট আরুহীর দিকে দিয়ে বলল,

” তোমার সম্বল, তোমার রেসপন্সিবিলিটি আরুহী ”

আরুহী প্যাকেট টা হাতে নিতে নিতে বলল,

” thank you sir ”

আরুহী ধীর পায়ে বেরিয়ে গেলো। বাইরে বের হতেই দেখলো সুলতান গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আরুহী দেখা মাত্র ই সুলতান হাসি হাসি মুখ করে সামনে এগিয়ে এলো,

” কি অবস্থা আরুহী? বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছে! ”

আরুহী প্যাকেটটা গাড়ির সিটের উপর ফেলে পিছনে উঠে বসলো,

সুলতান ও কিছু না বলে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি পিছনে টার্ন নিয়ে গেইট দিয়ে বেরিয়ে গেলো।

সুলতান লুকিং মিররে তাকিয়ে দেখে আরুহী পায়ের উপর পা তুলে ভাবুক ভঙ্গিতে বসে আছে, সুলতান ভ্রু কুঁচকালো। হেড অফিস থেকে বের হরার পর থেকে ই আরুহী কিছু একটা ভাবছে।

” আরুহী? ”

আরুহী যেন শুনতে পেলো না, তা দেখে সুলতান প্রশ্নাত্তক দৃষ্টিতে আরুহীর দিকে তাকিয়ে পুনরায় ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিলো।

” আরুহী শুনতে পাচ্ছো? ”

আরুহী চমকে লুকিং মিররে তাকালো,

” হ্যা সুলতান ভাই বলো”

” আরুহী তুমি কি কোন কিছু নিয়ে চিন্তিত? ”

আরুহী একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল,

” ঠিক চিন্তিত না তবে হেড অফিস থেকে একটা দায়িত্ব দিতে চেয়েছে ”

সুলতান ড্রাইভিং করতে করতে জিজ্ঞেস করল ,

” দায়িত্ব? ”

” হুম সিক্রেট ফোর্সের টিম লিডার ”

সুলতান চোখ বড়ো বড়ো করে বলল,

” সিক্রেট ফোর্স? ”

” হুমম ”

সুলতান আর কোন কথা বাড়ালো না, আরুহী ও চুলচাপ লুকিং মিররে এক পলক তাকিয়ে বাইরে তাকালো।

বেশ অনেক ক্ষন নিরবতা পালন করার পর আরুহী সুলতানের দিকে তাকিলো,

” বুঝলে সুলতান ভাই, ভাবছি এসব গুন্ডা গিরি ছেড়ে শিক্ষকতা করবো তাও আবার ইডেন মহিলা কলেজ এর দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ক্লাস টায়, কি বলো তুমি? ”

সুলতান চকিত নজরে মিররে আরুহীর দিকে তাকালো, শুকনো ঢুক গিললো সে, গলা টাও কেমন যেন শুকিয়ে আসছে। আরুহী কি তাহলে জেনে গেলো সব!

” জানো সুলতান ভাই, ওই ক্লাসে একটা মেয়ে আছে নাম লামিয়া মুনতাহা, দুই ভাই বোনের মধ্যে সে বড়ো, বাবা স্কুল মাস্টার আর মা গৃহিনী। ছোট ভাই টা ক্লাস ফাইভে পড়ে, মধ্যবিত্ত ফ্যামিলি, তবে আশ্চর্য জনক হলেও মেয়েটার একটা ভ্যাবলা প্রেমিক আছে ”

সুলতানের কাশি উঠে গেলো, শেষ মেষ মান সম্মানের আর কিছু ই বুঝি রইলো না। আরুহী বাঁকা হাসি দিয়ে সুলতানের দিকে পানির বোতল এগিয়ে দিলো। পানি পেয়ে সুলতান গাড়ি টা রাস্তার এক সাইডে পার্ক করে ঢকঢক করে পানি পান করলো।

” মেয়েটাকে আর কত আশা দেবে সুলতান ভাই, এবার তো বিয়ে টা করো, আমি বুঝিনা ভাবছো, আমার বিডিতে ট্রান্সফারে তোমার এতো হম্বিতম্বি কেন! আমার ট্রান্সফার কনফার্ম হলেই তোমার টা এমনিই কনফার্ম, আমি তো আগে থেকে ই সবটা জানতাম ”

আরুহীর কথা শুনে সুলতান চোখ বড়ো বড়ো করে লুকিং মিররে আরুহীর দিকে তাকালো। এই ভয়ংকর মেয়েটাকে সহজ ভাবে নেওয়া তার উচিত হয় নি। এ তো পাতাল থেকে ও কথা টেনে হিঁচড়ে বাইরে বের করে আনে। কোন কিছু ই যেন গোপন থাকে না এই মেয়ের কাছে অদৃশ্য চোখ দিয়ে সব দেখতে পায় যেন। সব দিকে খেয়াল আছে তার।

” হুমম করবো ”

বলেই পুনরায় গাড়ি স্টার্ট দিলো সে।

গাড়ি ঘুরিয়ে খান বাড়িতে চলে এলো আরুহী। শত হোক শ্বশুর বাড়ি তো।

গাড়ি থেকে নামতেই সুলতান পিছনে থেকে বলে উঠলো,

” রাতে কয়টায় আসবো আরুহী? ”

আরুহী ঘাড় বাঁকিয়ে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলল,

” দশটায় ”

সুলতান গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেলো।

আরুহী খান বাড়িতে ঢুকে এদিক ওদিক তাকালো কিন্তু কাউকেই নজরে এলো না এদিকে সদর দরজা খোলা, ব্যাপার কি?

আরুহী ড্রয়িং রুমে যেতেই শাহিদা খালা দৌড়ে আসলো আরুহীর দিকে,

” আরে আরে আরু আম্মা দি, কিরাম আছেন আপনে ”

আরুহী মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,

” এই তো খালা আছি ভালো, তুমি কেমন আছো খালা? আর বাড়ির সবাই কোথায়? ”

” হয় আমিও ভালা আছি। বড় ভাবি আর ছোডো ভাবি তো মার্কেটো গেছে, ভাইজান হেরা অফিসে আর মিরাজ বাবা গেছে কোন বন্ধুর বাড়িত আর আরুশ বাবা তো হসপিটালো ”

” ওহ আচ্ছা ঠিক আছে, আমি রুমে গেলাম, তুমি খাবার রেডি করো ”

” আইচ্ছা আম্মা ”

আরুহী সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে আরুশের রুমে ঢুকলো,

আরুহী চারপাশে এক পলক তাকিয়ে ভিলেন মার্কা হাসি দিয়ে পকেটে থেকে ফোন বের করে কারো নাম্বারে একটা লম্বা মেসেজ টাইপ করলো।

বিয়ে করার খুব শখ না বাছাধন! মজা বুঝাচ্ছি তোমার বিয়ে করার। মনে মনে কথা টা বলেই,

কাবার্ড থেকে আরুশের একটা টি শার্ট আর টাওজার নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকলো।

কিছু ক্ষন পরেই ক্রলিং বেল বাজতেই শাহিদা খালা দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে বাইরে তাকালো,

দরজার সামনে রুশা দাঁড়িয়ে আছে হাতে একটা ট্রলি ব্যাগ।

” আরে রুশা আম্মা তুমি! ”

রুশা কিছু বলতে নেবে পিছনে থেকে কেউ বলে উঠলো,

” খালা ওকে ভেতরে আসতে দাও, আমার জিনিস পত্র নিয়ে এসেছে ”

খালা পথ ছেড়ে দাড়াতেই রুশা একটা হাসি দিয়ে ভেতরে ঢুকলো,

আরুহী তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুল মুছতে মুছতে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে উঠতে বলল,

” ট্রলি টা নিয়ে আয় রুশো”

আরুহী আরুশের রুমে ঢুকলো পিছনে পিছনে রুশাও ঢুকলো, তার মাথায় যেন কিছু ই ঢুকছে না আসলে তার বোন চাচ্ছে টা কি!

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here