নব_প্রেমের_সূচনা #Sumaiya_Akter_Bristy #পর্ব_১৮

0
363

#নব_প্রেমের_সূচনা
#Sumaiya_Akter_Bristy
#পর্ব_১৮

নাহিদ চৌধুরী উঠে লোহার শিকের কাছে এলেন। লোহার শিক শক্ত করে ধরে বাহিরে দেখছেন এদিকটায় কেউ আসে কিনা। যাকে টাকা দিয়ে কিনতে পারবেন উনি। কিন্তু অনেকক্ষণ অপেক্ষার পরও যখন কেউ এলো না তখন হতাশ হয়ে বসে পড়লেন উনি। এতোক্ষণে হয়তো এই খবর সব জায়গায় ছড়িয়ে গেছে। এই সব কিছু মিথ্যা প্রমাণ করতে না পারলে আর হয়তো রাজনীতিতে ফিরতে পারবেন না উনি। এসব ভেবেই মূহুর্তের মাঝে উনার মুখমন্ডল শক্ত হয়ে এলো। যে এই কাজটা করেছে তাকে তো ছারবেন না উনি। এখান থেকে বের হওয়ার পর এই বিশ্বাসঘাতক কিভাবে শান্তিতে বেঁচে থাকে তা দেখে নিবেন।

অপরদিকে আরভী র‍্যাব হেডকোয়ার্টারে এসেছে নাহিদ চৌধুরীর ব্যাপারে জানতে। কি করে এতো প্রমাণ উনারা পেলেন তা জানা প্রয়োজন। হয়তো এই প্রমাণ গুলো আরভীকে সাহায্য করবে আরো কিছু প্রমাণ করতে।

আরভীকে দেখে র‍্যাবদের মাঝ থেকে একজন এগিয়ে এলেন। এসে আরভীকে জিজ্ঞেস করলেন, “জ্বি আমরা আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?”

“শুনেছি কাল রাতে আপনারা নাহিদ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছেন! সেই ব্যাপারেই আমি একটু জানতে চাচ্ছিলাম।”

” আসলে আমরা নিজেরাও বেশি কিছু জানি না। হুট করে অফিসার বললেন আর আমরা চলে গেলাম উনাকে হাতেনাতে ধরার জন্য। আগামীকাল এটা নিয়ে মিটিং হবে। নাহিদ চৌধুরীর মতো ক্ষমতাশালী একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বুঝতেই তো পারছেন।”

“অফিসার কোথায় আছেন এখন?”

“উনি তো এখন এখানে নেই তবে আপনি বসুন উনি একটু পরেই চলে আসবেন।”

আরভী লোকটির কথায় সম্মতি দিয়ে অফিসারের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।

নাহিদ চৌধুরী হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ওয়ালের উপর একের পর এক ঘুষি মেরে যাচ্ছেন। উনার হাতের চামড়া ছিলে রক্ত বের হওয়ার উপক্রম তবুও উনি থামছেন না। মূলত এভাবে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন উনি। নাহিদ চৌধুরী মানতে পারছেন না উনি কারাগারে বন্দি হয়ে আছেন।

নাহিদ চৌধুরীকে এমন করতে দেখে হিমেল দারুন ভয়ে আছে। রাগ ঝাড়তে এখন নিজেকে আঘাত করছে। একটু পরে যদি হিমেলকেও আঘাত করে? কেননা হিমেল নাহিদ চৌধুরীকে অনেক বছর ধরেই জানে। নাহিদ চৌধুরী রাগের মাথায় কখন কি করে বসেন তা হয়তো উনি নিজেও জানেন না। নাহিদ চৌধুরীকে এখন থামানো প্রয়োজন। এই ভেবেই হিমেল ভয়ে ভয়ে নাহিদ চৌধুরীকে ডেকে বললো,”ভাই! শান্ত হোন, এভাবে নিজেকে আঘাত করবেন না। আমরা এখান থেকে কিভাবে বের হবো সেটা একটু ভাবুন।”

নাহিদ চৌধুরী এবার থামলেন। হিমেলের দিকে তীর্যক চাহনি নিক্ষেপ করে অদ্ভুত ভাবে হেসে বললেন,”তোর কি মনে হয়? আমি এখানে চুপ করে বসে থাকবো? একটু পরেই দেখবি আমাকে বের করতে কেউ না কেউ ঠিক’ই আসবে। যাই হয়ে যাক না কেন, মিনহাজ আমাকে এখান থেকে বের করে নিবে।”

“কিন্তু মিনহাজ স্যার তো বাংলাদেশে নেই। তাহলে উনি কিভাবে আমাদের এখান থেকে বের করবেন?”

“মিনহাজকে তুই চিনিস না হিমেল। মিনহাজের শরীরে আমার রক্ত বইছে। কোনো না কোনো ভাবে আমাকে এখান থেকে বের করবেই ও। আর তারপর ওই বিশ্বাসঘাতককে খোঁজে জ্যান্ত কেঁটে কুকুর দিয়ে খাওয়াবো।” বলে হাসতে লাগলেন নাহিদ চৌধুরী। নাহিদ চৌধুরীর সাথে এবার হিমেলও যোগ হলো। এই দুজনের হাসি দেখে মনে হচ্ছে মানুষ খুন করার চাইতে মজার কাজ আর কিছু হতেই পারে না। মানুষ খুন করে যেনো এরা পৈচাশিক আনন্দ পায়।

বসে বসে সময় কাটছিলো না দেখে ফেসবুকের নিউজফিড স্ক্রোল করছিলো আরভী। হঠাৎ আরভীর কানে ভেসে আসে,”ওই তো অফিসার চলে এসেছেন।”

অফিসার এসেছেন এ কথা শুনে আরভী নিজের মোবাইল বন্ধ করে ভিতরে প্রবেশের দরজার দিকে তাকালে অবাক হয়ে যায়। আরভী এই ব্যাক্তিকে এখানে মোটেও আশা করে নি। তাও আবার অফিসার রুপে।
আরভীর মুখ থেকে অস্ফুটস্বরে আপনা-আপনি বেড়িয়ে আসে,”আপনি!”

——-

আরভীর সব কিছু এলোমেলো লাগছে। আরভীর মনে হচ্ছে আরভীর আড়ালে কিছু তো একটা হচ্ছে। যতো সমাধানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ততো নতুন কিছু বেড়িয়ে আসছে যা আরভীকে হতবিহ্বল করে তুলছে। এখন আবার নতুন করে সমুদ্রকে নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সমুদ্র নিজেকে যেমনটা দেখাতে চাচ্ছে আসলেই কি সমুদ্র তেমন! নাকি সমুদ্র নিজের ভিতরকার সত্ত্বাকে সবার থেকে লুকিয়ে রেখেছে?

একেই কাজের চাপ তারউপর এতো এতো প্রশ্ন মনের মধ্যে তৈরী হচ্ছে যে আরভীর মনে হচ্ছে এবার আরভীর মাথা ফেটে যাবে। বাবা এতো সব কিভাবে সামলাতেন?

আসল সত্ত্বাকে লুকিয়ে নতুন এক সত্ত্বাকে নিজের মাঝে ধারণ করে আছে আরভী। কিন্তু আরভী কি প্রকৃতপক্ষে নিজের আসল সত্ত্বাকে লুকাতে পেরেছে? আরভীর তা মনে হয় না। সবার থেকে লুকালেও নিজের কাছে ঠিকই ধরা পড়ে যাচ্ছে সেই আসল সত্ত্বাটি।
আরভীর নিজেকে বড্ড দূর্বল লাগছে। এই মূহুর্তে আরভীর ইচ্ছে করছে কারো কাঁধে মাথা রেখে নিজের সব ক্লান্তি দূর করে দিতে। এই রাজনীতি ছেড়ে বহু দূরে চলে যেতে। কিন্তু চাইলেই কি সব সম্ভব? আরভীর যে অনেক অনেক হিসেব-নিকেশ বাকি।

আরভী গাড়ির সিটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। না চাইতেই বারবার হেমন্তের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে, হেমন্তের ছবি চোখে ভেসে উঠছে। তবে সব কিছু জেনেও হেমন্তকে নিয়ে ভাবা যে একদমই অনুচিত। আরভী চোখ মেলে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।
ক্ষানিক সময় বাদে ঘাড় ঘুরিয়ে জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে দেখলো অসীম আকাশটাকে। কেমন রক্তিম বর্ণ ধারণ করে আছে যেনো আরভীর ভিতরকার রক্তক্ষরণ এই আকাশ বুঝতে পেরে নিজেদেরকে রক্তের রঙে রঞ্জিত করেছে। আর পাখিরা কত আনন্দে মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে। ইশ! যদি আরভী পাখি হতো তাহলে হয়তো পাখিদের মতো উড়ে বেড়িয়ে জীবনের সব আনন্দ উপভোগ করতে পারতো।

আরভী বাড়ি ফিরে ফ্রেশ না হয়েই ক্লান্ত দেহটা বিছানায় এলিয়ে দেয়। চোখ বুজে ভাবতে থাকে দুপুরের কথা –

আরভী দরজার দিকে তাকাতেই দেখতে পায় সমুদ্রের বন্ধু তন্ময় ভিতরে প্রবেশ করছে। তন্ময়কে দেখে আরভী ভীষণ ভাবে চমকায়। এইজন্যই বুঝি সমুদ্র একদিন বলেছিলো পুলিশের সাথে সমুদ্রের ভালো সম্পর্ক!

তন্ময়কে দেখে আরভী মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে আপনা-আপনি বেড়িয়ে আসে,”আপনি?”

তন্ময় আরভীকে দেখে আরভীর সামনে এসে দাঁড়ায়। চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে সামান্য হেসে জিজ্ঞেস করে,”আরে আরভী ম্যাডাম! আপনি এখানে?”

তন্ময়ের প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে আরভী পাল্টা প্রশ্ন করে,”সমুদ্রও কি আপনার মতো এই পেশার সাথে জড়িত নাকি উনি নিতান্তই একজন সাধারণ মানুষ?”

“আরে না না, সমুদ্র কেন যেনো এই পেশাটাকে পছন্দ করে না। ও খুব সাধারণ। তবে আমাদের থেকেও অসাধারণ।”

সমুদ্রকে নিয়ে তন্ময়কে গুনগান গাইতে দেখে আরভী আসল কথায় যেতে বললো,”সেসব রাখুন, যা জানতে এসেছিলাম। নাহিদ চৌধুরীর ব্যাপারে আমার কিছু জানার ছিলো।”

“সরি ম্যাডাম, উনার ব্যাপারে আমি আপনাকে এই মূহুর্তে কিছু জানাতে পারবো না। উপর মহল থেকে কড়াকড়ি ভাবে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে।”

আরভী বুঝে নিলো তন্ময়ের থেকে কোনো তথ্য বের করা যাবে না। তন্ময়ের জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো তথ্য বের করার জন্য আরভী একটু চেষ্টা করতো।

“আচ্ছা তাহলে আপনাকে আর জোর করবো না। তবে সম্ভব হলে জানাবেন।”

“জ্বি অবশ্যই।”

এসব ভাবতে ভাবতে একসময় আরভীর চোখ লেগে আসে। শরীর ক্লান্ত থাকায় সহজের আরভীর চোখে ঘুম ধরা দেয়। কিন্তু পুরোপুরি ঘুমিয়ে পড়ার আগেই বাহির থেকে গাড়ির হর্নের শব্দে আরভীর ঘুম কেটে যায়। নিভু নিভু চোখ মেলে শুয়ে থাকে এই শব্দ থামার অপেক্ষায়। কিন্তু শব্দ থামার কোনো নাম-গন্ধও নেই।
হঠাৎ করেই আরভীর মাথায় কেন যেনো সমুদ্রের নাম উদয় হলো। ছেলেটা প্রতিদিনই নানা ভাবে আরভীকে জ্বালাতন করে। অথচ আজ এখন পর্যন্ত সমুদ্রের দেখা মেলেনি। তাই হয়তো এখন এসেছে প্রতিদিনকার মতো আরভীর মাথা খারাপ করে দিতে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here