#নব_প্রেমের_সূচনা
#Sumaiya_Akter_Bristy
#পর্ব_২৬
আরভীর গাড়ি ছুটছে বান্দরবনের পথে। সেখানে পৌছাতে রাত হবে। কাল সকালেই হেমন্তের সাথে দেখা করবে বলে ভেবে রেখেছে আরভী
বান্দরবন আরভী একা যাচ্ছে না। সঙ্গে ফায়াজও আছে। কাল রাতেই পেনড্রাইভ ও ফাইলগুলোর এক কপি তন্ময়ের কাছে মেইল করে পাঠিয়ে দিয়েছে আরভী। আরেক কপি সাংবাদিক দের কাছে। কেননা সত্যিটা তো সবার জানা উচিত। আরশাদ রায়হানের মৃত্যুর রহস্যটাও সবার জানা উচিত।
নাহিদ চৌধুরী আবার পালিয়েছেন তা আজ সকালেই জানতে পারে আরভী। পুলিশ ও র্যাব গিয়েছিলো উনাকে আটক করতে। কিন্তু ওই বাড়িতে উনার পদচিহ্ন টুকুও কেউ পান নি।
——
সকালে পাখির কিচির মিচির শব্দে আরভীর ঘুম ভাঙ্গে। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে সকাল আটটা বেজে সতেরো মিনিট।
হেমন্ত যেই রিসোর্টে অবস্থান করছে আরভী নিজেও সেই একই রিসোর্টে উঠেছে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সামনাসামনি হবে দুজনে। এটা ভেবেই আরভীর হৃদপেশির সঞ্চালন বেড়ে যায়। কিন্তু এরকম হলে তো চলবে না। নিজেকে শান্ত রাখতে হবে।
আরভী বালিশের নিচ থেকে রিভলবার বের করে দেখে নেয় কয়টা বুলেট রয়েছে। তিনটে আছে। আচ্ছা এই তিনটে বুলেট দিয়ে হেমন্তের বুক ক্ষতবিক্ষত করবে নাকি আরো কিছু বুলেট সাথে করে নেওয়া উচিত? এতো সহজ মৃত্যু দেওয়া উচিত হবে? নাকি অন্য কিছু ভাবতে হবে?
আরভী বিছানায় বসেই ভাবতে শুরু করে কিভাবে আজ হেমন্তকে শেষ করবে।
এক কাজ করলে কেমন হয়? প্রথমে ভালোবাসার নাটক করার জন্য বুক বরাবর শুট করবে। আর তারপরে আরশাদ রায়হানকে খুন করার জন্য একটা গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে গাড়ি খাদে ফেলে দিবে। যেমন করে আরশাদ রায়হানের মৃত্যু দেখানো হয়েছে ঠিক তেমন মৃত্যু হেমন্তেরও হবে।
আরভী ফায়াজকে কল করে বললো,”যা যা বলেছিলাম তা দ্রুত শেষ কর।”
“আপু বলছিলাম কি হেমন্তকে পুলিশের হাতে তুলে দিলে হয় না?”
“না, আমি চাই নাহিদ চৌধুরী অনুভব করুক কাছের মানুষ হারালে ঠিক কেমন লাগে। শুনেছি উনার ভাগ্নে নাকি অনেক অতি আদরের। এবার না হয় ভাগ্নের মৃত্যু দেখে অনুভব করুক যাদের উনি খুন করেছেন তাদের পরিবার কতটা কষ্ট সহ্য করেছে প্রিয়জন হারিয়ে।”
“আচ্ছা আপু, হেমন্ত আমার থেকে একটু সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। আমি ব্যবস্থা করছি।”
—–
সমুদ্র এখনো ঘুম থেকে উঠে নি। এদিকে তন্ময় সমুদ্রকে একের পর এক কল করেই যাচ্ছে। কিন্তু সমুদ্রের উঠার কোনো নাম গন্ধও নেই। শেষে না পেরে তন্ময় নিলুকে কল দেয়।
নিলু নোমান আহমেদ ও ইয়াসমিনের সাথে বসে চা খাচ্ছিলো। হঠাৎ মোবাইল ভাইব্রেট হওয়ায় স্ক্রিনের দিকে তাকালে দেখতে পায় তন্ময়ের নাম ভাসছে।
নোমান আহমেদ ও ইয়াসমিনের থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে কল রিসিভড করে বললো,”আরে বাহ তন্ময় ভাই! আপনি হঠাৎ এতো সকাল সকাল কল করলেন যে? ভাইয়া জানলে কিন্তু হৃদয়পুর ফিরেই আপনাকে সাইজ করবে।”
“সমুদ্রের কাছে গিয়ে বলো তো কল রিসিভড করতে।” অপাশ থেকে তন্ময় দ্রুততার সাথে বললো।
“আপনি আমার সাথে কথা বলার জন্য কল করেন নি?”
“না, দেরি না করে দ্রুত সমুদ্রকে বলো আমার কল রিসিভড করতে।”
“পারবো না। কল দিতে থাকুন ভাইয়াকে। আমি যেতে পারবো না।” রাগ দেখিয়ে বললো নিলু।
“নিলু মাথা এমনিতেই গরম হয়ে আছে। অবাধ্য হয়ো না। দ্রুত সমুদ্রের কাছে গিয়ে বল আমাকে কল ব্যাক করতে। অনেক বেশি প্রয়োজন।”
নিলু প্রতিত্তোরে কিছু না বলেই ফট করে কল কেটে দেয়। শুনবে না তন্ময়ের কথা কি হবে? প্রয়োজনে অনেক বেশি অবাধ্যতা করবে।
এসব ভাবতে ভাবতেই নিলু হেটে সমুদ্রের রুমের সামনে চলে যায়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে দরজা তো লক করা। খুলবে কি করে?
দীর্ঘশ্বাস ফেলে সুইমিং পুলের দিকে পা বাড়ায়। সেখানে একটু আগে মিনহাজকে দেখেছিলো। হয়তো মিনহাজের কাছে এক্সট্রা চাবি আছে।
নিলু সুইমিং পুলের কাছে গিয়ে দেখলো মিনহাজ সুইমিং পুলের পানিতে পা ভিজিয়ে বসে আছে। সকালে এই শীতের মধ্যে ঠান্ডা পানিতে পা ভিজিয়ে বসা থাকাটা নিলুর কাছে অদ্ভুত লাগলো। অবাক হয়ে মিনহাজকে জিজ্ঞেস করলো,”তোমার শীত করে না মিনহাজ ভাইয়া?”
মিনহাজ নিলুর দিকে না তাকিয়েই প্রতিত্তোরে বললো,”কানাডার শীতের সামনে এই শীত কিছুই না। এদিকে আয়, পানিতে পা ভিজিয়ে বসে দেখ কত ভালো লাগে। একসময় মনে হবে পানিটা আরেকটু ঠান্ডা হলেই ভালো হতো।”
“না থাক, তুমিই পা ভিজিয়ে বসে থাকো। তোমরা তিনজন পারোও বটে। কি সব অদ্ভুত অদ্ভুত কাজ করে বসে থাকো। সে যাই হোক, যে কারনে এসেছি। তোমার কাছে রুমের চাবি আছে? সমুদ্র ভাইয়ার সাথে একটু দরকার ছিলো।”
মিনহাজ প্যান্টের পকেট থেকে চাবি বের করে দেয়। নিলু সেই চাবি নিয়ে আবার সমুদ্রের রুমের সামনে আসে। চাবি দিয়ে দরজা আনলোক করে ভিতরে গিয়ে দেখে সমুদ্র পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে।
নিলু প্রায় দু থেকে তিন মিনিট ডাকার পর সমুদ্রের ঘুম ভাঙ্গলো।
সমুদ্রকে চোখ খুলতে দেখে নিলু বিরক্তির স্বরে বললো,”তন্ময় ভাইয়া কল ব্যাক করতে বলেছে। ঘুমো এবার।”
কথাটি বলে নিলু আবার ফিরে যেতে লাগলো।
ঘুমের রেশ পুরোপুরি কাটে নি বলে নিলুর কথা বুঝতে কিছুটা সময় নেয় সমুদ্র। যখন কথাটি পুরোপুরি ভাবে মস্তিষ্কে প্রবেশ করে তখন সমুদ্রের চোখ বড়বড় হয়ে যায়। এক ঝটকায় উঠে বসে নিলুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে বলে উঠে,”এই তন্ময় তোকে কল করে কেন? দুজনের সাহস কি বেশি বেড়ে গেছে?”
সমুদ্রের কথা শুনে নিলু আর দাঁড়ালো না। এক দৌড়ে সমুদ্রের সামনে থেকে পালিয়ে যায়। এখানে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের বকুনি খাওয়ার ইচ্ছে আপাতত নিলুর নেই।
এদিকে সমুদ্র তন্ময়কে কল ব্যাক করেই বকতে শুরু করে,”এই তোরে না বলছি আমার বোনের থেকে দূরে থাকবি? বেস্ট ফ্রেন্ড হয়েছিস দেখে আমি সব দেখেও না দেখার ভান করবো যদি এমনটা ভেবে থাকিস তাহলে ভুল ভাবছিস। সময় থাকতে শুধরে যা তন্ময়। আমার বোনের দিকে নজর দিলে তোর হাত-পা ভেঙে দিবো আমি।”
“পরে ভাঙ্গিস। আগে আরভীর থেকে পালা। আরভী তোকে পেলে তোর হাত-পা ভেঙে দিবে।”
তন্ময়ের কথায় সমুদ্র অবাক হয়। আরভী কেন সমুদ্রের হাত-পা ভঙ্গতে যাবে? আর আরভীর তো হৃদয়পুর থাকার কথা। তাহলে আরভীর থেকে কেন পালাবে সমুদ্র?
“আরভীর থেকে পালাবো মানে? আমি তো আরভীর থেকে দূরেই আছি। আর আরভী কেন আমার হাত-পা ভাঙ্গবে?”
“কারন আরভী এখন বান্দরবন। তাও তোরা যেই রিসোর্টে আছিস ঠিক সেই রিসোর্টেই। সময় থাকতে মিনহাজকে নিয়ে অন্য কোথাও কেটে পড়। নয়লে আজ তোমাকে আরভীর হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না বাচ্চা। তারপর তুমি নিজে বেঁচে থাকলে আমার হাত-পা ভাঙ্গতে এসো কেমন?” বলে কল কেটে দেয় তন্ময়।
তন্ময়ের সব কথা শুনে সমুদ্র কিছুক্ষন মূর্তির ন্যায় বসে রইলো। তারপর পুরোরুমে ভালো ভাবে তাকিয়ে বুঝলো মিনহাজ রুমে নেই। আর তা দেখেই এক লাফে বেড থেকে নেমে দৌড় লাগালো সমুদ্র। মিনহাজ ও আরভী সামনা-সামনি হওয়ার আগেই মিনহাজকে এখান থেকে সরিয়ে অন্য কোথাও নিয়ে যেতে হবে।
সমুদ্র পুরো রিসোর্ট তন্নতন্ন করে খুজেও মিনহাজকে কোথাও পেলো না। সমুদ্রকে এভাবে দৌড়ঝাপ করতে দেখে ইয়াসমিন চিন্তিত স্বরে বললেন,”কি হয়েছে বাবু? এদিক থেকে সেদিক এভাবে দৌড়াচ্ছিস কেন?”
“মা, মিনহাজকে দেখেছো?”
“না দেখে নি তো।”
“মিনহাজ ভাইয়াকে তো সুইমিং পুলের ওখানে দেখেছিলাম। পানিতে পা ভিজিয়ে বসে ছিলো।” নিলু বললো।
সমুদ্র রিসোর্ট থেকে বেড়িয়ে চারপাশ দেখতে লাগলো। মিনহাজকে সুইমিংপুলের ওখানে আগেই খুজেছি সমুদ্র। কিন্তু মিনহাজ সেখানে ছিলো না। তাই এখন সমুদ্রের ভীষণ চিন্তা হচ্ছে। মিনহাজ ও আরভী আবার দুজন দুজনকে দেখে ফেলে নি তো? আর দেখে থাকলে আরভীর প্রতিক্রিয়া কি হবে? আরভীকে মিনহাজকে আবার নিজের জীবনে জায়গা দিবে?
তবে হঠাৎ করে আরভীর এখানে আসার কারনটা বুঝতে পারছে না সমুদ্র। আরভী কি কোনো কারনে এসেছে এখানে? নাকি আফিফা আফরোজকে নিয়ে ঘুরতে এসেছে? ঘুরতে এলেও একই জায়গায় একই রিসোর্টে কিভাবে সম্ভব? এটা কি সম্পূর্ণ কাকতালীয় ঘটনা নাকি এর পেছনে অন্য কোনো কারন আছে? এসব ভাবনার মাঝেই হঠাৎ সমুদ্রের চোখ গেলো রিসোর্টের গেইটে থাকা সিসি ক্যামেরার দিকে। সমুদ্র আর সময় ব্যায় না করে দৌড় লাগালো সিসি ক্যামেরা ফুটেজ চেক করার জন্য।
চলবে…..
বি.দ্র. : অসুস্থতার মাঝে লিখেছি। জানি না কি লেখেছি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ 🌼