মেঘের_আড়ালে_রোদ #পর্ব_২৫ লেখিকা #Sabihatul_Sabha

0
763

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_২৫
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

রাত গিয়ে সুন্দর একটা সকালের দেখা দিল।

আফরোজা বেগম কে ডক্টর দেখে গেছে, উনার শরীর অনেক খারাপ। আহনাফ সকাল থেকে দাদীর হাত ধরে বসে আছে।
আনোয়ার চৌধুরী সোফায় বসে বউ আর নাতি কে দেখছে। ছোট থেকেই আহনাফ দাদী ভক্ত ছিলো বেশি, আফরোজা বেগমের আশেপাশে আনোয়ার চৌধুরীকে একদম আসতে দিত না এই নিয়ে আনোয়ার চৌধুরীও বাচ্চাদের মতো ঝগড়া শুরু করতো। কি মিষ্টি ছিলো সেই দিন গুলো আজ আফরোজা বেগম মৃত্যুর সজ্জা।

খাবার টেবিলে মহুয়ার মুখে চলে যাওয়ার কথা শুনে সবার মন আরও খারাপ হয়ে গেল। এমনিতেই আফরোজা বেগমকে নিয়ে সবার মন খারাপ ছিলো। ছোঁয়া তো কিছু না বলে খাবার টেবিল ছেড়ে চলে গেল।

শ্রাবণ মহুয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’ কোথায় যাবেন.? গ্রামে.??
মহুয়া মিষ্টি হেঁসে বলে উঠলো, ‘ না ভাইয়া আমি নতুন বাসা নিয়েছি।’

আমেনা বেগমঃ কেন মা তোমার কি এখানে সমস্যা হচ্ছে.? কেউ কিছু বলেছে.? আমাকে বলো।
মহুয়াঃ না, না আন্টি কেউ কিছু বলেনি। মাঝে মাঝে আসব আন্টি এসে আপনাদের দেখে যাব।
হালিমা বেগমঃ একদম না তুমি কোথাও যাচ্ছ না, চুপচাপ নিজের রুমে যাও।
মহুয়াঃ প্লিজ আন্টি, আমি বাসা দেখে নিয়েছি আজ বিকেলে যেতে হবে।
নিরুপমাঃ ও যখন থাকতে চাচ্ছে না এতো জোরাজোরি করার কি আছে। ঠিক আছে মেয়ে যাও তুমি। মাঝে মাঝে এসো।
মহুয়াঃ ধন্যবাদ আন্টি।
আমেনা বেগম আর হালিমা বেগম কেও মহুয়া বুঝালো। কিছুতেই তারা রাজি হচ্ছে না একটা মেয়ে আলাদা একা বাসায় থাকা রিক্স।
শ্রাবণ শুধু চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে সবটা শুনে গেল।

সাজ্জাদ নিচে এসেই মেঘলা কে খুঁজল।
গুণগুণ করে বলে উঠলো ” তুমি কই.? তুমি নাই,আমি তোমাকে চাই!!”
কোথাও মেঘলাকে না দেখে মহুয়ার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
শ্রাবণ সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে রইলো। এই ছেলেটাকে ওর একদম পছন্দ না। ওর বউয়ের দিকে এভাবে ড্যাবড্যাব করে কোনো ছেলে কেন তাকিয়ে থাকবে.?? শুধু মাত্র নির্জনের বন্ধু বলে এখনো বাসায় রেখেছে।
সাজ্জাদ মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ সবাই কে বলা শেষ..? কই আমাকে তো বললে না। ‘
মহুয়া হেঁসে বলে উঠলো, ‘ আপনি বাসা খুঁজে দিলেন আর নতুন করে আপনাকে কি বলব ভাইয়া.?ধন্যবাদ বলা যায় ।’

শ্রাবণঃ তোমরা আগে থেকে পরিচিত.?? ‘
মহুয়া হেঁসে বলে উঠলো, ‘ হ্যাঁ একটু, কলেজ থেকে আশার সময় উনার আব্বুকে রাস্তায় বসে থাকতে দেখে এগিয়ে গিয়ে ছিলাম। হসপিটাল নিয়ে যাওয়া তারপর বাসায় পর্যন্ত আমি সাথে ছিলাম তখন ভাইয়ার সাথে পরিচয়। তারপর কথায় কথায় আমারও বাসা খুজার কথা উঠলো আর ভাইয়া বললো উনারাও বাসা ভাড়া দিবেন।

এতোক্ষন সবাই ওর কথা শুনে চিন্তা মুক্ত হলো যাক পরিচিত কারো বাসায় উঠেছে। কিন্তু শ্রাবণের বিষয়টা একদম ভালো লাগেনি। যদিও সাজ্জাদ মহুয়াকে বোনের মতো দেখছে আর মহুয়া ভাই বলছে।

আহনাফ হসপিটালে মহুয়ার অনেক অপেক্ষা করে। আজ কিছুতেই হসপিটালে মন বসাতে পারছে না কি যেন একটা নেই আশেপাশে, শূন্য শূন্য লাগছে বুকের ভেতর ।
আজ ভালো করে কোনো রোগী ও দেখতে পারছে না। ডক্টর সোনিয়া এসে দুইবার জিজ্ঞেস করে গেছে” ঠিক আছেন তো আপনি.? অসুস্থ.? ”

আহনাফের খুব করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে ” হ্যাঁ সে মনের দিন দিয়ে খুব বাজে ভাবে অসুস্থ হয়ে গেছে! এই রোগের মেডিসিন কোথায়..? ”

আহনাফ কয়েকজন রোগী দেখে হসপিটাল থেকে বের হয়ে গেল।

____________

মেঘলা বাসায় এসে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতেই একটা কাগজ আর গোলাপ সিঁড়ির উপরে দেখে হাতে নিলো। আজ গোলাপি শাড়ি, সাথে চুড়ি,ছোট একটা টিপ আর কাজল দিয়েছে।

কাগজটা ভ্রু কুঁচকে হাতে নিল সাথে লাল টকটকে গোলাপ।

মেঘলা আশেপাশে তাকিয়ে এটা আবার জায়গায় রাখতে গিয়ে কাগজের উপরে সুন্দর করে ” মেঘ” নামটা দেখে থেমে গেল। চোখ মুখ শক্ত করে আশেপাশে আবার তাকালো। কাগজটা মুচড়ে হাতের মাঝে নিয়ে গটগট করে নিজের রুমে চলে গেল।

শ্রাবণ মাত্র অফিস থেকে বাসায় এসেছে।
আজ অনেকটা তারাতাড়ি বাসায় চলে এসেছে। যেখানে রাত ১০ টায় বাসায় আসে অনেক সময়১২-১টাও বেজে যায় আসতে আজ অনেক তারাতাড়ি চলে এসেছে।
মেঘলা গোসল করে বের হয়ে সামনে তাকিয়ে চিৎকার দিতে গেলে শ্রাবণ তার আগেই দ্রুত গিয়ে ওর মুখ চেপে ধরে।

মেঘলা অস্বস্তিতে, লজ্জায়, ভয়ে শ্রাবণের হাতে কামর বসায়। শ্রাবণ তাও ছাড়ে না। মেঘলার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, ভেজা চুল থেকে টপটপ পানি এসে কপাল,গাল,ঠোঁট বেয়ে পড়ছে।
মেঘলা লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।
শ্রাবণ সেই লজ্জা মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কতোটা স্নিগ্ধ, সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। শ্রাবণের মনে প্রশ্ন জাগলো,’ আচ্ছা গোসলের পর কি মেয়েদের সৌন্দর্য দ্বিগুণ বেড়ে যায়.?? না হলে এই মেয়েকে এখন এতো আকর্ষণীয় লাগছে কেন.?

মেঘলা ধীর কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ ছাড়ুন ‘
শ্রাবণ নিজের অজান্তেই বলে বসে ” উহু কাছ থেকে আরেকটু দেখি”

মেঘলার বুক কেঁপে ওঠে, বুকের ভেতর মনে হচ্ছে কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে। কাঁপা কাঁপা ঠোঁট নেড়ে বলে উঠলো, ‘ কি..?’
শ্রাবণঃ আপনাকে..
মেঘলাঃ আমাকে…!!? আপনি ঠিক আছেন তো..?

হুট করে শ্রাবণ ধাক্কা দিয়ে মেঘলাকে দূরে সরিয়ে দেয়। অন্য দিকে ফিরে বলে উঠে,’ এভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে শাড়ি পড়ে নিন।’
মেঘলা বিছানা থেকে শাড়ি হাতে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে দৌড় দেয়।

মেঘলা যেতেই শ্রাবণ রেগে নিজের চুল টেনে ধরে বিছানায় বসে পড়ে। ওর মধ্যে এইসব কি হচ্ছে.? আজ কাল এইসব আজব ফিলিংস কোথায় থেকে আসছে!.? এই মেয়ের থেকে দূরে থাকতে হবে। পাশের টেবিলে গোলাপ দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে। গোলাপ হাতে নিয়ে দেখে এটার নিচে একটা চিরকুট। চিরকুট টা খুলতেই গুটিগুটি অক্ষরে ভেসে আছে কিছু লাইন

” আমার মেঘ! শুধুই আমার। সব মেঘই তো অন্ধকার হয়ে আসে , আপনি একটু ব্যতিক্রম হয়ে আসুন, আপনি আমার জীবনে আলো হয়ে আসুন। ”

_________

ছোঁয়া নিচে নামছে আর আহনাফ উপরে উঠছে।
ছোঁয়ার চোখ মুখ ফুলে আছে। প্রচুর কান্না করার জন্য এই অবস্থা। মহুয়াকে এই কয়দিনে বোনের আসন দিয়ে দিয়েছে কিন্তু মেয়েটাকে ওকে বুঝলো না!!।
আহনাফ ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ কি হয়েছে.? মুখের এই অবস্থা কেন.? কি হয়েছে.??
ছোঁয়া গাল ফুলিয়ে বলে উঠলো, ‘ কিছু না। ‘
আহনাফঃ সত্যি.??
ছোঁয়া এই প্রথম আহনাফের সাথে উঁচু গলায় কথা বললো। রেগে বলে উঠলো, ‘ তুমি কাল কি করেছ মহুয়ার সাথে.?? হসপিটাল থেকে আশার পর থেকে ও একদম পাল্টে গেছে। আমারই ভুল কেন যে মেয়েটাকে জোর করে তোমার সাথে কাজ করার জন্য রাজি করিয়ে ছিলাম!! তুমি একদম ভালো না ভাই..’

আহনাফ থমথমে মুখে ছোঁয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ ছোঁয়া ‘
ছোঁয়া ভয় পেলো। ভয়ে মাথা নিচু করে ফেললো।
পেছন থেকে নির্জন বলে উঠলো, ‘ ভাই ওর জামাই মরছে এই কষ্টে দুঃখে মাথার তার সব ছেড়ে গেছে। ‘
ছোঁয়া নির্জনের দিকে রেগে তাকিয়ে নিচে নেমে গেল৷
নির্জন গেল আহনাফের পিছু পিছু।

__________

বাসায় কেমন একটা নিশ্চুপ ভাব চলে আসলো।
মহুয়া চলে গেছে আনোয়ার চৌধুরী চেয়েও নিষেধ করতে পারেনি। ঠিকই বলেছে মহুয়া সে বিপদে পরে আশ্রয় চেয়ে ছিলো এখন নিজের একটা জায়গা তৈরি করতে হবে। সারাজীবন তো আর অন্যের বাড়িতে পরে থাকতে পারবে না। নিজের পায়ে দাঁড়ানো উচিত। আর এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে লড়াই করেই বাঁচতে হয়, কখনো জীবনের সাথে আবার কখনো মানুষের সাথে।

মেঘলা আজ একটা কাজে বেরিয়ে ছিল সেই সকালে। সন্ধ্যায় ক্রিমিনাল কে ধরে নিয়ে আসে৷ জিজ্ঞাসা বাদ করতে করতে বেজে গেল রাত দশটা। অবশ্য মহুয়া জানে ওর জন্য কেউ অপেক্ষা, টেনশন কোনোটাই করবে না। মহুয়া ওই বাড়িতে থাকলে যেই না থাকলে একই। সে তো এটাও জানে না মহুয়া চলে গেছে।

দশটায় অফিস থেকে বের হয়ে রাস্তায় উঠতেই কাউকে দেখে হাত দিয়ে মুখ আড়াল করার চেষ্টা করল কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয়। এতো টেষ্ট করেও লাভ হলো না ঠিক ওকে দেখে ফেললো৷

” মেঘ আপনি এখানে.?? ”

চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here