নব_প্রেমের_সূচনা #Sumaiya_Akter_Bristy #পর্ব_০৪

0
529

#নব_প্রেমের_সূচনা
#Sumaiya_Akter_Bristy
#পর্ব_০৪

সমুদ্র ড্রয়িংরুমে আয়েস করে বসে টিভি দেখছিলো। আর নিলু পাশে বসে ফেসবুকে স্ক্রল করছিলো। সে সময়ে নোমান আহমেদ সমুদ্রের মুখোমুখি বসলেন। টি-টেবিলে উপর কিছু বায়ো ডেটা রেখে বললেন,”এই বায়ো ডেটা গুলো দেখে বল কোন মেয়েটাকে তোর পছন্দ হয়।”

“মেয়ে পছন্দ করলে কি হবে?”

“কি হবে আবার! বিয়ে হবে।”

নোমান আহমেদের কথায় সমুদ্র সোজা হয়ে বসলো। বেশ সিরিয়াস হওয়ার ভাব নিয়ে নোমান আহমেদের দিকে তাকালো। অতঃপর সব বায়ো ডেটা গুলোতে একবার করে চোখ বুলিয়ে নিতে লাগলো।
নোমান আহমেদ ভাবলেন এবার হয়তো ছেলের সুবুদ্ধি হয়েছে। কিন্তু নোমান আহমেদের ভাবনায় এক বালতি পানি ঢেলে সমুদ্র বলে উঠলো,”এ বয়সে এসে এসব করা মানায় না বাবা। একে তো তুমি আমার মাকে রেখে আরেকটা বিয়ে করতে চাচ্ছো। তারউপর এখানে যতো মেয়ের বায়ো ডেটা রয়েছে সব তোমার হাটুর বয়সী। তোমার থেকে অন্তত এটা আশা করি নি আমি। লোকে শুনলে কি বলবে?”

সমুদ্রের কথা শুনে নিলু খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। আর নোমান আহমেদ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন। উনি ভাবতেও পারেন নি উনার বাদর ছেলে এ ধরনের একটা কথা বলে বসবে। নোমান আহমেদ নিজেকে স্বাভাবিক করে গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,”আমি আমার জন্য না তোর জন্য মেয়ে পছন্দ করতে বলেছি হতচ্ছাড়া।”

“ওহ আগে বলবে তো। তাহলে আমার আর এতো কষ্ট করে দেখতে হতো না।” বলে উঠে চলে গেলো সমুদ্র। আর নোমান আহমেদ সমুদ্রের যাওয়ার পথে তাকিয়ে উচ্চস্বরে বললেন,”এবার ছুটিতে যদি বিয়ে না করেছিস তবে আর কখনো বাড়ি ফিরবি না তুই।”

——

“ভাই, ইমতিয়াজ এসেছে। আপনার সাথে দেখা করতে চাইছে।” কথাটি হিমেল বললো। যাকে কিনা বর্তমানে নাহিদ চৌধুরীর ডান হাত বলা চলে।

“নিয়ে আয় ওকে।” সিগারেটে আগুন ধরিয়ে বললেন নাহিদ চৌধুরী।

নাহিদ চৌধুরীর অনুমতি পেয়ে হিমেল চলে গেলো ইমতিয়াজকে নিয়ে আসতে।
মিনিট দুয়েক পরে হিমেল ইমতিয়াজকে নিয়ে নাহিদ চৌধুরীর সামনে হাজির হলো। নাহিদ চৌধুরী ইমতিয়াজের দিকে না তাকিয়েই জিজ্ঞেস করলেন,”কি খবর ইমতিয়াজ? আজ হঠাৎ না ডাকতেই চলে এলে?”

“স্যার আরভী ম্যাম আমাকে কাজ থেকে বের করে দিয়েছেন।” ভয়ে ভয়ে বললো ইমতিয়াজ।

“তাহলে তো আর তুমি আমার কোনো কাজের রইলে না। তোমার সাথে ডিল ক্যান্সেল।”

“স্যার প্লিজ এমনটা করবেন না। আপনি আমাকে কাজে না রাখলে আমার সংসার চলবে কি করে? আপনার জন্য কাজ করতে গিয়েই তো আজ আমি আরভী ম্যামের কাজটা হারালাম।” নাহিদ চৌধুরীর সামনে হাটু গেড়ে হাত জোর করে বললো ইমতিয়াজ। তা দেখে যেনো নাহিদ চৌধুরী পৈচাশিক আনন্দ পেলেন। কেউ উনার সামনে মাথা নত করলে উনার খুব আনন্দ হয়। উনি তো এটাই চান। সবাই উনার সামনে মাথা নত করে চলুক।

নাহিদ চৌধুরী এবার আগের তুলনায় আয়েশ করে বসে বলে উঠলেন,”একটা কথা বলো তো। আরভী রায়হান তোমাকে বাচিঁয়ে রেখেছে কেন? আমি হলে তো সেই কখন জ্যান্ত পুতে রাখতাম। কারন আর যাই হোক, বিশ্বাসঘাতক দের বাচিঁয়ে রাখতে নেই।”

“মামা, ইমতিয়াজকে কাজে রেখে দাও।”

উক্ত কথাটি শুনে সবাই শব্দের উৎস খুঁজে দরজার দিকে তাকালো। দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটিকে দেখে নাহিদ চৌধুরীর চোখে-মুখে খুশির ঝলক দেখা দিলো। ছেলেটির কাছে গিয়ে কাধে হাত রেখে বললেন,”আরে ভাগ্নে।” আর হিমেলকে বললেন,”এই তুই গিয়ে আমার ভাগ্নের জন্য কোক নিয়ে আয়।”

হিমেলকে কথাটি বলতেই হিমেল চলে গেলো। নাহিদ চৌধুরী ছেলেটিকে নিয়ে চেয়ারে বসে বললেন,”আর কি খাবে বলো।”

“খাওয়া দাওয়া পরে হবে। আগে কাজ সেরে নাও। এই ইমতিয়াজকে বরং তুমি কাজে রেখে দেও।”

“ভাগ্নে ও যে আরভী রায়হানের মতো আমার সাথেও বিশ্বাসঘাতকতা করবে না তার কি গেরান্টি আছে?”

“পরেরটা পরে দেখা যাবে। আপাতত ও অনেক কাজে লাগবে মামা। কারন অনেকটা সময় ইমতিয়াজ আরভী রায়হানের সাথে কাজ করেছে। তাই আরভী রায়হান কখন কি করতে পারে ওর থেকে ভালো কেউ জানবে না। আরভীর বিভিন্ন ইনফরমেশন জানতে ইমতিয়াজ তোমার কাজে লাগবে।”

“তা ঠিক বলেছো ভাগ্নে। যাও শুধু মাত্র তোমার কথায় ইমতিয়াজকে আমি কাজে রেখে দিলাম।”

“ধন্যবাদ স্যার। আপনাদের দুজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ।” কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বললো ইমতিয়াজ। তারপর নাহিদ চৌধুরী ইমতিয়াজকে ইশারায় বেরিয়ে যেতে বললে ইমতিয়াজও বেরিয়ে গেলো।
এই মামা-ভাগ্নের কথার মাঝে হঠাৎ নাহিদ চৌধুরীর ফোনে কল এলো। নাহিদ চৌধুরী কল রিসিভড করে কথা বললেন। কথা বলা শেষ হলে নিজের ভাগ্নেকে বললেন,”ভাগ্নে তুমি বস আমি একটু আসছি। বাহিরে নাকি কিসের ঝামেলা বেধেছে, গিয়ে দেখে আসি একটু।”

ছেলেটি সম্মতি জানালে নাহিদ চৌধুরী প্রস্হান করলেন। আর নাহিদ চৌধুরী চলে যাওয়ার পর ছেলেটা কন্ঠস্বর খাদে নামিয়ে বাকা হেসে বললো,”তুমি ভুল গুটি চেলেছো আরু ডার্লিং। ইমতিয়াজকে পাঠানো একদমই উচিত হয় নি।” কথাটি বলে ছেলেটি হাহা করে উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো।

রাত দুটো বেজে সতেরো মিনিট। আরভী গভীর ঘুমে মগ্ন। চারপাশ পুরোপুরি অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। আলোতে আরভী ঘুমোতে পারে না। তাই রাতে নিজের ঘরে কোনো প্রকার আলো জ্বলায় না, আর না বাহির থেকে কোনো প্রকার আলো রুমে প্রবেশ করতে দেয়।

হঠাৎ গ্লাস ভাঙ্গার শব্দে আরভীর ঘুম অনেকটা হালকা হয়ে এলো। আরভী মনে করলো এটা হয়তো কোনো স্বপ্ন ছিলো অথবা ভ্রম। তাই ব্যাপারটা আরভী এড়িয়ে গেলো। মিনিট পাচেক পরে আবারও সেই একই গ্লাস ভাঙ্গার শব্দ। এবার এ শব্দে আরভীর ঘুম পুরোপুরি কেটে গেলো। আরভী দ্রুত শোয়া থেকে উঠে বসলো। আরভীর মনে হলো কিসের শব্দ এটা তা দেখা উচিত। কারন যেকোনো নাহিদ চৌধুরীর উপর ভরসা নেই। যখন তখন যা ইচ্ছে তাই করে বসতে পারে।

আরভী মাথার ধারে হাতরে মোবাইল খুজে দেখে নিলো ক’টা বাজে। গভীর রাত বুঝতে পেরে আরভীর সন্দেহ প্রবল হলো। আরভী ঘরের আলো জ্বালালো না। তাতে কেউ থেকে থাকলে সতর্ক হয়ে যেতে পারে। তাই আরভী নিজের মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে নিজের রিভলভার হাতে নিয়ে দেখে নিলো বুলেট রয়েছে কিনা। এরই মাঝে আবারো একই শব্দ হলো। তবে এবার শব্দ বেশ জোরে হয়েছে। বেলকনিতে যাওয়ার দরজার থাই গ্লাস ভেঙে গেছে। আরভী বুঝতে পারলো এতোক্ষন এই গ্লাসে আঘাতের শব্দই পেয়েছে আরভী।

আরভী রিভলভার হাতে নিয়ে সতর্কতার সহিত এগিয়ে গেলো বেলকনির দিকে। একপাশের গ্লাস কিছুটা সরিয়ে দেখে নিলো কেউ বেলকনিতে আছে কিনা। কাউকে না দেখতে পেয়ে আরভী আস্তেধীরে বেলকনিতে গেলো। গিয়ে দেখলো ছোট ছোট কিছু ইটের টুকরো পড়ে আছে। তারমানে এগুলো দিয়েই ঢিল ছোড়া হয়েছে।

বেলকনিতে গিয়ে বাহিরে ডানে-বামে তাকালো আরভী। না কেউ তো নেই। তবে এ শব্দ কিসের ছিলো? আর এতো শব্দ হয়েছে তবু সিকিউরিটি এদিকটায় আসে নি কেন?
আরভী ভাবলো নিচে গিয়ে দেখে আসবে। তবে উলটো ঘুরতেই আরভীর কানে এলো,”আরে ও ললনা।”

আরভীর কর্ণকুহরে এ বাক্যটি পৌছাতেই আরভী দাঁড়িয়ে গেলো। আবার ঘুরে নিচের দিকে তাকালো। দেখলো সমুদ্র দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর সমুদ্রের হাতে রয়েছে ছোট ছোট ইটের টুকরো। আরভী বুঝে গেলো এ কাজ সমুদ্রের ছাড়া আর কারো হতেই পারে না। এই মূহুর্তে আরভীর ইচ্ছে হচ্ছে হাতে থাকা রিভলবার দিয়ে সমুদ্রকে শুট করে দিতে। এই উন্মাদ ছেলের কর্মকাণ্ডের জন্য এতো রাতে আরভী কত কি ভেবেছে তা ভাবেই বিরক্ত লাগছে আরভীর। আরভীর চোখে-মুখে বিরক্তির ভাব স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। আরভী কোনোরকমে নিজেকে সামলিয়ে জিজ্ঞেস করলো,”এতো রাতে আমার বাড়িতে কেন এসেছেন আপনি?”

আরভীর প্রশ্নে সমুদ্র হেয়ালি করে বললো,”আমার প্রেমিক সত্ত্বা জেগে উঠেছিলো। তাই প্রেমিক হওয়ার ধর্ম পালন করতে এসেছি।”

আরভীর মনে হচ্ছে এখন নিজেই নিজের পায়ে কুড়াল মেরেছে। তা না হলে আরভীর বুঝা উচিত ছিলো এই উন্মাদ ছেলের থেকে ভালো কোনো উত্তর পাবে না আরভী। তাই এবার খানিকটা তেজের সহিত বললো,”মাঝরাতে কারো বেলকনির গ্লাস ভাঙ্গা কোনো ভদ্র লোকের কাজ নয় জানেন তো সেটা?”

“অভদ্র হয়েছি আমি তোমারই প্রেমে তাই।” সমুদ্র গানের সুরে গেয়ে উঠলো। এবার আরভী বেশ রেগে গেলো। সমুদ্রের আর কোনো কথায় খেয়াল না করে আরভী সিকিউরিটিকে কল দিলো। একবার, দুবার, তিনবার। কিন্তু সিকিউরিটি কল ধরলো না।
সমুদ্র অনুমান করে নিলো এই মূহুর্তে আরভী কাকে কল করতে পারে। তাই সমুদ্র চেচিয়ে বলতে লাগলো,”ও ম্যাডাম! সিকিউরিটিকে কল করে লাভ নেই। সিকিউরিটি নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে। কি সব লোক কাজে রাখেন। সব এক রকম। কোনো কাজেরই না।”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here