#নব_প্রেমের_সূচনা
#Sumaiya_Akter_Bristy
#পর্ব_১৭
সমুদ্র হঠাৎ এ গান কেন গেয়ে উঠলো? সমুদ্র কি কিছু বুঝাতে চাইছে? তা না হলে আরভীকে উদ্দেশ্য করে গান গাওয়ার হলে সমুদ্র অন্য ধরনের গান গাইতে পারতো। আর হুট করেই কেন সমুদ্রের গানের তাল উঠলো। নাকি আরভী একটু বেশিই ভাবছে সমুদ্রকে নিয়ে। ফায়াজ তো খোঁজ নিয়েছে, সমুদ্র গাজীপুরের মর্নিং স্টার গ্রুপ অব কম্পানিতে সাধারণ একটা জব করে। তারমানে সমুদ্র নিজেও হয়তো সাধারণ একটা মানুষ। হ্যাঁ তাই হবে। আরভী আজকাল সবাইকে একটু বেশিই সন্দেহ করছে।
সকালে আড়মোড় ভেঙে ঘুম থেকে উঠে বসলো সমুদ্র। ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে ডাইনিং টেবিলের চেয়ার টেনে বসতেই নোমান আহমেদ আড় চোখে তাকালেন সমুদ্রের দিকে। গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,”গাজীপুর ফিরবি কবে? এতো দিন ছুটি দেওয়ার তো কথা না তোকে। কাহিনি কি সত্যি করে বলতো।”
“জবটা আর করবো না বাবা।” সমুদ্রের সহজ স্বীকারোক্তি।
সমুদ্রের এ কথা শুনে সবাই সমুদ্রের দিকে অবাক চোখে তাকালেন। ইয়াসমিন সমুদ্রকে রুটি দিতে দিতে বললেন,”কেন বাবু? কোনো সমস্যা হয়েছে?”
“না মা, পরিবার ছেড়ে শুধু শুধু এতো দূরে পড়ে থাকার মানে হয় না। ভাবছি বাবাকে ব্যবসায় সাহায্য করবো। বয়স হয়েছে বাবার, আর কত কাজ করবেন?”
“বয়স হয়েছে তো কি হয়েছে? আমি এখনো তাগড়া আছি। তোর সাহায্যের প্রয়োজন নেই আমার। তুই নিজের কাজ নিয়েই থাক।”
“আরে বাবা, বুঝতে পারলে না? এসব কিছু তো অজুহাত। আসলে ভাইয়া আরভী রায়হান এর জন্য যেতে চাচ্ছে না।” সমুদ্রকে ভেংচি কেটে বললো নিলু।
আরভীকে নাম ধরে ডাকাটা সমুদ্রের পছন্দ হলো না। তাই চোখ-মুখ কুচকে বললো,”আরভী রায়হান কি হ্যাঁ? তোর বড় না উনি? ভাবী ডাকবি ভাবী।”
“আরভী রায়হানকে দেখে মনে হয় না উনার রুচি এতো খারাপ।” বলে উঠে গেলো নিলু। আর সমুদ্র উচ্চস্বরে নিলুকে ধমকে বলে উঠলো,”এই কি বললি তুই? আবার বল তো।”
——–
ফায়াজ ন’টার দিকে আরভীদের বাড়িতে এসেছে। আরভী এখনো ঘর থেকে বের হয় নি। তাই নিচে ড্রয়িং রুমে বসে অপেক্ষা করছে আরভীর জন্য।
আফিফা আফরোজ ফায়াজকে দেখে ফায়াজের সামনের সোফায় বসলেন। হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলেন,”আরে ফায়াজ! কেমন আছো? ব্রেকফাস্ট করেছো?
“হ্যাঁ আন্টি আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন? আর আমি ব্রেকফাস্ট করেই বাসা থেকে বের হয়েছি।”
“আমিও ভালো। আচ্ছা ফায়াজ একটা কথা বলো তো।”
“জ্বি আন্টি বলুন।”
“সমুদ্রকে চেনো?”
সমুদ্রের নাম শুনে ফায়াজ একটু নড়েচড়ে বসলো। আফিফা আফরোজ কেন সমুদ্রের ব্যাপারে জানতে চাইছে ফায়াজ তা বুঝতে পারলো না। তবুও মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,”জ্বি আন্টি মোটামুটি চিনি।”
“ছেলেটা কেমন বলো তো একটু। আমার তো ভালোই মনে হলো।”
“আন্টি আসলে ছেলেটা কেমন যেনো অদ্ভুত। এতো বড় ছেলে অথচ এখনো বাচ্চামো করে বেড়ায়। তবে আমার কাছে ছেলেটাকে কেমন যেনো রহস্যময় মনে হয়। আমার মনে হয় ছেলেটা নিজেকে যেমন ভাবে সবার সামনে প্রেজেন্ট করে ছেলেটা আসলে তেমন না। ছেলেটার ইনসাইড আর আউটসাইড দুটোই ভিন্ন।”
“আরভীর সাথে কাজ করে তুমিও আরভীর মতোই হয়ে যাচ্ছো। সবাইকেই তোমরা সন্দেহের চোখে দেখো। আমার তো এখন ভয় করছে, কবে যেনো আমাকেই সন্দেহ করে বস তোমরা।” মুখ গম্ভীর করে বললেন আফিফা আফরোজ। কারন উনি বুঝে গেছেন ফায়াজও সমুদ্রের ব্যাপারে ভালো কিছু বলবে না।
“আরে না আন্টি। কি যে বলছেন।” মাথা চুলকে অমতা অমতা করে বললো ফায়াজ।
আরভী নিচে নামলে আফিফা আফরোজ উঠে রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে বললেন,”টেবিলে খাবার দিচ্ছি খেতে আয় আর ফায়াজ তুমিও আসো। আমাদের সাথে আবার কিছুটা খেয়ে নাও।”
“পাঁচ মিনিট পর আসছি।” বলে ফায়াজের সামনে বসলো আরভী। ফায়াজকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে কিছু একটা হয়েছে। চোখে-মুখে অস্হিরতার ছাপ স্পষ্ট। তাই আরভী জিজ্ঞেস করলো,”কিছু হয়েছে ফায়াজ? তোমাকে এরকম অস্হির দেখাচ্ছে কেন?”
“আপু কাল রাতে নাহিদ চৌধুরীর বাড়িতে মেয়ে পাওয়া গেছে।”
“হোয়াট!” খানিকটা জোরেই বললো আরভী।
“হ্যাঁ আপু। উনি মাঝেমধ্যে সুন্দরী মেয়েদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করেন। তারপর টাকা দিয়ে তাদের পরিবারের মুখ বন্ধ করে দেন। আর যেসব মেয়েদের তুলে আনেন তারা গরিব ঘরের মেয়ে। টাকা পেয়ে তাদের পরিবার আর ঝামেলায় জড়াতে চায় না। উনার হাতে এতো পাওয়ার, উনার সাথে কেউ পেরে উঠবে না এটা ভেবে অনেক পরিবার থানা পুলিশের সাথে জড়ান না। দূঃস্বপ্ন ভেবে সব কিছু সবার থেকে আড়াল করে রাখেন।”
“কাল কিভাবে ধরা পড়লেন, জানো কিছু?”
“না আপু। হঠাৎ করে কাল রাতে র্যাব উনার বাড়িতে সার্চ করেন। তবে এখানের মোস্ট ইন্টারেস্টিং পার্ট কি জানেন? ”
“কি?”
“নাহিদ চৌধুরী নাকি সরকারের টাকা অর্ধেকের বেশি নিজের পকেটে ঢুকাতেন। এটার প্রমাণ নাকি র্যাবদের কাছে আছে। মানে সব দিক দিয়েই উনি ধরা পড়েছেন। পুলিশ, র্যাব সব উনার পিছনে পড়েছে।”
এ কথাটা শুনে আরভী অবাক হলো। আরভী নিজেও তো এটা প্রমাণ করতে চাইছিলো। কিন্ত প্রমাণ সংগ্রহ করার আগেই প্রমাণ র্যাবদের কাছে চলে গেলো! তবে কি আগে থেকেই নাহিদ চৌধুরীর এসব কালো দুনিয়া নিয়ে পুলিশ ও র্যাব ঘাটাঘাটি করছিলো? কিন্তু পুলিশ, র্যাব সন্দেহ ছাড়া এমন কিছু কেন করতে যাবে? নাহিদ চৌধুরী তো এতো কাঁচা খেলোয়ার না যে এতো সহজেই পুলিশ, র্যাব সব প্রমাণ পেয়ে যাবে।
“র্যাবদের হাতে প্রমাণ কি করে গেলো কিছু জানো?”
“না তাও জানতে পারি নি। আজ আমি নিজে গিয়ে খোঁজ নিবো”
“আচ্ছা তাহলে তো আমাদের কাজট অনেকটা সহজ হয়ে গেলো। স্কুলের প্রধান শিক্ষদের দেখা করতে বলেছিলে? বলে থাকলে না করে দাও।”
নাহিদ চৌধুরীর এ অবস্থা শুনে আরভী বেশ খুশি হয়েছে। কিন্তু আরভী ভেবে পাচ্ছে না পুলিশ বা র্যাব কেন নাহিদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রমাণ যোগাড় করছিলো। কেন নাহিদ চৌধুরীকে সন্দেহ করেছেন উনারা? কেউ কি অভিযোগ করেছেন নাকি নাহিদ চৌধুরীর কুকীর্তির কিছু জিনিস উনাদের চোখে পড়েছে! বিষয়টা একটু ঘেটে দেখতে হবে। সাথে জানতে হবে হেমন্ত এখন কোথায় আছে। শুধু নাহিদ চৌধুরী শাস্তি পাবে এটা কি করে হয়? মামা-ভাগ্নে দুজনকেই শাস্তি পেতে হবে।
নাহিদ চৌধুরী ও হিমেলকে হৃদয়পুরের কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। নাহিদ চৌধুরী রাগে থরথর করে কাঁপছেন। উনার চোখ দিয়ে যেনো অগ্নি বর্ষন হচ্ছে। রোষ ভরা পূর্ণ দৃষ্টিতে হিমেলের দিকে তাকিয়ে ক্ষিপ্ত স্বরে শুধালেন,”বাড়িতে পুলিশ ঢুকলো কিভাবে? তোরা কি করছিলি সে সময়ে?”
“ভাই আমরা র্যাবদের হ্যান্ডেল করছিলাম গেইটে দাঁড়িয়ে। সেই সুযোগে পুলিশ মনে হয় পিছনের ওয়াল টপকে বাড়িতে ঢুকে পড়ে।”
“অকর্মার ঢেঁকি সব। আমার এতোদিনের সাজানো সম্রাজ্য এক নিমিষে শেষ হয়ে গেছে। যে নাম আমি অর্জন করেছিলাম তা আর কখনো ফিরে পাবো? আর র্যব, পুলিশের কাছে এতো খবর গেলো কিভাবে?”
“ভাই আমিও বুঝতে পারছি না কিছু। মেয়েদের কথা রাখেন, আপনি যে সরকারের টাকা হাতিয়ে নিতেন তার প্রমাণ কি করে জোগাড় করলো? নগর ভবনে যা রয়েছে সব তো নকল ফাইল। আসল গুলো তো আমরা আগুনে পুড়িয়ে ফেলেছি।”
“এটা তো আমারও প্রশ্ন। আরভী রায়হান ছাড়া আমাকে এক্সপোজ করার কেউ নেই। কিন্তু আরভী রায়হান কখনো এই প্রমাণ গুলো হাতেই পায় নি। তাহলে পুলিশের হাতে গেলো কিভাবে?”
“ভাই হয়তো আমাদের মাঝে থেকে কেউ একজন আরভী রায়হানকে সাহায্য করছে।”
“এই বিশ্বাসঘাতককে একবার হাতের কাছে পাই। একে তো আমি সব থেকে ভয়ংকর মৃত্যু দিবো।”
“ভাই ইমতিয়াজ করে নি তো?”
“না। যেসব প্রমান পুলিশ ও র্যাবের হাতে পড়েছে সেসব আমি বছর খানেক আগে পুড়িয়ে ফেলেছি। তারমানে তখনই কেউ একজন ডুপ্লিকেট কপি করে রেখেছিলো ফাইলগুলোর।”
চলবে….