চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা #ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া #পর্ব-২৯

0
545

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-২৯
৯২.
বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে ঠোঁট ফুলিয়ে বসে আছে মিলন।পড়া দেখলেই তার মাথা ঘুরায়।ঘুম পায়।হাম ছাড়তে ছাড়তে পাশে তাকাতে দেখে আপু তার দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে।পুতুল কাঠের স্কেল দিয়ে টেবিলে জোরে বারি মারে।যার মানে নো বাহানা।আগে পড়া শেষ কর।পড়া শেষ না হলে ছাড়ব না।

আপু আমার পড়তে ভালো লাগে না।পড়া দেখলেই ঘুম পায়।চোখে সর্রষে ফুল দেখি।এখন তুমি বলল,আমি কি করব?

চলো না আপু কিছু খেলতে যাই।খেলা শেষ হলেই আবার পড়তে বসব।

মিলনের কথায় পাত্তা দিলো না।চোখ দিয়ে ইশারা করে বলল,পড়।মিলন মন খারাপ করে চুপচাপ পড়ায় মনযোগ দেওয়ার চেষ্টা করে।এরমধ্যেই রেনু,পুতুলকে ডাকতেই সে মামীর কাছে চলে যায়।বোনকে বের হতে দেখেই মিলন ঠাস করে বই বন্ধ করে দিলো।
পুরনো কাঠের চেয়ারটায় আরামসে বসে গাইতে লাগল।

ভাল্লাগে না পড়াশোনা,
ভাল্লাগে না রে..!
কি যে করি
মন থাকে শুধু বাহিরে।
ওহ পড়া তুই চইলা যা।
আর ফিরে আসিস না।
তোকে দেখলেই গায়ে ওঠে একশ চার জ্বর।
মাথাটা হয় আমার আউলাঝাউলা।
আমি হই পাবনার পাগল।

মামীর কথা শুনে পুতুল রুমে প্রবেশ করতে নিলেই বেশুরে গলায় গান শুনতে পায়।জোরে কাশি দিতেই মিলনের হাওয়া ফুঁস।চুপচাপ ভদ্রবাচ্চার মতো পড়তে লাগল।আড়চোখে একবার তাকিয়ে দেখলো।বোন দড়জা সামনে দুই হাত ভাজ করে এখনো দাঁড়িয়ে আছে।

স্বাধীন ছাগল আর গরুর জন্য ঘাস কেটে নিয়ে বাসায় ফিরেছে।দু’টো গরু কিনেছে আজ এক সপ্তাহ হবে।ঘামে তার শরীর ভিজে আছে।গোসল করতে হবে।পুতুল,মামার আসার খবর পেতেই এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দিলো।মামা বসে পানি খেয়ে একটু জিরিয়ে নিতেই,মামী ঘর থেকে গামছা আর লুঙ্গি এনে দিতেই মামা গোসলের জন্য পুকুর পাড়ে গেলো।পুকুরের দু’টো ডুব দিলেই মনটা একদম চাঙ্গা হয়ে যাবে।আজ দিহান ভাইয়ের কথাগুলো পুতুলের সামনে তুলবেন।দেখা যাক কি হয়?

৯৩.
জার্মানে বসে নাইট ক্লাবের ক্যাসিনো খেলছে জেভিন রর্য়াড।পাশে তার বান্ধবীরা একটু পর পর উৎসাহিত করছে।কিন্তু জেভিনের মন খেলাতে নেই।সে স্বামী এবং ছেলের বিষয়ে চিন্তি।স্বামী তার বাংলাদেশে গেছে।কোথাকার কোন গাইয়া মেয়ে কে ছেলের জন্য বউ করে আনবেন।আমি থাকতে ইম্পসিবল।ওই গাইয়া চাষার মেয়েকে ছেলের বউ কখনোই করতে দিবো না।আমি আমার পচ্ছন্দের মেয়ের সাথে বিয়ে দিব।

দুপুরে সবাই একসাথে খেতে বসেছে।রেনু মসুরের ডাল,মুলা শাক ভাজি,পেঁপে,আলু দিয়ে তরকারি রান্না করেছে।স্বাধীন খাবার মুখে দিয়ে খেতে খেতে বলল কালকের বিস্তারিত কথাগুলো।মামার মুখ থেকে কথাগুলো শুনে পুতুলের হাত থেকে ভাতগুলো পড়ে যায়।পরবর্তী আবার ভাতের লোকমা মুখে তুলতে লাগলো।মেয়ের এমন চুপচাপ থাকাটা সবাই লক্ষ্য করছে।পুতুল খাবারটা শেষ করে হাত ধুয়ে নিলো।ইশারায় বলল,আসছি।

পুতুল নিজের রুমে গিয়ে কয়েক মিনিট পর ফিরে এসে চিরকুট দিল।স্বাধীনের ততখনে খাওয়া শেষ।পানি দিয়ে হাত ধুয়ে গামছায় হাতটা মুছে নিলো।পুতুলের হাত থেকে চিরকুট খুলে পড়তে লাগল।

মায়ের পরই তোমরা আমার আপনজন।এত বছর ধরে তোমাদের কাছে রয়েছি।কখনো কোনোদিন কষ্ট পেতে দেও নিই।নিজেরা না খেয়ে ওহ আমাদের মুখে খাবার তুলে দিয়েছো।সাজু,মিলন,রিফাত ওরা ছোট্ট ছিল তাই বুঝতে পারেনি।কিন্তু আমিও ছোট ছিলাম।তবে অতটা ওহ ছোট বা অবুজ ছিলাম না।তখন কিন্তু সব বুঝতে পারতাম।আর তোমার এখন অবধি যত কিছু করেছো।তা আমাদের জন্য কল্যাণময় হয়েছে।তখন সবটা বুঝে শুনে ঠিক ভুল বিচার করে এগিয়েছো।তাই সামনে যা করবে।আমাদের ভালোর জন্যই করবে।আমার তোমাদের ওপর পুরোপুরি বিশ্বাস আছে।

পুতুলের কথায় যেন স্বাধীন শান্তি পেলো।তার প্রতি মেয়ের অগাধ বিশ্বাসটাই তার মনোবল আর দ্বিগুণ করলো।

আম্মা আপনি নিশ্চিত থাকেন।আপনার ছেলে আপনাকে নিরাশ করবে না।আপনি এই বিয়েতে মত দিলেই আগাবো।আর যদি না ব’লেন।তাহলেই কোনো কথা আগাবো না।আপনি একদিন সময় নিন।সময় নিয়ে ভেবে জানান।তাড়াহুড়ো কোনো কারণ নেই।স্বাধীনের মুখে হাসি দেখে পুতুলের কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেলো।এতটা খুশি কখনোই দেখেনি।আজ প্রথম এতটা প্রাণবন্তত হাসি দেখছে।এই হাসি এভাবেই থাকুক।

বোনের বিয়ের কথা শুনে সাজু,মিলন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।তাদের ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলছে।তাদের আপুর বিয়ে হবে।ওহ কি মজা হবে?এই খুশিতে রিফাত সামিল হতে পারবে।বেচারা আপু ভক্ত।সে এখন মাদরাসায় থাকে।বাবা তাঁকে মাসে একবার বাসায় আনে।বাড়িতে থেকে দিন দিন পাঁজি হচ্ছিল।তাই তাঁকে দূরে রাখা।তাকে ছাড়া কষ্ট হয়।তবুও স্বাধীন নিজের মনকে বুঝ দেয়।ছেলে একদিন হাফেজ হয়ে আসবে।তাদের মুখ আলোকিত করবে।

৯৪.
পুতুল এডমিশন নিতে কলেজে আসে।তার সাবজেক্ট সাইন্স ছিল।কিন্তু এখন নতুন কলেজে এসে বিপদে পড়েছে।নতুন শিক্ষকরা তাঁকে উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে চিনেন।খবর কাগজে তার ছবি বের হয়েছিল।ছোট্ট গ্রামের মেয়ে পুতুল।ক্লাস এইট জিপিএ -ফাইভ ছিল।দশম শ্রেনীতে গোল্ডেন এ প্লাস আসছে।এর আগেই ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পরীক্ষা দিয়ে উপজেলা প্রথম স্থান দখল করেছিল।সবাই তার পড়াশোনা জন্য বেশ প্রশংসা করে।কিন্তু সে কথা বলতে না পারায় নতুন শিক্ষকরা থাকে একটু অবহেলা করে।তারপর অনেক কষ্টে ফরর্ম পেয়ে কাগজ জমা দিয়েছে।ভর্তি সময় বলছে।সে সাইন্স নিয়ে পড়তে পারবে না।সে ডাক্তার হয়ে কি রোগী সেবা করবে।সে তোও নিজেই রোগী।এই কথাটায় পুতুল খুব কষ্ট পায়।তবুও আজ গ্রাম থেকে ঢাকায় আসছে।তার স্বপ্নটা যে এখনো পূরণ করা বাকি।কলেজ প্রাঙ্গণে বসে চোখের পানি ফেলছে।সে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে আছে।হাত থেকে ভর্তির কাগজটা উড়ে গেলো।পুতুল সেটা তুলার আগেই কারো পায়ে নিচে পরে গেলো।নিজের ভর্তির কাগজটা কারো পায়ের নিজে পৃষ্ঠ হতে দেখে শব্দ করে কেঁদে ওঠে।দৌড়ে আসে।অচেনা কারো পায়ের নিজ থেকে কাগজটা নেওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে।অচেনা মেয়ের কান্না শব্দ শুনে অর্পণ কপাল কুঁচকে নিচু মাথাটা তুলতেই অদ্ভুত সু্ন্দরর্যৌ দেখে কপালের ভাজ মিলিয়ে যায়।ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে।কিন্তু পুতুল সামনের ব্যাক্তিটিকে দেখতে মোটে ওহ আগ্রহী নয়।সে নিজের ভর্তির কাগজের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে।যা অর্পণের পায়ের নিচে পৃষ্ঠ হয়েছে।

স্বাধীন মেয়ে কে কলেজের ভেতরে পাঠিয়ে দিয়েছেন।মেইন গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।স্বাধীন ইচ্ছে করলেই পারতো মেয়েকে নিয়ে ভর্তি করিয়ে আসতে।কিন্তু সে যায় নিই।মেয়ে বড় হচ্ছে।তাকে নিজের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে।সে না থাকলে যেন সামলাতে পারে সেইজন্য ইচ্ছে করেই যান নিই।কিন্তু এতখন হয়ে গেলো মেয়েটা বের হচ্ছে না কেনো?স্বাধীন এগিয়ে যাবেন কি না ভাবছেন?

এইদিকে পুতুলের কান্না বন্ধ হয় না।তার ভয় হচ্ছে।এত কষ্ট করে এতদূর এসে সবটা শেষ হয়ে যাওয়া।মানতে পারছে না।কাঁদতে কাঁদতে মুখ লাল করে ফেলছে।অর্পণ তাকে যত বোঝাচ্ছে ততই ফুফিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।
অর্পণের কথা পুতুল কানেই তুলছে না।কাঁদামাখা কাগজটা নিয়ে পিন্সিপালের অফিসার রুমের দিকে যেতে লাগল।পুতুল তার ময়লা কাগজটা নেওয়ার জন্য পিছনে দৌড়ে আসতে লাগে।কিন্তু লোকটা হঠাৎ অফিস রুমে ঢুকে পড়ায়।পুতুল আর এগিয়ে যেতে পারলো না।দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে।অপরদিকে অর্পণ নিজের কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে পুতুলের দিকে তাকাচ্ছে।তারপর কাজ শেষ হতেই পুতুলের হাতে ভর্তি কর্নফাম কাগজটা তুলে দেয়।পুতুল চোখ বড় বড় করে নতুন ফর্রমে তার সকল ডিটেইলসসহ ভর্তি কাগজ পেয়ে খুশি হয়।নিচে পিন্সিপাল স্যারের সাইন।আরেকজনের সাইন দেখতে পায়।যেখানে লিখা এমপি অর্পণ তালুকদার।

এখন এই কাগজগুলো আর ভর্তি টাকা জমা দিয়ে আসো।আর সাথে রোল নাম্বার জেনে সোজা বাসায় যাও।

পুতুল চলে যেতে নিলে অর্পণ ডেকে ওঠে।

ওই লিলিপুট।এভাবে ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদবে না।দেখতে বাজে দেখায়।মনে হয় আমাদের বাগান বাড়ির পেছনের বড় তাল গাছটায় থাকা পেতনীটা কাঁদছে।

অদ্ভুত নামে পুতুল হতবাক হয়ে যায়।শেষ কথায় চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রয়।অর্পণ নিজের কাজ শেষ করে বাইক নিয়ে চলে যায়।

সবকিছু ভালোভাবে মিটিয়ে রোল জেনে মামার সাথে গ্রামে ফিরে যায়।

চলবে…

আমি ধামাকা বলতে বুঝিয়েছি।আগামী পর্ব মানে অর্ন্তিম পর্ব আসতে চলেছে।আর সবাই অন্যটা বুঝে নিলো।গল্পটা সিজন -২ আসবে।কিন্তু এটার সিজন -১ শেষ করে লম্বা বিরতিতে যাব।এত অসুস্থতা আর ভালো লাগছে না।আর এত গ্যাপ দিয়ে গল্প দিতে নিজের কাছেই খারাপ লাগে।আপনাদের অপেক্ষা করাতে আমার একটু ইচ্ছে করে না। আমি গ্রামে থাকি।যেখানে প্রচন্ড ঠান্ডা।এত বছর ঢাকায় ছিলাম।ঠান্ডা খবরই বলতে পারতাম না।কিন্তু গ্রাম থাকতে গিয়ে ঠান্ডায় আমার অবস্থা খারাপ।দুই দিন কথা বলতেই পারেনি।মনে হচ্ছিল জানটা বের হয়ে যাবে।আর এতটা গ্যাপ দেওয়া ব’লে দিলেন।লেখিকা মারা গেছে।সে যেন কবর থেকে সাড়া দেয়।কমেন্টটা দেখে খারাপ লাগছে।তাই সিদ্ধান্ত নিলাম সুস্থ হলেই ফিরব বাকি পর্ব নিয়ে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here