#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-২
৩.
মাগরিবের আজান কানে ভেসে আসছে।রেণু হারিকেন আলো জ্বালিয়ে স্বামী দিকে তাকিয়ে আছে।বোনের মুখের ওপর ঠাসস করে দরজা বন্ধ করে নিজেও কেঁদে দেন।যতই হোক ভাই হয়।বোনের জন্য মনটা কাঁদে।
-;বোনকে বের করে নিজেই কষ্ট পাচ্ছেন।একবার ভেবে দেখছেন এই অবস্থায় মেয়েটা কোথায় যাবে?নিজে না খেয়ে বসে আছেন।আর ওর এই অবস্থায় ভরা সন্ধ্যায় বাহিরে রয়েছে।সারাদিন ধরে মনে হয় পেটে দানা,পানি কিছুই পড়েনি।আপনি রাগ না করে ওকে ঘরে আনুন।আমিও একজন মা।মা হয়ে আরেকটা সন্তানকে কষ্ট পেতে দেখে নিজেরই খারাপ লাগছে।আপনি বোনের প্রতি রাগ।কিন্তু তার সন্তানের ওপরে কোনো রাগ নেই।আপনি ওদের.….।
-;রেনু আমার মাথা একদম গরম করব না কইয়া দিলাম?মাথা গরম করলে কিন্তু খুব মাইর দিমু।
স্বামীর কথায় রেণু মুচকি হাসে।এই লোকটা নাকি তাঁকে ধরে মারবে।বি’য়ের তিন বছরের সংসারে একটা উচ্চস্বরে ধমক দিয়ে কথা ব’লেনি।আবার সেখানে নাকি মারবে।স্বামীর কথাটা রেনু কাছে হাস্যকর লাগে।তবুও স্বামী যখন বুঝতে পারলোনা।তখন নিজেই দরজা খুলে বাহিরে বেরিয়ে যায়।স্বাধীন দেখে ওহ কিছু ব’লেনি।
রাতের আঁধারে কোথায় যাবে রাজিয়া?মেয়ে আর নিজের অনাগত সন্তানের কথা চিন্তা করেই ভাইয়ের ভিটায় এখনো বসে আছে।এই বুঝি ভাই বেরিয়ে আসবে।তাকে ঘরে একটু জায়গায় দিবে।কিন্তু সন্ধ্যার আজান পরে যাওয়ার পরও ভাই আসেনা।চোখের পানি ঝড়ে পড়ে।রাতটুকু উঠোনে কাটানোর সিদ্ধান্ত নিলেই।দূর থেকে শিয়ালের হুক্কা হুয়া শব্দ ভেসে আসে কানে।ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে।পুতুল মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে বসে আছে।রাজিয়া মেয়েকে বুকের মাঝে শক্ত করে ধরে বসে থাকে।আল্লাহ কে ডাকতে থাকে।আগামী বিপদে হাত থেকে রেয়াই পেতে।এমনই সময় দরজা খুট করে খুলে যায়।ভাবে এই বুঝি ভাই এসেছে।চেহারায় খুশির ঝলক আসে।কিন্তু ভাইয়ের জায়গায় ভাবীকে দেখে মুখটা অন্ধকারে ডেকে যায়।তাকে নিতে ভাই আসেনি।
-;এভাবে না খেয়ে বসে থাকলে হবে বোন।চলো ঘরে চলো।ভাইয়ের রাগ নিয়ে পরে থাকলে হবে।আগে দু মুঠো খাবার মুখে দিয়ে একটু বিশ্রাম নেও।
-;কিন্তু ভাবী,ভাইয়া।
-;উনার কথা এখন না ভেবে নিজের আর সন্তানদের কথা ভাবো।না খেয়ে কতখন থাকবে তুমি।পুতুলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল।সেই কখন থেকে তুমি ও না খাওয়া আম্মু।ভিতরে এসো আম্মু।রেনু,রাজিয়া আর পুতুলকে নিয়ে ঘরে ঢুকে।তাদের নিয়ে ঘরে ঢুকেই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে খাবার খাইয়ে বিছানায় ঘুমাতে ব’লে চলে যায়।
রেণু নিজেদের শোয়ার করে আসতেই স্বাধীন মুখ ঘুরিয়ে বলল,
-;সেই তুমি আমার কথার অবাধ্য হইলা বউ।
-;তাহলে কি করতাম?আপনার মতো হাত গুটিয়ে বসে থাকতাম।আমি না হয়,হাত গুটিয়ে বসে থাকতাম।কিন্তু বাহিরে ওরা থাকলে শেয়াল মামাতো আর চুপ থাকতো না।ওরা ঠিকই হামলা করতো।আপনি দয়া করবেননা।তাই ব’লে আপনার বউ হয়ে আমি চুপ থাকতে পারি না।আমার যেটা ঠিক মনে হয়েছে,সেটাই করেছি।এটা নিয়ে আপনি আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।স্বাধীন না খেয়ে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে।স্বামীর মুখ ভার দেখে স্বামীর পাশে বসে তার গালে হাত রাখলো।
-;এত রাগ করেন ক্যান?আপনি দিন দিন রাগী হয়ে যাচ্ছেন।আমি কিন্তু এমন রাগী স্বামীকে ভালোবাসি নিই।আমি আমার শান্ত সৃষ্ট বোকা স্বামীকে খুব ভালোবাসি।আপনি মুখ ঘুরিয়ে রাখলে আমরা কোথায় যাব বলুন?আপনি ছাড়া আমাদের কে আছে?এত রাগ করে থাকলে কিন্তু আমিই কালই বাপের বাড়ি একা একা চলে যাব।আপনি সাথে না থাকলে যখন আব্বা,আম্মা জিজ্ঞাসা করবে।আপনি নেই ক্যান?তখন কিন্তু বলবো।আপনি আমার সাথে ঝগড়া করছেন।তাই চলে আসছি।
-;আমি তোমার সাথে ঝগড়া কখন করলুম।
-;করেন নিই।
-;না।
রেনু আর কিছু বলতে নিলেই একমাত্র ছেলে ঘুম ভেঙে যায়।কান্না করে উঠে।তাই স্বামীকে কিছু না ব’লে চুপচাপ ছেলেকে শান্ত করতে করতে স্বামীকে ইশারায় বলল ঘুমিয়ে পড়তে।
৪.
ফজরের আজানের শব্দে ঘুম ভাঙ্গে পুতুলের। মা ক্লান্ত থাকায় এখনো পরে পরে ঘুমাচ্ছে।তার ঘুম আর না আসায় বাহিরে বের হতেই মোরগে ডাক শুনতে পায়।আরো শুনতে পায় কাকের কা কা ব’লে উঠা ডাক।মাথার ওপর মগডাল বসে কালো কাকটি কা কা করছে।সেই দিকে তাকিয়ে পুতুল।কাকটি এক ডাল থেকে ওপর ডালে বসে ঠোকর দিচ্ছে পায়ে খাবারের জন্য।স্বাধীন ফজরের নামাজ পড়তে যাবে।মাথায় সাদা টুপি পরে বের হয়ে আসে।পুতুলকে এমন ওপর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে আসে।
-;এখানে কি করোস?মামার ডাকে পুতুলের মনোযোগ সরে যায়।মুখ তুলে মামার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রয় কয়েক পলক।
-;কি রে কথা কস না কেন?স্বাধীনের কথার কোনো জবাব না দিয়ে ঘরে দিকে দৌড় মারে পুতুল।কালকে মা’কে বকেছে মামা নামের এই লোকটা।আজকে তাকে কি খুব বকবে?তাই ভয় পেয়ে যায়।পুতুলের চলে যাওয়া দেখে,স্বাধীন মসজিদের পথে রওনা দেয়।
আমায় একবার যেতে দে না
আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়ে।
যেথায় কোকিল ডাকে কুহু
দোয়েল ডাকে মুহু মুহু
নদী যেথায় ছুটে চলে আপন ঠিকানায়।
একবার যেতে দেনা আমায় ছোট্ট সোনার গাঁয়ে।
সকালের সতেজতা ঠান্ডা বাতাসে মন প্রান জুড়িয়ে যায়।সময়টা চলছে অক্টোবর মাসের শেষের দিক।শীত আসার পূর্ব আভাস এখনই দিচ্ছে।বর্ষা ঋতু সময় সেই কখন চলে গেছে।ছোট ছোট আঁকাবাঁকা পুকুরের পানি কমতে শুরু করেছে।সেখানে ছোট ছোট মাছ ধরতে নেমেছে গ্রামের অল্পবয়সী ছেলে মেয়েরা।পুতুল বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে দেখছে সেসব।তার ভীষণ আনন্দ লাগছে।ইচ্ছে করছে পানিতে নেমে তাদের সাথে মাছ ধরতে।কিন্তু ভয় পাচ্ছে।যদি মামা আবার এসে ধমক দেয়।তখন মামা চলে যেতেই আবার ঘর ছেড়ে বাড়ির আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে আছে।দূরের মাঠে নতুন নতুন ধান বুনছে কৃষকেরা।কি ধান বুনছে তা জানে না পুতুল।শুধু দু’চোখ ভরে দেখছে সবকিছু।বাবার বাড়িতে থাকতে তাকে ঘর থেকে দাদি বের হতে দিতেন না।একে তো কথা বলতে পারে না।তার ওপর পাড়া প্রতিবেশী কথা তুলবে।তার ভয়ে তাকে ঘরে বন্দী থাকতে হতো।কিন্তু মামার বাড়িতে এসে প্রথমে খারাপ লাগলেও এখন খুব ভালো লাগে।অবাক চোখে গ্রামটাকে দেখে।দুই গ্রামে পার হয়ে যে গ্রামটা ছিল সেখানে ছিল তার বাবার বাড়ি।আর এখন এটা তার মামার বাড়ির।তার মায়ের কোনো বাড়ি নেই?আর না তার কোনো বাড়ি আছে।
-;পুতুল মা।কই তুমি?
মায়ের ডাক কানে আসতেই দৌড়ে আসে মায়ের কাছে।মায়ের কাছে বসতেই মা তার সারা মুখে আদর মেখে দেয়।পুতুলের তখন অনেক আনন্দ লাগে।মায়ের মতো করে সেও মায়ের মুখে অনেকগুলো ছোট ছোট চুমু বসায়।
-;তোমার মামী খাবার খেতে ডেকে গেছে সেই কোন বেলায়।এতখন না খেয়ে বাহিরে কি করছিলে।পুতুল মায়ের সঙ্গে হাতের ইশারায় কথা বলছে।তার দেখা ছোট গায়ের কথা।যে গায়ে সবুজ লতায় ঘেরা।মায়া ভরা কিছু সৃস্তি চোখের সামনেই ভেসে ওঠে রাজিয়ার।মনে পড়ে যায়।তার ভাই আর সে ছোট বেলায় কত কিছু করেছে।সেই ছেলেবেলা কথা আজও ভাবলেই মনে হয়।ইস আরেকবার, শুধু আরেকটিবার ছোট বেলা ফিরে যেতে পারতাম।তাহলে আমার ছোট কৈশোরকে আমি দুই হাতে আগলেই রাখতাম।নিজের ভুলগুলো শুধরে নিতাম।বাপ,ভাইয়ের মাথা নত।কখনোই নিচু করতাম না।কতটা সুখী ছিলাম তখন।মা ছিলো না ব’লে বাপ,ভাই কখনোও তাকে অবজ্ঞা,অবহেলা করেনি।দুই হাতে আগলে রাখতেন তারা।কিন্তু একটি মানুষকে ভালোবেসে আজ তার কি পরিনতি?বাপ হারালাম।ভাই থেকে ওহ হারানো।স্বামী নামক লোকটা তার জীবনটা শেষ করে দিলো।নিজের জীবনের সব রঙিন সুখ চুষে মেরে ফেলেছে।আজ তার জন্য মেয়েটি অবহেলায় বড় হবে।তার কিছু হয়ে গেলে এই পুতুলের কি হবে?
৫.
হাত মুখ ধুয়ে খাবার প্লেটের সামনে বসেছে পুতুল।পাশে তার মা’কে বসিয়েছে।মামি খাবার বেড়ে দিচ্ছে।চাল,ডাল দিয়ে ভুণা খিচুড়ি রান্না করেছে।বেশ কয়েকটি পদের ভর্তা করেছেন তিনি।পুতুল আলু ভর্তা,চ্যাপ্যা শুটকি মাছের ভর্তা আর আর লাল লাল শুকনো মরিচের ভর্তার নাম ছাড়া আরো কোনো নামই জানে না।তাই মামীর দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়।পুতুলকে অবাক করে দিয়ে মামী বলল,
-;এটা লাউ শাকের ভর্তা,কাঁঠালের বিচির ভর্তা।আলু ভর্তা,সজনে পাতার ভর্তা।মোটা ডাল সিদ্ধ করে হাতে মাখানো ভর্তা।চ্যাপ্যা শুটকি ভর্তা।কালিজিরা ভর্তা।আর সবর্শেষে লাল শুঁকনো মরিচের ভর্তা।যেটা সীল নূরে রেখে শুকনো মরিচের সাথে রসুন বেশি করে দিয়ে পিষে তৈরি করতে হয়।
লাল মরিচের ভর্তা দিকে তাকিয়ে আছে পুতুল।মনে পড়ে যায়,দাদী তাকে লাল মরিচের ভর্তা ইচ্ছে করে খাওয়াতো।যাতে সে বেশি ভাত মুখে দিতে না পারে।পেটে খিদে থাকা শর্তে ওহ সেই ঝাল ভাতগুলো পানি দিয়ে শুধু গিলতো।নাকের পানি,চোখের পানি এক হয়ে অশ্রু ঝড়ে পরতো।মা পাশে না থাকলেই দাদী ইচ্ছে করে প্রায় কষ্ট দেওয়ার জন্য এমন কিছু করতো।মেয়ের এমন দৃষ্টি রাজিয়া বুঝতে পারে।একদিন পুকুর পাড় থেকে কাপড় ধুয়ে এসে যখন শ্বাশুড়ির এমন কু কৃতী স্ব চোখে দেখতে পায়।তখনই বুঝতে পারে তারা বোবা মেয়েটির না বলা কষ্টগুলো।
চলবে….
আজকের লেখাগুলো তাড়াহুড়ো করে লিখে পোস্ট করে দিচ্ছি।হাতে মেহেদী পড়ার জন্য।
এই যে আমার পাঠক/পাঠিকারা ব্যাপার কি?হুম।কমেন্ট করতে এত কিপ্টামি কেনো?বড় বড় কমেন্ট চাই।এত কিপ্টামি করলে কেমনে হবে?তোমরা এত কিপ্টামি করলে কিন্তু আপা মনি লেখা নিয়ে কিপ্টামি শুরু করে দিবো।প্রতিদিন জায়গায় একদিন পর পর দিবো।তখন আমাকে দোষ দিতে পারবেনা।