চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা #ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া #পর্ব-২৪

0
383

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-২৪
৭৪.
অনেক দিন পর স্বামী বাড়িতে এসেছে।রেনু একটুও ভালো কিছু রান্না করার চেষ্টা করে।পোলাও চাউলের খুদ দিয়ে পায়েস বানানো সিদ্ধান্ত নিলো।

তাছাড়া বাঙালির খাবারের তালিকায় পায়েস অন্যতম।বাঙালিদের যেকোনো শুভ অনুষ্ঠানে পায়েস থাকবেই থাকবে!উৎসব আয়োজনে বাঙালির খাদ্যতালিকায় পায়েসের জুড়ি মেলা ভার।বিশেষ দিনে,মিষ্টি মুখ করার জন্য পায়েস আয়োজন বেশি হয়ে থাকে।দুধ পরিমাণমতো চিনি,কাজুবাদাম ও কিশমিশ,দু’টো তেজপাতা।ছোট কয়েকটা এলাচ।সবগুলো একসাথে হাঁড়িতে চড়িয়েছে।

একটা পাত্রে চাল নিয়ে ভিজিয়ে রেখে ঝড়িয়ে নিলো।দুধ ঘন করে নিয়েছে।দুধ ফুটে উঠলে তাতে চাল দিয়েছে।কিছুক্ষণ পর পর চামচ দিয়ে নাড়া দেয়,যাতে পাত্রের তলায় না লাগে।এরপর হয়ে গেলে নামিয়ে নেয়।পায়েস সুগন্ধ পেয়ে সাজু,মিলন রান্না ঘরে উঁকি দেয়।

আম্মা পায়েস রান্না করছে।মিলন,সাজু জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট চেটে বলল,

হুম,ইয়াম্মি।অনেক মজা হবে।কি সুন্দর সুগন্ধ আসছে?কারো ফিসফিস কথার আওয়াজে রেনু ঘুরে দেখতে পায় দুই বাঁদর দাঁড়িয়ে আছে।হাতের খুন্তিটা রাখতে রাখতে বলল,

এখানে কি চাই?

পা…য়ে…স।

এখন না।এশারের আজান পরে গেছে।বাবার সাথে হাত মুখ ধুয়ে নামাজে যাও।নামাজ পরে আসলে খেতে দিবো।

এখন একটুও খেয়ে যাই।

না।আগে যেটা ব’লেছি।ওটা করো।তারপরে তোমাদের কথা শুনা হবে।রেনুকে শত মানানোর চেষ্টা করে ওহ পারলোনা।তাই ওরা চুপচাপ নামাজ পড়তে চলে যায়।

এশার নামাজ পড়ে বাড়িতে আসতেই রাতের খাবার দেওয়া হয়।পায়েস দেয়নি ব’লে ওদের মন খারাপ হয়।রেনু দেখে ওহ না দেখার ভান করে খেদে বলল।

ওরা চুপচাপ খেয়ে উঠে।স্বাধীন দুই ছেলের মন খারাপের কারণ ইশারায় জানতে চাইলে রেনু কিছু ব’লে না।

রাতের খাবার খেয়ে সবাই যখন গল্পের জন্য একসাথে বসেছে।তখনই সবার হাতে হাতে একটা করে পায়েস বাটি তুলে দেয়।পুতুল নিজের বাটি থেকে এক চামচ মুখে দিতে নিলেই মিলন গাল ফুলিয়ে বলল,

আমি খাবো না।তোমরা খাও।মিলনের রাগ দেখে সাজু এক চামচ মুখে দিয়েছিল।সেটা গিলে নিয়ে ঠোঁট দুটো মুছে নিলো।বাটিটা মাটিতে রেখে সে-ও বলল খাবে না।স্বাধীন, পুতুল এদের কাহিনি বুঝতে না পেরে রেনুর দিকে তাকিয়ে রয়।রেনু নিজের বাটির পায়েস চামচ দিয়ে মুখে তুলতে তুলতে বলল।

ঠিক আছে।খেতে হবে না।রেখে দেও।আমি তোমাদেরটা খেয়ে নিবো।এমনইতেই আমার এক বাটিতে পোষাচ্ছে না।তিন বাটি হলে ঠিক পুষে যেতো।কি করব হাঁড়িতে আর পায়েস নেই?তাই মনের সাথে সাথে পেট ভরাতে না পারায় দুঃখ লাগচ্ছিল।কিন্তু এখন কোনো ব্যাপার না।আমারটা সাথে তোমাদের দুইজনের টা ফ্রি।রেনু নিজের দিকে দুই বাটি টেনে নিতে নিলেই মিলন,সাজু তাড়াতাড়ি করে নিয়ে নিলো।কোনো কথা না ব’লে একের পর এক চামচ মুখে ঢুকিয়ে নিচ্ছে।পুরো বাটির পায়েস শেষ করে,রেনুর হাতে সুন্দর করে খালি বাটি দিয়ে চলে গেলো।রেনু মিটিমিটি করে হেঁসে উঠে।দুই ছেলের এতখন এসব করার কাহিনি বলতেই স্বাধীন,পুতুল হেঁসে দেয়।

অনেক রাত হয়ে গেছে।এবার যার যার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ো।মামীর কথায় পুতুল মাথা নাড়িয়ে চুপ করে ঘরে চলে যায়।নিজ কক্ষে এসে দেখে দুই ভাই চুপচাপ শুয়ে আছে।পুতুল দরজা বন্ধ করে।বাতি সুইচ টিপে বন্ধ করে নিজেও কিছুটা দূরত্ব রেখে চোখ বুজে নিলো।

৭৫.
জামাই আঁটি গ্রাম থেকে রেনু চাচাতো ভাই আসছে।বোনকে দেখে কয়েক দফা কান্নাকাটি করেছে।দশ বছর ধরে দেশের বাহিরে ছিলো।বোনের বিয়ে সময় সে দূর দেশে।আজ সেই বোন নাকি চার ছেলে,মেয়ে’র মা।ভাবতেই অবাক হচ্ছে।

নিজে বিয়ে করেনি।মাথার চুল পড়ে টাক হচ্ছে।তাই তো এবার দেশে ফিরতেই মা,বাবা ছেলেকে বিয়ে দিতে উঠে পড়ে লাগছে।রেনুর ভাইয়ের নাম সাজ্জাদ।বিশ বছর বয়সে দেশ ছাড়ে।এখন ত্রিশ থেকে একটু বয়স বেশি হয়েছে।দেখতে হ্যান্ডসাম লাগে।কিন্তু হ্যান্ডসাম হলে কি হবে মাথার চুল না থাকায় টাকলু আঙ্কেল লাগছে।চুল থাকলে বেশ কয়েকটা রমনী পটলে ওহ পটে যেতো।

এই সাজ্জাদ সাহেবের কোনো রমনী না জুটলেও,বিদেশ থেকে এসে একটা কুকুর ভালোই জুটিয়ে নিয়েছে।তার গায়ের মশম সাদা।নাম দিয়েছে মানকি।এই নাম শুনেই মিলন হাসতেই থাকে।আর মুখ দিয়ে বলতে থাকে।

কুত্তার বাচ্চা ফুটফুটে সুন্দর।মিলনকে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি করতে দেখে মানকি চোখের পলক ফেলে তাকায়।

সাজাদ্দ বোনের বাড়িতে আসার পথে তাঁকেও নিয়ে এসেছে।পুতুল কুকুর দেখলেই ভয় পায়।আর নতুন অতিথি সাথে নতুন মানকি নামক এই প্রানী দেখে চোখ বড় বড় হয়ে গেছে।এই আপদ তাদের বাড়িতে না-কি কয়েকদিন থাকবে।তাই পুতুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে,এর থেকে দশ হাত দূরে থাকবে।

কিন্তু এইদিকে মিলন কুকুরটার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকায়।আবার জিহ্বা বের করে ভেঙায়।লেজ ধরে টানে।কখনো গোফ ধরে টানে।মিলন উল্টাপাল্টা কাজে কুকুরটাও বিরক্ত হয়ে উঠে।সে বেশ কয়েকবার কেউ কেউ করে উঠে।কুকুরের সাথে এমন মাখামাখি ভালো না।সবাই নিষেধ করে।কিন্তু সে শুনলে তোও।যদিও সাজ্জাদ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখে।তবু্ও কুকুরের সাথে এতো মাতামাতি করা ঠিক না।দেখা যাবে সে বিরক্ত হয়ে কিছু করে বসেছে।

সাজ্জাদ,স্বাধীনের সাথে মাঠে গেছে।সে না-কি ক্ষেতে চাষবাস করবে।বাড়িতে মানকিকে রেখে গেছে।এই মানকি সাহেবের কোনো কাজ নেই।সে খায় দায় আর ঘুমিয়ে দিন কাঁটায়।আর রাত হলে সে যা করে সেসব রাতেই বুঝতে পারবে।

সাজ্জাদ মামা বিদেশি চকলেট এনেছে।রেনু মিলন,সাজু হাতে কিছু চকলেট ভাগাভাগি করে দিল।সেই চকলেট প্যাকেট ছিঁড়ে মুখে পুরে,

হুমম ম-ম।সেই স্বাদ।এত স্বাদ ক্যা?এত স্বাদ…।

মিলনের মজা করে চকোলেট খাওয়া দেখে মানকি সাহেব তার লেজ নাড়িয়ে বারান্দা থেকে নেমে মিলনের গায়ের সাথে গা লাগিয়ে দাঁড়ায়।

ওমা গো মা।দেখছো নিই এর কার বারটা।
ওই আমার কাছে কি তোর হ্যা?খুব তোও এতখন ভাব লইয়া আছিলি।মিলনের পাত্তা দেস নাই।এখন আইছেন কেন?দূরে যা।দূরে গিয়া মর গা।শালা ফটকাবাজ।চকলেট লোভী।লোভ কত?আবার আমারটা খাইতে আয়ে।তোরে আমি চকলেট দি.তা.ম না।না মানে না।তোর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই।সো আমি দিতাম না।আবার আমার চকলেটের দিকে নজর দেস।দাঁড়া তুই।মিলন চকলেটগুলোতে থু থু মেরে দিয়ে বলল,

নে এবার,খাবি।খা।খা না।আমি জানতাম।এই রকম করলে তুই খাইতে পারবি না।তাই ইচ্ছে করে এটা করলাম।মিলন লাস্ট বড় চকলেটটাতে থু থু লাগিয়েছিল।মানকি তখন লেজ নাড়িয়ে উল্টো পথে চলে যাচ্ছিলো।মিলন তখনই মনের আনন্দে মুখে পুরতে নিলেই মানকি ফিরে এসে মিলনের হাতের চকলেট মুখে নিয়ে দৌড় মারে।নিজের মুখে চকলেট যেতে পারেনি।হাত খালি,সেখানে ওহ চকলেট নেই।মিলন একটা চিতকার করে বলল,

কুত্তার বাচ্চা আমার চকলেট নিছে।কুত্তা বাচ্চা একটা লোভী।মিলনের থু থু লাগানো চকলেট খাইছে।লোভী কুত্তা।

মিলন,কুকুরের সাথে পুরো বাড়িতে দৌড়াতে লাগলো।তার উদ্দেশ্য একটাই।কুত্তা বাচ্চার মুখ থেকে চকলেট বের করেই ছাড়বে।কিন্তু মানকি সাহেব ধরা দিলে তো।

৭৬.
ভাই সামনের মাসে সাজু,মিলন ছয় বছরে পা দিবে।তাই বলছিলাম কি?ওদের অল্প বয়স থাকতেই মুসলমানিটা করে ফেলেন।আমি সব ব্যাবস্থা করে রাখব।

হুম ভাই মুসলমানি করাবো।কিন্তু এরা যে দুষ্টুমি করে।দেখা যাবো একে অপরের সঙ্গে মারামারি করে রক্ত বের না করে বসে।

আরে এটা কোনো ব্যাপার না।একবার সুন্নতের কাজটা হয়ে গেলেই তারা নিজেরাই সর্তক থাকবে।সব ঠিক হয়ে যাবে।আর আমি তোও আছিই।সামলে নিতে পারব।

সাজ্জাদ,স্বাধীন বাড়িতে পা রাখতেই দেখে, মিলন দুই হাত দিয়ে কুকুরের মুখ হা করিয়ে কিছু একটা খুঁজছে।আর কিসব ব’লে বকাবকি করছে।

কি মামা কি হয়েছে?আপনি মানকি সাহেব সাথে এমন করছেন কেন?

-;তোমার মানকি গায়ে তোও কোনো কোর্ট,প্যান্ট,টাই পড়া দেখলাম না।তাহলে সে সাহেব হলো কি করে?তোমাকে সাহেব লাগছিল।প্রথম যেইদিন কোর্ট,প্যান্ট,টাই পরে আমাদের বাড়িতে আসছিলা।

কিন্তু এখন তার বিচার কর।তোমার এই মানকি,টানকিং আমার চকলেট খাইছে।তারে ভালোই ভালোই চকলেট পেট থেকে বের করতে বলো।যদি বের না করে।আমি কিন্তু কাচি দিয়ে তার পেট কেটে চকলেট বাহির করমু।
অসভ্য কুত্তা বাচ্চা।লোভী মানিক টানকিং।শরম নাই।অন্যেরটা কাইড়া খায়।ছ্যাছড়া কুত্তা।লোভী জানি কোনহানকার?

মানকি সাহেব মনে হয় মিলনের কথায় অপমান ফিল করলেন।তাইতো মিলনের কথা শেষ হতে না হতেই কেউ কেউ শুরু করে দিলো।যার মানে সে নির্দোষ।মানকি এমন কাজে মিলন রেগে বলল,

একে তোও চুরি করে খাইছে।তার ওপর সিনা জুড়ি করে।লোভী মানকি।অসভ্য।মামা তোমার এই অসভ্য কুত্তাটাকে বাহিরে রেখে আসোও।এ চরম লোভী।এর জায়গায় আমাদের মাঝে হবে না।সাজ্জাদ মিলনকে শান্ত করতে বলল,

মামা শান্ত হও।তোমার জন্য গুড নিউজ আছে।

গুড নিউজ।সেটা আবার কি?খায় না মাথা দেয়?

বলছি।আগে সবাইকে ডেকে আনো।মিলন, রেনুকে ডেকে আনলো।পুতুল তখন স্কুলে আছে।মামা আসার খুশিতে মিলন,সাজু দুইদিন ধরে স্কুলে যায় না।রেনু আসতেই জানানো হলো।সামনের শুক্রবারে সাজু,মিলনের মুসলমানি।তার উপলক্ষে ছোট খাটো খানাপিনা হবে নিজেদের মধ্যেই।বাহিরে লোক আসবে না।শুধু নিজেরাই থাকবে।সেই দিনের জন্য পোলা,মুরগী রান্না হবে।সাথে গরুর গোশত।

সুস্বাদু খাবারের কথা শুনে মিলন,সাজু লাফাতে লাগলো।

থাকতুম থাকতুম বাজায়।
মিলন মিয়ার ঢোল।

আমি মজার মজার খাবার খাবো।ওহ শুক্রবারে আমার মুসলমানি হবে।তোমাদের সবাইকে দাওয়াত দিলাম সবাই আইসো।আসলে ফিড়ি পেতে বসতে দিবো।পান,সুপারি খেতে দিব।সবাই গিফট নিয়ে আসবা।না নিয়ে আসলে কোনো সমস্যা নাই।না খাইয়ে পাঠিয়ে দিবো।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here