চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা #ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া #পর্ব-২৬

0
344

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-২৬
৮১.
পুতুল এখন কেমন লাগছে?ভালো লাগছে তো।

পুতুল মাথা নাড়িয়ে বুঝালো।এখন ভালো লাগছে।

তোমার জন্য তোমার মামা গঞ্জ থেকে ডাক্তার সাহেবকে বাসায় নিয়ে আসছে।আমি তারে বলছিলাম তোমাকে নিয়ে ডাক্তার কাছে যেতে।কিন্তু তুমি না করেছো।তাই তোমার মামা নিজেই ডাক্তার নিয়ে বাসায় হাজির।সে ডাক্তার নিয়ে এসে দেখে তুমি ঘুম।আমি ডাকতে চাইলাম।কিন্তু তোমার মামা বারণ করলেন।ডাক্তার তোমাকে দেখে নিলেন।আর কি কি সমস্যা বলতেই মেডিসিন দিলো?আর সেটা দিতেই জ্বর ছেড়ে দিল।

পুতুল মামীর কথাগুলো মন দিয়ে শুনতে লাগল।তাকে নিয়ে এতকিছু হয়ে গেছে।অথচ জ্বরে ঘোরে জন্য সে বুঝতে পারে নিই।

এখন যখন জ্বর সেড়ে গেছে।তাহলে উঠে পড়।মাগরিবের আজান এই দিলো ব’লে।নামাজ পড়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে বাহিরে আসো।বাড়িতে অতিথি আছে।তারা তোমায় দেখতে চায়!মামী চলে যেতেই কাপড়টা পাল্টে নিলো।ঘাম দেওয়াতেই শরীরটা হালকা লাগছে।এই মুহূর্তে গোসল করতে পারলে শান্তি লাগতো।পুতুলের ভাবনার মাঝেই দূর মসজিদ থেকে মাগরিবের আজানের শব্দ ভেসে আসছে।পুতুল উঠে ওযু করে নেয়।মামীর কথা মতো নামাজ পড়ে মাথায় ওড়না দিয়ে বের হয়ে আসে।চারদিকে ছোট ছোট বাচ্চাদের ছোটাছুটি।তারা কেমন আনন্দে আতখানা?নিজ চোখে দেখাতেও যেন এক রকম শান্তি পায়।পুতুল মিষ্টি করে হেসে এগিয়ে যায় বড়দের মাঝে।রেনুর পরিবার পুতুলকে পেয়ে খুশি হন।মেয়েটি মুখে সালাম দিতে পারেনি।কিন্তু হাতের ইশারায় বুঝিয়েছে সালাম দিয়েছে।সবার ব্যাপারটা বুঝতে টাইম লাগে।এইদিকে তার মেয়ের ঘরে কোনো কন্যা সন্তান নেই।রেনুর এই মেয়েকে কতটা আহ্লাদে লালন পালন করছে।তা রেনুর মা লতিফা বেগম বিকেলেই বুঝতে পারেন।আজ বিকালে রেনু কিভাবে দূর সম্পর্কে মামী শ্বাশুড়ি সাথে কথা কা*টাকা*টি করছিলো।এক প্রকার তর্কা বির্তক চলছিল।অথচ মনোয়ার বেগম মুখেমুখে আজ পর্যন্ত কেউ কখনো কথা বলতে কিংবা বলার সাহস করেনি।কিন্তু তার মেয়ে সেটা করেছে।আর সেটা করেছে ব’লেই তাকেও সেই মহিলা কথা শুনিয়েছে।বলেছেন,বেয়াদব মেয়ে জম্ম দিয়েছি।

তার ভাবতে ওহ অবাক লাগে।মেয়েকে সে একদম নরম কাঁদা মাটি মতো গড়েছিলেন। এবং সুপাত্র হাতে দান করেছেন।স্বাধীন একজন সুপাত্র।এটা তিনি নিরদ্বিধায় বলতে পারেন।এমন জামাই সবার কপালে জুটে না।সে কি সুন্দর নিজের পরিবার এবং বোনের ছেলে,মেয়েকে কোলে পিঠে মানুষ করছে।
এই গ্রামে এসে তিনি স্ব চোখে দেখতে পেয়ে চোখ দুইটা শীতল হয়ে যায়।এই আদুরী মেয়েটা তার মেয়ে এবং মেয়ে জামাই এর কলিজা।মা মরা মেয়েটির মাথার ছায়া।এদের কিছু হয়ে গেলে মেয়েটা ছায়াটাও সরে যাবে।
আল্লাহ তুমি এতিমের প্রতি রহম হইয়ো।সব বিপদ থেকে হেফাজতে রেখো।

৮২.
মনোয়ার বেগমের মুখেমুখে কেউ তর্ক করুক এটা তিনি মেনে নিতে পারেন না।কিন্তু আজ সামন্য মেয়ের জন্য তাকে এভাবে বোয়ালমাছের মতো গিলে ফেলতে চাইলো।তিনি রেগে গেছেন।বিছানার ব্যাগ পত্র গুছিয়ে অর্ধেক রাস্তায় চলে যান।আবার কি মনে করে অর্ধেক রাস্তা থেকে ফিরে আসেন।রেনু ব্যাপরটা প্রথম থেকেই লক্ষ্য করছে।কিন্তু কিছু ব’লে নিই।এখন ফিরে আসতেই।নিজে হেঁটে মামী শ্বাশুড়ি মুখের সামনে গ্লাস ধরে।মনোয়ারা বেগম কপাল কুঁচকে বলল,

এটা কি আনছো?বিষ!তোমার মাইয়া নিয়া কথা বলছি দেইখা আমারে বিষ দিয়া মারতে চাও?

তওবা,তওবা।কি ‘যে বলেন না মামী মা?আমি আপনাকে বিষ দিবো।আমার মাথাটা আমার গর্দানে থাকবে তোও?মনোয়ার বেগম চোখ বড় করে তাকতেই রেনু মিটমিটিয়ে হেসে বলল,

না মানে আপনার ভাইগ্না আর আমার স্বামী আমায় আস্ত রাখবে।কি বলেন না মামী মা?আমি দেখলাম আপনি ব্যাগপত্র নিয়ে বের হয়ে গেলেন।আবার দুই মিনিট পর ফিরে আসলেন।ভাবলাম আপনি হয়তো ক্লান্ত হয়ে গেছেন।তাই আপনার জন্য লেবু শরবত করে নিয়ে আসলাম।আচ্ছা আপনি কি এখান থেকে চলে যেতে চাইছিলেন?আমার কথায় রাগ করলেন না-কি?

চইলা কেন যামু?আইছিলাম বেড়াইতে।তাই বেড়াই যামু।তুমি বেশি কথা কও!যাও এইহান
থেইক্যা?রেনু চলে যেতে নিলে ডাক দিয়ে বললেন।

দাঁড়াও।শরবত দিতে আইসা।না দিয়া চইলা যাও কেন?ওইটা রাইখা তারপর যাও।

জি,মামী মা।

রেনু শরবতের গ্লাসটা রেখে চলে যায়।রেনু চলে গেছে কি-না উঁকি মে’রে দরজার বাহিরে দেখে নিলেন।কেউ নাই দেখে।খাটে বসে ঠান্ডা পানির শরবত টুকু খেয়ে নেন।রেনু জালানার সামনে দাঁড়িয়ে সবটাই দেখে হেঁসে উঠে।পরক্ষণেই নিজের মুখ চেপে ধরেই এখান থেকে সরে যায়।যদি মনোয়ারা বেগম একবার বুঝতে পারে রেনু সবটা দেখে নিয়েছে।তাহলে বারোটার খবর করে ছাড়বে।

আপু লুঙ্গি ধরে হাঁটতে কষ্ট হয়।এই প্যারা এখানে না দিয়ে মাথায় তুলে দিলে কেমন হয়?

সাজুর অদ্ভুত কথায় পুতুল চোখ বড় বড় করে তাকায়।
সাজু’র এমন কথায় মিলনের হাত ফসকে লুঙ্গি জায়গারটা জায়গায় পড়ে যায়।নিচে সব ঠিকঠাক আছে দেখে সাজুর দিকে তাকিয়ে বলল,

ওই মাথায় তুলে দিবি মানে?

আমার লুঙ্গি দুই হাত দিয়ে ধরে সুয়ে বসে থাকতে ভালো লাগছে না।সাজু’র কষ্ট হচ্ছে। তার চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ।
পুতুল কিছু ভেবে নিজের মামীর কাছে ছুটে যায়।

৮৩.
পুতুল ছোট আয়না সামনে দাঁড়িয়ে আছে।মায়ের শাড়ি গায়ে জড়িয়ে নিয়েছে।কিন্তু শাড়িটি ভালোভাবে পড়তে পারেনি।কোনোরকমে পেঁচিয়ে নিয়েছে।রেনু,পুতুলের ঘরে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।উচ্চস্বরে হেঁসে এগিয়ে আসে।

বাহ,তোকে দেখতে দারুণ লাগছে।কিন্তু শাড়ি’টা আরেকটু গুছিয়ে পড়লে আরও ভালো লাগবে।দাঁড়া আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।রেনু শাড়িটি সুন্দর করে কুঁচি দিয়ে পুতুলকে পড়িয়ে দিলো।

পুতুলের লম্বা চুলগুলো খোপা এলিয়ে দিলো।মাথায় হিজাব পরিধান করে বলল,

মা শা-আল্লাহ।আমাদের পুতুলকে একদম অপ্সরী লাগছে।ভাইদের মন ভালো করতে এই প্রথম তোকে দেখলাম শাড়ি পরতে।যা নবাব দুই পুত্র সাথে দেখা করে আয়।তাদের কেউ উঠোনে নামা।তবে সাবধানে।পুতুল ভাইদের সামনে যেতেই সাজু,মিলন চোখ দুটো ঝাপটিয়ে তাকিয়ে বলল,

আপু বেশে কোনো এক পরী।

সত্যি মিলন।রুপকথার গল্পের মতো লাগছে।যেখানে রাজা,রানী তিন পুত্র এবং এক কন্যা ছিল।আপু কি সেই রুপকথার রাজকন্যা?আমার কি রাজকন্যার ভাই?

পুতুল,মিলন,সাজু কে ধরে বারান্দায় বসিয়ে দিলো।নানু এসে তাদের সাথে বসে গল্প করতে লাগল।দুই ভাইয়ের মাঝে বসে পুতুলও চুপচাপ গল্প শুনতে লাগল।তাদের সাথে একে একে সবাই যোগ হলো।কিন্তু মনোয়ারা বেগম আসলেন না।তিনি দূরে সরে থাকলেন।রেনু ছোট ছেলেকে কোলে নিয়ে মায়ের সামনে বসতেই মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।সবার সাথে মানকি সাহেবও যোগ দিয়েছেন।তবে একটু দূরত্ব বজায় রেখে শুয়ে পড়লেন আরামসে।
গল্প শেষে সবাই একসাথে হেসে উঠে।আবার হাসি লুফে নিতে আনন্দে ব্যাস্ত হয়।হাসি মজায় সময়টা বেশ চলে যায়।লতিফা বেগম শাড়ি আঁচল সরিয়ে টাকার থলি বের করে পুতুলের হাতে দুটো কচকচে পঞ্চাশ টাকা নোট ধরিয়ে চলে যান।বাড়ি সামনে হাওয়াই মিঠাই আসতেই নিজের এবং ভাইদের জন্য কিনে নেয়।

মিলন,সাজু উঠে আসতে না পারলে কি হবে? পুতুল দুইজনের হাতেই হাওয়াই মিঠাই তুলে দিয়েছে।সেটা খেতে বেশ মজা।একটু করে কামড়ে মুখে দিতেই কেমন মিলিয়ে যাচ্ছে।পুতুল মুখে পুরে খেতেই দরজা নিচ দিয়ে ছোট্ট দুইটা হাত বাড়িয়ে তার আঁচল টেনে ধরে।পুতুল তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলেই সে সরে যায়।আবার উঁকিঝুকি মারে।পুতুল দরজাটা হালকা সরাতেই দেখে তাদের ছোট মিয়া হাসছে।দাঁতবিহীন হাসিটায় কি মায়া পুতুল জানে না?তবে তাকে কোলে নিতে বেশ টানছে।পুতুল দরজা খুলে ছোট মিয়াকে কোলে নিয়ে গালে বেশ কয়েকটা চুমু বসিয়ে দিলো।ছোট হাতদুটো তার গলা পেঁচিয়ে ধরেছে।যার মানে পুতুল ছাড়তে চাইলেও সে ছাড়বে না।পুতুল গালের সাথে নরম তুলতুলে গালটা লাগিয়ে কোলটা দখল করেছে।দুই ভাইয়ের সাথে সাথে ছোট ভাই তার আদরের ভাগ বোনের থেকে নিতে হাজির হয়েছে।রেনু আড়ালে থেকেই দুই ভাই বোনের ভালোবাসা দেখছে।মূলত রেনু ছোট ছেলেকে কোল থেকে নামিয়ে দরজা সামনে দিয়ে গেছেন।

৮৪.
পুতুল,রিফাতকে নিয়ে ব্যাস্ত।সাজু নিজের হাওয়াই মিঠাই এবং পুতুল তার আরেক হাতে দেওয়া মিঠাই গপাগপ খেয়ে ফেলছে।মিলন সাহেব মানকি সাহেবের সামনে গেছে।তাকে বিরক্ত না করলে পেটের ভাত হজম হচ্ছে না।মিলনের কাজে মানকি সাহেব বেশ বিরক্ত হন।বারবার দূরে সরে যাওয়ার পরেও বিরক্ত করছে।এক সময় রেগে গিয়ে তার পায়ে কামড় বসিয়ে দেন।মিলন চিতকার করে বাড়ি মাথায় তুলে।মানকি একটা কামড় দিয়ে ছেড়ে দেয়।কিন্তু মিলন সাহেব গালাগালি দিতে দিতে নিজেও কুত্তা গায়ে কামড় বসিয়ে দেয়।
বাড়িতে একটা হৈ হুল্লোড় পড়ে যায়।মানকি সাথে এক প্রকার হাতাহাতিতে রক্ত ভেসে ওঠে লুঙ্গিতে।সাজ্জাদ দৌড়ে মিলনকে নিয়ে ছুটে সদর হাসপাতালে।পুতুল ভাইয়ের অবস্থা দেখে থরথরিয়ে কেঁপে ওঠে।সাজ্জাদ মামার পিছনে সেও ছুটছে।

চলবে..
গল্পটা কাল রাতে লিখেছি। কিন্তু ঘুমের জন্য এডিট করা হয়নি।সকালে শরীরটা ভালো ছিলো না।তাই পোস্ট করতে দেড়ি হয়ে গেলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here