#চন্দ্রকলা
#লামিয়া_ইসলাম
#পর্ব_৬
রাত ১০ টা। গ্রাম্য এলাকার জন্য মানে এখন অনেক রাত। চারদিকে ঝিঁঝি পোকার আওয়াজ। চন্দ্র তার রুমে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। তখনকার সাফোয়ানের করা ব্যবহারগুলো দেখে তার খুব অবাক লেগেছে। সে কিছুই মেলাতে পারছে না। তার যেন মনে হচ্ছে এখানে দম বন্ধ হয়ে আসছে।
সাফোয়ান আজ প্রায় রাত করে বাড়ি ফিরলো। সে বিকালে ড্রাইভারকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলো। রুমে এসে চন্দ্রকে শোয়া অবস্থায় দেখতেই হঠাৎ করেই তার মনে পড়লো সে চন্দ্রকে বলেছিলো সে তাকে তার পছন্দের জায়গায় নিয়ে যাবে। তাই সে চন্দ্রকে ধীরে ধীরে ডাকতে লাগলো।
-চন্দ্র তুমি কি জেগে আছো?
-হুম।
-তাহলে উঠে এসো। তোমাকে আমার পছন্দের জায়গায় নিয়ে যাবো আজ।
-ঠিক আছে। আমি তৈরী হয়ে নিচ্ছি।
-আরেহ না না। তুমি এভাবেই চলো।
সাফোয়ান চন্দ্রের হাতের কব্জি ধরে ধীরে ধীরে তাকে নিয়ে জমিদার বাড়ি থেকে থেকে বের হয়ে গেলো। চন্দ্রর কেন জানি সাফোয়ানের সাথে যেতে কিছুটা ভয় লাগছিলো। তখনি তার হঠাৎ মনে হলো সাফোয়ান তার সাথে কাল থেকেই খুব নরম ব্যবহার করেছে। কাল থেকে তার সাথে করা ব্যবহারের উপর ভরসা করেই চন্দ্র সাফোয়ানের সাথে যেতে রাজি হলো।
সাফোয়ান আজ প্রায় রাত করে বাড়ি ফিরলো। সে বিকালে ড্রাইভারকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলো। রুমে এসে চন্দ্রকে শোয়া অবস্থায় দেখতেই হঠাৎ করেই তার মনে পড়লো সে চন্দ্রকে বলেছিলো সে তাকে তার পছন্দের জায়গায় নিয়ে যাবে। তাই সে চন্দ্রকে ধীরে ধীরে ডাকতে লাগলো।
-চন্দ্রিমা তুমি কি জেগে আছো?
-হুম।
-তাহলে উঠে এসো। তোমাকে আমার পছন্দের জায়গায় নিয়ে যাবো আজ।
-ঠিক আছে। আমি তৈরী হয়ে নিচ্ছি।
-আরেহ না না। তুমি এভাবেই চলো।
সাফোয়ান চন্দ্রের হাতের কব্জি ধরে ধীরে ধীরে তাকে নিয়ে জমিদার বাড়ি থেকে থেকে বের হয়ে গেলো। চন্দ্রর কেন জানি সাফোয়ানের সাথে যেতে কিছুটা ভয় লাগছিলো। তখনি তার হঠাৎ মনে হলো সাফোয়ান তার সাথে কাল থেকেই খুব নরম ব্যবহার করেছে। কাল থেকে তার সাথে করা ব্যবহারের উপর ভরসা করেই চন্দ্র সাফোয়ানের সাথে যেতে ভরসা পেলো।
চন্দ্রর গায়ে শাড়ির ওপর একটি পাতলা শাল পেঁচানো। সাফোয়ান তাকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চন্দ্রকলা নদীর তীরে এসে পৌছালো।
-এই হচ্ছে আমার পছন্দের জায়গা। যেখানে আমি একা থাকতে খুব বেশি পছন্দ করি। যদিও আজ থেকে তুমিও চাইলে এখানে আসতে পারো আমার সাথে।
-আপনি কি এখানে একাই আসেন?
– জি।
-কেন?
-না এভাবেই।
-জানো চন্দ্রিমা আগে এই চন্দ্রকলার রাতের বেলার সৌন্দর্য আমি দেখতাম আর মুগ্ধ হতাম। আমার কাছে মনে হতো যেন সব সৌন্দর্য এই চন্দ্রকলার তীরে এই পূর্ণ চাঁদেই দেখা যায়। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। কেন না এই পূর্ণ চাঁদের আলোয় চন্দ্রিমা তুমি এই চন্দ্রকলার থেকেও সুন্দর। আমার অর্ধাঙ্গিনীকে দেখে অপূর্ব সুন্দর চন্দ্রকলা নিজেও বিমোহিত হয়ে হয়ে যাবে।
সাফোয়ানের বলা কথা গুলো শুনে চন্দ্রর নিজের কেমন যেন গর্ব হতে লাগলো। মনে হতে লাগলো তার এত সুন্দর রূপের প্রথম যেন কেউ পরিপূর্ণ মর্যাদা দিতে পেরেছে।
চন্দ্র আর সাফোয়ান যখন জমিদার বাড়িতে পৌছালো তখন রাত ১২ টা। চন্দ্র রুমে এসেই ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। কিন্তু সাফোয়ানের কেন যেন ঘুম আসছিলো না। তাই সে তার বারান্দায় দাঁড়িয়ে তার বারান্দার সাথে লাগোয়া ফুলের বাগানের দিকে তাকালো। হঠাৎ তার নজর গেলো বাগানের মধ্যেখানে যেখানে সে এক নারী অবয়বকে দেখতে পেলো। তার মনে খটকা লাগলো ব্যাপারটাতে খুব। সে দেখতে পেলো নারী অবয়বটি বাগানের মাটি খুঁড়ে কিছু রাখছে।
তাই সে তড়িঘড়ি করে টর্চ লাইট নিয়ে বাগানের দিকে ছুটে গেলো। কিন্তু সে বাগানে এসে কাউকেই দেখতে পেলো না। তবে যেখানে সে মাটি খুঁড়তে দেখেছিলো সেখানে সে দেখলো কাচা মাটি। তাই সে এটা নিশ্চিত হলো যে কেউ এখানের মাটি খুঁড়েছে। তাই সে তাড়াতাড়ি করে সাহেদ আর সাহিল কে কল দিয়ে বাগানে আসতে বললো। তারা এসে দুজনে মিলে মাটি খোঁড়া শুরু করে করে দিল।২,৩ ফুট খোদাই করার পর তারা দেখলো টা দেখে তাঁদের সবার চক্ষু চরকগাছ।
তারা দেখতে পেলো সেখানে একটা কালো তাবিজ রাখা আর সাথে একটা ছোট পুতুল। পুতুলটার চোখ গুলো উঠানো আর তার পেটে একটা ছুরি মারা হয়েছে। পুতুলটা দেখেই তারা তিন ভাই বেশ ভড়কে গেলো। কিন্তু এখন এই এই ব্যাপারটা নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করলেই শিরিন বেগমের কানে যাবে আর সে আবার আতঙ্কিত হয়ে পড়বে।
তাই তারা পুতুল আর তাবিজটাকে একটা প্লাষ্টিকের প্যাকেটে ভরে তাঁদের বাড়ির দারোয়ানকে বললো সেটা তাঁদের বাড়ি থেকে দূরে একটা ডোবায় ফেলে আসতে। এই কাজ শেষ করে তারা আবার যে যার রুমে ফিরে গেলো।
বৌভাতের দিন সকালে পুরো বাড়িতে উৎসব মুখর পরিবেশ। বাড়ির আঙিনায় বৌভাতের আয়োজন করা হয়েছে। বড়ো বড়ো ডেকচিতে রান্না চলছে। আজ শহর থেকে মেকআপ আর্টিস্ট এসেছে চন্দ্রকে সাজাতে। যদিও চন্দ্রকে আজ একবারে সিম্পল ভাবেই সাজানো হচ্ছে।
দুপুর বারোটা বাজতেই অতিথিরা আসতে শুরু করলো। ধীরে ধীরে চন্দ্রর পরিবারের লোকজন ও আসতে লাগলো। সব শেষে এলো রিমা, অনিমা আর তাঁদের মা রাহেলা বানু। তারা আসতেই আমেনা বেগম তাঁদের চন্দ্রের রুমে নিয়ে গেলো। চন্দ্রের রুমে আসতেই চন্দ্রকে দেখে তাঁদের চক্ষু চরকগাছ। চন্দ্রর পরনে আজ আজ নীল রঙের কাঞ্জিভরম শাড়ী আর মাথায় সোনালী দোপাট্টা। কিন্তু তার শাড়ীটা খুব বেশি গর্জিয়াস না হলেও তার গলায় রয়েছে হীরার রানী হার। এটা সাফোয়ানদের খানদানি হার। যার বয়স ২০০ বছরের ও বেশি। এর মধ্যে অনিমা শাহনাজ এর সাথে রুম থেকে বের হয়ে গেলে। রিমা আর রাহেলা বানু তার পাশে এসে বসলো। রিমা চন্দ্রর গলার হারটা ধরে ধরে দেখতে লাগলো। এমন সময় রাহেলা বানু চন্দ্রকে খোঁচা মেরে বললো,
-কিরে তুই দেহি এইহানে মেলা শান্তিতে আসোস।
-জি মা।
-তা তোর শাশুড়ি কি তোরে আরো অনেক গয়না দিছে নাকি?
-জি দিছে।
-তয় ঐহান থেইক্কা দুই তিনডা গয়না তোগো বইন গো দিয়া দে।
-কেন মা? ঐগুলা তো আমার গহনা। এই জমিদার বাড়ির সম্পদ। আর পরে কোনো সময় তারা যদি জিজ্ঞেস করে গহনা কই তখন আমি কি করবো?
-আরেহ জিগাইলে কবি হারাই গেছেগা।
-না মা আমি মিথ্যা বলতে পারবো না। এই গয়না জমিদার বাড়ির। এই গহনা আমার কাছে আমানত হিসেবে রাখা হয়েছে। আমি এই গহনা দিতে পারবো না।
চন্দ্র গহনা দিবে না শুনে যেন রিমা আর রাহেলা বানুর মাথায় রক্ত উঠে গেলো। রাহেলা বানু তার রাগ সংবরণ করতে পারলো না। আর যখন দেখলো এই ঘরে কেউ নেই আর সে আর রিমা ছাড়া সে এসেই চন্দ্রর গলা চেপে ধরলো আর বলতে লাগলো,
-মা*গি তোর খুব দেমাগ হইয়া গেসে এই জমিদার বাড়ির বৌ হইয়া। কি মনে করছোস তুই সবসময় এমন অবস্থায় থাকবি । এই জমিদারের পোলাগো চেনোস নাই। যখন মন ভইরা যাইবো তখন তোরে ধৈররা রাস্তায় ছুইররা ফালাইবো। তখন তো আমার কাছেই আইতে হইবো নাকি বে*শ্যাগিরি কইররা পেট চালাইবি।
অবস্থা বেগতিক দেখে রিমা এসে চন্দ্রকে তার মায়ের হাত থেকে ছাড়ালো। ছাড়া পেয়েই চন্দ্র কাশতে লাগলো। তখন রিমা বললো,
-এইরকম না করলেই পারতি। কয়টা গহনা আমগো দিয়া দিলেই হইতো। আমরা তো তোরই বইন।
রিমার কথার মাঠেই হঠাৎ করে রিমার গেলে চর পড়লো। রিমা ঘুরে দেখতে পেলো তাকে থাপ্পড় দেয়া ব্যাক্তিটি সামিরা।রিমা যেই না তেড়ে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি সামিরা বলতে লাগলো,
-বেয়াদব মেয়ে। সাহস তো কম না। জমিদার বাড়ির মালকিনের সাথে তুমি এই ভাষায় কথা বলসো। জমিদার সাফোয়ান চৌধুরীর স্ত্রীর সাথে এভাবে কথা বলছো। জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলবো।যেমন মা তেমন মেয়ে,এখনই এই রুম থেকে বের হয়ে যাও।
সামিরার করা হম্বিতম্ভি দেখে রাহেলা বানু আর রিমা ঠিক তখনি বের হয়ে গেলো। তারা বের হয়ে যেতেই সামিরা চন্দ্রের কাছে গিয়ে বললো,
-ইশ দেখি গলায় পুরা দাগ হয়ে গেছে। ইচ্ছে করছে এখনই গিয়ে সাফোয়ান ভাইকে গিয়ে বলি।
-না না। প্লিজ এরকম করবে না।
-আচ্ছা বলবো না। তবে তুমি আমাকে কথা দিবে এরপর থেকে নিজের সাথে অন্যায় হতে দেখলে প্রতিবাদ করবে। এখন তুমি শুধু চন্দ্র নও। তুমি এখন মিসেস চন্দ্র সাফোয়ান চৌধুরী। সিংহীর মতো তোমাকে হতে হবে। যেন কেউ তোমাকে আঘাত করার সাহস না পায়।
-জি আপু।এরপর থেকে আর কখনো এমন হবে না।
-ইশ সবাই এখন দেখতে আসবে।গলা চেপে ধরার দাগটাও বাজে দেখাচ্ছে। দাঁড়াও আমি কনসিলার দিয়ে দাগটা কভার করে দিচ্ছি।
এই বলে সামিরা ধীরে ধীরে চন্দ্রর গলায় হওয়া দাগটা ঢাকতে লাগলো। তবে এতক্ষণ যাবৎ এই ঘরে হওয়া ঘটনা গুলো আরো একজন ব্যাক্তি দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে। সামিরা চন্দ্রকে নিয়ে রুম থেকে বের হওয়ার আগেই সেই ব্যাক্তিটি দরজা থেকে সরে গেলো।
চলবে…….
( প্রিয় পাঠকগণ,আপনাদের প্রতি আমি সত্যিই অনেক কৃতজ্ঞ আমার গল্পটিকে এত পছন্দ করার জন্য আর এতো ভালোবাসা দেয়ার জন্য । আমি এতদিন ঢাকার বাহিরে ছিলাম। তাই গল্প পোস্ট করতে পারিনি। তার জন্য আমি দুঃখিত।এখন থেকে যথারীতি গল্প পোস্ট করা হবে। ধন্যবাদ )
পরবর্তী সকল পর্বই আমার আইডিতে পোস্ট করা হবে। যারা আইডি ফলো না করে গল্প পড়ছেন,তারা আইডি ফলো করে রাখুন।তাহলে পরবর্তী পর্ব পোস্ট করার সাথেই নোটিফিকেশন পেয়ে যাবেন। না হলে পরবর্তী পর্ব মিস হতে পারে।
আইডি ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন:
👉 শহরツ নিস্তব্ধ