#চন্দ্রকলা
#লামিয়া_ইসলাম
#পর্ব_৯
সাহিলকে একটা গাছের নিচে শোয়ানো হয়েছে। কালো শাড়ী পড়া মেয়েটি তার উপর ছাগলের রক্ত ছিটিয়ে দিলো। তারপর তার চারপাশে আগুন জ্বালিয়ে মনে মনে কি সব মন্ত্র পড়তে লাগলো।
——————–
-ও মা। আমার তেলের বোতলটা কই? মাথায় একটু তেল দিতাম। চুলগুলা রুক্ষ হয়ে গেছে।
-এই নে ধর। তয় এখন আর ওতো সাজন দিয়া কি হইবো পুরা এলাকার মানুষ জানে যে তোর গায়ে যে কলঙ্ক লাইগ্গা গেছে। তাই এত রূপ দিয়াই আর লাভ টা কি?
-মা এইসব কি কও। আমার লগে কিচ্ছু হয় নাই।
-হায় রে মা। তোর লগে রাতের আঁধারে কিছু না হইলে কি আর সেইটা এলাকার মানুষ বিশ্বাস করবো। সবাই জানে তুই এখন কলঙ্কিনী।
-মা তয় আমার অহন কি হইবো।
-আমি ওই বাড়ির ঘটক মঈনুদ্দিন এর লগে কথা কইসি। পোলায় পাশের গ্রামের মহাজন।ওই কইসে একটা সম্মন্ধ আছে। তয় পোলার কিছু সমেস্যা আছে।
-কি সমস্যা মা?
-পোলার বয়সটা একটু বেশি। ওই ৫০ আরকি। আর পোলার আগে দুইটা বৌ আছে আর পাঁচটা মাইয়াও আছে। আগের বৌ গো পোলা হয়না দেইক্ষা অহন আরেকটা বিয়ে করবার চায়।
-মা এইসব কি কও? এত বুড়া বেডারে আমি বিয়ে করতাম না।
-আরে মা রাজি হইয়া যা। তোর নামে যা কথা রটছে গ্রামে তোর আর ভালো কোথাও বিয়ে হইবো না। হের চাইতে এইহানে বিয়ে করে। তুই হইবো হেই পোলার আদরের বৌ। যে হ্যারে পোলা দিবো। তোরে রাখবো মাথায় কইররা। আর যদি কোনো মতে একটা পোলা হইয়া যায় তাইলে তো তুই রানী হইয়া যাইবি। ওই বড়ো দুই বউরে পায়ের নিচে ফালাই রাখবি। তখন সব ধন সম্পদ তোর আর তোর পোলার হইবো। আর পোলার বয়স একটু বেশি তো কি হইসে বয়স দিয়া কি ধুইয়া পানি খাবি।
-হেই কথা টা তুমি ঠিকি কইসো। ধন সম্পদই সব এহনকার যুগে।তাইলে মা তুমি হেগো লগে কথা কইয়া যত তাড়াতাড়ি পারো বিয়ার ব্যবস্থা করো।
– মা এই ভুল আর করবা না। লোভ কইরা চন্দ্র আপারে বিয়ে দিতে গেছিলা। কিন্তু অহন দেখসো চন্দ্র আপা কত সুখী আছে। আর তোমাগো লোভ আর হিংসার কারণেই তোমাগো এই অবস্থা অহন। তাই সময় থাকতে শুধরাইয়া যাও।
অনিমার বলা কথাগুলো শুনেই রিমার মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেলো তাই সে দৌড়ে এসে অনিমাকে চুলের মুঠি ধরে মারতে লাগলো। রাহেলা বানু রিমাকে না থামিয়ে উল্টো আরো তাকে উৎসাহ দিতে লাগলো।
-দে দে ওরে ধইরা আরো মাইর দে। ওর মতো মাইয়া আমার পেডে কেমনে হইলো আল্লাহই জানে। সারা দিন খালি চন্দ্র চন্দ্র। যেন ও চন্দ্রর বান্দী।
-হয় তাও ভালো। তোমাগো মতো লোভী আর স্বার্থপর মানুষের কাছে থাকার চাইতে চন্দ্র আপার বান্দিগিরি করা অনেক ভালো।
-রিমা ওরে ধৈররা বাইরে ছুঁইররা ফেল। আমার ঘরে ওর কোনো জায়গা নাই।
বেশ কিছুক্ষন নির্মমভাবে আঘাত করে পরে রিমা অনিমাকে শরীরে অজস্র আঘাত করা অবস্থায় বাহিরে ফেলে রেখেই ঘরের দরজা দিলো। অনিমার অনেক অনুনয়ের পরেও সে দরজা খুললো না। অনিমা মনের দুঃখে কষ্টে চিন্তা করলো সে আত্মহত্যা করবে তাই সে তাঁদের বাড়ির থেকে দক্ষিণ দিকের জঙ্গলে গেলো। সে একটা বড়ো গাছ দেখে যেইনা সে শাড়ি খুলে সেই গেছে ফাঁস দিতে যাবে হঠাৎই তার কিছু দূরে আকাশের দিকে নজর গেলো। সে মনে করলো হইতো জঙ্গলে আগুন লেগেছে। তাই সে আত্মহত্যার চিন্তা বাদ দিয়ে দৌড়ে গ্রামের দিকে গেলো লোকজন ডেকে আনতে আগুন নেভানোর জন্য।
সন্ধ্যা হতে চলেছে কিন্তু এখনো সাহিল বাড়ি ফিরেনি। তাই শিরিন বেগম ও আমিনা বেগম অনেক চিন্তায় আছে। সাহিলের ফোন ও বন্ধ দেখাচ্ছে। তাই আমেনা বেগম সাফোয়ানকে খবর দিল সাহিল কোথায় আছে তা জানানোর জন্য। সাহিল এখনো বাড়ি ফিরেনি শুনে সাফোয়ান কপালেও চিন্তা ছাপ দেখা গেলো। সেও তার লোকদের পুরো এলাকায় ছড়িয়ে দিলো। সাহিল কোথায় আছে তা খুঁজে বের করার জন্য।
গ্রামে গিয়ে চিৎকার করে দশ মিনিটের ভিতরে বেশ কিছু লোকজন নিয়ে জঙ্গলে এলো কিন্তু ততক্ষণে আগুন অনেক দূর ছড়িয়ে গেছে। কিন্তু পাশে একটি ডোবা থাকায় সেই ডোবা থেকে পানি এনে গাছে চারপাশের আগুন নেভানো হয়ে সম্ভব হয়েছে। আগুন নেভাতে দেখা গেল ভিতরে কেউ অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। সবাই তার কাছে গিয়ে দেখল মানুষটি সাহিল চৌধুরী। অনিমা তাকে দেখে চিনতে পারল তাই সে বাকি লোকদের বলল তাকে জমিদার বাড়িতে নিয়ে যেতে। সাথে সাথে সে যেতে লাগলো তাদের সাথে জমিদার বাড়িতে।
বাড়িতে নেই শুনে সাফোয়ান তার লোকদের সাহিলকে খুঁজতে ঠিকই পাঠিয়েছে কিন্তু সেও নিশ্চিন্তায় বাড়িতে বসে থাকতে পারলো না। তাই সেও যেই না বাড়ি থেকে বের হবে। ঠিকই তখনি অনিমা সহ বেশ কিছু লোক মিলে সাহিলকে অচেতন অবস্থায় বাড়িতে নিয়ে এলো। সাহিলকে কে অচেতন অবস্থায় দেখে বাড়ির সবার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। সামিরা সাথে সাথে সাহিলের পালস চেক করতে লাগলো। চেক করা শেষ হতেই সে বলতো লাগলো,
-চিন্তার কিছু নাই। ও ঠিক আছে। কিন্তু ওকে হইতো কেউ অজ্ঞান করানোর জন্য কোনো জড়িবুটি দিয়েছে। তাই কাল সকালের আগে ওর জ্ঞান ফিরবে বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু ওর এই অবস্থা কে করলো?
-আমরা তো কিছুই জানি না। আমাদের তো অনিমাই ডেকে নিয়ে গেলো জঙ্গলে আগুন লেগেছে বলে। আগুন নিভাতেই দেখি সেখানে ছোট জমিদার সাহেব পরে আছে। তারপরই তো তাকে এখানে নিয়ে এলাম।
সাফোয়ান তাঁদের কথা শুনে বুঝতে পারল যে কোন একটা ঝামেলা হয়তো হয়েছে। তাই সে আর পরিবারের কারো কাছে প্রকাশ করতে চাইলো না। তাই শুধু অনিমা বাদে সে সবাইকে বলল,
– আপনাদের খবর ধন্যবাদ। আমাদের এত বড় উপকার করার জন্য।
তার কথা শুনে ধীরে ধীরে সবাই চলে যেতে লাগলো। সবাই চলে যেতেই ওর চন্দ্র অনিমাকে জিজ্ঞেস করল,
– তুই জঙ্গলে কি করছিলি আর তোর শরীরে এত মারার দাগ কেন কে তোকে মেরেছে?
তখন অনিমা আস্তে আস্তে তার বাড়িতে ঘটা ব্যাপার এবং জঙ্গলে ঘটা ব্যাপার গুলো সবগুলোই বলল। তাদের সাথে তার আত্মহত্যার চেষ্টা করার ব্যাপারটা এড়িয়ে গেল। অনিমা কথা শুনে জমিদার বাড়ির সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল অনিমাকে আর তার বাড়িতে পাঠানো হবেনা। এখন থেকে অনিমা এখানেই থাকবে। চন্দ্র আর সাফোয়ানও তাঁদের কথায় সায় দিলো।
———–
সাব ইন্সপেক্টর আরিফের গ্রামে ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হলো। ইন্সপেক্টর আসাদের বাসায় গেল। আসাদ তাকে এত রাতে নিজের বাসায় দেখে বেশ অবাক হয়ে গেল। সে তাকে বাসার ভিতরে এনে তাকে বসতে দিয়ে বললো,
– স্যার জমিদার বাড়ির ব্যাপারে বেশ কিছু তথ্য আমার চাচার থেকে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। যা আপনাকে জানানো খুবই প্রয়োজন।
-কি জানতে পেরেছো?
– স্যার ২০ বছর আগে আমার চাচা যখন জমিদার বাড়ির বাগানে কাজ করতো। তখন একদিন খুব গভীর রাতে তাকে ডেকে নেওয়া হয় জমিদার বাড়িতে।
-তাকে সেখানে ডেকে নিয়ে জমিদার বাড়ির বাগানে একটি বরং গর্ত খুঁড়তে বলা হয়। তার গর্ত খোঁড়া শেষে সেখানে একটি বস্তা ও একটি বড় লাগেজ নিয়ে আসা হয়। এবং ওই দুটিকেই সেখানে পুতে দিতে বলা হয়। আজ সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য বিষয় কি জানেন স্যার?
-কী?
– যে বস্তাটি নিয়ে আসা হয় তার পুরো গায়ে রক্তে মাখামাখি হয়েছিল। আর তারপরে দিন থেকেই জমিদার বাড়ির একমাত্র কন্যা মধুবালা গায়েব হয়ে যায়। তাকে আর জমিদার বাড়িতে দেখা যায় না। তাকে আমার চাচা নিজের বোনের মতো স্নেহ করতো তাই যখন আমার চাচা তার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে তখন জমিদার বাড়ির লোকজন তাকে বেশ মোটা অংকের টাকা দিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বলে। আর কখনো এই গ্রামে ফিরে আসতে নিষেধ করে। এজন্যই আমার চাচার এত বছর ধরে কখনো গ্রামে আসেনি।
-ওহ তো এই ব্যাপার। এর জন্যই জমিদার পরিবার এত রহস্যময়।
-স্যার তাহলে কালকে কি ওনাদের বাগানতা সার্চ করাবেন।
– আরে না পাগল নাকি। ওনারা আশেপাশে গ্রামের সবচাইতে প্রভাবশালী পরিবার। দেশে রাজনৈতিক দলে পর্যন্ত ওনাদের প্রভাব রয়েছে । আর গ্রামবাসিরা ওনাদের ফেরেস্তা মনে করে। এরকম কিছু করতে গেলে গ্রামবাসীরাই আমাদের উপর তেড়ে আসবে ।
– স্যার এখন কি করবেন?এভাবে তো বসে থাকা চলবে না।
– আমাকে আজকে রাতটা ভাবতে দাও। আমার সিদ্ধান্ত কালকে তোমাকে জানাবো
– ঠিক আছে স্যার।
চলবে…..
পরবর্তী সকল পর্বই আমার আইডিতে পোস্ট করা হবে। যারা আইডি ফলো না করে গল্প পড়ছেন,তারা আইডি ফলো করে রাখুন।তাহলে পরবর্তী পর্ব পোস্ট করার সাথেই নোটিফিকেশন পেয়ে যাবেন। না হলে পরবর্তী পর্ব মিস হতে পারে।
আইডি ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন:
👉 নিস্তব্ধ শহরツ