তোমায়_যবে_পাই_দেখিতে #তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া #পর্ব_১৪

0
351

#তোমায়_যবে_পাই_দেখিতে
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
#পর্ব_১৪
(প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
(স্পেশাল পর্ব)

কল কাটতেই নয়ন এসে ঢুকলো ঘরে। ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে সে। ফোনে কথা বলতে শুনেছে বলেই যে নয়নের এই খুশির কারণ সেটুকু বুঝতে বাকি রইলো না তিয়াসের।
” কী খবর নয়ন মিয়া? এভাবে মিটিমিটি হাসছেন কেনো?”
তিয়াস বিছানায় শুয়ে বললো। নয়নও পাশে বসলো।
” মনে হলো ভাবির সাথে কথা বললে। ”
” হ্যাঁ। তোর ভাবির নাম প্রিয়ন্তি। ”
” সুন্দর নাম। জানো আমার না খুব ইচ্ছে করে তোমার সাথে গিয়ে থাকতে। আমি মাধ্যমিক পাশ করে তোমার সাথে গিয়ে খামারের দেখাশোনা করতে পারি না ভাই? ”
” না নয়ন। আমি নেহাৎ লেখাপড়া করতে পারিনি বলে এই কাজ করছি। আমার যদি তোর মতো বাবা-মা থাকতো তাহলে নিশ্চয়ই লেখাপড়া শেষ করে চাকরির চেষ্টা করতাম। ”
ভাইয়ের কথায় নয়ন চুপ করে রইলো। এ বাড়িতে থাকতে তার ভালো লাগে না। তার মতের সাথে অন্য সদস্যদের মতামত মিলে না কখনো। আগে যা-ও একটু বাবার সাথে মিলতো এখন বাবাও কেমন মায়ের কথায় চলে। নয়নের নিস্তব্ধতা দেখে তিয়াস উঠে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
” শোন নয়ন, জীবনে কিছু পেতে হলে ধৈর্য ধরতে হয়। অপেক্ষাকৃত জিনিসের ফলাফল সুমিষ্ট হয়। তোর যখন ইচ্ছে করবে একটা মিসড কল দিবি আমি তোকে নিতে চলে আসবো। ক’দিন পরে আমি বাড়ি তৈরি করবো ইনশাআল্লাহ। তখন না হয় গিয়ে যতদিন ইচ্ছে থাকবি। এখন একটু হাসি দে তো।”
তিয়াসকে জড়িয়ে ধরে নয়ন। তিয়াস পরম স্নেহে আগলে রাখে ভাইকে। জীবনে যেমন বাবামায়ের ভালোবাসা পায়নি তেমনি ভাই, বোনের ভালোবাসা কখনো পায়নি তিয়াস। নয়নকে বুকে জড়িয়ে ধরায় তাই নিজের অজান্তেই বুক চিড়ে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো তিয়াসের।
এমনিতে বাপ-মেয়ে দুপুরের রান্না করা খাবার রাতে গরম করে খেয়ে নিলেও আজকে রাতে গরম রান্না করেছে প্রিয়ন্তি। বান্ধবীকে তো আপ্যায়ন করতেই হয়। স্নেহা চিংড়ি মাছ ভাজা খুব পছন্দ করে। তাই মাংস, পোলাও এর সাথেও চিংড়ি মাছ ভেজেছে প্রিয়ন্তি। বাসায় মাছ ছিলোনা বলে আর রান্না হয়নি। স্নেহা যদি আগেভাগে বলে আসতো তাহলে সেটাও বাজার করাতো প্রিয়ন্তি। রেজওয়ান বাসায় ফেরে রাত সাড়ে দশটার দিকে। স্নেহা আর প্রিয়ন্তি তার আগেই ডিনার সেড়ে গল্পগুজব করতে ব্যস্ত হয়ে গেছে।
রাতের খাওয়াদাওয়া শেষে ঘরে শুয়ে ছিলো অর্ষা। এতদিন বিয়ে-শাদির বিষয় যথেষ্ট এড়িয়ে গেলেও ইদানীং আর এড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। অর্ষার বাবা-মা খুব করে চাইছেন এ বছরের মধ্যে বিয়ে দিয়ে দিতে। আর দিবেই না কেনো? গ্রামাঞ্চলে মেয়েদের বয়স বিশ হলেই কুড়িতে বুড়ির তকমা পায়,সেখানে অর্ষার তেইশ শেষের পথে। অর্ষার পরিবার গ্রামের মধ্যে ধনী পরিবার হিসেবে পরিচিত বলেই এখনো পর্যন্ত তাদের মেয়েকে নিয়ে কেউ কিছু বলার সাহস পায়নি। কিন্তু তাই বলে যে ভবিষ্যতে বলবে না তার কি গ্যারান্টি?
” অর্ষা কেমন আছিস?”
নানান ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে ছিলো অর্ষা। হঠাৎ পুরুষালি গম্ভীর স্বরে হকচকিয়ে গেলো সে। শোয়া থেকে উঠে বসেছে আগেই। শব্দের উৎস খুঁজতে সামনে তাকাতেই একেবারে চারশো বিশ ভোল্টের একটা শক খেলো। চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে দম নিলো কয়েকবার। তারপর বেহায়া মনকে কিছুক্ষণ বকাঝকা করে চোখ পিটপিট করে সামনে তাকালো। কিন্তু না দৃষ্টিভ্রম নয়,সত্যি এসেছে আবরিশাম। কিন্তু এই রাতে সে কেনো আসবে? তা-ও এত বছর পর! যদিও আসলো কিন্তু তার ঘরেই কেনো এলো এখন? তাকে তো মানুষ হিসেবে ধরেই না আবরিশাম। এতো এতো প্রশ্নের সাগরে যখন সাতার না জানা ডুবুরির মতো হাতড়াচ্ছিল অর্ষা তখনই আবরিশাম দ্বিতীয় বার চমকে দিলো। গুটিগুটি পায়ে এসে সে অর্ষার পাশে বিছানায় বসলো।
” আবু ভাই তুমি? ”
যা-ও মনটা ভালো নিয়ে এসেছিলো কিন্তু আবু ভাই নামটা শুনেই বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে ফেললো আবরিশাম।
” আমাকে ভাই বলে ডাকবি না আর। আর আবু বলেও না। ”
” তাহলে কী বলবো! আর এখন কীভাবে এলে তুমি? তা-ও হঠাৎ! ”
” থাম,একটা একটা করে উত্তর দিচ্ছি। ”
অর্ষার ফোলা ফোলা ঠোঁটে হালকা রঙের লিপস্টিক আবরিশামের নজর কেড়েছে। কাজল দিলে যে শ্যামলা মেয়েদেরও এতো মোহনীয় লাগে আগে তো খেয়াল করেনি সে! অর্ষার চুলগুলো আর পাঁচটা মেয়ের মতো সোজা, সিল্কি না। কোঁকড়া চুলের অধিকারী হলেও চুলগুলো একেবারে কোমর অব্দি নেমে গেছে। আবরিশাম যখন অর্ষাকে আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করছিলো তখনই অর্ষা কেশে উঠে। ভাবনার ছেদ ঘটে আবরিশামের। মেয়েটার ঠান্ডা লেগেছে বলে মনটা কেমন উতলা হয়ে গেলো তার।
” আবরিশাম বলে ডাকিস। আর এসেছি তো গাড়ি চালিয়ে। হঠাৎ এলাম দরকার আছে তাই। এখন তুই বল তো ঠান্ডা লাগালি কীভাবে? ”

অর্ষা হতবিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আবরিশামের দিকে। এই লোকের আজ কী হলো! সেই কলেজ জীবন থেকে আবরিশামের প্রেমে ডুবে আছে অর্ষা। কেবল প্রেমে পড়ে চুপ থাকেনি সে মনের কথা বারবার বলেছে আবরিশামকে। ফলশ্রুতিতে আগে যতটা কথা বলতো তা-ও বন্ধ করে দিয়েছিলো লোকটা। আর মাঝখানে তো এ বাড়িতে আসাই বন্ধ করেছে। তাহলে আজ হঠাৎ এভাবে কথা বলছে কেনো? তাহলে কি তার মন পরিবর্তন হয়েছে! শেষের কথাটা ভাবতেই চনমনে হয়ে উঠলো অর্ষার মন। অর্ষা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। একজন মানুষকে হালাল করে চাওয়া পাপ কি-না জানে না সে কিন্তু প্রতিদিন পাঁচবার সে স্বামী হিসেবে চেয়েছে আবরিশামকে। আবরিশামকে পাওয়ার একটা সুযোগও সে হারাতে চায়না। সব মেয়েদের তো আত্মসম্মান থাকে না, কিছু কিছু মেয়ে সবকিছু বিসর্জন দিয়ে ভালোবাসে।
” এই অর্ষা! এভাবে তাকিয়ে না থেকে যা জিজ্ঞেস করলাম সেটা বল।”
” এমনি ঠান্ডা লেগেছে। কাশির ঔষধ খাচ্ছি, সেড়ে যাবে। বাবা-মা দেখেছে তোমাকে? ”
আবরিশাম মুচকি হেসে মাথায় গাট্টা মেরে বললো,
” না দেখলে দরজা খুললো কে গাধী? তোর গুনধর ভাই, বোন তো ঘুমিয়ে গেছে। ”
অর্ষারা তিন ভাই-বোন। অর্ষা বড়ো তারপর হিমেল আর ছোটো বর্ষা।
” তোমাদের মতো তো শহরে থাকি না আমরা। গ্রামে রাত এগোরাটা মানে অনেক রাত।”
” বুঝলাম। আমি শুতে গেলাম কাল কথা হবে। ”
আবরিশাম অর্ষাকে আরকিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গটগট করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। এ বাড়িতে থাকার ঘরের অভাব নেই। আবরিশামের মামা-মামী এক ঘরে আর তিন ছেলেমেয়ে আলাদা তিন ঘরে শোয়। অর্ষা দপ করে শুয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। কী হচ্ছে বেঝার চেষ্টা করছে। আর ভাবনায় ঘুম আসবে না তার দু’চক্ষে।

গভীর রাত! নিশাচর প্রানীর আওয়াজ ছাড়া কোনো টুঁশব্দ নেই কোথাও। কুয়াশায় ছেয়ে গেছে গোটা গ্রাম। গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে ঘরের সবাই। হঠাৎ কারো কান্নার আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলো তিয়াসের। ঘুম ঘুম চোখে বিছানা ছেড়ে উঠলো তিয়াস। চোখে হাত দিয়ে ঘষে ঘুম তাড়ানোর চেষ্টা করে দরজার দিকে এগোলো। এতো রাতে মাধবী কাঁদছে কেনো ভাবতেই বুকটা ধক করে উঠলো। মামা-মামী ঠিক আছে তো? না আর এক মুহুর্ত দেরি করলো না তিয়াস। দ্রুত দরজা খুলে বাইরে দৃষ্টিপাত করলো। পরিস্থিতি বোঝার আগেই মাধবী কান্না জড়িত কন্ঠে জড়িয়ে ধরলো তিয়াসকে। তিয়াস ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে গেছে। কিছু বোঝার আগেই মাধবী তিয়াসকে ধাক্কা দিয়ে ঘরের ভেতর নিয়ে দরজা আঁটকে দিলো। তিয়াস বিস্ময় চোখে তাকিয়ে আছে মাধবীর দিকে। মাধবীর চোখের পানিতে তখনও ভীত তিয়াস।
” মাধবী কী হয়েছে তোর? সবাই ঠিক আছে তো?”
” সবাই ঠিক আছে শুধু আমি ঠিক নেই। ”
মাধবীর হেয়ালি বোঝে না তিয়াস। তার নিজের মামাতো বোন যে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে সেটা ভাবনায় আনতেও পারেনি সে। তিয়াসের আর কিছু বলার অপেক্ষা না করে নিজের ওড়না মাটিতে ফেলে জামার গলা বরাবর টান দিলো মাধবী। সহসাই দেখা গেলো মাধবীর কামিজের নিচের অন্য একটা অন্তর্বাস। তিয়াস এতক্ষণে মাধবীর কুটিলতা বুঝতে পেরে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে ফেলে। রাগে থরথর করে কাঁপছে তিয়াসের সমস্ত শরীর। মানুষ এতটা নিচ মনের কীভাবে হতে পারে? শেষমেশ তার মামাও? রাগে,ঘৃণায় মস্তিষ্কে যেনো রক্ত উঠে গেছে তিয়াসের।
” মাধবী এই মুহুর্তে তুই ঘর থেকে বেরিয়ে যা নইলে ভালো হবে না। ”
” বাবা! মা! কে আছো বাঁচাও! আমাকে শেষ করে দিলো!”
মাধবীর চিৎকার করতে যতটুকু সময় লাগলো নিতুর লোকজন নিয়ে দরজা ভাঙতে ততটা সময় লাগেনি। মনে হচ্ছে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো দলবদ্ধ হয়ে। তিয়াস ভাবতেও পারছে না কী ঘটে যাচ্ছে। এই সর্বনাশে পড়তেই কি এসেছিলো এখানে? হঠাৎ করে প্রিয়ন্তির চেহারাটা ভেসে উঠলো তিয়াসের চোখের সামনে। নিতু ঘরে ঢুকেই মেয়ের গায়ে ওড়না জড়িয়ে দিলো। বাকি লোকজন তিয়াসের দিকে ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

সকাল হতেই গ্রামের আরো লোকজন জমা হয়েছে জসিমের বাড়িতে। সবার মুখে মুখে কেলেংকারীর খবর রটিয়ে গেছে গ্রামের সর্বত্র। ফাঁসির আসামির মতো উঠানের এক কোণায় বসে আছে তিয়াস। আশেপাশে অনেক লোকজন। একপাশে দাঁড়িয়ে আছে নিতু ও মাধবী। শালিস ডাকা হয়েছে। সকলেই জানে শালিসির ফলাফল বিয়ে। তিয়াস জানে এই নরপশুগুলো ছাড়বে না তাকে। কিন্তু তার পক্ষে অন্য কাউকে বিয়ে করার চেয়ে আত্মহত্যা বেশি ভালো। ফোনটা পর্যন্ত নেই সাথে তার। প্রিয়ন্তিকে যে কিছু জানাবে তা-ও পারেনি।
” মাধবীর মা তুমি কি চাও বলো? আর মাধুবী কী চাও?”
চেয়ারম্যান আবদুল মান্নানের কথায় মাধুবী মেকি কান্নায় ভেঙে পড়ে। এমন ভাব করছে যেনো লজ্জায় মরে যাবে। নিতু মুখ মলিন রেখেই বললো,
” আমার মেয়ের সম্মান তো ফেরত পাবো না আর কোনো ছেলে ওকে বিয়ে করবে না। তাই যার জন্য এই পরিণতি তাকেই বিয়ে করতে হবে মাধবীকে।”
” ঠিক আছে। তাহলে তাই হবে। আজকে রাতেই ওদের বিয়ে দিয়ে দাও।”
” আমি বিয়ে করবোনা। প্রয়োজনে জেলে যাবো।”
” এই ছেলে এই গ্রামের ঝামেলা থানায় যায় না। সবকিছুর সমাধান আমিই করি।”
” আপনি কেমন চেয়ারম্যান? একপক্ষের কথা শুনেই বিচার করলেন! ”
” একটা মেয়ে নিশ্চয়ই তার ইজ্জত নিয়ে মিথ্যা বলবে না?”
” হ্যাঁ বলেছে। আমি ভাবতেও পারছি না আমার আপন মামা-মামী আমাকে এভাবে ফাঁসালো!”
নিতু ফুঁসছে। চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান হাত তুলে ইশারা করতেই ক’জন লোক তিয়াসকে নিয়ে অন্য পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। অযথা কথাবার্তা পছন্দ করেন না চেয়ারম্যান সাহেব। নিতুর মনের ইচ্ছে অবশেষে পূর্ণ হবে। ছোটো থেকে খাইয়ে দাইয়ে বড়ো করেছে। এখন তার এতো টাকা পয়সা,সেই টাকা অন্য কোনো মেয়ে কেনো ভোগ করবে? নিতু জানতো তিয়াস কোনোভাবেই মাধবীকে বিয়ে করতোনা। তাই এই কুৎসিত পরিকল্পনা করে। উৎসুক জনতাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে এলো এক যুবক। সাথে একটি মেয়ে। চেয়ারম্যানের পাশে বসা গ্রামের অন্যতম ধনী ব্যক্তি বেল্লাল হোসেন।
” কী রে তোরা এখানে এসেছিস কেনো? ”
বেল্লাল হোসেনের কথায় যুবতীটি চুপ করে থাকলেও যুবকটি মুখ খোলে।
” মামা আমি একটু তিয়াসের সাথে কথা বলতে চাই। ”
অচেনা লোকের সাথে আবরিশামের কীসের কথা বুঝতে পারছে না বেল্লাল হোসেন। অর্ষাও আগামাথা কিছুই বুঝতে পারেনি। সকাল সকাল ঘরের বাইরে নামতেই তিয়াস আর মাধবীর নামে রটনা শোনে আবরিশাম। প্রিয়ন্তির মুখে অনেকবার তিয়াস নামটা শুনেছে বলেই একবার ঘটনাটা দেখবে বলে ভেবেছিলো সে। এতক্ষণ সবকিছু শুনেও চুপ ছিলো কিন্তু এখন মনে হচ্ছে একবার তিয়াস নামক ছেলেটার সাথে কথা বলা দরকার। বেল্লাল হোসেন ইশারা করতেই সেই লোকগুলো তিয়াসকে আবরিশামের সামনে নিয়ে এলো। আবরিশাম কোনো প্রকার ভূমিকা না করে সরাসরি প্রশ্ন করলো।
” আপনি কি প্রিয়ন্তিকে চেনেন? ”
এই পরিস্থিতিতেও হঠাৎ অন্য কারো মুখে প্রিয়ন্তির নাম শুনে চমকালো তিয়াস। চোখেমুখে কৌতুহল তার। কিন্তু এখন এসবের সময় নেই।
” হ্যাঁ। প্রিয়ন্তি আমার হবু স্ত্রী’র নাম। আপনি কীভাবে চেনেন ওকে?”
” আমি আবরিশাম। ”
” আপনি! এখানে? ”
আবরিশাম তিয়াসের সাথে আর কথা বলে সময় নষ্ট করতে চাইলো না। দ্রুত পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে কল দিয়ে আসতে বললো। বেল্লাল হোসেন আবরিশামের মতিগতি কিছু বুঝতে পারছে না। অর্ষা একবার আবরিশামের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার তিয়াসের দিকে।
” আবু ভাই কী করছো বলো তো?”
অর্ষার দিকে চোখ বড়সড় করে তাকিয়ে আছে আবরিশাম। দাঁতে দাঁত খিঁচিয়ে নিচু কন্ঠে বললো,
” যা করছি দেখতে পাবি কিন্তু আর একবার যদি ওসব বলে ডাকিস তাহলে এখানে দাঁড়িয়ে তোকে গাট্টা মারবো।”
আবরিশামের কথায় চুপসে গেলো অর্ষা। তিয়াসের কেনো জানি মনে হচ্ছে আবরিশামই তার শেষ ভরসা।
মিনিট ত্রিশের মধ্যে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে হাজির হয়েছে। চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান এতে ভীষণ রেগে গেছে আবরিশামের উপর। বেল্লাল হোসেন ভাগ্নের কর্মকাণ্ডে নির্বাক। কিছু বলতেও পারছে না। একে তো বোনের ছেলে তার উপর গতকাল রাতেই অর্ষাকে বিয়ে করার জন্য হাতেপায়ে ধরতে শুধু বাকি রেখেছিলো। শেষমেশ হ্যাঁ বলেছিলেন বেল্লাল হোসেন। পুলিশ দেখে তিয়াস যেনো প্রাণ ফিরে পেয়েছে। প্রয়োজনে জেল হোক তবুও তো সারাজীবনের জন্য বিয়ে নামক শাস্তি পেতে হবে না।
” স্যার আমি ডেকেছি। আমি আবরিশাম। এখানে সম্ভবত একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। ”
পুলিশ কর্মকর্তা ফজলুল ঘটনার সারমর্ম নিতুর মুখ থেকে শুনলো। সবকিছু শুনে তিনি বললেন,
” ঠিক আছে যেহেতু ছেলে স্বীকার করছে না,সেহেতু আপনারা আপনাদের মেয়ের একটা মেডিকেল টেস্ট করান। তাতে ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া যাবে। তখন অনায়াসে আমরা ওকে শাস্তি দিতে পারবো। ”
মেডিকেল টেস্টের কথা শুনতেই আঁতকে ওঠে নিতু ও মাধবী। অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত তিয়াসের পায়ে পড়ে মাধবী। উপস্থিত সবাই হঠাৎ মাধবীর এমন আচরণে অবাক হয়। আবরিশামের ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটেছে।
” তিয়াস ভাই তুমি আমাকে মাফ করো। মায়ের কথামতো লোভের বশে এসব করেছি। এখন তুমি যদি না রক্ষা করো জেলের ভাত খেতে হবে আমাদের। ”
গ্রামের সবাই মাধবী ও তার মায়ের কুকর্মের কথা শুনে মুহুর্তেই কানাকানি শুরু করে দিয়েছে। চেয়ারম্যান আবদুল মান্নানও চমকে গেছেন। জেদের বশে অন্যায় বিচার করে এসেছে এতদিন সে। আজ আবরিশাম এসে চোখ খুলে দিয়েছে তার। আধুনিক আইন ব্যবস্থা ব্যাতীত অন্য কোনো বিচার ব্যবস্থা দিয়ে বিচার করা মোটেও ঠিক না। তিয়াস কথ বলছে না মাধবীর সাথে। এতকিছুর মধ্যে জসিম কোথাও ছিলোনা। রাত থেকেই নিজের ঘরে ছিলো সে। হঠাৎ শোরগোলের আওয়াজে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছেন তিনি। ঘটনার সারমর্ম বুঝতে পেরে বুকের উপর থেকে যেনো তার পাথর সরে গেছে। ভদ্রলোক না পারছিলেন স্ত্রীকে থামাতে আর না পারছিলেন সবকিছু মেনে নিতে। তিয়াসকে চুপ করে থাকতে দেখে নিতুও গিয়ে মাটিতে বসেছে।
” বাবা তুমি আমাদের বাঁচাও, আমি আজীবনে আর কখনো কোনো কুবুদ্ধি মাথায় আনবো না।”
পুলিশ কর্মকর্তা ফজলুল কিছুটা রেগে গিয়ে বলে,
” সরকার মেয়েদের জন্য আইনী শক্তি বেশি কার্যকর করেছে বলে সেই শক্তির অপব্যবহার করতে বলেনি। আপনাদের মতো মানুষের শাস্তি হওয়া দরকার। মি.তিয়াস আপনি কি চান উনাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে?”
” না অফিসার। আমি শুধু আজীবনের জন্য এই গ্রাম ত্যাগ করতে চাই। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। ”
তিয়াসের কথায় যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো মা-মেয়ে। ফজলুল চলে গেছে। আবরিশাম আর অর্ষা আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে। চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বসে আছে চুপচাপ।
চলবে,

কেমন লেগেছে জানাবেন কিন্তু।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here