#তোমায়_যবে_পাই_দেখিতে
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
#পর্ব_১৫
(প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
তিয়াসের কথায় যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো মা-মেয়ে। ফজলুল চলে গেছে। আবরিশাম আর অর্ষা আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে। চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বসে আছে চুপচাপ। লোকটা বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে। গ্রামের সবাই নিশ্চয়ই আগের মতো চোখ বন্ধ করে তার বিচারের উপর আর ভরসা করবে না। তবুও তিনি ভুল স্বীকার করতে পিছপা হবেন না। আবদুল মান্নান বসা থেকে উঠে আবরিশামের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে তাকে আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করছে। বেল্লাল হোসেনও বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
” তুমি বেল্লাল হোসেনের বোনের ছেলে? ”
গম্ভীর স্বরে শুধালেন চেয়ারম্যান সাহেব। আবরিশাম ভাবলেশহীন বলে,
” হ্যাঁ। ”
” বেশ! আমার ভুল হয়েছিল বুঝতে পেরেছি। আশা করি সবাই আমার ভুলকে অন্যায় হিসেবে নিবেন না। আমি জেনে-বুঝে এসব করিনি।”
গ্রামের অধিকাংশ মানুষ চেয়ারম্যানের কথায় সাড়া দিলো। তিয়াস ইশারায় নয়নকে কাছে ডেকে ওর ব্যাগ আর ফোনটা আনতে পাঠিয়েছে। ছেলেটা এতক্ষণ উঠোনের এক পাশে দাঁড়িয়ে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছিলো। তিয়াস ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো আবরিশামের কাছে। সামনে এসে দাঁড়াতেই আবরিশাম স্মিত হেসে বললো,
” ধন্যবাদ দিতে হবে না। বয়সে তুমি নিশ্চয়ই আমার ছোটো হবে, এজন্য তুমি করে সম্মোধন করলাম। ”
” ধন্যবাদ দিবো না কারণ সামান্য এই শব্দ আপনার উপকারের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য যথেষ্ট নয়। আপনার মতো ভালো মানুষ আমি জীবনে কম দেখেছি ভাই। যদিও আমাদের সম্পর্ক একটু জটিল কিন্তু আমি সেরকম ভাবি না।”
” প্রিয়ন্তিকে খুব বেশি ভালোবাসো বলেই জটিলতাকে ভুলে আন্তরিকতা জ্ঞাপন করতে পেরেছো তুমি। আমি হলে নির্ঘাত জেলাসি থেকে খারাপ ব্যবহার করতাম। ”
তিয়াস হাসলো। অর্ষা বোকার মতো দু’জনের কথোপকথনের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু কিছু বুঝতে পারছে না। অর্ষা যে আবরিশামের উপর দূর্বল এটা ওর বাবা-মা জানে তাই আবরিশামের বিয়ের বিষয়টা কখনো জানতে দেয়নি অর্ষাকে। এজন্যই প্রিয়ন্তি নামটা একেবারে নতুন তার কাছে।
” আপনি যে উপকার করেছেন ভাই এরপরে কেউ কীভাবে খারাপ আচরণ করতে পারে? তাছাড়া জেলাসির প্রশ্নই আসে না। একসাথে থাকলেও প্রিয়ন্তির মনের এক পার্সেন্ট জুড়েও আপনি নেই। যদি মনের এক পার্সেন্টেও আপনি থাকতেন তাহলে নিশ্চয়ই জেলাস হতাম। শরীর হলো গঙ্গার জলের মতো। গঙ্গায় তো কত-শত ময়লা প্রতিদিন ভেসে যায়। তাই বলে গঙ্গা নদীর পানি কখনো অপবিত্র হয়? সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তো তবুও সেই পানি পবিত্র মনে করে। ”
আবরিশাম তিয়াসের কাঁধে হাত রাখে।
” বয়স কম হলেও তোমার বোঝার ক্ষমতা প্রখর। আর ভালোবাসাও শক্তপোক্ত। দোয়া করি সুখী হও মিনি প্যাকেটকে নিয়ে। মেয়েটা আমার খুব ছোটো ছিলে বলে মিনি প্যাকেট বলে ডাকতাম। ”
আবরিশামের কথায় তিয়াস হেসে উঠলো সাথে আবরিশাম নিজেও।
রেজওয়ান আজ সকালে একশো একটা সাদা গোলাপ রেখে এসেছে তিয়াসের বাড়ির সামনে। সকালবেলা অর্পা হাঁটতে বের হয় সেটা জেনেই রেজওয়ানের এই কান্ড। আজকেও হাঁটতে বের হয়েছিল। তখনই নজরে পড়ে এতগুলো শুভ্র গোলাপ। মিনিট পাঁচেক সময় লাগে তার বুঝতে। সাদা রঙের গোলাপ যে তার প্রিয় এটা রেজওয়ান ও প্রিয়ন্তি ছাড়া আর কারো জানার কথা না। তবুও ফুলগুলো নেয়নি সে। সবকিছুই দূর থেকে দেখছিলো রেজওয়ান। অর্পা ফুলগুলো না নেওয়াতে সেগুলো নিয়ে রাস্তার পাশে খেলাধুলা করা কিছু ছেলেমেয়েদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে দেয়।
সকাল হয়েছে সেই কখন! ঘড়ির কাঁটার দিকে বারবার তাকিয়ে সময় দেখছে প্রিয়ন্তি। বেলা বারোটা বেজে গেছে এরমধ্যেই। যদিও এতো তাড়াতাড়ি পৌঁছানোর কথা নয় তিয়াসের কিন্তু ফোনে কী হয়েছে? এতো বার কল দিয়েও কেউ রিসিভ করেনি। রীতিমতো চিন্তায় হাতপা ঠান্ডা হয়ে গেছে প্রিয়ন্তির। বান্ধবীর এরকম দুঃশ্চিন্তা করা দেখে স্নেহাও যেতে পারেনি। প্রিয়ন্তির মা কল দিয়েছিলো দশটার দিকে। বিকেলে একসাথে ঘুরতে যাবে বলে ঠিক করেছিলো দু’জন। তিয়াসের আসার অপেক্ষা শুধু। কিন্তু ঘুরতে যাওয়ার চিন্তা এখন শেষ। মানুষটা ভালোভাবে ফিরলে বাঁচে প্রিয়ন্তি।
” কী হয়েছে বল তো স্নেহা! তিয়াস ঠিক আছে তো? সকাল থেকে যা-ও কল ঢুকছিল এখন আবার সুইচঅফ বলছে তো।”
স্নেহা ঘরে পায়চারি করছিলো। প্রিয়ন্তি এতক্ষণ গেটের কাছে ছিলো তিয়াস আসলো কি-না দেখতে।
” কী করে বলি বল তো! তুই যেখানে আমিও তো সেখানেই। হয়তো চার্জ নেই। ”
” সকাল থেকে তো কল গেলো তখন কেনো রিসিভ করলোনা? ”
” এটাই ভাবছি।”
গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে আবরিশাম ও অর্ষা। গ্রাম ঘুরতে বের হওয়ার কথা ছিলো সকালে কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলার জন্য দেরি হয়ে গেছে। তবুও এই দুপুরের কড়া রোদের মধ্যে হাঁটছে দু’জন।
” আবু ভাই? ”
” আবার? আবরিশাম বলে ডাকলে কি তোর সমস্যা? ”
অর্ষা জিহ্বায় কামড়ে ধরে। বারবার কেনো এক ভুল হয়?
” আর হবে না। যাইহোক, তখন তোমার আর ওই ভাইয়ের মধ্যে কাকে নিয়ে আর কী নিয়ে কথা হলো কিছুই তো বুঝতে পারলাম না আমি। ”
আবরিশাম থমকে দাঁড়ালো। অর্ষার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো মজা করেছে কি-না। কিন্তু না ওর ভোলা ভালা চেহারায় কোনো মজার লক্ষ্যণ দেখতে পাচ্ছে না। তাহলে কি বিয়ের বিষয় সত্যি জানে না অর্ষা? কিন্তু বিয়ের পরে যে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল সেখানে তো সবাইকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিলো।
” তুই সত্যি জানিস না কিছু? ”
” না তো। কী হয়েছে বলো না।”
আবরিশাম হুট করে অর্ষার হাত ধরে সামনে এগোতে লাগলো। অর্ষা কিছুটা চমকে উঠেছে। আবরিশাম কিছুটা সামনে গিয়ে পথের পাশের একটা গাছের শিকড়ে বসলো। অর্ষাকেও বসতে হলো পাশে। হঠাৎ করে তার আবু ভাইয়ের কী হলো বোধগম্য হচ্ছে না অর্ষার।
” মন খারাপ করবি না। যা ঘটেছিলো সেটা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত ঘটনা। আসমান ভাইয়ের নাম তো শুনেছিস তাই না? ”
” হ্যাঁ। ”
” উনার বিয়েতে গিয়েছিলাম। সেখানেই ঘটে বিপত্তি। উনি বেশিদিন বাঁচবেন না। বিষয়টা বিয়ের আসরে বসেই জানতে পারেন উনি এবং আমরাও। ওই মুহূর্তে কোনো হিতাহিতজ্ঞান কাজ করছিলো না আমার। ভাইয়ের কথায় তার জন্য ঠিক করা পাত্রীকেই বিয়ে করে বাড়ি নিয়ে যাই আমি। ”
অর্ষা যে কেঁপে উঠেছে সেটা আবরিশাম তার হাত ধরে থাকায় সহজেই বুঝতে পেরেছে। অর্ষার ঠোঁট কাঁপছে। অশ্রু বর্ষণ হবে আন্দাজ করেই দ্রুত বক্ষে জড়িয়ে ধরে আবরিশাম। মুহুর্তেই হুহু করে কেঁদে উঠে অর্ষা। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আবরিশাম।
” অর্ষা! আমার কথা শেষ করতে দে। বিয়ের পরে কখনো আমাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী’র সম্পর্ক গড়ে উঠেনি। কারণ আমার ছিলো বাইরে গার্লফ্রেন্ড আর প্রিয়ন্তি তিয়াসকে ভালোবাসতো। ওর বাবার জোড়াজুড়িতে বাধ্য হয়ে বিয়েটা করেছিলো ও। কিন্তু আমার সাথে থাকাকালীনও একইভাবে ভালোবেসে গেছে তিয়াসকে। একটা মানুষ এভাবে দূরে থেকেও তার ভালোবাসার মানুষকে অনুভব করতো দেখে আমারও কেমন পরিবর্তন হলো। সব মেয়েদের থেকে গুটিয়ে নিলাম নিজেকে। প্রিয়ন্তি যখন তিয়াসের সাথে কথা বলার পরে অঝোরে কাঁদতে থাকতো তখন ফিল করতাম তোর যন্ত্রণা। তা-ও তো ওঁরা দু’জন দুজনকে ভালোবেসে না পাওয়ার যন্ত্রণা পেতো অথচ তুই তো সেই কত বছর থেকে একপাক্ষিক ভালোবাসার যন্ত্রণায় দগ্ধ হচ্ছিলি! মূলত ওদের ভালোবাসা দেখেই আমি তোর প্রতি ভালোবাসা ফিল করি। প্রিয়ন্তি আর আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে কিছু মাস আগেই। প্লিজ কাঁদিস না। ”
অর্ষার চোখের পানিতে আবরিশামের বুক ভিজে গেছে। কান্নার বেগ কিছুটা কমেছে অবশ্য। আবরিশাম অর্ষার মুখখানা বক্ষ থেকে তুলে চোখে চোখ রাখলো। অশ্রু ভেজা চোখে তার প্রতি আকাশসম অভিমানের মেঘ জমেছে। সেটা বুঝতে অসুবিধা হলোনা আবরিশামের। অর্ষার দুগাল আঁজলার মতো করে ধরে ঠোঁটের দিকে ইশারা করে বললো ,
” কথা বলবি না? বলতে হবে না, শুধু ছুঁতে পারমিশন দে।”
চকিতে আবরিশামের থেকে কিছুটা দূরে এগিয়ে বসলো অর্ষা। চোখমুখ ওড়না দিয়ে মুছে কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
” কত মেয়ের লিপ টেস্ট করেছো ওই ঠোঁট দিয়ে তার তো হিসাব নাই! আমার ঠোঁট এতো সস্তা না বুঝলে? তবে প্রিয়ন্তির কাছে কৃতজ্ঞ আমি, ওর জন্য অন্তত নারীসঙ্গ ত্যাগ করতে পেরেছো।”
” ত্যাগ আর করতে পারলাম কই!”
” মানে?”
” এই যে অর্ষা সুন্দরীর কাছে চলে এলাম। নারী ছাড়া আমার চলেইইই না….”
” তুমি খুব খারাপ আবু ভাই! ”
” অর্ষা!”
আবরিশামের অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে জোরে হেসে উঠলো অর্ষা। এবার আর ভুল করে নয়,স্বইচ্ছায় বললো।
দুপুরের কড়া রোদের মধ্যে রাস্তার মাথায় দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়ন্তি। বাসা থেকে কল আসায় একটু আগেই চলে গেছে স্নেহা। তখন থেকে তিয়াস আসে কি-না দেখতে অপেক্ষা করছে মেয়েটা। দুপুর দু’টোর দিকে রিকশা থেকে নামতে দেখলো তিয়াসকে। প্রিয়ন্তিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বুকের ভেতর ধক করে উঠলো তিয়াসের। আজ আবরিশাম না থাকলে মাধবী নিয়ে ফিরতে হতো তাকে। তখন প্রিয়ন্তির কী হতো? মেয়েটা তো প্রাণে মরে যেতো আর সাথে তিয়াসও! তিয়াসকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে এক মিনিটও অপেক্ষা করলোনা প্রিয়ন্তি। দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো তিয়াসকে। অতিরিক্ত টেনশনে কোথাও বসে কী করছে খেয়াল করেনি মেয়েটা। তিয়াস হাতের ব্যাগ মাটিতে রেখেই আলগোছে নিজেও জড়িয়ে ধরলো। মিনিট দুয়েক দু’জন দু’জনার বক্ষে জড়িয়ে থেকে শান্ত হলো। বাহুডোর থেকে নিজেকে মুক্ত করে তিয়াসের দিকে অভিমানী স্বরে বললো,
” কতবার কল দিয়েছিলাম তার কি হিসাব আছে? ”
” হিসাব করার মতো পরিস্থিতি ছিলো না প্রিয়। বাসায় চলো সব বলবো।”
চলবে,
পেইজে ফলো দিতে কি কষ্ট হয়?🙂 যারা গল্পটা পড়ছেন কষ্ট করে ফলো দিয়ে রাখুন। এতে গল্প আপলোড হওয়ার সাথে সাথে নোটিফিকেশন পাবেন। রিচেক করা হয়নি,টাইপিং মিসটিক হলে দুঃখিত।
পরের পর্বের লিংক https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=375131315167820&id=100080128645410&mibextid=Nif5oz