#ভুলোনা_আমায়
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#৫ম_ও_শেষ_পর্ব
কল্প আমার হাত ছাড়েনা,
ডাক্তার বলেন,
ওকে ভেতরে আসতে দিন প্লিজ।
আমাদের হাত দুটো একটু একটু করে ছুটতে থাকে,
আমি কল্পের চোখের দিকে তাকিয়ে বলি,
“ভুলোনা আমায়”
অনেক গুলো বছর পর…
বাবা,আমি ইরাজকেই বিয়ে করবো।
হাত ভেঙে গেছে তাতে কি?
আবার ঠিক হবে।
আমার তো কোন সমস্যা নেই তাতে।
তাছাড়া হাত তো আমারও ভাঙতে পারতো।
তাছাড়া বিয়ের পর যদি ও এক্সিডেন্ট করে হাত ভাঙতো,তাহলে কি করতে তোমরা?
তাছাড়া এক্সিডেন্ট তো আর সে ইচ্ছে করে করেনি।বলো?
তাহলে বাসার সবাই কেন ঘ্যান ঘ্যান করছে?
ও একটু সুস্থ হোক আমি ইরাজকেই বিয়ে করবো,এটা আমার শেষ কথা।
মেয়েটা একদম ঠিক ওর মায়ের মত হয়েছে।
কল্প ভাবছে সেদিনের কথা।
যেদিন নীরার মা দ্রিতাও ঠিক এই ভাবেই কথা গুলো বলেছিলো বাড়ীর সবার বিপক্ষে গিয়ে।
আর অবশেষে কল্পকেই বিয়ে করেছিলো।
নীরা,
কল্প আর দ্রিতার এক মাত্র মেয়ে।
ও একটা ছেলেকে পছন্দ করে,আর বাসায় বিয়ের কথা বার্তা চলছিলো বলে সবাইকে ইরাজের কথা বলে।
যাকে নীরা ভালবাসে,তার নামই ইরাজ।
কল্প নীরাদের সম্পর্ক মেনে নিয়েছে।
তাই বিয়ের কথা বার্তাও চলছিলো,কিন্তু এরই মাঝে হঠাৎ ইরাজ এক্সিডেন্ট করে আর ওর একটা হাত মারাত্মক ভাবে ভেঙে যায়।
তাই নীরার চাচ্চু-ফুফুরা সবাই না করছিলো,বিয়েটা করার জন্য নীরাকে।
কারণ হাত টা খুবই খারাপ ভাবে ভেঙেছে।যদিই হাত টা ঠিক না হয়।আর ঠিক হলেও ওই হাত দিয়ে যদি কাজ কর্ম না করতে পারে।তাদের কথা পুরুষ মানুষ, এক হাত অচল হলে দুনিয়ার অর্ধেক টাই অচল।কাজ করে তো খেতে হবে।
যদিও কল্প নীরাকে বাঁধা দেয়নি বিয়ের ক্ষেত্রে।কারণ ও জানে, এমন সময় মেয়ে পক্ষ না করে দিলে কেমন লাগে।
কারণ ও নিজেও যে এমন এক পরিস্থিতিতে পরেছিলো।
_আচ্ছা বাবা,চাচ্চুরা ফুফুরা সবাই না করলো ইরাজকে বিয়ে করতে।
কিন্তু তুমি কেন একবার ও না করলেনা?
_কারণ একদিন আমিও এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলাম।তাই আমি বুঝি,পরিস্থিতি টা কতটা ভয়াবহ।
তোর মা আমাকে ফিরিয়ে দেয় নি বলে আমি ডিপ্রেশনে পড়িনি।কষ্ট পাইনি।
নয়তো আমি নিজেই ডিপ্রেশনের সাগরে,কষ্টের সমুদ্রে তলিয়ে যেতাম।
মা যেমন মেয়েও তেমন।
আমি গর্ববোধ করি তোকে নিয়ে।
তোর বিয়ে ইরাজের সাথেই হবে।
_আম্মু তুমি কি বলো?
_আমি আর কি বলবো,তোর ইচ্ছেমতই হবে যা হবে।
.
.
কি খুশি হয়েছেন না সবাই?
নাকি অবাক হয়েছেন আমি বেঁচে আছি বলে?
হ্যাঁ আমি দ্রিতাই বলছি।
আমি বেঁচে আছি আলহামদুলিল্লাহ।
আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
সেদিন একটা মিরাকেল হয়।
আমার নীরা সময়ের আগে,অতি তাড়াতাড়ি দুনিয়ায় আসে বলে,আর আল্লাহ চেয়েছেন বলে,আমি বেঁচে যাই।
সেদিন ডাক্তার সি সেকশন এর সাথে সাথে আমার সেই আগের না হওয়া অপারেশন টা করেন।
আর আমাকে বলেন,ইটস মিরাকেল দ্রিতা।
আল্লাহ তোমার কল্প আর তোমার রাজকন্যার জন্য তোমাকে নতুন জীবন দিয়েছেন।
আর তুমি কন্যা সন্তানের মা হয়েছো।এই কথা বলে ডাক্তার আমার নীরাকে আমার বুকে দেন।
আমি আলহামদুলিল্লাহ বলে আমার নীরাকে বুকে জড়িয়ে নেই।
বাইরে কল্প অপেক্ষা করছে।এত ক্ষণে আমার বাসার সবাইও এসে গেছেন বোধয়।
ডাক্তার আমায় এক গাল হেসে বললেন,তুমি বড় ভাগ্যবতী দ্রিতা।কল্পের মত বর পেয়েছো।
আমি মুচকি হেসে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে দু চোখ বন্ধ করলাম।
ডাক্তার যখন নীরাকে নিয়ে বাইরে বের হন,তখন সবাই নীরাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেও কল্প ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে,
_আমার দ্রিতা?
ও কেমন আছে?
ও ঠিক আছে তো?
প্লিজ ডাক্তার কথা বলুন।
ও কোথায় এখন?
আমি কি ওর কাছে যেতে পারবো?
ওকে দেখতে পারবো?
এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে যাচ্ছিলো কল্প।
ডাক্তার তারপর কল্পকে শান্ত করে উত্তর দেন,
_হয়েছে তো. এবার একটু শান্ত হন।
আপনার দ্রিতা আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে ঠিক আছে।
ইটস মিরাকেল ডিয়ার।
আপনার ভালবাসা আর দোয়ায় আল্লাহ আপনার দ্রিতাকে আপনার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন।
সি.সেকশন এর সাথে সাথে আমরা তার সেই অপারেশন টাও করে ফেলি,এখন আর কোন ভয় নেই।
সবাই কল্প আর ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে কিসের অপারেশন?
কল্প উত্তর দেয়,বাসায় গিয়ে সবাইকে বলবোনে।
ডাক্তারঃ-একটু ওয়েট করুন,
কিছুক্ষণের মধ্যেই দ্রিতাকে বেডে দেয়া হবে।
তখন আপনি দ্রিতার কাছে যেতে পারবেন।
কল্প এবার হাউমাউ করে কাঁদছে আর আল্লাহকে শুকরিয়া জানাচ্ছে।
সাথে ডাক্তারকেও কৃতজ্ঞতা জানায়।
কিছু ক্ষণ পর আমাকে বেডে দেয়া হয়।
কল্প দৌড়ে আমার কাছে আসে।
আমার হাত দুটো ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
_ভালবাসি।
ভালবাসি অনেক টা।
ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম জানো।
আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া তুমি ঠিক আছো।
তোমার কিছু হলে না আমি…
_পাগল হয়ে যেতে?
কিছু হয়নিতো,
এবার তো কান্না থামাও।
তখনই সবাই রুমে ঢোকেন।
আম্মু আব্বু কাঁদতে কাঁদতে আমার কাছে আসেন।
_কান্না করোনা তো।ঠিক আছিতো আমি।
এভাবে বাচ্চাদের মত কান্না করতে হয় নাকি?কান্না করোনা।
আম্মু (শাশুড়ি মা)নীরাকে এনে কল্পের কোলে দিয়ে বলেন,
_জানো মা,দ্রিতা দ্রিতা করতে করতে কল্প নীরাকেও দেখেনি এখন অব্দি।
এখন তো দেখেছিস তোর দ্রিতাকে এখন তোর মেয়েকে দেখ।
কল্প নীরাকে বুকে জড়িয়ে নীরার কপালে চুমু খেয়ে বলে,
_মা রে,তোর মায়ের জন্য ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি।
তোর মায়ের কিছু হলে তোর আর আমার কি হতো বল।
তাই টেনশনে তোকে কোলেও নেই নি এত ক্ষণ।
আমার রাজকন্যা আমাকে বুঝবে তাইনা?
আমার রাজকন্যা তো।আমার সোনা মা টা।
তারপর কল্প নীরাকে আমার পাশে শুইয়ে দিয়ে বলে,
_এখন মা মেয়ে দুজন দুজনকে ভালো মত দেখো।
গল্প সল্প করো কিন্তু খবরদার,”ভুলনা আমায়”
ভুলনা কিন্তু আমায়।
ছোট্ট নীরা আজ কত্ত বড় হয়ে গেছে।
আল্লাহ নীরাকে আমার মনের মত করেই সৃষ্টি করে আমার বুকে পাঠিয়েছেন।
সেই কল্পের মত চোখ,
কল্পের মত হাসি।
কল্পের মত রাগ।কল্পের মত জেদ।
আর চঞ্চল।
আমি যেমন টা আল্লাহর কাছে চেয়েছি।
বাবার আদুরী সে।
বাবা ছাড়া কিচ্ছু বুঝেনা।
তার বাবাও তাকে ছাড়া কিচ্ছু বুঝেনা।
তারের কাছে আমি যেন কই থেকে ভেসে এসে এসেছি।
মনে হয় যেন পাড়া প্রতিবেশী আমি হুহ।
দেখতে দেখতে আমাদের নীরা টা অনেক বড় হয়ে গেছে।
আজ ওর বিয়ে দিতে যাচ্ছি আমরা।
ওর পছন্দের ছেলের সাথেই।
ছেলেটা কয়েক মাস আগেই বড় একটা এক্সিডেন্ট করেছে।
আল্লাহর রহমত অল্পের জন্য বেঁচে গেছে।
একটা হাত মারাত্মক ভাবে ভেঙে গেছে।
প্লাস্টার করা হয়েছিলো।
ডাক্তার বলেছেন সময় লাগবে অনেক ঠিক হতে।
অনেকে বিয়ে টা না করে দিতে বলেছিলো।যেভাবে ভেঙেছে হাত,যদি ঠিক না হয়।
কিন্তু আমার নীরা পিছপা হয়নি।
আজ আল্লাহর রহমতে ইরাজ পুরোপুরি সুস্থ।
প্লাস্টার খোলা হয়েছে।
মাঝে মাঝে ব্যথা করে,ডাক্তার বলেছে সময় লাগবে একটু ব্যথাটা সারতে।
ও কিছুনা।
আমার কল্পের মুখের দাগ গুলোও কিন্তু বিয়ের এক বছরের মাথায়ই মিলিয়ে গিয়েছিলো।
যদিও অল্প দু এক টা দাগ আছে।তবে ওগুলা তেমন বোঝাও যায়না।
তাই কখনো মানুষের খারাপ পরিস্থিতিতে তাকে ছেড়ে দিতে নেই।
পরিস্থিতি সব সময় এক থাকেনা।
আল্লাহ কখন কার সাথে কি করেন বলা যায়না।
কল্প খুব কান্নাকাটি করছে মেয়ের জন্য।
খাওয়া দাওয়া বন্ধ প্রায় তার।
কলিজার টুকরোটাকে কিছু ক্ষণ পর বিদায় দিতে হবে যে।
কিন্তু নিয়ম যে এমনই,মেয়েদের ঘরে রাখা যায়না।
রাখা গেলে বাবা মা সারাজীবনই মেয়েদের নিজের ঘরে রেখে দিতেন।
নীরাকে আজ মাশাআল্লাহ খুব মিষ্টি লাগছে।
এই মাত্র বিয়ে সম্পন্ন হলো আমাদের কলিজার টুকরো টার।
এবার বিদায়ের ক্ষণ।
বুকের ভেতর চাপা একটা কষ্ট অনুভব হচ্ছে,
তবুও বিদায় তো দিতেই হবে।
নীরা এসে ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।
কল্পও মেয়ের কান্না সহ্য করতে পারছেনা।
ইরাজ কল্পকে শান্তনা দিয়ে বলছে,
বাবা!আপনি কোন চিন্তা করবেন না।
আমি ওর খেয়াল রাখবো।
আপনার মত আগলে রাখতে পারবো কিনা জানিনা।
আমি আমার সাধ্যমত যথেষ্ট চেষ্টা করবো
যাতে ওর চোখে আজকের পর আর কোন দিন পানি না আসে।
আসলেও তা যেন হয় খুশির অশ্রু।
কল্প ইরাজকেও জড়িয়ে ধরে।
আর বলে,
বাবারে,আমার তো আমার মেয়েকে নিয়ে কোন চিন্তা নেই।
কারণ তুমি ওর খেয়াল রাখবে আমি জানি।কিন্তু যে শান্ত মেয়ে আমার।
আমার তো চিন্তা হচ্ছে তোমার জন্য,
নিজের খেয়াল রেখো।
কল্পের কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে সবাই হেসে দেয়।
নীরাও চোখ মুছে হাসতে হাসতে বলে,
বাবা!তুমি না।
তারপর নীরা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
বাবার খেয়াল রেখো মা।
তোমায় আমি অনেক ভালবাসি মা।বাবা আমায় সব বলেছেন,
আমার জন্য তুমি তোমার জীবন বাজি রেখেছো।
আল্লাহ মৃত্যুর পর পরকালে আবার জীবন দিলে তোমার সন্তান করেই যেন আমায় রাখেন।
আমিও নীরাকে জড়িয়ে ধরে বলি,
নিজের খেয়াল রাখিস।
আমিও তোকে অনেক ভালবাসি।
নীরা সবাইকে বিদায় জানিয়ে ইরাজের সাথে চলে যাচ্ছে নতুন জীবন শুরু করতে।
ইরাজ নীরার হাত ধরে ওকে নিয়ে যাচ্ছে।
যাবার সময় নীরা পেছনে তাকিয়ে সজোরে বলে,
বাবা,
মা,
খবরদার!
“ভুলনা আমায়”
(সমাপ্ত)
#প্রিয় পাঠকবৃন্দ!পর্বটি দেরি করে দেয়ায় আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখীত।
অসুস্থতার কারণে আমার হসপিটালে দৌড়াতে হচ্ছে সেই জন্য আমি লিখার সময় পাইনি।
আর কিছু কথা,আপনারা অনেকেই প্রথম দিকের পর্ব গুলো পড়ার পর নেক্সট নেক্সট করলেও শেষ পর্ব পড়ে কোন কিছু মন্তব্য না করেই চলে যান।এটা দুঃখজনক।আবার অনেকেতো প্রথম থেকেই গল্প পড়েন ঠিকই কিন্তু কিন্তু কোন মন্তব্য না করে রিয়েক্ট না দিয়ে চলে যান।
আচ্ছা তাহলে আমরা যারা লিখি তারা বুঝবো কি করে যে গল্প টি আপনারা পড়ছেন?বা ভালো লেগেছে?আমরা লিখার অনুপ্রেরণা কোথায় পাবো?
গল্পটি কেমন লেগেছে জানালে অন্তত লেখক লেখিকারা একটু শান্তি পায়।ভাবে যে এত কষ্ট করে লিখাটা স্বার্থক হলো।
যাইহোক ধন্যবাদ এতদিন সময় নিয়ে আমার লিখা গল্পটি পড়ার জন্য।
আমাকে এত ভালবাসা দেয়ার জন্য।
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আল্লাহ হাফেজ।আসসালামু আলাইকুম।