লুকোচুরি_গল্প #পর্ব_১৬ #ইশরাত_জাহান 🦋

0
537

#লুকোচুরি_গল্প
#পর্ব_১৬
#ইশরাত_জাহান
🦋
দুপুরে দ্বীপ বাসায় আসে একটু দেরি করে।বাসায় আসার সাথে সাথে মিসেস সাবিনা বলেন,”ক্যাডার সাহেব এসেছেন!আপনার বউ তো না খেয়ে অপেক্ষা করছে।বলেছে আমার উনি আসলে একসাথে খাবো।”

হাত ঘড়ির দিকে তাকালো দ্বীপ।দেখলো বিকাল হয়ে এসেছে।প্রায় চারটা ছুঁই ছুঁই।নীরা এখনও না খেয়ে আছে।কি এমন হলো যে মেয়েটা এমন করছে এটা বুঝতে পারছে না দ্বীপ।লোক দেখানো কাজ এত কেনো করবে?

দ্বীপ ঘরে আসার সাথে সাথে নীরা দ্বীপের বাড়ি পড়ার পোশাক বের করে দেয়।দ্বীপ বলে,”তুমি নাকি না খেয়ে আছো?”

“হ্যা,আপনি আর আমি একসাথে খাবো তাই।”

“কি হয়েছে তোমার বলোতো?এক থাপ্পড়ে ঘাড় ত্যারা থেকে ঘার সোজা হয়ে গেলো নাকি!”

“ধুর,আপনিও না পড়ে আছেন এক বিষয় নিয়ে।মানুষ বুঝি বদলায় না।”লজ্জা পাওয়ার ভান করে।আবার বলে ওঠে,”তাড়াতাড়ি যান গোছল করে আসেন।দুপুরে না খেয়ে আছি।পেটের ভিতরে ছুঁচোগুলো দৌড়াচ্ছে।”

“আচ্ছা।”বলেই দ্বীপ চলে গেলো গোছল করতে।ফ্রেশ হয়ে একসাথে দুপুরের খাবার খেলো।

বিকাল হওয়ার সাথে সাথে কেয়া এসেছে নীরার সাথে দেখা করতে।অনেকদিন হয়ে গেছে দেখা করে না।কেয়া ও নীরা একসাথে ছাদে গল্প করছে।কেয়া বলে ওঠে,”জানিস সাদা বিলাই আমাকে প্রপোজ করেছে।”

“কবে!কখন!কথায়!আমাকে বলিস নি কেনো?”

“আরে কালকে করেছে প্রোপজ।আমি এখনও ঝুলিয়ে রেখেছি।একসেপ্ট করিনি।”

“কেনো করিসনি একসেপ্ট?”

“কেনো আবার!জানিস না মেয়েদের একটু লজ্জা পেয়ে পেয়ে দেরি করতে হয়।আমি ও সাদা বিলাইকে একটু ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তারপর একসেপ্ট করবো।”

“মেয়েদেরকে লজ্জা পেতে হয়?লজ্জা পাওয়ার বেনিফিট কি?”

“একটা মেয়ে যতো বেশি লজ্জা পাবে তার পার্টনার তাকে ততো বেশি আদর যত্ন করে।”

কেয়ার কথা শুনে নীরা মনে মনে বলে,”তাহলে আমাকেও লজ্জা পেতে হবে!আজ থেকে আমিও লজ্জা পাবো।কিন্তু আমার তো অত বেশি লজ্জা লাগে না!”

কেয়া আর নীরার আড্ডার ভিতরেই রিক কল করে কেয়াকে।কল রিসিভ করলে রিক বলে,”কোথায় তুমি,চশমিশ?”

“এই তো আপনার বাসার উল্টো বাসায়।আগে যেই বাসাটা আমার বান্ধবীর ছিলো ওটাতে এখন আমাকেও পাবেন না।আমি এখন বান্ধবীর আরেক বাসায়।”

“পিছনে ঘুরে দেখো।”

কেয়া পিছনে ঘুরে দেখে রিক দাড়িয়ে আছে তাদের ছাদে। রিককে দেখে কেয়া কল কেটে দেয়।সাথে সাথে কেয়া তার ওড়নার শেষ কিনারা আঙুলের সাথে পেচিয়ে পেচিয়ে ফ্লোরের দিকে তাকায়।কেয়ার লজ্জা লজ্জা ভাব দেখে নীরা বিরক্ত।এভাবে কেউ লজ্জা পায়?তারপর নীরা তাকালো রিকের দিকে।রিক কেয়ার লজ্জা পাওয়া দেখে হাসতে থাকে।কেয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে এক নাগাড়ে।

কেয়াকে লজ্জা পেতে দেখে রিক বলে,”আয় হায় চশমিশ!তোমাকে তো লজ্জা পেলে আরো বেশি সুন্দর লাগে।চশমার ভিতরে তোমার ওই চোখে আমার জন্য লজ্জার আবির্ভাব ফুটে উঠেছে। ইশ এটাকেই তো বলে লুকোচুরি গল্প।”

এই রিকও লুকোচুরি গল্প বললো।ক্যাডার সাহেবও ডায়েরির পাতায় লুকোচুরি গল্প লিখেছে।লজ্জা পেলে বুঝি ক্যাডার সাহেব বুঝে যাবে যে তার চন্দ্র পাখি তাকে নিয়ে লুকোচুরি গল্পে মশগুল হয়ে গেছে।আজকে নীরাও লজ্জা পাওয়ার চেষ্টা করবে।

সন্ধায় দ্বীপ নীরাকে বলে,”বই খাতা বের করো পড়তে হবে।”

নীরা তার ওড়নার কোনায় আঙ্গুল দিয়ে ঘোরাতে থাকে আর ফ্লোরে তাকিয়ে মিটমিট হাসতে থাকে।দ্বীপ দেখলো নীরার কান্ড।কিন্তু কিছু বুঝলো না।দ্বীপ আবার বলে,”কি হলো?পড়তে বসবে না?”

নীরা ফ্লোরে তাকিয়ে ওড়নার কোনায় আঙ্গুল পেচাতে পেচাতে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বোঝায়।দ্বীপ এবার ফোশ করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,”পড়তে বসার আহ্বান দিয়েছি বাসর করতে আহ্বান দেইনি যে এভাবে লজ্জা পাবে।পরীক্ষার পর লজ্জা পাওয়ার মতো সুযোগ ও কাজ দুটোই করে দিবো।এখন পড়াশোনায় ফোকাস হও।”

শেষ,নীরার লজ্জা পাওয়া শেষ।এমন রসকষহীন বর থাকলে কিভাবে লজ্জা পাবে সে?এমনিতেও নীরার দ্বারা ওসব লজ্জা তারপর ন্যাকা ন্যাকা ভাব আসে না।নীরা সবসময় স্ট্রেট থাকে।সেখানে আজ একটু লজ্জার অভিনয় করলো।কিন্তু এই ক্যাডার সাহেব তা হতে দিলো না।

শীত পড়েছে খুব।তাই আজ মিসেস সাবিনা ও দীপান্বিতা মিলে পিঠা বানাতে থাকে।মিসেস শিউলি ভাত চাপিয়ে দেন। পিংকিও সাহায্য করতে থাকে।মিসেস নাজনীন ও মিস্টার রবিন এসেছেন।দ্বীপের বাবা মা দাওয়াত দিয়েছেন।নীরা ও দ্বীপ পড়তে বসেছে।দ্বীপ নীরাকে পড়াচ্ছে। আর কয়েকদিন পর নীরার পরীক্ষা।আবার এর ভিতরে নীরব আসবে।শীতকালে এমনিতেই পিঠার আমেজ থাকে।একের পর এক আনন্দ অনুষ্ঠান শীতকালেই বেশি হয়। আর এর ভিতরে নীরার পরীক্ষা।দ্বীপ ও তার পরিবারের কোনো আপত্তি নেই নীরা কোনো কাজ করলো কি না এগুলো নিয়ে।দ্বীপ ভালো করেই জানে নীরাকে কাজ করতে বললে নীরা বই ফেলে কাজের দিকে দৌড় দিবে।

রাতে সবাই একসাথে খেতে বসেছে।নীরা মিস্টার রবিনের এক বাহু ধরে তার কাঁধে মাথা দিয়ে আছে।বিয়ের আগে বাসায় থাকলে মিস্টার রবিন যখনই কাজ করে বাসায় আসতো নীরা সাথে সাথে তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরতো।বিয়ের পর সবকিছু পাল্টে গেছে।নিজের স্থায়ী বাড়ি নিজের জীবন নিজের কাছের মানুষের জায়গা সবকিছু।কিন্তু তারপরও নীরা আজ সুখী।তাকে তার শ্বশুর বাড়ির সবাই ভালোবাসে।তার আসল মানুষ তাকে এতগুলো বছর ধরে ভালোবাসে।এগুলো কি কম নাকি?

মিস্টার রবিন নীরাকে বলেন,”শুনলাম তুমি নাকি পারফেক্ট বউ হওয়ার চেষ্টা করছো।সকাল সকাল উঠে রান্না বান্না করেছো পড়াশোনা করেছো।সবাই তো তোমার খুব প্রশংসা করছে।বরের প্রতি এত যত্ন এসেছে দেখে সবাই খুশী।”

নীরা তাকালো বাবার দিকে।পাশেই মা শশুর শাশুড়ি ও অন্যান্য সবাই আছে।নীরা বলে,”আমি তো তোমারই মেয়ে আব্বু।তুমি যেমন তোমার বউয়ের জন্য পাগল,আমিও তো তেমনই হবো আমার বরের পাগল।এগুলো তো বংশগত রোগ।বাবা যেমন রোমান্টিক হবে তার সন্তানও তেমন রোমান্টিক হবে।”

খুক খুক করে কাশতে থাকেন মিস্টার রবিন।মিস্টার সমুদ্রর বিষম ওঠে।মিসেস নাজনীন মেয়ের আর তার বাবার দিকে চোখ গরম করে তাকায়।মিসেস সাবিনা ও দীপান্বিতা মিটমিট হাসতে থাকে।দ্বীপ কি করবে নিজেও জানে না তাই সে ঘরে চলে আসে।পিংকি আর মিসেস শিউলি নিজেদের মত ঘরে আছে তাই এগুলো দেখছে না।অভ্র সবার এই ভাবভঙ্গি বুঝে উঠতে পারছে না।সে তার মত কার্টুন দেখতে ব্যাস্ত।

মিসেস সাবিনা মিস্টার রবিনকে বিষম খেতে দেখে ফিসফিস করে বলেন,”উম ঢং দেখলে বাচি না।মেয়েটা তো ঠিকই বলেছে।বাবা মা যেমন সন্তান তেমন হয়।তবে তোমার ক্ষেত্রে উল্টো।তোমার বাবা তো রোমান্সের ঠেলায় দুটো বিয়ে করেছিলো তুমি তো তার এক অংশও দেখাও নি।উল্টো ছেলেকে তোমার মত বই পাগল বানিয়েছো।এখন ছেলে আমার বই ছেড়ে বউ লাগল হলেই বাচি।”

ছেলের বউ আসার পর থেকে যেনো বুড়ো বয়সে বউও যুবতী মনের হয়ে উঠেছে।মিস্টার সমুদ্রের যেনো দিন দিন বিষম খাওয়ার গতি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মিস্টার সমুদ্র মিসেস সাবিনার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলেন,”ছেলের বউয়ের ছোঁয়া লেগেছে মনে! চলো আবার বিয়ে করে নব দম্পত্তি হয়ে যাই।তোমার মনের যত রং লেগেছে মিটিয়ে দেই।”

“সেই সৌভাগ্য কি আর আমার কপালে আছে।”বলেই হামি দিয়ে সোফা থেকে উঠে পড়েন মিসেস সাবিনা।

মিসেস নাজনীন নীরার কাছে এসে নীরার কানে কানে বলেন,”বিয়ে হয়েছে সবকিছু বুঝতে শিখেছো,এটা শিখো নি যে কোথায় কি বলতে হয়?”

“আমি তো সত্যি কথাই বলেছি।বাবা তো তুমি বলতে অন্ধ।তুমি বললে বাবা যাবে ডানে তুমি বললে বাবা যাবে বামে।আমার কপালে বর জুটেছে তার উল্টো।আমাকে কি করতে হয়! বর যদি বলে চলো ডানে আমিও চলি ডানে বর যদি বলে চলো বামে আমিও চলি বামে।”

মিস্টার রবিন মেয়েকে বলেন,”এগুলো বলতে নেই মা।তোমার আম্মু লজ্জা পায়।”

বলেই নীরা ও মিস্টার রবিন হাসতে থাকে।
মিসেস নাজনীন বুঝতে পেরেছে এরা বাবা মেয়ে মিলে তাকে পচাইতে থাকবে।তাই তিনি কথা বাড়ায় না।তাড়াতাড়ি করে বিদায় জানিয়ে চলে যান বাসায়।

চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here