#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১৯ (রহস্যের সমাপ্তি দ্বিতীয়াংশ)
“তবে কুসুমা ভাবীর গর্ভ অবস্থায় যাওয়া রিস্কি মনে হলো আমার। তাও আমি আড়ালে রাফিন-কে দিয়ে খবর নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যায়। রাফিন প্রথমে সেই হাসপাতালে খোঁজ নেয়। যেখানে বিবিজান এডমিট ছিল। সেখানে থেকে যে খবরটা পেলাম। তার প্রতিফলিত রুপ দেখবি?”
আফরাজ আকবরের দিকে তাকিয়ে বলে। সে মাথা নেড়ে সায় দেয়। আফরাজ লেপটপ কাছে টেনে তার মত টাইপিং করল। টাইপিং শেষ করে লেপটপের স্ক্রিন আকবরের মুখোমুখি করে দেয়। সে দেখে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে।
“এই কে বুড়ো ব্যাটা?”
“নাজীবার আপন মামা। হি ইজ এ্যা ড্রাগ ডিলার এন্ড ড্রাগ সেলার। আজ তিনমাস যাবত তাকে আমি আহত অবস্থায় বেঁধে রেখেছি।”
“কি বলিস মামা ভাবীর প্রেমে ভূত হয়ে একদম রহস্য উদঘাটনে নেমে পড়ছিলি বুঝি?”
“হুম বলতে গেলে এমন কিছু। তার মামারে মা’রধর করে জানতে পারলাম। বিবিজানকে তার সৎ দাদা অর্থাৎ দাহাব এহসান তার মামার কাছে শুধু একমাস রাখার জন্য পাঠিয়ে ছিল। কিন্তু এই বুড়া বেইমানি করে। আপন ভাগ্নির শরীরের প্রতি লোভ জাগে তার। এজন্য রাতের আঁধারে বিবিজান কে নিয়ে ফেনীর অন্য শহরে চলে গেলো। এখন দাহাব এহসান এর সে-সবের খবর অব্দি নেই। সে তো মশগুল ছিল সম্পত্তির ভাগ-ভাটুয়ারা নিয়ে। বলতে গেলে আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি-কে মৃত্যুর কবলে ফেলে তাদের মৃত্যু-কে সাময়িক দূঘর্টনা বলে চালিয়ে দেয় তাবাসসুম এর বাবা জনাব লিয়াকত। এই তাবাসসুম হলো নাজীবার সৎ ফুপির মেয়ে। নাজীবার আপন দাদী দু’বার বিয়ে করে ছিল। প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর দাদীর এক সন্তান ছিল যার নাম মোবারক আলী আমার শ্বশুর। দাদী একলা হাতে ছেলের লালন-পালনে হিমশিম খাওয়ায় দাদীর পরিবার আরেকবার দাদী-কে বিয়ের পিঁড়িতে বসায়। তখন তার বর হয়ে ছিল দাহাব এহসান। তার পক্ষের সন্তান হলো মিস হিয়া এহসান। যে তাবাসসুম এর বর্তমান জননী আর লিয়াকত সাহেবের স্ত্রী। অথচ এই মহিলা নাজীবার অসুস্থতার দিনে নিজেকে দাহাব এহসান এর মা বলে পরিচয় দিয়ে ছিল। আর দাহাব এহসান তো আরো সিয়ানা। নিজের যৌবন রূপ ধরে রাখতে সার্জারি করে নিজের সর্বনাশ অলরেডি করে রেখেছে। সে কি ভেবে ছিল আমি ছোট বাচ্চা আমাকে যা বুঝাবে, আমি তাই বুঝব? হাহ্ এই বাজপাখির নজর দাহাব এহসান এর চেহারার আদলে ছিল। আমার নজরকে এড়াতে পারল না সে। তার ভুল ছিল স্বেচ্ছায় আমার সঙ্গে কথা বলা। এর কারণেই তো দাহাব এহসান এর মুখের চামড়ায় ছিপছিপে ছিঁড়ে যাওয়া রেশ দেখে ছিলাম। তখন ফরেনসিক ল্যাবে পরিচিত এক ডক্টর-কে বলে তার সমাধান চাই। তিনি সমাধানে এটাই বলেছিল যে, দাহাব এহসান এর বয়স বর্তমানে ষাট্টের কাছাকাছি। তার চুল,শরীর প্রায় বেঁটে যাওয়ার কথা। কিন্তু সে নিজের মনে নাজীবা-কে ভোগ করার পূর্ণ আশা জমিয়ে রেখে ছিল। যার আশানুরূপ সে নিজের যৌবনের রূপের জন্য র’ক্ত পান করতো,মেডিসিন, ইনজেকশন নানান ভাবে গ্রহণ করতো। এসবে সাহায্য করতো মিসেস হিয়া একজন কেমিস্ট ল্যাব লেকচারার। তার মাথায় কোন কেমিক্যাল কেমনে ব্যবহার করতে তার ধারণা আছে। নিজ মেয়ে-কে কাজে লাগিয়ে প্রতিবার কেমিক্যাল সলিউশন বানিয়ে রাখে সে। এখানেও একটা হাসির ব্যাপার কি জানিস? দাহাব এহসান এতটা সম্পত্তি লোভী ছিল। যার ফলে সে তার মেয়ের ঢাসামার্কা জামাই-কেও সহ্য করেনি। তাকে গুপ্ত রুমে বন্দিদশায় ফেলে রেখেছিল প্রায় একবছর হতে চলেছে। রেহাই দিল কিনা জানা নেই। যদি দিয়েও থাকে ধরতে সমস্যা হবে না আই হোপ। এভাবে সে নিজের রাস্তা পুরোপুরি পরিষ্কার করে ফেলে। সে ভেবে উকিলের সাথে দেখা করে দলিল বানায়। হাস্যকর দলিলটা কাজেও আসল না। কেননা নাজীবার দাদী দাহাব এহসান এর সত্য পরিচয় জানার পর এমন শক্ত দলিল বানিয়ে রেখেছিল যেটা ভেদ করা দুষ্কর হয়ে যাচ্ছিল তার। সেটা হচ্ছে সম্পত্তির মালিক এখন স্বয়ং নাজীবা নিজে। তাকে যে বিয়ে করবে এবং তাদের পরবর্তী বংশধরায় যার জন্ম হবে, তার ১৮ বছর বয়স হলেই সম্পত্তির পুনরায় ভাগ-ভাটুয়ারা করা যাবে। পরন্তু কোনো কারণে সেই সন্তানের মৃত্যু হলে সব সম্পত্তি এতিমখানায় দিয়ে দেওয়া হবে। অন্যথায় সম্ভব হবে না বলে সুস্পষ্ট দলিলে লিখে দিয়ে ছিল মৃতসম দাদীজান। নাজীবা যে তার বাবা-মায়ের গড়া সংসারের একমাত্র উত্তরাধিকারী, এসবের খবর অব্দি নেই তার মাঝে। কেমনেও বা থাকবে? তার জীবনে যতগুলো মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে অন্য কারো জীবনে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। দাহাব এহসান এর মাথায় তখন এক চিন্তা ভর করে। সে যেকোনো ভাবে হোক নাজীবা-কে বিয়ে করে বংশের উত্তরাধিকারী নেবে। তার ঘৃণ্য কাজে সায় দেয় তাবাসসুম এর মা মিসেস হিয়া। মোটামুটি তান্ত্রিক বিদ্যা জানতো। আড়ালে জ্বীন ডেকে কাজ সাধন করার চেষ্টা করতো। আমার স্মৃতিও ততদিনে মনে পড়ে গিয়ে ছিল। আমার স্মৃতি লোপ পেয়েছিল ছাদের উপর থেকে পড়ার কারণে যা সত্য। কিন্তু ধাক্কা দিয়ে ছিল মিসেস হিয়ার ভাড়াটে জ্বীন। তার শর্ত ছিল আমার জীবন। কিন্তু আল্লাহর মহিমায় আমি বেঁচে যায়। এতে জ্বীন তার কাজে অসফল হওয়ায় মিসেস হিয়ার বাম হাত কেড়ে নেয়। যেহেতু তিনি জ্বীনের সর্দার সেহেতু তার পক্ষে সর্দারের জীবন নেয়া সহজলভ্য নয়। তাই সে বাম হাত কেড়ে নেই। একই কাজ আবারও করে নাজীবার উপর মন্ত্র পাঠ করে জ্বীন-কে পাঠায়। জানতো না যে, আমার বাসা পরিপূর্ণ পবিত্রতায় ঘেরা। আমার দাদীর অশেষ কষ্টে প্রতি রুমে থাকা ফুলের টবগুলো বিশেষ ক্ষমতা বহন করতো। সেগুলো জ্বীন-কে কুপোকাত বানিয়ে ছাড়ে। কিন্তু জ্বীনের শক্তিও কম ছিল না। সে কারণে এক ফুলের মৃত্যু হয়ে যায়। যার প্রতিরুপে বেলকনিতে র’ক্ত দেখে অজ্ঞান হয়ে ছিল নাজীবা। আমি বিষয়টা ধামাচাপা দিতে সাভেন্ট’স ডেকে বেলকনি পরিষ্কার করিয়েনি। সেই সাথে নাজীবার শরীরে মেডিসিনের ডোজ লাগিয়ে দেয়। তার সুটকেস খুলে ড্রাগের ইনজেকশন সরিয়ে লিকুইড মেডিসিনাল ইনজেকশন রাখি। এতে নাজীবা তার অজান্তে ওষুধ সেবন করে ড্রাগ এডাকশন থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে আলহামদুলিল্লাহ কার্যকরও হচ্ছে। এতেও চুপ করে বসে থাকিনি। ড্রাগটা কেমনে তার শরীরে এলো তারও তথ্য খুঁজতে তৎপরতায় লেগে গেলাম। পেয়েও গেলাম এই ছবির বুড়ো। ভাগ্নির শরীরের চেয়ে টাকা বেশি চিনতো। তাই ভাগ্নিকে নানান ভাবে খাবারে ড্রাগ মিশিয়ে খাওয়ে দিতো। কিন্তু ড্রাগের প্রতিক্রিয়ায় নাজীবার ব্রেন বাচ্চা টাইপ হতে থাকে। সে প্রতিনিয়ত চিৎকার চেঁচামেচি করে বিরক্ত করতো মামা-রে। তার বিরক্তির সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় মামা তাকে সাইকোপ্যাথিক হাসপাতালে এটমিট করিয়ে দেয়। সেখানের ডক্টর,নার্স অন্য পাগলদের বেলায় যতটা কঠোর হয়ে থাকত না কেনো, নাজীবার মায়াভরা চেহারা দেখে তারা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করতে লাগল তাকে সুস্থ করার জন্য। সেখানেও বাম হাত ঢুকালো দাহাব এহসান। মামার খবর না পেয়ে নাজীবার মুখ থেকে কৌশলে কথা বের করে। তার মস্তিষ্ক সচল থাকলে জীবনেও বলতো না কিন্তু অচল মস্তিষ্ক নিয়ে সব উগলে দেয়। তাকে পুরোপুরি পাগল বানাতে দাহাব এহসান অন্য এক ডক্টর-কে পাঠায়। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) যে কিনা র’ক্ত জোগাড় করে দিতো দাহাব এহসান কে। তার র’ক্তপান নেশা স্বাভাবিক। কেন জানিস? কারণ সে যে, এককালীন বাদুড় সেবক ছিল। তাও যেমন তেমন নয়। যে বাদুড়-কে র’ক্তচোষক বলে,সে বাদুড়ের সেবক ছিল। বিয়ের পর থেকে টাকা হাতিয়ে গোপনে বাদুড়ের জোগাড় করে ব্যবসা করত। তাদের সেবার কাজে তাকে হাজারে দু’তিনেক টাকা দেওয়া হতো। একদিন সেই বাদুড়ের দাঁত দাহাব এর ঘাড়ে লাগে ছিরে যায়। তাদের দাঁতের মধ্যে ছোঁয়াচে রোগ বিদ্যমান। সেই রোগের কবলে পড়ল স্বয়ং দাহাব এহসান। রোগটা হচ্ছে Clinical vampirism। এর মানে হলো এক ধরনের ভয়াবহ মানসিক অসুস্থতা, যা সাধারণত Renfield’s syndrome নামে পরিচিত। এর তিনটা পর্যায় আছে। তার মধ্যে দাহাব এহসান এর দুটার প্রতি জোঁক বেশি। প্রথমত, মানুষের রক্ত গ্রহণের দিকে ধাবিত হওয়া। রোগী হাসপাতাল বা ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত চুরি করে অথবা জীবিত ব্যক্তির রক্তপান করে। এই পর্যায়ে আসার পর ‘রেনফিল্ড সিনড্রোম’ এ আক্রান্ত কিছু লোক হত্যার মতো সহিংস অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। দ্বিতীয়ত, পর্যায় যাকে ‘Zoophagia’ বলা হয়। এ পর্যায়ে রোগীরা জীবন্ত প্রাণী ভক্ষণ কিংবা তাদের রক্ত পান করে। এই পর্যায়ে অনেকেই রক্ত পানের জন্য কসাইখানা থেকেও রক্ত সংগ্রহ করে। সে রোগের কারণে নাজীবার বাবা-মায়ের মৃত্যু হয়। তার বাবা-মায়ের মৃত্যু কান্ড ঘটে ছিল খুব ভয়াবহে। নাজীবার মা মেহজাবিন সিরাত কে রেপ করে শরীরের র’ক্ত পান করে ছেড়ে দেয় দাহাব এহসান। তখন মোবারক আলী কাজ থেকে বাসায় ফিরে এমন দৃশ্য দেখে তৎক্ষণাৎ ছেলে নাদিম-কে সরিয়ে ফেলে। তার হাতে প্রমাণস্বরুপ ভিডিও ক্লিপ ছিল। তিনি নাদিম-কে বাহিরে পাঠাতে সক্ষম হলেও নাজীবা-কে পাঠাতে পারল না। তার আগেই নাজীবার চোখের সামনে তার সৎ দাদা বাবার শরীরের র’ক্ত চোষে নেয়। মোবারক আলী অন্য কিছু করতে না পারলেও দাহাব এহসান এর বুকের মধ্যে ছু’ড়ি ঢুকিয়ে দিয়ে ছিল। যাতে তার তান্ত্রিকতা নষ্ট হয়ে যায়। এ বিদ্যায় পরিপূর্ণ অভিজ্ঞ হওয়ার আগেই তাকে উ’প্রে ফেলে আমার শ্বশুরে।
তবুও কৈ মাছের প্রাণ বেঁচে গেল। নিজের তান্ত্রিকতা সমাপ্ত বলে মেয়ে-কে কাজে লাগায়। অথচ মেয়ে তো আন্ডামার্কা আরো। হাহাহা।
তন্মধ্যে ছোট প্রাণ হাতে নিয়ে যেন অবশ হয়ে গিয়ে ছিল ছোট নাজীবা। একে তো রুমে থেকে চিৎকার করে ছিল মায়ের অসহনীয় মৃত্যু দেখে , তার পর বাবার মৃত্যু দুটোই তার মস্তিষ্কে বিরুপ প্রভাব ফেলে। তাদের মৃত্যুর ক্লিপ একটা আননোন নাম্বার থেকে আমার কাছে আসে। কে বা কেনো দিছে তাঁর নাম্বার ট্রাকিং করেও পায়নি। পরন্তু তার সেই ভিডিওর জোড়েই দাহাবের এহসান এর ব্যাপারে তথ্য খোঁজে বের করতে পেরেছিলাম। মূলত ঐসময় নাজীবার বাবা-মা-কে খু’ন করে ছিল বলে নাজীবা-কে ছাড় দেয়। তাকে তার মামার কাছে পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে হাসপাতালে পৌঁছে। হাসপাতালে নাজীবার জন্য বরাদ্দকৃত ডক্টর কে অন্য জায়গায় ট্রান্সফার করে ডক্টর সিফাত কে আনা হয়। সেই ডক্টরের হাবভাব অশ্লীল ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে নাজীবার সেবায় নিয়োজিত নার্স তাকে সহায়তা করে। তাকে নিয়ে পালিয়ে রাস্তায় চলে আসে। এই পালানোর খবর তার মামা শুনতে পেলে নিজেকে আড়াল করে নেয়। কারণ দাহাব এহসান এর হাতে পড়লে তার মৃত্যু নির্ধারিত ছিল। যেমন মৃত্যু ঘটেছিল তার চামচা ডক্টর সিফাত এর। কিন্তু মামা পড়ছে আমার হাতে এখন বন্দীদশা ভুগ করছে। তার শরীরের পচন দেখার অপেক্ষায় আছি আমি। নানান ড্রাগ যে তার শরীরে ভরে দিয়েছি। নিদারুণ কষ্ট দেবো। যে কষ্ট ভোগের অধিকারী নাহয়েও ভোগতে হয়ে ছিল আমার বিবিজান-কে। এবার পাল্লা হবে মিসেস হিয়া ,তার স্বামী আর সন্তানের সঙ্গে। যদি স্বেচ্ছায় না ছাড়ে তবে জীবন মাঝপথে থেমে যাবে তাদের। সর্বশেষে হবে দাহাব এহসান এর জীবনের খেলা। তবুও কোথাও একটা কিন্তু থেকেই যায়। সেসময় নাদিম পালালেও বর্তমানে কোথায় আছে তা এখনো বের করতে পারিনি।”
“ভাই তুই একলা এসব জোগাড় করলি। মাশাআল্লাহ ভালোবাসায় পাগলামী হোক তোর মত। সর্বদিক যাচাই করার ক্ষমতা রাখিস তুই। তোর কথার মধ্যে তো এটাও বোঝা যায়। এতদিন যে, তাবাসসুম ছলেবলে অফিসে নাজীবা-কে টিজ করে ছিল?”
“অফকোর্স ইয়ার। বিবিজান এর আপাতমস্তক এ আমার বাজপাখির ন্যায় নজর। সেখানে ত্রুটি থাকলে তাকেই রেহাই দেয় না। সেখানে তাবাসসুম তো তুচ্ছ বিষয় মাত্র। সেদিন ফুটেজে সব দেখেও অদেখা করে ছিলাম। ইচ্ছেকৃত, কারণ তাবাসসুম এর পরিচয় সম্পর্কে যা জেনে ছিলাম তা সত্য কিনা সিউর হতে! বোকা মেয়েটা সত্য প্রমাণ করে ছাড়ল। একে তো আমার সাথে প্রেমের ছল করে তার কোন বেহায়া ক্লাইন্টের সাথে রাত কাটিয়ে নিজের যোগ্যতার সাথে নাজীবার তুলনা করছিল। মন চাচ্ছিল খু’ন করে দেয়। সে তো আমার বিবিজান এর নখের যোগ্যও নয়। কিন্তু তখনো সত্যি জানতাম না। জানছি যখন সে ক্লাবে নেশার বুঁদ হয়ে দাহাব এহসান এর সাথে প্ল্যানিং করছিল। তখন রাফিন-কে তাদের পিছে পাঠিয়ে দেয়। সত্যি জানার জন্যে মূলত তাবাসসুমকে পিএ পদে রাখা। এই দাহাব এহসান কে তো অভিনয় জগতের সেরা অভিনেতার পদক দেওয়া উচিৎ। যৌবনের বেশভূষায় থেকে আপন নাতনী-র সঙ্গেও মাখন খেলা খেলতে দ্বিধাবোধ করেনি। যার মধ্যে কোনো ধরনের নীতি চিন্তা নেই তার আবার কিসের দ্বিধা? মিসেস হিয়া তো জানেন না তার সন্তান অনেক আগেই তার বাবার সঙ্গে রাত কাটিয়ে ফেলেছে। বেহুদা কারণে শুধু শুধু দূরে রেখে কি লাভ?
সব তথ্য জানতে পেরেও মনেমন নিজেকে দমিয়ে রেখে ছিলাম। কারণ রাগ করলেন তো হেরে গেলেন কথা স্মরণে রেখেই নিজের রাগ পোষিয়ে রাখার স্বভাব কৈশোরগত।”
“মানুষ বলে জন্মগত তুই বললি কৈশোরগত। কোন গ্রহের প্রাণী-রে তুই?”
“মানুষ জম্মগত বলে তার অর্থ কি আজও ঠিক তুই বল? তুই যে এত পা’দ মারিস সেটা কি তুই জন্মের পর পরই জানতে পেরেছিলি? পারিসনী কেন? কারণ তুই নিজেই একদিনের বাচ্চা তুই কেমনে জানতে পারবি তুই পা’দ মারিস। এগুলো তো বড় হলেই পরিবার পরিজন বুঝে আন্দাজে বলে দেয় যে, তোর জম্মগত স্বভাব। আমি একথায় অমত বলেই বলি যে, স্বভাব আমরা বুঝি কৈশোর থেকেই। তখন স্বভাব সম্পর্কে জেনে বোঝা যায় আমি কেমন ছিলাম।”
আকবর মাথা নেড়ে দু’কাপ কফি অর্ডার দেয়। আফরাজ পানির মগ নিয়ে পানি খেয়ে শুকনো গলা ভিজিয়ে নেয়। সিসিটিভির দিকে চেয়ে মা আর বিবিজান-কে একসাথে ঘুমাতে দেখে শান্তি পেল মনে। তবুও রাতে আদর দেওয়ার ইচ্ছে পোষণ করে রাখল গোপনে। কেননা বিবিজান অভিমানে মুখ ফুলিয়েছে। আদর ছাড়া তো আর মজে না মনটা। ঠুং করে ফোনের শব্দে আফরাজ এর ধ্যান ফিরে। আকবর তার সামনের চেয়ারে বসে কুসুমার সঙ্গে বার্তালাপ করছিল। আফরাজ একপলক চেয়ে ফোন কল রিসিভ করে নেয়।
“স্যার দাহাব হয়ত জানতে পেরেছে ম্যাডামই নাজীবা। কারণ ফুটেজ চেক করে দেখলাম। আপনার রুমে অচেনা এক মেয়ে ঢুকে ম্যাডামের চুলগুচ্ছ নিয়ে পালিয়ে ছিল। এখন কি তাকে খোঁজে ধরব?”
“তার দরকার নেই রাফিন। এ ব্যাপারে আমি আগেই অবগত। ইচ্ছেকৃত মেয়েটাকে ধরিনী আমি। যেনো দাহাব বুঝতে পারে আমি তার প্ল্যান বুঝিনি। তুমি খেয়াল রেখো সর্বখানে ওকে?”
“ইয়েস স্যার।”
ফোন কাটতে আকবর বন্ধুকে বলে,
“ইয়ার তুই না একঘণ্টা আগে দাহাবের সঙ্গে কথা বললি। তাহলে বুড়ো জেনে গেছে এবার তোর ক্ষতি করতে চাইবে।”
বুকের মধ্যে হাত গুজে আয়েশে চেয়ারে হেলান দিল আফরাজ। বাঁকা হেসে বলে,
“আই অলসো ওয়ান্ট হিজ রিভেঞ্জ। সে যদি রিভেঞ্জ না নেয়,তবে শ্বশুর-শ্বাশুড়ি-র মৃত্যুর খবর-কে ফেইক এক্সিডেন্ট নামে চালিয়ে যাওয়া বুড়ো-কে তো ধরতে পারব না। আর রইল তাবাসসুম কে কিডআপ করার কথা। সে যে পিঠপিছে নাজীবা-কে অপমান অপদস্থ করে ছেড়েছে। তার জন্যে আগামী সাতদিন পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়া হীন তাকে বাঁচতে হবে। এতে মরে গেলে ডোন্ট কেয়ার। রাফিন বিষয়টা সামলে নেবে। আরত্ত এই মেয়ে স্বচক্ষে দাহাবের বুড়ো রুপও দেখেছে। অতঃপর বেচারী ফেঁসে যাবে সে ভয়ে মুখ খুলতে চাইছে না। তন্মধ্যে সত্যি ফাঁস করলে দাহাবের হাতে খু’ন হবে আর না করলে আমাদের হাতে মা’ই’র খেয়ে খেয়ে বাঁচবে।।”
আকবর নিজের মাথায় বার’কয়েক বা’রি মে’রে’ বলে,
“ভাই তোর প্ল্যান সেরা সুর্পাপ ভাই। পরন্তু আমার দারুণ পা’দ মা’রার মত সেরা নয় হাহ্।”
নিজের শার্টের কলার টান টান করে ভাব নিল আকবর। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)আফরাজ চোখ ঘুরিয়ে ফাইল’স দেখার ভান ধরল। ভেংচি কেটে টিটকারী মার্কা হাসি দিয়ে বলে,
“পা’দ শব্দ বেশি স্মরণে রাখিস বলেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওয়াশরুমে বসে কাটিয়ে দিস।”
“কি আমি এতক্ষণ বসে থাকি? ওহ তাতে কি আমি ওয়াশরুম সিঙ্গারও বুঝতে হবে।”
আফরাজ-কে চোখ মে’রে ভাব দ্বিগুণ বাড়িয়ে ভ্রু নাড়ল আকবর। বন্ধুর জবাবে গা’র্নটা ধরতে নিলে আকবর কেবিন থেকে ছুটে পালিয়ে যায়। তার যাওয়া দেখে মুচকি হাসল আফরাজ। ফোন হাতে নিয়ে ফুটেজে ঘুমন্ত বিবিজান-কে জ্বালানোর ফন্দি আঁটে মনে মনে। রাফিন-কে কল করে বলে,
“শোন তোর ম্যাডামের কাছে লেডি সাভেন্ট পাঠিয়ে বলতে বলো আমার ফোন রিসিভ করতে।”
রাফিন ‘ওকে স্যার’ বলে বসের কথামত কাজ করে। আফরাজ সবটা দূরবীনের ন্যায় দেখছিল। লেডি সাভেন্ট গিয়ে ফোনটা নাজীবার হাতে দেয়। নাজীবা দেখে চোখ কুচলে উঠে বসে। পাশে ঘুমন্ত শ্বাশুড়ি-কে দেখে কপালে চুমু দিয়ে আস্তে করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। নিজস্ব স্বামী-স্ত্রীর বেডরুমে এসে কল দেয় স্বামী-কে। আফরাজ সদ্য জাগ্রত রমণীর ওষ্ঠজোড়ার দিকে নেশাময় দৃষ্টিতে চেয়ে ওষ্ঠদ্বয় কামড়ে ফোন রিসিভ করে বলে,
“বিবিজান আপনার কাছ থেকে চুমু থেরাপি নিতে আসছি। গেট রেডি টু কিস ইউর হাজবেন্ড বিবিজান।”
চলবে…..
(বিঃদ্রঃ- এবার আশা করি কারো মাঝে কোনো ধরনের রহস্য নিয়ে ঘাপলা থাকবে না। কারণ আজকের পর্বে রহস্যের অন্তিম মধ্যম টেনেছি।)