#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-১০
৩১.
জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পরে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করে।পাশে হাত দিতেই ভাইকে না পেয়ে পুতুল অস্থির হয়ে যায়।কান্না করে ওঠে।রেনু পুতুল কে জড়িয়ে ধরে শান্ত করতে করতে বলল,
-;তোমার ভাই ঠিক আছে।তার কিছুই হয়নি।এই যে দেখ তোমার মামার কোলে শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে।
পুতুল তার ভাইকে কোলে নিতে হাত বাড়িয়ে দেয়।স্বাধীন পুতুলের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে মিলনকে কোলে তুলে দিতেই ভাইকে জড়িয়ে ধরে আদর করে।কপালে হালকা ব্যথা পেয়েছে।কপালটা কেমন লাল হয়ে গেছে।তার ভাই কি খুব কষ্ট পেয়েছে?পুতুল অসহায় চোখে ভাইকে দেখে যায়।
রেণু,স্বাধীন এত বুঝাচ্ছে কিন্তু কাজ হচ্ছে না।পুতুল নিজেকে দায়ী করতে লাগল।
স্বাধীন পুতুলের মাথায় হাত রেখে বলল,
কাল রাতে শিয়াল ডাক শুনতে পেয়েছো তাই না।কিন্তু শিয়ালের মতো দেখতে হলেও শিয়াল ছিল না।ওই জঙ্গিলী পশুগুলো,বেলালদের বাড়ির গোয়াল ঘরের আস্ত গরু খেয়ে ফেলেছে।রাতে গোয়াল ঘরে ঢুকে এমন বিভৎস কর্মকান্ড করেছে।কিন্তু শিয়াল ছিল না।ধারণা করা হচ্ছে ওটা বাঘথাবা।এমন নামই শুনতে পেয়েছি।স্বাধীন পুতুলের মাথায় হাত রেখে বলল,
-;আজ থেকেই তোমরা দু’জন আমাদের সাথে ঘুমাবে।দুই খাট একসাথে বিছানো হবে।এটা নিয়ে আর না বলবে না।আমি তাহলে খুব রাগ করব।খাবার খেয়ে তৈরি হও।আমরা বের হব।
পুতুল মাথা নাড়িয়ে আচ্ছা বল।
৩২.
আম পাতা জোড়া জোড়া
মারবো চাবুক চড়বো ঘোড়া
ওরে বুবু সরে দাড়া
আসছে আমার পাগলা ঘোড়া
পাগলা ঘোড়া খেপেছে
চাবুক ছুড়ে মেরেছে।
উফফ বড্ড লেগেছে।
ইয়াসমিন ম্যাম ছোট বাচ্চাদের থেকে ছড়া শুনছেন।পুতুল স্কুল প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে সবটাই শুনতে পায়।তার স্কুলটা বেশ পচ্ছন্দ হয়েছে। কিন্তু এই স্কুল কি তাঁকে রাখবে।ম্যাম কি ওদের মতো তার সাথে কথা বলবে?তাঁকে নিয়ে যদি মজা করে।তাই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।এরমধ্যেই স্বাধীন তাকে ডেকে নিয়ে গেলো।
গায়ে তার সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি।মাথায় টুপি।চোখে চশমা।মাথার চুল পাকা।দাড়ি বেশ বড় বড়।লোকটা মামা সাথে হেসে কথা ব’লছেন।কিছু কাগজপত্র তৈরি করে মামার থেকে সই নিয়ে বলল।
পুতুল এখানে পড়তে পারবে।যেহেতু এই বছর প্রায় শেষ।বাচ্চাদের পরীক্ষা ডিসেম্বরের এক তারিখ থেকে শুরু।তাই আগামী বছর জানুয়ারীতে তার ভর্তি হবে।বাসায় বসে পড়াশোনা করা-ও স্বাধীন।
-;জি স্যার আমি ওকে পড়াবো।আজ আসি স্যার।তাদের কথায় বুঝতে পারলো তার এখানে ভর্তি হবে।পুতুল মামার হাত ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুল থেকে বের হয়।সে খুব খুশি তার ভাব ভঙ্গিতে প্রকাশ পাচ্ছে।স্বাধীন খুশি হলো।মেয়েটা পড়তে পারবে বলে আজ কত খুশি হয়েছে।নতুন জায়গায়,নতুন স্কুল।নতুন জামা,বই,চক,বোর্ড।সব কিছু সে পাবে।
আর্দশ লিপি বই,চক,বোর্ড নিয়ে বাসায় পড়াতে লাগল স্বাধীন।সে আওয়াজ করে পড়তে না পারলেও।লিখাটা আয়ত্তে এনেছে।
হাতের লিখা প্রথমে খারাপ হতো।বেশ কয়েকবার চেষ্টা করার পর মোটামুটি ভালো হয়েছে।এখন দিনের অর্ধেকটা সময়ই তার পড়াশোনা যায়।বাকিটা ভাই,আর মামীর কাজের সাহায্যে হাত লাগায়।এটুকু বয়স থেকে সংসারের কাজগুলো বুঝে নিতে শুরু করছে।তার একটু কাজের ভুল করার চেষ্টা করে না।কাজে মনোযোগ দেখে রেণু অবাক হয়।মেয়েটা কথা না ব’লে কি হবে?কাজে,এবং পড়াশোনা করার ইচ্ছে দেখা যায়।তার ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিচ্ছে স্বাধীন,রেনু।দেখতে দেখতে নতুন বছর চলে এসেছে। পুতুল স্কুলে ভর্তি হলো।তার পড়াশোনা করতে খুব ভালো লাগে।বেশ সাচ্ছন্দ্যবোধ করে।স্বাধীন ছেলের ছয় মাস শেষ হলো।সে সাড়া উঠোনে হাপুর পারে।কিন্তু হাঁটতে পারে না। চার হাত,পা দিয়ে সারা বাড়িতে খেলা তার নিত্য রুটিন।এই দিকে মিলন বসতে চেষ্টা করে কিন্তু পারেনা।।দুই ভাই কি যে দুষ্টুমী করে?একসাথে সুয়ে রাখলে একজন, আরেকজনকে হাত,পা গাল,চুল টেনে ধরে।একজন হাসে ব্যাথা দিয়ে।অপরজন ব্যাথা পেয়ে কেঁদে বাড়ি মাথায় তুলে।মিলনটা খুব পাঁজি হয়েছে।সুযোগ পেলে নিজের বিছানায় হিসু করে দেয়।ঠান্ডা বিছানা সুয়ে থাকবে না।সে সাজুর বিছানায় গড়িয়ে এসে সুয়ে এক পা সাজুর ওপর তুলে দেয়।রেণু দুই ছেলের কান্ডে হাসতে থাকে।স্বাধীন দুই ছেলের কাহিনি দেখে চোখ জুড়িয়ে নেয়।
৩৩.
ফেব্রুয়ারীতে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে।অর্পণ পুরো দমে পড়ছে।রোহিতপুর থেকে তাকে তুলে এনেছে।অসিম তালুকদার শুধু এনেই থামেনি।তিন ভাইকে মেরে কাঠের ব্যাট ভেঙে ফেলেছে।সাফিন বড় ভাইকে থামাতে গিয়ে নিজেও একটা আঘাত পিঠে খেয়েছে।তিন ছেলে রেজাল্ট খারাপ করেছে।আবার গ্রামে সব অকাজের জন্যই শিক্ষা দিলো।ভবিষ্যতে যাতে এগুলো না করে।রাবেয়া ছেলের মার দেখেই বেহুশ।জ্ঞান ফিরতেই কান্নাকাটি এবং স্বামীকে গালাগালি করেছে।অসিম তালুকদার বউকে ধমক দিলেন।কিন্তু লাভ হয়নি।ছেলেকে কেন মারবে?সেটার জন্য বাবার বাড়িতে বিচার পাঠিয়ে দিয়েছেন।তারপর থেকেই মায়ের বাপের বাড়ি যাও বন্ধ করে দিয়েছেন অসিম তালুকদার।
অর্পণ জিদ ধরেছে।সে ভালো রেজাল্ট করে দেখাবে।অসিম তালুকদার ওপর জিদ করেই এত মনোযোগ তার পড়াশোনা প্রতি।হারুন কে ব’লে ফরম ফ্লিলাপ করেছেন অসিম তালুকদার।
পড়া শেষ করে খাবার টেবিলে বসে অর্পণ।তার মা খুশি মনে ছেলেকে খেতে দেন।অর্পণ চুপচাপ খেয়ে নেয়।অসীম তালুকদার ছেলের গতিবিধি লক্ষ্য করছেন।ছেলে কখন কোথায় যায়?সব খবর টাইম টু টাইম চলে আসছে।ছেলের অগোচরে ছেলের পেছনে যে চব্বিশ ঘণ্টা গোয়েন্দা লাগিয়েছেন।
নতুন স্কুলে সামনেই মামা নামিয়ে দিয়ে স্যারকে ব’লে চলে গেছে।যাওয়ার আগে ব’লে গেলো।সে ছুটির সময় নিতে আসবে।
পুতুলের থেকে সবাই বড় এবং একটু উগ্র টাইপের।পুতুল ক্লাস রুমে আসতেই তার সাথে কেউ মিশতে এবং একসাথে বসতে চায় না।তাকে দেখে ক্লাসের বাচ্চারা অনীহা প্রকাশ করছে।পুতুল মন খারাপ করে পিছনে বসে পড়ে।ইয়াসমিন ম্যাম ক্লাস করতে এসে দেখে।একটি মেয়ে একা একটি বেঞ্চে পিছনে সিটে বসে আছে।
-;কি ব্যাপার তুমি পিছনে কেন?সবার সাথে বস।
-;পুতুল চুপ।
-;মিস আমরা ওর সাথে বসতে চাই না।মেয়েটা পঁচা।
ইয়াসমিন ম্যাম পুতুলের পোশাক দিকে একবার চোখ বুলিয়ে,অন্য বাচ্চাদের পোশাক দিকে তাকিয়ে বলল।
-;এটা কেমন আচরণ তোমাদের?আমি তোমাদের কাজ থেকে এটা আশা করি নিই।একজনের পোশাক দেখেই তাকে বিবেচনা করে নিলে।সে খারাপ।সে হতে পারে গরিব।কিন্তু তার পোশাক বেশ পরিপাটি মার্জিত।সে কোনো ধনীর দুলালিই নয়।তোমরা তোমাদের বাবার কাছে এক একজন পিন্সেস।কিন্তু এই পুতুলের বাবা নেই।তার মা নেই।সে মামার কাছে থাকে।মামা যা খায়।তাকেও তাই খাওয়া।সে মামার কাছে বড় হচ্ছে।সে ভালো আছে।
পুতুলের সাথে মিশতে চাও না।ঠিক আছে। কিন্তু যদি দেখি কেউ খারাপ আচরণ তার সাথে করেছো।পানিশমেন্ট দিবো।যে আগে আসবে সেই আগেই বসবে।আগে এসে,পিছনে বসলে এবং তা আমার কানে গেলে খবর আছে।মনে থাকে যেন।
ইয়াসমিন ম্যাম সবাইকে পড়াশোনা বুঝিয়ে দিয়ে পুতুল সামনে দাঁড়ায়।মিসকে দেখে মাথা নিচু করে।পুতুলের হাতের লিখা দেখে।এবং বাকি লেখাগুলো কীভাবে লিখতে হবে বুঝিয়ে দিলেন?পুতুল চুপচাপ বুঝে।সেইভাবেই করতে লাগল।
মার্চ মাস চলছে।পুতুলের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা শুরু হবে।পুতুল পড়াশোনা করতে ভালো লাগছে।স্কুল যেতে প্রথমে খারাপ লাগলেও এখন ভালো লাগে।ইয়াসমিন ম্যামের সাথে তার সম্পর্ক ভালোই জমেছে।সে একটু আকটু বুঝতে পারে।এবং ম্যামের কথা মতো সব করতে পারে।এইদিকে অর্পণ পরীক্ষা শেষ।সে স্কুল এসেছে স্যার সাথে কথা বলতে।
স্কুল মেইন গেটের ডান পাশেই সরকারি স্কুল। বাম পাশে কিন্ডারগার্টেন।মেইন গেইট রাস্তা ধরে পাচঁ মিনিট সোজা গেলেই হাইস্কুলের মাঠ দেখতে পাওয়া যায়।চার তলা ভবনটি তার শিক্ষা জীবনের দশ বছরের সমাপ্তি টেনে দিয়েছে।এই হাইস্কুলের পিছনে দেয়াল অর্ধেক ভাঙ্গা।সেই দেয়াল টপকে টিফিন পিরিয়ডে পালিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিত।মাঝে মধ্যে স্কুল থেকে দূরে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সাথে দুই একদিন সিগারেট টেনেছে।যেটা অসীম তালুকদার এখনো জানে না।জানলে খবর আছে।
হারুন স্যার সাথে কথা ব’লে কিছু অংঙ্ক বুঝে নিয়ে বাড়ি পথে ফিরে আসতে নিলেই পুতুলকে দেখতে পায়।এই ফাজিল মেয়ে তার এলাকায় কি করছে?দুই বিনুনি করে গোল ফরাকে পড়ে বসে আছে।বাহিরের কদম ফুল গাছের নিচে।সে এগিয়ে কিছু বলার আগেই স্বাধীন এসে পুতুল কে কোলে নিয়ে চলে যায়।
অর্পণ রেগে পা দিয়ে মাটিতে আঘাত করে বাসায় চলে যায়।
চলবে….
আমার মনে হচ্ছে পর্ব ছয় পর থেকে সব নষ্ট হচ্ছে। একে অসুস্থ তার ওপর অতিরিক্ত টেনশনে হাই প্রেশার,মাইগ্রেনের সমস্যা।সব কিছু গুলিয়ে যাচ্ছে।গল্পটা এডিট করা হবে আবারও।সুস্থ হলেই ঠিক করব।পর্ব -৯ প্রচুর ভুল ছিল।যা অসুস্থ জন্য খেয়াল না করলেও আজকে দেখেছি।
একদিকে ওয়াজ চলছে।একদিকে আমাদের বাড়ির সামনে বিয়ে প্যান্ডেল সাজিয়ে বক্র জোরে বাজিয়ে গান চলছে।বড় লোকদের কিছু বলতে গেলেই সমস্যা।এলাকার গুনিমান্য লোক ব’লে কথা।আমাদের বাড়ির পাশেই অসুস্থ এক বয়স্ক নানু বিছানা পড়ে।হাসপাতাল থেকে কয়েকদিন আগেই বাসায় ফিরছে।আরেক পাশের বাড়িতে সদ্য জম্ম নেওয়া চারদিনে নবজাতক শিশু।
এত শব্দ জন্য আমি আধ মরার সেখানে তাদের কি অবস্থা হচ্ছে আল্লাহ মালুম?