#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-১১
৩৪.
মামা গাছের কাঁচা তেঁতুল পেরে দিয়েছে।মামী সেই কাঁচা তেঁতুল মাটির চুলায় পুরিয়েছে।সরিষার তেল আর লবণ দিয়ে মাখিয়ে দিতেই পুতুল মুখে পুরে নিচ্ছে।তার টক অনেক পছন্দ।একদম মায়ের মতো।মা যেমন কদবেল খেতে পছন্দ করতো।সে ওহ পচ্ছন্দ করে।রেণুও তেঁতুল খাচ্ছে।সে একটু খেয়ে দাঁত ধরে গেছে।আর এই পিচ্চি মেয়ে টক খেয়েই যাচ্ছে।রেণু পুতুলের হাতে একটু তেঁতুল তুলে দিয়ে বাকিটা ঘরে নিয়ে খেল।এত টক খাওয়া ভালো না ব’লে।এইদিকে পুতুল মামীর কাজে অভিমাণ হলো।হাতের বাকি তেঁতুলটুকু শেষ করে।ঘরে দিকে ছুটে। মামী কাছে আবার গেলো।যদি কোনোরকম বুঝিয়ে আবার একটু পায় সেই আশায়।
মিলন ঘুমিয়ে আছে।আর সাজু বিছানায় খেলছে।রেনু আড়চোখে তাকাতেই দেখলো পুতুল চুপিচুপি ঘরে ঢুকে দাঁড়িয়ে আছে।রেণু দেখতে পেয়ে ওহ চুপ রয়েছে।রেণু ছেলের কাপড় ভাজ করে আলনায় রাখছে।পুতুল তার দেখাদেখি কাপড় ভাজ করে আলনায় রাখে।রেণু তাকে কিছু না বলায় তার উপস্থিতি বুঝাতে কাশি দেওয়ার মতো শব্দ করল।
-;কি রে পুতুল ঠান্ডা লেগেছে বুঝি।তুলসীপাতা রস দিব।তুলসীপাতা রস আদা দিয়ে খেলে একদম ঠান্ডা কেন?ঠান্ডার বাপও চলে যাবে।পুতুল গাল ফুলিয়ে মাথা দুলিয়ে না বলল।
-;ঠান্ডা লাগেনি বেশ।রেনু আবার চুপচাপ নিজের কাজ করতে লাগল।পুতুল,মামীর কাজে বিরক্ত হয়ে কাপড় হাত থেকে রেখে দিল।রেনু একটা হাম দিয়ে আবার শুয়ে পড়তে নিলেই পুতুল পা মেলে গালে হাত দিয়ে বসে রইল।যার মানে সে তাকে ঘুমাতে দিবে না।মামীর আঁচল এক হাত দিয়ে টেনে ধরে অপর হাত দিয়ে ইশারা বলল,তেঁতুল দিতে।সে খাবে।কিন্তু রেণু বুঝতে পেরে ওহ না বুঝার নাটক করতে লাগল।
-;আমার ঘুম পাচ্ছে।তুই সাজু সাথে খেল।আর না হয়,আমার সাথে ঘুমিয়ে থাক। দুপুরের ভাত ঘুমটা দেওয়া প্রয়োজন বুঝলি।এতে আরাম পাওয়া যায়।রেণু পুতুলের পা সরিয়ে সুয়ে পড়তেই।পুতুল,রেনু চোখ দুই হাত দিয়ে টেনে মেলে দিচ্ছে।যার মানে তোমার ঘুম বন্ধ।আগে আমার তেঁতুল খাওয়া।তারপর তোমার ঘুম।রেনু জোর করে চোখ বন্ধ করতে নিলে পারেনা।রেনু হেসে উঠে।আর পুতুলের পেটে কাতুকুতু দিতেই সে ওহ খিলখিল করে হেসে দেয়।
-;পাঁজি মেয়ে।আমার ঘুম নষ্ট করেছো।যাও তোমার সব তেঁতুল আমার।
পুতুল মাথা নাড়িয়ে না বল।যার মানে পুতুলের সব।মামী তেঁতুলের পেয়ালাটা বের করতে দেড়ি।পুতুল খেয়ে শেষ করতে সময় নিলো না।কেমন শব্দ করে খাচ্ছে?তার খাওয়া দেখে রেনু খেতে আবার ইচ্ছে করছিল।কিন্ত ততখনে পেয়ালা দিকে তাকিয়ে দেখে সবটা শেষ করে ফেলেছে।
৩৫.
পুতুলের কপাল ফেটে রক্ত পড়ছে।তার সহপাঠীরা তাঁকে ব্যথা দিয়েছে।আজ একটুও তাড়াতাড়ি আসায় সামনে বসে পড়ে।কিন্তু কে জানতোও তারা তাঁকে আঘাত করে বসবে।পুতুল ব্যথা পেয়ে এক হাত দিয়ে কপাল ধরে কাঁদছে।মামা কাল নতুন একটা জামা কিনে দিয়েছিল।আজ সেই নতুন জামাটায় ফোঁটা ফোঁটা রক্তের দাগ।ইয়াসমিন ম্যাম আজ আসেনি।স্কুলের কাজের জন্য শিক্ষক ট্রেনিং দিতে উপজেলা গেছেন।হেড স্যার কে দপ্তরি মহিলা খবর দিয়ে আনেন।হেড স্যার পুতুলের এই অবস্থা দেখে পকেট থেকে রুমাল বের করেন।রক্ত পড়া বন্ধ করতে কপালে রুমাল চেপে ধরে।তখনো পুতুল কাঁদছে।পিন্সিপাল স্যার সব সময় শান্ত স্বভাবের মানুষ।তিনি বাচ্চাদের সাথে রাগারাগি,চেঁচামেচি পচ্ছন্দ করেন না।কিন্তু পুতুলের এই কাহিনিতে তিনি রেগে যান।সেটা মুখে প্রকাশ করেন না।শান্ত স্বরে বলল,এই ক্লাসের প্রত্যেকটা বাচ্চাদেরকে তার অফিস রুমে যেতে।পুতুলের কপালের রক্ত বন্ধ করতে তুলোতে মেডিসিন লাগিয়ে স্পর্শ করতে ব্যথা কুকিয়ে উঠে।
-;খুব ব্যথা করছে।একটু সয্য কর।আমি ওষুধ লাগিয়ে দিয়েছি।ব্যথা কমে যাবে।পুতুলের মাথায় ব্যান্ডেজ করে চেয়ারে বসিয়ে দিলো।পুতুল চুপচাপ বসে আছে।
-;এবার বলল,তোমার পুতুলের সাথে এটা কেন করছো?আমার কথার উওর দেও।একটা কথা মিথ্যে ব’লে খবর আছে তোমাদের।
-;স্যার আমরা কেউ ইচ্ছে করে ওকে ধাক্কা দেয়নি।
-;ধাক্কা দেও নিই।ওহ এমনই ব্যথা পেয়েছে?
-;কি হলো কথার উত্তর দিচ্ছো না কেন?
স্যার প্রতিদিন এসে আমরা আগে বেঞ্চে বসি।আজ একটু দেড়ি হয়েছে।এসে দেখি এই মেয়েটা আমাদের জায়গায় বসে আছে।তাই আমরা ওকে সরতে বলি।কিন্তু কথা না শুনায় আমার এক বন্ধু ধাক্কা দিয়েছে।আর তখনই,
-;তাই আঘাত করবে।এই শিক্ষা দেওয়া হয় তোমাদের।আর বেঞ্চের সিট কি তোমাদের নামে রেজিষ্ট্রেশন করা?তোমরা বসতে পারবে।অন্য কেউ বসতে পারবেনা।ওর নাম পুতুল।বারবার মেয়েটি মেয়েটি করবে না।আজকে যে কাজটা করেছো তা অন্যায়।দ্বিতীয় বার এমন কাজ করলে স্কুল থেকে বের করে দিবো।যাও যার যার ক্লাসে।আমি অন্য শিক্ষক পাঠাচ্ছি।সবাই চলে যেতেই পুতুল উঠে দাঁড়ায় চলে যাওয়ার জন্য। তখনই মান্নান স্যার ব’লে।তুমি বস।আমি নিয়ে যাব তোমায়।ফোন করে,অফিস রুম থেকে অন্য শিক্ষক পাঠান।আর তিনি নিজে পুতুল কে ক্লাস রুমে নিয়ে যায়।
৩৬.
হেড স্যারকে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে সালাম জানায়।কিন্তু স্যার প্রথম বেঞ্চের সব কয়টাকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখে।আর বাকিদের বসতে ব’লে।পুতুলকে সরি বলার পরে ওই পাঁচ জনকে বসতে দেওয়া হয়।
মান্নান স্যার পুতুলকে সামনে বেঞ্চে বসিয়ে দিলেন।এবং যাওয়ার আগেই বলে যান।এখন থেকে সব সময় পুতুল এই বেঞ্চে বসবে।যার আপত্তি আছে সে পিছনে দ্বিতীয়,তৃতীয় বেঞ্চ বসতে পারে।পুতুল মন খারাপ করে ক্লাস করতে থাকে।তার জন্য বাকি পাঁচ জন বকা খেলো।ওদের দিকে একবার মাথা ঘুড়িয়ে তাকাতেই সব কয়টা একসাথে মুখ বাকাঁয়।পুতুল ভয়ে সামনে তাকিয়ে ক্লাস মনযোগ দেয়।
ছুটির ঘন্টা পড়তে সবাই বেরিয়ে যায়।পুতুল সবার আগে বের হয়ে আসে।ওই পাঁচ জন যদি আবার কিছু করে।সেই ভয়টা মনের মধ্যে বাসা বাঁধে।কদম গাছটি নিচে বেশিখন দাঁড়িয়ে থাকতে হয় নিই।মামা চলে আসছে।
পুতুলের মাথায় বেন্ডেজ দেখে স্বাধীন হাটু গেড়ে বসে।
-;আম্মা আপনি ব্যথা পাইলেন কি করে? এসব কেমনে হইলো?
পুতুল ইতস্তত বোধ করছে।কি বলবে বুঝতে পারছে না?তবুও একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে।পুতুল মামাকে শান্ত করতে কিছু বলবে।তার আগেই স্কুলের দপ্তরি আরাফাতের আম্মু,স্কুলে আজকে হও প্রত্যেকটা ঘটনা ব’লে দেন।
স্বাধীনের মুখ কালো হয়ে যায়।পুতুলকে পড়তে দিয়েছে।কিন্তু এমন রোজ রোজ এসব হলে সমস্যা কমবে না।উল্টো বাড়তে থাকবে।
স্বাধীন মুখ কালো করেই বলল,
-;ওরা খুব বেশি ব্যথা দিছে আপনারে।আপনি কি খুব কষ্ট পাইছেন?কষ্ট পাইয়েন না আম্মা।আপনি আজ কষ্ট পাচ্ছেন।একদিন দেখবেন তারাই আপনার সাথে বন্ধুত্ব করে নিবে।আপনার গল্পটা এখন থেকে শুরু হয়ে গেছে।আমার আম্মা।আমার পুতুল আম্মার লড়াই।
এক রাজকন্যা লড়াই।এক মা।এক নারী রাজিয়া।যার জীবন কষ্টে গেছে।দুনিয়ায় ছাড়ছে।কিন্তু সন্তান ছাড়ে নাই।সেই মায়ের সন্তান আপনি।যার চক্ষে তৃষ্ণা।যার হাতে জাদু।তার জাদুর ছোয়া সব একদিন বদলে যাবে।আপনার কষ্টের দিন শেষ হবে একদিন।
মামা কথায় কি মায়া আছে পুতুল জানে না?কিন্তু মামা যখন স্যারদের মতো বড় বড় ভাষণ দেয়।তার শুনতে ভালো লাগে।সে সব কথা মন দিয়ে শুনে।এই কথাগুলো শুনতেই তার মনটা কেমন যেন হয়ে যায়।ভেতর থেকে শব্দ বের হতে চায়।চিতকার করে বলতে মনে চায়।
আমি পারব মামা।তুমি দেখে নিও।আমি পারব।
পুতুলকে নিয়ে বাসায় পৌঁছানোর পথেই ডাক্তার দেখিয়ে আনে স্বাধীন।ক্ষতটা গভীর নয়।তাড়াতাড়ি সেড়ে যাবে।
মোস্তফা সরোয়ার এবং তার মা জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে।পাচঁ বছর পর মুক্তি পেয়ে মা,ছেলে খোলা আকাশের নিচে নিশ্বাস নিচ্ছে।কতদিন হয়ে যায়,তারা জেলে বন্দী ছিল।আলতাফ হোসেন এবং স্বাধীন পুলিশ হাতে তুলে না দিলে বোধহয় ভালোই থাকত।এবার যখন ছাড়া পেয়েছে।ভাই,বোন দু’জনকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার প্ল্যান করে নিয়েছে।রাজিয়াকে আরো কঠিন শাস্তি দেওয়ার কথা ভেবেই শয়তানি হাসি দিলো।তার দ্বিতীয় সন্তান দুনিয়ায় এসে গেছে এতদিনে নিশ্চয়।এই বাহানায় রাজিয়া বাপের বাড়ি পা রাখবে।মোস্তফা মাকে বাসায় পাঠিয়ে,রাজিয়া বাড়িতে পথে হাঁটা ধরে।এখন তার উদ্দেশ্য রাজিয়া ক্ষতি করা।রাজিয়া ক্ষতি মানে স্বাধীনের ওপর পুরনো রাগটা মিটিয়ে নেওয়া।
চলবে….
রানিং গল্প চলাকালীন অন্য কোনো গল্প লিখা বা পোস্ট করা সম্ভব নয়।এক একজনের চাহিদা আলাদা আলাদা।তিনটা গল্প একসাথে লিখা সম্ভব কি?আমি এই গল্পটা শেষ করেই বাকি গল্পগুলো সিজন -২ আনব।ততদিন অপেক্ষা করতে হব।বেশি প্রেশার দিলে আমি হাওয়া হয়ে যাব।