চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা #ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া #পর্ব-১৪

0
559

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-১৪
৪৩.
দেখতে দেখতে আরো তিনটা মাস চলে গেছে।পুতুলের পরীক্ষা শেষ হয়েছে।সে এখন সারাদিন বাড়িতে থাকে।রেণু শরীরটা আজকাল ভালো যায় না।দুই একদিন মধ্যেই মনে হয় নতুন অতিথি আসতে চলেছে।তার আবার বিষণ তাড়া।এই কয়েকদিন রেনুকে ঠিক মতো ঘুমাতে দেয় নিই।বিছানায় পিঠ লাগাতে গেলেই বেবি কিক মা’রে।রেনু ওরে,মাগো ব’লে চিৎকার করে বিছানায় বসে পড়ে।ব্যাথায় কান্না করতে থাকে।স্বাধীন,বউয়ের কান্না দেখে নিজের কাছে খারাপ লাগে।রেনুকে বুঝাতে গেলেই উল্টো বউ তাকে বকাবকি করে।সেইদিন রাগারাগি করে বলল,

-;তিন তিনটা বাচ্চা থাকতে আবার একটা বাচ্চা।এটা নিয়ে চার চারটা বাচ্চা হবে।আপনার বুদ্ধি হাটুর নিচে গেছে।ইচ্ছে করছে,আপনার মাথাটা ফাটিয়ে ফেলতে।বাচ্চা হালি হালি নিলেই হবে।মানুষ আর করা লাগবে না।আমার চোখের সামনে থেকে দূরে যান।রেনু খিটখিটে মেজাজ দেখে স্বাধীন চুপ করে রইল।কিছু বলল না।বাচ্চা লাগার কয়েকমাস ভালোই চলছিল।সাত মাসে পরতেই বউ তার রগচটা হয়ে যাচ্ছে।এসব যে মুড সুয়িং জন্য হচ্ছে তা বুঝতে পারছে।সাজু পর আর কোনো বাচ্চা রেনু নিতে চায়নি।পুতুল,মিলন,সাজু এই তিনজনকে নিয়ে সে খুশি থাকতে চেয়েছে।কিন্তু স্বাধীন আরেকটা সন্তানের আসায় বউকে একটু বেশি ভালোবেসে ছিল।তার পরিনতি আজ তার চোখের সামনে।এখন বউ কথায় কথায় বকাবকি করে।অথচ বিয়ে আগেই এই মেয়ে তার জন্য পাগল ছিল।বিয়ে ঠিক হওয়ার পর লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা।খাবার পাঠানো এমনকি সাথে প্রেমপত্র পাঠাতো।রাজিয়া চলে যাওয়া।বাবা মৃত্যু।তাদের ছাড়া তখন তার নিঃসঙ্গ জীবনে রেনু নামক রমনী আগমন ঘটেছিল।মেয়েটি ভালোবাসায় তাঁকে সকল কষ্ট ভুলতে বাধ্য করেছিল।মনেমনে আল্লাহ দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া জানিয়ে ছিল।এমন একটা জীবন সঙ্গী পাঠানোর জন্য।

নাসিমা বেগম পুতুলের জন্য ছেলে দেখা শুরু করেছেন।তাদের সুবিধা মতো ছেলে খোঁজ পেয়েছেন একটা,দুইটা।তাদের মধ্যে প্রথম একটা ছেলের মা,বাবা নেই।চৌষট্টি জেলায় ঘুরে ফিরে।আর কাজ করে সপ্তাহে দুই,তিন দিন।কাজ করে যে টাকা পায়,জুয়া খেলে সব উড়িয়ে দেয়।তার বয়স প্রায় চব্বিশ এর কাছাকাছি।সিগেরেট খাওয়ার জন্য ঠোটঁ দুটি কালো হয়ে গেছে।নাম তার মিন্টু।আর দ্বিতীয় ছেলেটি পুতুল থেকে অনেক বড়।অবশ্য ছেলে বলা যায় না তাঁকে পুরুষ বলা যায়।তার বয়স একত্রিশ।এবং পিঠে মেরুদণ্ডে একটু সমস্যা রয়েছে।যার জন্য গুজা দিয়ে হাঁটে।গ্রামের লোক তাকে গুজা ব’লে ডাকে।তার ভালো নাম রবিন।

মেয়ের জন্য দুই ছেলে কে পচ্ছন্দ হয়েছে।মোস্তফা বিয়েটা একত্রিশ বয়সের লোকের সাথে দিতে চাইলো।পরবতর্তী মত পাল্টে মোস্তফা সরোয়ার প্রথম ছেলে মিন্টুকে ঠিক করলো।

-;মা মিন্টু নামক ছেলেটিকে খবর দেন।বিয়ে হইবো আমাগো পুতুলের লগে।নাসিমা ছেলের কথায় সায় দিলো।

৪৪.
সন্ধ্যায় মিন্টুকে খবর দিতেই সে হাজির মোস্তফা সরোয়ার বাড়িতে।এই বাড়ির ভবিষ্যৎ জামাই ব’লে কথা।তাই একটু আপ্যায়ন করার ব্যাবস্থা করতে নাসিমা চুলা কাছে যান।এইদিকে মোস্তফা সরোয়ার মেয়ে জামাই পেয়ে কথায় মশগুল হলো।

-;তুমি তো সবই শুনলা।আমার মাইয়া কিন্তু যেমন সুন্দরী তেমন গুণবতী।পড়াশোনা করছে।ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত।শুধু কথা বলতে পারে না।এছাড়া বাকি সবকিছু ভালোই।বিয়ের দিন তোমার চাহিদা মতো সবকিছু দেওয়া হবে।যা যা চেয়েছো।এসব ছাড়া তোমার কিছু বলার থাকলে বলতে পারো।

মিন্টু মাথা নাড়িয়ে না বলল।তার কিছু বলার নেই।চালচুলোহীন ছেলেকে কেউ মেয়ে দিচ্ছে।সাথে টাকা,পয়সা রয়েছে।তার জন্য এটাই অনেক।তার ওপর মেয়ে সুন্দরী আছে।কথা না ব’লে মানিয়ে নিবে।

-;চাচা যদি অনুমতি দেন।তাইলে পুতুলের সাথে আমি একা কথা কইতে চাই।

-;পুতুল বাড়িতে নাই।মামা বাড়ি বেড়াতে গেছে।তাছাড়া মেয়ে আমার রাজি আছে।আলাদা করে কিছু বলার দরকার নাই।তাছাড়া বিয়ে দিন বউকে সামনাসামনি দেখে নিও।মোস্তফা কথা কাটিয়ে নিলো।এরমধ্যেই নাসিমা নাস্তা নিয়ে আসে।বিয়ের পাকাপাকি কথা সেড়ে চলে যায় মিন্টু।মোস্তফা হাসতে থাকে।

-;মা সামনে পুতুলের বিয়া।সময় নাই।ওরে বিয়া দিমু।কিছু কিনাকাটি করতে মন চাইলে করেন।তারপর আমার ঝামেলা শেষ।

-;কিন্তু স্বাধীনকে আটকায় রাখবি কেমনে?

-;সেটা ভাবা হয়ে গেছে।শুনো।নাসিমা কান পাততেই।ছেলে,মোস্তফা তার প্ল্যানের কথা জানিয়ে দিলো।ছেলের কথাই নাসিমা বেগম খুশি হলেন।

এক পরিবার খুশির সংবাদ শুনতে প্রহর গুণছে।আর অন্য পরিবার তাদের খুশিটুকুর উপরে গ্রহ লাগাতে বসে আছে।

৪৫.
তালেপুর সরকারি স্কুলে শিশু শ্রেনিতে সাজু,মিলন ভর্তি হয়েছে।তাদের ক্লাস চলছে দারুণ।আজকে নতুন স্যার এসেছে।তাদের ক্লাসে পড়াচ্ছেন।কিন্তু সাজুকে শান্তি মতো ক্লাস মিলন করতে দিচ্ছে না।একটু পর পর সাজুর পিঠে চিমটি কাটে।মিলন মিটিমিটি হাসি দেয়।সাজু,মিলন এদের কান্ড কারখানা নতুন স্যার দেখতে পেয়ে কান ধরে দাড় করান।কিন্তু এরা চুপচাপ নেই।দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে একে অপরের সঙ্গে কথা ব’লে যাচ্ছে।স্যারের ক্লাসে একটুও মনযোগ নেই।মিলন একটা কথাই।স্যার যেহেতু দাঁড় করিয়ে রেখেছে।আজকে সে মনযোগ দিবে না।দাঁড়িয়ে কথা নিজেও বলছে।এবং সাজুকে বলতে বাধ্য করছে।স্যার,সাজু সামনে দাঁড়িয়ে বলল।

-;আচ্ছা তুমি বলো।একপাশে চৌধুরী সাহেবের বাড়ি।অন্য পাশে খান সাহেবের বাড়ি।বাড়ি মাঝখানে একটা দেয়াল রয়েছে। এবং দেয়ালের ওপর একটি মোরগ এমন ভাবে ডিম পারলো।যে এইদিকে পরলো না, ওইদিকে পরলো না।দেয়ালের মাঝে আটকে আছে।এই ডিমটার মালিক কে?সাজু গালে হাত দিয়ে ভাবতে লাগল।বলল,

-;ডিমটার মালিক আমি।কারণ ডিমটা দেয়াল থেকে যাতে না পরে তাই মোরগের দুই পায়ে সুপারগ্লু লাগিয়ে দিয়েছি।আমার ডিম খুব প্রিয় স্যার।একটা জায়গায় দশটা সে পারলেও কোনো সমস্যা নাই।

-;উল্টাপাল্টা বলে কনফিউজ করো না।সঠিকটা বলো।কি পারলে না?আচ্ছা তুমি আরেকটা বলো।মিলনকে জিজ্ঞেস করলো।

-;কোন প্রানী লেজ দিয়ে ভাত খায়?

-;স্যার,ভাত আমি,আম্মু আব্বু,আপু,সাজু,সবাই খাই।তাহলে কি আমাদের এক একটা করে লেজ আছে?হায় আল্লাহ,স্যার আপনার ওহ কি লেজ আছে? কিন্তু কোথায়?সামনে,পিছনে নাকি ডানে,বামে।বাসায় যেয়ে আপুকে বলবো। আপু জানো,আমাদের নতুন স্যারের ইয়া বড় লম্বা লেজ আছে।কিন্তু স্যার দেখায় না।তুমি গেলে স্যার দেখাবে মনে হয়।
মিলন অদ্ভুত কথায় ক্লাসে বাচ্চাগুলো হেসে দিলো।আর নতুন স্যার মিলন এর কথায় লজ্জা পেয়েছেন।আর নিজের ভুল বুঝতে পারলেন। এসব ছোট বাচ্চাদের ধাঁধা ধরলে পারবে কোথা থেকে?যারা পুরো বইয়ের অক্ষর ভালো করে এখনো বুঝতে পারে না।তাদের জন্য এটা কঠিন।এবং মজা টাইপ।

৪৬.
রেনু সকাল দশটা থেকে পানি ভাঙ্গছে।ব্যাথা করছে প্রচুর।নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না।এইদিকে বিছানা পড়ে কাতরাচ্ছে রেনু।কাউকে ডাক দেওয়ার মতো অবস্থা নেই।তবুও কিছু করার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়।যদি হাতের নাগালে কিছু পায়।যেটা সাহায্যে বাহিরে পুতুলের কানে শব্দ পৌঁছে যাবে।কিন্তু হাতে নাগালে কিছু আসে না।রেনু কেঁদে অস্থির।মনের ভিতরে তোলপাড় হচ্ছে।কি করবে বুঝতে পারছে না?মনে মধ্যে সাহস সঞ্চয় করে।আল্লাহ কে ডাকতে লাগল।বিপদে তিনি একমাত্র ভরসা।এছাড়া তার কোনো উপায় সে দেখতে পারছে না।

সকালের এটো থালাবাসন ধুতে কলপাড়ে আসে পুতুল।মামী একা ঘরে।তার ঘরে খাওয়ার পানি সব সময় রাখতে হয়।বাবু পেটে আসার পর থেকেই বেশি বেশি পানি প্রাণ করেন।এসময় তার নাকি গলা শুকিয়ে যায়।আজ তাড়াহুড়ো সেটাও দেওয়া হয়নি।কি মনে করে,পুতুল থালাবাসন হাত থেকে নামিয়ে রাখে।খাবার পানি জগে ভরে মামীর ঘরে দিকে ছুটে যায়।রুমে ঢুকার আগেই কারো কান্না শব্দ পেয়ে চমকে উঠে।রুমের দরজা হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে যায়।পুতুল দেখতে পায় রেনু কান্নামাখা মুখ।শরীর অর্ধেক বিছানা আর অর্ধেক বাহিরে।হাত থেকে জগ পড়ে যায়।দৌড়ে মামী মাথাটা কোলে নিয়ে কিছু বলার আগেই।রেনু অস্পষ্ট স্বরে বলল,

-;তোমার মামাকে ডাক দেও পুতুল।এতটুকু ব’লে রেনু আর কিছু বলতে পারেনা।কথা হারিয়ে ফেলে।নিশ্বাস বড় বড় করে টানতে থাকে।মনে হয় এখনই প্রাণ পাখিটি উড়াল দিবে।পুতুল,মামী মাথা বিছানায় রেখে দৌড়ে ছুটে চলে মামা কাছে খবর দিতে।কিন্তু মামা অবধি সে পৌঁছে যেতে পারেনি।আমন ধানের ক্ষেতেই ওতপাতা হায়নাদের দল।পুতুল মুখ চেপে জঙ্গলের গভীরে টেনে নিয়ে গেছে।এইদিকে স্বাধীন বাসায় লাঙ্গল রাখতে এসে রেনু এই অবস্থা দেখতে পায়।পুতুলের খোঁজ করতে বেশ কয়েকবার নিজের ঘর থেকে ডাক দেয়।কিন্তু পুতুল তার ডাকে আজ সারা দেয় নিই।স্বাধীন,পুতুল সাড়া শব্দ না পেয়ে রেনুকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে চলে।বাসায় এসে হয়তো পুতুল কে দেখতে পাবে।তখন জিজ্ঞেস করে নিবে।সে কোথায় ছিল ?এখন রেনু এবং তার অনাগত সন্তানকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে গেল।

চলবে….

আসসালামু আলাইকুম।গল্পটা আপনাদের কি পচ্ছন্দ হচ্ছে না?আপনাদের জন্য গল্প লিখি।অথচ আপনাদের কোনো রেসপন্স পাওয়া যায় না।তাহলে আমি কি ধরে নিবো?যে এই গল্পটা আপনাদের ভালো লাগে না।এটা এখানেই সমাপ্ত টানা উচিত।আমি ভুল করি।কিন্তু আমার ভুলগুলো ধরে ব’লে না।আপু তোমার এই জায়গায়গুলোতে ভুল আছে ঠিক করে নেও।আমি ভুলগুলো সংশোধন করে শিখতে চাই।শিখার জন্য আমার আপত্তি নেই।
কালকে আমি ইচ্ছে করেই গল্প দেয়নি।আপনাদের রেন্সপন্স না থাকায় আমি হতাশ হয়েছি।এখন মনে হচ্ছে প্রতিদিন গল্পটা দেওয়া আমার অপরাধ।এত ব্যাস্ততার মাঝে আলাদা সময় বের করে প্রতিদিন গল্পটা দেওয়া হয়।তবুও কেনো এইরকম হচ্ছে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here