চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা #ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া #পর্ব-২৮

0
583

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-২৮
৮৮.
আমার বাবার প্রতি আমার এক আকাশ পরিমাণ ঘৃনা।কারণ আমার প্রতিটা চোখের ঝরা পানির কারণ তিনি।বাবা শব্দ নিয়ে যত ভুলে থাকতেই চাই,ততই সামনে এসে দাড়ায়। মনে করিয়ে দেয়।আমার বিষাদময় জীবনের গল্পটা।আমি পৃথিবীতে এসেছিলাম।শুধু মাএ মায়ের কারণে।আর আজ সে নেই।বাবা নামক মানুষটি আমার পাশে আগেও ছিল না।আর এখনো থাকার প্রশ্নই উঠে না।সে আমার অতীত।অতীত হয়ে থাক।

আজ পুতুল এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে এসেছে।এটাই তার লাস্ট পরীক্ষা ছিল।বাসায় আসতেই শুনতে পায় বিদেশ থেকে তার চাচা এসেছে।তাকে দেখতে চায়।কিন্তু পুতুল তার সামনে যেতে চায়না।তার ওই বাড়ি কিংবা ওই বাড়ির কারো সাথে কোনো সম্পর্ক নেই।বাবা শব্দ তার জন্য মৃত।পুতুল নিজের কথায় অনড়।সে বিন্দু মাত্র ঘর থেকে নড়লো না।তার এমন কথা দিহান সাহেব জানতে বা শুনতে পেলেন না।তিনি স্বাধীনের ঘরের বারান্দায় বসে আছেন।একটিবার পুতুলকে দেখতে চান।কিছু কথা ব’লে চলে যাবেন।কিন্তু পুতুল আসেনি।স্বাধীনের হাতে চিরকুট গুঁজে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে নিজের ঘরেই দাঁড়িয়ে রয়।স্বাধীন চিরকুট পড়ে,ছোট্ট করে নিশ্বাস ছেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

স্বাধীনকে দেখে দিহান সাহেব দাঁড়িয়ে যান।কিন্তু পুতুলকে দেখতে না পেয়ে বলল,

পুতুল কোথায়?সে কি একটিবার আমার কাছে আসবে না?

স্বাধীন তার প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে পারেনি।স্বাধীন নিশ্চুপ থাকায় তিনিও খুব হতাশ হন।ছোট করে নিশ্বাস ফেলে বলল,

পুতুলের বড় আব্বু আর নেই।তিনি মারা গেছেন।

স্বাধীন চমকে উঠে।দিহান সাহেব দিকে তাকিয়ে বলল।

কবে মারা গেলেন?

তিনমাস হয়েছে।মৃত্যুর কয়েকমাস আগে থেকেই বিছানায় পড়ে ছিলেন।বিদেশে ডাক্তার দেখিয়ে ওহ কাজ হয়নি।তবে যাওয়ার আগেই তিনি তার শেষ ইচ্ছের কথা জানিয়ে যান।পুতুলের বড় আব্বু শেষ ইচ্ছে ছিল পুতুলের বিয়ে হোক।আর শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী চেয়েছেন,পুতুলের হাত আমার ছেলের জন্য।কারণ দলিল অনুযায়ী পুতুলের আঠারো হতে বেশি বাকি নেই।আঠারো হলেই মেয়ে বিয়ে জন্য উপযুক্ত।পড়াশোনা সে বিয়ের পরেও করতে পারবে।এতে কারো কোনো আপত্তি নেই।কিন্তু সমস্যা ওই দলিল লিখিত তৈরি হওয়া নিয়ে।বিয়ে আঠারো মধ্যেই হতে হবে।যদি আঠারো মধ্যে বিয়ে না হয়।তাহলে সামনে যে ঝড়টা আসবে সেটা আমি কিংবা আপনি,কেউ তাকে রক্ষা করতে পারবনা।

দিহান কথায় স্বাধীন আরেকটিবার চমকে উঠে।পুতুলের বিয়ে নিয়ে সবার এত মাথা ব্যাথা কেন?আর কিসের বিপদের কথা বলছেন উনি?স্বাধীন বুঝতে পারছে না।স্বাধীন না বুঝতে পারায় দিহান সাহেব হতাশ হন।সবটা ডিটেইলসে বলতে পারছেন না।শত হোক নিজেদের রক্তের টান রয়েছে।কিন্তু স্বাধীন বিয়েটা দিতে যত দেড়ি করবে।পুতুলের মৃত্যু ততটাই ঘনিয়ে আসবে।আর পুতুলের কিছু হলে সরোয়ার বংশের কোনো অংশীদার রইবে না।

৮৯.
একজন বাবা হিসেবে বলছি না।একজন মানুষ হিসেবে বলছি।আমার ছেলে অন্তর অতটাও খারাপ নয়।সে শিক্ষিত এবং বেশ মার্জিতভাবেই চলাফেরা করে।তার কথাবার্তায় দেশের প্রতি টান রয়েছে।সে অল্প বয়সে বিদেশের মাটিতে গেছে ঠিকই।কিন্তু দেশের প্রতি অসীম ভালোবাসায় ডুবন্ত।সে দেশে ফিরতে চায়।পড়াশোনা তার শেষ।কিন্তু বিজনেসের কাজের জন্য আসতে দিচ্ছি না।সবে নতুন বিজনেসে ঢুকেছে।এমন সময় দেশে আসা ঠিক হবেনা।আমি বিয়ের ব্যাপারটা অন্তরকে এখনো বলিনি।সে এসব জানে না।আপনার অনুমতি পেলেই জানাবো।

দিহান সাহেবের কথায় স্বাধীন কি বলবে বুঝে উঠতে পারছেনা?একদিকে মেয়ের স্বপ্ন।আর অন্যদিকে বিয়ের জন্য ভালো পাত্র।মেয়েদের বাবারা সব সব সময় মেয়ের জন্য বেস্ট খুঁজে।সেখানে তার মেয়ে’র দূর্বলতার কথা জানে কি না বুঝতে চেষ্টা করছেন।

আমি আমার মেয়েকে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চাই না।তাকে কথা দিয়েছি।তার স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত।কোনোকিছুতেই জোর করবোনা।

দেখুন স্বাধীন সাহেব মেয়ে আপনার।আপনার ইচ্ছে বিরুদ্ধে আমি তাকে জোর করতে পারি না।ছেলের বউ নিতে এসেছি।কোনো বিরুদ্ধ করতে নয়।আপনি শান্তি পূর্ণভাবে মেয়ে দিলেই নিয়ে যাব।এখন সময় দিচ্ছি সময় নিন।ভেবে না হয় জানাবেন।আসছি।দিহান উঠতে নিলেই স্বাধীন বলল,

মেহমান হয়ে যখন আমার বাড়িতে এসেছেন।তখন আপ্যায়ণ না করে কিভাবে ছাড়ি?আপনি এখানে থেকে যান।এই ফাঁকে না হয় পুতুলকে দেখে যাবেন।

আপনি থাকতে বলেছেন।এতেই আমি খুশি।কিন্তু আজ উঠতে হবে।আমার বন্ধু অসীম তালুকদারের বাড়িতে যেতে হবে।তাঁকে অলরেডি কথা দিয়েছি।বিজনেসে কিছু কাজ তার সাথে করা বাকি।তাই দুইদিন তার বাসাতেই থাকব।তিন দিনের দিন ফ্লাইট।দিহান সাহেব চলে যেতেই পুতুল রুম থেকে বের হয়ে আসে।কিন্তু স্বাধীন মেয়ের সাথে কোনো কথা না ব’লে হনহনিয়ে বাহিরে রাস্তা পথে চলে যায়।তার মেয়ের প্রতি অভিমান হ’য়েছে।বড়দের সম্মান করে।কিন্তু বাবা-র বাড়ির লোক ব’লে আসবেনা।এটা তোও ঠিক না।

৯০.
বাইকে বসে দুই ঠোঁটের মাঝে সিগারেট নিয়ে একটু পর পর টান দিচ্ছে অর্পন।পড়াশোনা কম্পিলিট না করে রাজনীতিতে পুরোপুরি ডুবে গেছে।সামনে ভোটাভুটি শুরু।কিছু চিন্তা করেই যাচ্ছে।জিসান,রিহান দুই চাচাতো ভাই তার পাশে বসে আছে।

কি’রে ভাই আজ তুই এত চুপচাপ কেন?অর্পন সিগারেটে শেষ টান বসিয়ে ফেলে দিল।ঠোটঁ উচিয়ে সিগারেট শেষ ধোঁয়া ছেড়ে বলল।

তোরা তৈরি হ।বাসায় যাব।দুইদিন থেকেই চলে আসবো।

অর্পন কথায় দুই ভাই একে অপরের দিকে তাকিয়ে বলল,

সূর্য আজ কোন দিকে উঠল ভাই।যার কানে সামনে হাজারবার চিতকার করে বাসায় যাওয়ার কথা ব’লে ওহ যে বাসায় যাবেনা বলত,আজ সে বাসায় যাবে।কাহিনি কি বস?

কাহিনি কিছু না।বাসায় যেতে মন চাইলো তাই যেতে চাইছি।কেন তোদের কোনো সমস্যা?থাকলে বলল,

না,কোনো সমস্যা নেই।তুমি যখন যেতে চাইছো।তখন যাব।এই সুযোগেই তনীকে দেখা হয়ে যাবে।কতদিন ছোট বোনকে দেখি না।জিহান,রিহানের আদরের ছোট বোন।সাফিন তালুকদার এবং মাসুদা তালুকদারের একমাত্র কন্যা।

অসীম তালুকদার চায়ের কাপে চুমুক বসিয়ে বন্ধুর সাথে টুকটাক বিজনেস নিয়ে আলাপে ব্যাস্ত।কথায় কথায় জানতে পারলেন।বন্ধুর ছেলে কে সামনে বিয়ে দিবেন।দিহানের হাসিখুশি মুখ দেখে তার কলিজায় আঘাত লাগল।আজ ছেলেটা যদি ঠিকঠাকভাবে পড়াশোনা করে বিজনেসটাতে মনটা দিতো তাহলে শান্তি পেতেন।ভালো পরিবার দেখে একটা মেয়ে বিয়ে করাতো।এক সময় তার পুত্তের ঘরে ওহ কোল আলো করে নাত বা নাতনি আসতো।অসীম তালুকদারের গভীর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়।তার সবকিছুই আছে।কোনো কিছুর অভাব নেই।কিন্তু সুখ নামক শব্দটা এই বাড়ি থেকে কেমন যেন বিলীন হয়ে গেছে?হাসিখুশি বাড়িটা নিরবতা পালন করছে কত বছর ধরে।ছেলেকে ঢাকায় দিলেন পড়াশোনা করে মানুষ হতে।কিন্তু সে কি করলো?মাঝ পথে পড়া ছেড়ে রাজনীতিতে ডুবে গেলো।এটা বাবা হিসেবে মানতে কষ্ট হয়।নিজে চেয়ারম্যান হয়েছিল গ্রামের মানুষের জন্য।তাদের বিপদে আপদে সাহায্য যেমন করেছেন।ঠিক তেমনই ছেলের জন্য মুখ কালা হয়েছে।গ্রামের যেসব করেছিল।এখন সেসব নেই ব’লে গ্রামের মানুষ শান্তিতে আছে।ছেলেটা বাড়িতে আসেনা।কতদিন হয়ে গেছে।হঠাৎ করে এসে তো একটু চমকে ওহ দিতে পারে।তা না করে ঢাকায় পড়ে আছে।ঢাকায় তার সব।

৯১.
সময়টা গভীর রাত।রাতের আঁধারে দূর থেকে গ্রামকে দেখে চোখ জুড়িয়ে নিলো অর্পণ।চোখ বুঝে নিতেই এক এক করে মনে পড়ে গেলো সেই ছোট বেলার কথা।মায়ের সাথে তার কত সুখময় সৃতি ছিল।বাবার কোলে চড়ে গ্রাম ঘুরা।তাদের কাছেই যত বায়না আবদারের ঝুড়ি।আজ সব কল্পনা।বাস্তবে সে যে বড্ডই একা।কেউ নেই তার পাশে।বাবা ডাকলেই ছুটে এই গ্রামে আসে না।আগে পড়াশোনা নিয়ে ব্যাস্ত ছেলেটা বখাটে ছেলেদের মতোই চলে।একদিন না খেয়ে থাকলে তোমার মতো করে।কেউ ব’লে না মা।

বাবা আমি তোর পছন্দের খাবার রান্না করেছি।খেতে আয়।না খেয়ে পড়লে পড়া মনে থাকে না।খাবার গরম গরম খেতে হয়।ঠান্ডা হলে খেয়ে শান্তি পাবি না।অর্পণ সেই ডাকে পড়া মাঝ পথে থামিয়ে বলত,

মা ডিস্টার্ব কর না।পড়া শেষ করে আসছি।

শরীরে জ্বর আসলে তোমার মতো সারা রাত জেগে কেউ ব’লে না।

তোর কোথায় কষ্ট হচ্ছে আমায় বল বাবা?আমি ম্যাজিক মতোই তোর কষ্ট দূর করে দিব।

অর্পন আয় বাবা তোর মাথায় তেল দিয়ে দেই।আরাম পাবি।অর্পণ এখন মায়ের কথায় আর রাগ করে না।রাগ কবেই পানিতে পরিনত হয়েছে।দূষ্টু অর্পণ দূষ্টমী সেই কবেই ছেড়েছে।রাজনীতির মহলে সবাই জানে অর্পণ গম্ভীর আর রাগী ছেলে হলেও কারো সাথে অন্যায় সে এখন করে না।তাড়াহুড়ো কোনো ডিসিশন সে নেয় না।ঠান্ডা মাথায় সবটা সামলাতে জানে।তাকে ভালো ছেলে হিসেবে জানে দলের ছেলেরা।তবে হ্যা নিজের পরিবারের কাছে যতটা পারে খারাপ প্রমাণ করে?যেমন একটু আগে বখাটে ছেলেদের মতো বাইকে বসে সিগারেট টেনেছে।বাবার ভাড়া করা লোকটা তার পিছন থেকে সরে যেতেই মুখের সিগেরেটটা ফেলেছে।একবার মুখ দিয়ে যেটা ব’লে সেটাই করে।জিদ বাবা-র মতোই পেয়েছে।অর্পণের গম্ভীর মুখের ভাব দেখে দুই ভাই কোনো কথা ব’লে না।চুপচাপ সময় চলছে।

চলবে….

আসসালামু আলাইকুম পাঠক মহলবাসী।আগেরবার মোস্তফা সরোয়ারের বিয়েতে ঝাড়ু,জুতা,চড়,থাপ্পড়,লাথি মেরেছেন।এবার মেয়ের বিয়েতে এসব চলবে না।গিফট চাই।সামনে ধামাকা হবে।সবাই তৈরি থাকুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here