খোলা_জানালার_দক্ষিণে #পর্ব_৩৬ #লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

0
564

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_৩৬
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

পুরুষালি শক্তির সাথে পেরে ওঠা এতটাই সহজ! মেহেভীনকে খুব শক্ত করে ধরা হয়েছে। মেহেভীনের সমস্ত শরীর অবশ হয়ে আসতে শুরু করেছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। মেহেভীন পা দিয়ে আরিয়ানের পায়ে শত-শত প্রহার করেই যাচ্ছে। আরিয়ান আগের থেকে দ্বিগুন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। মেহেভীনের করুন অবস্থা দেখে রাইমা বেগম কনুই দিয়ে রহমানের পেটে প্রহার করল। সাময়িক সময়ের জন্য হাতের বাঁধন আগলা হতেই রাইমা বেগম রহমানকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল। মাটি থেকে বাঁশটা তুলে আরিয়ানের মাথায় চার-পাঁচটা বাড়ি বসিয়ে দিল। ছয় বারের বেলায় আরিয়ান বাঁশটা ধরে ফেলল। সে মেহেভীনকে ছেড়ে রাইমা বেগমকে ধরতে যাবে তখনই মেহেভীন আরিয়ানকে পা বাঁধিয়ে ফেলে দিল। মেহেভীন ক্রোধে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়লো। রাইমা বেগমের হাত থেকে বাঁশ নিয়ে উন্মাদের মতো আরিয়ানকে প্রহার করতে লাগলো। আরিয়ানের মস্তক বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। সমস্ত শরীর নিস্তেজ হয়ে আসতে শুরু করেছে। আঁখিযুগল ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। এভাবে মারতে থাকলে ছেলেটা মা’রা যাবে রাইমা বেগম মেহেভীনকে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে মেয়েটা আজ তার দ্বিগুন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। মেহেভীন আরিয়ানকে ফেলে রহমানের দিকে এগিয়ে গেল। বজ্রকণ্ঠে বলল,

–এই নোংরা হাত দিয়ে আমার মাকে স্পর্শ করেছিস। তোর এই নোংরা হাতের অবস্থা আমি কি করি দেখ। কথা গুলো বলেই নিজের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে রহমানের হাতে প্রহার করল। সাথে সাথে রহমাম হৃদয়বিদারক চিৎকার দিয়ে উঠল। আরিয়ান জ্ঞান হারিয়েছে। রহমানের চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে এল। আরিয়ান আর রহমানকে এই অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে সবাই কানাঘুষা শুরু করে দিল। প্রাপ্তি মা প্রানপ্রিয় স্বামী আর ছেলের করুন অবস্থা দেখে উচ্চ স্বরে কান্না করতে লাগলো। মেহেভীন আর রাইমা বেগমকে অকথ্য ভাষায় গা’লা’গা’লি করতে লাগলো। কয়েকজন প্রতিবেশীর সাহায্য নিয়ে আরিয়ান আর রহমানকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। এতক্ষণে দমিয়ে রাখা সব দুর্বলতা সামনে চলে আসলো। বাড়ি ফাঁকা হতেই মেহেভীন ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো। মেহেভীনের নাক দিয়ে গ’ল’গ’ল করে রক্ত পড়ছে। তা দেখে রাইমা বেগমের বুকটা কেঁপে উঠল। ছোট বেলা থেকেই মেহেভীনের এই অসুখটা আছে। অতিরক্তি রৌদ্রে গেলে বা মাথায় বেশি চাপ লাগলেই অস্বাভাবিক ভাবে মেহেভীনের নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। আশেপাশে কেউ নেই, যে তার সাহায্য নিয়ে মেহেভীনকে নিয়ে হাসপাতালে যাবে। রাইমা বেগম ফরিদের বন্ধুকে ফোন করল কিন্তু ফরিদের বন্ধু ফোন তুলছে না। সে হয়তো রুগী দেখায় ব্যস্ত আছে। রাইমা বেগম দিশেহারা হয়ে পড়লেন। সে মেহেভীন বিছানায় শুয়ে দিয়ে বাসায় তালা লাগিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্য বের হয়ে গেল। বাসা থেকে দশ মিনিট লাগে হাসপাতালে যেতে। রাইমা বেগম চল্লিশ মিনিট পর ফরিদের বন্ধুকে সাথে নিয়ে বাসায় ফিরল। সে মেহেভীনের অসুখ সম্পর্কে অবগত আছে। তাই এসেই চিকিৎসা শুরু করে দিলেন।

–ভাবি মেহেভীনের শরীর তো ভিষণ দুর্বল। বেশ কিছু দিন ধরে খাওয়ার অনিয়ম করছে। আপনার মেয়ে এত কিসের চিন্তা করে? এতটুকু মেয়ে চিন্তা করে করে নিজেকে ভেতর থেকে শেষ করে দিচ্ছে। আমি কয়টা ঔষধ লিখে দিয়েছি। আপনি ঔষধ গুলো আনিয়ে নিবেন। আর পারলে মেহেভীন কে স্যালাইন করিয়ে নিবেন। তাহলে যদি মেয়েটার দুর্বলতা একটু কমে খাবারের অনিয়ম একদম চলবে না। আর মেহেভীনের মাথায় আঘাত লাগতে দিবেন না। এভাবে শরীর থেকে রক্ত ক্ষয় হলে যেকোনো সময় মৃত্যু হতে পারে। কথা গুলো বলেই ফরিদের বন্ধু চলে গেল। রাইমা বেগম নেতিয়ে যাওয়া শরীরে মেয়ের পাশে বসলো। রবিন নামের এক ছেলেকে ফোন দিয়ে জানালো। সে যেন এসে মেহেভীনকে স্যালাইন লাগিয়ে দিয়ে যায়।

এমন ভাবে আপনাকে চাইলাম! নিয়তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে, আমার সমস্ত পার্থনার উর্ধে গিয়ে যেন আপনাকে চাওয়া মৃত্যুর মতোই সুন্দর। থাকুক না কিছু ভালোবাসার অপূর্ণতা! সব ভালোবাসা পূর্ণতা পেলে জীবনের সকল স্বাদ ফুরিয়ে যাবে, ইচ্ছেদের মৃত্যু হবে। কথা গুলো ভাবতে গিয়ে দম বন্ধ হয়ে আসছিল মুনতাসিমের। স্নিগ্ধ আঁখিযুগল মেহেভীনের ছবির দিকে বিদ্যমান। কাঁধে কারো স্পর্শ পেতেই ফোনটা অফ করে দিল। সে জানে এই স্পর্শটা কার ছোট ছেলে থেকে এই স্পর্শটা তাকে আদর ভালোবাসা দিয়ে এসেছে। মুনতাসিম বাহিরের দিকে দৃষ্টি রেখেই বলল,

–কিছু বলবেন আব্বা?

–তুমি আমার এক কথায় নিজের ভালোবাসার মানুষকে ভুলে যেতে রাজি হলে!

–আল্লাহ তায়ালা মুখ দিয়েছে বলার জন্য মুখ কি আর চুপ থাকবে আব্বা। মুখ চুপ থাকবে না তবে মন থেমে যেতে পারে। মাঝেমধ্যে হাহাকার করে উঠবে। মানুষ তো ভেতরের খবর জানবে না। ভেতরটা বোঝার ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কারো নেই। আমি আপনাকে বলেছি মেহেভীনকে ভুলে যাব। আমি তো একবারও বলিনি আপনার পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করব। আপনাকে কষ্ট দিয়ে চাইলেই আমি মেহেভীনকে বিয়ে করে সুখে সংসার করতে পারব৷ কিন্তু পরপারে যখন আপনি আমার কাছে হিসাব চাইবেন। তখন আমি কি জবাব দিব? দীর্ঘশ্বাস বলেও একটা ব্যাপার আছে। আমি চাই না আমার প্রতিটি সুখ আপনার দীর্ঘশ্বাসের কারন হোক। আমি এই জীবনে বিয়ে করব না। আপনি আমায় অনুগ্রহ করে বিয়ের কথা বলবেন না। আমি আপনার সিদ্ধান্তকে সন্মান জানিয়েছি। আমি আশা রাখছি আপনিও আমার সিদ্ধান্তকে সন্মান জানাবেন। অপূর্ণতার জীবনে পূর্ণতার ক্ষুধা মানুষকে বাঁচতে শেখায়। আমি না হয় পরিবারের পূর্ণতা দেখেই বাকি জীবন পার করে দিব। ছেলের অভিমানের ভাষা বুঝতে সময় নিল না রিয়াদ চৌধুরী। গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–আর আক্ষেপ?

–আমার আক্ষেপ থাকবে কেন? আমি তো স্ট্রং। আমি আবার মানুষ নাকি! আমি তো রোবট, আমার আবার কিসের ফিলিংস? কথা গুলো বলে বিলম্ব করল না। কক্ষ ছেড়ে বের হয়ে গেল। রিয়াদ চৌধুরী হতাশ হয়ে বেলকনির গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে থাকলো।

রজনীর আঁধার নিজ নিয়মে ধরনীকে গ্রাস করে ফেলছে। চারদিকে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। মেহেভীনের সাথে যেন পরিবেশও মন খারাপ করেছে। কেমন বিষাদের ন্যায় স্তব্ধ হয়ে আছে। শরীরের সমস্ত শক্তি ক্ষয় হয়ে কখন যে নিদ্রা দেশে তলিয়ে গিয়েছিল। সে ঘুনাক্ষরেও টের পায়নি। মেহেভীন দশ মিনিট হলো সজাগ হয়েছে। মায়ের ক্লান্ত মুখশ্রীর দিকে দৃষ্টিপাত করে আর ডাকতে ইচ্ছে করেনি। আঁখিযুগল স্থীর হয়ে আছে উপরের দিকে অশ্রুগুলো শুকিয়ে গিয়েছে। রাইমা বেগম সজাগ হয়ে মেয়েকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল,

–তুই উঠে পড়েছিস?

–জা’নো’য়া’র গুলো কোথায় মা? এখনো বাহিরে আছে নাকি পুলিশ আদর করতে করতে নিয়ে গিয়েছে?

–হাসপাতালে আছে ওদের অবস্থা খুব একটা ভালো না। আমি চিন্তা করছি ওরা সুস্থ হলে আমাদের কি অবস্থা হবে? এই জন্যই তোকে বলেছি তুই বিয়ে কর। তুই বিয়ে করলে আমাদের মাথার ওপরে বিশাল ছাদ তৈরি হয়ে। আমাদের পায়ের তলার মাটি শক্ত হবে। কেউ আমাদের ক্ষতি করতে আসার আগে দশবার ভাববে।

–এখনো ম’রে’নি ওরা?

–আমি তোকে কিছু বলছি শুনতে পারসনি? তোকে ঔষধ খেতে হবে। আমি খাবার তৈরি করে নিয়ে আসছি।

–তুমি নিজেও অসুস্থ মা ডক্টর দেখিয়েছো?

–তোর আলিম আংকেল এসেছিল। ঔষধ দিয়ে গিয়েছে খেয়েছি।

–মিথ্যা কেন বলছ? রাইমা বেগম উত্তর দিলেন না। উঠে রান্না ঘরে চলে গেলন। মেহেভীন হালকা করে উঠে বসলো। আশেপাশে দৃষ্টিপাত করে ফোনটা খোঁজার চেষ্টা করল। কিন্তু কোথাও ফোনের দেখা মিলছে না। সে বুঝল তার মা সরিয়েছে। হাতের স্যালাইন প্রায় শেষ হয়েই আসছে। সেদিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল মেহেভীন।

সাহেলা চৌধুরী মাশরাফিের পাশে বসেছিল। তখনই রিয়াদ চৌধুরী আছেন। রিয়াদ চৌধুরীকে দেখে মুখশ্রী কুঁচকে ফেলে সাহেলা চৌধুরী। রিয়াদ চৌধুরী দরজার কাছে থেকেই বলল,

–আমার সাথে একটু আসো তো।

–কোথায় যাবেন?

–আমার সাথে গেলেই দেখবে পাবে। কথা গুলো বলেই সাহেলা চৌধুরী নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেন। স্বামীর এহেন কর্মে বিস্ময় হয়ে গেলেন সাহেলা চৌধুরী। মেহেভীনের মা মেহেভীনকে খাইয়ে নিজেও খেয়ে নিল। অদ্ভুত ভাবে ভেতরে ভয় কাজ করছে তার। সে নিজের জীবনের পরোয়া করে না। কিন্তু মেহেভীন তার কিছু হয়ে গেলে মেহেভীনের কি হবে? রাইমা বেগমের ভাবনার মাঝেই কলিং বেল বেজে উঠল। মেহেভীন মলিন কণ্ঠে বলল,

–দরজা খুলো না মা আর কাউকে বিশ্বাস করি না। এরা আসবে আর আমাদের অবস্থা দেখে মজা নিবে। রাইমা বেগম মেয়ের কথায় সম্মতি জানালো। কিন্তু তাদের বিরক্ত করতে কলিং বেল বেজেই চলেছে। রাইমা বেগম মনে সাহস নিয়ে দরজা খুলতে গেল। দরজা খুলে ভিষণ অবাক হয়ে গেল! রিয়াদ চৌধুরী হাসোজ্জল মুখশ্রী করে বলল,

–ভেতরে আসতে বলবেন না। রাইমা বেগম লজ্জায় পড়ে গেল। সে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলল,

–ভেতরে আসুন অসময়ে আপনাদের উপস্থিতি আশা করিনি। তাই একটু অবাক হয়েছিলাম।

–মেহেভীন কোথায়? রিয়াদ চৌধুরীর কথায় রাইমা বেগমের মুখশ্রীতে আঁধার ঘনিয়ে এল। রাইমা বেগমকে নিস্তব্ধ থাকতে দেখে, রিয়াদ চৌধুরী উৎসুক দৃষ্টিতে রাইমা বেগমের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। তখনই মেহেভীন ধীর কণ্ঠে বলল, কে এসেছে মা? রিয়াদ চৌধুরী নিজের সাথে নিয়ে আসা জিনিস গুলো রাইমা বেগমের দিকে এগিয়ে দিল। রাইমা বেগম ভদ্রতা সুলভ সেগুলো হাতে নিল। রিয়াদ চৌধুরী মেহেভীনের কক্ষে দিকে অগ্রসর হলো। মেহেভীনের কক্ষে এসে মেহেভীন কে এমন অবস্থায় দেখে মনের অজান্তেই বুকটা হুঁ হুঁ উঠল। রিয়াদ চৌধুরীকে দেখে মেহেভীন সালাম দিল। সে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। তাড়াহুড়ো করে উঠে বসতে গিয়ে হাতে টান লাগলেই মৃদুস্বরে আর্তনাদ করে উঠল। রিয়াদ চৌধুরী নরম কণ্ঠে বলল,

–এতটা ব্যস্ত হতে হবে না মা। তুমি কি অসুস্থ? মেহেভীনকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রাইমা বেগম বলল,

–জি, মেয়েটা আমার একটু অসুস্থ আপনারা দাঁড়িয়ে থাকবেন না বসুন। রিয়াদ চৌধুরী আর সাহেলা চৌধুরী সোফায় গিয়ে বসলো। রাইমা বেগম নাশতা নিয়ে আসতে চলে গেল। একটু পরে নাশতা হাতে ফিরল। রিয়াদ চৌধুরী হেয়ালি না করে বলল,

–আপনার বাড়ি আলা কোথায়?

–নেই ঢাকায় গিয়েছে আসতে দেরি হবে। আসলে ভিষণ আমার মা অনেক অসুস্থ হয়ে গিয়েছে। সেখানে তাকে দেখার মতো কেউ নেই। তাই মেহেভীনের বাবা একমাস থাকবে। মায়ের মুখে প্রথম মিথ্যা কথা শুনে মেহেভীনের আঁখিযুগল বড় বড় হয়ে গেল।

–আমি একটা প্রস্তাব নিয়ে আসছিলাম। মেহেভীনকে আমার বাড়ির বউ করে নিয়ে যেতে চাই। আপনাদের অনুমতি থাকলে তবেই সামনের দিকে আগাব। এমন কথায় অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো মেহেভীন। বিষন্ন মুখশ্রীতে লজ্জার আভাস দেখা গেল। রাইমা বেগম বললেন,

–আপনি তো হীরার জন্য আমার মেয়েকে চেয়েছেন। আমাদের নাকচ করার কোনো ক্ষমতা আছে?

–আমরা একই এলাকায় থাকি আলাদা করে খোঁজ খবর নেওয়ার বিষয়টি থাকছে না। তবে কি আমরা বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করতে পারি?

–অবশ্যই পারেন।

–মেহেভীনের বাবা না থাকলে কিভাবে আগাব? রিয়াদ চৌধুরীর কথায় কথা গুলো গলায় আটকে আসছে রাইমা বেগমের। এক মুখে এত মিথ্যা করা বলা যায়! তবে মেয়ের ভালোর জন্য এতটুকু মিথ্যা তো বলাই লাগবে।

–আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। আপনাকে নাকচ করার ক্ষমতা মেহেভীনের বাবার হবে না। আমি মেহেভীনের বাবাকে সবকিছু বলব।

–আমি নিজেও মেহেভীনের বাবার সাথে কথা বলে নিব। সামনের সপ্তাহে বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ করতে চাইছি। আমার ছেলের বিয়ে তো আর যেমন-তেমন ভাবে দেওয়া যায় না। এই সপ্তাহ সবকিছু আয়োজন করার জন্য নিলাম। আপনাদের কোনো অসুবিধা হবে না তো আবার? মেহেভীন কিছু বলতে যাবে। তখনই রাইমা বেগম আঁখিযুলের ইশারায় বোঝায় ভুলভাল কিছু বললে সে মায়ের ম’রা মুখ দেখবে। মেহেভীন গম্ভীর মুখশ্রী করে বসে রইল। রিয়াদ চৌধুরী মেহেভীনের কাছে এসে বলল,

–দেখি মা তোমার হাতটা এগিয়ে দাও তো। মেহেভীন ভদ্রতা বজায় রাখতেই হাত এগিয়ে দিল। রিয়াদ চৌধুরী ডায়মন্ডের একটা আংটি মেহেভীনের হাতে পড়িয়ে দিল। পকেট থেকে নাকফুল বের করে সাহেলার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

–এটা তুমি পড়িয়ে দাও। সাহেলার মুখভঙ্গি দেখে বোঝা যাচ্ছে না। সে বিরক্ত হয়ে কাজটা করছে নাকি খুশি হয়ে। মেহেভীনের নাকের ফুলটা খুলে নতুন নাক ফুলটা পড়িয়ে দিল। রিয়াদ চৌধুরী ধীর কণ্ঠে বলল,

–এই নাক ফুলটা মুনতাসিমের মায়ের মুনতাসিম ছোট বেলায় বলেছিল, মা তুমি আমার বউকে তোমার এই নাক ফুলটা দিয়ে দিবে। সে ছোট ছিল না বুঝে কথাটা বলেছিল, বলার কিছু দিনের মাথায় হয়তো ভুলেও গিয়েছিল। কিন্তু মুনতাসিমের মা ছেলের কথা হৃদয়ে গেঁথে রেখেছিল। মৃত্যুর আগে বলেছিল তার ছেলের বউকে যেন এই নাক ফুল দিয়েই চৌধুরী বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এই নাক ফুলের মধ্যে অনেক দোয়া আর ভালোবাসা জড়িয়ে আছে মা। আশা রাখছি আমার ছেলেকে আঘাত করার মতো কোনো কাজ তুমি করবে না। আমার ছেলেটা আমার হৃদয়ের মণি তার এক বিন্দু কষ্ট আমি সহ্য করতে পারি না। মেহেভীন কি বলবে বা তার কি বলা উচিৎ বুঝতে পারল না। সে নিরুত্তর রইল।

চলবে…..

(যারা নায়ক নায়িকার সিন পড়তে পছন্দ করেন। তাদের কাছে এই পর্ব গুলো বোরিং আর একঘেয়েমি লাগবে স্বাভাবিক। আপনারা চাইলে পর্ব গুলো স্কিপ করতে পারেন। একটা গল্পের জন্য শুধু নায়ক নায়িকার সিন ছাড়া বাকি সিন গুলো তুলে ধরতে হয়। না হলে গল্পের আসল স্বার্থকতা আসে না। এই যে আমায় অনেকে বলছেন মেহেভীনকে মেরে দি’তে বিশ্বাস করুন প্রানের মায়া সবারই আছে। আমার পাঠক গুলো ভালো করেই জানে আমি স্যাড এন্ডিং গল্প লিখতে কতটা ভালোবাসি। এর জন্য অর্ধেক পাঠক রাগ করে আমার গল্প পড়া ছেড়ে দিয়েছে। কিছু পাঠক ভয়ে ভয়ে পড়ে আর বলে পুড়া পুড়ি যাই করেন শেষটা সুন্দর দিয়েন। আপনাদের কমেন্ট দেখে এবার আমার মস্তিষ্ক নাড়া দিয়ে উঠছে। স্যাড দেওয়ার চিন্তা করছে মন। তবে আপনাদের নিরাশ করব না বলেছি। এই কথা বলার পড়েও যদি নিরাশ করি। তাহলে আপনারা আমাকে কাঁচা মরিচ আর লবন দিয়ে মাখিয়ে খাবেন। যারা স্যাড এন্ডিং দিতে বলছেন তারাই মনে মনে অভিশাপ দিবেন। ইতিমধ্যে যতগুলো অভিশাপ খেয়েছি সেগুলো হজম করে নি। পরবর্তীতে না হয় আবার খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিব। যাদের গল্প পড়তে ভালো লাগছে না তারা এখানই থেমে যান। তিক্ততা নিয়ে গল্প পড়ে আপনার সুন্দর মন ও মস্তিষ্ক নষ্ট করবেন না। তিক্ততা ভিষণ খারাপ জিনিস আমি চাই না। আমার গল্প পড়ে আমার ভালোবাসার মানুষ গুলো তিক্ত হয়ে উঠুক। কেমন হয়েছে জানাবেন সবাই রেসপন্স করবেন ধন্যবাদ। শব্দসংখ্যা:১৯৪২)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here