দোলনচাঁপার_সুবাস #পর্বঃ২৫ #লেখনীতে- তাসফিয়া হাসান তুরফা

0
484

#দোলনচাঁপার_সুবাস
#পর্বঃ২৫
#লেখনীতে- তাসফিয়া হাসান তুরফা

দোলার মুখে হাসি দেখে রাকিব নিজে হাসতে ভুলে যায়। বোকার ন্যায় জিজ্ঞেস করে,

—হাসছো কেন?

—ইচ্ছে হয়েছে তাই হেসেছি। হাসার অধিকার কি তোমার একার আছে নাকি?

দোলা তাচ্ছিল্যের সাথে জবাব দেয়। এবার রাকিব পুরোপুরি ভড়কে যায়! হলোটা কি এ মেয়ের? একটু আগেও যে মেয়েটাকে ভয়ে জড়সড় দেখা যাচ্ছিলো সে কিনা হুট করেই এমন স্বাভাবিক ও সাহসী হয়ে উঠলে? ব্যাপারটা ঠিক হজম হলোনা ওর। রাকিব ধরে নিলো, অতি ভয়ে দোলার মাথা বিগড়ে গেছে তাই এরকম উল্টাপাল্টা আচরণ করছে! সে নিজেও মাথা চুলকে বাইক থেকে নামে। দুই কদম হেটে দোলার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,

—ভয়ের চোটে মাথা কাজ করতেছে না তাইতো? আরে চিন্তা করোনা, বেশিদিন ইউজ করবোনা তোমায়.. শুধু এক রাত…

—নিজের ভালো চাইলে এর পরে আর কোনো শব্দ উচ্চারণ করিস না, রাকিব।

আচমকা পেছন থেকে এক গুরুগম্ভীর আওয়াজ ভেসে আসে, যার তীব্র হুমকি স্পষ্ট রাকিবের কানে দোল খায়। রাকিব অবাক হলেও, এ যাত্রায় দোলা ভড়কায় না। কেননা, তখন রাকিবের পেছনে নিশীথকে দেখেই সে হেসেছিলো৷ এজন্যই এত নির্ভার হয়ে নির্বিঘ্নে ওকে জবাব দিয়েছে।
এদিকে রাকিব বিস্ময় নিয়ে পেছন ফিরতেই নিজের বাইকের উপর নিশীথকে বসে থাকতে দেখে রাকিব থতমত খায়। অবাক গলায় শুধায়,

—আপনি কে? আর আমার বাইকের উপর বসেছেন কেন? সরুন!

নিশীথ শব্দহীন হাসে৷ ওর চেহারায় কেমন যেন হিংস্র হিংস্র ভাব। রাকিব সামান্য ঘাবড়ায় তবু ভাব ধরে রাখার জন্য তা মুখে প্রকাশ করেনা! নিশীথ আলস্য ভংগিতে বাইক থেকে নেমে যায়। গা হতে ধুলো ঝাড়ার ভাব করে বলে,

—এখন তো কেবল তোর বাইকের উপর বসেছি। কিন্তু সময় থাকতে তুই শুধরে না গেলে নিজেই বাইকে বসার অবস্থায় থাকবিনা!

রাকিব বিরক্ত হয়। নিশীথ কে, কেনই বা এসব বলছে কোনোটাই বুঝতে পারছেনা সে। সে তো দোলাকে তুলে নিয়ে যেতে এসেছিলো, ওকে ভয় দেখাতে চেয়েছিলো কিন্তু মাঝখান থেকে এই হিরোর মতোন ছেলেটা কোত্থেকে এলো ওর নির্বোধ মস্তিষ্কে বোধগম্য হয়না!

—আরে ভাই আপনি কে? আর এত ডায়লোগই বা দিচ্ছেন কেন? দেখছেন না, এখানে আমরা দুজন পারসোনাল কথা বলছি? আপনি গিয়ে নিজের চরকায় তেল দেন। আমাদের মাঝখানে কথা বলিয়েন না তো!

রাকিবের কথায় দোলা চোখ সরু করে তাকায়। দাতে দাত চেপে বলে,

—পারসোনাল কথা? তোমার সাথে ফরমাল কথা বলারও আমার রুচি নেই, পারসোনাল কথা তো দূরে থাক!

অচেনা মানুষের সামনে এভাবে অপমান করায় রাকিবের গায়ে লাগে বেশ। সে রেগে দোলার দিক তেড়ে যেতে নিলে পেছন থেকে বাধা অনুভব করে। পেছনে ফিরতে নিলেই ওর মুখের উপর নিশীথের শক্ত মুষ্টির ঘুষি পড়ে। ঘটনার আকস্মিকতায় রাকিব কিছু বুঝে উঠার আগেই মাটিতে বসে পড়ে। ঘুষির বেগ এতটাই জোরে ছিলো যে ওর নাক দিয়ে সামান্য র’ক্তও বেরোলো বোধহয়। এবার রাকিব উঠে দাঁড়ায়। নিশীথের কলার ধরার জন্য এগিয়ে যেতে যেতে বলে,

—এই তোর সমস্যা কি? আমাদের মাঝখানে ঢুকছিস কেন? চলে যেতে বললাম না তোকে? সাহস কিভাবে হলো আমায় মারার?

কিন্তু ওর হাত পৌছাবার আগেই নিশীথ সরে যায়। বরং উল্টোহাতে ওকে পেছন থেকে ধরে গলার কাছে চেপে ধরে বলে,

—আমি মাঝখানে এসেছি না তুই? বা’স্টা’র্ড কোথাকার! তোর সাহস কিভাবে হলো আমার দোলনচাঁপাকে বিয়ে করতে চাওয়ার? আমার প্রেয়সীর দিকে তাকানোর, ওকে নিয়ে বাজে কথা চিন্তা করার সাহস তোকে কে দিয়েছে, হ্যাঁ?

প্রচন্ড রাগে কথাগুলো বলার মাঝে নিশীথ বেশ জোরে রাকিবের গলায় চাপ প্রয়োগ করে। শক্তি-সামর্থ্যে ও উচ্চতায় নিশীথ ওর তুলনায় বেশ বলবান, অন্যদিকে সে কিছুটা হ্যাংলা পাতলা গড়নের ছেলে। যার কারণে ওর সাথে শক্তিতে কুলোতে পারলোনা সে। নিশীথের চেহারার দিক তাকানো যাচ্ছেনা৷ রা’গের শিখায় চোখমুখ ইষত র’ক্তিম আভা ধারণ করেছে। দোলা এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে ওর কথা শুনছিলো। নিশীথের প্রত্যেকটি কথা ওর প্রতি ভালোবাসার স্পষ্ট জানান দিচ্ছিলো দোলাকে। একিসাথে ওর মন আনমনেই পুলকিত হচ্ছিলো! তবে ওর শেষের কথায় দোলার মনে ভয় জাগে। রাকিবের জন্য ওর কোনো সহানুভূতি না থাকলেও এখানে রাস্তার মাঝে কিছু একটা হয়ে গেলে মানুষ জড় হবে! নির্ঘাত একটা কেলেংকারী হয়ে যাবে তখন! চারদিকে জানাজানি হবে! তাই ও দ্রুতপায়ে এগিয়ে যায় নিশীথের কাছে। আতংকিত স্বরে বলে,

—প্লিজ ওকে ছেড়ে দিন। আপনি যেভাবে ধরেছেন, ও নির্ঘাত শ্বাস আটকে ম’রে যাবে।

—ম’রতে দাও ওকে। নিশীথের ভালোবাসাকে নিয়ে বাজে চিন্তাকারীর বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই।

—আপনি বুঝছেন না ব্যাপারটা। আমরা রাস্তায় আছি, ওর এখন কিছু হয়ে গেলে একটা কেলেংকারী হয়ে যাবে। সবকিছু মিলে বাজে একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। দোহাই লাগে আপনার, প্লিজ ওকে ছেড়ে দিন!

—যা হওয়ার হোক, আমি ওকে ছাড়ছিনা!

নিশীথ বদ্ধপরিকর দেখে এবার দোলা ভয় পায়। কি করবে না করবে ভাবতে ভাবতেই আচমকা ওর বাহু চেপে ধরে। মিনতি করে বলে,

—আমার জন্য ওকে ছেড়ে দিন, প্লিজ?

কিছক্ষণের জন্য ওর দিকে তাকায় নিশীথ। মেয়েটার চোখভরা পানি টলমল করছে, মুখজুড়ে আকুতি। ওর আবদার সে আর ফেলতে পারেনা। ছেড়ে দেয় রাকিবকে এ যাত্রায়। দোলা যেন হাফ ছেড়ে বাচে। নিশীথ যেভাবে রেগে গিয়েছিলো ও সময়মতো না আটকালে আজ সত্যিই আর রাকিবকে খুজে পাওয়া যেতোনা! রাকিব ছিটকে সরে আসে নিশীথের কাছ থেকে৷ ছাড়া পেয়ে কোনোরকম কাশতে কাশতে দোলার উদ্দেশ্যে বলে,

—ওহ। এবার বুঝেছি কেন তুই বিয়ের জন্য রাজি হচ্ছিলি না। এই ছিলো তোর মনে? সবার সামনে স’তী সেজে তলে তলে প্রেম করোস? আজকেই তোর মা-রে বলে দিবো দাঁড়া! তোকে যদি মা’ইর না খাওয়াইছি তবে আমার নাম…

—খবরদার! যদি তোর মুখ দিয়ে এ ব্যাপারে কোনোপ্রকার কথা বের হয় তবে জিহবা টে’নে ছি’ড়ে নেবো। তখন আর নিজের নাম নেওয়ারও অপশন থাকবেনা তোর কাছে!

নিশীথ তীব্র কণ্ঠে হুংকার দেয় রাকিবের উদ্দেশ্যে। এতক্ষণ ওর শক্তির প্রয়োগ দেখে রাকিব মনে মনে গজগজ করতে থাকে। কোনোমতে বাইকে উঠে যত দ্রুত সম্ভব পালিয়ে যায় ওখান থেকে! ওর যাওয়ার দিক চেয়ে নিশীথ ঘৃণ্য দৃষ্টিতে বলে,

—এর সাথে বিয়ে ঠিক করেছে তোমার? লাইক সিরিয়াসলি? এই, তোমার মা কি আমাকে দেখেনি?

হঠাৎ এ মুহুর্তে এমন কথা বলায় দোলা লজ্জা পায়। মাথা নামিয়ে প্রসঙ্গ বদলানোর চেষ্টা করে বলে,

—আমার ভয় করছে, নিশীথ ভাই। রাকিবকে ছেড়ে তো দিলাম ঠিকি। কিন্তু ও মানুষ ভালো নয়। কাউকে যদি বলে দেয়?

—কি বলে দিবে?

—এই যে, আমার আর আপনার কথা!

—আমার আর তোমার কিসের কথা, দোলনচাঁপা?

নিশীথ একধাপ এগিয়ে এসে হঠাৎ ঝুঁকে যায় দোলনচাঁপার নিকট। মেয়েটা ভড়কে যায়। খানিকটা পেছনে সরে গিয়ে বলে,

—ক,কিছুনা। বাসায় চলুন। অনেকক্ষণ হয়ে গেছে! সবাই চিন্তা করছে আমার জন্য।

—ওহ রিয়েলি? এতটাই চিন্তা করছে যে এখন অব্দি একটা ফোনও দিলোনা তোমায়?

নিশীথ তাচ্ছিল্যের সাথে প্রশ্ন করে। দোলা মাথা নিচু করে লজ্জায়। আসলেই তো! ওর মায়ের অন্তত একবার ফোন দিয়ে খোজ নেওয়া উচিত ছিলো। এতক্ষণে তো বাসায় পৌঁছে শিমুলের থেকে সব শুনার কথা উনার! দোলার একটু মন খারাপ হয়। তা লক্ষ্য করে নিশীথ বলে,

—সিরিয়াসলি বলছি, তুমি আজ যেরকম সিচুয়েশনে ছিলে, আমি যদি সময় মতো না থাকতাম তবে তোমার কি হতো? তোমার ফ্যামিলি নাচতে নাচতে তোমার বিয়ে ঠিক করতে পারলো ঠিকি অথচ যার সাথে বিয়ে দিচ্ছে সে কেমন এ সম্পর্কে বিন্দুমাত্র খোজখবরও নিলোনা? এ যুগেও এসব হয় নাকি? হাউ ফানি ইজ দ্যাট!

নিশীথ এর কথায় যুক্তি ও খোটা দুটোই বিদ্যমান। লজ্জায় অপমানে দোলার মাথা হেটো হয়ে এলো। ঠিক ওই সময় ওর ফোনে কল এলো। মা ফোন দিয়েছে। নিশীথ সেদিকে চেয়ে অবাক হবার ভান করে বললো,

—ওয়াও! শাশুড়ির নাম নিতে না নিতেই শাশুড়ির কল এসেছে? ইন্টেরেস্টিং! ধরো ধরো কথা বলো!

—উনি আপনার শাশুড়ি না!

দাতে দাত চেপে দোলা বললো। নিশীথ ওর কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে বললো,

—এখন হয়নি তো কি হয়েছে? ফিউচারে তো হবেই।তো একি হলো!

দোলা হার মেনে মাথা নাড়িয়ে মায়ের ফোন রিসিভ করলো। কানে ধরতেই ওপাশ থেকে পারভীন বেগম চিল্লিয়ে বললেন,

—কোথায় তুই? বাসায় আসবি কখন? শিমুল বললো যে তুই রাকিবের কাছে গেছিস? একা একা বের হওয়ার কি দরকার ছিলো, দোলা? রাকিব তো ভালো না। কোনো বিপদ হলে কি..

—মা, থামো এখন! এতক্ষণ পরে ফোন দিচ্ছো কেন? তোমায় আধা ঘণ্টা আগে কল দিয়েছিলাম দরকারে তখন ধরলেনা যে? আমি কত বড় বিপদে পড়েছিলাম তোমার ধারণা আছে?

দোলা অভিমানী কণ্ঠে শুধায়। বিনিময়ে পারভীন বেগম বললেন,

—আর বলিস না রে মা, ওই যে আমার স্কুলের কলিগ আছে না, রাবেয়া ম্যাডাম? তুই তো চিনিস। সকালে উনার এক্সিডেন্ট হয়েছে। আমি বাসায় আসার আগে খবর পাই, হসপিটাল কাছেই ছিলো তাই দেখতে গিয়েছিলাম। এত মানুষের মাঝে ফোনের আওয়াজ টের পাইনি রে, মা। মাত্র বাসায় এলাম। কি বিপদে পড়েছিলি? রাকিব কোথায়? ও কিছু করেছে নাকি? ও কি তোর সাথেই আছে?

—নাহ। চলে গেছে। কিছু করার সুযোগ পায়নি! কি কি হয়েছে বাসায় এসে বলছি।

দোলা বিড়বিড়িয়ে বললো। পারভীন বেগম অবাক স্বরে বললেন,

—ওমা! তোকে ডেকে নিজেই চলে গেলো? আচ্ছা শয়তান তো! কিন্তু ও চলে গেলে তুই কেন এখনো বাইরে আছিস একা একা? তাড়াতাড়ি বাসায় আয়! কি কি হয়েছে সব বলবি! ফোন রেখে জলদি আয়!

দোলাকে ধমকে ফোন রেখে দিলেন পারভীন বেগম। কান থেকে ফোন নামাতেই নিশীথ ভ্রু উচিয়ে বলে,

—কি বললো?

—বাসায় যেতে বললো তাড়াতাড়ি। এখন আমাদের যাওয়া উচিত!

নিশীথ আর কিছু না বলে নিজের বাইকের কাছে এগিয়ে গেলো। পেছনে দোলা ইতস্তত করে দাঁড়িয়ে রইলো। সে এর আগে কখনো কোনো পুরুষের বাইকে বসেনি। বাবা বেচে থাকাকালীন তার বাইকে উঠেছিলো ছোটবেলায়, এই যা! তাই হঠাৎ এমন হওয়ায় ওর অস্বস্তি লাগলো। এদিকে নিশীথ আওয়াজ দিলো,

—কি হলো? বাসায় যাবে বলে বলে মুখে ফেনা তুলে এখন আবার নিজেই দাঁড়িয়ে আছো যে? আমি চলে যাবো?

—হ্যাঁ, আপনি যান। রাকিব তো চলেই গেছে, এখন আমি একা যেতে পারবো!

নিশীথ এবার প্রচুর বিরক্ত হলো। বিরক্তি না চেপেই সরাসরি বললো,

—দেখো, অযথা আমার সময় নষ্ট করোনা। কত ইম্পর্ট্যান্ট কাজের জন্য ভার্সিটি এসেছিলাম তুমি জানো? শুধুমাত্র তুমি ডেকেছো বলে ওটা আরেকজনের ভরসায় দিয়ে এসেছি। এতকিছুর পর তুমি এখন বলছো কিনা আমার সাথে যাবেনা? এটা কিন্তু ইনসাল্টিং, দোলনচাঁপা।

এবার নিশীথের কথায় দোলার মনে অনুশোচনা জাগে। যার রেশ ওর চেহারায় স্পষ্ট বুঝা যায়। আসলেই তো! এটা সত্যি নিশীথ তো ওর জন্যই নিজের কাজ ফেলে এলো আর এখন কিনা সে ওর সাথে এরকম করছে? তাই নিজের ভয়, অস্বস্তিকে পেছনে ফেলে ও কদম এগোয় সামনে। বাইক স্টার্ট করে বসে থাকা নিশীথের পেছনে উঠে বসে।
নিশীথ আয়নায় তাকিয়ে শুধায়,

—ভালোমতো বসেছো?

দোলা মাথা নাড়ে। নিশীথ আয়নায় দেখে ওকে মনোযোগ দিয়ে। মেয়েটা জড়সড় হয়ে বসে আছে, মাঝখানে আবার হাতব্যাগ রেখেছে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে ওরা রওনা দিলো। পথে কিছুদূর যাওয়ার মাঝে দোলা খানিকটা স্বাভাবিক হলো, নিশীথ রাস্তায় তাকানোর ফাকে আয়নায় তাকিয়ে বললো,

—তুমি চাইলে কিন্তু আমায় ধরে বসতে পারো। আমি মাইন্ড করবোনা!

দোলা লজ্জা পেলো। মাথা ঘুরে আয়নায় তাকাতেই নিশীথকে তাকিয়ে থাকতে দেখে চোখ পাকিয়ে বললো,

—ড্রাইভ করার সময় কথা বলতে হয়না। চুপচাপ বাসায় চলুন!

নিশীথ মৃদু হাসলো। দোলনচাঁপাকে লজ্জা দিতে ও ভীষণ মজা পায়। অতঃপর পুরো রাস্তা দুজন নীরবেই কাটলো!

_________________

বাড়ির সামনে গলিতে পৌঁছে নিশীথ দোলাকে নামিয়ে দিলো। বাইক থেকে নেমে ওকে ধন্যবাদ জানিয়ে দোলা হাটা ধরলো। হঠাৎ নিশীথ পেছন থেকে ডাকলো,

—এই দাঁড়াও!

দোলা পেছন ফিরলো। নিশীথের এতক্ষণকার স্বাভাবিক মুখ হঠাৎ বেশ গম্ভীর মুখ হয়ে আছে। তা দেখে দোলা মনে মনে অবাক হলো। ভ্রু উচিয়ে শুধালো “কি হয়েছে?”

ছেলেটা জবাব না দিয়ে হাত বাড়িয়ে দোলার বামহাত এগিয়ে আনলো সামনে। তখনকার আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে আলতোভাবে হাত ছুয়ে শক্ত চোয়ালে প্রশ্ন করলো,

—এটা কিভাবে হয়েছে?

ওর কণ্ঠের গাম্ভীর্যে দোলা ভয় পেলো। দ্রুত বললো,

—তখন রাকিবের থেকে দৌড়ানোর সময় একটা রিকশার সাথে লেগেছিলো। ও কিছু করেনি। আমি তার আগেই পালিয়ে গিয়েছি!

নিশীথ মনোযোগ দিয়ে ওর মুখভংগি দেখলো। খানিকবাদে মাথা নাড়িয়ে বললো,

—ওকে। এখন সোজা বাড়ি যাও। গিয়ে মলম লাগিয়ে নিও এখানে!

দোলার হাত ছেড়ে দিয়ে ও পুনরায় বাইকে বসতেই মেয়েটা জিজ্ঞেস করলো,

—কোথায় যাচ্ছেন? আপনি বাসায় যাবেন না?

—আমার কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি, দোলনচাঁপা। আসছি!

নিশীথ চলে যায়। দোলা কিছুক্ষণ সেদিকে চেয়ে থেকে পেছন দিরে বাসার গলি ধরে হাটতে শুরু করে৷ মনে মনে ভাবে, আজ নিশীথ না থাকলে ওর কি হতো? ছেলেটা তো খারাপ না! বরং, আজ ওর কথাবার্তায় দোলা স্পষ্ট বুঝে গেলো, নিশীথ ওকে সত্যিই ভালোবাসে। পথে হেটে যেতে যেতে দোলার বেখেয়ালি মন ওকে প্রশ্ন করলো, তবে কি নিশীথকে একটাবার সুযোগ দেওয়া উচিত না?

#চলবে

গল্পটা নিয়ে কোনো রিভিউ বা মতামত দিতে facebook.com/groups/golpobolistorylink

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here