#প্রিয়তার_প্রহর
পর্ব সংখ্যা ( ৯ )
লেখনীতেঃ #বৃষ্টি_শেখ
রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপরিচিত লোকটার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না প্রিয়তার। লোকটাকে আগে কখনো আরিফের সাথে দেখেনি সে। প্রিয়তা উনার ব্যাপারে কখনো শোনেইনি, অথচ লোকটা তাকে রাস্তায় দেখেই চিনে ফেলল? ভ্রু কুঁচকে ফেলল প্রিয়তা। লোকটার পোশাকআসাকে আভিজাত্য ফুটে উঠেছে। বয়স্ক লোকটা যুবকের ন্যায় পরিপাটি হয়ে চলে এটা বুঝতে বাকি রাখে না। প্রিয়তার এহেন আচরণে হেসে ফেললো লোকটা। বললো,
” তোমার বাবা আর আমি একই অফিসে ছিলাম। ট্রান্সফার হয়ে এখন অন্য অফিসে চলে গিয়েছি। তোমাকে আমি চিনি।
প্রিয়তা স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললো,
” ও আচ্ছা।
” তোমার বাবা কেমন আছে?
” আমি আব্বু আম্মুর সাথে থাকি না। তাই তাদের অবস্থা বলতে পারবো না। আপনি আব্বুকে কল করে খোঁজ খবর নিতে পারেন।
” সে কি? কেন থাকো না?
” বাবা-মায়ের বখে যাওয়া মেয়ে বলে। কাঠ কাঠ কণ্ঠে বলে উঠল প্রিয়তা। মনে পরল ও বাড়ি থেকে চলে আসার সময়কার কথা। আরিফ একটা বার ও ডাকেনি তাকে। বলেনি থেকে যা। কোনরুপ দরদ দেখাননি। অথচ তাদের স্মৃতি এখনও বহন করে প্রিয়তা। পরিবারের কথা মনে পরলে এখনো হাহাকার করে উঠে প্রিয়তার বক্ষস্থল।
জাফর আলী কাজ আছে বলে চলে গেল। যাওয়ার আগে সময়টা দেখে নিল। ত্যাছড়া হেসে স্থান ত্যাগ করলো। প্রিয়তা যেন বেঁচে গেল। অচেনা মানুষ হুট করে চেনা হলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। লোকটার সাথে যত কথা বলবে তত পরিবারের কথা মনে পরবে প্রিয়তার। অতিত ঘেটে ব্যথা শুধু বাড়তেই থাকবে। আরহাম ও ফিরে যেতে চাইবে। প্রিয়তা তো চায় না সেটা।
শিশু পার্কের একটি বেঞ্চে বসে আছে আরহাম আর প্রিয়তা। প্রিয়তা বাদামের খোসা ছাড়িয়ে ফু দিয়ে অনেকগুলো বাদাম একত্রে করে আরহামকে দিচ্ছে। আরহাম হাতের তালু মুখে ঠেকিয়ে বাদাম খাচ্ছে আরামে। পার্কটা অতটা বড় নয়। তবে বাচ্চাদের পছন্দসই। পুরো পার্কটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। পার্কের কোণায় কোণায় ঝুড়ি রাখা হয়েছে। কতৃপক্ষ সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলতে আদেশ করেছেন। চারদিকে বড় বড় গাছ দেখতে পেল প্রিয়তা। কৃষ্ণচূড়া গাছটি লাল বর্ণ ধারণ করেছে। নিচে থেকে দেখতে অসাধারণ লাগছে। চারপাশে বাচ্চাদের আনাগোনো। সকলের সাথেই তাদের মা-বাবা আছে। কেউ বা দোল খাচ্ছে, কেউ স্লিপারে স্লিপ খাচ্ছে, কেউ দৌড়াচ্ছে, অনেকে আবার দোকানে ভিড় করেছে।
প্রিয়তা আরহামকে একটি বড় বেলুন কিনে দিল। বেলুন নিয়ে পুরো মাঠ জুড়ে দৌড়াতে লাগল আরহাম। ভাইয়ের এই আনন্দে মন প্রাণ ভড়ে গেল প্রিয়তার। নিজেদেরকে সুখী মনে হলো খুব। কৃষ্ণচূড়া ফুলের দিকে চেয়ে রইল প্রিয়তা। আচমকা পায়ে কারো হাতের অস্তিত্ব পেল প্রিয়তা। ধরফর করে উঠল সে। ভয়ে কেঁপে উঠল হৃদয়। নিচে তাকিয়ে একটি ছয়-সাত বছরের মেয়েকে দেখতে পেল প্রিয়তা। বুকে থু থু দিয়ে উঠে দাঁড়াল সে। মেয়েটার দেহের গড়ন রোগা-পাতলা। পরণে ছেড়াফাটা পুরোনো কামিজ। শ্যামলা ললাটে ছোট্ট টিপ। মেয়েটার মুখে দুঃখের আভাস। প্রিয়তা তড়িঘড়ি করে মেয়েটার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে ব্যস্ত হলো। মেয়েটা হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরেছে প্রিয়তার পা। কোনমতেই ছাড়ছে না। সবার সামনে এমন বাজে পরিস্থিতিতে পরবে ভাবেনি প্রিয়তা। কিছুটা বিভ্রান্ত হলো সে। চটপট করে মেয়েটাকে টেনে তুললো সময় নিয়ে। বললো,
“আরেহ্! তুমি আমার পা ধরছো কেন? ওঠো।
মেয়েটা উঠল না। আরো চেপে বসে রইল। মুখ তুলে বললো,
” আফা আমি দুইদিন ধইরা কিছু খাই নাই। আমারে কয়ডা ট্যাকা দেন না আফা।
” তুমি আগে আমাকে ছাড়ো। বলে উঠল প্রিয়তা।
মেয়েটা উঠল। পুনরায় বললো,
” দেন না আফা।
প্রিয়তার অসস্তি হলো। তার কাছেই টাকা নেই তেমন। যা আছে তা লাগবে মাস চলতে। আরহামের জন্য কিছু কিনবে ভেবে যে টাকা রেখেছিল তা দিয়ে কি কিছু কিনে দিবে মেয়েটাকে? ভাবনা এলো প্রিয়তার মনে। মেয়েটাকে দেখে মায়া হলো খুব। নমনীয় স্বরে মেয়েটির চিবুক ধরে বললো,
” তোমার নাম কি?
মেয়েটি হেসে বললো,
” জামিলা।
” তুমি দু দিন খাওনি কেন? তোমার মা বাবা কোথায়? তুমি এখানে কেন?
” আমার মা মইরা গেছে। আব্বায় অসুখ হইয়া বিছনায় পরছে। এইজন্যে আমি ভিক্ষা করি। দেন না আফা কয়ডা ট্যাকা।
প্রিয়তার মনটা খারাপ হয়ে গেল। খোঁজ করলে দেখা যাবে আমাদের দেশে এমন লাখ লাখ মানুষ আছে যারা এক বেলা খেতে পায় না। অনাহারে, অভুক্ত থেকে কাটিয়ে দেয় কয়েকদিন। অথচ আমরা কত খাবার নষ্ট করি। এই খাবারের কিঞ্চিৎ পরিমাণ খাবার এসকল মানুষের জন্যে বরাদ্দ থাকে না। রাস্তায় বের হলেই শিশু থেকে বৃদ্ধদের দেখা যায় জনে জনে সবার কাছে হাত পাততে। বাসে উঠলেই দেখা যায় অন্ধ, বাকপ্রতিবন্ধী, পঙ্গু ব্যক্তিদের। যাদের কাজ করার মতো পরিস্থিতি নেই। প্রকৃতপক্ষে ভিক্ষা করা সবচেয়ে অসম্মানজনক কাজ। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষরা এই কাজকে তখনই সমর্থন করি যখন দেখি ভিক্ষা করা ব্যক্তি কাজ করতে অক্ষম। প্রিয়তার কাছে আসা মেয়েটির এখন ঘুরে বেড়ানোর সময়, পড়ালেখা করার সময়, জীবনকে উপভোগ করার সময়। কিন্তু মেয়েটা রোদে পুড়ে,বৃষ্টিতে ভিজে ভিক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছে।
প্রিয়তার কান্না পেল মেয়েটাকে দেখে। আরহামকে নিজের কাছে ডাকল প্রিয়তা। দুজনকে দু পাশে ধরে মেয়েটার উদ্দেশ্যে প্রিয়তা বললো,
” চলো তোমাকে একটা ভাতের হোটেলে নিয়ে যাই। যে তরকারি দিয়ে ভাত খেতে ইচ্ছে হয় তাইই খাবে।
জামিলা থতমত খেল। নিজেকে ছাড়িয়ে নিল প্রিয়তার থেকে। মনটা খারাপ হলো মেয়েটার। ততক্ষণাৎ বলে উঠলো,
” আমারে খাওন দিয়া লাগবো না ট্যাকা দিলেই হইবো। আমার একজনের বাড়িতে দাওয়াত আছে। আপনের মতোই একজন দাওয়াত দিছে। ওইহানেই খামু
প্রিয়তা বললো,
” তাহলে চলো কেক কিনে দেই। খেতে খেতে বাড়ি যাও।
মেয়েটা মানল না। বারবার টাকাই চাইল। অতঃপর প্রিয়তা ব্যাগে হাত দিল। ব্যাগ হাতরিয়ে খুচরো টাকা পেল না। ব্যাগে শুধু পাঁচশো টাকার দুটো নোট দেখল প্রিয়তা। ভাঙতি টাকা এখন সে পাবে কোথায়? দোকানদার কিছু না কিনলে ভাঙতি দেবে না।
প্রিয়তা বোঝাল জামিলাকে। ভাঙতি নেই বলে জানাল। জোর করে টেনে নিয়ে গেল দোকানে। দোকান থেকে কেক, রুটি , বিস্কিট কিনে দিল। মেয়েটা খাবার গুলো নিয়ে চলে গেল সেখান থেকে। কোনরকম প্রতিক্রিয়া দেখাল না। প্রিয়তা অবাক হলেও গায়ে মাখল না। মেয়েটাকে কিছু কিনে দিতে পেরে মনে মনে খুশিই হলো বেশ। বাড়ি ফিরতে উদ্যত হলো আরহামকে নিয়ে। কয়েক মিনিট হাঁটতেই আরহামের মনে পরল তার বেলুনের কথা। প্রিয়তাকে বললো বেলুন এনে দিতে। পিছু হাঁটলে ছয়-সাত মিনিটেই পার্কে পৌঁছাতে পারবে তারা। কিন্তু কিছুটা হেঁটে আবার ফিরে যেতে প্রিয়তার ইচ্ছে করলো না। আবার আরহাম শুনল না সেসব কথা। বেলুনটা তার লাগবেই লাগবে।
আরহাম প্রিয়তাকে ফেলে নিজেই পিছু চললো। অগত্যা বাধ্য হয়ে প্রিয়তাও পার্কের পথটা ধরল। সৌভাগ্যবশত বেলুনটা ওখানেই বাঁধা দেখল আরহাম। ছুটে বেলুনটা নিল নিজের হাতে। এইবার বাড়ি ফেরার পথে ওভারব্রিজে উঠল প্রিয়তা। নিচে তাকাতেই একটা অন্যরকম ঘটনা ঘটতে দেখল সে। বিস্ময়ে বিমূঢ় হলো মুহুর্তেই। একটু আগে যে মেয়েটাকে প্রিয়তা খাবার কিনে দিল, সেই মেয়েটা ওভারব্রিজের কোণে একটা মহিলার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কথা বলছে বোঝা যাচ্ছে। প্রথমে কারোর কথাই শুনতে পেল না প্রিয়তা। হঠাৎই দেখল মহিলা জামিলার হাত থেকে প্রিয়তার কিনে দেওয়া খাবারগুলো এক টানে ফেলে দিচ্ছে রাস্তায়। রাগী কণ্ঠে চিৎকার করে উঠছে। জোরে কথা বলায় শুনতে পেল প্রিয়তা। মহিলা জামিলাকে রাগী কণ্ঠে বলছে,
” তোরে না কইছি ট্যাকা নিয়া আইবি?কি নিয়া আইছোস তুই? এডি দিয়া আমি কি করমু? খা গা যা। আরেক ছেমড়ি কি নিয়া আসে দেহি। তুই এইহান থে সর। এই খাওন দিয়া আমার কি হইবো? তোর প্যাট ভরবো শুদু।
প্রিয়তা একটু কাছে এলো। ওরা প্রিয়তাকে দেখতে পেল না। জামিলা শান্ত কণ্ঠে বললো,
” আমি কইছি ট্যাকা দিতে। হ্যায় না দিলে কি করমু? এই খাওনডি আমি মারে দিমুনি। পরে ট্যাকা পাইলে তুমি নিওও। এত কষ্ট করি তাও তোমার মন পাই না।
প্রিয়তার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। যতটা না অবাক হয়েছে তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছে। একটু আগে জামিলা নামের মেয়েটির জন্য কতই না দুঃখ করছিল প্রিয়তা। মেয়েটার জন্য আলাদা একটা অনুভূতি, আলাদা এক ভালোবাসা ভেসে জেগে উঠেছিল হৃদয়ে। মেয়েটার জন্য প্রিয়তার কষ্টে বুক ভার হয়ে আসছিল। কিন্তু এ ভালোবাসার কোন মূল্যই নেই জামিলার কাছে। সে মিথ্যা বলেছে প্রিয়তাকে। জামিলার মা বেঁচেই আছে। আর সেও এত দুঃখে নেই। সবই টাকা উপার্জন করার পদ্ধতি।
প্রিয়তার মস্তিষ্ক বুঝে গেল এরা একটা গ্যাং। এখানে যারাই আসে তাদেরকে এভাবে নাস্তানাবুদ করে টাকা নেয় এরা। এই ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর পেছনেও বড় মানুষের হাত আছে। তাদের জন্যই বাচ্চাগুলো কাজ করে। অথচ প্রিয়তা কি বোকা। সে ভেবেছে জামিলার সব কথা সত্যি। খুব দ্রুত বিশ্বাস করে ফেলেছিল মেয়েটাকে। মেয়েটার জন্য প্রিয়তা কাঁদতে চেয়েছিল। আফসোস করছিল পুরোটা সময়। আচ্ছা প্রিয়তার কি উচিত এদের পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়া? আজকাল প্রিয়তা নিজের মাঝে এক অন্য সত্তার বিচরণ অনুভব করে। আগের প্রিয়তা আর এখনকার প্রিয়তার মাঝের তফাৎ টা একটু বেশিই নজর কাড়ে নিজের কাছে। আগে প্রিয়তার জীবন একটা নির্দিষ্ট গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ ছিল। পারিবারিক ঝামেলা, পড়ালেখা, আরহামকে আগলে রাখা এসব ব্যতিত আর কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তার সাথে ঘটেনি। তবে আজকাল সব অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে প্রিয়তার সাথে। যা মনে রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ। যা প্রিয়তাকে নতুন ভাবে গড়ে তুলছে, শিক্ষা দিচ্ছে। এখনকার প্রিয়তার মাঝে কৌতুহল, দ্বিধা, আগ্রহ ভরপুর। এই প্রিয়তা সবকিছু সম্পর্কে জানতে চায়, জানাতে চায়।
আচ্ছা প্রিয়তা এত বোকা কেন? কেন সে সবার কথা বিশ্বাস করে ফেলে? কেন সব কথা সত্য বলে ধরে নেয়? এই মেয়েটা তো তার অনুভূতি নিয়ে খেলেছে। তাকে ঠকিয়েছে, মিথ্যে বলেছে। কাউকে ঠকানো তো মারাত্মক অপরাধ। কাউকে ঠকানোর জন্য,প্রতারণা করার জন্য উক্ত ব্যক্তির ভয়াবহ শাস্তি পাওয়া উচিত। আচ্ছা ঠকানোর কি কোন শাস্তি নেই? প্রশ্ন এলো প্রিয়তার মনে। চোখে পানি জমল। ঠকে যাওয়ার যন্ত্রণায় ছটফট করলো প্রিয়তার হৃদপিণ্ড। আরহামকে নিয়ে চলে এলো সেখান থেকে। হাসিখুশি মনটা নিমেষেই বিষিয়ে গেল। মন খারাপ করে পুরোটা পথ চলে এলো।
_________________
বাড়িতে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে ঘনিয়ে এলো ধরনীতে। মন খারাপ করে বাড়ির সদর দরজা পেরিয়ে ভিতরে ঢুকলো প্রিয়তা। চারদিকে অন্ধকারে আচ্ছন্ন। প্রতিদিন এই সময় এই স্থানে দুটো বাল্প জ্বলে। আজ বাল্পগুলো নেই। পুরোটা জায়গা জুড়ে নিরবতা বিদ্যমান। প্রিয়তার একটু ভয় করলো। আরহামকে আগলে নিল ততক্ষণাৎ। অন্ধকারে এগিয়ে এলো। সামনে একজন মানুষের অবয়ব দেখতে পেল প্রিয়তা। ছায়াটি যখন দৃঢ় ভাবে দেখা গেল তখন প্রিয়তা বুঝতে পারল এটা প্রহর। প্রহরকে প্রিয়তা চিনে। কিভাবে এত ভালো করে চিনে তা তার জানা নেই। তবে সামনের ছায়াটি যে প্রহরের তা বুঝতে সময় লাগল না প্রিয়তার। প্রিয়তা কিছু বলার পূর্বেই একটা ঘ্রাণ ভেসে আসল তার নাকে। কেউ যেন কিছু একটা স্প্রে করলো প্রিয়তার মুখে। মাথা ঝিমঝিম করে উঠল প্রিয়তার। সবকিছু কেমন ঝাপসা লাগল। মাথা ঘুরতে লাগল। ধপাস করে কিছু পরে যাওয়ার শব্দ হলো। প্রিয়তার দেহ লুটিয়ে পরল মেঝেতে। এরপর আর কিছুই মনে নেই প্রিয়তার। কিচ্ছু না।
প্রিয়তার যখন জ্ঞান ফিরল তখনো নিজেকে আবিষ্কার করলো মেঝেতে। চোখ মেলতে ভিষণ ক্লান্তি বোধ করল প্রিয়তা। মাথাটা আবারো ঝিমঝিম করে উঠল। শরীরে খানিক ব্যথা অনুভব করলো । মনে হলো অনেকটা পথ হেঁটেছে সে। প্রিয়তা নড়াচড়া করল। চোখের পাতার সাথে যুদ্ধ করে সময় নিয়ে চোখ খুলল। চারপাশ অন্ধকার লাগল আগের মতো। প্রিয়তার মনে পরল অজ্ঞান হবার পূর্বের কথা। সে বাড়িতে ঢুকেছিল, প্রহরের ছায়া দেখেছিল দেয়ালে। হঠাৎই একটা ঘ্রাণ ভেসে এসেছিল নাকে। মাথা ঝিমঝিম করে উঠেছিল তার। ঝাপসা দেখছিল সবকিছু। লুটিয়ে পরেছিল মেঝেতে। একটা শব্দ হয়েছিল জোরে। আরহামের কণ্ঠ ভেসে এসেছিল কানে। তারপর? তারপর আর কিচ্ছুটি মনে নেই প্রিয়তার।
প্রিয়তা কষ্ট করে উঠে দাঁড়াল। ঘরে আলো নেই কোনো। তবে থাই গ্লাসের বিপরীতে থাকা চাঁদের আলোতে পুরো ঘর আলোকিত হয়ে রয়েছে। সেই আলোতে ঘরটা বোঝা যাচ্ছে একটু একটু। প্রিয়তার ভয় করল। বুঝতে পারলো কোনকিছু ঠিক নেই। ততক্ষণাৎ চিৎকার করে বললো,
” আরহাম, আরহাম। কোথায় তুমি? আমি এখানে কেন? কে আমাকে এনেছে এখানে?
খট করে দরজা খোলার আওয়াজ হলো। ভয়ে নেতিয়ে গেল প্রিয়তা। কেউ সুইচ টিপে বাল্প জ্বালিয়ে দিল। আলোর ঝলকানি চোখে পড়তেই চোখ মুখ কুঁচকে ফেলল প্রিয়তা। আপনা আপনি হাতটা চোখে মেলে ধরল। আলোর ঝলকানি চোখে লাগল প্রিয়তার। সময় নিয়ে চোখ থেকে হাত সরাতেই প্রহরকে দেখতে পেল। প্রিয়তা বুঝতে পারল কোনকিছু স্বাভাবিক নয়, আর এসবের পেছনেও প্রহর রয়েছে।
প্রিয়তা প্রহরকে জিজ্ঞেস করলো,
” আরহাম কোথায়? আমি এখানে কেন? আপনিই বা এখানে কেন? কি হচ্ছে আমার সাথে?
প্রহর জবাব দিল না। তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল শুধু। গম্ভীর চাহনিতে ভষ্ম করতে চাইল প্রিয়তাকে। আবার ও দরজায় শব্দ হলো। ইহান আর তানিয়া ঘরটিতে প্রবেশ করলো। প্রিয়তা চোখ বুলিয়ে ঘরটাকে পর্যবেক্ষণ করলো। ঘরটার মাঝখানে একটা বড়সড় টেবিল রাখা। টেবিলে রয়েছে গুটিকয়েক ফাইল আর কাগজপত্র। টেবিলের তিন কোণায় তিনটে চেয়ার রাখা। প্রিয়তার মনে হলো এরা তাকে কিডন্যাপ করেছে। ওকে আটকে রাখার চেষ্টা করছে। মস্তিষ্কও এই কথায় সায় জানাল। প্রিয়তা রেগে গেল। ওর আশেপাশে যারা আছে এরাও ভালো নয়? এরাও প্রিয়তার ক্ষতি চায়? কিন্তু কেন? প্রিয়তা রেগে গেল ভিষণ। আর কোমল থাকবে না সে। নিজেকে বাঁচাতে হবে।
প্রিয়তা দ্রুত গতিতে প্রহরের কাছে এলো। প্রহরের শার্টের কলার মুঠোয় পুরে নিল। ঝাঁঝাল কণ্ঠে বলে ওঠল,
” আপনি কি চাইছেন হ্যাঁ? আপনার পেটে পেটে এতকিছু ছিল? আগে তো বুঝিনি? আমাকে কেন এনেছেন এখানে? কিডন্যাপ করেছেন আমাকে? আরহাম কোথায়? বলুন।
প্রিয়তা উত্তর পেল না বিধায় আরো রেগে গেল। নাকের পাটা লাল হলো তার। চোখের কার্নিশ রক্তিম হলো। প্রহরের শার্টের কলারের নিচে থাকা ফর্সা, নগ্ন গলায় নখ গেঁথে দিল প্রিয়তা। ব্যথা পেল প্রহর। ছেলে বলে প্রিয়তাকে ধরে সরাতে পারলো না। আবার ও প্রিয়তা নখ দিয়ে আচরে দিল প্রহরের কানের নিচ। কেটেছুড়ে দিতে চাইল সব। উন্মাদের মতো আচরণ শুরু করলো। ইহান এগিয়ে এলো প্রিয়তাকে সরিয়ে নিতে। প্রহরের নজরে পরল বিষয়টা। প্রিয়তাকে ধরার আগেই প্রহর বলে উঠল,
“স্টপ ইহান। ওকে ধরিস না।
পুনরায় প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে তানিয়ার উদ্দেশ্যে বললো,
” তানিয়া, প্রিয়তাকে সামলাও।
তানিয়া এগিয়ে এলো। বহু কষ্টে প্রিয়তাকে প্রহরের থেকে ছাড়িয়ে নিতে সক্ষম হলো। প্রিয়তাকে ধরে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিল তানিয়া। প্রিয়তাকে কখনোই ক্রিমিনাল মনে হয়নি তার। প্রিয়তার মায়াময় গোলাকার মুখ বরাবরই তানিয়াকে দ্বন্দ্বে ফেলে। একটু নরম কণ্ঠে তানিয়া বললো,
” আরহাম ঠিক আছে প্রিয়তা। এমন করো না। পুলিশের গায়ে হাত তোলা অপরাধ।
প্রিয়তা দমে গেল। ভারী শ্বাস ফেলল। চোখ পানিতে চিকচিক করে উঠল প্রিয়তার। ব্যথাতুর নয়নে তাকাল সবার দিকে। ক্লান্ত কণ্ঠে বললো,
” আমাকে কেন এনেছেন? আমি বাড়ি যাবো।
প্রহর এগিয়ে এলো। প্রিয়তার সামনে চেয়ার টেনে তাতে বসল। কলার ঠিক করে নিল। বললো,
” ইউ, মিস প্রিয়তা। বাবার নাম আরিফ হোসাইন, মায়ের নাম প্রীতিলতা আহমেদ, ছোট ভাই আরহাম হোসাইন। রিসেন্টলি আপনার বাবা-মা দুজন দুজনকে ডিভোর্স দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। আরিফ হোসাইন বিয়ে করেছে কলকাতায় বসবাসরত দীপা খন্দকারকে। প্রীতিলতা আহমেদ বিয়ে করেছে আজিজ মোর্শেদকে। বেশ কয়েকবছর যাবত আপনার বাবা-মা পরকিয়ায় লিপ্ত ছিল। দম্পতি তাদের নতুন জীবনে পা রাখতে পারছিল না আপনারর আর আপনার ভাইয়ের কারণে। আপনারা আপনাদের বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে চলে এসেছেন কারণ কয়েকদিন পরেই আপনাদের ওই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হতো, আপনাদের যন্ত্রণা দিয়ে নিস্তেজ করা হতো। আপনার বাবা-মায়ের নতুন জীবনসঙ্গী আপনাদের মেনে নেননি এজন্য। কি তাইতো?
প্রিয়তা বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইল। এত সব কথা পুলিশম্যান জানল কিভাবে? আর কেনই বা জানতে চেয়েছেন? এখন এসব বলার মানে কি? এতদিন বলার প্রয়োজন মনে করেননি কেন? হাজারটা প্রশ্ন মাথায় এলো প্রিয়তার। নিজেকে পাগল পাগল লাগল। প্রশ্ন গুলো জটলা পাকিয়ে গেল। বললো,
” আপ..আপনি কি করে? মানে কিভাবে জানলেন??
প্রহর হাসল। শব্দ করে হেসে ফেলল। প্রিয়তা তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ প্রহরের দিকে। নিঃসন্দেহে পুলিশম্যানের হাসি সুন্দর, অনবদ্য। এ হাসিতে কতশত নারী ঘায়েল হতে পারে। নজর কাড়ার মতো সৌন্দর্য বহন করে এই পুলিশম্যান। অন্যান্য সময় হলে এ হাসিতে প্রিয়তার নতুন অনুভূতি জেগে উঠতো, মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করতো। কিন্তু এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভয়ানক।
প্রহর হাসি থামিয়ে বাঁকা হেসে বললো,
” এই প্রশ্ন আপনাকে মানায় না প্রিয়। আপনি তো খুব স্মার্ট।
” কি বলতে চান সরাসরি বলুন। এমন পেঁচিয়ে কথা বলছেন কেন? কর্কশ কণ্ঠে বলে উঠল প্রিয়তা।
প্রহর আসল কথায় ফিরল। বললো,
” জাফর আলী কত টাকা দিয়েছে আপনাকে? মানছি বাড়িঘর ছেড়ে আপনি নিঃস্ব হয়েছেন। তাই বলে পুলিশ অফিসারের জন্য ফাঁদ পাতবেন?
” কি যা তা বলছেন? কে জাফর আলী? কার কথা বলছেন? এসবের সাথে আমার সম্পর্ক কি?
“মিথ্যে বলবেন না প্রিয়। আপনি জাফর আলীকে চিনেন। নইলে আজ আলাদা করে দেখা করতে যেতেন না।
” কার কাছে দেখা করেছি আমি? কখন? কোথায়? কি বলছেন?
“পার্কের রাস্তার ফুটপাতে দাঁড়িয়ে যার সাথে কথা বলেছেন সে আপনার পরিচিত নয় বলছেন?
” ওই লোকটা তো আব্বুর বন্ধু। আমাকে এসে আব্বুর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছিলেন। এখানে টাকা পয়সা, ফাঁদ এলো কোথা থেকে? উনাকে আমি আগে চিনতাম না।
ইহান এগিয়ে এলো এবার। বললো,
” আরিফ হোসাইনের সাথে জাফর আলীর কোন সম্পর্ক নেই মিস। আমরা খোঁজ নিয়েছি। সত্যটা বলুন।
প্রিয়তা বললো,
” উনি এসে আব্বুর সম্পর্কে জানতে চাইলেন। বললেন আব্বুর বন্ধু। উনি আমাকে মিথ্যে বললেন কেন? আমি কীসের ফাঁদ পেতেছি?
” জাফর আলীর কথায় আপনি আমাকে ফাঁদে ফেলে নিঃস্ব করতে চাননি? মিথ্যে বলছেন কেন? জাফর আলী আমার শত্রু। আমাকে এট্যাক করার জন্য মুখিয়ে আছে লোকটা। আজ সেই লোকের সাথে আপনি দেখা করেছেন।
” আমি কিচ্ছু জানি না বিশ্বাস করুন। উনাকে আজই আমি প্রথম দেখেছি। উনার কথায় আমি আপনার আশেপাশে আসিনি।
তানিয়া বলতে শুরু করলো পুরো ঘটনা। বললো,
“সিক্রেট এজেন্সির অফিসার আমাদের জানিয়েছে একটা মেয়েকে পাঠাবে জাফর আলী। প্রহর স্যারকে ফাঁদে পেলে কাবু করতে চেয়েছেন লোকটা। কথাটা জানার পরদিনই তুমি এসেছো স্যারের বাড়ি। তোমার ফোনে স্যারের ছবি পাওয়া গেছে। এতদিন একটুআধটু সন্দেহ ছিল তোমার প্রতি। কিন্তু আজ যখন তুমি সরাসরি জাফরর সাথে কথা বললে, দেখা করলে তখন আমরা নিশ্চিত হয়েছি তুমি ওরই লোক।
প্রিয়তার মাথা ঘুরছে। এতদিন তার পিছনে প্রহর গোয়েন্দা লাগিয়েছে। তাকে নিয়ে তদন্ত করেছে। অথচ সব ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি সে। তার আড়ালে তারই সাথে ঘটে গেছে অনেক ঘটনা। প্রহরের কথায় ইহান এজেন্সির অফিসার আসিফকে কল করলো। ইহান আসিফকে বললো,
” তোমাকে আর ঘুরতে হবে না। জাফরের পাঠানো মেয়েটাকে আমরা পেয়েছি। আজ ওরা দেখা করেছিল। দ্যান আমরা জিম্মি করেছি মেয়েটাকে। তোমার কাজ শেষ।
আসিফ অবাক হলো ওপাশ থেকে। কণ্ঠ নামিয়ে বললো,
” আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে স্যার। জাফর মেয়েটাকে ট্রেনিং দিচ্ছে এখনো। একটু আগেই মেয়েটার সাথে একটা শপে দেখা করেছে জাফর। মেয়েটা আর জাফর দুজনেই আমার সামনে বসে আছে স্যার। আমি ফ্রুট সেলার সেজে দাঁড়িয়ে আছি। মেয়েটাকে কোনো কারণে জাফর আজ রিজেক্ট করেছে। পাঠাবে না বলেছে। কি প্ল্যান করছে বুঝতে পারছি না। আপনারা যাকে ধরেছেন সে ওই মেয়েটি হতে পারে না।
লাউড স্পিকারে থাকায় সবটা শুনল প্রহর। প্রিয়তার দিকে তাকাল। সবটা ওলটপালট হয়ে গেল হুট করে। প্রিয়তা যদি এসবে না থাকে তবে কেন জাফর ওর সাথে দেখা করলো? তাও আবার মিথ্যে পরিচয়ে? কেনই বা সিলেক্ট করা মেয়েটাকে রিজেক্ট করলো?এসবের মধ্যে প্রিয়তা কিভাবে এলো? প্রিয়তা ঘটনা বুঝতে পারল কিছুটা। আন্দাজ করে নিল অনেক কিছু। এখন তার রেগে যাওয়ার কথা। কিন্তু প্রিয়তা রাগল না। কারণ তাকে সন্দেহ করা কিংবা দোষারোপ করার নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। যে যে কারণে প্রিয়তাকে এখানে এনেছে সেগুলো ভাবা যৌক্তিক। এখানে দোষ আসলে পুলিশদের না। আবার প্রিয়তার ও নয়। কিন্তু জাফর কেন প্রিয়তার সামনে এলো? প্রিয়তার তো এ সম্পর্কে ধারণাও ছিল না। কোনভাবে এই কেসে কি জড়িয়ে পরছে সে?
________________________
রাত দশটা বেজে এগারো মিনিট। তিন তলা ভবনের ছাদের রেলিংয়ে বসে পা দোলাচ্ছে প্রিয়তা। একটু এদিক সেদিক হলেই তিনতলা ভবন থেকে পরে যাবে সে। প্রিয়তার মনটা ভালো নেই। আজব ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। সব কিছুর দোষ তার উপর পরছে। এতে পুলিশের দোষ নেই বলে প্রিয়তা কোনকিছু বলেনি কাউকে। প্রহরের জায়গায় অন্য কেউ হলে তাকেই দোষী ভাবতো। এজেন্সির খবর পাওয়ার পরদিনই আগমন ঘটে প্রিয়তার। এসে পরে প্রহরের বাড়ি। প্রহরের ঘরে যাতায়াত হয়। সবটাই সন্দেহ করার মতো কারণ।
প্রিয়তা নিজের বসার স্থানটা দেখল। এখান থেকে যদি প্রিয়তা পড়ে যায়, নিশ্চিত মরে যাবে। আচ্ছা প্রিয়তা মারা গেলে কেউ কাঁদবে? কেউ কষ্ট পাবে? কারো কোন যায় আসবে? আরহাম ছাড়া আর তো কেউ আপন নেই প্রিয়তার। এই ছেলেটাই শুধু কাঁদবে, কষ্ট পাবে। আর কে আছে প্রিয়তার? বাবা-মায়ের কাছে তো সে মৃত।
প্রিয়তা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। পেছন থেকে পুরুষালি কণ্ঠে “প্রিয়তা” শব্দ শুনে আঁতকে উঠল রীতিমতো। পড়ে যেতে নিলে নিজেকে সামলে নিল প্রিয়তা। চোখের কোণে পানি জমল। হাহাকার করে উঠল বক্ষস্থল। কণ্ঠটা প্রিয়তার চেনা। প্রহর ডাকছে তাকে। এখানে কি করছে লোকটা?
প্রিয়তা পিছু ফিরে তাকাল। প্রহরের পরণে কালো শার্ট আর প্যান্ট। চুলগুলো কেমন অগোছালো। দু হাত পকেটে গুঁজে রেখছে লোকটা। সুদর্শন লাগছে তাকে। প্রহর খেয়াল করলো প্রিয়তার পানিতে টইটম্বুর করা চোখ। অন্ধকারেও প্রিয়তার সরু নাকে গেঁথে রাখা সাদা নোস পিন জ্বল জ্বল করছে। প্রিয়তা জড়তা নিয়ে ডাকের উত্তর নিল। বললো,
” হুহ?
” মন খারাপ? জিজ্ঞেস করলো প্রহর। এগিয়ে এলো সম্মুখে।
” না। মন খারাপ নেই।
” আজ যা হলো ভুলে যান। আমরা দুঃখিত।
” এ নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই। বরং আপনাদের দায়িত্বশীলতা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
“তাহলে কাঁদছেন কেন?
” অনেক কারণ আছে। আমার জীবনটা আর পাঁচটা সাধারন মানুষের মতো নয় কি না।
” জীবন এক ধরনের জটিল চক্রাকার। এই চক্রে যেমন ভালো কিছু ঘটে, তেমনি খারাপ অনেক কিছুই ঘটে। আমাদের সেসব মানিয়ে নিয়ে চলতে হয়।
প্রিয়তা শুনল। একটু চুপ রইল। অতঃপর রেলিং ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। প্রহরের নিকটে এসে দাঁড়াল। প্রহরের চোখে চোখ রেখে বললো,
” আমি যদি কখনো হারিয়ে যাই, কিংবা মারা যাই, আমার ভাইটাকে প্লিজ দেখে রাখবেন। আমি ছাড়া ওর আপন বলতে কেউ নেই। ছেলেটা বড্ড একা, বড্ড অসহায়।
চলবে?
বিঃদ্রঃ পর্বটা দু বার লিখলাম। একবার কেটে গিয়েছিল। ধৈর্য নিয়ে পড়বেন প্লিজ। সব জটিলতা সমাধান হবে। নিরাশ হবেন না আশা করি। জামিলার কেসটা আবার ঘাটবো বলে লিখেছি😁