খোলা_জানালার_দক্ষিণে #পর্ব_২৬ #লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

0
463

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_২৬
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

চৌধুরী বাড়ির প্রতিটি সদস্যের মুখশ্রীতে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। সবাই সুফিয়া চৌধুরীকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু তিনি সবার সব কথা শোনার পরে, রাগান্বিত হয়ে বলছে। সবাই তাকে আর তার মেয়েকে ঈর্ষা করে। সেজন্য তার কানে বি’ষ ঢালছে। রিয়াদ চৌধুরী মাশরাফিকে অনবরত ফোন দিয়েই যাচ্ছে। মাশরাফির কক্ষের মধ্যে দিয়ে আরেকটা দরজা আছে। যেটা দিয়ে পাশের কক্ষে প্রবেশ করা যায়। মাশরাফির ফোন সাইলেন্ট থাকায় সে টের পাচ্ছে না। রিয়াদ চৌধুরীর ললাটে চিন্তার ভাজ পড়েছে কয়েকটা। তা দেখে সুফিয়া চৌধুরী বিরক্ততে নিজের মুখশ্রী কুঁচকে ফেলছে।

–তুই আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস না। আমি তোকে কাগজ গুলো বের করে দিতে বলছি। এভাবে সঙ্গের মত দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আমি তোর কাছে আসলে ফলাফল ভালো হবে না। আমার চরিত্রে কলঙ্ক লাগানোর কত গুলো সময় পেরিয়ে গেছে। তুই যে এখনো বেঁচে আছিস। এটাই তোর ভাগ্য ভালো। মুনতাসিমের কথায় তাহিয়ার রুহু পর্যন্ত কেঁপে উঠল। এত সহজে সে ধরা পড়ে যাবে। সেটা কল্পনা ও করতে পারেনি সে। মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে পড়েছে তার। সবকিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। তাহিয়াকে নিরব থাকতে দেখে মুনতাসিম দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

–কাগজ গুলো দিবি কি না? হ্যাঁ অথবা না।

–না দিব না। কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি ভাইয়া। আমার ভালোবাসার মানুষকে চোখের সামনে অন্য কেউ নিবে যাবে। সেটা আমি সহ্য করব না। যেটা আমার না সেটা কারো না।

–হুট করে ভালোবাসি বলাটা উপন্যাসের গল্পেই বেশি মানায়। কাউকে ভালোবাসি বলার আগে মানুষটার ভয় সম্পর্ক জানতে হয়। মানুষটার সীমাবদ্ধতা কতটুকু সেটা জানতে হয়। তার ঘৃণা, তার হতাশা, তার অপ্রাপ্তি, তার ভালো লাগা না লাগা, সবকিছু সম্পর্কে জানতে হয়। মানুষটাকে গভীর ভাবে চিনতে হয়। একটা মানুষের প্রচন্ড সুখের সময়ে ভালোবাসি বলাটা যতটা সহজ। তার দুর্দিনে তাকে ভালোবাসাটা ততটাই কঠিন। তাই ভালবাসাটা মূলত দায়িত্ববোধেরই একটা বহিঃপ্রকাশ। তোর মতো বিকৃত মন মানসিকতার মেয়ে সেটা বুঝবে না।

–তুমি ঠিকিই বলেছ ভাইয়া। আমি এত সাধ্য সাধনা করে-ও তোমার মন পেলাম না। আর বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া মেয়েটা খুব সহজে পেয়ে গেল। তুমিও নির্লজ্জের মতো তার পেছনে ঘুর ঘুর করলে। আমি বেশ করেছি তাকে মিথ্যে কথা বলেছি। কোথায় গেল তার এত ভালোবাসা? নিজের প্রিয়তমকে এতটুকু ভরসা করতে পারলো না। তুমি দুই বাচ্চার বাপ হয়ে গেলে-ও আমি তোমাকে বিয়ে করতে রাজি আছি।

–ঠিক এখানেই তার আর তোর পার্থক্য। তুই মেয়ে হয়েও একটা মেয়ের সংসার ভাঙার জন্য প্রস্তুত আছিস। কিন্তু সে একটা সুন্দর সাজানো সংসার নষ্ট করতে চাইনি বলেই, বুকে পাথর চাপা দিয়ে দূরে সরে গিয়েছে। এজন্য সে আমার চোখে প্রিয়জন আর তুই আমার চোখে কালনাগিনী। মুনতাসিমের কথায় মুহুর্তের মধ্যে তাহিয়ার ভয় হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। ক্রোধে সমস্ত শরীর জ্বলে উঠল। সে চিৎকার করে বলে উঠল,

–তার মতো বা’জারের মেয়েদেরই তোমাদের মতো ছেলেরা পছন্দ করে। আমার মতো ভালো মেয়েদের তোমাদের চোখেই পড়েনা। আমার মতো মেয়েরা তাদের মতো জামা…কথা গুলো শেষ হবার আগেই মুনতাসিম সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে তাহিয়ার গ’লা চে’পে ধরলো। মুনতাসিমের রক্তাক্ত আঁখিযুগল খুব কাছ থেকে দেখে অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল তার। দম বন্ধ হয়ে আসছে। ছুটাছুটি পর্যন্ত করতে পারছে না সে, এতটা শক্ত করে মুনতাসিম তাকে ধরেছে। বলিষ্ঠ দেহের যুবকের সাথে এত ছোট একটা শরীর যুদ্ধ করতে পারে। একটু পরেই তাহিয়ার মুখ দিয়ে গলগল করে র’ক্ত বের হয়ে আসতে শুরু করল। এই মেয়ের নিঃশ্বাস বন্ধ হলে তবেই সে এই মেয়েকে ছাড়বে। তাহিয়ার শরীরটা নিস্তেজ হতে শুরু করেছে। বাঁচার জন্য যতটুকু শরীর নড়ছিল তার ধীর গতিতে নেমে আসছে। প্রচন্ড কাশি আসতে চাইছে। গলা চেপে ধরে রাখার জন্য ঠিকমতো কাশতেও পারছে না। মানুষকে তিলে তিলে শেষ করে দেওয়াতে মুনতাসিমের হাত খুবই দক্ষ। তা তাহিয়া মৃত্যু কাছাকাছি গিয়ে উপলব্ধি করতে পারছে। আঁখিযুগল ছোট হয়ে আসতে শুরু করেছে। তখনই কক্ষের মধ্যে রিয়াদ চৌধুরী আর আয়মান প্রবেশ করল। দ্রুত মুনতাসিমের হাত থেকে তাহিয়াকে ছাড়ানোর চেষ্টা করল। বাবাকে আঘাত করবে না বিধায় মুনতাসিমের হাতটা আলগা হয়ে আসলো। তখনই আয়মান তাহিয়াকে নিজের কাছে টেনে নিল। সমস্ত শরীর নেতিয়ে গিয়েছে তাহিয়ার। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি বহু আগেই হারিয়েছে সে। শরীরের সমস্ত ভর আয়মানের ওপরে ছেড়ে দিয়েছে। মুনতাসিম শান্ত দৃষ্টিতে তাহিয়ার দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। রিয়াদ চৌধুরীর থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে তাহিয়ার দুই গাল শক্ত করে চেপে ধরে বলল,

–এ যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিস। পরের বার কিছু বলার আগে সাবধানে বলবি। আল্লাহর কসম এর পরের বার তোকে বাঁচতে দিব না। কথা গুলো বলেই ক’ষে একটা থা’প্প’ড় বসিয়ে দিল। মুনতাসিমের ক্রোধে কাছে আয়মানও হার মেনে গেল। মুনতাসিমের শক্ত হাতের প্রহার সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে গেল তাহিয়া। তবুও আয়মান তাহিয়াকে ধরল না। নিজের প্রাণ প্রিয় মেয়ের করুন অবস্থা দেখে শব্দ করে কেঁদে উঠলেন সুফিয়া চৌধুরী। দ্রুত তাহিয়াকে হসপিটালে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হলো।

সকালে ফোন হাতে নিতেই কালকের সব ঘটনা আঁখিযুগলের সামনে আসতেই মেহেভীনের চোখ গুলো আপনা-আপনি বড় বড় হয়ে গেল। ছোট একটা কাহিনিকে সবাই এত বড় করে ফেলল। আজকে মেহেভীন উপলব্ধি করছে পারছে। মানুষটা আসলেই অনেক বড় মাপের মানুষ। সে ভালোবাসার মানুষ ভেবে কতটাই না তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছে। এতকিছুর পরে যে মানুষটা তাকে ক্ষমা করবে না। মনের অজান্তেই ভেতরটা শূন্য হয়ে গিয়েছে। মানুষটার শূন্যতায় তাকে প্রতিটি প্রহর ছটফট করতে হবে। মানুষটা কি আর ফিরবে না চেনা নীরে। কথা গুলো ভাবতেই উঠে এসে জানালর কাছে দাঁড়াল। খোলা জানালার দক্ষিণের বাড়িটা আগের ন্যায় নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। মানুষটা আর বেলকনিতে এসে দাঁড়াবে না। কেউ তার জন্য পাগলামি করবে না। কথা জালে ফাঁসিয়ে রাগিয়ে দিবে না। ভেতরটা বড্ড খালি খালি লাগছে। অপরাধবোধ ভেতরটা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। কিছুক্ষণ বাসার দিকে নিষ্পলক চাহনিতে চেয়ে থাকলো মেহেভীন।

চায়ের কাপ হাতে নিয়ে মাহতাব উদ্দিনের সামনে বসল রুপা। রুপাতে দেখে মনোমুগ্ধকর হাসি হাসলেন মাহতাব উদ্দিন। রুপা মাহতাব উদ্দিনের থেকে কাগজ গুলো নিজের হাতে নিল। এই মানুষটার ভিষণ উপকার মেহেভীন করেছে। সেজন্য কোনো সমস্যায় পড়লে, সে আঁখিযুগল বন্ধ করে মেহেভীন কাছে আসে। তার কাছে মেহেভীন ভরসার একটা বিশাল জায়গা। যেখানে অসৎ এর থেকে সৎ এর মূল্য বেশি। মাহতাব মিষ্টি হেসে বলল,

–এগুলো তুমি ম্যাডামের থেকে সাইন করিয়ে রাখবে মামনি। আমি বিকালে এসে নিয়ে যাব। আমি ম্যাডামের অফিসেই যেতাম। কিন্তু আমার বোনটা কাল রাতে স্ট্রোক করেছে। দেখতে যাব। কথা গুলো বলেই সে রুপার হাতে এক হাজার টাকা গুঁজে দিল। রুপা নিতে চাইল না। তবুও মাহতাব উদ্দিন জোর করে দিল। এটা নতুন কিছু নয়৷ এমন শতশত মানুষ তার হাতে হাজার হাজার টাকার নোট গুঁজে দিয়ে বলে, মেহেভীন যেন তাদের কাজটা দ্রুত করে দেয়৷ প্রথমে রুপা এসবে না কারলেও এখন ঝটপট নিয়ে নেয়। মাহতাব উদ্দিন চলে যেতেই রুপা কাগজের দিকে দৃষ্টিপাত করে রাখল। তারপরে টাকাটা আঁচলে বেঁধে রান্না ঘরে চলে গেল।

সকাল সকাল এমন খবর দেখে ফরিদ রহমানের মুখশ্রীতে তাচ্ছিল্য ফুরে উঠল। রাইমা বেগম গম্ভীর মুখশ্রী করে বসে আছেন। ফরিদ রহমানের আজ ভিষণ আনন্দ হচ্ছে। যে মেয়ের জন্য তার প্রেয়সী তাকে প্রহার করল। সেই মেয়েই তার মুখে চুনকালি লাগিয়ে দিল। সে অজস্র বাজে ভাষায় মেয়েকে গালি দিয়ে হাসতে হাসতে বলল,

–একটা চরিত্রহীন মেয়ের জন্ম দিয়েছ। এত অবিবাহিত ছেলের থাকা সত্বেও বিবাহিত পুরুষের সাথে নষ্টামি করে। তুমি এই মেয়ের জন্য আমাকে প্রহার করেছিলে রাইমা!

–সব সময় চোখের দেখা সঠিক হয় না। খোঁজ নিয়ে জেনেছি মুনতাসিম বিবাহিত নয়। তাহিয়া মুনতাসিমের ফুফাতো বোন। মুনতাসিমকে সে ভালোবাসে কিন্তু মুনতাসিম মেহেভীনকে ভালোবাসে। মেহেভীনকে দূরে সরানোর জন্যই মেয়েটা মিথ্যা কথা বলেছে। তোমাকে আরো একটা খারাপ খবর দেই। মেহেভীনকে বাজে কথা বলার অপরাধে মেয়েটা এখন হসপিটালে। ভালোবাসতে হলে এভাবে ভাসতে হয় বুঝলে৷ আমার নির্বোধ মেয়েটা কেন যেন খাঁটি সোনা চিনল না। খুব তাড়াতাড়ি সঠিক তথ্য সামনে চলে আসবে। তখন তোমার এসব কথা থাকবে তো। অর্ধাঙ্গিনীর কথায় ফরিদ রহমানের আঁখিযুগল বড় হয়ে আসলো। সে বিস্ময় নয়নে অর্ধাঙ্গিনীর দিকে তাকিয়ে আছে। তার প্রান প্রিয় বউটা এতটা ধুরন্ধর আর পাষাণ হয়ে গেল কিভাবে? সেটাই তিনি বুঝতে পারছেন না!

হসপিটালের কোলাহলে তাহিয়ার ঘুম ভেঙে গেল। আজ সাতদিন ধরে হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে সে। কণ্ঠনালি দিয়ে কোনো শব্দ বের হতে চায় না। গলাটা ভিষণ ব্যথা হয়ে আছে। জীবন বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে কিছু নরম খাবার অসহ্য যন্ত্রনা নিয়ে ও খেতে হয়। মৃত্যুকে খুব কাছে থেকে দেখেছে বলেই বাঁচার ইচ্ছেটা দ্বিগুণ ভাবো বেড়ে গিয়েছে। মুনতাসিম তাইয়ানকে বলে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সেদিনের ভিডিও মুছে দিয়েছে। কয়েকজন ত্যাড়ামি করেছিল। তাদের নামে সাইবার মামলা করেছিল। তারা সবাই এখন পুলিশ হেফাজতে আছে। তাহিয়ার কেবিনটা ফাঁকা হতেই মুনতাসিম আসলো তার কেবিনে। তাহিয়া খেয়ে সবেমাত্র শুয়েছিল মুনতাসিমকে দেখেই অস্থির হয়ে উঠল। তাহিয়ার নিঃশ্বাস নিতে ভিষণ কষ্ট হয়। সেজন্য অক্সিজেন মাক্স লাগিয়ে রাখা হয়েছে। মুনতাসিম এই কয়দিনে তন্ন তন্ন হয়ে খুঁজেছে কাগজ গুলো। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাইনি। বাধ্য হয়ে তার কাছে আসতে হলো। মুনতাসিম গম্ভীর মুখশ্রী করে বলল,

–আমি শুধু আর একবার বলব। একবারের বেশি যদি বলতে হয়। তাহলেই আজকেই তোর জীবনের শেষ দিন। তাহিয়া কিছু বলল না৷ শুধু চুপচাপ নিজের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিল। তা দেখে মুনতাসিম তাহিয়ার মুখ থেকে অক্সিজেন মাক্সটা খুলে দিল। দ্রুত গতিতে তাহিয়া শ্বাস নিতে লাগলো। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে যন্ত্রনা তীব্র হতে লাগলো। সে মুনতাসিমকে ইশারা করে বলল। যে কাগজ গুলো কোথায় আছে সে বলবে। তারপরে মুনতাসিম অক্সিজেন মাক্সটা আবার পড়িয়ে দিল। তাহিয়ার কণ্ঠনালি দিয়ে যেন শব্দ বের হচ্ছে না। ভিষণ কষ্ট করে এতটুকু উচ্চারন করল, “দাদুর বাড়িতে আমার রুমে আছে কাগজ গুলো। ” তাহিয়ার কথা শেষ হবার সাথে সাথে মুনতাসিম কক্ষ থেকে বের হয়ে গেল। তাহিয়ার তীব্র যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতেও এক টুকরো শান্তি অনুভব করল। তার বলা মিথ্যা কথা গুলো মুনতাসিম খুব সহজেই বিশ্বাস করে নিল।

নিজের কক্ষে গম্ভীর হয়ে বসে আছে মুনতাসিম। তাইয়ান খবর নিয়ে জেনেছে। সেখানে কোনো তথ্য পায়নি। ক্রোধের আগুনে ভেতরটা দাউ দাউ করে জ্বলছে। সবকিছু তচনচ করে দিতে ইচ্ছে করছে। তখনই দরজায় কেউ কড়া নাড়ে, মাশরাফিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুনতাসিম বিস্মিত হলো। কিন্তু সে বাহিরে তা প্রকাশ করল না। জীবনে প্রথম মাশরাফি তার কক্ষ এল। সে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–কি চাই তোমার?

–আপনার জন্য কিছু নিয়ে আসছিলাম।

–তোমার কিছু প্রয়োজন নেই আমার।

–এগুলো আপনার কাজে দিবে। ভয় পাবেন না মায়ের কথা শুনে ক্ষতি করতে আসিনি। কথা গুলো বলেই কিছু কাগজ মুনতাসিমের হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল। মুনতাসিম কাগজ গুলোর দিকে বিস্ময় নয়নে দৃষ্টিপাত করে আছে। মুহুর্তের মধ্যে সমস্ত মুখশ্রী রক্তিম বর্ন ধারণ করল। ললাটের দু’টো রগ ফুলে উঠেছে। কর্ণের পাশ দিয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে। মুনতাসিমকে এতটা উত্তপ্ত দেখে তাইয়ান দরজা কাছে এসে স্থির হয়ে গেল।

চার দেওয়ালের আবদ্ধ কক্ষে ঘুটঘুটে অন্ধকার বিরাজ করছে। তখনই উজ্জল শ্যাম বর্ণের এক রমনী কক্ষে প্রবেশ করে। সমস্ত কক্ষ জুড়ে নিস্তব্ধতা রাজত্ব করছে। কক্ষের ভেতর থেকে ম’দের বিশ্রী গন্ধ নাসারন্ধ্রে এসে ঠেকছে। রমনী বিরক্ত হয়ে বলল,

–আপনি কোথায়? আপনার কথা মতো দলিলে সাইন করে নিয়ে আসছি। তখনই মাঝ বয়সী একজন পুরুষ বের হয়ে আসেন। রক্তিম চোখে রমনীর দিকে দৃষ্টিপাত করেন। রাগান্বিত হয়ে বলল,

–আমি চারটা দলিল সাইন করাতে বলেছি। এখানে মাত্র একটা দলিল আছে।

–আপনি যেভাবে বলছেন। যেন মেহেভীন ম্যাডামকে দিয়ে অবৈধ দলিল সাইন কারনোটা পানির মতো সহজ। যেটা আপনি দেড় বছরে করতে পারলেন না। সেটা আমি আট মাসে করে দেখিয়েছি। আমি কৌশল জেনে গিয়েছি। এখন শুধু সাইন করানোর পালা৷ ম্যাডাম দেখে দেখে কাগজে সাইন করেন। যে কাগজ গুলো আমার কাছে আসে, সেগুলো ম্যাডাম শেষ আর প্রথমের পেজ গুলো দেখে। এই সুযোগ টাকে কাজে লাগিয়ে মধ্যের পেজে কাগজটা ঢুকিয়ে সাইন করিয়ে নিয়েছি। আমি না থাকলে আপনার কি হবে ভাবুন। তাই অযথা মেজাজ দেখাবেন না। ফলাফল ভালো হবে না। কথা গুলো বলেই চলে গেল রমণী। যুবকের চোয়াল শক্ত হয়ে এল। সে রক্তিম চোখে রমণীর যাওয়ার দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here