খোলা_জানালার_দক্ষিণে #পর্ব_৩৭ #লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

0
663

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_৩৭
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে আছে চার দেওয়ালের আবদ্ধ কক্ষ। কক্ষের মধ্যে জীর্ণশীর্ণ দেহটা নিয়ে মিরাজুলের সামনে শুয়ে আছে আরিয়ান। মিরাজুল গম্ভীর দৃষ্টি মেলে আরিয়ানের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। মনের একাংশে প্রতিশোধের আগুন দাউদাউ করে জ্বলছে। মেহেভীন আরিয়ান আর রহমানের নামে নারী নির্যাতনের মামলা করেছে। সে খবর কর্ণকুহরে আসতেই পালিয়েছে সে। শরীরের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। তবুও প্রতিশোধের নেশা মস্তিষ্ককে নাড়া দিচ্ছে। রহমানের হাত ভেঙে গিয়েছে। সে পুলিশ হেফাজতে আছে। মিরাজুল নিজেই আরিয়ানকে পালাতে সাহায্য করেছে।

–পালালেন কেন? মিরাজুলের কথায় জ্বলে উঠল আরিয়ান। কর্ণ দিয়ে উত্তপ্ত হাওয়া বের হচ্ছে। হিম শীতের মধ্যেও ললাটে বিন্দু বিন্দু ঘামের কণা তৈরি হয়েছে। আরিয়ান রাগান্বিত হয়ে বলল,

–শা’লী পুলিশ কেস করে দিয়েছে। পুলিশ আমায় খুঁজছে আমি না পালালে শা’লী’কে কি মারতে পারব! তোমার মেহেভীনের ওপরে এত কিসের রাগ ক্ষতি করতে চাও কেন?

–আমার মেহেভীনের প্রতি কোনো রাগ নেই। আমি মেহেভীনকে ভালোবাসি। হাজারটা বসন্ত আমি মেহেভীনের সাথে পার করতে চাই। কিন্তু আমার সুখানুভূতিতে মুনতাসিম বিষাদ ঢেলে দিয়েছে। আমি মুনতাসিমকে মা’র’তে চাইছি। আমার অধরযুগলের দিকে তাকিয়ে দেখো এখনো ক্ষত রয়ে গিয়েছে। এই ক্ষতের দিকে যতবার দৃষ্টিপাত করি মন মস্তিষ্ক নাড়া দিয়ে বলে মুনতাসিমকে নিঃস্ব করে দে। আমি বহু কষ্ট মেহেভীনের গৃহ পর্যন্ত এসেছি। তোমার জন্য শুধু মাত্র মেহেভীনকে তুলতে পারলাম না। মিরাজুলের বাক্য গুলো কর্ণপাত হতেই আষাঢ়ের আঁধার আরিয়ানের মুখশ্রীতে ঘনিয়ে এল। সে নেতিয়ে যাওয়া কণ্ঠে বলল,

–মেহেভীনের সাথে আমার বিয়ে হবার কথা ছিল। কিন্তু আমাকে মেহেভীনের মায়ের পছন্দ না। মেহেভীনও আমাকে পছন্দ করে না। সেজন্য আমাকে সে বিয়ে করেনি। শুনেছি মন্ত্রী সাহেব মেহেভীনকে ভিষণ ভালোবাসে। মেহেভীনের মনের অন্তরালে মন্ত্রী সাহেবের জন্য সুপ্ত অনুভূতি কাজ করে। তুমি ভেবেছো এত ভালো কিছু রেখে আমাদের মতো পঁচা আলুর দিকে নজর দিবে মেহেভীন!

–পঁচা আলু আপনি হতে পারেন আমি না। যে ভাবেই হোক মেহেভীনকে আমার চাই। মেহেভীন আমার না হলে মেহেভীনকে ধরনীর বুক থেকে মুছে দিব।

–তাহলে তোমাকে একটা সুখবর দেই। মেহেভীনের বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে মন্ত্রী সাহেবের সাথে, মা এখনই মেসেজ করে জানালো। এবার বলো দু’জনকে পৃথিবী থেকে সরাতে আমাকে সাহায্য করবে কি না?

–যদি ধরা পড়ে যাই?

–তাহলে বিয়ের দিনটাই আমরা বেছে নেই। সেদিন এতএত মানুষের কোলাহল থাকবে। চারদিকে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন হবে। বাহারী রঙের মানুষের আনাগোনা হবে। এত এত মানুষের ভিড়ে কে তাদের মা’র’ল সেটার হদিস কেউ খুঁজে পাবে না। মিরাজুল একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। যার জন্য মন গহীনে একটা সময় সুপ্ত অনুভূতি কাজ করেছিল। নিয়তির বিরুদ্ধে গিয়ে তাকেই মা’র’তে হবে।

–আপনি এই কয়টা দিন সুস্থ হয়ে নিন। আমি প্রস্তুতি নেই অনেক শ্রম দিতে হবে। কথা গুলো বলেই মিরাজুল কক্ষ ত্যাগ করল।

ঘড়ির কাঁটায় রাত বারোটা ছুঁই ছুঁই বিষন্ন মন নিয়ে মুনতাসিম কক্ষ প্রবেশ করল। কক্ষে প্রবেশ করে বাবা উপস্থিত টের পেয়েও আগের ন্যায় নিজের কর্মে ব্যস্ত থাকলো। রিয়াদ চৌধুরী কিছু বলতে যাবে তখনই মুনতাসিম ফ্রেশ হতে চলে গেল। মুনতাসিম ফ্রেশ হয়ে আসতেই রিয়াদ চৌধুরী এক বিবাদিনীর বিষাদ মাখা মুখশ্রী মুনতাসিমের সামনে উপস্থাপন করল। মুনতাসিম আগের ন্যায় গম্ভীর মুখশ্রী করে বাবার দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। প্রেয়সীর এমন মলিনতায় ছোঁয়া মুখখানা ভেতরে অস্থিরতার ঝড় তুলে দিয়েছে। মুনতাসিম নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিল।

–কিছু দেখতে পাচ্ছ?

–হ্যাঁ পাচ্ছি মেয়েটা ভিষণ অসুস্থ!

–আর কিছু দেখতে পাচ্ছ না?

–সুন্দর ফুলের পাপড়ি যদি পোকা খেয়ে ফেলে, তাহলে মানুষের দৃষ্টি আগে সেই পোকা খাওয়া পাপড়িতে গিয়ে পড়ে। ফুলের সৌন্দর্য ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য পোকা খাওয়া পাপড়িটা ছেঁটে দেওয়া উচিৎ। তবেই ফুলের আসল সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে।

–খুশি হওনি?

–আমার খুশির সাথে কি যায় আসে?

–রাগ করে আছ?

–আমার রাগ আছে?

–ধরনীর বুকে সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা মুনতাসিমের রাগ নেই! বিয়ে ঠিক করে এসেছি। আমি তো ভিষণ খারাপ বাবা। তাই ছেলের ছোট বেলার ইচ্ছেটা পূর্ণ করে আসলাম। কারো অনেক শখ ছিল মায়ের নাক ফুল দিয়ে লাল টুকটুকে বউ নিয়ে আসবে। কেউ সেটা ভুলে যেতে পারে কিন্তু তার মা ভুলে যায়নি। তার মা আমার কাছে ছেলের বউয়ের আমানত রেখে গিয়ে ছিল। এত গুলো বছরে সেই জিনিসটার সংস্পর্শে কাউকে আসতে দেইনি। যে জিনিসটার আসল মালিক সঠিক জায়গায় পৌঁছে দিয়ে আসলাম। আগামী সপ্তাহে বিয়ে ঠিক করে এসেছি।

–দয়া দেখানোর দরকার ছিল না।

–আমি তোমায় পরীক্ষা করতে চেয়েছিলাম। তোমার ভালোবাসা ঠিক কতটা গভীর।

–তার জন্য মেয়ের প্রয়োজন ছিল না। সেই পথেই হাঁটলেন মাঝখানে কিছুটা জল ঘোলাটে করলেন।

–মেহেভীনের বাবা বাসায় নেই। সেজন্য তার সাথে কথা বলতে পারিনি। তোমার কাছে নাম্বার থাকলে দিও তো আমি কথা বলব। কথা গুলো বলেই রিয়াদ চৌধুরী কক্ষ ত্যাগ করছিলেন। তখনই মুনতাসিম ধীর কণ্ঠে ডাকল, আব্বা। রিয়াদ চৌধুরী থমকালেন। উৎসুক দৃষ্টিতে ছেলের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে।

–আপনাকে বিশ্বাস করে একটা কথা বলব। আপনি যদি বিশ্বাসের মর্যাদা রাখেন। তবেই বলব কথা না দিলে বলব না।

–তোমার বিষয়ে আমি কতটা সিরিয়াস তুমি জানো না। তুমি যতটুকু জানো তার থেকে-ও অনেক বেশি আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার ক্ষতি হবে তুমি আঘাত পাবে এমন কাজ করার আগে আমার মৃ’ত্যু হোক।

–বাজে কথা বলা বন্ধ করুন। কথাটা আপনার আর আমার মধ্যেই থাকে যেন। আর সবকিছু জানার পরে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার দায়িত্ব আপনার। রিয়াদ চৌধুরী চিন্তিত হলেন। তার ভেতরে দারুণ অস্থিরতা কাজ করছে। মুনতাসিম আগে কখনো তাকে এমন কথা বলেনি। তবে কি ভয়ংকর কিছুর সম্মুখীন হতে চলেছে? রিয়াদ চৌধুরী ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে।

–মেহেভীনের বাবা বেঁচে নেই আব্বা। মেহেভীনের বাবা খু’ন হয়েছে। আমাদের বিয়ের আগ পর্যন্ত কথা গুলো নিজের মধ্যে রাখবেন। মেহেভীনের মা আমার থেকে কিছু আড়াল করতে চান না। তাই সমস্ত সত্যি কথা আমাকে বলেছে। আপনি সবাইকে নিয়ে মিলেমিশে আনন্দ করতে ভালোবাসেন। হয়তো প্রচন্ড রকমের বাড়াবাড়ি করতেন। তাই আপনাকে বলতে বাধ্য হলাম আন্টির সামনে এসব কথা বলে আমটিকে বিব্রত করার করবেন না। মেহেভীনকে ভালোবাসার চেষ্টা করবেন। তাহলে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ব্যক্তিটি হব আমি। রিয়াদ চৌধুরী বিস্ময় নয়নে মুনতাসিমের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। মুনতাসিমের দৃষ্টি অন্য দিকে ঘুরানো। অদ্ভুত ভাবে আঁখিযুগল রক্তিম বর্ন ধারণ করেছে।

–মেহেভীন অসুস্থ জানলে কিভাবে?

–সব জানি আমি গিয়েছিলাম। আন্টি বললেন রাত করে দু’টো মেয়ে মানুষ বাসায় থাকে। মানুষজন দেখলে বদনাম রটাবে। তাদের মানসন্মানের কথা চিন্তা করে চলে এসেছি। প্রাপ্তির শশুর আর ভাই মিলে দু’জনকে মেরেছে। কথা গুলো কর্ণকুহরে আসতেই কলিজা কেঁপে উঠল রিয়াদ চৌধুরীর। বাক্য গুলো আজ শব্দ হারিয়েছে। অনুভূতিরা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। ভেতরে ভেতরে ভিষণ অনুশোচনা কাজ করছে। এই সময়ে কেন মুনতাসিমকে দূরে সরতে বলল। ছেলেটা তার আল্লাহর তৈরি শ্রেষ্ঠ নেয়ামত সবাইকে কিভাবে মিলেমিশে ভালোবাসতে হয়। সেটা তার ছেলের থেকে শেখা উচিৎ।

–আপনি যে বিয়ের কথা পাকা করে এসেছেন। এটা জানেন তো মেয়ে টার চাকরিটা আর নেই। বিয়ের পরে শোনার থেকে বিয়ের আগেই শোনা ভালো। বিয়ের পরে যেন মেয়ে টাকে কখনো কোনো কড়া বাক্যের সম্মুখীন হতে না হয়। আপনাকে আমি ভিষণ সন্মান করি। আমার মনে হলো কথা গুলো আপনাকে জানানো প্রয়োজন। বিয়ের পরে আপনার তরফ থেকে মেহেভীনের প্রতি অসম্মান আসলে, আমি সেটা সহ্য করতে পারব না। তাই মনের কথা কোনো কিছু থাকলে সরাসরি বলে দিন।

–আমার মেহেভীনের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। তবে সে তোমায় কষ্ট দিয়েছে। সেজন্য মনের গহীনে রাগ ছিল। কিন্তু যখন দেখলাম আমার ছেলের অধিকাংশ পরিবর্তনের কারণ মেয়েটা। তখন আমার ভুল ধারণা ভাঙলো। আমার ছেলের সুখের উর্ধে গিয়ে কিছুই হবে না। তোমার মতো করে মেয়েটাকে আগলে রাখতে পারব কি না জানি না। তবে তোমাকে সাহায্য করব যেন মেয়ে টাকে প্রয়োজনের থেকে একটু বেশিই আগলে রাখা যায়। কথা গুলো বলেই কক্ষ ত্যাগ করল রিয়াদ চৌধুরী। ভেতরটা ছিন্ন ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে তবুও যেন আরিয়ানের দেখা মিলছে না। যে হাতে মেহেভীনকে প্রহার করেছে। সে হাত দু’টো সে আগে কা’ট’বে তবেই রক্তাক্ত হৃদয়টা শুকাতে শুরু করবে। তাইয়ান মস্তক নুইয়ে বলল,

–এলাকার কোথাও নেই আরিয়ান। সিসি ক্যামেরাতে দেখা গিয়েছে মিরাজুল ভাই আরিয়ানকে নিয়ে পালিয়েছে। যেদিকে গিয়েছে সেদিকের এলাকা গুলোতেও খোঁজা নেওয়া হয়েছে পাওয়া যায়নি। তাইয়ানের কথায় মুনতাসিমের হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এল। ক্রোধে চোয়াল শক্ত করে ফেলল। মস্তিষ্ক টগবগ করে উঠল। মিরাজুলের প্রতি ক্রোধের মাত্রা দ্বিগুন ভাবে প্রকোপ পেল। মুনতাসিমে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

–আমি একটা ঠিকানা দিচ্ছি তোমাকে সেখানে খোঁজ করো। তাইয়ান ঠিকানা নিয়ে কক্ষ ত্যাগ করল। মুনতাসিম আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের ক্রোধ সংবরন করার চেষ্টা করছে। কিছু স্নিগ্ধ অনুভূতির মধ্যে তিক্ত অনুভূতি এসে অনুভূতি নাম টাকেই বিষাক্ত করে তুলেছে। সেই বি’ষ বাতাসের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে মনটাকে ভিষণ পীড়া দিচ্ছে।

প্রভাতের আলো ফুটে গিয়েছে। গাছের মগডালে বসে পাখিরা সুর তুলতে ব্যস্ত। রোদের সোনালী আলোয় কুয়াশা বিলীন হতে শুরু করেছে। সময় স্রোতের ন্যায় ছুটে চলেছে। জীবন বদলায়, বাদলায় জীবনের গতিবেগ বদলায় না শুধু কিছু মানুষ মন। নির্ঘুম রজনী কাটিয়ে মেহেভীনদের বাসায় এসেছে মুনতাসিম। রাইমা বেগমকে বেশ সুস্থ দেখাচ্ছে। মুনতাসিমকে দেখে রাইমা বেগম মিষ্টি হেসে বললেন,

–তুমি এসেছ? কালকে রাস্তা থেকে চলে যেতে বললাম রাগ করোনি তো আবার। আসলে কালকে এতবড় ঘটনা হয়ে গিয়েছে। আশেপাশের মানুষ কেমন নজরে দেখছিল। আমি চাইনি আমাদের নিয়ে কেউ কোনো বাজে কথা বলুক।

–আমাকে এতটা কৈফিয়ত দিতে হবে না। ভালো-মন্দ বোঝার বুদ্ধি বিবেক দু’টোই আমার আছে। আপনার শরীর এখন কেমন আছে?

–আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছে। তুমি কালকে যে নার্সকে রেখে গিয়েছিলে মেয়েটা ভিষণ মিষ্টি। ডক্টর এসে কি যে ঔষধ দিয়ে গেল সকালে উঠে দেখি মস্তকের ব্যথা হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছে। কিন্তু অদ্ভুত দু’টো ডক্টরের ঔষধ খেলাম। কিন্তু পার্থক্য কতটা আলাদা! মুনতাসিম হালকা হাসলো কিছু বলল না।

–তুমি এখন মেহেভীনের সাথে দেখা করতে পারো। তুমি মেহেভীনের কক্ষে গিয়ে বসো। আমি রান্না ঘর থেকে আসছি। মুনতাসিম কোনো বাক্য উচ্চারন না করেই মেহেভীনের কক্ষের সামনে আসলো। মেহেভীন বিছানায় শুয়ে ফোনে স্ক্রোল করলছিল।

–আসব? মুনতাসিমকে দেখে মেহেভীন ফোন রেখে উঠে বসলো। রাগান্বিত হয়ে বলল,

–দয়া দেখাতে এসেছেন? আপনাকে কে বলেছিল আমাদের নার্স লাগবে? আপনি কেন কাল আমাদের বাসায় নার্স নিয়ে এসেছিলেন?

–এই প্রশ্নের উত্তর আমি সেদিন দিব। যেদিন আমি অসুস্থ হব আপনি ডক্টর ডাকবেন। অনুভূতি তো বলে প্রকাশ করা যায় না। তবে অনুভূতি পরিস্থিতি দিয়ে অনুভব করানো যায়।

–আপনি ভেতরে এসে বসুন। মা দেখলে আমাকে কথা শোনাবে।

–তার দরকার নেই দেখতে এসেছিলাম। এই যে দেখলাম এখন চলে যাব।

–চলে যাবেন কেন?

–যাব না বলছেন?

–একটা মেয়ে যখন রাগ করে বলবে কথা বলবেন না। তখন বুঝতে হবে এখন মেয়েটার সাথে জোর করে কথা বলতে হবে। একটা মেয়ে যখন বলবে আমার কারো ভালোবাসার প্রয়োজন নেই। তখন বুঝবেন মেয়েটাকে প্রয়োজনের থেকে একটু বেশিই ভালোবাসা দিতে হবে।

–থেকে ভালোবাসতে বলছেন?

–অদ্ভুত মানুষ তো আপনি!

–আপনার চিন্তা ভাবনা গুলো অদ্ভুত। তাই আমাকেও আপনার কাছে অদ্ভুত লাগছে।

–আপনার বাবাকে বলুন বিয়েটা ভেঙে দিতে।

–আপনার মাকে বলুন আপনাকে তুলে আ’ছা’র দিতে।

–আপনি ঝগড়া করতে এসেছেন?

–আমার মতো মানুষ ঝগড়া করতে পারে?

–আমি আপনাকে বিয়ে করব না।

–করবেন না সমস্যা কি সারাজীবন দেবদাস হয়ে থাকবেন।

–আমি অন্য কাউকে বিয়ে করব।

–তাহলে আমার হাতে খু’ন হওয়া প্রথম নারীটি আপনিই হবেন। আমি নিজেও বিয়ে করব না। আপনাকেও বিয়ে করতে দিব না। আর বিয়ে করতে মন চাইলে আমাকেই করতে হবে।

–স্যার আপনি দাঁড়িয়ে না থেকে কক্ষে এসে বসুন। আপনার সাথে আমার কয়টা গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। সেগুলো শুনে আমাকে বাধিত করুন। মুনতাসিম বিলম্ব করল না গম্ভীর মুখশ্রী করে বসলো। মেহেভীন শান্ত কণ্ঠে বলল,

–আপনার বাবাকে বিয়েটা পেছাতে বলুন। আমার একটু সময়ের প্রয়োজন। আপনি তো সবকিছুই জানেন। সবকিছু জানার পরে-ও মায়ের সাথে তাল কেন মেলাচ্ছেন?

–বাচ্চাদের পড়াশোনার দেরি হয়ে যাচ্ছে তাই। মেহেভীন হতভম্ব হয়ে গেল। মুহুর্তের মধ্যে মেজাজ উত্তপ্ত হয়ে গেল। সে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। আর মানুষটা তাকে নিয়ে মজা লুটছে! মেহেভীনের ভাবনার মাঝেই কিছু বাক্য কর্ণকুহরে এসে পৌঁছাল।

“আমারে হারাইতে দিয়েন না ম্যাডাম। আমার মতো মায়া করে কেউ আপানারে চাইবে না। কথা গুলোর মধ্যে কত-শত আকুলতা দেখতে পেল মেহেভীন। মায়ায় জড়ানো কণ্ঠস্বর মেহেভীনের ভেতরে নাড়া দিয়ে উঠল। মেহেভীনের আঁখিযুগল মুনতাসিমের দিকে স্থির হয়ে আছে। কতদিন পরে মুনতাসিম তাকে আদুরে মাখা কণ্ঠে ম্যাডাম বলে ডাকলো!

চলবে…..

(নায়ককে অতি সাধু বানাতে গিয়ে নাকি দুর্বল বানিয়ে ফেলছি। কেন নায়ক অন্য নায়কদের মতো বাবা-মাকে কষ্ট দিয়ে নিজের ভালোবাসাকে প্রধান মনে করেনি তাই। বাবার সিদ্ধান্তকে সন্মান জানিয়েছে তাই। একজন অসুস্থ মানুষকে উত্তেজিত না করে শান্ত রাখার জন্য বলেছে ভুলে যাব তাই। আবার ঠেস দিয়ে বললেন রাজনীতি ও করে। সে রাজনীতি করে জন্যই মেহেভীনকে একটা সুস্থ পরিবেশ ও সুন্দর পরিবার দিতে দিয়েছে। জোর করে বিয়ে করে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে অসুস্থ পরিবেশ সবাই দিতে পারে। কিন্তু দুই পরিবারকে মানিয়ে সবার দোয়া ও ভালোবাসা নিয়ে সুস্থ পরিবেশ সবাই দিতে পারে না৷ সে রাজনীতি করে বলেই জানে কিভাবে সকলের মনের মধ্যে যাওয়া যায়। কিভাবে মিলেমিশে থাকা যায়। মেহেভীনের কথা বললেন বিরহ ভুলে গেল ওদের কিছু বলল না। আপনাদের বাসায় মেহমান আসলে আপনারা কি রুপ আচরণ করেন? দূর দূর করে তাড়িয়ে দেন অসুস্থ থেকে মেহমানদের সাথে কিভাবে সুন্দর ব্যবহার করা যায়। তা মেহেভীন ও তার মা করেছে। মেহেভীন কাকে না করবে যাকে সে ভালোবাসে! মুনতাসিম কেন মেহেভীনের পাশে থাকলো না ভালোবাসা কই গেল। মুনতাসিম তার জায়গায় ঠিক আছে। সে রাইমা বেগমকে কি বলেছিল কষ্ট করে মনে করবেন। সে শান্ত মস্তিষ্কের মানুষ। সে তার বাবাকে যা বলেছিল বুঝেশুনেই বলেছিল। সে জানতো তার বাবা তাকে কষ্ট দিয়ে কোনো কাজ করবে না। বাবাকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য যদি নায়ক দুর্বল হয় তাহলে তাই সই। বাবা-মাকে অসম্মান করলে তখন বলতেন৷ সে নায়ক হবার যোগ্য না একজন নায়ক হয়ে কিভাবে বাবা-মাকে কষ্ট দিয়ে নিজের ভালোবাসার মানুষকে গুরুত্ব দেয়। এইগল্পে বাবা মাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে ভালোবাসাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। মেহেভীন আসার আগে মুনতাসিমের পেছনে কে ছিল বিবেক দিয়ে ভাববেন। তারপর বুঝেশুনে মন্তব্য করবেন। আমি যখন লেখি অনেক ভেবে চিন্তে লেখি। যেন পাঠক জানতে চাইলে, উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা আমার থাকে। আমি বোধহয় আবার রাইটিং ব্লকে পড়লাম। শব্দ ধরতে পারছি না। সবাই ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কথা গুলো গুছিয়ে বলতে চাইছিলাম কথা গুলোও যেন এলোমেলো ভাবে বললাম। সবাই রেসপন্স করবেন। শব্দসংখ্যা:২০৭৪)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here