#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_২৪
“প্লিজ দাদু আমাকে ছেড়ে দিন। আমার শরীরে শক্তি নেই। ইন’জেক’শন দিয়েন না। প্লিজ ছেড়ে দিন।”
“আইম সরি দাদুভাই। বিয়ে তো করতে হবে নাকি? তোমাকে প্রিপার করার জন্য এই ইন’জেক’শন দিচ্ছি। যাতে তুমি নিজে সাজুগুজু করতে পারো। আমার প্রিয় দাদুভাই। চলো চলো হাত এগিয়ে দাও। এই তোরা কি দেখছিস? আমার দাদুভাই এর হাত ধর। একটুও ব্যথা লাগবে না দাদুভাই। এখনি সব ব্যথা দূর হয়ে যাবে।”
কথাটি বলে দাহাব এহসান পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ভাড়াটে লোকের দিকে তাকিয়ে ইশারা করলেন। লোকটি ইঙ্গিত বুঝতে পেরে নাজীবার হাত চেপে ধরে। দাহাব এহসান নাতনীর কোমল হাতের কব্জিতে চুমু দেয়। নাজীবার শরীর ঘৃণায় গলিয়ে এলো। হাত সরাতে নিয়েও পারল না। তার শরীরে মা’রধর এর চিহ্ন। বিধেয় দাহাব এহসান পৈশাচিক হেসে নাজীবার শরীরে ইন’জেক’শন চুবিয়ে দেয়। আস্তে ধীরে নাজীবা নেতিয়ে পড়ে। কান্নায় ফুঁপালেও এখন সেই শব্দ অব্দি নেই। দাহাব এহসান তার ভাড়াটে লোকদের বের হতে বললেন। তারা যেতেই কামনার দৃষ্টিতে নাজীবার দিকে তাকিয়ে বলেন,
“তোর জামাই বাজপাখির মত বেশি পাখা ঝাপটা ছিল? সেই পাখা কেটে দেওয়ার জন্যেই এই ব্যবস্থা। তোর সেন্স ফিরলে আমার হাতের পুতুলের মত নাচ নাচবি। তখন মজা আসবে তোর জামাই তোর আর আমার বিয়ের কার্যক্রম দেখে যে কষ্টটা পাবে তাতেই আমি খুশি হবো। খুব বেশি পিছে লাগতে আসছিলো আমার। একদম কলার টেনে পায়ের নিচে না ফেললে আমার নামও দাহাব এহসান না।”
দাহাব এহসান নাজীবার দিকে একপলক তাকিয়ে বেরিয়ে যায়।
অন্যথায়, আফরাজ পরিবার সমেত খাদিজা বেগম এর কবরের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। ঘণ্টাখানেক আগেই দাফন কার্য সম্পন্ন করা হয়েছিল। কুসুমার অবস্থা তো ম’রম’রা। একে তো প্রেগন্যান্ট তার উপর মানসিক আঘাতে বিধ্বস্ত। পরিবারের অতীব প্রিয় মানুষটি চলে গেল। যার রেশ যেনো তাদের মস্তিষ্ক কে অচল করে রেখেছে। আফরাজ দাফনের কাজ করার সময় থেকেই নিশ্চুপ হয়ে আছে। আকবর এর মনে নাকিব মুনসিফ কে নিয়ে প্রশ্নের ছড়াছড়ি চলছে। তবুও পরিস্থিতির সাপেক্ষে চুপ করে রইল। আফরাজ এর বাবার অবস্থা কাহিল। ঘুম থেকে জাগলেই মায়ের কবরের কাছে ছুটে আসেন। মিসেস ফেরদৌসী খুব কষ্টে স্বামী-কে সামলাচ্ছেন। সকাল থেকে একবারো চোখজোড়া বন্ধ করতে পারেননি। পারবেনও কেমনে প্রথমে আফরাজ এর চিন্তা, তার পর নাজীবা,শ্বাশুড়ি আর এখন স্বামীর চিন্তায় মশগুল। চোখও বোধহয় ব্যথা করছে। মিসেস ফেরদৌসী তপ্ত বেদনাময় শ্বাস ছেড়ে আরেক মগ কফি খেলেন। কিন্তু চোখজোড়া বন্ধ না করে পারলেন না। স্বামীর পাশে বালিশে মাথা রাখতেই হাজারো ক্লান্তির রেশে ঘুমিয়ে পড়লেন। তিনি ঘুমিয়ে যাওয়ার পরপরই রুমে আফরাজ এলো। বাবার বিধ্বস্ত মুখশ্রীর দিকে কয়েকপলক তাকিয়ে রইলো। চোখজোড়া থেকে দু’ফুটো পানি পড়ল বোধহয়। প্রতিবার তার বাবা শোকাহত অবস্থায় যে পাগলামীপনা করেন তার জন্য সে বাবাকে ঘুমের ইন’জেক’শন দিয়ে দেয়। কি করবে তা ছাড়া অন্য উপায় তো নেই যে শান্তি করতে পারবে! বারংবার থামালে মা’রতে হাত উঠিয়ে নেন জনাব ইসমাইল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাবা-মায়ের রুমের দরজা ভিড়িয়ে লাইব্রেরী রুমে গেলো। আকবর-কে গার্ডস সমেত দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার মনে হানা দিল তার প্রধান উদ্দেশ্য নিয়ে। চোখ বুঁজে কিঞ্চিৎ মুহূর্ত নীরব রইল। হুট করে চোখ খুলে গার্ডস কে বলে,
“গাড়ি নিয়ে দক্ষিণ দিকের বাঁশবাগান এর রাস্তায় যাও। সেখান থেকে সোজা রাস্তায় গিয়ে গলির মুখে পরিত্যক্ত বাড়ি আছে। সেখানে ঘেরাও লাগিয়ে দাও। আমি আসছি। আকবর তুই এদের সঙ্গে যাহ্। দাহাব এর সঙ্গীকে তো ধরে আনতে হবে। যার কারণে আমার দাদি জীবনহারা হলো। তাকেও তো এর মূল্য দিতে হবে।”
আকবর মাথা নেড়ে গার্ডস নিয়ে আফরাজ এর কথামত বেরিয়ে গেল। তারা যেতেই আফরাজ ফোন বের করে এক পরিচিত লোককে কল দেয়। অপরপাশের লোকটি যেন তার ফোনের অপেক্ষায় ছিল। সেও তৎক্ষণাৎ কল রিসিভ করে ‘হ্যালো’ বলে। আফরাজ গম্ভীর গলায় বলে,
“আমাদের এক হওয়া উচিৎ। পুলিশ-পুলিশ খেলা অনেক হয়েছে। এবার চোর-ডাকাত-পুলিশের খেলা শুরু হোক। কি মতামত তোর?”
“অফকোর্স আমি রেডি। তুই শুধু বল কোথায় কখন আসতে হবে?”
“মিলনায়তনে পারমহল এর রাস্তা ভেদ করে শহর থেকে বেরুনোর গেইট আছে। সেই গেইটে আটক কর। আমিও আসতেছি।”
“ওকে ইয়াংম্যান।”
(স্থানভিত্তিক নামগুলো কাল্পনিক)কল কেটে বেরিয়ে গেল আফরাজ। গাড়িতে বসে ইঞ্জিন চালু করতেই ফোনে একটি ভিডিও এলো। ভিডিওটি পাঠিয়েছে দাহাব এর লোক। যাকে আফরাজ দাহাবের চেয়েও দ্বিগুণ টাকা দিয়ে পক্ষপাতী করেছে। মেসেজ অপশনে গিয়ে ভিডিওটি চালু করে। সেখানে নাজীবা-র সঙ্গে দাহাব এর অশ্লীল আচরণ করার দৃশ্য দেখানো হচ্ছে। আফরাজ এর চোখ-মুখ শক্ত হয়ে গেল। দাঁত কিড়-মিড়িয়ে দাহাব এহসান এর ফোনে কল লাগাতে গিয়েও লাগায়নি। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)কারণ আফরাজ এমুহুর্তে কল দিয়ে ভিডিও-র ব্যাপারে উল্টাপাল্টা কথা বললে দাহাব বুঝে যাবে যে, সে তার প্ল্যান সম্বন্ধে জেনে গিয়েছে। এতে পরিকল্পনা হিতে বিপরীত হয়ে যাবে। সেই চিন্তা করে কল দিল না। নিজের রা’গ-কে নিয়ন্ত্রন করে আফরাজ গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়।
_____
নাজীবার হুঁশ আস্তে ধীরে ফিরে আসায় শরীর মোচড়ে বসে পড়ে। আশপাশের পরিস্থিতি খেয়াল করে মাথায় আসে সে দাহাব এহসান এর হাতে বন্দি। যে, ছন্দবেশে যুবকের বেশভূষায় এতদিন যাবত চলাফেরা করছিল। অথচ তিনিই হলো সেই খু’নি যে তার বাবা-মায়ের র’ক্ত চু’ষে , দেহগুলো-কে মাঠিতে পুঁতে দিয়ে ছিল। কিন্তু তার তো দাহাব এর হাতে পড়ার কথা ছিল না। তবে কেমনে কি হলো? হাঁটু ভেঙ্গে বসে থাকল সে। কান্নার দৃষ্টিতে চৌপাশ চোখ বুলায়। কোনোমতে টেবিলের উপর রাখা পানি ভর্তি মগ হাতে নিয়ে পানি পান করে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ভাবতে লাগল থার্টিফার্স্ট নাইট এর কথা।
সেরাত যে তার জীবনে কালোরাত বয়ে আনবে। কল্পনাও করেনি। যদি কল্পিত হতো কভুও সে রাতে আয়োজন করতো না। ভেবে ছিল বছরের নতুন দিন সেই উপলক্ষে স্বামীর সঙ্গে সুখের মুহূর্ত কাটাবে। একনিমিষে সব চুরমার হয়ে গেল। তার স্বামীর বুকে বু’লে’ট লাগায় সেও র’ক্তে মাখামাখি হয়ে যায়। তার স্বামীর দেওয়া শাড়িতে স্বামীর র’ক্ত লেগে তার বুকটা ছন্নছাড়া করে দিল। পুরো ঘর কাঁপিয়ে কান্নার ফলে সবার কানে জানাজানি হয়ে যায়। কান্নার চটে কখন যে গালে চ’ড় খেলো। তারও খেয়াল রইল না। শ্বাশুড়ি নিজের ছেলের করুণ দশা দেখে একমাত্র তাকেই অপরাধী ভাবল। অথচ সত্য তো অন্য কিছু তার স্বামীকে এই দাহাব এহসান খু’ন করতে চেয়ে ছিল। আল্লাহ জানেন তিনি সুস্থও হয়েছেন কিনা। আফরাজ এর কথা ভেবে নাজীবা আবারো কান্নায় ফুঁপাতে থাকে।
আকস্মিক কোমরে কারো হাতের স্পর্শে চমকে দূরে সরে গেল নাজীবা। দাহাব এহসান এর বয়স্ক রুপ দেখে বমি চলে এলো তার। ‘ওয়াক’ করে বমি করে দেয়। দাহাব এহসান বিরক্ত হয়ে নাজীবার গালে ‘ঠাসস’ করে এক চট’কা’নি দিল। অসহায় মেয়েটির শরীর এমনিতে দূর্বল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)এর মধ্যে চট’কা’নি খেয়ে তার বিধ্বস্ত শরীর ঠান্ডা টাইলার্সে নিথর হয়ে পড়ে। দাহাব এহসান পৈশাচিক হেসে নিজের পাঞ্জাবি খুলে বিছানার উপর ছুঁড়ে ফেললেন। দরজা আঁটসাঁট করে বেঁধে দেন। নাজীবার মুখের পাশে বসে তার পুরো শরীরে চোখ বুলিয়ে নেন। ঘনঘন শ্বাস ফেলছে মেয়েটা। যা দাহাব এর কামনা-কে দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এমন ক’চি মেয়েই তার যৌবনকালের পছন্দ ছিল। প্রথমত মেয়েটার মা ছিল সুন্দরী বউমা আর তার মেয়ে হলো আগুন সুন্দরী। এমন মেয়ের লালসার মত শরীর দেখতে ফাতেমা কে বিয়ে করেছিল। ছিঃ যার শরীর চাহিদা পূরণের ক্ষমতাই ছিল না। সেসব পুরোনো কথা রেখে দাহাব এহসান নাতনী অর্থাৎ নাজীবার শরীর থেকে শাড়ির আঁচলটা ফেলে দিলেন। এমুহুর্তে নাজীবার শরীরে একের পর এক মা’ই’রের চিহ্ন দেখে সেখানে হাত বুলাতে লাগলেন তিনি। একসময়ের শ্রদ্ধীয় দাদু রুপে জানা পুরুষটির প্রতি হাজারো ঘৃণা নাজীবার বুকে। তার হাতও শরীরে সহ্য হচ্ছে না। আফরাজের খেয়াল রাখার ফলে নাজীবার মস্তিষ্কে ড্রাগের রেশধারা কমে গিয়ে ছিল সুষ্ঠুভাবে। আজ এই মুহূর্তে যেনো সেই ড্রাগের ক্রিয়া কার্যে দিল। দাহাব এহসান যখন তার বুকে হাত রাখার স্পর্ধা করল তখনি নাজীবা হিংস্র হয়ে উঠে। তার হাত দাঁত দিয়ে চেপে ধরে জোরে কামড়ে দেয়। তিনি চিৎকার করে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলেন। নাজীবা কষ্টে অসার শরীরেও হিংস্রতা দেখালো। কামড়ে হাতের চামড়া ছিঁলে দিল। দাহাব এহসান এর হাতজোড়া র’ক্তা’ক্ত করে দেয়। নাজীবার হিংস্র চাহনির মাঝে পৈশাচিক হাসি দেখায়। তার দাঁতে র’ক্ত লেগে আছে। দাহাব এহসান এর দিকে থুতু ছুঁড়ে মে’রে বলে,
“তুই জানিস না নাজীবা কি জিনিস? আমি মোবারক আলী আর মেহজাবিন সিরাত এর মেয়ে নাজীবা মুসাররাত। আগের নাজীবা ভেবেছিস তুই? যে তোর পদতলে পড়ে পা চা’টবো? চ**** তোকে তো কু’ত্তার মরণ আমি দেব দেখে নিস। আরেকবার আমার কাছে আসার চেষ্টা করে দেখিস তোর কলিজা ছিঁড়ে খাবো হা**রা**মজাদা*।”
দাহাব এহসান ক্ষোভ অপমানে রুম থেকে বেরিয়ে যান। তার অচল শরীরে নাজীবার মত তরুণীর প্রতিঘাত সহ্য হলো না। হাতের জ্বালাপোড়ায় তৎক্ষণাৎ তিনজন লোক নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা দেন। নাজীবার পাহারা দেওয়ার জন্য বাকি লোকদের রেখে যান। গাড়িতে বসে দাহাব এহসান ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছেন না। তার দেওয়া ইন’জেক’শন কেনো কার্যে এলো না? তিনি তো ঠিকভাবে ইন’জেক’শন প্রিপার করে চুবিয়ে ছিল তবে কি হতে পারে কারণ? হঠাৎ তার মনে হলো কেউ হয়ত তার পিঠপিছে কলকাঠি নেড়েছে। তাৎক্ষণিক সময়ে ফোনের মধ্যে ফুটেজ চালু করে। পরিত্যক্ত বাড়ির ভেতর সিসিক্যামেরা লাগিয়ে ছিলেন তিনি। সেই সুবাদে ফুটেজে দেখল যে লোক ইন’জেক’শন প্রিপার করার জন্য এসে ছিল সেই ইচ্ছেকৃত ওষুধের বোতল পরিবর্তন করে ভিটামিনের বোতল ব্যবহার করে ছিল। তার হাতে কোনো নেশাধায়ক ইন’জেক’শন নয় বরং স্বাস্থ্যবেদী ইন’জেক’শন দেওয়া হয়েছে। গাড়ির মধ্যে কপাল চাপড়াতে লাগলেন তিনি। পরক্ষণে তার খেয়ালে এলো লোকটি এই কাজ কেনো করল? তিনি তৎক্ষণাৎ তার ভাড়াটে লোক কে আদেশ দেয় সেই লোক কে ধরে আনার। সেই লোক-কে আনার জন্য তাদের মধ্যে দুজন বেরিয়ে পড়ে। নাজীবা আশপাশের যোগাযোগের কোনো মাধ্যম আছে কিনা খোঁজ করছে। কিন্তু রুমের ভেতর তেমন কোনো মাধ্যম নেই। একটা জানালা ছিল তাও লোহা দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। না পারতে রুমের মধ্যে থাকা বিছানায় শুয়ে পড়ে। মনেমন আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে লাগল।
চলবে……
(কালকে ধামাকা পর্ব দেবো ইন শা আল্লাহ)