#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৩৪
১০৯.
স্বাধীন ভাই একটা ভালো প্রস্তাব আনছি।
স্বাধীন মাটিতে মরিচের চারা বুনছিল।মাথা উঁচু করে দেখে নিলো সবুর মিয়া আসছে।
কিসের প্রস্তাব?
কিসের আবার।বিয়ের প্রস্তাব।
বি.য়ে.র প্রস্তাব!
হ্যাঁ।
কিন্তু আমার তোও বউ আছে।সাথে বাচ্চা ফ্রি।আমি চার ছেলেমেয়ের বাপ।আমাকে মেয়ে দিবে কে?
আরে আপনার কথা কে বলে?আমি তোও আপনার মেয়ে পুতুলের জন্য প্রস্তাব আনছি।
তাহলে ওখানেই থেমে যাও।মেয়ে আমার এখনো ছোট।আঠারো হয়নি।
আরে কি যে কও না মিয়া।গ্রামের মেয়ের আবার আঠারো হওয়া লাগেনি।চৌদ্দ হলেই তোও মেয়ের বিয়ের জন্য উপযুক্ত।শুনোও স্বাধীন ভাই।ছেলের বড় বিজনেস আছে।জাপানে থেকে বিজনেস করে।আমাদের পাশের গ্রামের পোলা।বয়স বেশি না মাত্র পয়ত্রিশ বছর।আগে একটা বিয়া হইছিল।কিন্তু ডির্ভোস হইয়া গেছে।তার ঘরে পাঁচ বছরের ছেলে সন্তান এবং নয় বছরের কন্যা সন্তান আছে।ছেলে যেমন সুন্দর তেমনই ভদ্র।কিন্তু মা একটু অহংকারী।ওই টাকার গরমে আরকি পা মাটিতে পড়ে না।
সবুর মিয়া।মেয়ে আমি বিয়ে দিবো না।একবার যেহেতু বলেছি না।না মানে না।হ্যাঁ কিছুতেই হবে না।আর তুমি কোন সাহসে আমার মেয়ের জন্য ডির্ভোসি ছেলে।আবার দুই বাচ্চার বাপের জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসছো।
স্বাধীন মুখের ওপর না করতেই সবুর মিয়ার মুখ থেকে হাসি গায়েব।তার মুখ কালো হয়ে গেছে।মুখ কালা করেই বলল,
তোও তোমার মেয়ের জন্য এর থেকে ভালো প্রস্তাব পাইবা নিই।
শুনো,স্বাধীন ভাই,বোবা মেয়ে নিয়ে এত ভাব নেওয়া ভালা না।এর আগে বিয়ে হইতে গিয়া বিয়া হইলো না।বিয়ের আসরে বর ছেড়ে চলে গেছে।মেয়ে হইছে বোবা।তার ওপর তোমার তেজ কমে না।দেখবো নিই কে করে তোমার বোবা মাইয়া বিয়া?হু যতও সব।সবুর মিয়া জিদের চটে স্বাধীনের কিছু মরিচ গাছ মারিয়ে চলে যায়।স্বাধীন ছোট নিশ্বাস ফেলে নিজের কাজে আবার মনযোগ দিলো।
রমিজ মেম্বার হুক্কা টানতে টানতে বলল কি রে সবুর কি বলল?
কি আর বলব?বোবা মাইয়ারে না-কি এখন বিয়া দিব না।হুনছি পড়ালিখা করাইবো।
পড়াশোনা করতে মন চাইলে করবে।কিন্তু বিয়া দিতো না কেন?মেয়ের বয়স তোও কম হয়নি।এত ভালা প্রস্তাব দিলাম রাজি হয় নাই।কেন?আমার ভাতিজা খারাপ না-কি?মাসে মাসে তার লাখ লাখ টাকা ইনকাম হয়।
স্বাধীন মাগরিবের নামাজ পড়ে বারান্দায় বসে আছে।কিছু নিয়ে চিন্তায় আছে তা তার মুখের আতল ব’লে দিচ্ছে।রেণু নামাজ শেষ করে বাহিরে আসতেই স্বামীকে বারান্দায় বসে থাকতে দেখে এগিয়ে আসে।কাঁধে হাত রেখে ডাক দেয়।
কি গোও মন খারাপ?
হু..ম।না।এমনই বসে আছি।
কিছু হয়েছে আমায় বলো।
আজ দুপুর বেলা ক্ষেতে যখন কাজ করছিলাম।তখন সবুর মিয়া বিয়ার প্রস্তাব নিয়ে আসে।মেয়ের বিয়ের কথা উঠাবে বুঝতে পেরে কথা ঘুরানো চেষ্টা করেছি।কিন্তু লাভ হয়নি।সবুর মিয়া পুতুলের জন্য রমিজ মেম্বারের ভাতিজার হয়ে বিয়ের প্রস্তাব আনে।
খবর নিয়েছিলাম।ছেলেটা ভালো না।ছেলের মা বউয়ের ওপর অত্যাচার করতো।দিন রাত বাপের বাড়ি নিয়ে গালাগাল আর হাত দিয়ে আ*ঘাত করত।আগের বউকে আ*গুনে পুড়িয়ে মারছে।মাঝখান থেকে বাচ্চা দুটো এতিম হয়েছে।আমি হয়তো পুতুলের বাবা নই।কিন্তু মামা হইয়া নরম,কোমল মাইয়ারে কেমনে দিমু এমন নরপশুর হাতে।মেয়ের বয়স বেশি হয়ে যাচ্ছে।বুড়ি মেয়ে কেউ ঘরে তুলবে না।তার ওপর বিয়ে আসরে বর তাকে ছেড়ে দিয়েছে।নানা জায়গায় থেকে কথা শুনতে পাই।সবই কানে আসে বউ।
তাইলে এখন আপনি কি করবেন?বাড়ি বয়ে এসে পাড়াপ্রতিবেশি আমাদের নিয়ে হাসি,মজা করে।সব দেখেও মানতে পারিনা।পুতুলের জন্য চুপচাপ থাকি।তার ওপর এই কথা শুনে আমার হাত,পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।পুতুলের কি হবে?আমাদের মেয়ের ভাগ্যে কি আল্লাহ সুখ দেয় নাই?আল্লাহ কি এতটাই নিষ্ঠুর হবেন?
স্বাধীন রেগে পিলারে সাথে হাতকে আ*ঘাত করে বলল,
আমি কি করে আমার মেয়েরে ওমন জালিমের ঘরে দিমু।যে কর জান্নাত নয়।জাহান্নাম।প্রয়োজন পড়লে আমি আমার মেয়েকে কে*টে টু*করো টু*করো করে নদী ভাসাইয়া দিমু।তবুও ওমন জালিম পরিবারে আমার মেয়েকে বিয়ে দিব না।একবার শিক্ষা পাইছি।দ্বিতীয়বার আর ভুল করতে চাই না।
স্বামীর কথায় রেনু স্বামীর কাঁদে মাথা রেখে ফুফিয়ে কেঁদে ওঠে।
১১০.
সকাল বেলা পুতুল রেডি হয়েছে।কলেজে যাওয়ার জন্য চার ঘন্টা আগে রওনা দিতে হয়।তাই সকালের খাবার খেয়ে বেরিয়ে পরে।আঁকা পাকাঁ মেঠোপথে হেঁটে যেতেই চোখে পরে মাথার ওপর থাকা বিভিন্ন গাছের দিকে।রাস্তার কিনারে সারিসারি আম গাছ,সুপারি,তালগাছ,জামগাছ,গাব গাছ লাগানো।পুতুল নিজের এলাকার রাস্তা ছেড়ে সামনে এগিয়ে যেতেই মেম্বারের ছেলে,এবং তার কিছু বন্ধুরা তাকে দেখে শিস বাজায়।আবার গলা ছেড়ে গান ধরে।
ও..…টুনির মা তোমার টুনি কথা শুনেনা।
যার তার লগে ডেটিং মারে আমায় চিনেনা।
ও… টুনির মা তোমার টুনিরে বুঝাও না।
দিনে রাইতে মিস কল মারি ব্যাক করে না।
টুনি কলেজে যাইব,টুনি বারান্দায় আইব
টুনিরে দেইখা আমার পরান জুরাইব।
পুতুল রাগী চোখে একবার দেখে সোজা হাটতে নিলে পথ আগলিয়ে ধরে।পুতুল হাত দিয়ে ইশারা করে তার পথ ছেড়ে দিতে।কিন্তু তারা পথ না ছেড়ে বিভিন্ন বাজে অঙ্গভঙ্গি করে।যেটা দেখা পুতুলের রাগে শরীর কাঁপতে থাকে।পায়ের জুতা খুলে হাতে তুলে যেটাকে সামনে পেয়েছে ওটাকেই ধরে ঠাসস ঠাসস করে গালে মুখে বারি মেরে বসে।মেম্বার ছেলে আতাউর বন্ধুকে মারতে দেখে এগিয়ে এসে মুখ দিয়ে বিচ্ছিরি গালি ছুড়ে।যা পুতুলের কানে যেতে দেড়ি,কিন্তুু ঘুরে লাথি মারতে দেড়ি করেনি।তার এক লাথিতে মেম্বার ছেলে পেট ধরে বসে পড়তেই তার পিঠের মধ্যে ঠাসস,ঠাসস করে জুতার বারি মেরে বসে।রাগে ব্যাগ থেকে মরিচের গুড়ো বের করে সব কয়টার চোখে মুখে লাগিয়ে পাশের পুকুরের ধাক্কা মেরে ফেলে দিল।বোনের রাগের বারুদ দেখে মিলন,সাজু দূর থেকে হেসে ওঠে।কানে বাটন ফোনটা চেপেঁ ধরে কাউকে ব’লে।
ভাইয়া,আপু আজকে ক্ষেপছে।মেম্বারে কুত্তা পোলা এবং তার বন্ধুরা সব পানিতে।আপু পায়ের দুইশ টাকার জুতার সেন্ডেলের বারি খেয়ে এক একটার হুস জ্ঞান হইলো ব’লে। মামার কিনে দেওয়া জুতার পুরো দুইশা টাকা উসুল হইয়া গেছে।
ফোনের ওপর পাশে ঢাকায় বসে অর্পণ শব্দ করে হেসে উঠে।তার হাসিতে অফিসের ছেলেপেলে এমনকি তার দুই ভাই তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।ঘটনা কি বুঝতে পারছে না?
ঠিকই আছে।যেমন কুকুর তেমন মুগুর।কিছু শয়তানকে টাইট দিতে এমন শেরনীর খুব প্রয়োজন।সিংহ কেনো সব সময় তার শেরনীকে রক্ষা করবে?বর সিংহ ছাড়া যে সিংহিনী লড়তে পারে এটা তারই উদাহরণ।গ্রামে কখন কোথায় যায়,বোনের দিকে সব সময় নজর রাখো।গ্রামে থাকলে দায়িত্ব তোমাদের।আর ঢাকায় পা দিলে সে আমার দায়িত্ব থাকবে।মিলনের থেকে সাজু ফোন টান দিয়ে কানে নিয়ে বলল,
বুঝতে পারছি দুলাভাই।গ্রামে আপনার শালারা আছে চিন্তা নাই।ঢাকায় আপনারা মতো দুলাভাই থাকলে চলবে।আমার আপুকে আপনি সামলাতে পারবেন।অর্পণ হেসে ফোন রেখে দিতে নিলে সাজুর থেকে ফোন নিয়ে মিলন কানে ফোন তুলে বলল,
হ্যালো দুলামিঞা,
হুম,বলুন শালা সাহেব।
বিয়ের সানাই বাজবে কবে?
খুব শ্রীর্ঘই।
সত্যি।
হুম তিন সত্যি।তার স্বপ্ন পূরণ হলেই আমার ঘরে ঘরণী করে নিয়ে আসব।
আপু যদি রাজি না হয়।জোর করে তুলে নিয়ে যাবেন।যেমনটা সিনেমায় হয়।
হুমম না।তুলে আনার দিন শেষ।তার মনটা জয় করে আনতে চাই।
তার মেয়ের সাথে মামা রাজি না হলেও মিছিল করব।হরতাল ডাকব।মামলা দিব।তবুও হবু মামা শ্বশুরের মন জয় করে নিয়ে আসব।
বউয়ের পাশাপাশি হবু মামা শ্বশুরের মন জয় করে নিব।এমন ভালোবাসা দেখে হবু মামা শ্বশুর মোমের মতো গলতে বাধ্য হবেন।মামা শ্বশুর মশাই তার মেয়েকে নিজেই আমার হাতে তুলে দিয়ে বলবেন।
জিতছি জামাই।জিতছি।
মিলন,সাজু ফোনটা মুখের সামনে ধরে বলল,
জিতছি দুলামিঞা।জিতছি।
মিলনের নাচনের ঠেলায় কখন লুঙ্গি খুলে গেছে।খেয়াল করেনি।যখন খেয়াল করে তখন হাঁটুর সামনে লুঙ্গি পরে।ভাঙ্গিস ছোট প্যান্ট পরে থাকায় এবারের মতো ইজ্জত বেঁচে গেলো।
সাজু শব্দ করে হেঁসে মুখে হাত দিয়ে বলল,
মিলনের লুঙ্গি হাঁটু তলে।
মিলন,সাজুকে ধমক দিয়ে বলল,
চুপথাক।
মিলন লুঙ্গি তুলতে তুলতে গান ধরে।
আমি চিৎকার করিয়া হাসিতে চাইয়া করিতে পারিনি চিৎকার।
লুঙ্গি খুলিয়া পরিয়া যাওয়ায় নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার।
মিলনের গান শুনে ফোনের লাইনে থাকা অর্পণ আবারও শব্দ করে হেসে চেয়ারে পিঠ লাগিয়ে বলল,
আচ্ছা।ধন্যবাদ শালা সাহেব।এখন রাখছি পরে কথা হবে।ফোন কেটে হাসতেই বিজি।
অর্পণকে এর আগে কেউ এতটা প্রানবন্ত দেখেনি।আজ ছেলেটা মন খুলে হাসছে।সময়গুলো এভাবেই যাক না কেঁ*টে।
চলবে…