#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী
দ্বাবিংশ পর্ব
রবিবার সকাল ১০ টা,
ইমতিয়াজ একটা জরুরি কাজে অফিসের বাইরে গিয়েছিল। ফিরে এসে এমডির কেবিনে ফাইলগুলো জমা দিয়ে নিজের কেবিনে আসে।
কেবিনে এসে তানজিমকে দেখে অবাক হয়। তানজিম স্বাভাবিকভাবে হেসে বলে,
“ভালো আছেন ভাইয়া?”
ইমতিয়াজ মাথা নেড়ে বলল,
“হ্যাঁ, হঠাৎ অফিসে?”
ইমতিয়াজ নিজের চেয়ারে গিয়ে বসলো। তানজিম বলে,
“আপনি আবারো বিয়ে করবেন ভাইয়া?”
ইমতিয়াজ চমকে উঠে তানজিমের দিকে তাকায়। ভূমিকা ছাড়া হঠাৎ এমন কথায় সে হতভ°ম্ব। গতরাতে ফোনে লুৎফর রহমান ইমতিয়াজকে বিয়ের কথা বললেও ইমতিয়াজ হ্যাঁ বা না কোনো উত্তর দেয়নি। লুৎফর রহমানও জোর করেননি।
তানজিমের কথায় ইমতিয়াজ হেসে বলে,
“কনে, কাজী সব নিয়ে আসছো নাকি?”
দুষ্টুমির ছলে কথাটা বললেও তানজিমের মুখে হাসি এলো না। ইমতিয়াজ সিরিয়াস হয়ে বলল,
“কি সমস্যা তানজিম?”
হঠাৎ তানজিমের কন্ঠ পরিবর্তিত হয়। একটু ক°ড়া ভাষায় বলে, যেন ইমতিয়াজকে হুমকি দিচ্ছে সে।
“মিউকো আপু তোমাকে বিয়ে করতে চায়। বাবা অথবা মামা যদি বিয়ের প্রস্তাব আনে তবে সোজা না করে দিবে।”
ইমতিয়াজ হাত নেড়ে বলল,
“শান্তভাবে কথা বলো, এটা অফিস।”
“সো হোয়াট, মিউকো আপুকে তুমি বিয়ে করতে পারবা না।”
তানজিমের ফোন বেজে উঠে। দুইবার বাজলে ইমতিয়াজ বি°র°ক্ত হয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বলে,
“ফোন বের করো।”
তানজিম ফোন বের করে৷ ইমতিয়াজ কল কে°টে ফোনটা সাইলেন্ট করে তানজিমের সামনে ফেলে বলে,
“এখন বলো সমস্যা কি?”
“বাবা তোমার সাথে কথা বলেছে?”
“হ্যাঁ বলেছে।”
ইমতিয়াজ মাথা নাড়ে।
তানজিম উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“কি বলেছো তুমি? বিয়ে করবে?”
“সিদ্ধান্ত কি তুমি নিবে নাকি আমি?”
তানজিম টেবিলের উপর হাত দিয়ে দুইটা চাপড় দিয়ে বলে,
“ভালো হচ্ছে না, ভাইয়া।”
ইমতিয়াজের রাগ হলেও শান্ত গলায় বলল,
“অফিসে সিনক্রিয়েট করো না। আমার ডিউটি আছে, এখন তুমি যাও।”
তানজিম চেয়ারে একটা লা°থি দিয়ে বলল,
“যা খুশি তাই করো।”
ইমতিয়াজ তাকিয়ে থাকলো তানজিমের দিকে৷ এমন উ°গ্র স্বভাব কবে থেকে আসলো তার মধ্যে। ইমতিয়াজ কম্পিউটার অন করলেও মন বসাতে পারলো না। এই পুরো পরিবার হয়তো পাগল। নাহলে একটা উচ্চশিক্ষিত মেয়েকে কারো দ্বিতীয় স্ত্রী করার প্রস্তাব কিভাবে দেয়।
______________________________________
বাসায় ফেরার পর থেকেই গু°ম°রে আছে সারাহ্। কাল থেকে নিচুস্বরে একটা দুইটা প্রশ্নের জবাব ছাড়া আর কোনো কথাই বলেনি সে। আব্বাস সাহেব ভেবেছেন হয়তো উনার সামনে কথা বলতে অস্বস্তি হচ্ছে ওর, কিন্তু আহনাফ জানে সে ঘরেও কথা বলছে না। আহনাফ যে কথা বলেনি বিষয়টা তা নয়, সারাহ্ জবাব দেয়নি।
কলেজে যাওয়ার পথে আহনাফের সাথে কথা হয়নি সারাহ্-র। এই এলোমেলো ভয় আহনাফকে কিভাবে জানাবে সে। কথা গুছিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে বেচারী।
প্রথম ক্লাস শেষে বেরিয়ে আহনাফ সারাহ্-কে দেখে টিচার্স রুমের দিকে যেতে। সে এতোটাই অন্যমনস্ক যে নিজের হাতের তিন তিনটা মার্কার যে মাটিতে লু°টোপুটি খাচ্ছে তা দেখেই নি।
আহনাফ মার্কারগুলো কুড়িয়ে সারাহ্-কে ডাকে,
“ঐশী।”
সারাহ্ ভূ°ত দেখার মতো চমকে পিছনে ফিরে,
“জি।”
“এগুলো নাও।”
মার্কার এগিয়ে দেয়।
সারাহ্ এগুলো হাতে নিলে আহনাফ বলল,
“কি হয়েছে তোমার? কিছু নিয়ে চিন্তা করছো?”
সারাহ্ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আহনাফ বলে,
“বই রেখে আসো। আমি গেইটের কাছে অপেক্ষা করছি।”
আহনাফের কথামতো বই রেখে গেইটের কাছে যায় সারাহ্। বড় গেইটটার কাছে একটা বড় পুকুর। তার পাশে সারি সারি গাছ লাগানো। আহনাফ একটা গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
সারাহ্ গিয়ে চুপচাপ মুখোমুখি দাঁড়ায়।
“কি যেন বলতে চেয়েও থেমে যাচ্ছো? সমস্যা কোনো?”
সারাহ্ একহাত দিয়ে অন্যহাতে ঘ°সতে থাকে। আহনাফ ওর হাত ধরে বলে,
“বলো, এতো ফরমালিটির দরকার নেই।”
“আসলে কাল এয়ারপোর্টে দুজন লোক কথা বলছিলো সামিহাকে নিয়ে।”
আহনাফ কপাল কুঁচকায়। সারাহ্ আবারো বলে,
“হয় মানবে আর না হয় ম°রবে, এমন একটা কথা বলেছিল।”
“আর কি বলেছে?”
সারাহ্ পুরো ঘটনা আহনাফকে খুলে বলে। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত একদম পাই টু পাই।
আহনাফ একটু উত্তেজিত হয়েই বলে,
“ইয়া আল্লাহ্, তুমি আগে আমাকে বলোনি কেন? কাল তো বলতে পারতে? গাড়ির নাম্বার দেখেছো?”
সারাহ্ ফোন বের করে একটা ছবি দেখায়। গাড়ির জানলা থেকে ছবিটা তুলেছিল সে। আহনাফ ছবিটা দেখে বলে,
“আমি কালকে ঢাকা যাবো। তুমি বাসায় এ ব্যাপারে কিছু বলো না আর বাবাকেও কিছু জানিও না।”
“ঠিক আছে।”
আহনাফ চলে যেতে নিলে সারাহ্ বলে,
“যদি ওদের নজর আপনার উপর হয়?”
আহনাফ ফিরে দাঁড়িয়ে বলল,
“সাধারণ একজন সরকারি টিচারকে হুদাই কেউ সন্দেহ করবে না। চিন্তা করো না। চলো।”
সারাহ্ও আহনাফের পিছুপিছু চলে গেল।
______________________________________
সন্ধ্যা ৬ টা, শাফিন সাহেব ড্রইংরুমে বসে ইমতিয়াজকে কল করে।
নাম্বার দেখে কিছুক্ষণ চুপ থাকে ইমতিয়াজ। রিসিভ করা না করা নিয়ে সে সিদ্ধানহীনতায় আছে। অবশেষে রিসিভ করে নেয়।
“আসসালামু আলাইকুম, মামা।”
“ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কেমন আছো?”
“আলহামদুলিল্লাহ, আপনি কেমন আছেন এখন?”
“এইতো ভালোই। (একটু থেমে) একটা জরুরি বিষয়ে কথা বলতে চাইছিলাম।”
“জি, মামা বলেন।”
শাফিন সাহেব বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
“ইমতিয়াজ, লুৎফর হয়তো তোমার সাথে কথা বলেছে। তোমারও একটা সংসার হওয়া উচিত, সন্তান থাকা প্রয়োজন। (একটু থেমে) তাই আমরা তোমার বিয়ের কথা ভাবছিলাম।”
ইমতিয়াজ একটু গলা ঝেড়ে বলল,
“মামা, আমার একটু চিন্তাভাবনা করার প্রয়োজন। এটা এমন কোনো সিদ্ধান্ত না, যা আমি হুট করে নিতে পারবো৷ কিছু মনে করবেন না।”
“আরে না না, কিছু মনে করার নেই। তুমি ভেবেচিন্তে জানিও।”
এদিকে সুরভি মৃত্তিকার হাতে কয়েকটা বড় বড় কার্টুন বক্স দিয়ে বলে,
“মিউকো এগুলো একটু স্টোররুমে রেখে আসবা। আমি তো যেতে পারবো না।”
“হ্যাঁ, হ্যাঁ, আপু। আমি রেখে আসছি।”
মৃত্তিকা বক্সগুলো তাকে তাকে সাজিয়ে নিয়ে সুরভিকে বলল,
“স্টোর রুমের চাবি কোথায়?”
“বাবার কাছে।”
শাফিন সাহেব ড্রইংরুমে, সুরভি উনার রুমে গিয়ে চাবি এনে মৃত্তিকাকে দিয়ে দেয়। বক্সগুলো নিয়ে মৃত্তিকা চলে যায়৷
নিচতলায় স্টোররুম, সেখানের দরজা খুলতেই ধুলার কারণে নি°শ্বাস বন্ধ হওয়ার জোগাড়। রুমের লাইট জ্বা°লি°য়ে মৃত্তিকা বক্সগুলো রেখে নিজে নিজেই বলে,
“এরুম কি কেউ কোনোদিন পরিষ্কার করে না?”
খুব বেশি বড় না হলেও রুমের মধ্যে প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় অনেক জিনিসপত্র ঠাসা। মৃত্তিকার চোখ পড়ে একটা বক্সের দিকে। দেখতে খুব সুন্দর কারুকাজের বক্সটার কাছে গিয়েই ভ°য় পায় সে, এ যে ক°ফি°ন। একদম নতুন একটা ক°ফি°ন এটা, যেন মাত্র কিছুক্ষণ আগেই আনা হয়েছে। রুমে আবার কয়েকটা পায়ের ছাপ।
মৃত্তিকা দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে আসে। দরজা লাগিয়ে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক করে। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়। কথায় বলে বনের বাঘে খায় না, মনের বাঘে খায়। বেচারির হয়েছে সেই অবস্থা।
______________________________________
রাত প্রায় দুইটা, নির্ঘুম রাত কাটছে সারাহ্-র। আহনাফ অঘোরে ঘুমাচ্ছে। সারাহ্ ওর দিকে ফিরে শুয়ে থাকে। ওর গালে হাত দেয়। সারাহ্ জানে না ওই লোকগুলো কে হতে পারে, তবে সামিহাকে নিয়ে তার প্রচুর চিন্তা হচ্ছে।
আহনাফ ওর হাতের উপর হাত দিয়ে বলে,
“ঐশী, ঘুমাওনি?”
আহনাফ চোখ খুলে, সারাহ্ ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। আহনাফ ওর কাছাকাছি চলে আসে।
“ঘুমাওনি?”
“ঘুম আসছে না।”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে সারাহ্ বলল,
“আহনাফ।”
“উম, নাম ধরে ডাকে না।”
সারাহ্ বি°র°ক্ত হয়। বলে,
“আচ্ছা, ডাকলাম না। তবে আমার বারবার মনে হচ্ছে আমাদের দুইবোনকেই কেউ টার্গেটে রেখেছে।”
আহনাফ কপাল কুঁচকে বলল,
“কোনো বিশেষ কারণ?”
“মনে হচ্ছে, নাহলে শুধু শুধু সামিহাকে কেউ কেন মারতে যাবে? ও তো ইনোসেন্ট, কারো ক্ষতি বা লাভের চিন্তায় ও নেই।”
আহনাফ সারাহ্-র নাকে, গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে,
“চিন্তা করো না, সত্যটা জানা যাবে।”
সারাহ্ আহনাফকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখে। হয়তো এবারে ঘুম হবে।
ফজরের নামাজের পরই আহনাফ বেরিয়ে যায়। আব্বাস সাহেবকে জানিয়েছে একটা জরুরি কাজে ঢাকায় যেতে হবে এবং কাজটা কলেজ সংক্রান্ত।
আহনাফকে এগিয়ে দিতে নিচে বাসার সামনে যায় সারাহ্।
“ঐশী, এতো চিন্তা করো না।”
আহনাফের কথায় সারাহ্ নিচুস্বরে বলে,
“নিজের খেয়াল রাখবেন। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না কি এমন হয়েছে সামিহার সাথে।”
আহনাফ সারাহ্-র কপালে চুম্বন করে। ওর গালে হাত দিয়ে বলে,
“আসছি।”
______________________________________
সকাল সাতটায় মৃত্তিকা এসেছে এয়ারপোর্টে। কারণ ওর ফ্রেন্ড ইসরাত ও ফিওনা ইতালি থেকে দেশে আসবে। বড় শালটা মৃত্তিকার গায়ে জড়ানো, চুল খোলা, একটু এলোমেলো অবস্থায় আছে সে।
গতসন্ধ্যার সেই ক°ফি°ন দেখার ঘটনা কারো সাথে শেয়ার করেনি মৃত্তিকা। তবে ওই ঘটনার একটু গভীরে সে যাবে, সবার অগোচরে লুকিয়ে যাবে।
সাড়ে আটটায় ইসরাত ও ফিওনা এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়। কুশল বিনিময় করে ওরা গাড়িতে উঠে বসে। ওদের জার্নি হোটেল অরনেট পর্যন্ত হয়। রাস্তায় এটা সেটা বেশ অনেকক্ষণ কথা বলে ওরা।
হোটেলের রুম আগে থেকেই বুক করা ছিল। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসেই কথা বলা শুরু করে ওরা। ওদের আলোচনার মূল বিষয় মৃত্তিকার বিয়ে।
“পুরো ভার্সিটি লাইফ একা থেকে এখন একজন লোকের সেকেন্ড ওয়াইফ হচ্ছিস? এতো আবেগ কবে থেকে আসলো তোর?”
ইসরাতের প্রশ্নটা স্বাভাবিক। মৃত্তিকা হেসে বলল,
“তোর মনে হয় আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না? এসব আবেগ অনুভূতিকে আমি কবেই মে°রে ফেলতাম, কিন্তু রাখতে হবে বলেই রাখলাম।”
ফিওনা বাংলা বলতে পারে না, তবে ওদের সাথে থেকে থেকে বাংলা ভালোই বুঝে। সে যা বলল তার বাংলা করলে বিষয়টা এমন দাঁড়ায়,
“কেন রাখতে হলো? কি এমন বিশেষত্ব আছে তার? কি যেন ছিল নামটা, ইমতিয়াজ।”
মৃত্তিকা হাত তুলে না দেখিয়ে বলল,
“আরে না, তেমন কিছু না। তবে দেশে থাকাটা এখন আমার জন্য জরুরি, তাই বিয়ে করা। আর তাছাড়া (একটু থেমে) ইমতিয়াজ মানুষ ভালো, মানসিক শান্তি পাই উনার কাছে।”
মৃত্তিকা শালটা খুলে চেয়ারে রেখে বলে,
“এসব বাদ দে। বাড়িটা বিক্রি হয়েছে?”
ইতালিতে থাকা মৃত্তিকার বাড়িটা সে বিক্রি করে দিয়েছে। কারণটা হলো একটা বিজনেস শুরু করা।
ইসরাত বিছানায় শুয়ে বলে,
“ব্যাংকে বাড়ি বিক্রির সব টাকা জমা হয়েছে। শেয়ার কেনার এটাই ভালো সুযোগ।”
মৃত্তিকা বুকে হাত বেঁধে বলল,
“শেয়ার নয়, পুরো কোম্পানি আমি কিনতে চাই।”
ফিওনা ফোন থেকে কিছু একটা দেখে বলে,
“কোম্পানির প্রোফিট ভালো, তবে ওরা কেন বিক্রি করবে?”
“বাধ্য করবো।”
মৃত্তিকার কথায় ইসরাত অবাক হয়, ফিওনার অবাকের পাল্লাও ভারি। মেয়েটা এমন ব্যবহার আগে কখনো করেনি। ব্যবসা কিংবা কোম্পানির শেয়ারের জন্য কখনোই আগ্রহ ছিল না, তবে হঠাৎ কেন এমন ইচ্ছা জাগলো?
মৃত্তিকাকে প্রশ্ন করার আগেই সে উত্তর দিলো,
“কোম্পানির ওনার হলো কলরবের ফাদার, চিনেছিস কলরবকে? আমার মামকে নিয়ে খারাপ কথা বলেছিল। আবার পরে মামাকে বলেছিল, এমন ভ°ব°ঘুরে মেয়েকে বিয়ে করা যাবে না। তাই নিজের একটা পরিচয় করবো।”
ইসরাত ঠোঁট উল্টায়। বলে,
“পরিচয় করার উপায়টা দারুণ।”
মৃত্তিকা এসে বিছানায় বসে বলল,
“মামা যখন চাকরি করতো তখন কলরবের বাবাও চাকরি করেছে সেখানে। তারপর মামা চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় এলো আর উনি উনার বিশাল কোম্পানিতে বিনিয়োগ শুরু করেছে। কি মনে হয়? সবটা হালাল টাকা?”
“মোটেও না।”
ফিওনা ওদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে৷ কিন্তু বেচারী অর্ধেক কথা বুঝতে পারছে না। সে শুধু এইটুকু বুঝেছে মৃত্তিকা কোম্পানির শেয়ার কিনবে আর সেটা কলরবের বাবার কোম্পানি।
“আমি ইতালি যেতে চেয়েছিলাম, বাট মন বদলে ফেলেছি। এভাবে সব ছেড়েছুড়ে পালাবো না।”
ইসরাত মাথা নেড়ে বলল,
“তা ঠিক, তবে বিয়ের সিদ্ধান্তটা অবাক করছে। কেন তুই এমন বয়স্ক একজনকে বিয়ে করছিস তাই বুঝলাম না।”
মৃত্তিকা উঠে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আনমনে বলল,
“এতো লম্বা কাহিনী একদিনে কিভাবে বলি?”
মৃত্তিকা বুঝতে পারছে না ও ইমতিয়াজকে ভালোবেসেছে কিনা। তবে সুখের জন্য, একটু শান্তির জন্য, ফুরসতের জন্য ওর ইমতিয়াজকেই লাগবে। এ কি ভালোবাসা নাকি স্বা°র্থ°পরতা? যা খুশি হোক, মৃত্তিকার তাতে আশে যায় না।
সমস্তটা দিন মৃত্তিকা হোটেলে কা°টায়। সবকিছু নিয়ে কথাবার্তা বলে সিদ্ধান্ত হয় যা ডলার আছে তাতে পুরো কোম্পানি কেনা না গেলেও একটা শেয়ার কেনা যাবে৷ ইমতিয়াজের কথাই সই, কলরবকে প্রত্যেকটা কথার হিসাব দিবে সে৷ শুধু পদ্ধতিটা ভিন্ন।
চলবে……