অনুভূতিরা_শব্দহীন লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী ত্রয়োবিংশ পর্ব

0
428

(সর্তকতা- আজকের পর্বটি নিজ দায়িত্বে পড়বেন। অস্বাভাবিক কিছু দৃশ্যের বর্ণনা রয়েছে।)

#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী

ত্রয়োবিংশ পর্ব

রাত আটটায় বাসায় ফিরে ইমতিয়াজ। ঠিক ফ্ল্যাটের দরজার সামনে একটা লাল গোলাপের তোড়া দেখে সে। ফুলের তোড়াটা হাতে নিয়ে তালা খুলে বাসায় ঢুকে।

বিড়ালটাকে কোলে নিয়ে আদর করে। ফ্রেশ হয়ে এসে ফুলগুলো হাতে নেয়। তোড়ার ভিতরের দিকে একটা কাগজ। ইমতিয়াজ কাগজটা বের করে।

“মৃত্তিকাকে বিয়ে করো বা না করো, ওই বাসা থেকে বের করে আনো। হয়তো আজ রাতটাই হয়তো ওর জীবনের শেষ রাত।”

ইমতিয়াজ চোখমুখ কুঁচকে চিরকুটটা পড়লো। এ কেমন কথা? ওই বাসায় কি সমস্যা বা কে এই চিঠি পাঠিয়েছে সবকিছু নিয়ে দোটানায় পড়ে ইমতিয়াজ। প্রশ্নে প্রশ্নে জড়জড়িত মানুষটা চিন্তিত হয়ে সোফায় বসে পড়ে। ঠিক কি হতে পারে আজ রাতে?

ফোন বের করে মৃত্তিকাকে কল দেয়।
“হ্যালো।”

মৃত্তিকার কোমল সুরের জবাব দিলো ইমতিয়াজ।
“আমি ইমতিয়াজ বলছিলাম।”
“জি বলেন।”

ইমতিয়াজ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
“কোথায় আছেন?”

বিকালের দিকে হোটেল থেকে বাসায় ফিরেছে মৃত্তিকা। স্বাভাবিকভাবেই জবাব দিলো,
“বাসায়।”
“কোথাও বের হবেন?”

মৃত্তিকা হাসলো। বলল,
“না, কেন বলুন তো?”
“এমনিই, সাবধানে থাকবেন।”

ইমতিয়াজ ফোন রেখে দিলো। মৃত্তিকা চোখ কুঁচকায়, এ কেমন আচরণ?

মাথার চুল টেনে ইমতিয়াজ কোনো সুরাহা পাচ্ছে না, আর না নিজেকে শান্ত করতে পারছে। মৃত্তিকার আজ শেষ রাত। কে বলেছে এ কথা? মৃত্তিকার বাবা?
______________________________________

রাত বারোটা ত্রিশ মিনিট, মৃত্তিকা স্টোররুমের চাবিটা নিয়ে চুপিচুপি নিচতলায় আসে। দরজার সামনে এসে তালা খোলা দেখে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে যায়।

ভিতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই। দরজা ঠেলে ভিতরে গিয়ে চোখ বুলায়।

ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে আশেপাশে দেখতে থাকে। পূর্ব দিকের দেয়ালে কয়েকটা ছবি ঝুলিয়ে রাখা আছে। বেশ কয়েকটা ফ্যামিলি ফটো। এখানে চেনা থেকে অচেনা মানুষের সংখ্যাই বেশি।

একবার দরজার দিকে তাকিয়ে একটা অচেনা ফ্যামিলির ছবি হাতে নিলো, এখানের দুইটা মানুষকে ও চিনে। একজন সারাহ্, সাথে সামিহা। ছবিটাতে সারাহ্ আর সামিহার চেহারার গঠনে মনে হচ্ছে ছবিটা আরো দুই তিনবছর আগের।

“ওদের ফ্যামিলির ফটো এখানে কেন?”

আবারো ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকায়। ছবিটা যথাস্থানে রেখে ও আবারো ঘুরে ফিরে জায়গাগুলো দেখতে থাকে।

এই জায়গাটা নিয়ে ওর কৌতুহলের শেষ নেই। আগ্রহ নিয়ে দেখে আবারো যায় সেই কফিনের কাছে। ক°ফি°নের মুখটা খুলে ভিতরে কিছু আছে কিনা দেখে সে। ভেতরে একটা পাথর রাখা আর তাতে কোনো একটা নাম খোদাই করা আছে।

হঠাৎ পেছন থেকে কেউ ওর উপর হা°ম°লা করলে নামটা আর মৃত্তিকার দেখা হয় না। ফোনটা হাত থেকে ক°ফি°নের ভেতর পড়ে যায়। মাথায় প্রচন্ড আ°ঘা°ত পাওয়া মৃত্তিকার মুখ থেকে র°ক্ত বেরিয়ে আসে। মাথার পেছন দিকে হাত দিয়ে মাটিতে পড়ে গেলে ওর গলায় শক্ত কিছুর প্যাঁ°চ অনুভব করে। চিৎকার করার আগেই মৃত্তিকার হাত ও মুখ বাঁ°ধা হলো, গলায় প্যাঁ°চানো মোটা ওড়নাটার বাঁধন আরো শক্ত হলো।

গলা কা°টা মুরগির মতো ছ°টফ°ট করতে থাকে মৃত্তিকা, পা দুটো অসম্ভব দ্রুত গতিতে নাড়ছে সাথে শরীর ঝাঁ°কা°চ্ছে। ধীরে ধীরে ও শান্ত হয়, চোখ বন্ধ হয়। শরীর স্থির হলে মুখ থেকে খানিকটা র°ক্ত গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে ফ্লোরে। নাকে থেকে বের হওয়া র°ক্ত ঠোঁটের আশেপাশে আর গালে গড়াগড়ি খায়।

যে রহস্যের খোঁজে দেশে থেকে যাওয়া তা মৃত্তিকার সাথেই ক°ফি°ন°বন্ধী হয়ে যায়। ক°ফি°নের দরজা বন্ধের আগে কেউ বলল,

“মিউকো, এতোটা সহজ মৃ°ত্যু তোমার কাম্য ছিল না। মায়ের মতো নিরীহ হয়েও বাবার মতো ধূ°র্ত তুমি।”

অন্ধকারের এই বাক্যের সাথে আরেকটা বাক্য যুক্ত হলো,
“মেয়েটা অবশ্যই কিছু সন্দেহ করছে।”
“কিছু না সবটাই বুঝে গেছে সে, প্রমাণ খুঁজতে এসেছে এখানে।”
“তবে এখন?”
“শেষ প্রমাণ লো°পা°ট হবে, নার্গিস পারভিন ও রোমি খন্দকার।”
______________________________________

“ঐশী, আজ রাতটা আমার থাকতেই হবে।”
“কোথায় আছেন?”
“চাচ্চুর বাসায়। কাল সকালে সিআইডি অফিসে আবার যেতে হবে।”
“যাই করেন, নিজের খেয়াল রাখবেন প্লিজ। চিন্তা হচ্ছে আমার।”

আহনাফের সাথে ফোন যোগে কথা বলছে সারাহ্। আজকে সিআইডি অফিসে ওদের এইরকম অদ্ভুত সমস্যার বিষয় নিয়ে কথা বলেছিল আহনাফ। কিন্তু সমস্যাটা এমন যে একটা উড়াল কথার ভিত্তিতে এখান থেকে গভীরে যাওয়া কঠিন এবং যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ।

আহনাফ বলল,
“চিন্তা করো না তুমি, তবে আমার মাথায় একটা বিষয় ঢুকছে না৷ (একটু থেমে) তুমি ওখানে গেলে আর ওরা কথা বলল?”

সারাহ্ চমকে উঠে। তারমানে কেউ ওকে শোনানোর জন্য এমন কথা বলেছে।

“সত্যি বলেছেন, এভাবে তো ভাবিনি। তারমানে কেউ আমাকে শোনাতে চাচ্ছিলো?”
“একদম এটাই। ওরা তোমাকে দেখেছে।”

সারাহ্ নিজের মস্তিষ্কের মধ্যে খোঁজা শুরু করে। এমন কোনো শত্রু কি আদৌ ওদের আছে। কই, পরিবার বা বাইরের এমন কারো কথা তো ও জানে না।

“রাতে খেয়েছো?”

আহনাফের কথায় সারাহ্ আকাশকুসুম চিন্তা থেকে বাস্তবে ফিরে,
“জি, আপনি খাওয়া দাওয়া করেছেন?”
“হুম, তারপর বাবার সাথে কথা বললাম। ফ্রি হয়ে আমার বাচ্চার আম্মুটাকে কল দিলাম।”

“বাচ্চার আম্মু” এমন সম্মোধনে লজ্জা পায় সারাহ্। চুপ করে থাকে সে। পাশে থাকা আহনাফের বালিশটা বুকে জড়িয়ে আবেশে চোখ বুজে।

“কি বলো ঐশী? বেবির চিন্তা করবো? তবে একটা সুবিধা হবে। তুমি আমাকে সাদাবের আব্বু, সাইদার আব্বু বলে ডাকতে পারবে।”

সারাহ্ মুচকি হাসছে। বাচ্চার নামও ঠিক করে ফেলেছে লোকটা। কিছু বলার মতো ভাষা সে পাচ্ছে না।

আহনাফ আবারো বলে,
“ইশ, ফোনে এসব কথা বলছি। তোমার সামনে গিয়ে বলতাম। আমার দেখতে ইচ্ছা করছে তুমি কতটা লজ্জা পাচ্ছো।”
“ঘুমান।”
“স্বপ্নেও চলে আসবে। কিভাবে ঘুমাই?”

আহনাফ সামনে নেই তবুও সারাহ্ মুখ ঢেকে ফেলে। আহনাফ শব্দ করে হাসে। তারপর সারাহ্-কে বলে,
“শীতের ছুটিতে এবারে কোথায় যাবে ঘুরতে?”

সারাহ্ উঠে বসে নিজেকে ঠিকঠাক করে বলে,
“কোথাও না, বাবার সাথে গল্প করে আর আশেপাশে ঘুরাঘুরি করে কা°টিয়ে দিবো।”

আহনাফ হেসে বলে,
“ওকে, বাবার নাতি-নাতনি আসার আগেই গল্প সেরে নাও।”
“থামেন এবারে। বাড়াবাড়ি হচ্ছে।”

আহনাফ হাসলো। সারাহ্ নরমসুরে বলল,
“ঘুমান, শুভ রাত্রি।”
“হুম, স্বপ্নে এসো কিন্তু।”
______________________________________

ফজরের পর গো°র°স্থানে এসেছে ইমতিয়াজ। কাল রাতে কি হয়েছে তা এখনো ওর অজানা। ধীর পায়ে গো°রস্থানের লোহার গেইট ঠেলে ভিতরে ঢুকে, মরিচা ধরা লোহার গেইটে একটা কড়কড়ে শব্দ হয়। রিপা বেগমের কবরের পাশে নতুন একটা কবর খনন করা হয়েছে, তারপাশে একটা ক°ফি°ন।

ইমতিয়াজ সেদিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। বেশ যত্ন নিয়ে কবরটা খোঁড়া হয়েছে। তবে নিচে এখনো কাদা আর পানি রয়ে গেছে।

সে তানমিনার কবরের পাশে গিয়ে বসে।
“খুব বড় সিদ্ধান্ত নিতে হবে মনে হচ্ছে। মিনা, কি করবো আমি? আমার পাশে কেউ নেই যে আমাকে একটু পরামর্শ দিবে।”

“আবারো স্ত্রীর কবরের পাশে এসেছো?”

কারো কথায় ঘাড় ঘুরিয়ে ইমতিয়াজ দেখে সেই পৌঢ় নারী। প্রায়ই এই মহিলাকে গো°র°স্থানে দেখে সে।

মহিলাটি নিজের স্বামীর কবরের পাশে গিয়ে মোনাজাত করে। তারপর নতুন খোঁড়া কবরের সামনে গিয়ে বলে,
“আহ কবর, প্রিয়মানুষদের টে°নে টে°নে নিয়ে যায়।”

ইমতিয়াজ স্বাভাবিক কন্ঠে বলে,
“আপনার পরিচিত কেউ?”

কবরটার উপরে যে পাথরে খোদাই নাম লাগানো হয়েছে মহিলাটি তা পড়ে।
“মৃত্তিকা মেহজাবিন মিউকো, ১৯৯৫ থেকে ২০২৩।”

ইমতিয়াজ উঠে দাঁড়িয়ে যায়, নামটা তার পরিচিত। গতরাতের ওই চিঠি তবে সত্যি। মৃত্তিকার জন্য কালকের রাতটাই শেষ রাত ছিল।

আরো একজন লোক গো°র°স্থানে আসে। মহিলাটি হেসে বলে,
“অনুমান সত্য হয়েছে, তাহমিনার হাসবেন্ডই পরবর্তী লোক।”

ইমতিয়াজ দুজনের দিকে একবার তাকিয়ে তাহসিনার কবরের পাথরটা তুলে ছুড়ে মারে। লোকটা সরে যাওয়ায় গায়ে লাগে না।

রাগে হি°তা°হিত জ্ঞানশূন্য হয়ে মহিলাটিকে ধরতে গেলেই হাতে থাকা স্প্রে বোতল থেকে কোনো একটা তরল ইমতিয়াজের মুখের সামনে নির্গত করে দেয়। নে°শা জাতীয় কিছু আছে এখানে। ইমতিয়াজ টা°ল সামলাতে পারে না, দাঁড়ানো থেকে সোজা সেই খুঁড়ে রাখা কবরে পড়ে যায়। কাদামাটি আর পানি তার শরীরে ছিটকে পড়ে। কিছু পানি বাইরে এসেও মাটিকে ভিজায়। কিছুটা আবার রিপা বেগমের কবরের উপরে পড়ে।

মাটিতে বারবার হাতড়াতে থাকে ইমতিয়াজ। কোনোভাবে উঠার চেষ্টা করতে থাকে। লোকটা কয়েক মুঠো মাটি ওর মুখ আর শরীরের উপর দিয়ে বলে,
“জীবন্ত স°মা°ধী। কবরের খুব ভয় থাকে মানুষের, এখন নিজচোখে দেখো সেটা।”

বারবার মাটিতে মু°ষ্টি শক্ত করতে করতে ইমতিয়াজের চোখের সামনে অন্ধকার নেমে আসে। ওর চোখ বোজার সাথে সাথে একটা পরিবার শেষ হলো। বাবা, মা, স্ত্রী, সন্তানের পর আজ ইমতিয়াজের রওনা দেয়ার পালা। এই যাত্রা সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত চলছে এবং কি°য়া°মাত পর্যন্ত চলবে।

লোকটা বলে,
“আবারো একটা কবর খুঁড়তে হবে?”
“হ্যাঁ, আরো একটা খুঁড়ে মৃত্তিকাকে চা°পা দেও। মামের আদুরিকে মামের পাশে আর থাকা হলো না।”

লোকটি কফিন খুলে চেঁ°চিয়ে উঠে,
“মৃত্তিকার বডি নেই।”
“কিসব বলছো? ডে°ড বডি কোথায় যাবে?”

গেইটের কাছ থেকে একজন মধ্যবয়সী পুরুষ বলে উঠে,
“আমার নিশানা ও অনুমান এখন আর ভুল হয় না।”

পরপর দুটো গু°লির শব্দ হয়। র°ক্ত ছি°টকে গিয়ে পড়ে রিপা বেগমের কবরের উপর, ইমতিয়াজের শরীরটার উপর গিয়ে পড়ে একটা লা°শ।

গেইটের কাছ থেকে সাদা হুডি পড়া মানুষটা এগিয়ে আসে। মুখ তার মাস্কে ঢাকা। হুডির ক্যাপের জন্য চোখদুটোও দেখা যাচ্ছে না।
“মৃত্তিকাকে মে°রে ফেলা এতো সহজ নয়।”

দুজন মানুষের মৃ°ত্যু নিশ্চিত করতে আরো দুবার করে চারবার গু°লি করে। ছয় ছয়টা গু°লি একই জায়গায় শেষ হয়।

ইমতিয়াজের উপরে থাকা সেই লা°শের টাটকা র°ক্তে ইমতিয়াজের শরীরও র°ঞ্জি°ত হয়। মুখটা র°ক্তা°ক্ত হয়ে ভ°য়ং°কর রূপ নিয়েছে, যেন কোনো মানুষ খে°কো ভ্যাম্পায়ার।
______________________________________

“মিউকো বাসায় নেই, বাবা। কোথাও নেই।”

পাগলের মতো মৃত্তিকাকে খুঁজেছে সুরভি, শাফিন ও দেলোয়ারা। ভোর রাত থেকে এ পর্যন্ত না খুঁজে পেয়ে লুৎফর রহমানকে জানানো হয়েছে। হুট করে হদিস পাওয়া যাচ্ছে না, কোথায় গেছে কেউ জানে না, সাথে ফোন অফ।

শাফিন সাহেব মলিন মুখে সিঁড়িতে বসে পড়লেন। এ বয়সে আর কত ধকল নিবে এ শরীরটা। এখনো ঠিকমতো হাঁটতে পারছেন না, অথচ মৃত্তিকাকে খুঁজতে পুরো বাসায় উনি ছোটাছুটি করেছেন।

দরজার কাছে সুরভি দাঁড়িয়ে রইলো। মৃত্তিকার বাবার কাজ নয় তো এটা, এই চিন্তা তার মস্তিষ্কে ঘুরঘুর করছে।

দেলোয়ারা বলেন,
“একবার ইমতিয়াজকে কল দাও। হয়তো কোনো সাহায্য করতে পারে।”

শাফিন সাহেব নিষ্প্রাণ হয়ে আছেন, কথা বলা ভুলে গেছেন যেন। সুরভি উনার ফোন থেকে কল দেয় ইমতিয়াজকে। ফোন বাজছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। একবার, দুবার, তিনবার করে পনেরো-বিশবার নিয়েও সেই এক কথা,
“নো এন্সার।”

সময় গড়ায়, সকাল ৮ টা বেজে যায়। লুৎফর রহমান মমতাজ বেগমকে সাথে নিয়ে এ বাসায় এসেছে। লুৎফর রহমান পুলিশ কে°ই°স করতে চাইলে শাফিন সাহেব বাধা দিয়ে বলে,
“যদি মিউকোর বাবা ওকে নিয়ে যায় তবে পুলিশ কে°ই°সে হিতে বিপরীত হতে পারে। মিউকোর প্রা°ণনা°শের আশংকা আছে।”

মমতাজ বেগম শাফিন সাহেবের কথায় সম্মত হলেন। সুরভি বলে,
“কালকেও মিউকো সারাদিন বাসায় ছিল না। আমাদের একটু অপেক্ষা করা উচিত।”

দেলোয়ারা বলেন,
“কাল তো ফোন উঠিয়েছিল, বাসায় বলে গিয়েছিল। আজ তো ওকে যেতেই দেখিনি।”

কথা যুক্তিযুক্ত, তবুও পরিবারটা নিরুপায়। কিছুক্ষণ অপেক্ষা না করে হুট করে কে°ই_স করাটা বোকামি বই আর কিছু নয়। ওরা তো আর জানে না প্রিয়মানুষগুলোর পরিণতির ব্যাপারে।
______________________________________

যোহরের নামাজের পর কাকরাইল গো°র°স্থানে আসে আহনাফ। আজ নতুন দুইটা কবর পড়েছে। প্রতিদিন নতুন কবর হচ্ছে, এ তো ভিন্ন কিছু নয়। তাই রিপা বেগমের পাশের দুটি কবরের দিকে আলাদা করে নজর যাওয়ার কোনো কারণ নেই।

তাহসিনার কবরের পাথরটা নেই, আহনাফ আশেপাশে তাকিয়ে দূরে ছিন্নভিন্ন পাথরটা দেখলো। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে শ্যাওলা পড়েছে। এখন তো বৃষ্টি নেই, পথের ধূলায় সবুজ শ্যাওলা সাদা হয়ে আছে।

মোনাজাত শেষে আহনাফ দেখে রিপা বেগমের কবরের উপরের মাটি খানিক নেই। মনে হচ্ছে আজই কেউ কোদাল দিয়ে উপরের মাটি সমান করে উঠিয়ে নিয়ে গেছে।

নতুন কবর দিবে বলে পাশের কবরের মাটি কেন সরাবে। বি°র°ক্ত হয় আহনাফ। তারপর বেরিয়ে এসে সিএনজি নেয়, গন্তব্য কমলাপুর।

বাসে করে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় দুই ঘন্টা। সারাহ্-র সাথেও এরমধ্যে কথা হয়েছে।

ক্যান্টনমেন্ট নামতেই দেখে সারাহ্ এসে হাজির, ওর অপেক্ষা করছে। কাঁধের ব্যাগটা একটু উঠিয়ে ওর কাছে যায়।

“একদম আমাকে নিতে চলে এলে?”

সারাহ্ হেসে বলল,
“প্রচুর চিন্তা হচ্ছে। আপনার জন্য, সামিহার জন্য।”

আহনাফ রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে বলে,
“পরশুদিন তোমাকেও যেতে হবে। কি কি কথা শুনেছো প্লাস তোমাদের ফ্যামিলিতে কোনো প্রবলেম আছে কিনা জানবে। তোমার আব্বুকেও যাওয়া লাগতে পারে।”

সারাহ্ ঠোঁট উলটে বলল,
“বাবা বাসায়, যদি এসবে কিছু মনে করে।”
“আরে না, আমি বুঝিয়ে বলবো।”

সারাহ্ মুচকি হাসে। সব ঠিকঠাক থাকুক। আর যা যা এলোমেলো তাও ঠিকঠাক হয়ে যাক। সহ্য শক্তি বোধহয় কমে গেছে ওর।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here