#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী
অষ্টপঞ্চাশৎ পর্ব (৫৮ পর্ব)
“জানেন আজ একটা ঘটনা ঘটেছে।”
রাতের খাবার শেষে একটু গল্পগুজব শেষ করে মাত্রই ঘুমাতে এসেছে আহনাফ। বিছানায় শোয়া মাত্রই উপরোক্ত কথাটা বলে সারাহ্।
“কি ঘটেছে?”
সারাহ্ খুব আগ্রহ নিয়ে বিছানায় বসে বলল,
“একটা চেনা কন্ঠ শুনেছি। যে কন্ঠের মালিক আমাকে বাঁচিয়েছে, তাকে দেখেছি।”
এবারে আহনাফ উঠে বসে। কপালে কয়েকটা ভাঁজ পড়েছে। মাথা নেড়ে বলল,
“মানে কি?”
সারাহ্ সকালের পুরো ঘটনা খুলে বলে। আহনাফ আবারো খানিক চিন্তায় পড়ে যায়। এ আবার কেমন সমস্যা আসলো?
আর সময় নষ্ট না করে সে বেরিয়ে যায়, সারাহ্ উঠে দরজা পর্যন্ত আসে। আহনাফের সাথে বের হওয়ার সাহস ওর হয়ে উঠে না।
আহনাফ এসে হাজির হয়েছে পাঁচতলায়। চারটা ফ্ল্যাটের মাঝে কোনটাতে থাকে সে ব্যক্তি, তা নিয়ে বি°ব্রত হলেও সারাহ্-র কথা অনুযায়ী ফ্ল্যাট ফোর-বি তে বেল বাজায়। তবে বেল বাজে না। বাজবে কিভাবে? এখানে তো বেল লাগানোই নেই।
দরজায় নক করে আহনাফ। জোরে জোরে কয়েকবার নক করলে শরীফ ভিতর থেকে বলে,
“কে?”
আহনাফ গলা ঝেরে বলল,
“নিচের ফ্ল্যাট থেকে এসেছি, এখানে শব্দ হচ্ছে তাই।”
“এখন কোনো শব্দ নেই, যেতে পারেন।”
শরীফ দরজা খুলে না। আহনাফ আরেকবার দরজায় নক করে বলে,
“একটু বাইরে আসবেন কথা আছে।”
লুকিং হোলে আহনাফকে দেখে শরীফ আর বের হয় না, ভিতর থেকে বলে,
“যা বলবেন ওখান থেকেই বলুন, আমি জবাব দিবো।”
আহনাফ নিশব্দে চলে যায়। লোকটাকে দেখার অনেক বেশি ইচ্ছে তার, তবে সে ইচ্ছে অপূর্ণ থাকে।
এদিকে মৃত্তিকার ফোনে ইমতিয়াজ অনবরত কল করছে। একই স্থানে স্থির মৃত্তিকা কান্না ভরা চোখে কম্পনরত ফোনের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। ঘূর্ণায়মান পৃথিবী তার জন্য বোধহয় থেমে গেছে। এদিন কাটবে না, এ মাস শেষ হবে না, সুন্দর একটা সকাল হয়তো তার দেখা হবে না। এমনটাই মনে হচ্ছে মৃত্তিকার।
শরীফ এসে তানজিমকে বলল,
“আহনাফ এখানে?”
“হয়তো আপুর সাথে দেখা করতে এসেছে।”
“কোন আপু?”
কপাল কুঁচকায় শরীফ।
“উনার ওয়াইফ, সারাহ্। চারতলায় থাকে।”
শরীফ মাথা নেড়ে ভিতরে যায়। সে জানে সারাহ্ এখানে থাকে, তার সাথে দেখা হয়েছিল তো।
মৃত্তিকা ওকে দেখেও একইভাবে বসে থাকে। শরীফ মৃত্তিকার ফোন হাতে নিয়ে বলে,
“ইমতিয়াজ বারবার কল করছে।”
মৃত্তিকা মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
“অপরূপা ইমতিয়াজের কথা বলেছে, বড়মণি পঞ্চম ব্যক্তিকে চেনে না, শাফিন ও ইমতিয়াজের কথাই বলেছে। এর অর্থ কি দাঁড়ায়?”
শরীফ চুপ করে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মৃত্তিকা আবারো বলে,
“অপরূপা অনেকদিন থেকে আমার কাছে জি°ম্মি। তাই শাফিন আর ওর পরিকল্পনা করার কোনো সুযোগ হয়নি, তবে একই কথা কেন দুজনে বলেছে?”
শরীফ ওর মুখোমুখি বসে।
“দেখো, আমি বুঝতে পারছি, ইমতিয়াজ নামটা শুনে তোমার কেমন লাগছে? তবে একটা বিষয় মাথায় রেখো এই শাফিন তোমার মায়ের নামেও আমার কাছে অনেক কথা বলেছে, পথ°ভ্র°ষ্ট করেছে আমাকে। (একটু থেমে) বুদ্ধিমানের জন্য ইশারা যথেষ্ট।”
হ্যাঁ, মৃত্তিকার জন্য ইশারা যথেষ্ট হলো। সে বুঝতে পারলো এমনও হতে পারে যে শুধুমাত্র ওর সংসার ভা°ঙার জন্য ইমতিয়াজের উপর জোর করে দোষ চাপানো হচ্ছে।
“আমাকে সকালে বাসায় দিয়ে আসবেন?”
মৃত্তিকার কথায় শরীফ চলে যেতে নিয়েও থেমে দাঁড়িয়ে বলে,
“ঠিক আছে, রেডি থেকো।”
______________________________________
সকাল সকাল মৃত্তিকা ঠিকই এসে বাসায় হাজির হয়। কলিং বেল বাজাতে না বাজাতেই ইমতিয়াজ দরজা খোলে। শরীফ উপরে আসেনি, তানজিমকে বাসায় একা রেখে এসেছে বলে দ্রুত চলে যায়।
দরজা খুলে দেয় ইমতিয়াজ ঠিকই, কিন্তু ওকে ভেতরে ঢোকার জায়গা দেয় না। মৃত্তিকা ওকে পাশ কাটিয়ে ঢুকতে নিলে ইমতিয়াজ ওর হাত ধরে বাইরে বের করা দেয়।
“ভিতরে যাই, আমি বলছি সব কথা।”
মৃত্তিকার কথায় ইমতিয়াজ জবাব দেয়,
“তুমি যেটা বলবে মি°থ্যাই বলবে।”
মৃত্তিকার সেই এক মিথ্যার রেশ ধরে, ওকে আর বিশ্বাস করে না ইমতিয়াজ। মৃত্তিকা ওকে ধা°ক্কা দিয়ে ভিতরে চলে আসে।
“বাবার সাথে ছিলাম, এই কথাটা কি বিশ্বাস হচ্ছে না?”
ইমতিয়াজ শব্দ করে দরজা বন্ধ করে বলে,
“তুমি তোমার বাবার সাথে ছিলে, তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তুমি ফোন কেন রিসিভ করোনি? কাল যখন বাসায় আসতে বলেছি তখন কেন আসনি?”
“ইচ্ছে হয়নি, তাই আসিনি।”
“তো এখন কেন এসেছো? রাতে কোন মেয়ে নিয়ে ছিলাম কিনা সেটা দেখতে?”
ইমতিয়াজ শোবার রুমের দরজা খুলে বলে, “দেখো, কে আছে দেখো। ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন, এখানে দেখো।”
মৃত্তিকা রেগেমেগে বলে,
“চিৎকার করবেন না আর ভদ্রতা বজায় রাখুন।”
“এখন আমি চিৎকার করছি? দু দুটো রাত তুমি বাসার বাইরে ছিলে। কোথায় ছিলে, কি করছো, কোনো কিছু জানাওনি। ফোন বন্ধ রেখেছিলে, যাও কল রিসিভ করলে কথা শেষ না করে কে°টে দিলে, তারপর সারাদিনে আর কোনো যোগাযোগ নেই।”
ইমতিয়াজ ওর কাছে এসে বলে,
“তোমার কি মনে হয় আমি তোমার বাবার বাসায় যাইনি? ওখানে তুমি ছিলে না, অপরূপাও ছিল না। হাসপাতালে গিয়েছিলাম, উনি ছিল না। কোথায় ছিলে তোমরা?”
মৃত্তিকা রুমে চলে যায়। হিজাব খুলে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বলে,
“আপনি আমাকে সন্দেহ করছেন, তাই না?”
“না, এটা সন্দেহ না, তবে জবাবদিহিতা তোমাকে করতে হবে।”
একটু থেমে ইমতিয়াজ বলে,
“বিবির বাজার কেন গিয়েছিলে তোমরা?”
মৃত্তিকা চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকায়। এমনিতেই মৃত্তিকা ওকে সন্দেহ করে, তার ওপর বিবির বাজার যাওয়ার খবর সে কোথায় পেল? আরো একটা প্রশ্ন এসে দানা বাঁধে মৃত্তিকার মনে।
মৃত্তিকা কিছু বলার আগেই ইমতিয়াজ বলে,
“থাক, তোমাকে আর কোনো কথা বানাতে হবে না। কারণ সত্যটা তুমি আমাকে বলছো না।”
______________________________________
শুক্রবার দিন পুরো পরিবার একসাথে নাস্তা করবে। সামিহা টেবিল সাজাচ্ছে। সারাহ্ বেশ আরাম করে বসে বলে,
“মা, তোমার মেয়ে কিন্তু বেশ কাজের হচ্ছে।”
নার্গিস পারভিন হাসলেন, নিচুস্বরে সারাহ্-কে বলেন,
“আহনাফকে ডেকে আনো।”
সারাহ্ উঠে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আহনাফ সবে মাত্র উঠে ফ্রেশ হয়েছে। সারাহ্ ন্যাকাসুরে ডাকে,
“সোয়ামি।”
আহনাফ যেন ভী°ম°ড়ি খেয়ে উঠে। চোখে চঞ্চলতা রেখে বলে,
“কিসব বলছো?”
“ওমা, কি বললাম? আপনাকে নাম ধরে তো ডাকা যাবেনা, তাই এই পদ্ধতি অবলম্বন করা আরকি। আমি আবার খুব বুদ্ধিমান (একটু থেমে) সরি, বুদ্ধিমতী।”
আহনাফ কিছু বলার আগেই নার্গিস পারভীন ওদেরকে ডেকে বলে,
“এসো তোমরা, সারাহ্ এসো। আহনাফ এসো, বাবা।”
আহনাফ একটু উঁচু গলায় বলে,
“আসছি।”
রাস্তার টেবিলের খাবারের চেয়ে গল্প বেশি জমে উঠে। একপ্রকার হাসি তামাশায় মেতে উঠেছে সবাই। নাস্তা শেষে ড্রয়িং রুমে বসে জাহাঙ্গীর সাহেব ও আহনাফ এটা সেটা নিয়ে কথা বলছে। এর মাঝে সামিহা এসে পুরনো পত্রিকার শেলফটা ঘাটাঘাটি শুরু করেছে।
জাহাঙ্গীর সাহেব বলে,
“কি খুঁজছো?”
“একটা কাগজ, বাবা। এখানে রেখেছিলাম।”
একটা ছবি এসে আহনাফের পায়ের কাছে পড়ে। ছবিটার দিকে তাকিয়ে সে অবাক হয়, এ যে ইমতিয়াজ।
“উনি কে সামিহা?”
আগে পিছে তেমন কিছু না ভেবেই আহনাফ সামিহাকে প্রশ্ন করে বসে।
সামিহা সরল জবাব দেয়,
“মিউকো আপুর হাজব্যান্ড।”
“উনার ছবি তোমার শেলফে কেন?”
সামিহা হেসে বলে,
“শুধু ছবি না সিভিও আছে। আপু যখন মাস্টার্সে, তখন প্রস্তাব এসেছিল বিয়ের।”
আহনাফ আর কিছু না বলে নিরবে উঠে চলে যায়। তার মানে ইমতিয়াজকে উনারা সবাই চেনে। যদিও ঘটনা অনেক আগের তাই এটা নিয়ে আহনাফের কোনো মাথাব্য°থা নেই।
রুমে বসে সে গালিবকে ফোন দেয়। শাফিনের আপডেট জানতে ফোন দিলেও, সে আপডেট পায় ডাক্তার আরিফার। আরিফা হঠাৎ করেই প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে গেছে এবং তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে, অবস্থা খুবই শোচনীয়।
এদিকে আরিফা হাসপাতালে আসার খবরে শরীফ ঢাকা মেডিকেলে এসেছে। অন্যান্য ডাক্তারদের সাথে সম্পর্ক ভালো থাকায় শরীফ খুব সহজেই আইসিইউতে প্রবেশ করে ফেলে।
আরিফার কাছে গিয়ে একটু ঝুঁকে খুব ধীরে ধীরে বলে,
“কাল রাতে একটা গ্যাস ছড়িয়েছিল নাকি?”
আরিফা চোখ বড় বড় করে তাকায়। সত্যিই কাল সেলের ভিতরে একটা গ্যাস ছড়িয়েছিল এবং এই গ্যাসের জন্য সে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
শরীফ আবারো বলে,
“পঞ্চম ব্যক্তি কে? এটা বললেই বেঁচে যাবে।”
আরিফা জোরে শ্বাস টে°নে নেয়। মিনমিনে কন্ঠে বলে,
“ইমতিয়াজ।”
যেন সকলের এই নামটা মুখস্থ করে বসে আছে। যাকে জিজ্ঞাসা করছে, একই নাম জবানে আসছে।
শরীফ আবারো জিজ্ঞাসা করে,
“কোন ইমতিয়াজ? সৌরভ?”
আরিফা ডানে বামে মাথা নেড়ে না বুঝায় অর্থাৎ এই ইমতিয়াজ, সৈয়দ ইমতিয়াজ সৌরভ না।
“তবে কোন ইমতিয়াজ?”
আরিফা আঙ্গুল উঠিয়ে কিছু একটা ইশারা করে। শরীফ কপাল কুঁচকে এদিক ওদিক তাকায়।
ডা. দীপ এসে বলে,
“শরীফ সাহেব বাইরে চলে আসুন। আইসিইউতে বেশিক্ষণ থাকা ঠিক না।”
“হুম।”
বলে বেরিয়ে আসে শরীফ।
তী°ক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পুরো ফ্লোরে সে তাকাতে থাকে। আরো একজন ইমতিয়াজের খোঁজে ব্যস্ত সে। এই ইমতিয়াজ সৌরভ নয়, এইটুকু কথা ওর স্বস্তির জন্য যথেষ্ট ছিল। এর মধ্যে একটা কথা ছড়িয়ে পড়ে, আরিফা মা°রা গেছে।
শরীফ চমকে উঠে। আরিফার থেকে কথা নেয়ার জন্য, ওকে সেল থেকে বের করা জরুরী ছিল। তাই ওর লোকের মাধ্যমে অল্প কিছু কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস সেখানে দেওয়া হয়, তবে তার মাত্রা এত বেশি ছিল না যে আরিফা মরে যাবে।
শরীফ দ্রুত পায়ে আইসিইউর কাছে এসে দেখে সাদা কাপড়ে ঢেকে আরিফাকে বের করে নিয়ে আসছে। আরিফাকে নিয়ে গেলে শরীফ ভিতরে আসে অক্সিজেন সিলিন্ডারে ফু°টো, এখান থেকে গ্যাস লিক হয়েছে আর অক্সিজেনের অভাবে সে মা°রা গেছে।
কে এই ইমতিয়াজ? প্রশ্নটা রয়ে যায়।
______________________________________
আজকের দিনটুকু পেরিয়ে যায়। রাতে মৃত্তিকা শরীফের থেকে আরিফার ঘটনা শুনে আবারো আত°ঙ্কি°ত হয়ে যায়। আরো একজন মানুষ বাইরে ঘুরঘুর করছে, অথচ কেউ বুঝতেও পারলো না।
ইমতিয়াজ কিছুক্ষণ আগে বাসায় এসেছে। এসেই সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে রাতে সে খাবে না।
শরীফের থেকে সবটা জেনেও মৃত্তিকার নজর ইমতিয়াজের উপর থেকে সরে না। বিশ্বাস নামক শব্দটা এখন শুধুই একটা শব্দ, বাস্তবে তার অস্তিত্ব নেই।
যে মমতাজ বেগম দুই বছরের বেশি সময় মেয়েদের শো°কে মানসিক রোগীর অভিনয় করেছে, সে নাকি তার মেয়েদের খু°নি। যে মামা ভাগ্নির জন্য এত ভালবাসা দেখিয়েছে, সে নাকি তার ভাগ্নিকে নোংরাভাবে ছুঁয়েছে। এত কিছু হওয়ার পর ইমতিয়াজকেও সে বিশ্বাস করতে পারছে না।
মৃত্তিকা শরীফকে বলে,
“শাফিনকে রাতভর পি°টিয়েও কোনো লাভ হবে না। তার যদি বিবেকবোধ থাকতো, তবে সে এসব করতোই না। আর ওদেরকে জানে মে°রে ফেলো না। ওরা ঠিক সেই ভাবে ম°রবে, যেভাবে ওরা মামকে মে°রেছে।”
“তবে তার আগে সেই ইমতিয়াজকে আমি চাই। হাসপাতালে খুঁজলে পেতে পারি।”
কথা শেষে ফোন রেখে মৃত্তিকা ঘরে যায়। ইমতিয়াজ ওর কথা সবই শুনেছে, কিন্তু সে এখন ঘুমের ভান ধরে শুয়ে আছে। মৃত্তিকা ওর গা ঘেষে শুয়ে পড়ে। ইমতিয়াজ বাধা দেয় না, আবার ওকে জড়িয়েও নেয় না।
ইমতিয়াজের পিঠে মাথা ঠেকিয়ে রেখেছে মৃত্তিকা। দুজনেই কষ্ট পাচ্ছে, ওরা জানে ওরা একে অপরকে কষ্ট দিচ্ছে। ইচ্ছা করে আরো জ°ঘ°ন্য কথা বলে বলে কষ্ট বাড়িয়েছে। কিন্তু কেউই হার মানতে রাজি নয়, আবার দূরে যেতেও রাজি নয়। শারিরীকভাবে একই স্থানে থেকেও মনটা যোজন যোজন দূরে তো কত আগেই চলে গেছে।
______________________________________
শনিবার সকাল, আজও আহনাফ বাসায় থাকবে। তাই সকালেই সামিহা ওর সাথে ঘুরতে বেরিয়েছে। সামিহা একটু আগে আগে হাঁটছে আর আহনাফ একটু পিছনে।
সামনে দিয়ে একটা বড় লা°শবাহী গাড়ি যায়। ফ্রিজিং গাড়ি নয়, খোলা বড় গাড়ি। রাস্তার কুকুরগুলো গাড়িটাকে দেখেই চিৎকার করে ঘেউ ঘেউ করতে শুরু করে। সামিহা দাঁড়িয়ে গাড়িটার দিকে তাকিয়ে থাকে।
আহনাফ ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে বলল,
“কি? ভ°য় পেলে?”
“না, দেখে একটু চমকে গেছি। এতো সকালে লা°শবাহী গাড়ি কেন? তাও এতো বড়।”
“হয়তো কোনো দু°র্ঘ°টনা হয়েছে।”
“হতে পারে।”
এরমধ্যে পর পর চারটা গু°লি চলে। সামিহাকে নিয়ে সরে যায় আহনাফ। সামিহা প্রচুর ভ°য় পেয়েছে। কয়েকজন অচেনা লোক গাড়িটার পিছু করতে করতে গু°লি চালিয়েছে।
একজন বলে,
“সরে যান।”
আহনাফ ওদের কোমড়ে লাগানো আইডি কার্ড দেখে তাদেরকে পুলিশ বলেই শনাক্ত করে। লা°শবাহী গাড়ি থেকে তিনজন লোক নেমে ওদের বাসায়ই ঢুকে যায়।
আহনাফও সামিহাকে নিয়ে দ্রুত বাসায় ঢুকে। লোকগুলো সিঁড়ি দিয়ে উঠেছে আর ওরা উঠে লিফটে। চারতলায় নেমে সামিহাকে ফ্ল্যাটে ঢুকিয়ে আহনাফ দাঁড়িয়ে থাকে।
লোকগুলো চারতলা পেরিয়ে পাঁচতলায় যেতে নিলেই আহনাফ একজনকে টে°নে জোরে দেয়ালের দিকে আছড়ে ফেলে, আরেকজনের গলা হাতের বাঁধনে চেপে ধরে। সামিহা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থেকেই ভয়ে চেঁচিয়ে উঠে।
উপর থেকে তানজিমও নেমে আসে। সামিহা ওকে দেখে কপাল কুঁচকে বলে,
“তানজিম?”
তৃতীয় জনকে তানজিম ধরে ফেলে। তিনজনই এখানে আটকা পড়ে যায়। লিফট খুলে বেরিয়ে আসে পাঁচ ছয়জন লোক। একজন আইডি কার্ড ফেলে দিয়ে বলে,
“এসবই মি°থ্যা, উনাদের ধরার জন্য থ্যাংকস।”
শরীফ পিছন থেকে এসে তিনজনের উদ্দেশ্যে বলে,
“তোমাদের মধ্যে ইমতিয়াজ কে?”
আহনাফও অবাক হয়। তিনজনের একজনকেও সে চেনে না।
“কতটা নি°র্ল°জ্জ হলে লা°শবাহী গাড়িতে করে পালাতে পারো।”
শরীফের ইশারায় বাকিরা এসে ওদেরকে ধরে ফেলে। আহনাফ জিজ্ঞাসা করে,
“কারা ওরা?”
শরীফ আড়চোখে তিনজনকে দেখে বলে,
“একজন রাঘব বোয়াল এদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে।”
আহনাফ কপাল কুঁচকে তাকালে শরীফ বলে,
“আসো, তোমাকে বলছি।”
আহনাফ গতরাতের কন্ঠ এটাই ছিল বুঝে যায়, সামিহাকে দরজা বন্ধ করার ইশারা করে শরীফের সাথে উপরে আসে।
সামিহার পিছন থেকে উঁকি দিয়ে এতোক্ষণ শরীফকে দেখেছে সারাহ্। এই লোক সবকিছু জেনে যায় কোথা থেকে? সব জায়গায় কিভাবে হাজির হয়? লোকটা ভালো নাকি খারাপ? কোনো হিসাবই সারাহ্-র মিলে না।
চলবে…..
(ইমতিয়াজ খুঁজে বের করো তো, দেখি কার কত বুদ্ধি। পর্বে ইঙ্গিত আছে।)