#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী
ঊনষষ্টি পর্ব (৫৯ পর্ব)
“আরিফার ডে°ডবডি ডিএমসির ম°র্গে রেখেছিল, ওরা তিনজন সেই লা°শ বের করার চেষ্টা করেছে। আজ ভোরে এই কাজ করার সময় আমার কাছে ধরা পড়ে পালিয়ে যায়।”
শরীফ আহনাফ সকল ঘটনাই বলেছে। ইমতিয়াজকে নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোও বলা হয়েছে। তবে শরীফের কথা আহনাফের পুরোপুরি বিশ্বাস হয় না। যদি ওরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পালায়, তবে এখানে কেন?
প্রশ্নটা করে বসতেই শরীফ জবাব দেয়,
“হুম, ওরা এখানে কেন এসেছে তা আমিও সঠিক জানি না। তবে গাড়ি নিয়ে ওরা এখানেই এসেছে। সম্ভবত শাফিনকে নিতে।”
আহনাফ চোখ কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
“আপনি সবকিছু এমন আগে আগে কিভাবে জেনে যান?”
শরীফ ওর কথায় তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। বেশ স্বাভাবিক কন্ঠে বলে,
“বুদ্ধি থাকলেই হয়। কাল আরিফা মা°রা যাওয়ার পর, আমি আশপাশ নজরে রেখেছিলাম।”
আহনাফ মাথানেড়ে পাশে বাঁধা অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকা শাফিনের দিকে তাকায়। বলে,
“সারাহ্-র উপরেও নজর ছিল নাকি?”
শরীফ উঠে শাফিনের কাছে গিয়ে বলে,
“না, তবে শাফিনের উপর ছিল। (একটু থেমে) আর নজর ছিল বলেই তোমার সারাহ্ বেঁচে আছে।”
আহনাফ উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“ওহ, আচ্ছা। তবে সেদিন আপনার হাতে পি°স্ত°ল থেকেও এই শাফিন কিভাবে বেঁচে গেল?”
শরীফ অনেকটা রেগে যায়। শাফিনের ডানকাঁধ আহনাফের থেকে ঘুরিয়ে বলে,
“এখানে ক্ষ°তটা দেখছো? আমার গু°লি থেকে এটা হয়েছে।”
আহনাফ দুহাত বুকে বেঁধে বলে,
“ওকে বুঝলাম, কিন্তু কে ওই ইমতিয়াজ তা কিভাবে বের করবেন? এমনও হতে পারে ইমতিয়াজ বলে আসলে কেউ নেই, সেটা একটা ছদ্মনাম।”
শরীফ চিন্তায় পড়ে, আহনাফের কথা অবশ্যই সঠিক হতেই পারে। সেটা একটা ছদ্মনাম তবে কার? ডা. দীপের দিকে সন্দেহের তীর যায়, আবার সামনে বসে থাকা তিন বান্দার দিকেও চোখ পড়ে।
শাফিন ফ্লোরে শুয়ে হাসতে হাসতে বলে,
“ইমতিয়াজদের বের করা তোমার কাজ নয়। যে ইমতিয়াজকে চিনো তাকেই নাহয় পাকড়াও করো।”
আহনাফ প্রথম তার কথা গুরুত্ব না দিলেও পরক্ষণেই মনে হয় ইমতিয়াজদের মানে কি? সে উঠে শাফিনের কাছে গিয়ে বসে বলে,
“ইমতিয়াজ একজন নয়?”
শাফিনের মুখটা চুপসে গেল। বোঝা যাচ্ছে সে ভুলবশত কথাটা বলে ফেলেছে। আহনাফ একটু হেসে বলে,
“মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে? আহারে, বেচারার চেহারাটা দেখার মতো হয়েছে।”
আহনাফ উঠে দাঁড়িয়ে একটু জোরেশোরে বলল,
“একে বাঁচিয়ে রেখে কি করবেন? এমনিতেও সে কিছুই বলবে না, মে°রে ফেলেন।”
শরীফ সোফায় বসে বলে,
“থাকুক কিছুক্ষণ বেঁচে, এতো জলদি ম°রলে হবে। যদি আবার মুখ ফসকায়।”
আহনাফ রাগে গজগজ করতে করতে পা দিয়ে শাফিনের চোখ চেপে ধরে বলে,
“যে মেয়েটা আমার সামনে লজ্জায় নুয়ে পড়ে তার গায়ে হাত দেয়ার চিন্তা কিভাবে করেছো? কিভাবে ওর দিকে দৃষ্টি দিয়েছো?”
শাফিন চিৎকার করতে শুরু করে। পায়ের আঙুল চোখসহ ভিতরে দিয়ে রাগে শরীরের শক্তি সেখানে প্রয়োগ করে আহনাফ। শাফিন পুরো শরীর নাড়াচাড়া শুরু করে। সাথে চলে আ°র্ত°নাদ,
“ছাড়ো আমাকে।”
চোখ থেকে র°ক্ত পড়া শুরু হয়। আহনাফ সরে আসে। মনে হয় না, এ চোখ আর ঠিক হবে। অপরূপা শাফিনের অবস্থা দেখে পিছনে যেতে শুরু করে, ফ্লোরে গড়াগড়ি খেয়ে কোনোরকমে সে সরতে থাকে। এদিকে শাফিন চিৎকার শুরু করেছে।
“আপনি ঠিক কে? তা আমি এখনো বুঝিনি।”
শরীফকে কথাটা বলে আহনাফ দরজা খুলে বেরিয়ে যায়।
______________________________________
ফজরের পর ইমতিয়াজ ও মৃত্তিকা দুজনেই ঘুমিয়ে পড়েছে। দশটা প্রায় বাজতে চলল, অথচ ওদের ঘুম এখনো ভা°ঙলো না।
ঘুমের ঘোরে দুজনে কাছাকাছি চলে এসেছে। মৃত্তিকা সেই ইমতিয়াজের বুকেই মাথা গুজে ঘুমাচ্ছে। মৃত্তিকার উন্মুক্ত উদরে ইমতিয়াজের হাত লাগতেই ওর ঘুম হালকা হয়ে যায়।
চোখ খুলে ইমতিয়াজের এতো কাছে বুঝতে পেরে মাথা তুলে তাকায় সে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে ইমতিয়াজের চেহারার দিকে, তারপর তার গালে হাত দিয়ে কপালে, ঠোঁটে চুম্বন করে উঠে যায়।
মৃত্তিকা রুম থেকে বেরিয়ে গেলে ইমতিয়াজ চোখ খুলে। এতোক্ষণ সে জেগেই ছিল। উঠে বসে ঘড়ি দেখে চমকে উঠে। অফিসে তো যাওয়া দরকার ছিল।
মৃত্তিকা আবারো রুমে এসে ওকে দেখেও কথা না বলে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। নিজের মতো ফ্রেশ হয়ে সে নাস্তা তৈরি করে নেয়।
ইমতিয়াজ অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে এসে নাস্তার টেবিলে বসে। মৃত্তিকা চুপচাপ ওকে নাস্তা দিয়ে নিজের খাবার খেতে মনোযোগ দেয়। খাওয়া শেষে ইমতিয়াজ বেরিয়ে যেতে নিয়ে আবারো ফিরে আসে।
মৃত্তিকাকে জোর করেই নিজের দিকে ঘুরিয়ে কাছে আনে। মৃত্তিকা আর কোনো জোরাজুরি করছে না। ইমতিয়াজ ওর কাছে এসেও আবারো চলে যায়। তার মন যে এখনো জমে আছে, কারণটা মৃত্তিকার করা অপমান।
______________________________________
সন্ধ্যা সাতটা, আহনাফের কাল চলে যেতে হবে। আবার শাফিন ওদের উপরের তলায় আছে, এটা জেনে তো যেতেও ইচ্ছা করছে না। কোনোভাবে যদি শাফিন ছাড়া পায় তবে সকালে ওর করা আচরণের বদলা নার্গিস পারভিন অথবা সারাহ্-র উপর দিয়ে যাবে।
সামিহার সাথে রান্নার কাজ করছে সারাহ্। রান্নাঘর থেকেই বেরিয়ে আহনাফকে বাইরে যেতে দেখে সারাহ্ বলে,
“এই সময় কোথায় যাচ্ছেন?”
আহনাফ হাত দিয়ে বাইরের দিকে ইশারা করে বলল,
“এখানেই, চলে আসবো।”
সারাহ্ মাথা নেড়ে সম্মতি দেয়। আহনাফ হেসে বেরিয়ে যায়। সে নিচে না গিয়ে পাঁচতলায় শরীফের ফ্ল্যাটে এসেছে। দরজায় নক করলে শরীফ খুলে দেয়। সকালের পর তানজিম আর বাসায় নেই।
আহনাফ ভিতরে সে সকালের তিনজন ছেলেকে র°ক্তা°ক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে বলে,
“আপনি কি আদৌতে ডাক্তার? আমার তো বিশ্বাস হয় না। কোনো ডাক্তার একজন মানুষকে এভাবে মা°রতে পারে?”
শরীফ সি°গা°রেটে টা°ন দিয়ে বেশ আরামে ধোঁয়া ছেড়ে বলে,
“ডাক্তার তোমার একটা পরিচয়। যখন রিপা ছিল, তখন এটা আমার আসল পরিচয় ছিল। এখন রিপা নেই, তাই এখন আমার আসল পরিচয় একজন মা°ফিয়া লিডার।”
আহনাফ ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
“মা°ফিয়ার লিডার? ভদ্রতা সব ক্ষেত্রে চলে না, মা°ফিয়া ড°ন বলে।”
শাফিনের এক চোখে ভারী ব্যা°ন্ডে°জের পট্টি, করে শুয়ে সে এখনো কিছু ছটফট করছে৷ আহনাফের ক্ষো°ভে ওর অবস্থা ঠিক কতটা খারাপ হয়েছে তা ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে৷
“নাম কি এদের?”
আহনাফের কথায় শরীফ জবাব দেয়।
“তকী, মনসুর আর ইমন।”
“এখানে কেন এসেছিল বলেছে?”
শরীফ একটু হেসে বলে,
“শাফিন এখানে তা জানতো না। তবে আমার বাসায় এসেছিল, আমাকে ধরতে।”
তিনজনের নামগুলো কয়েকবার জপে আহনাফ বলে,
“ইমন, মনসুর আর তকী৷ একটা ক্লু দেন তো।”
“ক্লু? কিসের ক্লু?”
“এদের নাম মিলিয়ে নিলে ইমতি হয়।”
পেছন থেকে কথাটা বলে ইমতিয়াজ নিজেই। দরজা খোলা থাকায় অনুমতি না নিয়ে সে ভিতরে প্রবেশ করেছে।
আহনাফ ওর দিকে ফিরে বলে,
“কারেক্ট, ইমতি।”
শরীফ কপাল কুঁচকে বলল,
“তার মানে ইমতিয়াজ কোনো একজন লোক না, কয়েকজন মিলে।”
“ইয়েস।”
শাফিন চিৎকার করে বলে,
“তোমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ইমতিয়াজ। মা°রো এখন।”
কেউ শাফিনের কথায় তেমন কোনো গুরুত্ব দেয় না। ইমতিয়াজ শরীফকে বলে,
“আপনি মৃত্তিকাকে নিয়ে বিবির বাজার গিয়েছিলেন। আমাকে সন্দেহ করেন ভালো কথা, কিন্তু তাই বলে মৃত্তিকাকে নিয়ে এদিক-সেদিক চলে যাবেন, সেটা তো আমি এলাউ করব না।”
শরীফ ওর দিকে এগিয়ে এসে বলে,
“তুমি কি করে জেনেছো আমরা বিবির বাজার গিয়েছিলাম?”
“পেছনে যে একটা অফিসের গাড়ি গেছে তা হয়তো খেয়াল করেননি।”
“তারমানে আমাদের ফলো করেছো?”
“না, করিয়েছি। মৃত্তিকার পিএ শিল্পা গিয়েছিল।”
ওদের কথার মাঝেই দরজায় দুবার নক পড়ে। ইমতিয়াজ জোর গলায় বলে,
“কে?”
আরেকবার ধাক্কা দিয়ে জবাব আসে,
“দরজা খুলেন নাহয় ভে°ঙে প্রবেশ হবে।”
ইমতিয়াজ দরজা খুলে দেয়। গালিব তার পুরো টিম নিয়ে এবং সাথে র্যাবের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা নিয়ে বাসায় প্রবেশ করে।
একজন অফিসার বলেন,
“শাফিনকে এখানে আ°টকে রেখেছেন কেন? এই তথ্য লুকানোর জন্য আপনাদের জে°ল জরিমানা হতে পারে, জানেন সেটা?”
আহনাফ মাথা নাড়িয়ে বলল,
“আইন সেটাতে আসবেন না, অফিসার। আইনের জ্ঞান ভালোই আছে। আমাদের অন্তত আছে, আপনার নেই বা আপনাদের নেই। যদি থাকতো, তবে ওই আইনের ফাঁক গলে বারবার এরকম কেউ বাইরে আসতে পারতো না।”
অফিসার উত্তর দেয়,
“শাফিনকে আমাদের হাতে তুলে দিতে হবে, তুলে না দিলেও আমরা নিয়ে যাবো।”
“শাফিনকে ক্র°স°ফায়ারের কথা বলেছিল?”
ইমতিয়াজের কথায় গালিব বলে,
“উপরতলা থেকে আদেশ এসেছে, তাকে জীবিত ধরতে হবে।”
ইমতিয়াজ হাত নেড়ে রাগিস্বরে বলল,
“তবে সে আবারো পালাবে। নিয়ে যান, সে পালাবে, আবারো খু°ন করবে, আবারো কোন নারীর শ্লীলতাহানি হবে।”
ওদের সামনে দিয়ে শাফিনকে নিয়ে যাওয়া হয়। ইমন, মনসুর, তকী- এই তিনজনকেও নিয়ে যায়। ঘর থেকে অপরূপা আর মমতাজ বেগমকেও নিয়ে যায়। শরীফ সকলের পিছু পিছু বের হয়ে যায়।
ইমতিয়াজ বলে,
“আমি বলেছিলাম শাফিনের মৃ°ত্যু আমার হাতে হবে। আমি এতো সহজে কথার খেলাপ করবো না, ও আজ ম°রবে আর না হলে কাল এর বেশি দেরি হবে না।”
রাস্তায় গাড়িতে তোলার সময় ইমন, মনসুর ও তকী- তিনজনকে নিশানা করে মোট ছয়টা গু°লি চালায় শরীফ, তারপর পালিয়ে যায়। ওকে ধরা সহজ নয়, সত্যিই পালিয়ে গেল।
নিচে এসে এই ঘটনা দেখে কিছুটা হতভম্ব হয়ে গেছে আহনাফ ও ইমতিয়াজ। এতটা ওরা কখনোই আশা করেনি। এখানে, বাসার সামনে, এভাবে শরীফ কাউকে মে°রে দিয়ে চলে যাবে, এটা সত্যিই ওদের কল্পনাতীত।
তবুও ওদের লা°শ নিয়ে যাওয়া হয়। শাফিন, অপরূপা আর মমতাজ বেগমকে দ্রুত গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়।
ইমতিয়াজ অফিসের গাড়িতে উঠে আহনাফকে বলে,
“তুমি বাসায় থাকো। বলা যায় না, এখানে আর কখন, কি হয়?”
“হুম, শরীফ সাহেব কি পাগল হয়ে গেলেন?”
“হয়তো।”
ইমতিয়াজ ওদের পিছু নেয়।
আহনাফও এখন এখান থেকে চলে যাওয়াটা নিরাপদ মনে করছে না, তাই সে বাসায় থাকে। শাফিনের আরো লোকজন বাইরে আছে, পাছে কখন হা°মলা হয় তার ভ°য় আছে।
বাসায় আসতেই দেখে সবাই ভী°ত। গু°লির শব্দ ওরা পেয়েছে। আহনাফ সকলকে কোনোমতে বুঝিয়ে তুমি এসে দেখে সারাহ্ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।
বারান্দা থেকে রাস্তার দৃশ্য দেখা যায়, সে সবটাই দেখেছে। আহনাফ রুমে আসতেই দূরে গিয়ে থাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।
“তুমি না এতো সাহসী মেয়ে, তবে কেন কাঁদছো?”
সারাহ্-র কান্না থামে না। থামার কথাও নয়, চোখের সামনে তিন-তিনজন মানুষ, একই সাথে মৃ°ত লা°শে পরিণত হয়েছে। বিষয়টা চোখে দেখার পর শান্ত থাকা কঠিন।
______________________________________
সকাল আটটা চল্লিশ মিনিট, হাসপাতালে এসে দীপের চেম্বারে যায় শরীফ। চেম্বারে ঢোকার সময় সে শুনতে পায়, দীপ কারো সাথে কথা বলছে,
“শাফিনকে এনি হাও বের করে আনো। শরীফ ওকেও মা°রার চেষ্টা করবে।”
শরীফ দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে বলে,
“আর তোমাকেও।”
চমকে উঠে পিছনে ফিরে দীপ। ফোন লাইনে রেখেই বলে,
“কি বলছেন?”
“যা শুনেছো।”
শরীফ আর সময় নষ্ট করে না। ছু°ড়ি বের করে দীপের গলায় ধরে ফোনে দেখে নিয়াজী নামে কারো সাথে সে কথা বলছিলো।
শরীফ জিজ্ঞাসা করে,
“কে এই নিয়াজী?”
“এডভোকেট বিথীর ভাই।”
“আরিফার অক্সিজেন সিলিন্ডার ফু°টো করেছে কে?”
“সিলিন্ডার ফু°টোই ছিল, গ্যাস বের হতে যা সময় লাগে তাই লেগেছে।”
ব্যস, আর কোনো কথা শুনতে শরীফ প্রস্তুত নয়। ছবিটা বেশ গভীর করে দীপের গলায় চালিয়ে নিয়ে। কা°টা মুরগির মতো ছটফট করে তার চোখদুটো অজানার পানে স্থির হলো।
তারপর ফোন হাতে নিয়ে নিয়াজীর উদ্দেশ্যে বলে,
“শাফিনকে আজ কোর্টে আনবে, চলে এসো।”
আহনাফের মতো সূত্র মিলিয়ে শরীফ বুঝে ফেলে নিয়াজীর নাম থেকেই ‘ইমতিয়াজ’ নামক গুচ্ছ নামটা এসেছে।
______________________________________
“আপনাদের চোখের সামনে দিয়ে শাফিনকে নিয়ে গেল। আপনারা শুধুই কি করলেন? চেয়ে চেয়ে দেখলেন। আমি চেয়েছিলাম, তার সামনে অপরূপাকে মে°রে তারপর তাকে মা°রতে। ঠিক যেভাবে মামকে মেরেছিল, সেভাবে সে ম°রতো।”
মৃত্তিকার কথায় ইমতিয়াজ কোনো জবাব দেয় না। দুজনেই কোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে৷ গতরাতে এই ঘটনা শোনার পর মৃত্তিকা অনবরত একই কথা বলে যাচ্ছে। মৃত্তিকা এখনো ইমতিয়াজের নাম নিয়ে বানানো গুচ্ছের কথা জানে না, তাই সে এখনো একে রহস্যই মনে করছে।
এদিকে বুলেট প্রুফ কালো গাড়িতে করে শাফিন ও মমতাজকে কোর্টে নিয়ে আসা হয়েছে। গাড়ির কাচগুলোও কালো, বাইরে থেকে ভিতরের কিছু দেখার উপায় নেই।
গালিব এসবে আর তুমি রাজি ছিল না। কিন্তু নিজের চাকরির খাতিরে, তাকে রাজি হতে হয়েছে। কিন্তু তার মনে এখনো একটাই প্রশ্ন ঘুরছে, ওর এই চাকরিটা কেন? অপরাধীদের শা°স্তি দেওয়ার জন্যই তো, তবে সে কেন জেনেবুঝে অপ°রাধীদের ছেড়ে দিচ্ছে?
অবশেষে ওরা কোর্টে পৌঁছায়। মৃত্তিকাকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে ইমতিয়াজ হেঁটে একটু দূরে এসে দাঁড়ায়। কালো গাড়িতে শাফিন আছে, এটাই ওর টার্গেট।
শরীফ সকলের মাঝে লুকিয়ে আছে। কালো গাড়িটাকে সেও নিশানাতে রেখেছে।
আহনাফও এখানে এসেছে। গালিবের উপর তার প্রচুর রাগ, সাথে প্রশ্ন জমে আছে। শাফিনের খোঁজ ওরা কি করে পেল? এতোদিন না পেয়ে কাল হঠাৎ কিভাবে?
এরমধ্যে তানজিম এসে হাজির হয়।
“কি অবস্থা ভাইয়া?”
আহনাফ মাথা নাড়ে। মেজাজ যে গরম আছে তা বোঝা যাচ্ছে। আহনাফ বলে,
“কি হলো এতদিন এত কিছু করে? সেই উপরতলার লোকজন শাফিনের সঙ্গই দিচ্ছে।”
“তুমি এ কথা বলছো। তবুও তো শাফিন ধরা পড়েছে। দেশে এমন অনেক কে°ইস আছে, যেখানে আ°সামি কে তাই জানা নেই।”
“গালিব জানলো কি করে শাফিনের খোঁজ?”
তানজিম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“আমার মাধ্যমে জেনেছে। কাল ওরা হাসপাতাল থেকে লোকগুলোকে অনুসরণ করেছে। আর তাতেই ধরে ফেলেছে। (একটু থেমে) আরিফা একজন যাবজ্জীবন দ°ণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিল। ওর যেহেতু মৃ°ত্যু হয়েছে, তবে ওখানে অনেক পুলিশের লোকজন ছিল। এইটুকু তো বোঝা উচিত ছিল শরীফ আংকেলের।”
“তুমি কেন বলেছো?”
আহনাফের কথায় রাগ স্পষ্ট। তানজিম জবাব দেয়,
“উপায় ছিল না। ধরে নিয়ে গিয়েছিল।”
হঠাৎ করে শোরগোল বেড়ে যায়। শাফিনের গাড়িটা বে°প°রোয়া ভাবে ছুঁটে চলছে। সকলের মাঝ দিয়ে গিয়ে ড্রাইভারকে বাইরে ফেলে গাড়িতে উঠে বসেছে ইমতিয়াজ। দ্রুত গতিতে স্টেয়ারিং ঘুরিয়ে আঁকাবাঁকা পথে সে গাড়ি নিয়ে পালায়।
“তোমাকে বলেছিলাম শাফিন, মৃ°ত্যু তোমার আমার হাতে। মৃত্তিকার ইচ্ছানুযায়ী ওর মামের মতোই ম°রবে তুমি।”
ডানহাতে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ রেখে, বামহাতে ছু°ড়িটা নিয়ে শাফিনের দিকে ছুঁ°ড়ে মা°রে। মমতাজ বেগম চিৎকার করে উঠে, হাত বাঁধা তার, কিছুই করতে পারে না। শাফিনের বুকে ছু°ড়িটা লেগে যায়।
সামনে একটা চৌরাস্তা দেখে ইমতিয়াজ দরজা খুলে চলন্ত গাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়ে। পিচঢালা রাস্তায় পড়ে বেশ অনেকটা পথ গড়িয়ে যায় সে। তার র°ক্তে পুরো রাস্তা রঞ্জিত হয়ে পড়ে। দূর থেকে ভেসে আসা সবগুলো চেঁচামেচির মাঝে সে মৃত্তিকাকে খুঁজতে খুঁজতে জ্ঞান হারায়।
গাড়িটা রাস্তার ব্যবধায়ক পেরিয়ে অপরপাশে গিয়ে আ°ছড়ে পড়ে। ধোঁয়া উঠা শুরু হয়েছে। ভিতরে কেউ বেঁচে আছে কিনা বোঝা মুশকিল। তবে ভিতরের দুজনের মধ্যেই প্রাণের অস্তিত্ব খানিকটা এখনো রয়েছে।
চলবে….
(এখনো কি রহস্য পরিষ্কার হয়নি?)