#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী
ষষ্টি পর্ব (৬০ পর্ব)
রাত অনেক হয়েছে। ঘরের সব কাজ সেরে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে শারমিলি। ছোট বাচ্চাটা এখনো কাঁদছে। তাকে কোলে তুলে শান্ত করে, শারমিলি তার কপালে চুমো দেয়।
দেড় বছরের মেয়ে তাহমিনা এখনো টিভি দেখছে। বাসায় নতুন রঙিন টিভি এসেছে। এসব তো এখনো বড়লোকদের জিনিসপত্র, কিন্তু লুৎফর তার মেয়ের জন্য নিয়ে এসেছে।
বাচ্চাকে দুগ্ধ পান করানোর জন্য প্রস্তুত হয়ে গলা ছেড়ে বড় মেয়েকে ডাকে শারমিলি,
“তাহমিনা মা, ঘুমাতে এসো।”
ওদিক থেকে কোনো জবাব আসে না। তবে দরজা খুলে ভিতরে আসে মমতাজ বেগম।
তাহসিনাকে নিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে শারমিলি। বেশ আরামেই তাহসিনা মাতৃদুগ্ধ পান করছে।
“আরে, মমতাজ যে। বসো, উনি এখনো আসেনি?”
মমতাজ বেগম মাথা নেড়ে বলল,
“না, লুৎফরের আসতে আজ দেরি হবে।”
“ওহ, জেগে থাকবে তুমি?”
“তুমি যেহেতু শান্তিতে ঘুমাবে, তাই আমাকে জেগে থাকতেই হবে।”
শারমিলি মুচকি হেসে বলে,
“আরে না, আমিও জেগে থাকতে পারবো।”
“কিন্তু আমি তোমাকে জেগে থাকতে দেবো না।”
মমতাজ বেগমের চোখের চাহনি শারমিলির খুব একটা সুবিধাজনক লাগে না। তাহসিনাকে সে আগলে নেয়। সরে যাওয়ার সুযোগ না দিয়েই মমতাজ বালিশ নিয়ে শারমিলির নাকে মুখে চেপে ধরে। দুইহাতে তাহসিনাকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় পা আ°ছড়াতে আ°ছড়াতে শান্ত হয় সে।
বালিশ সরিয়ে খোলা চোখদুটো বন্ধ করে মমতাজ। তাহসিনাকে নিজে নেড়েচেড়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। শারমিলিকে ঠিকঠাক করে শুইয়ে দিয়ে যায়, যেন মনে হয় সে ঘুমাচ্ছে।
নিরবে একটা খু°ন করে মমতাজ বেগম। ভাবখানা এমন যেন কেউ কিছুই দেখেনি, তবে দেখেছে একজন। সেই আল্লাহ্, তিনি সর্ব বিষয়েই অবগত।
কোরআনের আয়াত কি একবারও তার মনে হয়নি?
“তোমরা কি মনে করো যে,
(হিসাব-নিকাশ ছাড়াই) তোমাদেরকে এমনি ছেড়ে দেওয়া হবে?” (সূরা কিয়ামাহ, আয়াত ৩৬)
মমতাজ বেগম চমকে উঠে চোখ খুলেন। নিজেকে তিনি হাসপাতালের বিছানায় আবিষ্কার করেছেন। এতক্ষণ তবে তিনি স্বপ্ন দেখেছেন, নিজের পা°পের স্বপ্ন। কতটা ভ°য়াবহ হতে পারে, যদি আমরা নিজের সামনে নিজের করা পাপগুলোকে দেখতে পাই? এইটুকু চিন্তা করার মত সময় কি হবে?
শাফিন ও মমতাজকে একটা আইসিইউতে রাখা হয়েছে। একটা ক°ড়াকড়ি নিরাপত্তা চাদরে শাফিনকে আবৃত করে রাখা হয়েছে। সে এমন একজন আসামী, যাকে যেকোনো সময় যেকোনো কেউ মে°রে ফেলতে পারে।
ইমতিয়াজকে কেবিনে রেখেছে, অবস্থা গুরুতর নয় আবার খুব একটা ভালোও নয়। কাচের জানলা থেকে মৃত্তিকা ইমতিয়াজকে দেখে। নিজের জীবনের এতোবড় ঝুঁকি সে কেন নিলো? চোখদুটো কেঁপে উঠলো মৃত্তিকার, সেখানের সমুদ্র থেকে কয়েক ফোঁটা গড়িয়ে পড়লো।
নার্স এসে মৃত্তিকাকে বলল,
“আপনার হাসবেন্ড আপনার সাথে দেখা করতে চায়। খুব ধীরে উনার সাথে কথা বলবে।”
ইমতিয়াজের জ্ঞান ফিরেছে, সঙ্গে সঙ্গেই সে মৃত্তিকার সাথে কথা বলতে চেয়েছে। দ্রুত পায়ে ভিতরে আসে মৃত্তিকা।
ইমতিয়াজের কাছে যেতেই ইমতিয়াজ ওকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে। ইমতিয়াজকে একদম স্বাভাবিক লাগছে।
ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
“শাফিন কি জীবিত?”
মৃত্তিকা প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন করে,
“আপনি ঠিক আছেন?”
“হুম, শাফিনের খবর কি?”
“বেঁচে আছে আর ক°ড়া নিরাপত্তায় আছে।”
ইমতিয়াজ কিড়মিড়িয়ে উঠে,
“ইশ, আবারো বেঁচে বেরিয়ে গেল। একটা কাজ করতে পারবে?”
“কি?”
আশেপাশে তাকিয়ে বলল,
“সবাইকে বিশ্বাস করিয়ে দাও, আমি মা°রা গেছি।”
মৃত্তিকা অবাক হয়। এতক্ষণ ধরে তবে ইমতিয়াজ অসুস্থতার নাটক করেছে।
“আমি এতটা আহত হইনি যতটা হলে আমাকে আইসিউতে থাকতে হবে।”
মৃত্তিকা ওর গালে হাত দেয়।
“নিজেকে মৃ°ত কেন প্রুভ করতে চাইছেন?”
“কারণ জীবিত কেউ এখন শাফিনকে আর মা°রতে পারবে না, মৃ°ত কেউ পারবে।”
এমন মুহূর্তে ডাক্তার সুস্মিতা ভিতরে আসে, উনার সাথে পল্লবীও আছে। পল্লবী এসেছে ইমতিয়াজকে দেখতে।
“আপনি এখানে কি করছেন?”
মৃত্তিকাকে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে সুস্মিতা। ইমতিয়াজ হাতের ইশারায় উনাদেরকে চুপ থাকতে বলে। তারপর নিজের পরিকল্পনা নিয়ে কথা বললে দুজনেই তাতে রাজি হয়।
সুস্মিতার রাজি হওয়ার কারণ একজন জেল পলাতক আ°সামিকে সে কখনোই চিকিৎসা করতে রাজি নয়। শাফিনের নি°কৃষ্টতা সম্পর্কে সে পুরোপুরিভাবে অবগত আছে।
পল্লবী একটু ইতস্তত করেই রাজি হয়। ইমতিয়াজকে ঘুমের ওষুধ প্রয়োগ করে সাদা চাদরে ঢেকে দেয়া হয়।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝড়ের বেগে একটা কথা ছড়িয়ে গেল,
“ইমতিয়াজ মা°রা গেছে।”
শো°কে কাতর হওয়ার নাটকটা মৃত্তিকা ভালোই সামলে নিয়েছে। ইমতিয়াজকে নিয়ে যাওয়া হলো মর্গে। স্থবির হয়ে থাকা মৃত্তিকার পাশে এসে দাঁড়ায় সুরভি।
“একজন লোকের কারণে আর কতজন মা°রা যাবে? আর কতটা মন ভা°ঙবে?”
সুরভির কথায় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মৃত্তিকা। তারপর সে বেরিয়ে যায়। এখন ইমতিয়াজের কথা মতো কাজ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তবে ইমতিয়াজকে সেই অন্ধকার লা°শঘরে রাখতেও তার মন মানে না।
আসরের নামাজ পড়ে হাসপাতালে ফিরে এসেই ইমতিয়াজের মৃ°ত্যুর সংবাদ পায় আহনাফ। লুৎফর রহমান, তানজিম এখানে থাকলেও মৃত্তিকা নেই।
আহনাফের কপাল কুঁচকে গেল, স্বামী মা°রা গেছে স্ত্রী কোথায়। আর তাছাড়া ইমতিয়াজের অবস্থা এমন কোনো খারাপ হয়নি যে সে মা°রা যাবে। তবুও যদি ধরে নেয় মা°রা গেছে, তবে এতো দ্রুত কেন ম°র্গে নিয়ে গেল।
______________________________________
শরীফের ধানমন্ডির বাসায় এসেছে মৃত্তিকা। বিথীর কাছ থেকে পাওয়া সকল কাগজপত্র সে ভালো করে দেখছে। ঠিকই এসব ঘেটেঘুটে সে কিছু নাম পেল, সাথে ফোন নাম্বার, ঠিকানা ও ছবি।
জামিল, কবির, দুলাল, হুমায়ুন, ইমন, তকী, মনসুর- এরা সবাই মা°রা গেছে। মৃ°তের তালিকা এতোই বড় যে জীবিত কেউ আছে বলে মনে হচ্ছে না। অবশেষে পেল ডা: দীপের নাম্বার। কল দিয়ে জানতে পারলো, তাকেও আজ সকালে তারই চেম্বারে কেউ মে°রে ফেলেছে।
অবশেষে পেল আরো একটা নাম্বার নিয়াজী। কল করতে রিসিভ করে এক পুরুষ। মৃত্তিকা গলা ঝেড়ে বলল,
“মিস্টার নিয়াজী সাহেব বলছেন?”
“জি, বলছি।”
“আপনি ফ্রি থাকলে কিছু কথা বলতাম।”
“আমি ব্যস্ত।”
কল কে°টে গেল। মৃত্তিকা ঘেটেঘুটে আর কোনো নাম্বার পেল না। এরমধ্যে ইমতিয়াজ কল দেয়।
“ইমতিয়াজ? আপনি ঠিক আছেন?”
“হ্যাঁ, ঘুম ভাঙলো। পেলে কিছু?”
“হুম।”
“জলদি এসো, এতো এতো লা°শের মাঝে আমার নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে।”
ইমতিয়াজ ফোন রাখার সাথে সাথেই মৃত্তিকা নিয়াজীর তথ্যগুলো সংগ্রহ করে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে নিয়ে অপরূপার সামনে পড়ে, সাথে দুজন অচেনা লোক। এতো লোকের মাঝ থেকে অপরূপার উধাও হওয়াটা কি কেউ খেয়াল করেনি?
দরজা লাগিয়ে ঘুরতেই অপরূপাকে দেখে সে। কোনোরকমে ওদের ধা°ক্কা দিয়ে ফেলে মৃত্তিকা পালিয়ে যায়। দ্রুত বেরিয়ে এসে গাড়িতে উঠে। পেছনে হয়তো অপরূপা আছে।
তবুও সে হাসপাতালে ফিরে আসে। সুস্মিতার সাহায্য নিয়ে ম°র্গে এসে পৌঁছায়। ওকে পৌঁছে দিয়ে সুস্মিতা অন্যদিকে যায়।
দরজা লাগিয়ে ভিতরে এসে এতোগুলো লা°শ দেখে সে ঘাবড়ে যায়। সারি সারি ফ্রিজ আর তার উপর লাগানো নাম্বার আর নাম। সামনে কয়েকটা নতুন লা°শ, এরা হয়তো ফ্রিজে জায়গা হয়নি।
নিচুস্বরে ডাকে,
“ইমতিয়াজ।”
ইমতিয়াজের সারাশব্দ না পেয়ে মৃত্তিকা একে একে লা°শগুলো দেখতে শুরু করে। হঠাৎ হাতে টা°ন পড়ার লাফিয়ে সরে যেতে নিলে ইমতিয়াজ মুখের কাপড় সরিয়ে বলে,
“জোরে ডাকবে তো, ঘুমিয়ে গেছিলাম।”
মৃত্তিকা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
“পাগল আপনি? এভাবে কেউ হাত ধরে?”
ইমতিয়াজ উঠে বসে। বলে,
“বেশ ঠান্ডা লাগছে। (একটু থেমে) কি পেয়েছো তাই বলো।”
কাগজগুলো দিয়ে বলে,
“একজনই জীবিত আছে, নিয়াজী। ডা: দীপও আজ মা°রা গেছে।”
“তোমার বাবাই বোধহয় মে°রেছে, লোকটা পাগল হয়ে গেছে এক কথায়।”
মৃত্তিকা ওর হাত টে°নে বলে,
“বাইরে চলুন, আমার এখানে ভালো লাগছে না।”
ইমতিয়াজ শরীরের উপর থেকে চাদর সরায়। ওর পায়ে ব্যান্ডেজ করা। চলন্ত গাড়ি থেকে পড়ে গড়িয়ে গেছে, পায়ের উপর দিয়েই পুরো ধকল গেছে তার। হাতের অবস্থাও খুব একটা ভালো না।
“আমি হাঁটতে পারবো না, তোমাকে যেতে হবে।”
“এখানে আপনাকে রেখে আমি যাবো না।”
“বোঝার চেষ্টা করো, আমি বের হবো কি করে এখান থেকে?”
“যেভাবে ডেডবডি বের হয়।”
ইমতিয়াজ আবারো ধপাস করে শুয়ে পড়ে। মৃদু হেসে বলল,
“কি দিনকাল পড়লো? আমার বউ নাকি আমাকে কা°ফন পড়াবে?”
“এখনো আপনি মজা করছেন?”
ইমতিয়াজ ওকে টা°ন দিয়ে নিজের উপরে ফেলে বলে,
“একটু মজা করলেও দোষ?”
“এটা ম°র্গ ইমতিয়াজ।”
“আমি জানি।”
মাথা একটু উঁচু করে মৃত্তিকার নরম ঠোঁটে অধিকার বসায় ইমতিয়াজ। শীতল কক্ষে এমন উষ্ণ ছোঁয়ায় মৃত্তিকা বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছে। ইমতিয়াজের শরীরে থাকা নরম কাপড়টা খা°মচে ধরে সে, ওর নখের আঁ°চড় ইমতিয়াজের গায়েও খানিক পড়ে।
কিছুক্ষণ পর সুস্মিতা ভিতরে আসে। শব্দ শুনে দুজনে সরে যায়। বিষয়টা বুঝেও সুস্মিতা এড়িয়ে গেল, সবকিছু তো আর পাত্তা দিতে নেই।
সুস্মিতা ইমতিয়াজের সামনে একটা ব্যাগ রেখে বলে,
“তুমি এই পোশাক পড়ে নাও, তারপর বেরিয়ে যাও। মাস্ক দেওয়া থাকলে কেউ সহজে চিনতে পারবে না। আর এটা রেখো, হাঁটতে সুবিধা হবে।”
একটা ক্রাচ ওয়াকিং স্টিক ওকে দিয়ে শেষের কথাটা বলে।
ইমতিয়াজ তৈরি হয়ে নিলো। সাদা এপ্রোন, সার্জিক্যাল মাস্ক- সবকিছু মিলিয়ে তাকে একজন পারফেক্ট ডাক্তারের মত লাগছে। মৃত্তিকা আগে আগে বের হয়ে যায়।
পল্লবী এসে ইমতিয়াজকে বলে,
“বাস্তবতা বোঝার বয়স তোমার হয়েছে, এমন কিছু করো না যাতে সারাজীবন পস্তাতে হয়।”
ইমতিয়াজ মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। পল্লবী আবারো বলে,
“দেখো, শরীফ ভাইয়ের অবস্থা। উনার রাগের বশবর্তী হয়েই আজ তার এ অবস্থা হয়েছে। পাগল প্রায় হয়ে আছে সে। একের পর এক খু°ন করছে, নিজের জীবন ধ্বং°স করছে সে। জেনেবুঝে ধ্বং°স করছে। (একটু থেমে) তুমি এমনটা করো না, মৃত্তিকার জন্য ধৈর্য ধরো। আর তা নাহয়, নিজের সন্তানের জন্য তো করো।”
ইমতিয়াজ শক্ত কন্ঠে বলে,
“আমি জানি, আমি কি করছি। আমাকে বাচ্চা মনে করবেন না। আপনারা সাবধানে থাকবেন।”
ইমতিয়াজ হনহনিয়ে বের হয়ে যায়। চতুর্থ তলায় আহনাফকে দেখে তার সামনে গিয়ে বলে,
“নিচে আসো।”
চট করে কন্ঠটা ধরে ফেলে আহনাফ। এটা ইমতিয়াজ ছাড়া কেউ নয়। কথামতো নিচে চলে যায় সে।
অফিসের গাড়ি তৈরি আছে, আহনাফ আসলে ইমতিয়াজ জানলা থেকে ওকে বলে,
“বসো।”
শিল্পা ইউনুস গাড়ি চালানো শুরু করে। আহনাফ অবাক হয়, ভিতরে সে এক কথা শুনলো আর এখন অন্যকিছু দেখছে।
ইমতিয়াজ তাকে বলে,
“তুমি মৃত্তিকাকে নিয়ে নিয়াজীর এড্রেসে যাবে। নিয়াজী সেখানে আছে কিনা শুধু সেটাই দেখবে। আমি যেতে পারবো না, কারণ সবার চোখে আমি মৃ°ত। নিয়াজী তোমরা তিন জায়গায় খুঁজবে, এক তার বাসা, দুই অফিস আর শিল্পা হাসপাতালে থাকবে।”
আহনাফ কপাল কুঁচকে বলল,
“কিন্তু তোমার মনে হচ্ছে না এটা অসম্ভব একটা কাজ।”
“হতে পারে, তবে আমি একটা পরিকল্পনা করেছি।”
“কি?”
“তোমরা দুজন নিয়াজীর খোঁজ বের করবে, নিয়াজীর থেকেই জানা যাবে এখানে আর কেউ যুক্ত আছে কিনা। না থাকলে ভালো আর থাকলে তাদেরকেও ধরতে হবে। তবে চিন্তার কারণ শাফিন।”
ইমতিয়াজের কথায় আহনাফ একটা মৃত্তিকার দিক তাকিয়ে বলে,
“শাফিনের বুকের ডানপাশে ছু°ড়ি লেগেছে, বামদিকে লাগলে তখনই মা°রা যেতো।”
“সেটাই বলছি, ও যেন কোনোভাবেই বেঁচে না বের হয়।”
মৃত্তিকা ওদের কথা মাঝে বলল,
“অপরূপা তো পালিয়েছে। আমার পিছু পিছু বাসায়ও গিয়েছিল।”
“ওই মেয়ে যেভাবেই হোক পালাবে, এটা জানা ছিল। কিন্তু সে শাফিনের কাছে যাবেই যাবে।”
পরিকল্পনা এবারে কিছুটা পাকাপোক্ত, তবে কতটুকু কাজ করবে সেটাই দেখার পালা।
______________________________________
নিয়াজীর বাসায় সে নেই, তার অফিসেও তাকে পাওয়া যায়নি আর নাম্বারটাও বন্ধ। রাতে হতাশা নিয়েই আহনাফ ও মৃত্তিকা হাসপাতালে আসে। তবে এখানে ওরা নিয়াজীকে খুঁজে পায়।
শাফিনের আইসিইউর সামনে সে দাঁড়িয়ে আছে। পুলিশের মাঝ থেকে ওকে নেয়া যাবে না। ওরা একটা দূরত্বে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণ পরই নিয়াজী ভিতরে যায়। ইমতিয়াজকে কল করে গাড়ি তৈরি রাখতে বলে মৃত্তিকা।
শাফিনকে ঘুমের ওষুধ দেয়া হয়েছে। মমতাজ বেগম নিজের বিছানায় আছে। নিয়াজী তাকে বলে,
“কি হলো আপা? কিছু না। তোমার ভাই এবারে ফেল, কতগুলো বাচ্চার কাছে ফেল। কি ভাবছো? আমি তোমাদের বাঁচাবো? আমার নিজের প্রাণের ভ°য় আছে।”
মমতাজ নিষ্প্রাণ হয়ে তাকিয়ে বলল,
“তোমরা যে স্বার্থপর তা আমি জানি।”
“এতোকিছু কি স্বার্থের জন্য করোনি?”
“আমরা প্রতি°শোধ নিতে চেয়েছি আর তোমরা ধনী হতে চেয়েছো।”
নিয়াজী শাফিনের দিকে তাকিয়ে বলে,
“শাফিনকে কে বাঁচায় তা আমিও দেখবো।”
নিয়াজী বেরিয়ে যায়। হাসপাতাল থেকে বাইরে আসতেই আহনাফ হেসে তার কাঁধে হাত দিয়ে বলল,
“রেগে আছেন আংকেল?”
নিয়াজী ওর হাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
“কে আপনি? কি সমস্যা?”
“কোনো সমস্যা না, তবে ভাবছিলাম একটু ফিজিক্স পড়ানো যেতেই পারে।”
“মানে?”
“এই যেমন আপেল কেন মাটিতে পড়ে? কিন্তু চাঁদ কেন পড়ে না?”
“আজাইরা পেঁচাল।”
নিয়াজী চলে যাওয়ার আগেই মৃত্তিকা গাড়ি নিয়ে আসে। দরজা খুললে তাকে জোর করে ভিতরে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়া হয়। সুঠাম দেহী আহনাফ আর ইমতিয়াজের মাঝে তাকে বসানো হয়েছে।
নিয়াজীকে ইমতিয়াজের বাসায় আনা হয়েছে। এমনকি শিল্পাকেও বাসায় পাঠানো হয়নি, কাউকে একা ছাড়া যাবে না। বিশ্বাস নেই কারো উপর।
নিয়াজীর চেহারা আর শারিরীক ভঙ্গিতে বোঝা যাচ্ছে ধরা পড়েও কোনো চিন্তা নেই, সে হয়তো ধরেই রেখেছিল সে ধরা পড়বে।
“কি জানতে চাও তোমরা? একে একে অনেককেই তো ধরেছো, সবাই ছাড়া পেয়েছে।”
নিয়াজীর কথায় ইমতিয়াজ হেসে বলল,
“কেউ কেউ চিরস্থায়ী ছাড়া পেয়ে উপরে চলে গেছে। মানুষের জীবনের মূল্য তোমাদের কাছে এতোই কম যে চাইলে কাউকে মে°রে ফেলতে পারো?”
নিয়াজী সকলের মুখের দিকে একবার তাকিয়ে বলে,
“শরীফও বহু মানুষকে মে°রেছে। মা°স্তানি তো সেও করছে।”
আহনাফ দুই পকেটে হাত দিয়ে ধীরে ধীরে হেঁটে নিয়াজীর পেছনে গিয়ে তার ঘাড়ে পা দিয়ে মাথা নিচু করিয়ে বলল,
“ওসব বাদ দাও, আগে বলো তোমরা ছাড়া আর কে কে এখানে আছে।”
“ইমতিয়াজ আছে আর ইমতিয়াজ।”
“ঠিক ঠিক করে বলো।”
নিয়াজী হেসে বলল,
“ইমন, মনসুরকে মে°রেছে, তকীকেও মে°রেছে। বাকি আছি আমি, আমাকেও মা°রবে। মুখ খুললেও মা°রবে আর না খুললেও।”
ইমতিয়াজ স্বাভাবিকভাবে বলল,
“সত্য বললে কেউ মা°রবে না। প্রাণে বেঁচে যাবে।”
আহনাফ চিৎকার করে আরেকটু জোরে পা দিয়ে চেপে বলল,
“বলো, কে ওই পঞ্চম ব্যক্তি?”
মৃত্তিকা পাশের রুমে চলে যায়। নিরবে সে শিল্পার সাথে বসে থাকে, শরীর এখন আবারো খারাপ লাগছে।
নিয়াজী শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে বলল,
“এখনো বুঝোনি, কে পঞ্চম ব্যক্তি? পঞ্চম বলে কেউ আসলে নেই। আমরা পাঁচজন মিলে ইমতিয়াজ নাম তৈরি করেছি, তাই পঞ্চম বলা হয়।”
ইমতিয়াজ আহনাফের দিকে তাকিয়ে বলল,
“পাঁচজন মানে? আর কে আছে?”
“দীপ।”
নিয়াজীর কথায় আবারো ইমতিয়াজের প্রশ্ন,
“আমার নাম কেন ব্যবহার করা হয়েছে?”
“নামটা মিউকোর বিয়ের পর হয়েছে। শাফিন চেয়েছিল মিউকো তোমাকে মে°রে ফেলুক। এতোদিনে তা হয়েও যেতো যদি শরীফ বাধা না দিতো।”
আহনাফ চোখ ছোট করে বলে,
“ওর কথা বিশ্বাস করবো?”
“পুরোপুরি তো কখনোই না, তবে শোনা যায়।”
নিয়াজী আবারো হেসে উঠে। বলে,
“শরীফকে আগে থামাও, তোমরা না মা°রলেও সে আমাকে মা°রবে।”
আহনাফ পা সরিয়ে নেয়। ইমতিয়াজ দেয়ালের সাথে ধা°ক্কা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যতই সে ভালো থাকার চেষ্টা করুক, সে তো ভালো নেই। শরীরে অসংখ্য স্থান কেটেছে, ধীরে ধীরে য°ন্ত্র°ণা বাড়ছে।
পুরো রুম নিস্তব্ধ হয়ে যায়। পিনপতন নিরবতা ছিন্ন করে নিয়াজী বলল,
“রিপার মৃ°ত্যুর কয়েকদিন পরই শরীফ জানতে পারে রিপা স্বাভাবিকভাবে মা°রা যায়নি, এটা দু°র্ঘ°টনা নয়। সে তখন থেকেই নিজের লোকজন যোগাড় করেছে। একে একে অনেক ছেলেপুলে তার সাথে কাজ শুরু করেছে। সবাই কি ডাকাত, মা°স্তান? না, বেশিরভাগ সাধারণ স্টুডেন্ট।”
দুজনে চোখ কুঁচকে তাকায়। এ কি শুনছে ওরা?
“শরীফ শাফিনকে সন্দেহ করছিল, তাই তো সে মিউকোকে মামার থেকে নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা করেছে। যখন মিউকো রাজি হয়নি, তখন সে তোমাকে (ইমতিয়াজকে ইশারা করে বলে) চিঠি দিয়েছিল। সে জেনে গিয়েছিল ওরা মিউকোকে মা°রতে চায়।”
ওদের অবাক মুখে আরেকটা কথা ছুঁ°ড়ে নিয়াজী,
“সারাহ্-র বাসায় ইমতিয়াজের সাথে বিয়ের প্রস্তাব কে নিয়ে গিয়েছিল? আমি নিয়েছিলাম। জাহাঙ্গীর সাহেব রাজি হয়নি, কিন্তু শাফিন চেয়েছিল সারাহ্-র বিয়ে ইমতিয়াজের সাথে হোক। (একটু থেমে) ভেবেছিল, ইমতিয়াজকে অনুরোধ করবে বউ নিয়ে শাফিনের সাথে থাকার জন্য, এতে নার্গিসকে ব°শ করা সহজ হতো।”
ইমতিয়াজ চোখ কুঁচকে বলল,
“উনার সাথে আমার বিয়ের কথা হয়েছিল?”
“হ্যাঁ, তুমি তো মেয়ের ছবিই দেখোনি। সারাহ্ দুইবছর পর তোমাকে দেখেই চিনে নিলো, অবাক হওনি সেদিন বাসে। পরে অবশ্য জামিলের কথায় আহনাফের সাথে বিয়ে হয়, কিন্তু এতে শাফিনের উদ্দেশ্য হাসিল হয় না।”
কুমিল্লা থেকে ঢাকা আসার পথে সারাহ্-র সাথে দেখা হওয়ার খবর নিয়াজী কি করে জানে। সবকিছু খুলতে খুলতেও যেন পেঁচিয়ে যাচ্ছে।
নিয়াজী দাঁত কেলিয়ে বলল,
“বাসের একদম পিছনের সিটে দীপ আর ইমন ছিল। সেদিন সারাহ্-কে কি°ড°ন্যাপ করতে সেখানে ছিল ওরা, তোমার জন্য পারেনি।”
নিয়াজী কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে বলে,
“রোমির মেয়েকে কে মে°রেছে? শাফিন? উহু, দীপ মেরেছে। সম্পর্ক ছিল ওদের, মে°রে সম্পর্ক ভে°ঙেছে। মৃ°ত্যু কঠিন নয়, খুব সহজ।”
ইমতিয়াজ ফ্লোরে বসে পড়ে। এতো এতো ঘটনা ওদের জীবনে মিশেছে, অথচ সে এসব পাত্তাই দেয়নি।
“শাফিনের মৃ°ত্যু তোমাদের সবার মতো আমিও চাই। ওকে আমিই দোকানের কর্মচারী উমারকে দিয়ে হ°ত্যা করতে চেয়েছিলাম, পারিনি।”
আহনাফ ওর কাছে এসে বলল,
“শাফিনকে তুমি কেন মা°রতে চাও?”
নিয়াজী অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,
“কারণ শাফিন আমার সাথে বিশ্বাস°ঘা°তকতা করেছে।”
“কিভাবে?”
নিয়াজী জোরে জোরে বলে,
“কিভাবে আবার? আমি ওকে বিথীর খোঁজ দিয়েছিলাম, সব ধরনের সাহায্য করে রিপার করা কে°ইস থেকে বের করে এনেছিলাম আর সে কি করেছে? নিজে বের হয়ে আমাকে ফাঁ°সিয়ে জে°লে দিয়ে দিলো আর প্রাণের ভ°য়ে বিথী, আমার বোন, আমাকে বের করেনি। দুইবছর আমাকে জে°লে থাকতে হয়েছিল।”
ইমতিয়াজ আহনাফকে বলে,
“চিন্তা করো আহনাফ, দুইবছর জে°ল খাটার পরও ওই মানুষটার সাথে গিয়েই মিললো, আবার তিন তিনটা খু°নও করলো।”
“তিনটা না চারটা।”
ইমতিয়াজ উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“আর কে?”
“একটা ছেলে, যখন ওদেরকে দুলালের রিসোর্টের রুমে নিয়ে যাচ্ছিলাম তখন সে পিছু ধরেছিল।”
দুজনে আবারো চুপ হয়ে যায়। কে জানে ওই ছেলেটা কে ছিল? তার কি বা দোষ ছিল?
“শাফিনের সাথে না মিললে হুমায়ুন, দুলাল আর জামিলের মতো সে আমাকেও মে°রে দিতো। এখন দীপ আবার ওকে বাঁচাতে বলে। পারলে ওকে আইসিইউর ভিতরেই মে°রে দিবো।”
“তবে সেটাই করো, যাও আর ওকে মে°রে দাও।”
ইমতিয়াজের কথায় আহনাফ ওর দিকে তাকায়। ইমতিয়াজ আবারো বলে,
“আমি চাই না, আমার সন্তানকে কেউ খু°নির সন্তান বলুক। যেমনটা এখন সুরভির সাথে হচ্ছে।”
ইমতিয়াজ আস্তেধীরে হেঁটে রুমে চলে যায়। আহনাফ নিয়াজীকে বলে,
“ইমতিয়াজ চাইলেও আমি তা চাই না। তোমাকে ছাড়লে তুমি শাফিনকে বাঁচিয়েও নিতে পারো।”
ইমতিয়াজ মৃত্তিকার কাছে এসে বলে,
“কাল তোমার বাবাকে খবর দাও, উনি সবকিছু এতো আগে আগে কিভাবে জানে তা আমাকে একটু শিখাবে।”
মৃত্তিকা ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো। কিছু বলছে না সে। ক্ষ°তবিক্ষ°ত একটা দেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মানুষটা। এতো কষ্ট কি তার সত্যিই প্রাপ্য ছিল?
______________________________________
রাত সাড়ে বারোটায় বাসায় এসেছে আহনাফ। বারবার ওর ফোনে কল করে ফোন বন্ধ পাওয়া সারাহ্-র মন অস্থির হয়ে আছে। আহনাফ বেল বাজানোর সাথে সাথে সে দরজা খুলে দেয়।
আহনাফকে দেখেই জড়িয়ে ধরে। আহনাফ ওর পিঠে হাত বুলিয়ে বলল,
“কি হলো? আবার সাইদার আম্মু এমন করছে কেন?”
“সাদাবের আব্বু ফোন বন্ধ রেখেছে তাই।”
সারাহ্ সরে দাঁড়িয়ে ওকে ভিতরে আসতে দেয়। আহনাফ ড্রইংরুমে বসে পকেটে হাত দিয়ে টের পায় ফোন এখানে নেই।
“আমার ফোন কোথায় গেল?”
সারাহ্ এসে বলে,
“কোথায় গেল মানে?”
“নেই। একটু তোমার ফোনটা আনো তো।”
“আনছি।”
সারাহ্ ফোন নিয়ে আসলে আহনাফ বলে,
“ইমতিয়াজ বা মৃত্তিকার নাম্বার আছে তোমার কাছে?”
“মৃত্তিকার আছে।”
আহনাফ মৃত্তিকার নাম্বারে কল দেয়। ফোনের খোঁজ জানতে চাইলে মৃত্তিকা জানায় বাসায় দেখে জানানো হবে। পকেট থেকে এভাবে কেউ ফোন নিয়ে গেল আর ও টের পেল না।
সারাহ্ ওর পাশে বসে বলে,
“কি হয়েছে কো°র্টে আমি টিভিতে দেখেছি। এখন ইমতিয়াজ সাহেব কেমন আছেন?”
আহনাফ ওর দিকে তাকায়। মাথা নেড়ে বলে,
“হাঁটাচলা করতে পারতেছে। বেশি গু°রুতর কিছু না।”
“যাক, ভালোই। শাফিনের?”
“আইসিইউ, ইমতিয়াজ ছু°ড়ি চালিয়েছিল।”
“কই মাছের জান, সহজে ম°রে না।”
সারাহ্ উঠে রুমে চলে আসে। আহনাফ পিছুপিছু এসে বলে,
“তো সাইদার আম্মু সাদাবের আব্বুর জন্য এতো চিন্তা কেন করেছে? আর ঘুমায়নি কেন?”
“ঘুম আসেনা আমার..”
কথার মাঝে হুট করে সারাহ্ থেমে যায়। আহনাফ ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,
“কেন?”
সারাহ্ উত্তর না দিয়ে মিষ্টি করে হেসে বলে,
“খেয়ে নিবেন, আমি খাবার আনছি।”
______________________________________
মৃত্তিকা আহনাফের ফোন খুঁজছে। ডাইনিং-এ থাকা নিয়াজীর আশেপাশে ভালো করে খুঁজে। তারপর যায় গেস্টরুমে, যেখানে শিল্পা আছে। সেখানেও পায় না।
রুমে এসে দেখে ইমতিয়াজ পায়ের ব্যান্ডেজ খুলে কা°টা জায়গায় ওষুধ লাগাচ্ছে। সুস্মিতা ওকে ওষুধ দিয়ে দিয়েছিল।
ক্ষ°তস্থান দেখেই মৃত্তিকার গা গু°লিয়ে উঠে। ইমতিয়াজ ওকে বলে,
“চেয়ে চেয়ে কি দেখো? যা খুঁজতেছো, তাই খুঁজো।”
মৃত্তিকা এসে পাশে বসে। আলতো হাতে তুলা দিয়ে নিজের ক্ষ°তস্থানে ওষুধ লাগিয়ে দেয়। বলে,
“আমি ভেবেছিলাম আপনার পা হয়তো ভে°ঙেছে, যেভাবে বলেছিলেন হাঁটতে পারবেন না।”
“না, ভা°ঙলে হাঁটতে পারতাম না।”
ওষুধ লাগিয়ে মৃত্তিকা সব সরিয়ে রাখে।
“খাবেন কিছু?”
“না, এখন আর ইচ্ছা নেই। তোমার কোনো কাজ না থাকলে শুয়ে পড়ো।”
“আপনি ঘুমাবেন না?”
“না, নিয়াজীকে পাহারা দিতে হবে। আহনাফ হয়তো ঠিক, ও ছাড়া পেলে শাফিনকে বাঁচাতেও পারে।”
মৃত্তিকা আলো নিভিয়ে মিউকোকে নিয়ে অন্যদিক ফিরে শুয়ে পড়ে। ইমতিয়াজ ওর উপর দিয়ে গিয়ে মিউকোকে আদর করে।
মৃত্তিকা বলে,
“অপরূপার কি হবে?”
“শাফিনের ব্যবস্থা হলো, সব ব্যবস্থাই হয়ে যাবে। তবে তুমি নিজের হাত রাঙিয়ে ফেলবে না। বেবির জন্য হলেও খু°ন করবে না তুমি।”
মৃত্তিকা ফিরে ওর দিকে। বাইরে থেকে আসা মৃদু আলোয় ইমতিয়াজকে দেখে সে।
“এতোদিন আমি শাফিনকে মা°রতে চাইলেও আজ সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেছি। ওকে আমি নিজ হাতে মা°রবো না। কিন্তু সে ম°রবে।”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে ইমতিয়াজ ওর কপালে চুম্বন করে বলল,
“ঘুমাও।”
জানলার পর্দা টেনে ইমতিয়াজ ডাইনিং এ চলে গেল।
চলবে……