চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা #ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া #পর্ব-৩১

0
480

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৩১
৯৯.
লীলাবালি লীলাবালি
বড় যুবতী সই গো
বড় যুবতী সই গো
কি দিয়া সাজাইমু তোরে!

পুতুলের গায়ে লাল বেনারসি শাড়ি জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।মাথায় লাল ওড়না দেওয়া।মুখে হালকা মেক-আপ করতে বলা হয়েছিল।কিন্তু পুতুলের কথা তারা শুনে নিই।প্রচুর মেকআপ করায় তার আসল চেহারা লুকিয়ে গেছে।পুতুল মেকআপ পচ্ছন্দ করে না।মামার মুখের দিকে তাকিয়ে বিয়ের সব নিয়ম মেনে যাচ্ছে।তার ভিতর থেকে দীর্ঘ লম্বা শ্বাস বের হয়।পুতুল মন থেকে কেন খুশি হতে পারছেনা?এ কেমন কষ্ট হচ্ছে? পুতুল নিজেই বুঝতে পারছে না।ভেতরে অস্থিরতা কাজ করছে।তবুও মামার মুখের দিকে তাকিয়ে মিথ্যে হাসি মুখে লাগিয়ে রেখেছে।

তালুকদার বাড়িতে বিয়ের আমেজ পাওয়া যাচ্ছে।দিহানসহ তার পুরো পরিবার তালুকদার বাড়িতে।এখান থেকেই তারা বউ আনতে রওনা হয়েছে।তারা আনন্দের সাথে
সব কিছুতেই সামিল হয়েছে।অসীম তালুকদার ছেলের জন্য বাড়িতে রয়েছেন।আজ কয়েকদিন হলো ছেলেটা ঘর অন্ধকার করে বসে আছে।না কিছু বলছে।না ঘর থেকে বের হচ্ছে।অর্পণ যেমনই থাক।ঘর ছেড়ে সব সময় তার বাহিরে আনাগোনা বেশি ছিল।ঘর কম বাহির ছিল তার আপন দুনিয়ায়।সেই ছেলে ঘর থেকে নড়ছে না।ব্যাপারটা অসীম তালুকদারকে চিন্তায় ফেলেছে।

অর্পণ ঘর অন্ধকার করে তাকিয়ে আছে আকাশে দিকে।চোখ বন্ধ করে ছোট নিশ্বাস ফেলে বলতে লাগলো।

আমি তোমাকে পাওয়ার আশায় হয়তো ভালোবাসি নিই।আমি আমার ভালোবাসার মাঝে নিজের সুখ খুঁজেছি।নিজের এক তরফা ভালোবাসা দাবি নিয়ে কখনোই জোর করতে বা তোমাকে ভালোবাসতে বাধ্য করিনি।আমি আমার মতো করে তোমায় নিয়ে মনের মাঝে ছোট্ট সংসার সাজিয়ে ছিলাম।আমি জানতাম না।তোমাকে আমার পাওয়া হবে না।যদি জানতাম তবে চাইতাম না।এই এক পাক্ষিক ভালোবাসায় আমায় কাঁদায়।আমি না পারছি কষ্ট গিলে ফেলতে আর না পারছি ভুলে যেতে।এই পোড়া দহনে আমি পুড়ে পুড়ে অঙ্কার হচ্ছি।আমাকে রেখে দিতে তোমার মায়া।আমি শুধু তোমার হয়ে আজীবন থাকতাম।সব কিছুই সীমার মধ্যে থাকলে ভালো লাগে!কিন্তু আমি সীমাহীন ভাবে তোমাকে ভালোবাসি।আর ভালোবাসি ব’লে তোমার সুখে কাঁটা হব না।তুমি যেখানে থাকো।যার সাথে থাক সুখে থাকো।আমার মনের ছোট্র পিঞ্জিরায় তোমার নামটি সব সময় র’বে।আমি চাইলেও পারব না সবটা মুছে দিতে।বেদনায় এত সুখ আগে বুঝে নিই।আমার একপাক্ষিক ভালোবাসার গল্পটা তোমার জন্যই অজানা থাক।তুমি কোনোদিন জানবে না অর্পণ নামের কেউ তোমায় ভালোবাসত।খুব করে চাইতো।আমি আমার মনের কথা কোনোদিন কাউকে জানতে দিব না।এটা নিজের কাছেই নিজেকে ওয়াদা দিলাম।

১০০.
বধূ সাজে কনে ঘরে বসে আছে।বাহির থেকে শুনা যাচ্ছে বর এসেছে,বর এসেছে।মিলন,সাজু,এগিয়ে দুলামিয়াকে সাদরে গ্রহণ করার জন্য দুই দিক থেকে লাল ফিতা ধরে।যার মানে তাদের ডিমান্ড মেনে এই ফিতা কেটে বাড়িতে ঢুকতে হবে।তাদের চাহিদা ছিল পাঁচ হাজার টাকা।যেটা বর পক্ষ মেনে ফিতা কেটে ঢুকে।রিফাত এক গ্লাস শরবত এগিয়ে দিয়ে বলল।

আরে দুলামিঞা ভেতরে যাবেন।তার আগে এক গ্লাস ঠান্ডা শরবত খাইয়া যান।ট্রেতে করে সাত গ্লাসে সাত রকম শরবত দেওয়া হয়েছে।বর পক্ষ কনফিউজড।বরকে কোনটা খেতে বলবে?রিফাত চালাকি করে বরের হাতে একটা গ্লাস দিয়ে বাকিগুলো বর পক্ষের বন্ধুদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

মিলন ব’লে, এই শরবত যে খাবে না সে পস্তাবে।এ-তো স্বাদের শরবত মিস করেছেন তো মরেছেন।শরবত হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার থেকে ঠকঠক করে খেয়ে দেখান দেখি!
বর পক্ষ শরবত মুখে দিতেই একেক জনের চোখ,মুখের রং বদলে গেলো।সবাই এক চুমুক দিয়ে গড়গড় করে ফেলে দিল।কি বিচ্ছিরি খেতে?বরকে দিয়েছিল নিমপাতা শরবত।সে শরবত এক চুমুক দিয়ে গিলতে সাহস করেনি।মুখের মধ্যে নিয়ে বন্ধুদের রিয়াকশন দেখে নিজের রিয়্যাক্ট করতে ভুলে গেছে।

রেনু মেয়ে জামাইকে বরণ করে মিষ্টি মুখ করিয়ে দেয়।জামাই মিষ্টি মুখ ভয়ে ভয়ে করেছে।এই বুঝি আবার বিপদে পড়লো।কিন্তু তেমন কিছু হয়নি।বেচেঁ গেছে।স্বাধীন বরকে নিজ আসনে বসিয়ে চলে যায়।গ্রামের লোকেরা আশ্চর্য হচ্ছে।বোবা মেয়ের জন্য এত সুন্দর রাজপুত্র আগমন।তারা কি জেনেশুনে নিচ্ছে এমন মেয়ে।এত ভালো ছেলের জন্য নিশ্চয় মেয়ের অভাব হতো না।এরা মনে হয় ছেলে বাড়ির লোকদের ওপর জাদু করেছে।জাদু না করলে এমন সুপাত্র হাতে পায় কি করে?পাড়াপ্রতিবেশীর গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে।স্বাধীন সেইসব কানে তুললো না।বরং কাজিকে বিয়ে পড়াতে বলল।

জেভিন ছেলের কবুল বলাটা নিজ কানে শুনতে চাইলোনা।তার চোখে মুখে বিরক্তি।খুঁজে খুঁজে কনের ঘরে সামনে আসে।দরজা লাগিয়ে কনের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

যতই মুখে মেকআপ লাগাও না কেন?গলায় মালা দেও না কেন?ক্ষেতকে ক্ষেতই লাগবে।গাইয়া মেয়ে একটা।আমার হাসবেন্ড কি দেখে তোমায় পচ্ছন্দ করলো বুঝতে পারছি না?

পুতুল বিদেশি ফর্সা মহিলার কথায় কিছুই বুঝতে পারছে না।ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে রয়।পুতুলের চুপ থাকাটায় আরো বিরক্ত হয়ে জেভিন চলে যায় বারান্দায়।সেখানেই কিছু মহিলা পান খেতে খেতে পুতুলের কথা বলতে থাকেন।

যত চাই কও।বোবা মাইয়ার কপাল খুলছে।একে তোও বাপ,মা মরা মাইয়া।তার ওপর কথা কইতে পারে না।মামা এতিম ভাগ্নীকে বড়লোক ছেলের কপালে জুটিয়ে দিল। মনে হয় টাকার লোভে পড়ে।শুনছি,ছেলের বাপ,মায়ের মেলা টাহা,পয়সা আছে।
জেভিনের কানে এসব কথা আসতেই আকাশ থেকে পড়লো।গালে হাত দিয়ে বলল,

ওহ মাই গড।এত বড় ধোঁকা।এরা দেখছি চিটার,বাটপার।মেয়ের মামা আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলো।এদের টাকার প্রতি এত লোভ।না এই বিয়ে কিছুতেই হতে দেওয়া যাবেনা।এরা চালবাজ।আমি আজই এই বিয়ে ভেঙ্গে দিব।তার আগে পুলিশকে ফোন দিতে হবে।জেভিন পুলিশকে ফোন দিতে দিতে বিয়ের আসরে পৌঁছায়।

১০১.
বন্ধ করুন এই বিয়ে।জেভিন কথায় সবাই চমকে উঠে।দিহান এগিয়ে এসে ব’লে।

আজকে ছেলের বিয়েতে তুমি কি তামাশা শুরু করেছো?

তামাশা আমি নই।এরা করেছে।এদের জিজ্ঞেস কর।এদের কত টাকা চাই?টাকার লোভেই এসব করেছে?কত টাকা পেলে এসব নাটক বন্ধ করবে?পাঁচ লাখ।দশ লাখ,না-কি বিশ লাখ।

জে..ভি..ন।চুপ কর।

কেন চুপ করব?এরা ধোঁকাবাজ।বাটপার।চিটার।টাকা লোভে পড়ে বোবা মেয়েটিকে আমার সুন্দর হ্যান্ডসাম ছেলের গলায় ঝুলিয়ে দিতে চেয়েছে।আমি মা হয়ে এটা মেনে নিবো।একে তোও অশিক্ষিত চাষার গাইয়া মেয়ে।তার ওপর বড় লোক বাড়ির ছেলে দেখে গলায় ঝুলতে যায়।এদেরকে আমি পুলিশে দিব।

দিহান সাহেব নিজের বউকে যত চুপ করাতে চাইছেন।ততই তিনি হাইপার হচ্ছেন।বাড়ির উঠোনে গ্রামের মানুষের ভীর জমেছে।সবাই কানাঘুষা করছে।বাহিরে এত শব্দ শুনে পুতুল ঘর ছেড়ে বারান্দায় দাঁড়ায়।নিজের চোখের সামনে মামাকে বরযাত্রী লোকেরা অপমান করছে।এটা দেখেই কলিজা কেঁপে ওঠে।পুতুল দৌড়ে ছুটে আসে।মামা এবং বরযাত্রী লোকের মাঝে দাড়িয়ে যায়।

চোখের ভাষায় বলছে তাদের অপরাধ কি?

কিন্তু এরপর যে কথাগুলো চারদিক থেকে কানে এসে বিষফোঁড়ন ঘটায়।তাতে পুতুল আর পাঁচটা মেয়ের মতো চোখের পানি ফেলে নিই।বরং শক্ত চোখে তাকিয়ে রয়।দিহান সাহেবের সামনে দাঁড়িয়ে জানতে চায়।

আপনি জানতেন না আমি বোবা?কথা বলতে পারি না।পুতুলের চোখের ভাষাটা তিনি বুঝতে পারেনি।পুতুল একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ভাইকে খাতা,কলম এগিয়ে দিতে বলে।সাজু ছোট নোট বুক,আর কলম বোনের হাতে তুলে দেয়।পুতুল কলম দিয়ে লিখে সেটা দিহান সাহেবের চোখের সামনে ধরেন।

পুতুলের লিখাটা পরে তিনি চোখ নামিয়ে নেন।যার মানে তিনি জানতেন না।পুতুল মামার কষ্ট মাখা মুখটা দিকে না তাকিয়ে বরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

আপনি ও কি আপনার পরিবারের মতো সবটা জানতেন না।

পুতুলের লিখাটা পরে অন্তর না বলল।

তাহলে না জেনে।কোনো খোঁজ না নিয়ে একটা মেয়েকে বিয়ে করতে চলে আসছেন।এমনটা গল্প,সিনেমাতে হয় শুনেছি।আজ নিজের সাথে হতে দেখছি।পুতুল আবার লিখে সেটা বরের সামনে তুলে ধরে।

এখন আপনারা কি চান?

১০২.
আমরা বিয়েটা ভেঙে দিতে চাই।দেখো আমি বাবা-র এক কথায় তোমার কোনো খোঁজ না নিয়ে বিয়েতে মত দিয়েছিলাম।বাবার কাজে এতটা ভুল হবে আমি যদি একবার জানতাম। কখনোই রাজি হতাম না।একজন শিক্ষিত ছেলে হয়ে তোমাকে যদি বিয়ে করি।লোকে আমায় নিয়ে কটুক্তি করবে।যা আমার পক্ষে
হজম করা সম্ভব নয়।তুমি গ্রামের মেয়ে হওয়াতে আপত্তি ছিল।কিন্তু বাবা বুঝানোর জন্য কোনোরকম রাজি হয়েছিলাম।কিন্তু সেই মেয়ে বোবা হবে।আর এমন মেয়েকে বিয়ে করে বিদেশি বন্ধুদের এবং আত্মীয় স্বজনদের সামনে অপমান হতে চাই না।এমনিতেই কাজিনদের সামনে মান সম্মান শেষ।বিয়েতে ভাগ্যিস অনেক না আসায় বেঁচে গেছি।

বর পক্ষ বিয়ে ভেঙে দিবে শুনে রেনু শাড়ি আঁচলে মুখে গুঁজে কেঁদে ওঠে।স্বাধীনের হাত,পা ঠান্ডা হয়ে আসে।এসব কি হচ্ছে?তার ফুলের মতো মেয়ের গায়ে বিয়ে ভাঙার দাগ লেগে যাবে।সবাই নিন্দা করবে।এতো কষ্ট নিয়ে মেয়েটা বাঁচবে কি করে?
হে আল্লাহ রহম কর!তোমার অসহায় বান্দার প্রতি সহায় হও।

বিয়ে ভাঙ্গার সুর এতখন কানে আসছিল।এখন যেহেতু ছেলে নিজেই ব’লেছে।সে এই বিয়ে করতে পারবেনা।তখন এই কনে সাজে তাকে মানায় না।গলায় থাকা গোলাপ ফুলের মালাটা টেনে ছিঁড়ে ফেললো মাটিতে।

পুতুল ডায়েরিতে কিছু লিখে মামার হাতে কাগজটা খুঁজে দিলো।

মামা তাদের কষ্ট বাড়িয়ে আর লাভ নেই।তারা আমাদের বাড়িতে এসেছিল।না খাইয়ে পাঠিয়েও না।খাইয়ে মেহমানকে রাস্তার পথ চিনিয়ে দেও।

মেয়ের কথায় স্বাধীন নিস্তব্ধ।কি বলবেন কি করবেন বুঝতে পারছে না?মামাকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।নিজেই এগিয়ে আসে।দিহান সাহেবকে হাতের ইশারা দিয়ে বলল,

গরিবের বাড়িতে বড়লোকে আত্মীয়তা মানায় না।যদিও ভুলটা আমাদেরই বেশি।তাই সব অন্যায় মাথা পেতে নিচ্ছি।আমি মেয়েটা হয়ত ছোট্ট গ্রামের।কিন্তু আশাটা অনেক বড়।আজ আমাকে নিয়ে যে খেলাটা খেললেন।তা অন্য মেয়ের সাথে করতে যাবেন না।তাহলে তারা এমনই এমনই আপনাদের ছেড়ে দিবে না।আমার সাথে যেটা করলেন।সেটা আমি সারাজীবন মনে রাখব।আপনাদের অবজ্ঞা করার কথা আমার স্মরনে সবসময় থাকবে।
এখন আপনার আসতে পারেন।দরজা ওইদিকে।পুতুল,পূর্ব দিকের দরজা দিকে ইশারায় বুঝিয়ে বলল,তাদের বেরিয়ে যেতে।বর পক্ষ একে একে চলে যেতে নিলেই মিলন বরপক্ষ থেকে নেওয়া টাকাগুলো ফিরিয়ে দিল।

এটা আমাদের দুলামিঞা থেকে পাওয়া হোক ছিল।কিন্তু আপনি আমাদের দুলামিঞা নন।আমরা গরিব হতে পারি।কিন্তু ছোট্ট লোক নই।তাই এই বড়লোকদের টাকা আমাদের চাই না।অন্তরের হাতে টাকাগুলো দিয়ে দেয়।বর পক্ষর সাথে পাড়া প্রতিবেশী চলে যেতেই মিলন,সাজু মেইন গেটের দরজাটা মুখের ওপর বন্ধ করে দেয়।স্বাধীন মেয়ের এই পরিনতির জন্য নিজেকে দায়ী করছে।বিয়ের বাড়ির উঠোনে বসে কপালে হাত দিয়ে কাঁদতে থাকে।পুতুল দৌড়ে এসে মামার দুই চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বলল,

তুমি কেঁদো না।তোমার চোখের পানি দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়।আল্লাহ যা করেন তা আমাদের ভালোর জন্যই করেন।সবাই আমাকে কথা শুনাচ্ছে।কই আমি তোও এক ফোটা চোখের জল ফেলছি না।

চলবে….
আরেকটু বড় করে চেয়েছিলাম অন্তিম টানতে।কিন্তু গল্প শেষ করব শুনে শরীর আগে থেকে অনেকটাই ভালো হচ্ছে।তাই চিন্তা করলাম একেবারে শেষ করব।কোনো সিজন টু দিব না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here