চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা #ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া #পর্ব-৩২

0
350

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৩২
১০৩.
তালুকদার বাড়িতে বর পক্ষের সবাই হাজির।বউ ছাড়া সবাই ফিরে এসেছে।অসীম তালুকদার বন্ধুকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চান।কিন্তু তিনি মুখ ভাড় করে সোফায় বসে আছেন।জেভিন স্বামীর ওপর চিতকার চেচামেচি করে দোষারোপ করছে।

অন্তর মাথা নিচু করে বন্ধুদের সাথে টুকটাক কথা বলছে।

কি’রে দিহান ছেলে বিয়ে করেছে।আর তোরা মুখ ভার করে বসে আছিস কেন?ছেলের বউ কোথায়?বউমাকে সামনে আন।মুখটা দেখি।

যেখানে বিয়ে হয়নি।সেখানে বউমা আসবে কোথা থেকে?ওরা আমাদের সাথে চিট করেছে।আমাদের ধোঁকায় রেখে ছেলের গলায় বোবা মেয়েটিকে ঝুলিয়ে দিতে চেয়েছে।ভেবেছে পরে ভুঝুংবাঝুং বুঝিয়ে দিলেই বিশ্বাস করে নিবো।মগের মুল্লুক পেয়েছিল।জেভিন রওয়ার্ড কথায় অসীম তালুকদার দিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,

কোন বাড়ির মেয়ে?তুই তোও সবটা জেনেই বিয়েতে মত দিয়েছিলি।তাহলে বিয়ের আসর থেকে ছেলেকে নিয়ে চলে আসছি কেন?
একটা মেয়ের গায়ে কত বড় দাগ লাগলো বুঝতে পারছি?দিহান তুই বুঝতে পারছি না!

আশ্চর্য।আপনি ওই মেয়ের কথা চিন্তা করছেন।আর আমাদের কি সর্বনাশ হতে যাচ্ছিলো?তার বেলা কি হবে?আমি চাইছি ওদের পুলিশে দিব।মানহানি মামলায় আসামি করব!

ভাবী একটু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন। আপনারা নিজেরাই আগে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন।তাদের বাড়িতে গিয়ে তাদের কাছে সমদ্ধ রেখেছেন।তারা কিন্তু বিয়ে প্রস্তাব রাখেনি।আর রইলো,মানহানির মামলা ঠুকবেন।সেটা কিন্তু ভুলেও করতে যাবেন না।তাহলে আপনারাই উল্টো ফেসে যাবেন।কারণ বিয়ের পাকা কথা এমনকি বিয়ে আসর পর্যন্ত কনে এবং তার পরিবারকে আশা দিয়ে আপনারাই নিয়েছেন।সেই আসরে বিয়ে আপনারাই ভেঙে এসেছেন।কেন ভেঙেছেন?মেয়ে কথা বলতে পারেনা।হাই ক্লাসের দোয়াই দিচ্ছেন।কিন্তু একবার ভেবেছেন।ওই মেয়েটির কত বড় ক্ষতি হলো?আপনাদের ভুলের জন্য সে কি দ্বিতীয় বিয়ে করার কথা মাথায় আনবে?না,আনবে না।তার জন্য ব্যাপারটা সহজ নয়।তাকে প্রতিপদে কথা শুনতে হবে।বিয়ে আসরে যে মেয়েকে বরপক্ষ না করে দেয়।তারজন্য ভালো প্রস্তাব কি আর আসবে?খোজঁ নিয়ে দেখুন।তাঁকে নিয়ে গ্রামে গ্রামে এতখনে কথা রটে গেছে।সবার মুখে একটা কথাই থাকবে।
নিশ্চয় মেয়ের মধ্যে কোনো খুত ছিল।তাই বর পক্ষ বিয়ে ভাঙ্গছে।সে অপয়া,অলক্ষ্মী।তার জন্য শুভ কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়া বন্ধ। সে কোথাও থাকতে পারবেনা।সমাজ থেকে বিতারিত হবে।এসব কিন্তু তার জন্য সাধারণ সমস্যা নয়।কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি সে হতে চলেছে।সেইদিন আমার এই বন্ধু খুব আনন্দের সাথে আমাকে সবটা ব’লেছিল।আমি শুনে খুশি হয়েছিলাম।কিন্তু সে এটা বলেনি।মেয়ে বাকপ্রতিবন্ধী।কিংবা ছেলের সাথে মেয়ের আলাদা কথা বলতে দেওয়া হবে,বা হয়েছে।আর নিজে একটু আশেপাশে খোঁজ নিয়ে যাচাই- বাছাই করা।সেসব না করে এত দূর অবধি আগানো কতটা বোকামির কাজ ভাবতে পারছেন।আপনি ছেলের মা তাতেই আপনার মাথায় আগুন জ্বলছে।একবার ভেবেছেন।তাদের কি অবস্থা?

১০৪.

অসীম তুই আমার বন্ধু হয়ে ওদের কথা ভাবছিস।আমাদের দিকটা দেখছিস না।অনেকেই জানে ছেলের বউ নিয়ে আসছি।যখন বিদেশে যাব।তখন সবাই দেখবে বউ ছাড়া এসেছি।বিয়ে না হওয়ার ব্যাপারটা যখন লোকে জানবে তখন ছি,ছি বলবে।লজ্জায় আমার মাথা কাটাঁ যাবে।

ভাবতে চাই নিই।তুই ভাবতে বাধ্য করেছিস।
কেনো তুই সবটা না জেনে এত দূর অবধি গেলি।

বিশ্বাস কর আমি ওর সাথে সরাসরি কথা বলিনি।মেয়েটি সুন্দর আর মার্জিত,এবং কিছুটা শিক্ষিত এতটুকুই জানতাম।আমার দাদা চান মিয়া মেয়েটি সম্পর্কে সব বলেও মেয়েটি কথা না বলতে পারার ব্যাপারটি জানাননি।যখন আমার হাত ধরে কথা দিয়ে বললেন,মেয়েটিকে অন্তরের বউ করতে।মেয়েটা অসহায়,গরিব।তখন ভাবলাম।গরিব একটা মেয়েকে ছেলের বউ করলে মানুষের সহানুভূতি পাব।মানুষের ধারণা বদলাবে।

তাই নিজেই সবটা করে ফেললি।এখন আপসোস হচ্ছে।কারণ মেয়েটি অসহায় গরিব।আর তার ওপরের কথা বলতে পারেনা।আচ্ছা মেয়েটি কথা না বলার পিছনে ওর কি কোনো হাত ছিল।ওহ জম্ম থেকে না-কি কথা বলতে পারেনা।এটা ওপর ওয়ালার ইচ্ছা।সেখানে আমি,তুই, মেয়েটির কোনো দোষ দিয়ে লাভ নাই।

তাহলে তুই কি বলতে চাস?ওই মেয়েকে ছেলের জন্য আনতাম।আমার জন্য আমার ছেলের জীবন নষ্ট করে দিতাম।

না,আমি সেটা বলিনি।যা করেছিস সেটা ভুল করেছিস।অন্যায় করেছিস।এটা মানতে বলছি।স্বীকার করতে বলছি।

এতোই যখন দরদ।তখন আপনি আপনার ছেলের জন্য ওই বোবা গাইয়া মেয়েকে বউ করে আনুন।

ভাবি এখানে আপনার ছেলের সাথে মেয়েটির কথা আসছে।আমার ছেলের সাথে নয়।তবে হ্যা যদি কোনোদিন এমনও পরিস্থিতি হয়ে থাকে।কিংবা আমার ছেলে সবটা জেনে মেয়েটিকে গ্রহণ করে।তাহলে আমি তাঁকে সাদরে গ্রহণ করব।সেখানে থাকবে না কোনো মিথ্যার আশ্বাস।না থাকবে অবহেলা।

অসীম তালুকদার কথায় বিরক্ত হয়ে জেভিন বলল,

এখানে আর এক মুহূর্ত নয়।কাল সকালেই চলে যাব।

পুতুল টিউবওয়েল চাপিয়ে বালতি ভরে মাথায় পানি ঢালছে।মুখে সাজগোছ পানিতে ধূয়ে যাচ্ছে।এত রাতে পুতুলের সামনে রেনু দাঁড়িয়ে আছে।মেয়েটার মনে কি ঝড় বয়ে যাচ্ছে?রেনু বুঝতে চেষ্টা করে লাভ হলো না।ব্যথ চোখে তাকিয়ে ডাক দিল।

পুতুল এত রাতে গোসল করছো ঠান্ডা লেগে যাবে।পানি গায়ে আর ঢেলো না।চলে আসো।
পুতুলের গোসল সম্পূর্ণ করে কলপাড় ছেড়ে ঘরে যেতে নিলেই রেনু বলল,

তুই ঠিক আছিস।কষ্ট পাচ্ছিস।

পুতুল নিচু মাথাটা উচু করে মামীকে চোখের ইশারায় বলল,

আমি ঠিক আছি।আমি কষ্ট পাচ্ছি না।আমার সাথে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।সেসব ভুলে যেতে চাইছি।বিয়ে নিয়ে আমার মনে অনুভূতিগুলো এখন মৃত মামী।আমি আমার জীবনে আর কাউকে জড়াতে চাই না।আমার ছোট এই জীবনে সুখ পাওয়া থেকে না পাওয়া কষ্টগুলো বেশি।বাবা নামক মানুষটিকে ঘৃনার খাতায় সেই কবে লিখেছিলাম।মনে নেই।আজ নতুন করে আরো একটি ঘৃণার খাতায় নাম উঠে আসলো।সাথে এতটুকু বুঝতে পেরেছি।আমার কপালে ওসব ভালোবাসার মানুষ শব্দটা নেই।কেউ সবটা জেনে আপন করতে আসবে না।যদি কেউ ভুলে ওহ চলে আসে।তাহলে মনে রেখো।ভালোবেসে নয় করুণা করে গ্রহণ করছে।দয়া দেখাচ্ছে।

কিন্তু আমি তোও কারো করুণা,দয়া নিয়ে বাঁচতে চাই না।আমাকে যদি বাঁচতে হয়।তাহলে নিজের সাথে লড়াই করে বাঁচব।এই সমাজের মাঝে থেকে দেখিয়ে দিতে চাই।নিজে নিজেকে ভালোবেসে ওহ বেঁচে থাকা চায়।নিজের লক্ষ্য অবধি যাওয়া চায়।নিজের স্বপ্নটাকে পূরণ করা যায়।পুতুল চাদঁ বিহীন আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে আরো বলল,

আমি আমার আল্লাহ কাছেই সব কথা বলবো।যে যারা আমায় কাঁদায়।যারা আমাকে কষ্ট দেয়।তাদের যেন আমার আল্লাহ দেখে নেয়।

১০৫.
আজ সকালের সূর্য তার তেজ দেখাতে ব্যাস্ত।সূর্য সাহেব আজ কার ওপর রাগ দেখাচ্ছে বুঝতে পারছে না।অর্পণের মুখের ওপর সূর্যের আলো এসে পড়তেই উঠে বসে।কোথায় আছে মনে করতেই মনটা খারাপ হয়ে যায়।আজ সে অনেক দূরে।কাল রাতে গ্রামে থাকায় দম বন্ধ লাগছিলো।তাই একবুক কষ্ট নিয়েই কাউকে না জানিয়ে রাতের আধারেরই গ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরে আসে।সিদ্ধান্ত নেয়,সে ওই ছোট গ্রামে আর কোনোদিন ফিরে যাবেনা।কোনোদিন না।

তার ভালোবাসার মানুষটি আজ অন্য কারো ঘরে।সে অন্য কারো ভালোবাসার মায়া ডুবে।সে কোনোদিন জানবেই না।অর্পণ নামের কেউ তাকে খুব করে চাইতো।সেখানে না ছিল দয়া,আর না ছিল করুণা।একবুক নিঃস্বার্থ ভালোবেসেছিল।তার নতুন জীবনের জন্য অনেক অনেক দোয়া রইলো।সে তার নতুন জীবন সঙ্গী সাথেই খুশি থাকুক।আমি না হয় তার থেকে পাওয়া শেষ সৃতি টুকু আঁকড়ে বেঁচে থাকব।পকেট থেকে ছোট রুমালটা হাতে পেচিয়ে বেঁধে নিলো।পাঞ্জাবির হাতাটুকু নামিয়ে ডেকে দিলো।পুতুলের তৈরি নিজের নামটি পাঞ্জাবির হাতার ভিতরে লুকিয়ে রয়েছে।

ভালো থেকেও পুতুল।সুখে থেকো।

এইদিকে একজন নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে যাচ্ছে।সে জানতেই পারলো না।তার প্রিয় মানুষটি অন্য কারো হয়ে যায় নিই।অপরদিকে পুতুল নিজেকে তৈরি করছে নিজের লক্ষ্য অবধি যাওয়া জন্য।

স্বাধীন মেয়ের মুখোমুখি হওয়ার সাহস করতে পারেনি।কয়েকদিন ধরে মুখ লুকিয়ে ভোর হওয়ার আগেই গ্রাম ছাড়া হচ্ছে।আবার মুখ লুকিয়ে রাতের আঁধারের ঘরে এসে চুপটি করে শুয়ে পড়ে।রেনু স্বামীর কাজের জন্য কি বলবে বুঝতে পারছে না।মানুষটার মুখের দিকে তাকানো যায় না।কয়েকদিনে কেমন শুকিয়ে গেছে।মেয়ের চিন্তায় ঠিক মতো খায় না।ঘুমায় না।কেমন ছটপট করে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here