চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা #ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া #পর্ব-৩৩

0
456

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৩৩
১০৬.
পুতুলের বাপ,আমারে আপনি তালাক দিয়েন না।আমার মাইয়ার মুখের দিকে তাকায় রহম করেন।আমি না খাইয়া আপনারর সংসারে আমার পুতুলের নিইয়া আপনার সাথে সারাজীবন থাকুম।তবুও আমারে তালাক দিয়েন না।আমি মইরা যামু।

আজকেই তোরে তালাক দিমু।তুই আমার সামনে আমার মায়ের মুখে মুখে কথা কস।
এক তালাক,দুই তালাক,তিন তালাক বলেই মোস্তফা বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগেই রাজিয়ার কোমড়ে জোরে লাথি মেরে চলে যায়।মোস্তফা মুখে তালাক দিতেই রাজিয়া আল্লাহ গোও ব’লে ওখানেই জ্ঞান হারায়।

পুতুল,তোর বাপ আমারে তালাক দিছে।এরপর কেমন থাকুম তার সংসারে?তুই ক?আমি তো এখন পরগাছা।এত ভালোবাসার প্রতিদান আজ বুঝি পাইলাম।বাপ,ভাইয়ের মনে কষ্ট দিচ্ছিলাম না।তার ফল আমি পাইছি।চল,এখান থেকে চইলা যাই।তোরে রাইখা গেলে মা*ইরা ফেলাইব এরা।আমি বাঁইচা থাকতে তোরে এহেনে রাইখা যামু না।মা রা*রি হয়েছি তো কি হইছে?তুই আমার কলিজা মধ্যে থাকবি।আমি তো মা,চাইলেও তোরে ফালাইয়া দিতে পারুম না।এই আল্লাহ দুনিয়ায় কোথাও না কোথাও ঠিক ঠাঁই হইবো,আমগো মা,বেটির।

কালো রাতের আঁধারের ঘুমিয়ে আছে পুতুল। মায়ের পুরোনো কথা এবং দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে।ঘুমের মধ্যে পুতুল অস্থিরতাবোধ করে।ঘুম ভেঙ্গে যায়।কপালের ঘাম টুকু মুছে আকাশের চাঁদটির দিকে তাকিয়ে ডাকে।
মা,ওমা তুমি না আমাকে তোমার বুকে টেনে ব’লেছিলে।তোমার হাতটা কখনো আমার মাথার ওপর থেকে যাবে না।আজ কতগুলো দিন চলে গেছে।তুমি আমার পাশে নেই।তোমার কান্না,তোমার কথাগুলো আজ-ও আমার কানে লাগে।আমি চাইলেও তোমায় ভুলতে পারিনি।মা আমি বড্ড ভেঙে পড়েছি।পুতুল কাদঁতে চায় কিন্তু পারেননা।আমার মনটা আমায় দূর্বল করে।মন ব’লে তুমি পারবে না।আর মস্তিষ্ক ব’লে তোমাকে পারতেই হবে।পুতুল তুমি পারবে।এই লড়াই তোমার একার হলেও এখানে তোমার মা,এবং মামা,মামীর প্রতিদান বেশি।তাদের জন্য আজ তুমি ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন বুনো।তারা ছিলো ব’লে তোমার গল্পটা অন্য রকম হ’য়েছে।আর পাঁচটা মেয়ের মতো নরম মাটি তুমি নও।সব জায়গায় কেঁদে বা ভয় পেয়ে হে’রে যাওয়ার গল্পটা তোমার হয়নি।এক অন্য তুমিই জম্ম নিয়েছো।এক অসীম সাহস রাখো।তুমি পারবে পুতুল তুমি পারবে।

১০৭.
অর্পণ মিটিংয়ে রুমে বসে আছে।প্রত্যেকের ফোন সাইলেন্ট রাখা হয়েছে।মিটিং রুমে পার্টির লোকেরা এসেছে।তারা বিভিন্ন আলোচনায় ব্যাস্ত।কিন্তু অর্পণ কেমন যেন গুরু গম্ভীর মুখে বসে আছে।পার্টির সবার কথা বসে শুনছে।কখনো হুম,হা বলে মত দিচ্ছে।অর্পণ এত চুপচাপ হয়ে যাওয়া।দলীয় পার্টির লোক কামরুজ্জামান চৌধুরী বিষয়টা অনেকখন ধরে দেখছে।গরম চায়ে তার জিহ্বা পুড়ে।তাই একটু আগে আনিয়ে রাখা ঠান্ডা চায়ের কাপে আরামসে চুমুক দিয়ে বলল,

অর্পণ।কি ব্যাপার?আজ এত চুপচাপ কেনো?কোনো সমস্যা?সমস্যা হলে বলতে পারো।
কামরুজ্জামানের কথায় সবাই অর্পণের দিকে তাকিয়ে রয়।অর্পণ নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক রাখা চেষ্টা করে কিন্তু পারেনি।গম্ভীর এবং মোটা স্বরে বলল,

কিছুই হয়নি।আমি ঠিক আছি।প্লিজ মিটিং কন্টিনিউ রাখুন।

আজ কয়েকদিন ধরে অসীম তালুকদার ছেলেকে লাগাতার ফোন করেই যাচ্ছেন।কিন্তু ছেলে তার ফোন তুলছে না।আর না বাড়িতে ফিরে আসার কথা মাথায় আনছে।ছেলের বিহেভিয়ার জন্য অসীম তালুকদার অসন্তুষ্ট হন।

মিটিং শেষ হলেই অফিস রুম থেকে বেরিয়ে আসে।এগিয়ে যায় গাড়ির দিকে।পেছনে বসেই ড্রাইভারকে কলেজের দিকে নিতে বলে।পকেট থেকে ফোনটা বের করে সামনে ধরতেই চোখের সামনে বাবার একশ পাচঁটা মিস কল ভেসে উঠে।কিন্তু বাবাকে দ্বিতীয়বার ফোন করার চিন্তা করে না।শুধু হাতে আঙুলের সাহায্য কি-বোর্ড চাপে।ছোট একটা ম্যাসেজ বাবার কাছে পাঠিয়ে দিয়ে ফোনটা পকেটে ভরে রাখে।

কলেজে নবীন বরণ হচ্ছে।পুতুল প্রথমে আসতে চায় নিই।কিন্তু না এলেও গ্রামের মানুষ কথা শুনাতো।ভাবত বিয়ে ভাঙ্গার জন্য ঘরে খিল দিয়েছি।এক কথা থেকে পাঁচ কথা ছড়াবে।তাই নিজেকে তৈরি করে একদম পরিপাটি হয়ে নিজ কলেজের জন্য বের হয়।মামাকে সাথে আনতে ভুলে নিই।তাকে জোর করে নিয়েই বেরিয়েছে।কলেজ গেইটে অবধি মামা তাকে নামিয়ে অন্য একটা কাজে চলে যায়।এইদিকে অর্পণ কলেজের প্রধাণ অতীত হয়ে এসেছে।তার সাথে কামরুলজামান এমনকি দলের ছেলেরা রয়েছে।অতিথি হিসেবে নিজ আসন গ্রহণ করতেই চোখে পরে তৃতীয় সারিতে বসে থাকা পুতুলের দিকে।সে মনযোগ দিয়ে মাইকিংয়ে বলা কথাগুলো শুনছে।অন্য দিকে তার নজর নেই।এইদিকে অর্পণ চমকে উঠে।একপলক তাকিয়ে চোখ সাথে সাথে সরিয়ে নেয়।অন্য কারো বউকে দেখা উচিত নয়।বিয়ে হতে না হতেই মেয়েটা কলেজে চলে আসলো।মনে হচ্ছে সে স্বপ্ন দেখছে।হ্যাঁ,স্বপ্নই হবে।

আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।তাই ভুলভাল দেখছি।পুতুলের দিকে আর একবারও না তাকিয়ে অনুষ্ঠান দ্রুত শেষ করার তাড়া দিল।তার এসব ভালো লাগছে না।সে বের হতে পারলেই যেন বেঁচে যায়।

পুতুলের গায়ে বাসন্তী শাড়ি।মাথায় কালো ওড়না দিয়ে হিজাব পরিধান করা।হাত দু’টোতে রেশমি কাঁচের চুরি।অনুষ্ঠান এখনো শেষ হয়নি।পুতুলের অতিরিক্ত গরম লাগছে তার ওপর মন ভালো লাগছিল না।তাই চলে আসে।কলেজ প্রাঙ্গনে পিছনের দিকটায় এসে দাড়িয়ে রয়।এইদিকে অর্পণের ফোনে জরুরি কল আসে।নিরিবিলি একটুও কথা বলার জন্য কলেজের পিছনে চলে আসে।নিজের ফোনে কথা শেষ করে চলে যেতেই নিলেই আবার চোখের সামনে পুতুলকে হাঁটতে দেখে।ভাবে এটা তার কল্পনা।

নিজের চোখ দুটো হাত দিয়ে চুলকে আবার তাকিয়ে দেখে।না এটা সত্যি। পুতুল এইদিকেই আসছে।পুতুলকে দেখে তার বুকটা ধরপর করে উঠে।বুকের বাম পাশে হাতটা দিয়ে বুকটা শক্ত করে চেপে পালাতে চায়।কিন্তু বেচারা অর্পণ।পালাতে গিয়ে ঠাসস করেই পুতুলের পায়ের সামনেই পরে গেলো।

এইদিকে পুতুল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পরে।চোখের সামনে এমপি সাহেবকে মাটিতে পরতে দেখে হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না।পুতুল এগিয়ে আশার আগেই অর্পণ তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে।নিজের হাত দিয়ে পাঞ্জাবিতে থাকা ময়লা পরিষ্কার করতে করতে বলল,

এভাবে তাকিয়ে থাকার মানে কি?জীবনে ছেলে দেখো নিই।এমপি সাহেবের কথায় পুতুল চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রয়।

আবার চোখ বড় বড় করে তাকায়।তুমি কি চোখ দিয়ে ঘায়েল করার ধান্দায় আছো?

পুতুল মাথা নাড়িয়ে না ব’লে।

ওহ বাবা আবার মাথা নাড়িয়ে না বলা হচ্ছে।এই তুমি গ্রাম ছেড়ে এখানে কেনো এসেছো?আমাকে জ্বালাতে,পুড়াতে।তুমি কি বুঝতে পারো না?তোমাকে দেখলেই আমার বুকের ভিতরে অসয্য জন্তনা করে।তুমি আমার সামনে আর কখনোও আসবে না।তোমার জন্য আমাকে পুড়তে হয়।আমি তোমার জন্য আর পুরতে চাই না।দূরে থাকো।স্বামী,সংসার নিয়ে ভালো থাকো।অর্পণ রেগে হনহন করে চলে যায়।পুতুল হা করে তাকিয়ে আছে।এই লোকটা তাকে কি বলল?তার জন্য পুড়ে।কিন্তু কেন?পুতুল আবার কিছু ভাবতে নিলেই অর্পণ তার সামনে আবার এসে দাড়ায়।তার দিকে এক ধ্যাণে তাকিয়ে বলল,

তুমি সত্যি এসেছো?না-কি এটা আমার কল্পনা।যদি কল্পনা হও।তাহলে চোখের সামনে থেকে দূর হও।আমার সামনে আসলেই গুলি করে দিব।

অর্পণ গুলি করে দিবে।এই কথাটা কানে আসতেই পুতুল ঘাবড়ে গেলো।শাড়ির আঁচল ধরে যে পথে এসেছে সেই পথ দিয়ে দৌড়ে চলে যায়।পুতুলের দৌড় দেখে এমপি সাহেব হা করে তাকিয়ে বলল,

এই মেয়ে সত্যি এসেছে।বজ্জাত মেয়েটা আমায় আর শান্তি দিবে না।

১০৮.
অনেকদিন পরে ছেলে নিজ থেকে তাঁকে ফোন করছে ভাবতেই অবাক হয়।অসীম তালুকদার ছেলের ফোন পেয়ে কানে তুলেন।

তোমরা আমার জাত শত্রুর।গ্রামে থাকতে দিবেনা।শহরে আসলেও জ্বালাবা!কেন বাপ?তোমরা আমারে জ্বালানোর জন্য এত উতলা কেন?আমাকে পুড়াতে এত তেল কই পাও?কে দেয় এত টাকা?তোমার বাপ।কিন্তু বুইড়া মরছে উনিশ কটকটি সালে।সে মইরা আমার কপালে তোমারে জুটাইয়া দিয়া গেছে।খবিশ বাপের পোলাটা খবিশ হইছে।তার ঘরে খবিশের বাচ্চা অর্পণ তালুকদার।

এতদিন পরে ছেলে ফোন দিয়েছে।কোথায় সালাম টালাম দিবে।তা না করে কি উল্টাপাল্টা কথা বলছে?অসীম তালুকদার ছেলেকে বলল,

তোমার মাথা ঠিক নেই পড়ে কথা বলো।

আমার মাথা ঠিকই আছে।তোমার ইয়ার গিয়ারে বন্ধুটা কই?তার ছেলেকে বিয়ে করিয়েছে।খুব ভালো কথা।কিন্তু বিদেশে মাটিতে না গিয়ে এখানে কি করছে?

কোথায় আবার চলে গেছে?আর ওর ছেলের বিয়েটা হয়নি।

বিয়ে হয়নি মানে?

হয়নি,মানে হয়নি।অসীম তালুকদার একে একে পুরো ঘটনা বলতেই অর্পণের মনটা খারাপ হয়ে যায়।এতকিছু হয়েছে আর সে জানেই না।পরমুহূর্তেই মুখে হাসি ফুটে।ইয়াহু ব’লে চিৎকার করে উঠে।ফোনের ওপাশে ছেলের হঠাৎ চিতকারে অসীম তালুকদার ভয় পেয়ে যান।বুকে থু থু ছিটান।ধমক দিয়ে বলল,

ইয়ার্কি হচ্ছে।এত সিরিয়াস মোমেন্ট তুমি ফাজলামো কর আমার সাথে।আমি তোমার বিয়াইন লাগি।

আস্তগফিরুল্লাহ।তুমি আমার একমাত্র বাপ লাগো।বিয়াইন হবে কেন?আচ্ছা এখন ফোন রাখছি।পরে কথা বলব।

অর্পণ খুশিতে মনে হয় পাগল হয়ে যাবে।পকেটে ফোনটা রেখে দৌড়ে এদিক থেকে ওদিকে ছুটে যায়।কোথাও পুতুলের দেখা না পেয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দেয়।পুতুল এতখন আবৃতি শুনছিল।হঠ্যা অর্পণের চোখে চোখ পড়তেই চোখ নামিয়ে ফেলে।আর অর্পণের ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটে।প্রিয়তমাকে আবার ফিরে পাওয়ার আশায় হাতটা বুকে রেখে দিল।

চলবে…
তুমি কি নিষ্ঠুর লেখিকা?রাজিয়াকে মারছো কেন?মিলনের সাথে তার মায়ের কোনো সংযোগ নেই।সে জানেই না।তুমি তাকে মে*রে ফেলছো।তোমায় শূলে চড়াব।পাঠকের মন্তব্য পড়ে আমি আপসোস করছি।ইস আমি কি নিষ্ঠুর?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here