প্রিয়াঙ্গন #পার্ট_২৮ জাওয়াদ জামী জামী

0
221

#প্রিয়াঙ্গন
#পার্ট_২৮
জাওয়াদ জামী জামী

” নানিমা, সারপ্রাইজের জন্য তৈরী থাক। তোমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সারপ্রাইজ আসতে চলেছে। নানা ভাইও তোমাকে এমন সারপ্রাইজ কখনোই দেয়নি। ” তাহমিদ ফাতিমা খানমের ডান হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে মৃদু গলায় বলল।

” বাপজান, তোমার নানা ভাই সারাজীবন চাকরি আর ছেলেমেয়েদের ভালো রাখবার জন্য খাইটা গেছে। তার কি সারপ্রাইজ দেওনের সুযোগ আছিল। ”

ফাতিমা খানম দু’জনের কথপোকথন শুনে হাসছেন। এই নাতিটিকে তিনি জীবনের অধিক ভালোবাসেন। ছোট থেকে কম কষ্ট পেয়ে বড় হয়নি ছেলেটা। তারপরও সে একজন আর্দশ মানুষ হয়ে গড়ে উঠেছে। এই নাতিকে তিনি বরাবরই গর্ব করতেন। আর এখনো করেন।

” ছেলেমেয়েদের জন্য পরিশ্রম করে সে কি পেয়েছে? আর নানিমা’ই বা কি পাচ্ছে! মেয়েরা যে যার মত সংসার করছে। ছেলে থেকেও নেই। একটা মেয়েরও সময় নেই মায়ের কাছে দুদণ্ড বসার। মা’য়ের ভালোমন্দ খোঁজ নেয়ার। কি লাভ হয়েছে সম্পদের পাহাড় গড়ে? যাহোক এখন এসব কথা থাক। খালা, তুমি নানিমাকে তৈরী করে রেখ। আমার নানিমাকে আজ হিরোইন লাগা চাই। ”

” আম্মারে নাহয় তৈরী করাইলাম। কিন্তু এই বয়সে কি তারে হিরোইনের মত লাগব! তুমি এখন নিজের হিরোইনের না ভাইবা নানিরে নিয়া মাতছো কেন? শ্বশুর বাড়ি থাইকা বেড়ায় আইসা, সেখানকার গল্প শুনাইলানাতো। আমার কুহ মা কেমন আছে সেটাও কইলানা। ”

” আগে বউটাকে ঘরে তুলি, তারপর নাহয় শ্বশুর বাড়ির গল্প শোনাব। তোমার মায়ের দিক থেকে যখন গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে গেছি, এবার আর দেরি করবনা৷ আজতো তোমার মা গ্রাম থেকে ফিরছে। তোমাদের জন্য নাকি সে কিসব নিয়ে আসবে। তার ফুপু বললেন, তিনি পিঠাপুলি পাঠাবেন তোমাদের জন্য। শোন তাকে বলো আজ যেন কোচিং-এ না যায়। আজকে ক্লাস না নিলেও তার চলবে। আমি বাহির থেকে এসে তাকে বাসায় দেখতে চাই। ”

” মা আসলে নাহয় তারে কইয়া দিমুনে। কিন্তু তুমি আবার কই যাইবা, বাপজান! কাইল গ্রাম থাইক আইসা সেই যে বাহিরে গেলা, আসলা কত রাইতে। আবার এখন কই যাইবা? কতদিন পর আসছো একটু আমাদের কাছে বসবানা। আর একটা শুইনা রাখ, বিয়া যখন করবাই, তখন দেরি করা চলবনা। যত তারাতারি পার বিয়া কইরা নিবা। ” রাজিয়া খালার গলায় অভিমান টের পায় তাহমিদ। সে স্মিথ হেসে খালাকে জড়িয়ে ধরল।

” খালা, আমি একটু কাজে যাচ্ছি। নানিমাকে সারপ্রাইজ দিতে হবে তো। ঘন্টা তিনেক পরই চলে আসব। তারপর তোমাদের সময় দেব। প্রমিজ করছি। আর দুইমাস পর তোমার বাপজান বিয়ে করছে, এটা মোটামুটি শিওর। এখন থেকে প্রস্তুতি নাও। নানিমা, তুমি কি বল? ”

তাহমিদের কথা শুনে বৃদ্ধা হাসলেন। তার সম্মতি বুঝতে বাকি থাকলনা তাহমিদের। কিন্তু রাজিয়া খালা তাহমিদের এই সিদ্ধান্তে খুশি হতে পারলেননা। তিনি মুখ গোমড়া করে বললেন,

” বিয়া যখন করবাই, তখন এত দেরি করবা কেন? একটু আগে করলে কি হয়। ”

” খালা, সামনের সপ্তাহে আমি এস্তোনিয়া যাচ্ছি। সেখানের এক ভার্সিটিতে দেড়মাসের একটা কোর্স করতে। সেখান থেকে ফিরেই বিয়ের কাজ সারব। তবে তার আগে তোমার কথা বলতে হবে কুহুর অভিভাবকদের সাথে। যেহেতু আমার অভিভাবক তোমরা, সেহেতু কাজটা তোমাকেই করতে হবে। নানিনা সুস্থ থাকলে তোমাকে সাথে নিয়ে সে কাজটা করত। কিন্তু এখন তোমাকে একাই সব সামলাতে হবে। ”

তাহমিদের কথা শুনে রাজিয়া খালার ভ্রু কুঁচকে যায়।

” এসব কি কও, বাপজান! তোমার বিয়ার কথা কওনের জন্য তোমার খালারা আছে। তারা সব দেখব। এরমধ্যে আমারে জড়ানো ঠিক হইবনা। ”

” তুমিই আমার মা,বাবা আর খালা, যেটা মনে কর সেটাই। তাই আমার বিয়ের সকল ব্যপারে জড়ানোর অধিকার আমার আছে। আচ্ছা শোন, এই বিষয়ে পরে কথা হবে। আমি এখন বাহিরে যাচ্ছি। তোমার মা আসলে তাকে বাহিরে যেতে নিষেধ কর। আর শোন, আজকে নানিমাকে গোসল করিয়ে ড্রয়িংরুমে নিয়ে যাবে। হুইলচেয়ার ঠিক আছে তো? ”

রাজিয়া খালা জানায়, হুইলচেয়ার ঠিক আছে। তাহমিদ আর রুমে থাকলনা। তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে।

তাহমিদ বেরিয়ে যাওয়ার ঘন্টা খানেক পর কুহুরা বাসায় প্রবেশ করল। রাজিয়া খালা ওদেরকে দেখে খুশিতে এগিয়ে আসলেন। খালার সাথে কুশল বিনিময় শেষে কুহু একটা বড় ব্যাগ খালার কাছে এগিয়ে দিল। খালা ব্যাগ নিয়ে রান্নাঘরে চলে যান। কুহুও রুমে গিয়ে কাপড় পাল্টে নেয়।

বাসায় তখন নায়লা আঞ্জুম ছিলনা। রিশা মা’কে না পেয়ে ফোন করলে জানতে পারল সে শপিংয়ে গেছে।

কুহু ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে এসে দেখল খালা অবাক হয়ে ব্যাগ থেকে সবকিছু বের করছে।

” ও মা, তুমি এতকিছু আনছ! এত খাবার খাব কে! কত রকমের পিঠা আনছ। আবার মাংসও দেখতাছি। ”

” খালা, সব পিঠা আমি আর ফুপু মিলে বানিয়েছি। আমার কয়েকটা হাঁস, মুরগী প্রতিবেশি এক দাদির কাছে রেখে এসেছিলাম। কয়েকটা হাঁস-মুরগি থেকে অনেকগুলো হয়েছে। সেখান থেকেই কয়েকটা নিয়ে এসেছি। আজকে তুমি হাঁস আর মুরগী রান্না কর। আগামী কয়েকদিন এসব রান্না করে শেষ করবেন। আর পিঠা, পায়েস আপাতত ফ্রিজে রাখি। পরে সবাইকে দিলেই হবে। ”

” মাগো, তুমি আইজ কোচিং-এ যাইওনা। বাপজানে তোমারে যাইতে না করছে। তুমি বরং আমারে রান্নায় সাহায্য কর। ”

খালার কথা শুনে কুহু নিরবে হাসল। ও বাসায় ঢোকার পর কয়েকবার উঁকিঝুঁকি মেরে তাহমিদকে খোঁজার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ওকে দেখতে পায়নি। কুহু আর কিছু না বলে কাজে হাত লাগায়। হাতের কাজ শেষ হলে, কুহু নানিমার কাছে যায়। ও একটা বাটিতে পায়েস নিয়েছে।

ফাতিমা খানম নিমিলীত চোখে হুইলচেয়ারে বসে আছেন। কুহু তার কাছে গিয়ে তাকে ডাক দেয়।

” নানিমা, এইযে দেখুন আপনারর জন্য কি এনেছি। এবার লক্ষ্মী মেয়ের মত হা করুন দেখি। আমি কিন্তু পায়েস রান্না করেছি। খেয়ে বলতে হবে কেমন হয়েছে। ”

কুহুর কথা শুনে ফাতিমা খানম হাসলেন। কুহু তার মুখে এক চামচ পায়েস তুলে দেয়।

” আপনাকে আজ এখানে দেখে আমার কিযে ভালো লাগছে। এখন থেকে প্রতিদিন আপনাকে ড্রয়িংরুমে নিয়ে আসব। মাঝেমধ্যে বাহিরেও নিয়ে যাব। ” কথা বলতে বলতে নানিমাকে খাইয়ে দেয়। এরপর ও বেশ কিছুক্ষণ নানিমার সাথে গল্প করে, রান্নাঘরে যায়।

নায়লা আঞ্জুম বাসায় এসে ফাতিমা খানমকে ড্রয়িংরুমে দেখেই খেঁকিয়ে উঠল।

” রাজিয়া আপা, আম্মাকে এখানে এনেছে কে? কার হুকুমে আম্মাকে রুম থেকে বের করা হয়েছে? ”

” বাপজানে কইয়া গেছে। তার কথামতই আম্মারে এখানে নিয়া আসছি। ” রাজিয়া খালা ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলেন।

” আমি যে সবাইকে বলে রেখেছি, আম্মাকে যেন রুম থেকে কোথাও বের করা না হয়। সেটাকি তোমার কানে যায়নি? এখন এই বাসায় কি হবে না হবে, সেটাওকি তাহমিদই বলে দেবে? ভুলে যেওনা এটা আমার বাবার বাড়ি, তাহমিদের বাবার বাড়ি নয়। ও এই বাড়িতে একজন অতিথি মাত্র। তাই ভালো হবে যদি আমার কথা মেনে চল। ”

রাজিয়া খালা নায়লা আঞ্জুমের কথা নিরবে শুনে গেলেন। কারন তিনি জানেন, এখন নায়লার সাথে কথা বলা মানেই ঝামেলা বাড়ানো। তাই তিনি নায়লা আঞ্জুমের কথায় পাত্তা দিয়ে চুপচাপ কাজ করতে থাকলেন। কিন্তু কুহু নায়লা আঞ্জুমের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেছে। নিজের খালামনি হয়ে সে এসব কি বলছে! সে কি আদৌও তাহমিদের খালামনি!

কুহু খালা আর দুইজন আপার সাথে মিলে রান্না শেষ করে রুমে গিয়ে গোসল সেড়ে বেরিয়ে আসে।

ফাতিমা খানম চোখ ঘুরিয়ে সবাইকে দেখে যাচ্ছেন। আজ তার খুব ভালো লাগছে। কতদিন পর রুম থেকে বের করা হয়েছে তাকে।

চুল চিরুনি করা শেষ হতেই কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে কুহু প্রায় দৌড়েই রুম থেকে বেরিয়ে আসে। এসময় তাহমিদ ছাড়া কেউই আসবেনা।

দরজা খুলে তাহমিদকে দেখে কুহুর মুখে হাসি ফুটল। তাহমিদ ওর হাসির জবাবে মৃদু হেসে ভেতরে প্রবেশ করল।
কুহু অবাক হয়ে দেখছে তাহমিদের সাথে থাকা মানুষগুলোকে। তাহমিদের সাথে দুইজন পুরুষ-নারী এসেছেন। তাদের সাথে দুইটা বাচ্চা। একটা বাচ্চা তাহমিদের কোলে, আরেকজন আগত পুরুষের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

তাহমিদ নানিমাকে দেখে তার কাছে এগিয়ে যায়। ওর কোলে থাকা বাচ্চাটাকে নানিমার কোলে দিয়ে, হাসিমুখে বলল,

” সারপ্রাইজ। এই যে তোমার নাতিকে তোমার কোলে দিলাম। এবার তোমার ছেলে আর ছেলের বউকে দেখ। ” তাহমিদ সরে দাঁড়ালে ফাতিমা খানম দেখলেন তার ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।

এত বছর পর ছেলেকে দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারলেননা বৃদ্ধা। তিনি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। হাউমাউ করে কিছু বলার চেষ্টা করছেন।

মা’কে কাঁদতে দেখে তার কাছে এগিয়ে আসলেন সৈকত আহমেদ। কত বছর পর তিনি তার মা’কে দেখছেন। শেষবার যখন তিনি তার মা’কে দেখেছিলেন তখনও তার মা সুস্থ ছিলেন। দিব্যি চলতে ফিরতে পারতেন। আজ চোখের সামনে এ কাকে দেখছেন তিনি! তার মা একটা জড়বস্তুর ন্যায় পরে আছেন হুইলচেয়ারে!

সৈকত আহমেদ দৌড়ে এসে মা’য়ের পা জড়িয়ে কাঁদতে লাগলেন। তার কান্না দেখে বৃদ্ধার কোলে থাকা বাচ্চাটাও তারস্বরে কাঁদতে থাকে। তাহমিদ এসে বাচ্চাটিকে নানিমার কোল থেকে নিয়ে তার মা’য়ের কাছে দেয়।

ড্রয়িংরুম থেকে শোরগোল শুনে নায়লা আঞ্জুম রুম থেকে বেরিয়ে আসে। তার সাথে রায়হান আহমেদও বেরিয়ে এসেছেন। চোখের সামনে ছোট ভাইকে দেখে সে রাগে দিশেহারা হয়ে যায়।সৈকত আহমেদের সাথে তাহমিদকে দেখে, সে সাথে সাথে বুঝে যায় এটা তাহমিদেরই কাজ।

” তাহমিদ, তোমার এতবড় সাহস! তুমি কার হুকুমে এই বেইমানকে বাসায় নিয়ে এসেছে? তুমি দিনদিন তোমার সীমা পার করে যাচ্ছ। মনে রেখ তুমি এই বাড়ির একজন অতিথি মাত্র। তোমার সব মাতব্বরি, দ্বায়িত্বগিরি নিজের বাড়িতে দেখিও। একটা কথা মাথায় ঢুকিয়ে রাখ, এটা তোমার বাবার বাড়ি নয়। তুমি এক্ষুনি এদেরকে বাড়ি থেকে বের কর। ”

নায়লা আঞ্জুমের কথা শুনেও ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। ওর ঠোঁটে ব্যঙ্গ খেলা করছে।

” এই বাড়ি যেমন আমারও নয়, তেমনি তোমারও নয়। আমার মত তুমিও এই বাড়ির অতিথি। এই বাড়িতে কোন অতিথি বছরের পর বছর যাবৎ থাকছে জন্য বাড়ির মালিককে নিয়ে আসলাম। এতদিন অতিথি বাড়ির দেখাশোনা করেছে, এবার বাড়ির আসল মালিকের দেখাশোনা করার সময় এসেছে। বাড়ির মালিক তার অধিকার বলে নিজের আবাসস্থলে ফিরে এসেছে। নানিমা, তুমিও কি চাও তোমার ছেলে বেড়িয়ে যাক? তুমি চাইলেই তবে মামা এখানে থাকবে। ”

ঘন ঘন মাথা নাড়িয়ে বৃদ্ধা বুঝিয়ে দিলেন তিনি তার ছেলেকে বাড়িতে চান। তিনি একহাতেই ছেলেকে জাপ্টে ধরে রাখলেন।

” আশা করছি তুমি তোমার উত্তর পেয়ে গেছ? মামা তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এখানেই থাকবে। কেউ যদি তাদের কিছু বলে তবে বিষয়টা কিন্তু খুবই খারাপ হয়ে যাবে। ” তাহমিদ আবারও বলল।

” তুমি চিন্তা করোনা, তাহমিদ। সৈকত তার অধিকার বলেই এখানে থাকবে। এবার আমাদের যাবার সময় হয়েছে। এতদিন আম্মাকে দেখার কেউ ছিলনা, সেই অযুহাতে এই বাসায় থেকেছি। এখন আম্মাকে দেখার জন্য তার ছেলে এসে গেছে। এবার আমরাও নতুন বাড়িতে শিফ্ট করব।”

রায়হান আহমেদের কথা শুনে নায়লা আঞ্জুমের চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম হলো। সে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেছে।

” তুমি এসব কি বলছ! আমরা কোথায় যাব? এটা আমার আব্বার বাড়ি। আমি এই বাড়ি থেকে কোথাও যাবনা। ওরা যাবে এখান থেকে। ঐ ফকিন্নির মেয়ে কিছুতেই এই বাড়ির বউ হতে পারেনা। ওর কোন যোগ্যতাই নেই, এই বাড়ির বউ হওয়ার। ”

” তুমি যদি আর একটা কথা বল, তবে থাপড়িয়ে তোমার দাঁত ফেলে দেব। তাহমিদ যদি এই বাড়ির অতিথি হয়, তবে তুমি, তোমার ছেলেমেয়ে আর আমিও এই বাড়ির অতিথি। বিয়ের পর মেয়েদের আসল ঠিকানা হয় তার স্বামীর বাড়ি। কিন্তু সব সময়ই তুমি আমার বাড়ির চেয়ে বাবার বাড়িকে প্রাধান্য দিয়েছ। নিজের অহংকার বজায় রেখছ। তুমি যেমন আমার সংসারকে অশান্তিতে ভাসিয়েছ, তেমনি নিজের বাবার বাড়িতেও আ’গু’ন দিয়েছ। সৈকতের যাকে মনে ধরেছে তাকেই বিয়ে করেছে। ওর বউকে তুমি ফকিন্নির মেয়ে বলার কে? এই মেয়েটা নেহাৎই ভদ্র তাই এতক্ষণেও তোমাকে চুলের মুঠি ধরে বাড়ি থেকে বের করে দেয়নি। তাই ভালো হয় যদি নিজের মুখ বন্ধ রাখ। এখন থেকেই মানসিকভাবে নিজের সংসারে যাওয়ার প্রস্তুতি নাও। আমি যত তারাতারি পারি একটা ফ্লাট দেখব। ”

রায়হান আহমেদের কথা শুনে নায়লা আঞ্জুম নির্বাক চেয়ে থাকে।

” দুলাভাই, এসব কি বলছেন? আপনারা কোথাও যাবেননা। এতদিন আপনারাই আম্মাকে আগলে রেখেছেন। আমি তার কোনই খোঁজ নিইনি। আজ আমি আসাতে আপনারা চলে যাবেন, আমি এটা ভাবতেই পারছিনা। আপনারা কোথাও যাবেননা। আমরা একসাথেই এখানে থাকব। ” মা’য়ের কাছ থেকে উঠে এসে রায়হান আহমেদের পাশে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলল সৈকত আহমেদ।

” আমি আরও আগেই চলে যেতাম, সৈকত। শুধু আম্মার জন্যই এখানে থেকেছি। এখন আম্মার জন্য তোমরা আছ। এবারতো যেতেই হবে। এছাড়াও তোমার বোনকে সংসারের দায়-দ্বায়িত্ব বুঝতে হবে। সে এত বছর গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেরিয়েছে। তার নজর সব সময়ই উপরের দিকে ছিল। এবার তাকে নিচের দিকে তাকাতেই হবে। সে সময় এসে গেছে। ”

কুহু এই মুহুর্তে কারও কোনও কথা শুনছেনা। ও মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে তাহমিদের দিকে। কতশত গোপন কথা মানুষটা তার নিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে। সবার কথার আঘাত সহ্য করে অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে সে তৎপর। তাকে দেখে কে বুঝবে, এক জীবনে কত ঝড় ঝাপটা তাকে সইতে হয়েছে! সে চিরদুঃখী একজন।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here